পাকিস্তানের রাজনীতি ও ইমরানের ভবিষ্যৎ
মাসুম খলিলী
লেখক: প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির বিশ্লেষক
সংসদের মেয়াদ শেষ এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিপথ নতুন মুখ নেবে বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন বিলম্বিত করতে শেহবাজ শরীফ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দুইদিন আগে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। মেয়াদ শেষে নির্বাচন করতে হয় ৬০ দিনের মধ্যে আর সংসদের মেয়াদের আগে ভেঙে দেওয়া হলে নির্বাচন করতে হয় ৯০ দিনের মধ্যে। এখন সেই নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে এ কারণে যে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে আদম শুমারি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই আদম শুমারির পর সংসদের আসন পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে। সেটি করতে হলে নির্বাচন স্বাভাবিক অবস্থায় তিন থেকে ছয় মাস পিছিয়ে যেতে পারে।
এর মধ্যে পাকিস্তানের গভীর ক্ষমতা বলয় হিসেবে পরিচিত সেনা প্রতিষ্ঠান রাজনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাইতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তোশাখানা মামলায় জেল দেওয়া ও নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণার পর সদ্য বিদায়ি সরকারের সময়কার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের একটি অধ্যায় আপাতত সমাপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়। এরপর এস্টাবলিশমেন্ট এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যাতে পরবর্তী মেয়াদে ক্ষমতার জন্য নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি সংসদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করার কয়েকদিন পর, নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও বিরোধী নেতা রাজা রিয়াজ আহমদ বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সিনেটর আনোয়ারুল হক কাকারের নাম দিয়েছেন। বিএপি ছিল পিটিআইয়ের জোট মিত্র যে দলটি মার্চের শেষের দিকে ইমরান খানের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল। এ নামটি যে গভীর ক্ষমতা বলয়ের ইচ্ছায় এসেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাকিস্তানের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রদেশ বেলুচিস্তানের স্বল্প পরিচিতি এই সিনেটর, পরবর্তী ভোট না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন এবং মূল মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিসভা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা থাকলেও বিদায়ী সরকার তার শেষ দিনে একটি নতুন আদমশুমারি অনুমোদন করার পর, নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নতুন নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কমিশনের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তার মতে, ২৪ কোটি লোকের দেশে শত শত ফেডারেল ও প্রাদেশিক নির্বাচনী এলাকার জন্য নতুন সীমানা আঁকার অনুশীলন কমপক্ষে ছয় মাস বা তার বেশি সময় নিতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সেটআপ যদি তার সাংবিধানিক মেয়াদের বাইরে প্রসারিত হয়, তাহলে একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে তার প্রভাবকে সুসংহত করতে দেবে।
পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এখন তিনটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে: ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), শেহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তবে ইমরান খানের জেল ও নিষেধাজ্ঞার পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরেকটি বড় ফ্রন্ট। তার গ্রেপ্তারের পর কোনো সহিংসতা হয়নি। ইমরানের পিটিআই আশা করবে এর মধ্যে সমর্থকদের সহানুভূতি বাড়বে ও ক্ষোভ কেটে যাবে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পুনরাবৃত্তি করবে।
কিন্তু সেনাবাহিনীর সাথে ক্রমাগত অচলাবস্থার মধ্যে, পিটিআই-এর জেতার সম্ভাবনা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী দল এখন ইমরানের দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের নিয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আনোয়ারুল হক খাকারের নাম ঘোষণাকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। ক্ষমতা থেকে অজনপ্রিয়তার তলানিতে পৌঁছে বিদায় নেয়া শেহবাজ শরীফের রাজনৈতিক মিত্ররা যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চেয়েছিলেন কাকার তার বাইরে থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ইমরানের একসময়কার মিত্র দলের এই সিনেটরকে বেছে নিয়েছে এস্টাবলিশমেন্ট। ইমরানের মনোনীত প্রেসিডেন্ট ডা. আলভী এখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল রয়েছেন।
সর্বশেষ রাজনৈতিক উন্নয়নে মনে হয় দেশটির গভীর ক্ষমতা বলয় মুসলিম লীগ-পিপিপি-জেইউআইকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার দায় নিতে চাইবে না। আবার একইসাথে ইমরান খানকে পাকিস্তানের নেতৃত্ব আবার ছেড়ে দেবেন বলেও মনে হয় না। ইমরানের দলের যে সমর্থন বলয় রয়েছে সেটিই ছিল পাকিস্তানের সেনা প্রতিষ্ঠানের জনসমর্থনের একটি প্রধান ভিত্তি। তবে সাবেক ও বর্তমান সেনাপ্রধানের সাথে তার রাজনৈতিক বিরোধ ক্ষমতার মূল ধারা থেকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ইমরানকে সরিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানে জোর গুজব হলো পিটিআইয়ের নেতৃত্ব ইমরান খান সাময়িকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কোরেশির হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন। ইমরান রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো বা দেশের বাইরে চলে যাবার সব প্রস্তাব এর আগে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলে যাবার পর তিনি নতুন এই প্রস্তাবে সম্মত হবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে সেনা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নেতৃত্ব ইমরানকে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
নির্বাচন বিলম্বিত করার যে সম্ভাবনা এখন দেখা যাচ্ছে তার পেছনে রাজনীতির নতুন বিন্যাসে সময় প্রয়োজন হওয়াটি বড় কারণ হতে পারে। তবে এস্টাবলিশমেন্টের সামনে সমস্যা হচ্ছে ইমরানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে তিনি যে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন সেখানে ব্যাপক জনসমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইমরানের বিরুদ্ধে তোশাখানাসহ যেসব মামলা দেওয়া হচ্ছে সেসবের যে ভিত্তি নেই সেটি এস্টাবলিশমেন্ট ভালো করেই জানে। ইমরান সাময়িকভাবে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকতে সম্মত হলে তার বিরুদ্ধে দমন পীড়নের আপাত: সমাপ্তি ঘটতে পারে।
ইমরানের অব্যাহত জনপ্রিয়তা যেমন তার জন্য একটি বড় শক্তি তেমনিভাবে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সাহসী প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়ালের কাছ থেকে তিনি যে আইনি আশ্রয় বা ন্যায় বিচার পেয়ে আসছিলেন সেটি বড় সহায়ক ছিল। বান্দিয়াল আগামী মাসে অবসর নেয়ার পর সেটি ইমরানের জন্য আর থাকবে না। অধিকন্তু এরপর যে বিচারপতি ইসা প্রধান বিচারপতি হতে যাচ্ছেন তার সাথে ইমরান খানের ব্যক্তিগত টানাপড়েন ছিল। এই অবস্থায় এস্টাবলিশমেন্টের ক্রোধ কমে আসা, বৈরী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে তুলনামূলকভাবে সহানুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তির আগমন ইমরানের জন্য মিশ্র ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে।
অবশ্য সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পাকিস্তানে অদূর ভবিষ্যতের জন্য হাইব্রিড রাজনীতি বজায় থাকবে: রাজনৈতিক দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ হবে, নির্বাচন হবে, কিন্তু সামরিক বাহিনী তার কর্তৃত্ব বজায় রাখবে যাকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা দেশের রাজনীতিতে উচ্চ-কর্তৃত্ববাদী বিশেষাধিকার বলে থাকেন৷ তারপরও কাছাকাছি সময়ে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত বিষয় নিয়ে উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা রয়েছে: আসন্ন নির্বাচনের সময়; ইমরান খান ও তার দলের ভবিষ্যৎ এবং একটি নতুন নির্বাচিত সরকার আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা।
পাকিস্তানে অক্টোবর বা নভেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ইসলামাবাদ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে আগামী বছরের শুরু পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বিত হবে। সরকার ও সামরিক বাহিনী আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচনের আগে আরও বেশি সময় চায় – সম্ভবত নিশ্চিত করার জন্য যে খানকে যে মামলায় জড়িত করা হয়েছে তাতে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সময়ের আগে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও ইমরান খান দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমানভাবে নিষ্ক্রিয় সমর্থনের ভিত্তি বজায় রেখেছেন। তিনি যে অসংখ্য মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন এবং সম্ভাব্য দোষী সাব্যস্ততার মধ্যে যদি তিনি সাময়িক স্বস্তি পেতে পারেন, তাহলে তিনি হয়তো তার দলকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এবং তার পরেও প্রাসঙ্গিক রাখতে পারবেন।
পাকিস্তানের অর্থনীতিও সামনে যথেষ্ট চাপের মধ্যে থাকবে এবং জেনারেল আসিম মুনিরের জন্য এটি একটি শীর্ষ উদ্বেগের বিষয় বলে মনে হচ্ছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদারদের কাছ থেকে সাহায্য এবং বিনিয়োগ চাওয়ার মাধ্যমে একটি ‘অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনার’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চীনও পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। উপরন্তু আগামী বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের আরেকটি আইএমএফ প্রোগ্রামের প্রয়োজন হতে পারে এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলমান আইএমএফ প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণ করতে এবং নতুন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা তা দেখার বিষয়। খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও পরের বছর, এটিও পরিষ্কার হয়ে যাবে যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ও চীন তাদের প্রদান করা সাহায্য ও বিনিয়োগের বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে কী আহরণ করেছে।
পাকিস্তানে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকার হলো তারা এখনও দক্ষিণ এশীয় বৃহত্তর অঞ্চলে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। স্থিতিশীলতার একটি তত্ত্ব ছিল যে তফশিল অনুযায়ী একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা দেশে রাজনৈতিক বিরোধ কমিয়ে দেবে এবং নির্বাচনে পারফরম্যান্স নিয়ে কম ব্যস্ত সরকার গঠন করবে; এটি পাকিস্তানের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা স্থিতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় কঠিন পছন্দ বেছে নিতে রাজনৈতিক স্থানও তৈরি করবে।
নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা আগামী মাসগুলিতে পাকিস্তান কোনো পথ অনুসরণ করবে সে সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি করে রেখেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নির্বাচন বিলম্বিত করতে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বহাল রাখতে চাইছে কিনা তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। দীর্ঘায়িত নির্বাচন বিলম্বের ক্ষেত্রে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা সহ পাকিস্তানের দুর্বল গণতন্ত্র সম্পর্কে চ্যালেঞ্জিং নীতিগত প্রশ্ন থাকবে।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোর পাশাপাশি প্রভাবশালী কূটনৈতিক পক্ষগুলো কি চাইছে সেটি দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইমরান খান তার ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে ও এস্টাবলিশসেন্টের ভূমিকার বিষয়ে যে প্রচার চালিয়েছেন তা তার জনপ্রিয়তার জন্য একটি সহায়ক বিষয় হিসেবে কাজ করেছে। বাস্তবেই যে এ ধরনের একটি বিষয় সক্রিয় ছিল তাও সবাই জানে। কিন্তু রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থেকে অনেক কথা বলা যায় না। বহু কিছু উপেক্ষা করা বা নীরবে সহ্য করার রাজনৈতিক পরিপক্কতা ইমরানের চরিত্রে এখনো আসেনি। একই সাথে তার মধ্যে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এস্টাবলিশসেন্টের প্রভাবকে দুর্বল করার যে চিন্তা ছিল সেটি পাকিস্তানের জন্য এখনো পর্যন্ত উচ্চাভিলাষ বলেই মনে হয়। কারণ একটি পরমাণু শক্তিধর বৈরী প্রতিবেশির উপস্থিতি পাকিস্তানের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা প্রতিষ্ঠানকে এক ধরনের বিশেষাধিকার দিয়ে রেখেছে। সেটি রাতারাতি বিদায় করতে চাইলে তা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকেও হুমকিতে ফেলতে পারে এই উপলব্ধির সাথে ইমরান খানের রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলোর মিল ছিল না। কোনো কোনো সময় মনে হয়েছে কিছু প্রান্তিক ভাবনার মানুষ ইমরানের পাশে থেকে তাকে হঠকারিতার পথে চালিত করেছে।
এত কিছুর পরও বলতে হবে ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করেছেন। সাময়িকভাবে তিনি ক্ষমতার বাইরে থাকলেও পাকিস্তানে তার নেতৃত্ব আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্ধশতাব্দীতে বিকল্প রাজনীতির যে ধারা আর কেউ তৈরি করতে পারেনি সেটি করে ইমরান সত্যিকার অর্থে অনেক বড় একটি কাজ করেছেন। এই মূল্যায়ন পাকিস্তানকে নিয়ে যারা গভীরভাবে ভাবেন তাদের রয়েছে বলে মনে হয়।