জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয়

কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয়

 

ডা. ফরহাদ নেওয়াজ

        লেখক: পরামর্শক, কার্ডিওলজি বিভাগ

        বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

কোলেস্টেরল জিনিসটা কী? কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। এটি কয়েক ধরনের হয়ে থাকে ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টরল। এর মধ্যে একটা হলো উপকারী। আর তিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমরা বেশ চিন্তিত এই কারণে, এই কোলেস্টেরল জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত তা বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এরকম কোলেস্টেরল বাড়লে যেকোনো রক্তনালিকে আক্রান্ত করতে পারে, মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করতে পারে, লিম্বস আক্রান্ত করতে পারে, ব্লক করতে পারে। যদি হার্টে হয় তো হার্ট অ্যাটাক হলো, যদি লিম্বসে হয় তাহলে হাঁটতে অসুবিধা হবে। মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হতে পারে।

কোলেস্টেরল বেড়ে যায় কেন? প্রথমত আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে। আর এমন জীবন যাপন যদি করেন, বেশি শুয়ে বসে থাকা। তারপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন এসব কারণে হয়। আর কিছু রোগ রয়েছে এটার জন্য দায়ী ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। আর কিছু ওষুধ আছে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। স্টেরয়েড, হাইড্রোকোথায়াজাইড এগুলো রোগকে বাড়িয়ে দেয়।

উপকারী কোলেস্টেরল। সেটা হলো এইচডিএল। এটা শরীরের পেরিফেরি থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে লিভারে নিয়ে যায়। পরে লিভার দিয়ে এটা বেড়িয়ে যায়। এটা বাড়লে সেটা আমাদের জন্য উপকারী। উপকারী কোলেস্টেরল কমে যায় যদি কারও ওজন বাড়তে থাকে। অথবা যদি ডায়াবেটিস হয়। এটা কমানোর উপায় নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাছ বেশি খাওয়া। তাহলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়বে। তার মানে যে কারণে অপকারী কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, সেই কারণেই উপকারী কোলেস্টেরল কমে যায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কী? একটি হচ্ছে ওষুধ ছাড়া। এ ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে লাল মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। বেশি শাক-সবজি এবং মাছ বেশি করে খেতে হবে। আর নিয়মিত হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর খারাপ অভ্যাস যেমন ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।

একজন মানুষ কোলেস্টেরলে আক্রান্ত হলে নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজন আছে অবশ্যই। আমরা অনেক সময় বলি ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল। আট ঘণ্টা খালি পেট থেকে এরপর লিপিড প্রোফাইল চেক করতে হবে। তিন থেকে ছয় মাস পরপর এটা করতে হবে।

আর যাদের কোলেস্টেরল নেই, সে যদি রোগটি বাড়তে দিতে না চায় তার জন্য পরামর্শ হলো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া। যেমন- শাকসবজি এবং মাছ বেশি করে খেতে হবে। গরুর মাংস, খাসির মাংস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। এভাবেই সে ভালো থাকতে পারবে। এরপরও যদি পারিবারিক কারণে অনেকের কোলেস্টেরল বেড়ে যায় তাদের ওষুধ খেতে হবে।

লাল মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু, খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই এর প্রস্তুত প্রক্রিয়ার মধ্যে এমন কোনো বিষয় আছে কি যে চর্বি এড়িয়ে যাওয়া যাবে? লাল মাংস গ্রিল করে খাওয়া যেতে পারে। গ্রিল করলে কিছুটা চর্বি কমে যায়। আরেকটি হলো উপলক্ষ্য অনুযায়ী মাঝে মধ্যে খাওয়া যেতে পারে। এটি প্রস্তুত করার সময় মাংসের টুকরো যতটুকু পারা যায়, ছোট করতে হবে, চর্বিটা ফেলে দিতে হবে।

বাদাম হলো আনস্যাচুরেটেট ফ্যাট। আনস্যাচুরেটেট ফ্যাট শরীরের জন্য মোটামুটি ভালো। এটি শরীরের উপকারী কোলেস্টেরল কিছুটা বাড়ায়। তাই বাদাম খাওয়া যাবে।

আমরা জানি তেলের সঙ্গে আরেকটি বিষয় আছে। অনেক তেলের বিজ্ঞাপনে আমরা দেখি এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না। তার মানে কিছু কিছু তেল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। তাহলে কোনো তেল আমাদের জন্য ভালো? অলিভ ওয়েল খেতে পারলে খুবই ভালো হয়। আরেকটি হলো ধানের কুঁড়া থেকে যে তেলটা হয় সেটি। এটিও উপকারী। বাকি যেই তেল আছে সয়াবিন তেল বা অন্য যেসব তেল আছে, হৃদরোগীদের জন্য এটা ক্ষতিকর। তবে পরিমিত খেলে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না। খাদ্যে যতটুকু না দিলেই নয়, অতটুকুই দিতে হবে।

কোলেস্টেরল বেশি থাকলে যদি বেশি লবণ খায় কেউ, কাঁচা অথবা ভাজা এর সঙ্গে কি কোলেস্টেরল বাড়ার সম্পর্ক আছে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই আমাদের কাঁচা লবণ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আবার কোলেস্টেরলের সঙ্গে ডায়াবেটিসও সম্পর্কযুক্ত। তাই ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস বাড়লে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। আর যেই কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য উপকারী সেটা কমে যায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে পাঠকদের জন্য আমার পরামর্শ হবে, আপনারা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে অভ্যস্ত হোন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলবেন এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন-যাপনের চেষ্টা করবেন। তাহলে আমরা সবাই ভালো থাকতে পারবো।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ