জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে

কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে

কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে

খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ

 

কাদিয়ানিরা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও সারা বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম একমত যে, কাদিয়ানিরা কাফির। তারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী হিসেবে মানে। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নিজেকে কখনো, কখনো ছায়া নবী, আবার কখনো মাসীহে মাওউদ, আবার কখনো মাহদী ইত্যাদি দাবি করেছেন। তিনি বলেন ‘আমি যা কিছু আল্লাহর অহী থেকে প্রাপ্ত হই, খোদার কসম, তাকে সব রকম ত্রুটি থেকে পবিত্র মনে করি। কুরআনের ন্যায় আমার অহী ত্রুটিমুক্ত। এটা আমার ঈমান ও বিশ্বাস। খোদার কসম, এটাও আল্লাহ পাকের মুখ নিঃসৃত বাণী।’ (নুযূলুল মাসীহ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ৯৯)

তিনি আরো বলেন, ‘এই উম্মতের মধ্যে নবী নাম পাওয়ার জন্য আমাকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’ (হাক্কীকতুল অহী, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ৩৯১)

কাদিয়ানি গ্রুফের লাহোরী নেতা মুহাম্মদ আলী লিখেছেন: আমরা যে ব্যক্তিত্বের হাতে হাত মিলিয়েছি (মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি) তিনি সত্যবাদী ছিলেন এবং আল্লাহর মনোনীত পবিত্র রাসুল ছিলেন।’ (কাদিয়ানি ধর্মমত, পৃ. ১০৩-১০৪)

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি আরো বলেন, ‘আল্লাহ আমার সম্মন্ধে বলেছেন, আমি তোমাকে রাসুলরূপে প্রেরন করলাম।’ (হাকিকাতুল অহী, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ১০১)

‘আমার ওপর আল্লাহর কালাম নাযিল হয়েছে, যা লেখা হলে বিশ পারার চেয়ে কম হবে না।’ (হাকিকাতুল অহী, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ৩৯০)

এছাড়াও তিনি আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কেও খারাপ মন্তব্য করেন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি তার সাথীদেরকে সাহবি নামে এবং তার স্ত্রীকে উম্মুল মুমেনিন হিসেবে উল্লেখ করেন। তারপরে তার স্থলাভিসিক্তদেরকে খলিফা নামে অভিহিত করেন। তিনি নবুওয়াত দাবিসহ আরো অনেক কিছুই দাবি করেছেন। যেমন কখনো বলেছেন তিনি শ্রী কৃষ্ণ, আবার কখনো তিনি ইসা (আ.), আবার কখনো আল্লাহর পুত্র, আবার কখনো স্বয়ং আল্লাহ নাউজুবিল্লাহ। তার এইসব কর্মকান্ড শুধু ইসলামবিরোধী তাই নয় বরং পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ইংরেজদের গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।

ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের মুসলমান ও হিন্দুরা যখন বার বার আন্দোলন ও বিদ্রোহ করছিল তখন ইংরেজরা দেখল যে, যদিও হিন্দু মুসলিম সবাই তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, কিন্তু এর নেতৃত্বে রয়েছে মুসলমানরা। মুসলমানরা বিজাতীয় শাসন মানতে নারাজ। ওলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছেন হিন্দুস্থান দারুল হারব হয়ে গেছে। এখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ। তখন মুসলমানদেরকে বিভক্তির মাধ্যমে আন্দোলন দুর্বল করা এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ হারাম বলে প্রচার চালানোর জন্যই মূলত গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে ইংরেজরা তৈরি করেছে। তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন এবং বার বার বলেছেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম। তার পিতাও ছিলেন ইংরেজদের সেবাদাস। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি বলেন, ‘আমার ওয়ালেদ সাহেবের জীবনী হতে ঐসব খেদমত কিছুতেই পৃথক করা যায় না, যা তিনি আন্তরিকতার সাথে এই সরকারের কল্যাণে আঞ্জাম দিয়েছিলেন। তিনি নিজ মর্যাদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বদা ব্রিটিশ সরকারের সেবাকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। সরকারের বিভিন্ন অবস্থা ও প্রয়োজনের সময় তিনি এমন সততা ও আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন যে, যতক্ষন কেউ কারো খাঁটি ও আন্তরিক হিতৈষী না হয়, ততক্ষন তেমন আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারে না।’ (মাসনাফা, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ১)

আরও বলেন, ‘জিহাদ নিষিদ্ধকরণ ও ইংরেজ সরকারের আনুগত্য সম্পর্কে আমি এত বেশি পুস্তক রচনা করেছি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি যে, সেসব একত্রিত করলে পঞ্চাশটি আলমারী ভর্তি হতে পারে।’ (তিরিয়াকুল কুলুব, গোলাম আহমদ কাদিয়ানি, পৃ. ২৭)

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি যেমন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার বিপক্ষে ইংরেজদের পক্ষে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন তেমনি মুসলমানদের মধ্যে জিহাদি জজবা খতম করে দেওয়ার জন্য নিজেকে নবী দাবি করেছেন এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লাহ তালা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কেই শেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মজিদে বলেন,

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيّٖنَ١ؕ وَكَانَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًاؒ۰۰۴۰

‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সুরা আল-আহযাব: ৪০)

নবী করীম (সা.) বলেছেন,

«وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ».

‘আমি শেষ নবী। আমার পরে কোনো নবী নেই।’

আল্লাহ তাআলা প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা.)-কেই আখেরি নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। ইহা মুসলমানদের আকিদা। যা উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবেই বলেছেন। আল্লাহ তাআলার এই ঘোষণার সাথে যারা একমত হবে না অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা.)-কে যারা আখেরি নবী হিসেবে মানবে না তারা কাফির। সারা দুনিয়ার মুসলমানগণ এই বিষয়ে একমত। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, যদি কেউ নিজেকে নবী বলে দাবি করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে কাফির। তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে যারা কাফির মনে করবে না তারাও কাফির।

এখন কথা হল কাদিয়ানিরা কাফির বুঝলাম, তাই বলে তাদেরকে সরকারিভাবে কাফির ঘোষণা করতে হবে কেন? এবং তাদের ইজতেমা বন্ধ করার জন্য হক্কানি ওলামায়ে কেরাম আন্দোলন করবেন কেন? তাদের কি সম্মেলন করার অধিকার নেই?

হ্যাঁ, আছে। তবে তার আগে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তারাও সংখ্যালঘু হিসেবে নাগরিক অধিকার পাবে। মহোৎসব, মহামিলন বা সম্মেলন করতে পারবে। সরকার তাদের নিরাপত্তা দেবে। আমরাও তাদের নিরাপত্তা দেব। তার আগে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

কারণ তারা অমুসলিম হয়েও নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবি করলে সাধারণ মুসলমানগণ প্রতারিত হয়। ধোকা খায়। তারা অমুসলিম হয়েও মুসলমান হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করলে সাধারণ মুসলমানগণ তাদেরকে মুসলমান মনে করে বাজার থেকে তাদের জবেহকৃত গরু-ছাগলের গোস্ত কিনে খেতে পারে। যা নাজায়িয। তাদের সাথে বিয়ে-শাদির বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। এটাও না জায়িয। তাদের দ্বারা সাধারণ মুসলমানগণ জাহান্নামের পথে চলে যেতে পারে। তারা মুসলিম পরিচয়ে হজে যেতে পারছে। অথচ কাফিরদের জন্য সেখানে প্রবেশ নিষেধ। এ রকম আরো অনেক প্রয়োজনে তাদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি। এবং তাদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন। তা না হলে তারা অমুসলিম হয়েও ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণার সুযোগ গ্রহণ করে। এতে সাধারণ মানুষ ধোঁকা খায়।

বিশ্বের প্রায় সবগুলো মুসলিম দেশে কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তাদেরকে এখনো কাফির ঘোষণা না করার কারণে তারা বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে তাদের অপকর্ম পরিচালনা করার জন্য। আবার দেশি-বিদেশি কিছু ইসলামবিদ্ধেষী প্রভাবশালী কুচক্রি মহল এই কাদিয়ানিদের পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি করে।

হক্কানি ওলামায়ে কেরাম বহু দিন ধরে কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবিতে সব মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা প্রয়োজন। কওমি, আলিয়া, বেরেলভি, জামায়াতে ইসলামি আহলে হাদিসসহ সবাইকে এই আন্দোলনে শরিক হওয়া জরুরি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ