মদীনা যিয়ারতের
না’ত শরীফ
মূল ফারসি: মওলানা আবদুর রহমান জামী (রহ.)
অনুবাদ ও ব্যাখ্যা: ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক
মওলানা জামীর দেয়া শিরোনাম:
لباس ضراعت پوشدن و در اقتباس نور شفاعت کوشددن۔
মিনতির পোষাক পরিধান এবং শাফায়াতের নূর আহরণের চেষ্টা।
একটি ঘটনা মূল বইয়ের সূত্রে পাইনি; তবে বুজুর্গ আলেমগণের মুখে শুনেছি, তাদের লিখনীতেও পেয়েছি। ঘটনা মওলানা আবদুর রহমান জামীর মদীনায় রসুলে পাক (সা.)-এর রওজা শরীফে একটি কবিতা নিবেদন নিয়ে। মওলানা জামী (রহ.) মক্কা শরীফ থেকে রওনা হলেন, স্বপ্নের মদীনার ধুলোবালি চোখের সুরমা বানাবেন। মক্কার শাসক স্বপ্নের দেখেন, মদীনার শাহানশাহ নির্দেশ দিচ্ছেন আবদুর রহমান নামের এক লোক মদীনা আসছে। তাকে বাধা দাও। বারবার বাধা পেয়ে জামী কৌশল পালটান। উটের যে ঝুলিতে খাবার থাকে সেই ঝুলিতে লুকিয়ে রওনা দিলেন এবার। কিন্তু তারপরও বাধা। মক্কার শাসককে স্বপ্নের সতর্ক করা হল, সাবধান। আবদুর রহমান লুকিয়ে আসছে। শাসক তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর কারাবন্দি করা হল। আবার স্বপ্নের দেখেন, আবদুর রহমান কোনো অপরাধ করার কারণে মদীনা আসতে বারণ করা হয়নি। সে চেয়েছিল, আমার রওজায় দাঁড়িয়ে একটি কবিতা পাঠ করবে। যদি সে চেষ্টায় সফল হয়, আল্লাহর নিয়ম ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাকে আমার সাক্ষাৎ দিতে হবে। তাই তাকে ঠেকিয়ে রাখার নির্দেশ। কবিতাটি জামীর ইউসুফ–জুলায়খা কাবগ্রন্থের শুরুতে আছে। কিছু প্রিয়জন এখন প্রাণের মদীনায় সফরে আছেন। উতালা মন চাইল দীর্ঘ ফারসি কবিতাটির অর্থ মদীনা মুনাওয়ারায় নিবেদন করি ফেইসবুকের কল্যাণে।
কবিতাটি ছয় কিস্তিতে ছয় দিনে পোস্ট দিয়েছিলাম ফেইসবুকে। বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, আল্লাহর হাবীবের আশেকদের মনে কবিতাটি দোলা দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মনের চাহিদা পূরণ এবং নতুন প্রজন্মকে ঈমানের অনিবার্য শর্ত রসুলপ্রেমের প্রতি আকৃষ্ট করার নিয়তে পোস্টগুলো পুস্তক আকারে একত্রিত করেছি। প্রতিদিনের পোস্টে নতুন একটি শিরোনাম দিয়েছিলাম। এখন সেগুলো উপ-শিরোনাম আকারে বন্ধনীর ভেতরে উপস্থাপন করছি। উপশিরোনামগুলো অনুাবদক ও ব্যাখ্যাতার পক্ষ হতে দেয়া, মূল কবিতার বা মওলানা আবদুর রহমান জামী (রহ.)-এর রচনায় নেই, একথা বোঝানোর জন্য বন্ধনী দিয়ে আলাদা রেখেছি। আবদুর রহমান জামী (রহ.)-এর বসবাস ছিল তখনকার বৃহত্তর খোরাসানের অন্তর্গত হেরাতে। হেরাত এখন আফগানিস্তানের একটি প্রদেশ। সেখান থেকে মদীনায় যেতে মক্কায় তার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাটি ইতিহাসের বিচারে প্রমাণিত নয়; তবে কবিতার ভাষা, ভাব ও প্রেম-আবেগের তরঙ্গমালা বিবেচনায় নিলে যে কেউ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে, এই কবিতার অন্তরালে এ ধরনের কোনো ব্যাপার লুকিয়ে থাকতে পারে এবং তা অবাস্তব ও অসম্ভব নয়।
মওলানা আবদুর রহমান জামী (রহ.) ফারসি সাহিত্যের সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি আগাগোড়াই হযরত নবী করীম (সা.)-এর প্রেম ও ভালেবাসায় উন্মাতাল। এই কবিতায় নবীজির বিরহে তার প্রেম কাতরতা বিরহী প্রেমিকের চেয়েও করুণ। গোটা জগত যেন সেই কাতরতায় আক্রান্ত, তার সাথে একাত্ম, এ পরিস্থিতিতে তিনি রসুলে পাকের রহমতের ভিখারি।
এক.
ز مہجوری برآمد جان عالم
ترحم یا رسول اللہ ترحم
উচ্চারণ: যে মাহজুরী বরআমদ জানে আলম
তারাহ্হাম এয়া রসুলাল্লাহ তারাহ্হাম।
অর্থ: আপনার বিরহে জগতের প্রাণ ওষ্ঠাগত
দয়া করুন হে রসুল দেখান আপনার অনুগ্রহ।
কবির চেতনায় নবীজি (সা.)-এর বিচ্ছেদে গোটা দুনিয়া শোকে বিহ্বল। গোটা দুনিয়ার প্রাণ যেন বেরিয়ে আসে, ওষ্ঠাগত। এ মুহূর্তে এমন অস্থিরতার অবসান আনতে পারে আপনায় দয়া। কাজেই হে রসুল! তারাহহাম, রহম করুন, আপনার রহমত, দয়া মায়ার পরশে শামিল করুন আমাদের।
আপনার কাছে এমন দাবি একেবারেই যৌক্তিক। কারণ আপনিই তো সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমত। অনুযোগের সুরে তিনি বলছেন,
দুই.
نہ آخر رحمت للعالمینی
ز محروماں چرا فارغ نشینی
উচ্চারণ: ন আখের রহমাতুল লিল আলামীনী
যে মাহরুমাঁ চেরা ফারেগ নেশিনী।
অর্থ: আপনি কি জগতসমূহের জন্য রহমত নন,
বঞ্চিতদের ভুলে থাকবেন তা কি করে হয়?
মওলানা জামী (রহ.) বলেন, আপনি কী রহমতুল লিল আলামীন নন। অবশ্যই আপনি জগতসমূহের প্রতি আল্লাহর রহমত। তাহলে কীভাবে আমরা বঞ্চিতদের প্রতি, বিরহীদের দুঃখ লাঘবে মনোযোগ না দিয়ে পারছেন। কবি কুরআন মজীদের এ আয়াতের ভাবধারাকে ধারণ করেছেন: وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ۰۰۱۰۷ (আমি আপনাকে একমাত্র রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি)।’[1]
কবির চেতনায় নবীজি মদীনা মুনাওয়ারায় রওজা পাকে শায়িত। তিনি ঘুমিয়ে আছেন শান্তির পরশে। সেখান থেকে জাগাতে চান নবীজিকে, পবিত্র কদমে হৃদয়ের আবেগ ও আর্তির ছোঁয়া দিয়ে। তাঁর ভাষা কত মোলায়েম, কত আদব, ভক্তি ও ভালোবাসায় আকীর্ণ তা ভাষান্তর করা সম্ভব নয়। বাংলায় যথার্থ অর্থ, শব্দের গাম্ভীর্য ও ভাবের ব্যাপকতা অনুবাদ করার শক্তি যে আমার নেই।
ফারসি সাহিত্যে প্রিয়তমের মায়াময় উপমা গুলে লালা, লালাফুল। লালাফুল আমাদের দেশের টিউলিপ। প্রিয়তমের অবয়ব লালাফুলের মতো কোমল, মায়াবী, প্রাণবন্ত, প্রাণবর্ধক। ঘুমিয়ে থাকা লালাফুল যখন মাটি ফুঁড়ে বের হয় তার ভুবন মোহন সৌন্দর্যে জগতবাসী বিমোহিত হয়। কবি মদীনার লালা ফুলকে জাগাতে চান। কবির ভাবনায় নবীজি ঘুমিয়ে আছেন। সেই ঘুমও বড় আদুরে, নার্গিস ফুল যেমন দেখতে নিদ্রালু। প্রিয়নবীর নয়ন যুগল নার্গিস ফুল সদৃস। নার্গিস ফুলের ঘুম ভাঙাতে চান তিনি।
তিন.
ز خاک ای لالہ سیراب برخیز
چو نرگس خواب چند از خواب برخیز
উচ্চারণ: যে খাক আয় লালায়ে সায়রাব বরখীয
চো নার্গিস খাব চন্দ আয খাব বরখীয।
অর্থ: মাটির বুক চিরে হে টিউলিপ! উঠুন আপন সজীবতায়
নার্গিস ফুলের মত ঘুমিয়ে আর কতকাল, জাগ্রত হোন।
মওলানা জামীর চেতনায় নবীজি (সা.) ইয়ামেনি চাদর মুড়ে আছেন। আমাদের দেশে কাশ্মীরী শালের কদর সর্বমহলে। সে দেশে ইয়ামেনি চাদর প্রিয়তার প্রতীক। কুরআন মজীদেও চাদর জড়ানো নবীজিকে সম্বোধন করা হয়েছে। নজরুলের গানে তিনি কমলিওয়ালা। আল্লাহর ভাষায় মুযযাম্মিল-মুদ্দাসসির। কবি নবীজির চেহারা মোবারক দেখতে চান। কারণ তার চেহারার আলোতে হেসে উঠবে জীবন প্রভাত।
চার.
برون آور سر از برد یمانی
کہ روی توست صبح زندگانی
উচ্চারণ: বুরুন আওয়ার সর আয বুর্দে ইয়ামানী
কে রূয়ে তুস্ত সুবহে যিন্দেগানী।
অর্থ: আপনার শির মোবারক বের করুন
ইয়ামেনি চাদর সরিয়ে,
কেননা আপনার চেহারার সৌন্দর্যে
জাগবে জীবন প্রভাত হয়ে।
ইয়া রসুলাল্লাহ! আমাদের দিকে তাকান। দুঃখ-দুশ্চিন্তায় জীবনটা আঁধার রাতের মতো হয়ে গেছে। আপনার চেহারার নূরে আমাদের জীবন যেন আলোকিত, সার্থক হয়। আমরা নানা দুশ্চিন্তা দুঃখ দুর্ভাবনায় নিমজ্জিত। এর থেকে নিস্তার পেতে পারি আপনার চেহারার রূপ দর্শনে।
পাঁচ.
شب اندوہ ما را روز گردان
ز رویت روز ما فیروز گردان
উচ্চারণ: শবে আন্দুহ মারা রূয গর্দান
যে রূয়াত রূযে মা ফীরুয গর্দান।
অর্থ: আমাদের দুশ্চিন্তার রজনীকে বদলে দিন
দিনের আলোতে,
আমাদের দিনকাল সার্থক করুন
আপনার চেহারার ঝলকে।
(শাফায়াত লাভে মহাকবি মওলানা
জামীর হৃদয়-নিংড়ানো আকুতি)
মওলানা জামীর চেতনায় নবীজি (সা.) এখন মদীনায় রওজা আকদাসে নিদ্রা হতে জাগ্রত হয়েছেন। তিনি বিরহী প্রেমাসক্তকে দর্শন দেবেন দয়াপরবশ হয়ে। জামী সাক্ষাতের সময়কার নবীজির একটি অবয়ব অঙ্কন করছেন মনের আঙ্গিনায়। নবীজি (সা.)-এর পরনে কী থাকবে বা মাথার পাগড়িতে কীসের সুবাস বইবে তার চিত্রকল্পও এঁকেছেন মনের মাধুরি মিশিয়ে। বলেন, আপনি তশরিফ রাখবেন তো আপনার গায়ে পরিহিত থাকবে একটি জামা। জামাটি হবে মিশক আম্বরের সুগন্ধে সুরভিত। আর আপনার মাথার পাগড়ি হবে কর্পুরের সুগন্ধে সুবাসিত।
ছয়.
بہ تن در پوش عنبر بوی جامہ
بہ سر بربند کافوری عمامہ
উচ্চারণ: বে তন দরপুশ আম্বর বূয় জামা
বে সর বরবন্দ কাফুরি আমামা।
অর্থ: গায়ে পরিধান করুন মেশকে আম্বরের সুরভিত জামা,
আপনার মাথায় বাঁধুন কর্পুর-সুবাসিত পাগড়িখানা।
নবীজির পদচারণা কেমন হবে তারও চিত্র এঁকে দিচ্ছেন জামী কল্পনার ভাঁজে ভাঁজে। আপনার মাথা মোবারকের দুপাশ দিয়ে ঝুলে পড়বে কোঁকড়ানো চুল, জুলপি, অলকগুচ্ছ। আপনার পদচারণা দেখে মনে হবে চিরসবুজ দেবদারু চলন্ত, পথ চলছে আর ছায়া বিস্তার করেছে দুপাশে বিস্তৃত পরিসরে।
সাত.
فرو آویز از سر گیسوان را
فکن سایہ بہ پا سرو روان را
উচ্চারণ: ফুরু আওয়ীয আয সর গীসুয়ান রা
ফকন সায়া বে পা সরওয়ে রওয়ান রা।
অর্থ: আপনার শির মোবারক হতে ছেড়ে দিন
মায়বি অলকগুচ্ছ,
সুদর্শন শরীরের ছায়া বিস্তার হোক,
যা চলন্ত দেবদারু তুল্য।
চিরসবুজ দেবদারুর ফারসি নাম সার্ব। সার্ব ফারসি সাহিত্যে প্রেমাস্পদের সুন্দর একহারা গড়নের প্রতীক। সেই সার্বের সাথে নবীজিকে তুলনা করেছেন জামী তার আরও অনেক কবিতায়। যেমন ‘গুল আয রুখাত আমুখতা’ কবিতায়। এখন হযরতের পাদুকার বর্ণনা দিতে চান, কোন দেশের চামড়া দিয়ে তৈরি, পাদুকার গায়ে যে ফিতা থাকবে তা কোন সূতা বা রশিতে অলঙ্কৃত তারও বিবরণ।
আট.
ادیم طایفی نعلین پا کن
شراک از رشتہ جانہای ما کن
উচ্চারণ: আদীমে তায়েফী না’লাইন পা কুন
শেরাক আয রিশতায়ে জানহায়ে মা কুন।
অর্থ: আপনার পায়ে দিন তায়েফি চামড়া নির্মিত পাদুকা,
আমাদের হৃদপিণ্ডের রগগুলো হোক পাদুকার ফিতা।
রওজা আকদস থেকে নেমে আসতে হলে আপনার পায়ে থাকতে হবে না’লাইন, খড়ম, পাদুকা। সে পাদুকা হবে বিখ্যাত তায়েফি চামড়ায় তৈরি। আর পাদুকায় যে ফিতা লাগানো থাকবে সেই ফিতা হবে আমার হৃদপিণ্ডের সাথে যুক্ত রগসমূহ।
এই কামনা, এমন আর্জি-আর্তি আমার একার নয়; বরং আপনার দর্শন পাওয়ার জন্য গোটা জগত উন্মুখ হয়ে আছে। জগত যেন তার দৃষ্টিকে ফারাশ, গালিচা রূপে বিছিয়ে রেখেছে আপনার পদচারণার অপেক্ষায়, আপনার পদচুম্বনের আশায়।
নয়.
جہانی دیدہ کردہ فرش راہند
چو فرش اقبال پابوس تو خواہند
উচ্চারণ: জাহানী দীদা কর্দে ফারশে রাহ আন্দ
চো ফারশ একবালে পাবূসে তো খাহান্দ।
অর্থ: গোটা জগত দৃষ্টি বিছিয়েছে গালিচা রূপে
আপনার পদচুম্বন করে ধন্য হবার অধীর আগ্রহে।
মওলানা জামী এখন নবীজিকে হৃদয়ের আঙ্গিনায় পেতে চান। হারাম শরীফের বাইরে একটি সাহান, চবুতরা আছে। জামীর আকুতি, সেই চত্বরে আপনি দয়া করে কদম রাখুন। তবে আপনার কদম মোবারক মাটি স্পর্শ করবে না। জামী নিজেকে আড়াল করে বলছেন, আপনার গলির মাটি চুম্বন করে করে যারা আসছে, তাদের মাথার তুলির ওপর আপনার কদম মোবারক রাখুন। ফার্কের অর্থ মাথার তুলি করলে যথার্থ হবে না। চুলে সিঁথি পাড়ার পর তুলির যে অংশটি লম্বাটে সাদা দেখায় সেটিই ফার্ক। আপনি আমার ফার্কের ওপর কদম মোবারক রাখুন।
দশ.
ز حجرہ پای در صحن حرم نہ
بہ فرق خاک رہ بوسان قدم نہ
উচ্চারণ: যে হুজরা পায় দর সাহনে হারাম নেহ
বে ফর্কে খা’কে রাহ বূসান কদম নেহ।
অর্থ: হুজরা হতে পা মোবারক
হেরেমের আঙ্গিনায় রাখুন,
আপনার গলির ধুলি চুমে চুমে
যারা এলো তাদের তুলির ওপর।
(মদীনার পরশ পেতে হৃদয়কাড়া না’ত শরীফ)
ফারসি সাহিত্যের সর্বশেষ শ্রেষ্ঠকবি আশেকে রসুল মওলানা আবদুর রহমান জামী ভাবের তরঙ্গে ভালোবাসার ভেলায় এখন নবীজি (সা.)-এর সম্মুখে হাজির। তার হৃদয় মথিত আর্জি, ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনার হাতখানি বাড়িয়ে দিন যারা আপনার ভালোবাসায় পথ পাড়ি দিয়ে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেছে তাদের প্রতি। যারা আপনার জন্য দিলদাদা, উৎসর্গিত-প্রাণ তাদেরকে একটুখানি আদরের পরশ দিন।
এগারো.
بدہ دستی ز پا افتادگان را
بکن دلداریی دلدادگان را
উচ্চারণ: বে দেহ দস্তী যে পা উফতাদেগান রা
বকুন দিল দারিয়ী দিলদাদেগান রা।
অর্থ: অচল হয়ে পড়াদের দিকে
দয়ার হাত প্রসারিত করুন,
যারা আত্মহারা অবোধ
তাদের একটু আদরের পরশ দিন।
যারা বিগলিত প্রাণ, যারা অন্তর বিলিয়ে দিয়েছেন, আত্মহারা, প্রেমাসক্ত তাদের দিলদারি করুন, মনে সান্ত্বনা দিন; আদরের পরশ বুলিয়ে দিন।
এক সাহাবী রসুলে পাকের খেদমতে আরজ করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! কিয়ামত কবে হবে। নবীজি (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বল, কিয়ামতের জন্য তোমার প্রস্তুতি কী আছে।’ সাহাবী বললেন, বেশি বেশি নামাজ-রোজার সঞ্চয় আমার নেই, তবে আমি আল্লাহ ও রসুলকে ভালোবাসি—এই সম্বলটুকু আমার আছে। নবীজি বললেন, ‘তুমি যাকে ভালোবাস কিয়ামতের দিন তুমি তার সাথে থাকবে।’ সেই ঘোষণায় মদীনায় আনন্দের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল।[2] কারণ তাতে মদীনাবাসীর জন্য পরকালে নবী করীম (সা.)-এর সঙ্গে থাকার সুসংবাদ ছিল। মওলানা জামীও একই সুরে বলেন,
বার.
اگر چہ غرق دریای گناہیم
فتادہ خشک لب بر خاک راہیم
উচ্চারণ: আগর ছে গর্কে দুনয়ায়ে গুনাহীম
ফতাদে খুশক লব বর খাকে রাহীম।
অর্থ: যদিও আমরা গুনাহের সাগরে নিমজ্জমান, তবে
পিপাসার্ত ওষ্ঠাগত গড়াগড়ি দিচ্ছি পথের ধুলিতে।
গুনাহের সাগরে নিমজ্জিত থাকলেও আপনাকে ভালোবাসি এই দাবির সম্বল বুকে ধারণ করে আছি। ইয়া রসুলাল্লাহ। আপনার কাছে কী চাইব। আপনি তো রহমতের মেঘমালা। একটিবার আমাদের মতো পিপাসার্তদের প্রতি নজর দিন। তৃঞ্চার্ত মূলে খুশক লব, যাদের ওষ্ঠ শুকিয়ে গেছে, পিপাসায় ওষ্ঠাগত প্রাণ, আপনার প্রেমে আত্মহারা।
তের.
تو ابر رحمتی آن بہ کہ گاہی
کنی در حال لب خشکان نگاہی
উচ্চারণ: তো আবরে রাহমতি আঁ বেহ কে গাহী
কুনী বর হালে লব খুশকান নেগাহ।
অর্থ: আপনি হলেন রহমতের বাদল ভালো হয় যদি
একটিবার রহমতের নজর দেন তৃঞ্চার্তদের প্রতি।
মওলানা জামী (রহ.) আধ্যাত্মিক চেতনায় এখন রওজায়ে আকদসে। তার অনুভূতি দুর দুরান্ত পাড়ি দিয়ে আপনার গলিতে আসতে পেরেছি, বড় সৌভাগ্যবান আমরা। এখানে এসে আপনার গলির ধূলিবালি সুরমার মতো আমার দু’নয়নে মেখেছি।
চৌদ্দ.
خوش آن کز گرد رہ سویت رسیدیم
بہ دیدہ گردی از کویت کشیدیم
উচ্চারণ: খোশ আন কায গির্দে রাহ সূয়াত রসীদীম
বে দীদা গার্দী আয কূয়াত কশীদীম।
অর্থ: বড় সৌভাগ্য যে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে পেরেছি
আমার নয়নে আপনার গলির ধুলির সুরমা মেখেছি।
আঁধার রাতে প্রদীপের পাশে পতঙ্গরা এসে ভীড় জমায়, চারপাশে ঘুরে। এক পর্যায়ে আগুনে আত্মাহুতি দেয়। জামী বলেন, আমার অবস্থা আমি আপনার পবিত্র সত্তার চারপাশে পতঙ্গের মতো ঘুর্ণনরত।
পনের.
بہ مسجد سجدۂ شکرانہ کردیم
چراغت را ز جان پروانہ کردیم
উচ্চারণ: বে মসজিদ সাজদায়ে শোকরানা কর্দীম
চেরাগত রা যে জান পরওযানা কর্দীম।
অর্থ: মসজিদে শোকরানা সিজদায় লুটিয়ে পড়েছি আমি
আপনাকে ঘিরে পতঙ্গ হয়ে ঘুরে প্রাণ দিবস যামি।
মদীনায় মসজিদে নববীতে পৌঁছে শোকরানা নামাজ আদায় করেছি, সিজদায় লুটিয়ে পড়েছি। দ্বিতীয় লাইনটির শাব্দিক অর্থ ‘আপনার চেরাগকে প্রাণ দিয়ে পতঙ্গ বানিয়েছি।’ এর মর্মার্থ আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সাহায্য চাইলাম দুজনের কাছে। সদ্য সাবেক ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর ড. হাসান সেহহাত, আরেকজন এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাযেম কাহদূয়ী। হোয়াটস অ্যাপের কল্যাণে উভয়েই সবিস্তারে লিখে বন্ধতুত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের ব্যাখ্যায় কবিতার মর্মার্থ বোধগম্য হল, মনের সংশয় দূর হয়ে গেল। তাদের স্মরণ করলাম কৃতজ্ঞতায়।
‘চেরাগত’ আপনার চেরাগ বলতে এখানে রসুলে খোদা (সা.) এর পবিত্র সত্তা বা অস্তিত্ব বোঝানো হয়েছে। তিনি বলতে চেয়েছেন, আপনার পবিত্র সত্তার চারপাশে আমার প্রাণ পতঙ্গের মতো ঘুরেছে।
(মসজিদে নববীতে মওলানা জামীর অশ্রুমালা)
ভাব ও চেতনার ডানায় উড়াল দিয়ে হেরাত হতে মওলানা আবদুর রহমান জামী মসজিদে নববীতে উপনীত। তিনি একে একে যিয়ারত করছেন নবীজির স্মৃতি জড়িত বিভিন্ন নিদর্শন। প্রথমে রওজা মোবারক।
ষোল.
بہ گرد روضہ ات گشتیم گستاخ
دلم چون پنجرہ سوراخ سوراخ
উচ্চারণ: বে গির্দে রওযাআত গশতীম গোস্তাখ
দিলাম চোন পিঞ্জরা সুরাখ সুরাখ।
অর্থ: আপনার রওজার আশপাশে ঘুরেছি প্রেমে উম্মত্ত
আমার এ দিল বিরহে পিঁজরার মত ছিদ্র ছিদ্র।
‘গুস্তাখ’ মানে যার মধ্যে আদবের লেহায নেই। এখানে উন্মাদনায় উন্মাতাল অর্থে ব্যবহৃত। পিঁজরায় থাকে অগণিত ছিদ্র, আমার প্রাণও আপনার বিরহ জ্বালায় পিঁজরায় পরিণত, ছিদ্র ছিদ্র হয়ে গেছে।
সতের.
زدیم از اشک ابر چشم بی خواب
حریم آستان روضہ ات آب
উচ্চারণ: যদীম আয আশকে আবরে চশমে বীখাব
হারীমে আসেতানে রওযাআত আব।
অর্থ: বিনিদ্র চোখের মেঘমালা হতে করেছি অশ্রুপাত
আপনার রওজার আস্তানা চোখের পানিতে সয়লাব।
আপনার দরবারে এসে আমার বিনিদ্র চোখ হতে বাদলের মতো অশ্রু ঝরিয়েছি। আপনার রওজার চৌহদ্দিতে চোখের পানির বন্যা বয়ে দিয়েছি। সেই অশ্রুমালা দিয়ে,
আঠার.
گہی رفتیم ازان ساحت غباری
گہی چیدیم ازو خاشاک و خاری
উচ্চারণ: গাহী রোফতীম আয আন সাহাত গোবারি
গাহী ছীদীম আযূ খাশাক ও খা’রী।
অর্থ: কখনো সাফ করেছি সেই আঙ্গিনার ধুলোবালি
কখনো তাঁর খড়কুটোর কাঁটা বেছে বেছে তুলেছি।
কখনো পবিত্র রওজার আঙ্গিনার ধুলোবালি ঝাড়ু দিয়েছি। কখনো সেখানকার কাঁটাগুল্ম পরিষ্কার করেছি।
ঊনিশ.
ازان نور سواد دیدہ دادیم
وز این بر ریش دل مرہم نہادیم
উচ্চারণ: আয আন নূর সওয়াদে দীদা দাদীম
ওয়াযিন বর রীশে দিল মরহাম নেহাদীম।
অর্থ: সেই নূরের জ্যোতি মেখেছি আমার চোখে
সেই নূরে প্রলেপ দিয়েছি আমার বিক্ষত হৃদয়ে।
সেখানে আছে নূরের জলসা, জলওয়া। সেই নূরের জ্যোতি আমার চোখের জ্যোতিতে মেখেছি। সেই নূরে আমার হৃদয়ের ক্ষতে পট্টি প্রলেপ দিয়েছি। আমার হৃদয় নগর আলোকিত হয়েছে।
বিশ.
بہ سوی منبرت رہ بر گرفتیم
ز چہرہ پایہ اش در زر گرفتیم
উচ্চারণ: বে সূয়ে মিম্বারাত রাহ বর গেরেফতীম
যে চেহরা পায়েআশ দর যর গেরেফতীম।
অর্থ: আপনার মিম্বর পানে হামাগুড়ি দিয়ে অগ্রসর হয়েছি
হলুদাভ চেহারার রঙে তাঁর পায়াগুলো স্বর্ণালি করেছি।
প্রেমিক জামীর স্বপ্নের আরেক ঠিকানা মসজিদে নববীর মিম্বর। তিনি সেখানে গেছেন চেতনায় হামাগুড়ি দিয়ে। তার বেদনার্ত চেহারা, যা হলুদবর্ণ ধারণ করেছে, চেহারার সেই রঙ দিয়ে রসুল (সা.)-এর মিম্বরের পায়ায় স্বর্ণের প্রলেপ দিয়েছেন।
একুশ.
ز محرابت بہ سجدہ کام جستیم
قدمگاہت بہ خون دیدہ شستیم
উচ্চারণ: যে মেহরাবাত বে সজদা কাম জুসতীম
কদমগাহত বে খুনে দীদা শুসতীম
অর্থ: আপনার মেহরাবে সিজদায় লুটে
পুরণ করেছি মনের সাধ,
আপনার কদমের জায়গা
অশ্রুর রক্তে ধুয়ে করেছি সাফ।
জামীর স্বপ্নের আরেক ঠিকানা মসজিদে নববীর মেহরাব, যেখানে দাঁড়িয়ে প্রিয়নবী নামাজে ইমামতি করতেন। জামী সেই মেহরাবে উপনীত হন। মাটিতে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। যেখানে পা মোবারক রেখে নবীজি নামাজ পড়তেন সেই জায়গা তিনি চোখের রক্ত দিয়ে ধুয়ে দেন। চোখের অশ্রু ফুরিয়ে গেলে বেদনাহত বিরহীর চোখ হতে নির্গত হয় রক্তাশ্রু। সেই রক্তের নজরানা দিয়ে তিনি ধুয়ে দেন মসজিদে নববীর মেহরাব।
(প্রাণের মদীনা)
মওলানা আবদুর রহমান জামী প্রাণ উজাড় করা ভালোবাসার নজরানা মেখে দিচ্ছেন মসজিদে নববীর আরও আরও নিদর্শনের গায়ে। মিম্বর ও মেহরাবের পর সুতুন। সুতুন এর অপর নাম উস্তুন। আরবিতে উস্তুয়ানা। মানে খুঁটি, খাম্বা। ইতিহাসের একেকটি অধ্যায় লেখা আছে রিয়াজুল জান্নাহর খুঁটিগুলোতে।
উস্তুনে হান্নানা; রসুল (সা.) একটি শুকনো গাছের খুঁটিতে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন জুমার দিনে। মসজিদে জনসমাগম বেড়ে গেলে একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে খুতরা দেয়ার প্রয়োজন হয়। তখন একটি পাটাতন মিম্বর তৈরি করে আনা হলে তার ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা শুরু করেন নবীজি। তখনই শুকনো খুঁটি জীবিত মানব শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করে হিক্কা দিয়ে। নবীজি তখন গাছটিকে জড়িয়ে ধরে আদর মেখে দেন। তারপর কথা বলেন, খুঁটির ইচ্ছা আখেরাতে সে চিরন্তন জীবন লাভ করবে। নবীজি গাছটিকে কেটে যেখানে দাফন করেন সেই স্থানে নির্মিত হয়েছে উস্তুনে হান্নানা (ক্রন্দসি খুঁটি)।
যে স্থানে তিনি বাইরের প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাৎ দিতেন উস্তুয়ানায়ে উফুদ হিসেবে চিহ্নিত। যেখানে দাঁড়িয়ে নবীজি তাহাজ্জুদ পড়তেন উস্তুয়ানায়ে তাহাজ্জুদ। যেখানে বিছানা পেতে এতেকাফ নিতেন উস্তুয়ানায়ে সরীর বা উস্তুয়ানায়ে আয়িশা। মদীনায় শত্রুপক্ষ ইহুদিদের কাছে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি রণকৌশলের তথ্য ফাঁসের অপরাধে অনুপতপ্ত সাহাবী আবু লুবাবা নিজেকে বেঁধে রেখেছিলেন মসজিদের খুঁটির সাথে। পরে কুরআনের আয়াত নাযিলের সূত্রে তার তওবা কবুল হয়। নবীজি তার বাঁধন খুলে দেন। সেই স্থানের স্মৃতিকে ধারণ করে আছে উস্তুয়ানায়ে তওবা। অনুরূপ আরও আরও খুঁটির পেছনে ইতিহাস আছে, স্মৃতি আছে।
আশেকে রসুল তুর্কি শাসকরা মসজিদ পূনঃনির্মাণের সময় এসব খুঁটির ইতিহাস অঙ্কন করে দিয়েছেন স্থাপত্য শৈলির রেখায় রেখায়। মওলানা জামী (রহ.) এসব খুঁটির প্রতিটির পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। প্রেম ও আবেগের নজরানা নিয়ে দোয়া করেন। তিনি বলেন,
বাইশ.
بہ پای ہر ستون قد راست کردیم
مقام راستان درخواست کردیم
উচ্চারণ: বে পায়ে হার সুতূন কাদ রাস্ত কর্দীম
মকামে রাসেতান দরখাস্ত কর্দীম।
অর্থ: প্রতিটি খুঁটির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি শ্রদ্ধায় আদবে
সত্যনিষ্ঠদের পথে চলবার তওফীক ভিক্ষা চেয়ে।
সমাজ সভ্যতায় বিদ্যুৎ প্রবাহ আসার আগে সন্ধ্যায় চেরাগ জ্বালানো ছিল সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতীক। জামী সেই সংস্কৃতির অনুসরণে তার আবেগ ব্যক্ত করেন অভিনব পন্থায়। তিনি মসজিদে নববীর দীপাধারগুলোতে আগুন জ্বালান তার জ্বলন্ত হৃদয়ের আগুন নিয়ে। বলেন, আপনার প্রতি ভালোবাসার প্রেরণার আগুন নিয়ে মসজিদের প্রতিটি প্রদীপে আগুনের সংযোগ দিয়েছি।
তেইশ.
ز داغ آرزویت با دل خوش
زدیم از دل بہ ہر قندیل آتش
উচ্চারণ: যে দাগে আরেযূয়াত বা দিলে খেশ
যদীম আয দিল বে হার কিন্দীল আতেশ।
অর্থ: আপনাকে চাওয়ার ব্যথায় প্রফুল্ল হৃদয়ে আমার
জ্বেলেছি আলোয় হৃদয়ের আগুনে যত দীপাধার।
মওলানা জামীর অন্তর এখন আনন্দে প্রেরণায় ভালোবাসার নজরানা দিতে পারায় প্রশান্ত। হৃদয়কে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নানাভাবে। কবিতার ধারাভাষ্য হতে মনে হতে পারে উল্লেখিত কাজগুলো নিজে উপস্থিত হয়ে করেছেন; কিন্তু তিনি এখানে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন, দৈহিকভাবে তিনি মদীনায় নয়; বরং তার রূপ অন্তরাত্মাই পড়ে আছে মদীনার মাটিতে, মসজিদে নববীর আঙ্গিনায়, রওজা পাকে, রিয়াজুল জান্নাহয়।
চব্বিশ.
کنون گر تن نہ خاک آن حریم است
بحمداللہ کہ جان آنجا مقیم است
উচ্চারণ: কুনুন গর তন ন খাকে আন হারীম আস্ত
বেহামদিল্লাহ কে জান আনজা মুকীম আস্ত
অর্থ: যদিও এই দেহ এখন
মদীনার হেরেম শরীফে নেই,
আল্লাহর শোকর যে,
আমার প্রাণ পড়ে আছে ওখানেই।
গভীর ভালোবাসা ও আর্তি আকুতির নজরানা পেশ করার পর জামী আত্ম-উপলব্ধির বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি কিছু কথা বলেন নিজের সম্পর্কে। নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন আত্মসমালোচনার আঙ্গিকে।
পঁচিশ.
بہ خود درماندہ ایم از نفس خود رای
بہ بین درماندہ ای چند و بہ بخشای
উচ্চারণ: বে খোদ দরমান্দে ঈম আয নফসে খোদরায়
বেবীন দরমান্দেয়ী চন্দ ও বেবাখশায়।
অর্থ: স্বেচ্ছাচারী নফসের কারণে
নিজের কাছেই আমি অসহায়,
কতিপয় অসহায় দয়াদৃষ্টি দিন
যাতে তারা ক্ষমা পেয়ে যায়।
পরকালে নবীজির সুপারিশ লাভের আশা প্রতিটি মুসলমানের। জামী বলেন, দুনিয়ার জীবনেও নবীজির দয়ার নজর পেতে হবে। নচেত জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
ছাব্বিশ.
اگر نبود چو لطفت دستیاری
ز دست ما نیاید ہیچ کاری
উচ্চারণ: আগর নবুয়াদ চো লুতফাত দস্তয়ারী
যেদস্তে মা নয়ায়দ হীচ কারী।
অর্থ: আপনার দয়ার হাত যদি প্রসারিত না হয় হযরত
আমার পক্ষে কোনো কাজ হাসিল হবে না আলবৎ।
সাতাশ.
قضا می افکند از راہ ما را
خدا را از خدا درخواہ ما را
উচ্চারণ: কাজা মী আফগানাদ আয রাহ মা রা
খোদা রা আয খোদা দরখাহ মা রা।
অর্থ: ভাগ্যের দুর্বিপাক বারেবারে
আমাকে অচল করে ফেলছে,
আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের জন্য
দরখাস্ত করুন আল্লাহর কাছে।
যদি আপনার দয়াদৃষ্টি না হয়, তা হলে জীবনপথে দুর্বিপাকে পড়ে যাব। কাজেই আল্লাহর দোহাই আল্লাহর কাছে আমাদের হয়ে দোয়া করুন।
এভাবে নবীজি (সা.)-এর দরবারে আকুতি প্রকাশ নিয়ে কোনো রোগাক্রান্ত মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে। তাই এখানে আমার জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে করছি।
মদীনা শরীফে রিয়াজুল জান্নাহয় দু-রকআত নামাজ পড়ার সুযোগ পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার। সাদা কার্পেটে মোড়ানো, শুভ্র রং এর স্তম্ভের মধ্যকার এই স্থানটি বেহেশতের একটি বাগান বলে চিহ্নিত। এই তথ্য হাদীস শরীফ সূত্রে বর্ণিত।
এখন লেখালেখি যোগাযোগের সবকাজ হয় কম্পিউটারে। কম্পিউটারের কাজগুলো দেখা যায় সামনে বসানো মনিটরের স্কিনে। কম্পিউটার বন্ধ থাকলে মনিটরকে মনে হবে ঘোলাটে আয়না, কিছুই দেখা যায় না। যখন কম্পিউটার অন করা হয় খুলে যায় দুনিয়ার তথ্যের ভাণ্ডার। রিয়াজুল জান্নার অবস্থাও এর সাথে অনুমান করা যায়। এই দুনিয়ার জীবন শেষে যখন দিব্যচক্ষু খুলে যাবে সবাই বুঝতে পারবে রিয়াজুল জান্নাহ আসলে বেহেশতের টুকরা। দুনিয়াতে রিয়াজুল জান্নাহর প্রকৃত স্বরূপ না দেখেও যারা বিশ্বাস করেন তারা একবার বসার সুযোগ পেলে সহজে উঠেন না, পরম সৌভাগ্যের অবস্থান যতক্ষণ সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করেন।
একদিন কপাল খুলল, বিয়াজুল জান্নাহয় একেবারে রসুলে পাকের রওজার সাথে লাগোয়া বসার সৌভাগ্য হল। নামাজ শেষে দুহাত তুলে মনের কথাগুলো খুলে বলার চেষ্টা করলাম ভাঙা ভাঙা আরবিতে। কখন যে চোখ বন্ধ ছিল টেরও পাইনি।
একটি আয়াতের সূত্রে বলছিলাম, আল্লাহ পাক বলেছেন,
وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ جَآءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللّٰهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوا اللّٰهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا۰۰۶۴
‘তারা যদি নিজের প্রতি জুলুম করে আপনার কাছে আসে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চায়। আর রসুল তাদের পক্ষে গুনাহ মাফ চান, তাহলে অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়াবান হিসেবে পাবে।’[3]
ইয়া রসুলাল্লাহ ‘যে-তুকা’। আমি আপনার কাছে এসেছি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনি দয়া করে আমার জন্যে সুপারিশ করুন।
হঠাৎ আমার হাতটি ধরে ফেললেন একজন মুতাউয়া। বিচলিত হয়ে দেখি মুখভরা দাড়ি মাথায় রুমাল জড়ানো এক ভদ্রলোক। আমাদের দেশের মওলানা সাহেবদের কমন নাম সৌদিতে মুতাওয়া। তিনি আরবিতে তিরষ্কার করে বললেন, একি কাজ করছ। কুরআন শরীফের একটি আয়াত পাঠ করে আমাকে বোঝাতে চাইলেন,
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللّٰهِ اَحَدًاۙ۰۰۱۸
‘মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর এখানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা শিরক, হারাম।’[4]
বিচলিত অবস্থা কাটিয়ে উঠে আমি তাকে হাতের ঈশারায় বললাম, এই যে আযানখানা রিয়াযুল জান্নাহর ভেতরে ওপরে। এখানেই তো হযরত বেলাল (রাযি.) আযান দিতেন। বললেন, হ্যাঁ। বললাম, তিনি কি মসজিদের ভেতরে আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ বলতেন না? তিনি সম্মতিসূচক চাহনিতে থাকালেন। বললাম, তাহলে মসজিদের ভেতরে আযানে আল্লাহ ছাড়া মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণ কীভাবে জায়েয হয়েছিল? তিনি নিরুত্তর। বললাম, নামাজে কী আপনি আত্তাহিয়াতু পড়েন না, নামাজে নবীজিকে কীভাবে সালাম দিয়ে বলেন, আস-সালালামু আলাইকা আইয়ুহান্নবিয়ু…। হে নবী আপনার প্রতি সালাম। পরের দরূদ শরীফে তো আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদিন বলে মুহাম্মদ নামও উচ্চারণ করেন দুবার। তাহলে আপনার আযান ইকামত, নামাজের অবস্থা কী হয় চিন্তা করেছেন কি। তার উত্তর নেই। বললাম, আয়াতের অর্থ আপনি ভুল বুঝেছেন। আল্লাহকে ছাড়া বলা হয়নি, বলা হয়েছে, ‘মাআল্লাহ’ আল্লাহর সাথে আর কাউকে আহ্বান করো না। মানে আল্লাহর মর্যাদায়, আল্লাহর মতো ইবাদতের মালিক মনে করে অন্য কোনো উপাস্যকে আহ্বান করো না।
তারপর তিনি আরবি কথ্যভাষায় তুমুল ঝগড়া করতে চাইলেন। মনে মনে বললাম, তর্কে জড়ালে বিপদ হতে পারে। বললাম, আমি হাত তুলে মোনাজাত করবো না। আমাকে বসে থাকতে দিন। তিনি নিরস্ত হয়ে চলে গেলেন। পরদিন সৌভাগ্যবশত একই জায়গায় বসার দুর্লভ সুযোগ পেলাম। দেখি সেই মুতাওয়া আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি একটি বই আমার হাতে দিয়ে সরে গেলেন। উর্দু ভাষার বইটির নাম ‘হুববে রসুল’ (রসুলের প্রেম)। বুঝতে পারলাম, মুখে তর্ক করলেও তার অন্তর্জগত দুমড়ে মুছড়ে গেছে। আপসোস যে, বইটি এখন খুঁজে পাচ্ছি না। একবার একই বই আরবি ভাষায় এক বন্ধুর হাতে দেখেছিলাম। জানি না বইটি মদীনার রাজদরবার হতে কোনো সার্টিফিকেট ছিল কিনা। সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ ওয়া সাল্লামা আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ।
(যিয়ারত কবুল)
মওলানা আবদুর রহমান জামীর আকুতি ছিল ‘খোদা রা আয খোদা দরখাহ মা রা’ আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের জন্য দরখাস্ত করুন আল্লাহর কাছে। কিসের জন্য দরখাস্তের আবেদন। আল্লাহর কাছ থেকে কী পেতে চান জামী।
আটাশ.
کہ بخشد از یقین اول حیاتی
دہد آنگہ بہ کار دین ثباتی
উচ্চারণ: কে বখশদ আয ইয়াকীন আউয়াল হায়াতী
দাহাদ আঙ্গাহ বে কারে দীন সুবাতী।
অর্থ: আল্লাহ যেন প্রথমত দান করেন একীনের জীবন
এরপর দীনের কাজে দেন অবিচলতা অটুট মন।
দুনিয়ার জীবনে ঈমান যেন সাধারণ স্তর অতিক্রম করে একীন দৃঢ় প্রত্যয়ের স্তরে উন্নীত হয়। তখন দুনিয়ার সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। হৃদয়ে প্রশান্তি নসীব হবে। জীবন হবে আখেরাতমুখি। আখেরাতের জীবনও যেন,
ঊনত্রিশ.
چو ہول روز رستاخیز خیزد
بہ آتش آب روی ما نریزد
উচ্চারণ: চো হউলে রূযে রাস্তাখীয খীযদ
বে আতাশ আবরূযে মা ন রীযদ।
অর্থ: উত্থান দিবসের ভয়াবহতা যখন উত্থিত হবে
আগুনে আমাদের মান ইজ্জত লুণ্ঠিত না হয় যাতে।
কিয়ামতের ময়দানে যখন দোযখের আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠবে, তখন যেন আমাদের জারিজুরি ফাঁশ হয়ে না যায়, যেন দোযখি সাব্যস্ত না হই। আমরা যেন লজ্জিত না হই। আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন যাতে সুন্দর হয়। কীভাবে এমনটি হবে, আমরা তো গুনাহের মধ্যে ডুবে আছি। বার বার গোমরাহীর পথে এলোপাতাড়ি চলছি। এতকিছুর পরও আখেরাতে আপনার একটুখানি ইশারা চাই।
ত্রিশ.
کند با این ہمہ گمراہی ما
تو را اذن شفاعت خواہی ما
উচ্চারণ: কুনদ বা ইন হামে গোমরাহিয়ে মা
তো রা ইযনে শাফায়াত খাহিয়ে মা
অর্থ: আমাদের এত গোমরাহী সত্ত্বেও যেন আপনি
শাফায়াতের ঝান্ডা নিয়ে হন আমাদের দরদি।
কিয়ামতের ময়দানে আপনার সুপারিশে পার পেয়ে পার হয়ে যাব-এই আশা ও ভরসা আমার জীবনে। সেদিন নবীজি কীভাবে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবেন তারও একটি চিত্রকল্প এঁকেছেন জামী। বলছেন,
একত্রিশ.
چو چوگان سرفکندہ آوری روی
بہ میدان شفاعت امتی گوی
উচ্চারণ: চো চোগানে সরফাকান্দে আওয়ারী রূয়
বে ময়দানে শাফায়াত উম্মতি গূয়।
অর্থ: ঝুঁকানো লাঠির মতো শির ঝুঁকে আসবেন আপনি
শাফায়াতের ময়দানে মুখে থাকবে উম্মতি উম্মতি!
হাশরের ময়দানে আপনি তশরীফ আনবেন ধীর শান্ত পদক্ষেপে, গুরুগম্ভীর পদচারণায়। মনে হবে আল্লাহর দয়া ও মহানত্বের সম্মুখে আপনি বিনীত। নতশিরে বাঁকানো লাঠির মতো। সেদিন আপনার চিন্তা থাকবে কীভাবে গুনাহগার উম্মকে তরানো যায়, মুখে উচ্চারিত হবে উম্মতি উম্মতি, আল্লাহ আমার উম্মত আমার উম্মতকে মাফ করে দাও।
বত্রিশ.
بہ حسن اہتمامت کار جامی
طفیل دیگران یابد تمامی
উচ্চারণ: বে হুসনে এহতেমামত কারে জামী
তোফাইলে দীগরান ইয়াবদ তামাম।
অর্থ: আপনার নেক নজরে জামীর সকল কাজ যেন
অন্য নেক বান্দাদের উসিলায় হয়ে যায় সুসম্পন্ন।
(সমাপ্ত)
মওলানা জামী (রহ.)-এর আবেগ ও ভালোসার গভীরতা উপলব্ধির জন্য একটি হাদীসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، فِيْهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيْهِ قُبِضَ، وَفِيْهِ النَّفْخَةُ، وَفِيْهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ» قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ – يَقُوْلُوْنَ: بَلِيتَ -؟ فَقَالَ: «إِنَّ اللهَ b حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ».
‘হযরত আউস ইবনে আউস (রাযি.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের সর্বোত্তম দিন হচ্ছে শুক্রবার। অতএব এই দিন তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো। নিশ্চয়ই তোমাদের দরুদ ও সালাম আমার কাছে পেশ করা হয়।’ তখন সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনার কাছে আমাদের সালাত ও সালাম কীভাবে পেশ করা হবে; অথচ আপনি (মৃত্যুবরণ করার পর) পঁচে যাবেন। অথবা তারা বললেন, আপনি বালিতে পরিণত হবেন। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীগণের দেহ (খাওয়া বা নষ্ট করা) মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।”[5]
আল্লাহ পাকের অসীম দয়া ও মেহেরবানি। ছোটবেলা থেকে ওয়ায়েজিনে কেরামের সুরে সুরে দরূদ ও সালাম পাঠ করতে যে নাত অসংখ্যবার শুনেছি, তার ভাব ঐশ্বর্যের তাল লয়ে বিগলিত হয়েছি, যদিও এর অর্থ মর্ম বুঝা সম্ভব হয়নি, আল্লাহর শোকর যে, আল্লাহর হাবীবের শানে রচিত সেই কালজয়ী নাতের তরজমা ও ভাবার্থ বাংলা ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। আলহামদু লিল্লাহ।
নবী করীম (সা.)-এর প্রতি মওলানা আবদুর রহমান জামী ও তার কবিতার ভাব ও চিন্তা চেতনায় আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরামের ভক্তি ও বিশ্বাসের গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে আমাদের বুঝতে হবে, হযরত নবী করীম (সা.) এমন মহান প্রিয়তম রসুল, যার প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার জন্য কুরআন মজীদে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে,
اِنَّ اللّٰهَ وَمَلٰٓىِٕكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ١ؕ يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا۰۰۵۶
‘স্বয়ং আল্লাহ তার নবীর প্রতি অহরহ সালাত, রহমত বর্ষণ করেন, প্রতিনিয়ত আল্লাহর সমস্ত ফেরেশতা নবীজির জন্য রহমত কামনা করেন, সালাত ও সালাম পেশ করেন। অতএব হে ঈমানদাররা! তোমরাও তার প্রতি যথাযথ সম্মানের সাথে সালাত ও সালাম পেশ কর।’[6]
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে, মসজিদের মিনারায়, ইকামতে আল্লাহর মহানত্বের ঘোষণার সাথে সাথে মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালতের ঘোষণা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়। নামাজে আত্তাহিয়াতু পাঠ করার সময় বলতে হয়, হে নবী আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। শুধু তাই নয়, নামাজ হতে বিদায় নেয়ার শেষ বৈঠকে দরূদে ইবরাহীমী পাঠকালে দুই দুবার মুহাম্মদ নাম উচ্চারণ করে সালাত প্রেরণ করতে হয়। জগতের শ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকরা তাই নবীজির প্রশংসায় নিজেদের প্রতিভা উজাড় করে দিয়ে স্বীকার করেছেন নবীজি হক আদায় হয় মত প্রশংসা ও স্তুতি কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। গুনাহগার উম্মত হিসেবে নবীজির শানে দু-কলম লেখার সাধ্য ও সাহস্য ছিল না, নেই। তাই একজন জগতবিখ্যাত আশেকে রসুলের একটি না’ত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করার দুঃসাহস দেখালাম। রাব্বুল আলামীন দূর থেকে মওলানা আবদুর রহমান জামীর চেতনায় আমাদের প্রাণের মদীনা যিয়ারত করার সৌভাগ্য হল। দয়া করে কবুল কর।
[1] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:১০৭
[2] আত-তিরমিযী, আল-জামিউস সহীহ = আস-সুনান, মুস্তফা মুস্তফা আল-বাবী আল-হালাবী অ্যান্ড সন্স লাইব্রেরি অ্যান্ড প্রিন্টিং কোম্পানি, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৫৯৫, হাদীস: ২৩৮৫:
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّهُ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ مَتَىٰ قِيَامُ السَّاعَةِ؟ فَقَامَ النَّبِيُّ ﷺ إِلَى الصَّلَاةِ، فَلَمَّا قَضَىٰ صَلَاتَهُ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ قِيَامِ السَّاعَةِ»؟ فَقَالَ الرَّجُلُ: أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: «مَا أَعْدَدْتَ لَـهَا»؟ قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا أَعْدَدْتُ لَـهَا كَبِيْرَ صَلَاةٍ وَلَا صَوْمٍ إِلَّا أَنِّيْ أُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «الْـمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ وَأَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ»، فَمَا رَأَيْتُ فَرِحَ الْـمُسْلِمُوْنَ بَعْدَ الْإِسْلَامِ فَرَحَهُمْ بِهَذَا.
[3] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আন-নিসা, ৪:৬৪
[4] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-জিন, ৭২:১৮
[5] আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ২৭৫, হাদীস: ১০৪৭
[6] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৬