دَارُ الافتاء جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com
পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
তাহারত-পবিত্রতা
সমস্যা: ঘামাচি গাললে অজু ভেঙে যাবে কিনা?
সাজিদ
কল্যাণপুর, ঢাকা
সমাধান: ঘামাচি গাললে যে রক্ত, পানি ইত্যাদি বের হয়, তা খুবই সামান্য হয়, তা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ হয় না। তাই এর দ্বারা অজু নষ্ট হবে না। এক্ষেত্রে ঘামাচির পরিমাণ বেশি হলেও অজু ভাঙবে না। দারাকুতনী: ১/৩৭০, হাদীস: ৫৭২, কিতাবুল আসল: ১/১৪৪, হিদায়া: ১/১২
সমস্যা: হুজুর আমি গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে একটি পা হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমি প্লাস্টিকের পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলি, যা আমার শরীর থেকে পৃথক। জানার বিষয় হলো, অজু-গোসলের সময় উক্ত পায়ের কি হুকুম?
রিদওয়ান
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: ওই পা শরীরের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং অজু-গোসলের সময় ওই পা ধৌত করতে হবে না। তবে গোসলের সময় খোলা সম্ভব হলে তা খুলে নিচের অংশটুকু ধোয়া জরুরি। আল-বাহরুর রায়েক: ১/১৩, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৫৪, আদ-দুররুল মুখতার: ১/২৮৫-২৮৬
সমস্যা: টাইলস বা পাথরের টাইলসের ওপর তায়াম্মুম করার অবকাশ আছে কিনা? তেমনিভাবে মোজাইক করা ফ্লোরে তায়াম্মুম করা যাবে কিনা? সেটাও জানাবেন।
এহসানুল হক
যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
সমাধান: মাটি জাতীয় পাথর ইত্যাদি যেকোনো পবিত্র জিনিসের দ্বারা তায়াম্মুম করা সহীহ। টাইলস, মোজাইক এগুলো পাথর থেকে তৈরি হয়। অতএব এগুলোর ওপর তায়াম্মুম করা সহীহ। সুরা আল-মায়েদা: ৬, সহীহুল বুখারী: ১/৪৮, হাদীস: ৩৩৩, আদ-দুরল মুখতার: ১/৪০৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭৯
সালাত-নামাজ
সমস্যা: সম্মানিত মুফতি সাহেব! একটি বিষয় দীর্ঘদিন যাবৎ জানতে ইচ্ছে করছে যে, মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করার পর যখন তার ছুটে যাওয়া নামাজগুলো আদায় করার জন্য দাঁড়ায়, তখন সে শুরুতে সানা পড়বে কিনা? যেমনটি নামাজের শুরুতে পড়া হয়। এ রকআতগুলো যেহেতু নামাজের প্রথম দিকের রকআত।
নকি
চকরিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: হ্যাঁ, মাসবুক ব্যক্তি তার ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করার সময় শুরুতে সানা পড়ে নেবে। রদ্দুল মুহতার: ১/৫৯৭, গুনয়াতুল মুতামাল্লী: ২/২৪, আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়া : ২৭/১৬১, ফতওয়ায়ে কাযীখান: ১/৬৬
সমস্যা: আজ থেকে কিছুদিন আগে বাড়িতে খাটের ওপর নামাজ পড়ছিলাম, তখন সামনে এক ব্যক্তি হেঁটে যায়, নামাজ শেষ করার পরে নামাজের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া নিষেধ হওয়ার কথা তাকে বললে তিনি উত্তরে বলেন, আপনি তো খাটের ওপর নামাজ আদায় করেছেন, তাই সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া অসুবিধা মনে করিনি। প্রশ্ন হলো, যদি উঁচু স্থানে নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে নিচ দিয়ে দিয়ে অতিক্রম করে যাওয়া জায়েজ আছে কিনা?
মোহাম্মদ
জিরি, চট্টগ্রাম
সমাধান: উঁচু স্থানে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির শরীরের অর্ধেকের কম অংশের সাথে যদি অতিক্রমকারী বরাবর হয়, তাহলে উক্ত নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোনো অসুবিধা হবে না আর যদি অর্ধেক বা এর চেয়ে বেশি অঙ্গের বরাবর হয়, তাহলে অতিক্রম করতে পারবে না। তবে সাধারণত খাট এই পরিমাণ হয় না, তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির জন্য ওই নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা ঠিক হয়নি। রদ্দুল মুহতার: ২/৪৮০, আল-মুহীতুল বুরহানি: ১/৪৯৪, মিনহাতুল খালেক আলাল বাহরির রায়িক: ১/৩০
সমস্যা: গতকাল ইমাম সাহেব আসরের নামাজে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত জোরে পড়ছিল। পরে তিনি সাহু সিজদা করেননি। সালাম ফেরানোর পর মুসল্লিদের কেউ কেউ সাহু সিজদা না করার কারণে আপত্তি করলে ইমাম সাহেব বললেন, এতটুকু ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। ইমাম সাহেবের উক্ত কথাটি কি ঠিক?
হাফেজ মুহিবুল্লাহ
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: হ্যাঁ, ইমাম সাহেবের কথা সঠিক। ছোট এক দুই আয়াত নামাজে জোরে পড়ার স্থানে আস্তে পড়লে অথবা আস্তে পড়ার স্থানে জোরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না; বরং এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ ছোট তিন আয়াত বড় এক আয়াত পরিমাণ পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। রদ্দুল মুহতার: ১/৫৪৫, হালবী কবীর: ২/২৭৩, আল-বাহরুর রায়েক: ২/১৭০
সওম–ইতিকাফ
সমস্যা: রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ দিলে রোজা থাকবে কিনা? এক্ষেত্রে অনেক সময় গলায় ওষুধের স্বাদ অনুভব হয়, তেমনিভাবে কানে ওষুধ দিলে, বা পানি ঢুকলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কিনা? এক্ষেত্রে মূলনীতি কি জানালে উপকৃত হব।
মোহাম্মদ ইকবাল
মিরপুর, ঢাকা।
সমাধান: না, রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে গলায় ওষুধের তিক্ততা অনুভব হলেও রোজা নষ্ট হয় না। তেমনিভাবে রোজা অবস্থায় কানের ভেতরে পানি ঢুকে গেলে, কোনো ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা ভাঙে না। এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, পাকস্থলী ও মস্তিষ্কে কোনো কিছু প্রবেশের যে সরাসরি ছিদ্র রয়েছে, তার দ্বারা শরীরে কিছু ঢুকলে রোজা ভেঙে যায়। আর এরকম ছিদ্র হল, মুখ, নাক এবং মল-মূত্রত্যাগের পথ।
উল্লেখ্য যে, ফুকাহায়ে কেরাম কানকেও মস্তিষ্কে কোনো কিছু সরাসরি প্রবেশের রাস্তা মনে করেছেন। তাই তারা বলেছেন, কান দিয়ে পানি প্রবেশ করলে, বিশেষ করে তেল বা ওষুধ প্রবেশ করলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, কানের ছিদ্র দিয়ে সরাসরি মস্তিষ্কের সম্পর্ক নেই। তাই পরবর্তী মুফতি ও ফকীহগণ একমত হল যে, কান দিয়ে পানি, তেল ও ওষুধ ইত্যাদি কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভাঙবে না। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী হাদীস: ৮২৫৩, আদ-দুররুল মুখতার: ৩/৪২৬, হিন্দিয়া: ১/২৬৬, মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী: ১০/৮৩২
সমস্যা: আমার দাদা গত রমজানে অসুস্থতার কারণে কয়েকটি রোজা রাখতে পারেননি। তিনি রমজানেই ইন্তেকাল করেছেন। এখন তার সেই রোজাগুলোর ফিদিয়া দিতে হবে কিনা?
মুহাম্মদ সালমান
কাহালু, বগুড়া
সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদা যেহেতু অসুস্থ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ছুটে যাওয়া রোজাগুলোর কাযা আদায় করার সুযোগ পাননি। তাই তার ওপর ওই রোজাগুলোর ফিদিয়া আদায় করা ওয়াজিব হয়নি। অতএব তার ওই রোজাগুলোর ফিদিয়া আদায় করা লাগবে না। সূরা আল-বাকারা: ১৮৪, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭২৩০, আদ-দুররুল মুখতার: ২/৪০৬, বাদায়েউস সানায়ে: ২/৬৫৪
যাকাত
সমস্যা: আমার পিতার ইন্তেকাল হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে। পারিবারিক কলহ-দ্বন্দ্ব ও সম্পদ নিয়ে অনৈক্যের কারণে এখনো পর্যন্ত বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ বণ্টন করা সম্ভব হয়নি। জানার বিষয় হল, বাবা থেকে মীরাস সূত্রে যে সম্পদ আমি পাব, হস্তগত হওয়ার আগে যে বছর অতিবাহিত হচ্ছে ওই বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে কিনা।
মুহাম্মদ আজিজুল হক
দিনাজপুর
সমাধান: প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুযায়ী মিরাসের সম্পদ হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাত যোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু পারিবারিক অমিল হওয়ার কারণে মীরাস বণ্টন সম্ভব হয়নি, তাই ওই সম্পদ হস্তগত করাও সম্ভব হয়নি। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মিরাস সূত্রে যে সম্পদ পাবেন, তার যাকাত দিতে হবে না। রদ্দুল মুহতার: ২/২৮৩, বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪০০, ফতওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৬, আননুতাফ ফিল ফতওয়া: ১১১
সমস্যা: দুধ মাকে যাকাত দেওয়া জায়েজ হবে কিনা?
আবদুল্লাহ ফারুক
সিলেট
সমাধান: যাদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নয় দুধ মা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই দুধ মা যদি গরিব হয় তাহলে তাকেও যাকাত দেওয়া যাবে। হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী: ৭২১, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর: ৩/২৭৯, বেহেশতি জেওর: ৩/৩৩
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমার এক চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী এক পর পুরুষের সাথে কথা বলতো। তাই সে স্ত্রীকে রাগান্বিত অবস্থায় বলল, তুমি যদি ওই ব্যক্তির সাথে আর একবার কথা বল, তাহলে তোমাকে তালাক। এরপর তার স্ত্রী উক্ত ব্যক্তির সাথে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে কথা বলেছে। জানার বিষয় হল, এখন ওই কারণে কোনো তালাক পতিত হবে কিনা?
ফজলুল হক
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী মেসেজ পাঠানোর কারনে কোনো তালাক পতিত হয়নি। কেননা তালাক পতিত হওয়ার জন্য শর্ত ছিল, কথা বলা। মেসেজ পাঠানো এটি কথা বলার অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই উক্ত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পূর্বের মতোই বহাল আছে। প্রকাশ থাকে যে, বেগানা নারী পুরুষের পরস্পর সম্পর্ক সম্পূর্ণ অবৈধ ও গুনাহ। তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ ইত্যাদি সবই অবৈধ। দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ক্ষতির কারণ। ফাতাওয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়্যা: ২/২০৪, নাহরুল ফায়েক: ৩/৮৯, ইমদাদুল আহকাম: ২/২৫৭
সমস্যা: আমার এক বোন বাপের বাড়িতে ছিল। এ অবস্থায় তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। এখন কি তার জন্য স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করা জরুরি? নাকি বাপের বাড়িতে থেকে ইদ্দত পালন করতে পারবে?
শরীফ মাহমুদ
ঢাকা
সমাধান: তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা নারীদের জন্য স্বামীর বাড়িতে থেকেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। কোনো শরয়ী ওজর ছাড়া অন্যত্রে ইদ্দত পালন করা নাজায়েজ। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোনের জন্য তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। সুরা আত-তালাক: ১, সুনানে তিরমিযী: ১২০৪, আদ-দুররুল মুখতার: ৫/২২৯, আল-বাহরুর রায়েক: ৪/২৬৯
ওয়াকফ
সমস্যা: আমাদের মহল্লার মসজিদের জন্য এক ব্যক্তি কিছু নতুন চট দান করেছে। মসজিদের যেগুলো পুরাতন চট আছে তা বিক্রি করে অর্জিত টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা রাখা বৈধ হবে কিনা?
ওসমান গনি
কক্সবাজার
সমাধান: মসজিদের পুরাতন চটগুলো যদি মসজিদের কোনো কাজে না আসে, তাহলে ওই চটগুলোর দাতা যদি জানা থাকে, তাহলে তার অনুমতি নিয়ে, আর যদি সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার ওয়ারিশগণের অনুমতি সাপেক্ষে ওই চটগুলো বিক্রি করে মসজিদের ফান্ডে জমা রাখতে পারবে। আর যদি দাতা কে জানা না থাকে, তাহলে মসজিদ কমিটি চাইলে তা বিক্রি করে অর্জিত টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা করতে পারবে। রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৪৯, মাবসূতে সারাখসী: ১২/৫১, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৪১১, ফাতাওয়ায়ে কাযীখান: ৯/২০৪
সমস্যা: আমাদের এলাকায় কোনো লোক ইন্তেকাল করলে মসজির মাইকে তার ইন্তেকালের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে এলাকার লোকদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো লোক বলে, মসজিদের মাইকে এরকম ঘোষণা দেওয়া নাজায়েয়। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? জানতে চাই।
ইসমাঈল
সিলেট
সমাধান: মসজিদের মাইক আপনস্থানে রেখে (মাইক মসজিদের ভিতরে হোক বা বাইরে) এতে কারো জানাযার ঘোষণা করা নাজায়েয নয়। তবে এ ছাড়া সমাজের বা কোনো ব্যক্তির অন্য কোনো বিষয় যেমন, হারানো বস্তুর এলান ইত্যাদি মসজিদের মাইকে জায়েজ নেই। সহীহ মুসলিম: ১/৩০৯, রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৬৫, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৪১১
সমস্যা: করোনাকালীন সময়ে আমাদের গ্রামে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়, এবং রাস্তার পাশে অন্য যে মসজিদ আছে সেখানে মসজিদের পরিত্যক্ত কিছু জিনিস( যেমন: গাছের মিম্বার ও পুরাতন কার্পেট ইত্যাদি) আছে যা সেখানে কোনো কাজে ব্যবহার হচ্ছে না।
এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে এরকম এক মসজিদের পরিত্যক্ত জিনিসগুলো অপর মসজিদে যেখানে এর প্রয়োজন আছে সেখানে দিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে কি না?
আনিসুর রহমান
গোমাতলী, কক্সবাজার
সমাধান: পুরাতন মসজিদের যে সকল জিনিস এখন ব্যবহার হচ্ছে না তা পার্শ্ববর্তী নতুন মসজিদে ব্যবহার করা জায়েজ হবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আল-বাহরুর রায়েক: ৫/৪২৩, রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৫২, ফাতহুল কাদীর: ৫/৪৩৭
মান্নত
সমস্যা: হুজুর আমি একবার মান্নত করেছিলাম যে, আল্লাহ যদি আমাকে একটি পুত্র সন্তান দেন, তাহলে মাজারে একটি ছাগল দিব। এখন আল-হামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে পুত্র সন্তান দিয়েছেন। আজকে আমার এক ভাই বলল, মাজারে ছাগল দেওয়া নাকি গুনাহের কাজ; তাই আমি এখন মান্নত পুরা করার জন্য ওই ছাগলটি মাদরাসায় দিতে পারবো কিনা?
মুহাম্মদ মিযান
বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ
সমাধান: মাজারে কোনো কিছু দেওয়ার মান্নত করা নাজায়েজ ও শিরক। তাই এমন মান্নত করলে তা মান্নতেই হয় না বরং তা যেহেতু শিরকি কাজ তাই তা আদায় না করাই জরুরি। স্মরণ রাখা দরকার, মান্নত হচ্ছে একটি ইবাদত যা একমাত্র আল্লাহর নামেই করা যায়। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেমন পীরের নামে, মাজারের নামে মান্নত করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এসেছে, «مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَّعْصِيَهُ فَلا يَعْصِهِ» অর্থাৎ কেউ ভালো কাজের মান্নত করলে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর কেউ গুনাহের মান্নত করলে সে যেন তা পূর্ণ না করে। সুতরাং আপনি যেহেতু গুনাহের মান্নত করেছেন, তাই আপনাকে এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের মান্নত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সহীহুল বুখারী: ২/৬৪৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩/৪৬৯, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৩৫, ইমদাদুল ফতওয়া: ২/৫৫৩
বিবিধ
সমস্যা: ছোট বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আত্মীয়-স্বজন হাদিয়া স্বরূপ যে টাকা-পয়সা দিয়ে থাকে, তা পিতা-মাথার জন্য খরচ করা জায়েয হবে কিনা?
নাজির রায়হান
নড়াইল, শরীয়তপুর
সমাধান: নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদেরকে কেন্দ্র করে যে-সব অনুষ্ঠান হয়, উক্ত অনুষ্ঠানসমূহে উন্মুক্তভাবে ও অনির্দিষ্টভাবে যেসব উপহার দেওয়া হয়, তার মালিক কে হবে। সে বিষয়টি প্রত্যেক সমাজের প্রচলন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। যেমন- কোনো সমাজে যদি এমন প্রচলন থাকে যে, অনির্দিষ্টভাবে যা কিছু উপহার দেওয়া হয়, তা অভিভাবকগণকেই দেওয়া উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে অভিভাবকগণই তার মালিক বলে বিবেচিত হবে। চাই উক্ত উপহার নগদ অর্থ হোক বা ঘরে ব্যবহারের মতো কোনো সামগ্রী বা অন্য কোনো বস্তু। আর কোথাও অন্য কোনো প্রচলন থাকলে সেখানে তা-ই গ্রহণযোগ্য। তবে উক্ত হাদিয়াগুলো যেহেতু সন্তানকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়, বিশেষ করে নগদ টাকা-পয়সা, তাই তা সন্তানের জন্য খরচ করাই উচিত। প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যা প্রচলন রয়েছে তা শরীয়ের দৃষ্টিতে সহীহ নয়। এটা কুপ্রথার অন্তর্ভুক্ত। ফাতওয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ: ৩/১১৫, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৪০৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৪০০
সমস্যা: হুজুর! আমি একদিন রাস্তার ধারে হাঁটার সময় একটা স্বর্ণের চেইন পাই। অতঃপর বিভিন্ন জায়গায় এইটার নোটিশ লাগিয়ে দিই। কিন্তু একমাস পর্যন্ত কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় সেটা আমি দোকানে বিক্রি করে দেই এবং ওই টাকাগুলো দিয়ে কিছু কিতাব কিনে ফেলি। জানার বিষয় হলো, উক্ত স্বর্ণের চেইন একমাস পর বিক্রি করা এবং তার টাকাগুলো দিয়ে কিতাব কেনা শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?
মাহবুবুর রহমান
ঠাকুরগাঁও
সমাধান: রাস্তা-ঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু যদি এমন মূল্যের হয় যে, মালিক এর খোঁজে থাকবে বলে মনে হয়, তাহলে এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, ওই স্থান ও আশপাশ এবং নিকটবর্তী জনসমাগমের স্থানে যেমন মসজিদের সামনে, বাজার, স্টেশন ইত্যাদিতে প্রাপ্তির ঘোষণা দিতে থাকবে এবং প্রকৃত মালিক পেলে তার কাছে হস্তান্তর করে দেবে। কিন্তু এরপরও যদি মালিক না পাওয়া যায় এবং মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে না বলে প্রবল ধারণা হয়, তাহলে তা কোনো গরিব-মিসকিনকে সদকা করে দেবে। প্রাপক দরিদ্র হলে সে নিজেও তা রেখে দিতে পারবে তবে সর্ব অবস্থায় মালিকের সন্ধান পাওয়া গেলে সে যদি উক্ত মাল দাবি করে তাহলে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বর্ণের চেইনটি যদি কুড়িয়ে নেওয়ার পর যথাযথভাবে এলান করে থাকেন, অতঃপর মালিকের সন্ধানের ব্যাপারে নৈরাশ হওয়ার পর আপনি যদি তা বিক্রি করে থাকেন, এক্ষেত্রে আপনি উপযুক্ত হয়ে থাকলে আপনার জন্য তা বিক্রয় করে কিতাব ক্রয় করা বৈধ হয়েছে। সুনানুল কুবরা লিল-বায়হাকী: ১২০৫১, আদ-দুররুল মুখতার: ৪/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে: ৮/৩৪১, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৩০০