আল্লামা মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী
ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধির জন্য ইসলামে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওজীফা বা আমল রয়েছে, যা নিয়মিত পালনের মাধ্যমে একজন মুমিন তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। নিচে ইসলাহে নফসের ১০টি ওজীফা তুলে ধরা হলো:
০১. আল্লাহ ওয়ালাগণের মুহাব্বত, সুহবত ও কোনো একজন খাঁটি আল্লাহওয়ালার তরবিয়ত:
কোনো একজন খাঁটি আল্লাহওয়ালার কাছে বাইআতের মাধ্যমে গভীর সম্পর্ক করা, তাঁর পর্যাপ্ত সুহবত ও খেদমত অর্জন করা এবং তাঁর ৪টি হক আদায় করা। যথা- ইত্তিলা (হালত জানানো), ইত্তেবা/ ইতায়াত (হালাত জানানোর পর প্রদানকৃত আদেশ নিষেধ ও পরামর্শের আনুগত্য করা), ইতিকাদ (শায়েখ বা মুসলিহের প্রতি গভীর মুহাব্বত), ইনকিয়াদ (শায়েখ বা মুসলিহের সিদ্ধান্ত ও আনুগত্যের ফলাফলের বিষয়ে শতভাগ আস্থা ও ভক্তি রাখা)।
০২. কিয়ামুল্লাইল (তাহাজ্জুদ) ও নফল নামায:
ইশার পর ঘুমানোর আগে ২-৪ রাকাত এবং পারলে শেষ রাতেও ২-৪ রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করা এবং বেশি বেশি দুআ কান্নাকাটি করা।
দৈনিক অতিরিক্ত চার নিয়তে তওবা, শোকর, হাজত ও ইস্তিআযাসহ ইশরাক আওয়াবীন এবং সপ্তাহে অন্তত একবার সালাতুত তাসবীহ আদায় করা।
০৩. তিলাওয়াতুল কুরআন:
নিয়মিত সকালে সূরা ইয়াসীন, রাতে সূরা মুলক ও ওয়াকেয়া এবং জুমআর দিন সূরা কাহাফসহ খতমের নিয়তে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
০৪. কাছরাতে যিকির/অধিক যিকির:
সকল মাসনুন দুআ
পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরবর্তী ও সকাল-সন্ধ্যায় মাসনূন দুআ ও তাসবীহ-তাহলীল আদায় করা।
প্রত্যহ বিশেষ ধ্যানের সাথে ৩০০-৫০০ বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ৩০০-৫০০ ‘আল্লাহ আল্লাহ’ যিকির, ১০০ বার ইস্তেগফার, ১০০ বার দুরুদ শরীফ এবং হাদীসে বর্ণিত ৪০টি বিশেষ দুরুদ সালাম পাঠ করা।
০৫. মুরাকাবা/মুশাহাদা:
দৈনিক পাঁচ প্রকার মুরাকাবা (ধ্যান) করা (কমপক্ষে তিন মিনিট করে):
(ক) আল্লাহু হাযিরী (আল্লাহ সর্বদা আমার কাছে হাজির আছেন), আল্লাহু নাযিরী (আল্লাহ সর্বদা আমার দিকে চেয়ে আছেন), আল্লাহু মায়ী (আল্লাহ সর্বদা আমার অতি নিকটে অবস্থান করে আছেন) এই মুরাকাবা।
(খ) মৃত্যুর মুরাকাবা।
(গ) মৃত্যু, কবর, হাশর, পুলসিরাত ও জাহান্নামের ভয়াবহ কষ্ট, আযাব ও অবস্থার মুরাকাবা।
(ঘ) দীন ও দুনিয়ার সীমাহীন নিয়ামতের মুরাকাবা।
(ঙ) হালাকাত বা ধ্বংসের মুরাকাবা: অর্থাৎ ‘আমি নিজে এবং দুনিয়ার প্রিয় অপ্রিয় সবকিছুই যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে- এটার মুরাকাবা।
০৬. তাবাত্তুল:
খাঁটি তওবার মাধ্যমে সব ধরনের গোনাহ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং সকল আমল ও কাজে সুন্নাত তরীকার অনুসরণ করা।
০৭. তাওয়াক্কুল:
সকল বিষয়ে মহান আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসাকে মজ্জাগত স্বভাব বানানো।
০৮. দায়েমী সবর:
তিন প্রকার সবর, মুজাহাদা বা কষ্ট করা: গুনাহ থেকে বিরত থাকার কষ্ট, ঈবাদাতের কষ্ট ও বালা-মুসিবতের কষ্ট।
০৯. রোযা পালন:
ফরয রোযার পাশাপাশি অন্ততঃ চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ এবং প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (কমপক্ষে সপ্তাহের প্রতি সোমবার) রোযা রাখা এবং বেহুদা কথা-কাজ থেকে দূরে থাকা।
১০. মুহাসাবায়ে নফস ও রোনাজারী ও দুআ-কান্নাকাটি:
প্রত্যহ রাতে ঘুমানোর আগে এবং শেষ রাতে সারাদিনের ও সারা জীবনের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ করা। কৃত গোনাহসমূহ ও আমলগত ভুলত্রুটি এবং মহান আল্লাহর সীমাহীন নেয়ামতের বিপরীতে কোনোই শোকর আদায় হয়নি ইয়াকীন করে অধিক পরিমাণে তওবা ইস্তেগফার করা। ইসলাহে নফস, কলবে সালীম, নফসে মুতমাইন্নাহ/ রাজিয়াহ/মারজিয়্যাহ ও মহান আল্লাহর মুহাব্বত, মারিফাত, ইবাদতে মজা এবং কাইফিয়্যাতে ইহসানীর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে অধিক পরিমাণে রোনাজারী ও দুআ-কান্নাকাটি করা।
-হযরতের ইসলাহী মজলিস থেকে সংগৃহীত