প্রিয় রসুল
হানিফুল ইসলাম
সূর্য মামার দীপ্ত আলো
হার মানাবে তোমার কাছে
সেথায় আবার চন্দ্র মামার
নাম নেয়াটাও বৃথা যাবে।
তোমার আলোয় আলোকিত
বিশ্ববাসী তোমার নামে
দরূদ পাঠায় দিবা রাতি
বিভোর হয়ে প্রেমের খামে।
মোদের কাছে তুমি ওহে
শিশু যেমন মায়ের কোলে
তারই চেয়ে ভালোবাসি
রই না তোমায় কভু ভুলে।
তোমার প্রেমে অনেক মানুষ
পাগল হচ্ছে বারো মাসি
তাইতো রসুল মনের মাঝে
তোমায় অনেক ভালোবাসি।
ধর্ষণ
আজহার মাহমুদ
ধর্ষণের কথাটি শুনলে যেমন
লাগে সবার ঘৃণা,
তাহার চাইতে বেশি প্রয়োজন
ধর্ষকদের চিনা।
ধর্ষণ মানে একটি নারীর
জীবন নিয়ে খেলা,
ধর্ষণ মানে নোংরা মানুষের
নোংরামি করার মেলা।
ধর্ষণ মানে একটি জীবন
নষ্ট হওয়ার গল্প,
ধর্ষণ মানে সাধারণ মানুষের
সমবেদনা অল্প।
ধর্ষণের ঘটনা মোদের কাছে
নিত্য দিনের কথা,
ধর্ষণ মানে মোদের কাছে
নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
ধর্ষণ ঠেকাতে সবাই যদি
সত্যি এক হতো,
মা বোনের ইজ্জত বাচঁত
না জানি আজ কতো।
স্মৃতি ঘেরা শৈশব আমার
মু. ইবরাহীম মুরাদাবাদী
জীবন-বাগের শিশুকালে
দিনগুলো সব ফুল
সুবাস মাখা স্বপ্ন আঁকা
নেই কোন তার তুল।
বগের মলীর আশা সদা
বাগ হোক চিরকাল
বাগের দু’য়েক পুষ্প ঝরলে
আর্দ্র হতো গাল।
শৈশব আমার পুষ্প বাগান
থাকবে স্মৃতি জুড়ে,
পেতাম যদি ফের দেখা তার
নিতাম তারে কুঁড়ে।
নদীর জলে সাঁতার কাটা
স্বাদের ছিলো কতো
বৃষ্টি ভেজা কাদায় ছিলো
স্বপ্ন শতো শতো।
রোদেলা সেই দিনগুলোতে
আসতো যবে ঝড়,
কলা পাতার তলে দিতাম
আমার ক্ষুদে ধড়।
হাজার খোয়াব সুপ্ত হৃদে
ছিলো কতো আশা,
সুখের আশে, অহর্নিশে
বুনতো হৃদে বাসা।
মাঠে যেতাম সখার সাথে
খেলতে নানান খেলা,
খেলার মাঝে কেটে যেতো
আমার সারা বেলা।
হাতে ধরে আব্বু আমায়
নিয়ে যেতো পাঠে,
পড়ালেখায় ব্যস্ত হতাম
যেতাম না আর মাঠে।
আম্মু আমায় বলতো সদা
চলো দিনের পথে,
না চলিলে দুঃখ পাবে
জীবন-মহারথে।
হৃদ-মাতানো শৈশব আমার
থাকবে স্মৃতির পাতায়,
সাধ্য যদি থাকতো আমার
উড়াল দিতাম সেথায়।
নিজের গানই গাও
রোকন এনাম লোবান
এই শহরের অলিগলি,
লোকালয়ের দলাদলি,
অর্থ-স্বার্থের গলাগলি,
ছেড়ে যাব দূর।
কামড়াকামড়ি কুকুর করে,
লোভী হয়ে হামলে পড়ে,
মানুষ কেমনে এসব করে?
আজব লাগে ধূর!
ছলচাতুরির বন্ধু রেখে,
মুনাফিকের ঢাকনা ঢেকে,
নিজস্ব পথ নিজে দেখে,
একটু সুদূর হই!
সাপের খোপে জগত ভরা,
লকলকানি বিষের ঘড়া,
আপন চিনে দিও ধরা,
আপন কেহ নয়।
লেজ নাড়িয়ে আসবে কাছে,
স্বার্থ নিয়ে উঠবে গাছে,
পাবে না আর ভাতে-মাছে,
শালার স্বার্থপর!
প্রয়োজনে চরণ চাটে,
কাজ ফুরালে দেহ কাটে,
সুযোগ পেলে মরিচ বাটে,
ফালতো বালুচর।
মধুর মাছি দূরে রাখ,
নিজের জীবন নিজেই আঁক,
শেয়াল হতে দূরে থাক,
প্রসূন হয়ে যাও!
জাদুর কথা আর শুন না,
অলীক গপ্পো আর গুন না,
কল্প স্বপন আর বুন না,
নিজের গানই গাও।
ভালোবাসা
গোফরান উদ্দীন টিটু
আকাশ থাকে দূরের দেশে
সাগর ডাকে দূরে
বাতাস হাসে গানে গানে
প্রাণের সুরে সুরে।
মায়ের হাসি মায়ের খুশি
দেখি ভুবন জুড়ে
আমি বাঁচি তুমি বাঁচো
ভালোবাসার ভোরে।
আর্তনাদই প্রতিবাদ আজ
রিমঝিম মুস্তারি
ভাবছি আমি কোন দেশেতে
করছি বসবাস
কিশোর শিশু দাবি লয়ে
থাকছে উপবাস।
এমপি-মন্ত্রী হতে তাদের
নেইতো কোন লোভ
অনিরাপদ দেশটা নিয়েই
তাদের বড় ক্ষোভ।
কোমলমতি বোনরা কেনো
হচ্ছে ধর্ষিতা আজ
নেই জননী ধর্ষকগুলোর!
নেই কি কোন লাজ?
দেশদরদির মায়াকান্না
গেল এখন কই?
নির্বাচনে আসবে আবার
সেবার দাবি লই।
আরো কত দেখতে হবে
রক্তে রাঙা লাশ
চেয়ে দেখ তাদের বুকে
ছিল কত আশ।
গদির ওপর যার ক্ষমতা
সেজন পারে সব
বলতে গেলে সত্য কথা
কুপিয়ে করে শব।
নেইতো উপায় কান্না ছাড়া
বুকটা ফেটে যায়
শান্তি পাবে কোন বাণীতে
সন্তান হারা মা’য়?
তাদের জন্য সবাই মোরা
তুলি দুইটি হাত
মা’বুদ ছাড়া মোদের তরে
নেইতো কেউ সাথ।
হৃদয়ের ব্যথা
ইমদাদ ইমরুজ
মনের আকাশ করেছে গ্রাস
দুখের কালো মেঘে,
গুপ্ত ব্যথা দীপ্ত হল
কঠিন বায়ুর বেগে।
মর্মতলে অনল জ্বলে
পুড়ছি দিবানিশি,
কেউ কি দিবে বাঁচতে আমায়
একটি বিষের শিশি।
বিষের জলে করবো শীতল
তপ্ত এ হৃদয়,
নীলবদনে মুক্ত মনে
ছিনিতে বিজয়।
দুখের সাথে নয়ত আঁতাত
নয়কো পরাজয়,
প্রতিরোধে করবো জীবন
তিলে তিলে ক্ষয়।
তাঁর রঙেতেই জীবন রাঙাও
মু. আমান উল্লাহ আল-কাসেম
জাগিয়ে তুলো বিবেকটাকে
জাগিয়ে তুলো হৃদয়টা
সঠিক পথের পথিক হয়ে
সাজিয়ে তুলো জীবনটা।
চাল-চলনে-আচরণে
হতে শিখো ভদ্রতা,
যেমন ছিলেন প্রিয় নবী
চলার পথে নম্রতা।
তাঁর চলাটাই স্রেষ্ট সবার
স্রেষ্ট তাঁরই চরিত্র,
তাঁর আচরণ মুগ্ধকরার
তাঁর জীবনই পবিত্র।
মিষ্টি হেসে বলতো কথা
ধনী কিবা গরিব হোক,
সবার পাশেই থাকতো সাদা
দিকনা মনে যত দুঃখ।
তাঁর জীবনের রঙে রাঙাও
জীবন হবে মুল্যবান,
একাল ওকাল উভয় কালে
থাকবে খুশি মেহেরবান।
চাওয়া
সাইহানুল হক শাহরুমী
আমার আকাশ তোমায় দিলাম
মুক্ত পাখায় উড়ো
জীবন ভূমি তোমায় দিলাম
মুক্ত পায়ে দৌড়ো।
আমার আলো তোমায় দিলাম
নিজে আঁধার রাখি!
এলে তুমি সুখের কিবা
থাকবে আমার বাকি?
পুষ্প দেবো বাগান দেবো
ভূবন দেবো পুরো
মন জোড়া এক কাব্য দেবো
দেবো মুগ্ধ সুরও।
তবে বলো প্রেম দিবে কি
আমায় একটুখানি?
দুহাত খুলে নিবে আমায়
বুকের মাঝে টানি?
তাবলীগ
হুসামুদ্দীন
প্রভুর প্রেমে সুবাহ-শামে
ছুটছে খোদার ঘরে,
সকাল-সাঁঝে,ঘামের মাঝে
তাদের কায়া ভরে।
গরীব-ধনী, মাটি-খনি
সবাই একই সাথে,
যায় ছুটে যায় প্রশান্তি পায়
পরস্পরের বাতে।
এক আসনে, এক বাসনে
আহার করে তারা,
সমবেত একই তালায়
চাঁদ, সুরুজ ও তারা।
শ্মশ্রু তাদের অশ্রু দিয়ে
যায় ভিজে যায় রাতে,
যবে তারা, দিশেহারা
প্রভুর সাথে বাতে।
সবার দোরে, সন্ধ্যা-ভোরে
দীনের দাওয়াত নিয়ে,
তাবলীগী নায়, সদা ভাসায়
সবার ঘরে গিয়ে।
সব মিলিয়ে সুখ বিলিয়ে
চলছিলো এই ধারা,
দীনের চাষে,প্রণয় রাশে
পন্থা নজরকাড়া।
সহসা এক মস্ত ফাসেক
এলো তাদের মাঝে,
ঐ নরাধম সেজে আদম
লিপ্ত তারই কাজে।
নাটের গুরু, করলো শুরু
দীন প্রলয়ের চাষ,
তারই সকল কুকর্ম-ছল
করছিলো দীন নাশ।
এসব দেখে দু’চোখ বেঁকে
জ্ঞানীদের ঘুম টুটে,
তাঁদের প্রয়াস,বাতিলকে নাশ
হক যেনো না ঘুটে।
না জানি এই প্রয়াস ও খেই
ছুটলো কতো দূরে,
দীনের দাওয়াত হানুক আঘাত
অজ্ঞতারই দোরে।
কুফর চাষের, দীন বিনাশের
হোক অবসান আজি,
রব-সমীপে অশ্রু সঁপে
বলি সকাল-সাঁঝি।
শারদরূপ
সাইহানুল হক শাহরুমী
বর্ষা শেষে ঋতু এলো
শরতের নামে যে
প্রকৃতিরূপ ফুলে-ফলে
সাজে বেশ আমেজে।
মাঠে মাঠে ভরা সবুজ
ললিত ঘাসফুলে
নদীতীরে দৃষ্টি কাড়া
শুভ্রতার কাশফুলে।
সাঁঝের বেলায় বাগে ফুটে
শেফালী, কামিনী
শিউলি ফুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে
প্রভাত রাত-যামিনী।
ভূবনজুড়ে বয়ে যাওয়া
মন উদাসী হাওয়া
জোসনাস্নাত স্নিগ্ধরাতে
সুখময় গান গাওয়া।
নীল দ্যুলোকে উড়ে বেড়ায়
ধবল মেঘের ভেলা
এই যে আমার শারদীয়
ঋতুর রূপের খেলা।
একটু দেখো ফিরে
হ. ম. সাইফুল ইসলাম মনজু
আর পারিনা সইতে দহনজ্বালা,
ধুকে ধুকে মরছি দেখো চেয়ে।
চিৎকারে বাঁধ, মুখের পরে তালা,
মাথার উপর মুগুর ঘুরে ধেয়ে।
পাহাড় কাঁদে, ঝর্ণা বয়ে যায়,
সাগর দোলে তারই রোদন-জলে।
হৃদয়বেদন বয়ে বেড়ায় বায়,
গন্ধ পেতে শুঁকলে কোন ছলে।
তোমায় আমি ভালোবাসি তাই,
আপদ-শ্বাপদ মারছে আমায় ঘিরে-
নিত্য ছোবল, বাঁচার উপায় নাই,
তুমি শুধু একটু দেখো ফিরে।
এই ছেলেটি বইপ্রেয়সী
বইকে ভালোবাসে
আমজাদ ইউনুস
এই ছেলেটি সারাটা দিন থাকে বইয়ের পাশে।
এই ছেলেটি অহর্নিশি দেয় যে বইয়ে ডুব
জ্ঞানের মণিমুক্তো সে যে খুঁজতে থাকে খুব।
এই ছেলেটি বইয়ের পাতায় খুঁজতে থাকে সুখ
এই ছেলেটি বই পেলে যে ভুলে শত দুখ।
এই ছেলেটি বইয়ের পাতায় পায় যে ফুলের ঘ্রাণ
এই ছেলেটি বই জড়িয়ে জুড়ায় দেহ প্রাণ।
এই ছেলেটির জীবনসাথী হরেক রকম বই
বই ছাড়া নেই কেউ জীবনে আপন প্রিয় সই।
এই ছেলেটি দুষ্ট ভীষণ সে ভারি ডানপিটে
কিন্তু ছেলের বই ছাড়া কী তৃষ্ণা বলো মিটে।
ঝুম শ্রাবণে উদাসী মন
আলাউদ্দিন কবির
বৃষ্টিধারায় দৃষ্টি হারায় মিষ্টি বরষায়
বুকের পাশে প্রিয় আসে শাওন-ছোঁয়ায়
শেকড়-লতায় সবুজ পাতায় জলের এ কী মায়া
সিক্ত সবুজ ঘাসের গায়ে সুখদ হাসির ছায়া।
বয়স বাড়ে বয়স কমে বৃষ্টিধারার মতো
প্রভুর কাছে প্রকৃতি ওই হয় যে অবনত;
কাচের গায়ে বিষ্টি-ফোঁটা অশ্রু হয়ে হাসে
আচমকা মন উদাসী আজ ঝুম শ্রাবণের মাসে!