জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নববর্ষ: উন্মোচিত হোক সাংস্কৃতিক জাগরণের নবদিগন্ত

 মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

 লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা আর শুভবার্তা নিয়ে হাজির হয় নতুন বছর। বাংলা সন বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সন। বাদশাহ আকবর রাজকোষের খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে একটি ফসলি সন উদ্ভাবন করার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানি আমীর ফতেহুল্লাহ সিরাজীকে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে দায়িত্ব প্রদান করেন। আমীর ফতেহুল্লাহ সিরাজী হিজরি সনের চলমান বর্ষকে বজায় রেখে চন্দ্র গণনাভুক্ত বর্ষ ৩৫৪ দিনের স্থলে ৩৬৫ দিনে এনে হিজরি সনকে সৌর গণনাভুক্ত করে একটি নতুন সনের উদ্ভাবন করেন। ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাদশাহ আকবর এক ফরমান জারির মাধ্যমে এই সন অনুযায়ী খাজনা আদায়ের ঘোষণা দেন। এ কারণে এটি ফসলি সন নামেও এই ভূখণ্ডের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে।

হিজরি সনের সঙ্গে যেমন বাংলা সনের সম্পর্ক সুনিবিড় তেমনই এই দুটি সনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কও সুনিবিড়। এখন বাংলা নববর্ষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির নিজস্ব উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে তাই আমাদের নিজস্বতার কথা স্মরণে রাখতে হবে। অপসংস্কৃতির ফাঁদে পড়ে যেন আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে বিকৃত না করি, আমাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, পরিচ্ছন্ন রুচিবোধকে বিনষ্ট না করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, একটি বিশেষ মহল বাংলা নববর্ষের নামে বেশ কিছুদিন থেকে বিজাতীয় সংস্কৃতি লালনের মহড়া দিচ্ছে। মূলধারার সংস্কৃতি চর্চার নামে এরা এমন সব হাস্যকর আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যার সাথে এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনাচার ও সংস্কৃতি চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।

নববর্ষকে আহ্বান জানানো, আবেগে উত্তেজনায় হিল্লোলিত হয়ে উঠা, দৃশ্যত এর মধ্যে কোনো পাপ বা অসংগতি নেই। পাপ তখনই হবে যখন এই আহ্বান সীমা অতিক্রম করে। আনন্দ খারাপ নয়, কিন্তু তা শিরক ও অশ্লীলতার সঙ্গে যুক্ত হলে খারাপতো বটেই, আনন্দ তখন একেবারেই গর্হিত ও হারাম। কারও অজানা নয়, পহেলা বৈশাখে ভোর না হতেই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মধ্য দিয়ে রমনায় পান্তা খাওয়ার মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বরে যুবক-যুবতিরা শরীরে উলকি এঁকে নেবার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে, নানা দিকে নানা মিছিল শুরু হয়ে যায়। আর মিছিল শুধু মিছিল নয়, ঢোল-বাদ্য সহকারে বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের মুখোশ পরিহিত নারী-পুরুষের বেহায়া অঙ্গভঙ্গি নিয়ে সে এক অকথ্য দৃশ্য। এরা যখন বানর, হনুমান, বাঘ, ভালুক, হাতি, ঘোড়ার মুখোশ পড়ে রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা (!) বের করে তখন মনে হয় এরা নিজেদেরকে মানুষ পরিচয় দিতেই বুঝি লজ্জাবোধ করে। সারাটা দিন এক শ্রেণির বেহায়া মানুষের অসভ্য-অশ্লীলতার দুর্গন্ধে ভরে থাকে, আর সন্ধ্যায় শুরু হয়ে যায় পূজারি-পূজারিণীদের ‘এসো হে বৈশাখ’ ইত্যাদি আরতি ধরনের বন্দনগীতি নিয়ে দেহমন সমর্পিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা আসলে প্রকৃতি পূজারই নামান্তর। আর এর সবই চলতে থাকে প্রগতিবাদের নামে, নান্দনিকতা ও আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির নামে।

‘আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি’ কথাটা শুনতে একেবারে দৈববাণীর মতো মর্মস্পর্শী। কিন্তু সমস্যা হলো, বিশ্বাস ও শিল্পচেতনায় যদি অশ্লীলতার অনুপ্রবেশ ঘটে, তাওহীদভ্রষ্ট হওয়ার কোনোরূপ সম্ভাবনা থাকে, তাহলে অন্তত মুসলমানের জন্য তা রীতিমতো বিপজ্জনক। অবশ্য পহেলা বৈশাখে নববর্ষ বরণের যে ক্রিয়া ও প্রক্রিয়া, তার কোনো একটি বিষয়েও আমাদের আপত্তি নেই, আপত্তি থাকার কোনো কারণও নেই। শঙ্খধ্বনি হোক, পান্তা ভাতের নৈবেদ্য সাজিয়ে অতিথিরূপী নারায়ণ সেবা হোক, উলকি অঙ্কন, চন্দন বা সিন্দূর টিপ পরিধান হোক, নৃত্য সঙ্গীত, ঢোলবাদ্য, উলুধ্বনি, মঙ্গলপ্রদীপ, প্রকৃতিপূজা যাই-ই হোক না কেন, কোনো কিছুতেই আমাদের সামান্য আপত্তি নেই। বরং আমরা আশা করবো, হিন্দু সম্প্রদায় তাদের মতো করে নির্বিঘ্নে আলপনা এঁকে ঘট সাজিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে পহেলা বৈশাখকে নানা আচার-অনুষ্ঠানে মুখরিত করে তুলুক। এমনকি তাদের কাছে প্রকৃতি পূজা যেহেতু সিদ্ধ, তারা মনে করলে মঙ্গলদাত্রী বৈশাখি দেবী-প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা অর্চনাও করতে পারে। আমাদের আপত্তি শুধু একটি ক্ষেত্রে আর তা হলো এতে অনেক মুসলমান নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ। আমরা বলতে চাই, ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রীতিপাশের আকর্ষণে অতিরিক্ত বাঙালি হতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত যেন মুসলমানিত্ব খারিজ হয়ে না যায়। তাহলে তা হবে মুসলমানদের জন্য সমূহ বিপদ। অবশ্য যারা এই বিপদ বরণ করে নেবার মধ্যেই অসাম্প্রদায়িক উদারতা ও বাউল বা বৈষ্ণবাশ্রিত মানবপ্রেমের সন্ধান লাভ করেন, তাদের কথা স্বতন্ত্র। তারা হয় প্রবৃত্তি তাড়িত চতুর মতলববাজ, না হয় তারা লালন বা রামকৃষ্ণের মতো ঈশ্বরের প্রীতিধন্য অসাধারণ পরমহংস।

এই উদার বাঙালি পরমহংসদের ক্রমাগত প্রচার প্ররোচনার কারণেই আত্মবিস্মৃত বহু মুসলমান আজ পহেলা বৈশাখের অনেক তাওহিদ বিনাশী বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আপন বলে গ্রহণ করেছে। অথচ ইসলামে এমন সব আনন্দকর্ম পুরোপুরি নিষিদ্ধ, যা যৌনতা, বেহায়াপনা, শিরক ও অশ্লীলতার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে।

ইসলাম বিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মুসলিম নামধারী কতিপয় দালাল শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে এধরনের সাংস্কৃতিক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি বিশেষ শিক্ষিত শ্রেণি, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, যুবক-যুবতি এ সাংস্কৃতিক অপতৎপরতার জালে ক্রমবর্ধমান হারে জড়িয়ে পড়ছে। এরা সংখ্যায় খুবই কম। এদের কুরুচিপূর্ণ অদ্ভুত অনুষ্ঠান দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি চেতনায় কোনো আঁচড় কাটতে পারবে না যদিও, তথাপি এসব অশুভ প্রয়াস সম্পর্কে সকলের সজাগ থাকা একান্ত দরকার। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার গগনচুম্বী গ্রাসে আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য আজ হুমকির মুখোমুখি। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে সমালোচনা বা সতর্কতাই যথেষ্ট নয়। ইসলামি সংস্কৃতির ধারাকে আরও প্রাণময় ও বেগবান করে তুলতে সচেতন জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে।

বর্ষ শুরুর শুভলগ্ন আমাদের নব জাগরণের উপযুক্ত সময়। বাংলা নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের আকিদা-বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতির স্বচ্ছ আলোকে নববর্ষ তথা সমগ্র সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আমাদের জাতীয় জীবনকে সুস্থ, গতিমান ও লক্ষ্যভেদী করে তুলতে হবে।

আমরা পারস্পরিক সালাম ও কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে, ভবিষ্যৎ দিনগুলো সুখের হোক- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের দিনটি অতিবাহিত করতে পারি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ইমান বিধ্বংসী যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

দুঃখ

আসাদুজ্জামান আসিফ

দুঃখে ভরা জীবন ওহে

শেষ মানজিল কোথায়,

সুখের আমেশ নাহী মিলে তার

 রবির অস্তবেলায়।

চৌ দেয়ালে বন্দি মানুষ

ধনাট্য দের ধন,

সেই রাহে আজ স্বাধিনতারই

সুখ পোহে কয়জন।

চারিপাশ ঘিরে আধারের ছোঁয়া

প্রদ্বীপ কী আর উঠে,

ঘন কৃষ্ণার বক্ষ ছিড়ে

ভাঙছে যে সব ঠোঁটে।

পাহাড়ের মতো হৃদয় কিছু

আকাশের মতো উদার,

প্রতিজনে আজ সে আশায় ভোগে

রিজিকের থালে নাহার।

খোরাকের দায় জীবন আরুট

কত যে বেঁদনা নীল,

কে থাকে পাশে আজীবন তবে

জুটেনা তো এক চিল।

দিন ফুরাবার আগেই ওরে

চাল ডাল সব শেষ,

এভাবেই চরে কত শত প্রাণ

দুখ ওযাহেও বেশ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ