بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।
ওলামায়ে দীন এ-মাসআলায় কী বলেন, সালাতে তাহাজ্জুদ ও সালাতে তারাবীহ কি দুই নামাজ না একই? সালাতে তারাবীহর যে ২০ রকআত পড়া হয় তা কি মাসনুন না বিদআত? ২০ রকআতের বিদআত হওয়া বিষয়ে সর্বোত্তম তিনযুগের কোনো আলেমের অভিমত কি পাওয়া যায়? আর এক্ষেত্রে মুজতাহিদ ইমামদের মাযহাব কী?
بَيِّنُوْا وَتُؤْجَرُوْا.
সবিস্তার আলোচনা করে সওয়াবের ভাগী হোন।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র নামাজ
কুতবুল ইরশাদ হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ.
অনুবাদ: মাওলানা সগির আহমদ চৌধুরী
অনুবাদক: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাসিক আত-তাওহীদ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيًا، أَقُوْلُ وَبِاللهِ التَّوْفِيْقِ.
আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজির প্রতি দরুদ প্রেরণপূর্বক আল্লাহ সামর্থ্য দান করলে আমি বলবো,
তাহাজ্জুদের নামাজ ও তারাবীহর নামাজ সালাতদুটো প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র, প্রতিটির নিয়ম ও বিধানও ভিন্ন; তাহাজ্জুদ ইসলামের প্রাথমিক যুগে পুরো উম্মতের ওপর ফরজ হয় এবং এক বছর পর তাহাজ্জুদের ফরজের আবশ্যকতা রহিত হয়ে রমজান ও রমজানের বাইরে নফল হিসেবে তাহাজ্জুদ অব্যাহত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الْمُزَّمِّلُۙ۰۰۱ قُمِ الَّيْلَ ۙ۰۰۲ الآية.
‘হে বস্ত্রাবৃত (অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সা.)! রাতে জেগে থাকুন।’[1]
হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, (এক) দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, তাহাজ্জুদ ফরজ হওয়ার পর নফলে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন- (ইমাম) আবু দাউদ (রহ.) বর্ণনা করেন,
قَالَ: قُلْتُ: حَدِّثِيْنِيْ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ، قَالَتْ: أَلَسْتَ تَقْرَأُ: [يٰۤاَيُّهَا الْمُزَّمِّلُۙ۰۰۱]؟ قَالَ: قُلْتُ: بَلَىٰ، قَالَتْ: «فَإِنَّ أَوَّلَ هَذِهِ السُّوْرَةِ نَزَلَتْ، فَقَامَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ حَتَّىٰ انْتَفَخَتْ أَقْدَامُهُمْ، وَحُبِسَ خَاتِمَتُهَا فِي السَّمَاءِ اثْنَيْ عَشَرَ شَهْرًا، ثُمَّ نَزَلَ آخِرُهَا، فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيْضَةٍ …» إِلَىٰ آخِرِ الْحَدِيْثِ.
‘বর্ণনাকারী বলেন, আমি (অর্থাৎ হযরত আয়িশা i-এর খেদমতে) আবেদন করলাম যে, হুযুর (সা.)-এর কিয়ামুল লাইল বিষয়ে আমাকে হাদীস বর্ণনা করুন। হযরত আয়িশা (রদি.) বলেন, তুমি কি يٰۤاَيُّهَا الْمُزَّمِّلُۙ۰۰۱ পাঠ করো না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, পাঠ করি। তিনি বলেন, ‘যখন এ-সুরাটির প্রথমাংশ অবতীর্ণ হয় তখন থেকে হুযুর (সা.)-এর সাহাবীগণ j রাত জেগে (নামাজে) কাটাতেন, এমনকি এতে তাঁদের পায়ে ফোসকা পড়ে যেতো। আল্লাহ তাআলা আসমানে সুরাটির সমাপ্তি ১২ মাস পর্যন্ত স্থগিত রেখেছিলেন। অতঃপর সুরার শেষাংশ অবতীর্ণ হলে কিয়ামুল লাইল ফরজ হতে নফলে পরিবর্তিত হয়।”[2]
এতে প্রমাণিত হয় যে, তাহাজ্জুদ হিজরতের পূর্বে ইসলামের প্রাথমিক যুগেই নফল হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং সকল সাহাবী j রমজান ও রমজানের বাইরে নফল হিসেবে সেটির ওপরই আমল করতেন। আর সেই সময় তারবীহর অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। অতঃপর হিজরত-পরবর্তীকালে যখন রমজানের সওম ফরজ হয় সেই সময় রসুলুল্লাহ সা. (একটি) খুতবা পাঠ করেন, আর এতে তিনি একথার উল্লেখ করেন যে,
«جَعَلَ اللهُ صِيَامَهُ فَرِيْضَةً، وَقِيَامَهُ تَطَوُّعًا …» إِلَىٰ آخِرِ الْـحَدِيْثِ.
‘আল্লাহ তাআলা এই (মাসের) রোজা ফরজ এবং এতে কিয়াম নফল করে দিয়েছেন।’
এ-বর্ণনাটি মিশকাত-প্রণেতা (ইমাম) বায়হাকী (রহ.) থেকে প্রতিলিপি করেছেন।[3] এখান থেকে বোঝা গেল যে, রমজানে কিয়াম উপর্যুক্ত সময়েই নফল হিসেবে স্থিরীকৃত হয়েছিল। আর এর দ্বারা একথা বুঝে নেওয়া যে, তাহাজ্জুদ যা পূর্ব থেকে নফল ছিল তারই উল্লেখ করেছেন সেটা দূরসম্ভব। কেননা যদি সেটাই উদ্দেশ্য হতো তা হলে এভাবে বলতেন যে, তাহাজ্জুদের নামাজ এখনও নফল হিসেবেই (অব্যাহত আছে) অথবা অনুরূপ কোনো কথা বলতেন।
এজন্য যে, তাহাজ্জুদ আগে থেকেই রমজানে চালু ছিল, তা হলে এখন তার উল্লেখ করার প্রয়োজন কি ছিল? যেভাবে অন্যান্য ফরজ ও নফল সালাতের কোনো কথা উল্লেখ করেননি তিনি। অবশ্য কিছু কিছু হাদীসে রমজানের বিভিন্ন আমলের ফযীলত আলোচিত হয়েছে। তবে উপর্যুক্ত বাক্যে ফযীলতের কোনো কথা নেই, বরং অন্যান্য নফল সালাতের অনবরোধের উল্লেখ হওয়া স্পষ্ট।
দ্বিতীয় একটি বর্ণনা সুনানে ইবনে মাজাহর এ-রকম, রসুলুল্লাহ সা. বলেন,
«كَتَبَ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ».
‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এর (অর্থাৎ রমজানের) রোজা ফরজ করে দিয়েছেন আর আমি এতে কিয়াম তোমাদের জন্য সুন্নত করেছি।’[4]
এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, রসুলুল্লাহ সা. আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে রমজানের কিয়ামকে নফল হিসেবে স্থিরীকৃত করেছেন। অথচ তাহাজ্জুদ স্বয়ং আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ইতঃপূর্বে নফলে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং রমজানের কিয়ামকে রসুলুল্লাহ সা. নিজেই নফল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং এখান থেকেও বোঝা যায় যে, তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ শরীয়তে দুটো দুই নামাজ, যা দুই সময়ে স্থিরীকৃত হয়েছে।
তাহাজ্জুদ প্রমাণিত হয়েছে কুরআন শরীফ থেকে এবং তারাবীহ রসুলুল্লাহ সা.-এর হাদীস দ্বারা। রসুলুল্লাহ সা. প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়তেন শেষরাতে, যেমন বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
ثُمَّ قُلْتُ: فَإِلَىٰ حِيْنٍ كَانَ يَقُوْمُ مِنَ اللَّيْلِ؟ قَالَتْ: «كَانَ إِذَا سَمِعَ الصَّارِخَ».
‘অতঃপর আমি (অর্থাৎ বর্ণনাকারী) বললাম, রসুলুল্লাহ সা. রাতের কোন সময়ে উঠতেন? বললেন, ‘যখনই মোরগের ডাক শুনতেন।’’[5]
অন্যান্য বর্ণনা থেকেও এটিই সাব্যস্ত হয়। পক্ষান্তরে তিনি তারাবীহ পড়েছেন রাতের প্রথমাংশে। মিশকাত শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ، قَالَ: صُمْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَلَمْ يَقُمْ بِنَا شَيْئًا مِّنَ الشَّهْرِ، حَتَّىٰ بَقِيَ سَبْعٌ، فَقَامَ بِنَا حَتَّىٰ ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، فَلَمَّا كَانَتِ السَّادِسَةُ لَـمْ يَقُمْ بِنَا، فَلَمَّا كَانَتِ الْـخَامِسَةُ قَامَ بِنَا حَتَّىٰ ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لَوْ نَفَّلْتَنَا قِيَامَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ، فَقَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلَّىٰ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّىٰ يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ»، فَلَمَّا كَانَتِ الرَّابِعَةُ لَـمْ يَقُمْ بِنَا حَتَّىٰ بَقِيَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، فَلَمَّا كَانَتِ الثَّالِثَةُ جَمَعَ أَهْلَهُ وَنِسَاءَهُ وَالنَّاسَ، فَقَامَ بِنَا حَتَّىٰ خَشِيْنَا أَنْ يَّفُوْتَنَا الْفَلَاحُ، قُلْتُ: وَمَا الْفَلَاحُ؟ قَالَ: السُّحُوْرُ، ثُمَّ لَـمْ يَقُمْ بِقِيَّةَ الشَّهْرِ. (رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ)
‘হযরত আবু যর (আল-গিফারী রহ.) থেকে বর্ণিত, আমরা রসুলুল্লাহ সা.-এর সাথে রোজা রেখেছি। তবে পুরো মাসে তিনি আমাদের আমাদের সাথে কিয়াম করেননি। এমনকি মাত্র সাতদিন অবশিষ্ট ছিল, (মাস ছিল ঊনত্রিশের)। অতঃপর তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করেন (অর্থাৎ ত্রয়োবিংশ রাতে)। এভাবে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়। এরপর যখন ষষ্ঠ রাত আসে (অর্থাৎ মাসের শেষ দিক থেকে গণনা করলে ঊনত্রিশের মাসে সেটি চতুর্বিংশ রাত হয়) আমাদের সাথে কিয়াম করেননি। পরে যখন এ-হিসাবে পঞ্চম বস্তুত চতুর্বিংশ রাত উপস্থিত হয় তখন তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করেন, এমনকি রাতের অর্ধাংশ অতিবাহিত হয়। অতঃপর আমি (অর্থাৎ আবু যর রাদি.) আবেদন করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! যদি এ-রাতে আপনি আমাদের জন্যে অতিরিক্ত কিয়াম করতেন! তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই যখন কোনো ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাজ পড়ে, এমনকি ইমাম নামাজ শেষ করেন, তার অধিকারে পুরো রাত কিয়ামের সাওয়াব লেখা হয় (অর্থাৎ যদি পুরো রাত কিয়াম না করা হয়)।’ এরপর যখন উপর্যুক্ত হিসাবে চতুর্থ রাতে আসে (সেটি প্রকৃতপক্ষে ষট্বিংশ রাত) তিনি আমাদের সাথে কিয়াম করেননি, এমনকি তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট ছিল। অতঃপর যখন তৃতীয় রাত আসে (যেটি মূলত সপ্তবিংশ রাত) তিনি তাঁর পরিবার-স্ত্রী ও অন্যান্য লোকদেরকে সমবেত করে আমাদের সাথে কিয়াম করেন। এমনকি আমাদের ভয় হচ্ছিলো যে, আমরা হয়তো ফালাহ ছুটে যাবে! আমি আবেদন করি, ফালাহের অর্থ কী? তিনি বললেন, সাহরী খাওয়া। অতঃপর তিনি মাসের বাকি দিনগুলোতে (অর্থাৎ অষ্টাবিংশ ও ঊনত্রিংশ) আমাদের সাথে কিয়াম করেননি।’[6]
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় অর্ধরাতের পর বিরতি দেন এবং তৃতীয় রাত শুরু থেকে শেষরাত পর্যন্ত আদায় করেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, সালাতদুটো প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। আর রসুলুল্লাহ D তাহাজ্জুদ সবসময়ই একাকী পড়তেন, কখনও ডেকে জামায়াত করেননি। যদি কোনো ব্যক্তি এসে দাঁড়িয়ে যায় তবে কোনো ক্ষতি নেই। যেমন উদাহরণত হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস h নিজে একবার হযুরের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পক্ষান্তরে তারাবীহর ক্ষেত্রে অনেকবার তিনি তা ডেকে জামায়াত করে আদায় করেছেন।
অতএব হযরত আবু যর (আল-গিফারী h)-এর এই হাদীস থেকে স্পষ্ট, এর দ্বারাও বোঝা যায় যে, সালাতদুটো প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। আর রসুলুল্লাহ D তাহাজ্জুদ উপলক্ষ্যে কখনও পুরো রাত জেগে থাকেননি। যেমন হযরত আয়িশা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা তাহাজ্জুদের আলোচনায় বলেছেন,
«وَاعْلَمْ مَا رَأَيْتُ نَبِيَّ اللهِ ﷺ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِيْ لَيْلَةٍ وَّاحِدَةٍ، وَلَا صَلَّىٰ لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ…» إِلَىٰ آخِرِ الْـحَدِيْثِ.
‘আমি রসুলুল্লাহ D-কে একই রাতে পুরো কালামুল্লাহ কিংবা পুরো রাত নামাজ পড়তে দেখেনি।’[7]
আর তাঁর এ-সময়পরিমিতি শুধু জাহাজ্জুদের সালাতেই। নতুবা তারাবীহর সালাতে ভোর পর্যন্ত নামাজ পড়ার কথা (হযরত) আবু যর (h)-এর বর্ণনা থেকেই ঠিক প্রমাণিত হয়েছে এবং স্বয়ং হযরত আয়িশা সিদ্দীকা i-এরও সেটি জানা ছিল। কেননা তিনি (হুযুর D) তাঁর পরিবার ও স্ত্রীদের সকলকে সমবেত করেছিলেন। তাছাড়া তিনি (হযরত আয়িশা i) যে-পূর্ণ রাত্রজাগরণ নাকচ করেছেন সেই ব্যাপারটি সত্ত্বেও একথা বলা যে, তাঁর ধারণা ছিল না বা বিভ্রম হয়েছে তা একেবারে ভিত্তিহীন। বরং এটিই বাস্তব যে, পূর্ণ রাত্রজাগরণ নাকচ করা হয়েছে তাহাজ্জুদের সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ হাদীসটির বর্ণনাকারী সা’দ ইবনে হিশাম (r) তাহাজ্জুদের সালাত বিষয়েই জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং তিনি (হযরত আয়িশা i) সে বিষয়েই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
অবশ্য সহীহ মুসলিমে এ-বর্ণনাটি এসেছে, তবে তারবীহ প্রসঙ্গে নয়; এখানে তার কোনো আলোচনাই নেই। অতএব উম্মে সালামা[8] রমজানের কিয়াম বিষয়ে যা জিজ্ঞাসা করেছেন সেখানেও তাই রমজানের কিয়াম থেকে রমজান মাসের তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে রসুলুল্লাহ D-এর তাহাজ্জুদ অতিরিক্ত ছিল কি না? (সহীহ) আল-বুখারীতে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ: كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ رَمَضَانَ؟ فَقَالَتْ: «مَا كَانَ يَزِيْدُ فِيْ رَمَضَانَ وَلَا فِيْ غَيْرِهِ عَلَىٰ إِحْدَىٰ عَشْرَةَ رَكْعَةً؛ يُّصَلِّيْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِـهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّيْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِـهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلاَثًا»، فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ: «يَا عَائِشَةُ! عَنْ عَيْنِيْ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ».
‘হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (r) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়িশা (i)-কে প্রশ্ন করেন, রমজানে রসুলুল্লাহ D-এর নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ) কেমন ছিল? হযরত আয়িশা (i) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ D রমজান ও রমজানের বাইরে ১১ রকআতের চেয়ে বাড়াতেন না। রসুলুল্লাহ D চার রকআত নামাজ পড়তেন, তাঁর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করো না! অতঃপর আরও চার রকআত নামাজ পড়তেন। আমি (অর্থাৎ হযরত আয়িশা i) জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি কি বিতরের আগে ঘুমিয়ে যান? তিনি বললেন, ‘হে আয়িশা! আমার চোখদুটি ঘুমোয়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমোয় না।’’[9]
অতএব এ-হাদীস থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, আবু সালামা নির্দিষ্ট করে রমজানের কিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন আর হযরত আয়িশা (i) বলেছেন, রমজানে বিশেষ কোনো নামাজ ছিল না, বরং রমজান ও রমজানের বাইরে ১১ রকআতই পড়তেন তিনি, এরচেয়ে বেশি কখনো তিনি পড়তেন না। আর নামাজ পড়ার ধরন ছিল এ-রকম: চার রকআত পড়তেন আর শুয়ে যেতেন। তারপর চার রকআত পড়তেন আর শুয়ে যেতেন। অতঃপর তিন রকআত বিতর পড়তেন। এটি ছিল তাঁর স্থায়ী অভ্যাস। রমজান ও রমজানের বাইরে এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সুতরাং যদি এটাই এর অর্থ হয় তবে হাদীসটি অনেকগুলো বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় এবং তা বাস্তবতার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। কেননা স্বয়ং হযরত আয়িশা (i) ১৩ রকআতের কথাও বর্ণনা করেছেন। উদহারণত মুয়াত্তা ইমাম মালিকে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّيْ بِاللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، ثُمَّ يُصَلِّيْ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ لِلصُّبْحِ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.
‘হযরত আয়িশা (i) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ D রাতের বেলা ১৩ রকআত নামাজ পড়তেন। অতঃপর যখন ফজরের আযান শুনতেন তখন হালকা দুই রকআত নামাজ পড়তেন।’[10]
আর হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (k) স্বয়ং রমজানের বাইরে ১৩ রকআত তাহাজ্জুদের কথা বর্ণনা করেছেন এবং অন্যান্য অনেক সাহাবীও ১৩ রকআতের কথা বর্ণনা করেছেন। আর এ-উভয় নামাজের ধরনও হযরত আয়িশা (i)-এর হাদীসে উল্লিখিত ধরনের পরিপন্থী। যেমন সহীহ মুসলিমে এক দীর্ঘ হাদীসের অধীনে হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (k) থেকে বর্ণিত আছে,
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَقُمْتُ فَصَنَعْتُ مِثْلَ مَا صَنَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ، ثُمَّ ذَهَبْتُ فَقُمْتُ إِلَىٰ جَنْبِهِ، فَوَضَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ رَأْسِيْ، وَأَخَذَ بِأُذُنِي الْيُمْنَىٰ يَفْتِلُهَا، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ أَوْتَرَ، ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّىٰ جَاءَ الْـمُؤَذِّنُ، فَقَامَ فَصَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى الصُّبْحَ.
‘হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (k) বলেন, আমি ওঠে যাই এবং রসুলুল্লাহ D যেমন করেছেন তেমনই করি (অর্থাৎ অযু করি)। অতঃপর আমি রসুলুল্লাহ D-এর পাশে (অর্থাৎ বাম পাশে) দাঁড়াই। তখন রসুলুল্লাহ D তাঁর ডান হাত আমার মাথায় রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে তা টানতে লাগলেন (অর্থাৎ ডান পাশে নিয়ে আসেন)। এরপর তিনি দুই রকআত নামাজ পড়লেন, তারপর দুই রকআত, তারপর দুই রকআত, তারপর দুই রকআত, তারপর দুই রকআত, তারপর বিতর আদায় করলেন। অতঃপর শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াযযিন এলে তিনি ওঠে সংক্ষিপ্ত দুই রকআত নামাজ পড়লেন। এরপর বের হয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন।’[11]
দ্বিতীয় এক বর্ণনা যেটি সহীহ মুসলিমে এসেছে তাতে হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (k) বলেন,
فَقَامَ فَصَلَّىٰ، فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَأَخَذَ بِيَدِيْ فَأَدَارَنِي عَنْ يَّمِيْنِهِ، فَتَتَامَّتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، ثُمَّ اضْطَجَعَ فَنَامَ حَتَّىٰ نَفَخَ، … إِلَىٰ آخِرِ الْـحَدِيْثِ.
‘অতঃপর রসুলুল্লাহ D ওঠে নামাজ পড়ছিলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে যাই। তিনি আমাকে হাতে ধরে তাঁর ডান দিকে ঘুরিয়ে আনলেন। অবশেষে রসুলুল্লাহ D-এর নামাজ ১৩ রকআত সম্পন্ন হয়। এরপর তিনি শুয়ে পড়লেন, এমনকি তাঁর পবিত্র প্রশ্বাসের বরকতপূর্ণ শব্দাবলি বোঝা যাচ্ছিল।’[12]
(সহীহ) মুসলিমে (হযরত) যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী (h) থেকে বর্ণিত আছে,
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْـجُهَنِيِّ، أَنَّهُ قَالَ: لَأَرْمُقَنَّ صَلَاةَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ، ثُمَّ صَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُوْنَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمَّ صَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُوْنَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمَّ صَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ، وَهُمَا دُوْنَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمَّ صَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُوْنَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا، ثُمَّ أَوْتَرَ فَذَلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.
‘হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি স্থির করি, আজ আমি রসুলুল্লাহ D-এর নামাজ লক্ষ করবো। প্রথমে তিনি দুই রকআত সংক্ষিপ্ত নামাজ পড়েন। তারপর বেশ দীর্ঘ দুই রকআত। তারপর দুই রকআত নামাজ পড়লেন যা তার পূর্ববর্তীগুলোর সংক্ষিপ্ত। তারপর আরও দুই রকআত নামাজ পড়লেন যা তার পূর্ববর্তীগুলোর চেয়ে সংক্ষিপ্ত। তারপর একইভাবে আরও দুই রকআত নামাজ পড়লেন। অনুরূপভাবে আরও দুই রকআত নামাজ পড়লেন। অতঃপর এ-নামাজগুলোর সাথে বিতর পড়লেন। অতএব এতে মোট ১৩ রকআত সম্পন্ন হয়।’[13]
দেখুন, এই হাদীসতিনটি রকআতের সংখ্যা ও আদায়ের ধরন উভয়ে হযরত আয়িশা (i)-এর উপর্যুক্ত হাদীসের বিরোধী। আর উপরে হযরত আবু যর (h)-এর হাদীস থেকে জানা গেছে যে, রসুলুল্লাহ (D) রমজানে যে-তিনদিন নামাজ পড়েছেন যদিও তার রকআতসংখ্যা জানা নেই, কিন্তু তাতে চার-চার রকআত পড়ে তিনি শুয়ে যেতেন না এবং রমজানে দ্বিতীয় যে-তিনদিন তিনি জামায়াতের সাথে নামাজ পড়েছেন তাতেও সে-ধরনের (নামাজ) সাব্যস্ত হয়নি। আর হাদীসটিতে রমজানের ইবাদতে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা উল্লেখিত হয়েছে তাও এসবের পরিপন্থী। কেননা যখন সকল মাসে রাতের সালাত একই রকম ছিল তা হলে কৃচ্ছসাধনের অর্থ কী? আর যেসব বর্ণনায় রমজানে বিশেষত শেষদশে (রসুলুল্লাহ D) ঘুমাতেন না বলে বর্ণিত হয়েছে তাও এসবের সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন- সহীহ আল-বুখারীতে এসেছে,
«إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ»، الْـحَدِيْثُ.
‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত (নবী করীম D) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন; নিজে রাতে জেগে থাকতেন আর পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’[14]
ইমাম বায়হাকী (r) বর্ণনা করেন,
«إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ لَـمْ يَأْتِ فِرَاشَهُ حَتَّىٰ يَنْسَلِخَ»، الْـحَدِيْثُ.
‘যখন রমজান আগমন করতো তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত (নবী করীম সা.) নিজের বিছানায় আসতেন না।’[15]
এ-হাদীসদুটো থেকে ইবাদতে কৃচ্ছ্রসাধন এবং পুরো রাত জেগে থাকাই নির্বৃত্ত হয়, রমজান ও রমজানের বাইরের সমত্ব নয়। আর হযরত আয়িশা (i) রসুলুল্লাহ D-এর তাহাজ্জুদ সম্পর্কে যে-ভাষ্য হযরত সা’দ ইবনে হিশাম (r) থেকে পেশ করেছেন সেটিও এই বর্ণনার পরিপন্থী। যেমন দীর্ঘ বর্ণনায় হযরত আয়িশা (i) বলেন,
فَقَالَتْ: كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُوْرَهُ، فَيَبْعَثُهُ اللهُ مَا شَاءَ أَنْ يَّبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ، فَيَتَسَوَّكُ، وَيَتَوَضَّأُ، وَيُصَلِّيْ تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَّا يَجْلِسُ فِيْهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ، فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوْهُ، ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ، ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّ التَّاسِعَةَ، ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوْهُ، ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيْمًا يُّسْمِعُنَا، ثُمَّ يُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ مَا يُسَلِّمُ وَهُوَ قَاعِدٌ، فَتِلْكَ إِحْدَىٰ عَشْرَةَ رَكْعَةً يَا بُنَيَّ، … إلخ.
‘হযরত আয়িশা (i) বললেন, আমরা রসুলুল্লাহ D-এর জন্য মিসওয়াক ও অযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। রসুলুল্লাহ D রাতের যেকোনো সময় জেগে উঠতেন যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। অতঃপর তিনি মিসওয়াক ও অযু করতেন এবং নয় রকআত নামাজ পড়তেন। তিনি এর মাঝে আর বসতেন না অষ্টম রকআত ব্যতীত (অর্থাৎ বিতরের দুই রকআতের পর ও তৃতীয় রকআতের আগে)। তপরপর তিনি আল্লাহর যিকর করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তাঁর কাছে দোয়া করতেন। তারপর সালাম না ফিরিয়েই ওঠে যেতেন, তারপর নবম রকআত আদায় করে বসতেন এবং আল্লাহর যিকর, তাঁর প্রশংসা ও তাঁর কাছে দোয়া করতেন। পরে এমনভাবে সালাম ফেরাতেন যা আমরা শুনতে পেতাম। অতঃপর সালাম ফেরানোর পর বসে বসে দুই রকআত নামাজ পড়তেন। বাবা! এই হচ্ছে মোট এগার রকআত।’[16]
অতএব এগারোর চেয়ে অতিরিক্ত রকআতের অস্বীকার এবং নামাজের এ-বিশেষ ধরন সংশয়পূর্ণ প্রমাণিত হয়। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, হাদীসের অর্থ হবে, যেহেতু রমজানে রসুলুল্লাহ D ইবাদতে অতিকৃচ্ছ্রসাধন করতেন, এ-কারণে হযরত আবু সালামা (r) রমজানের তাহাজ্জুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় রমজানে রসুলুল্লাহ D-এর তাহাজ্জুদ অতিরিক্ত হতো কিনা? জবাবে হযরত আয়িশা (i) অতিরিক্ত তাহাজ্জুদের বিষয়টা নাকচ করেন। এতে তারাবীহর সালাত বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই; না প্রশ্নে, না জবাবে। আর ১১ রকআতের উল্লেখ অধিকাংশ ক্ষেত্রে, সবসময় নয়; অধিকাংশ সময় রসুলুল্লাহ D-এর তাহাজ্জুদ ১১ রকআত হতো। যদিও মাঝে-মধ্যে এরচেয়ে বেশিও তিনি পড়তেন। এ-হাদীসে না মাঝে-মধ্যে অতিরিক্ত তাহাজ্জুদের কথা অস্বীকার করা হয়েছে, না রমজানে কিয়ামের কথা যা তাহাজ্জুদের অতিরিক্ত। বরং সেসব রকআতসংখ্যাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যা অধিকাংশ সময় রমজান ও রমজানের বাইরে তাহাজ্জুদে পড়া হতো।
এরপর এ-বাক্যটি: «يُصَلِّيْ أَرْبَعًا» (তিনি চার রকআত নামাজ পড়তেন), এটি আরেকটি বিষয় যেখান থেকে রসুলুল্লাহ D-এর যে ইবাদতের ওপর স্বসচেতনতার শক্তি ছিল তা পরিগৃহ্য হয়; নিদ্রা ও জাগর্তি তাঁর ইচ্ছাধীন ছিল, তিনি যখন ইচ্ছা জেগে উঠতেন, যখন ইচ্ছা ঘুমিয়ে যেতেন। অবশ্য রসুলুল্লাহ D এটি কখনো কখনো করতেন, এ-অবস্থা না রমজানের বিশেষত্ব ছিল, না ওসব রকআতের জন্য আবশ্যিক ছিল। এটি বরং কদাচিৎকালের অবস্থার বর্ণনা এবং তা একটি বিসংগত বাক্য। যেহেতু অলঙ্কারশাস্ত্রে নিয়ম স্থিরীকৃত হয়েছে যে, একটি বাক্যের ওপর অন্য একটি বাক্যের সংযোগ তখনই করা হয় যখন দুই বাক্যের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সামঞ্জস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে অসামঞ্জস্য থাকে। যদি পূর্ণ-সমঞ্জস বা পূর্ণ-অসমঞ্জস হয় তাহলে সংযোজক অব্যয়ের উল্লেখ করা হয় না। অতএব এখানে সংযোজক অব্যয়ের উল্লেখ না করা পূর্ণ-অসামঞ্জস্যের কারণে, পূর্ণসামঞ্জস্যের কারণে নয়। যেহেতু ইবাদতে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা এসেছে সে-কারণে তিনি এসব বক্তব্যের তিনি উল্লেখ করেছেন, নতুবা রমজানের তাহাজ্জুদের রকআত সংখ্যা জানতে চেয়ে তার প্রশ্নের জবাব ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
অতএব এই আলোচনা থেকে হাদীসসমূহের মধ্যে বৈপরীত্যের তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই, না নামাজের ধরনে আছে, না পুরো রাত জাগরণে আছে। সকল হাদীস বাস্তবতার সাথে সংগত এবং পারস্পরিক সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়। আর এটিই উদ্দেশ্য ছিল হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (i)-এর। সুতরাং বোঝা গেল যে, পুরো রাত নামাজ না পড়া এটি তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রে এবং পড়া তা তারাবীহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর ইমাম বুখারী (r) হযরত ওমর h থেকে একথা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ওমর h তারাবীহর জামায়াত যেটি প্রথম প্রহরে হযরত উবাই (ইবনে কা’ব h) করছিলেন এবং যে-জামায়াতটি স্বয়ং হযরত ওমর h প্রচলন করেছিলেন তা দেখে তিনি বলেন,
«وَالَّتِيْ تَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِيْ تَقُوْمُوْنَ».
‘তোমরা রাতের যে-অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের যে-অংশে তোমরা নামাজ আদায় কর তা অপেক্ষা উত্তম।’[17]
এর দ্বারা যদি এখানে দুই নামাজের মধ্যে বিভিন্নতা খুঁজে বের করা হয় তাহলে তা দূরপ্রাসঙ্গিক হবে না। কেননা কথাটির অর্থ হচ্ছে, যে-নামাজ না পড়ে তোমরা ঘুমিয়ে থাক অর্থাৎ তাহাজ্জুদ যা শেষরাতে পড়া হয় তা এ-নামাজ অপেক্ষা উত্তম যা তোমরা পড়ছো অর্থাৎ তারাবীহ যা প্রথম প্রহরে পড়তেন। যেহেতু লোকজন তারাবীহ পড়ে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন না সেজন্য হযরত ওমর (h) তাঁদেরকে তাহাজ্জুদ পড়তে উৎসাহ যুগিয়েছেন যে, উত্তম ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কাজেই প্রথম প্রহরে তারাবীহ এবং শেষরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবে। নতুবা এ-তারবীহ শেষসময়ে পড়বে, যাতে (শেষরাতের) মর্যাদাও লাভ হয় এবং শেষসময়ের তারাবীহর দ্বারা তাহাজ্জুদও নিষ্পন্ন হয়ে যায়; এতে দুই সালাতের সমন্বয়ে উভয় নামাজের সাওয়াব পাওয়া যাবে। আর এখান থেকে সময়ের শ্রেষ্ঠাংশ বিষয়েও জানা গেল।
অবশ্য দ্বিতীয় আরেকটি বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হযরত জনাব রসুলুল্লাহ সা.-এর কর্ম থেকে সরাসরি একথা সাব্যস্ত হয়নি যে, যখন তিনি রাতের প্রথম অংশে যে-তিনদিন তারাবীহ পড়েছিলেন তার শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়েছিলেন কি পড়েননি। এটি আল্লাহই ভালো জানেন। তবে সাহাবায়ে কেরামের কর্মে এর নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন ইমাম আবু দাউদ (r) হযরত কায়স ইবনে তালক (h) থেকে বর্ণনা করেন,
فَلَمَّا زَارَنَا طَلْقُ بْنُ عَلِيٍّ فِيْ يَوْمٍ مِنْ رَمَضَانَ، وَأَمْسَىٰ عِنْدَنَا، وَأَفْطَرَ، ثُمَّ قَامَ بِنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ، وَأَوْتَرَ بِنَا، ثُمَّ انْحَدَرَ إِلَىٰ مَسْجِدِهِ، فَصَلَّىٰ بِأَصْحَابِهِ، حَتَّىٰ إِذَا بَقِيَ الْوِتْرُ قَدَّمَ رَجُلًا، فَقَالَ: أَوْتِرْ بِأَصْحَابِكَ، فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: «لَا وِتْرَانِ فِيْ لَيْلَةٍ»، انْتَهَىٰ.
‘হযরত কায়েস ইবনে তালক (r) বলেন, হযরত তালক ইবনে আলী (h) রমজানের কোনো একদিন আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং সন্ধ্যায় আমাদের সাথেই ইফতার করেন। অতঃপর তিনি সেই রাতে আমাদের সাথে কিয়াম ও বিতর পড়েন। তারপর তিনি তাঁর নিজের মসজিদে গমন করেন এবং সেখানেও তাঁর সঙ্গীদের নামাজ পড়ান। বিতর অবশিষ্ট ছিল, এর জন্য তিনি অন্য এক ব্যক্তিকে সম্মুখে পাঠিয়ে দেন এবং বলেন, তোমার সঙ্গীদের বিতর পড়াও। কেননা আমি রসুলুল্লাহ D-কে বলতে শুনেছি, ‘একই রাতে দুবার বিতর নেই।’’[18]
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, হযরত তালক ইবনে আলী (h) প্রথমে লোকজনের সাথে রসুলুল্লাহ সা.-এর কর্মচরিত অনুসারে প্রথম প্রহরেই তারাবীহ আদায় করেন এবং বিতরও এর সাথে পড়ে নেন। যেমনটি রসুলুল্লাহ সা.-এর কর্মচরিত থেকে সাব্যস্ত। আর এরপর নিজের মসজিদে গিয়ে শেষপ্রহরে তাহাজ্জুদ আদায় করেন, তবে এর সাথে তিনি বিতর পড়েননি। তিনি মুকতাদীদের আদেশ করেন যে, তোমরা বিতর নিজেরা পড়ে নাও। যেহেতু রসুলুল্লাহ সা. তাহাজ্জুদের সাথে বিতর পড়তেন, কাজেই মুকতাদীরা তাহাজ্জুদ সম্পন্ন করার সাথে বিতর পড়তে চাচ্ছিলেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, দুটো সময়েই নামাজ পড়া হতো আর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন রসুলুল্লাহ সা.-এর অনুসরণে অত্যন্ত উৎসাহী। সুতরাং বোঝা গেলো যে, রসুলুল্লাহ সা. দ্বিতীয় সময়ে তাহাজ্জুদ পড়েছেন হবে। আর একথা যা ইমাম বুখারী (রহ.) হযরত আয়িশা সিদ্দীকা i থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
«إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ»، الْـحَدِيْثُ.
‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত (নবী করীম সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন; নিজে রাতে জেগে থাকতেন আর পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’[19]
এখান থেকে তিনটি বিষয় প্রমাণিত হয়:
- প্রথমত সেই দিনগুলোতে রসুলুল্লাহ সা. পুরো রাত জেগে থাকতেন। কারণ «أَحْيَا لَيْلَهُ» সেক্ষেত্রেই বলা হয় যখন পুরো রাত জেগে থাকে। সুতরাং বোঝা গেল যে, হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাদি.) পুরো রাত জেগে থাকার যেকথা নাকচ করেছে সেটার সম্পর্কে তাহাজ্জুদের সাথে, এটা সাধারণভাবে নয়।
- দ্বিতীয়ত রসুলুল্লাহ সা. যে-দুই রাতে তারাবাহীর রাতের একতৃতীয়াংশ পর্যন্ত এবং অর্ধরাত পর্যন্ত পড়েছিলেন তাতে অর্ধরাতের পর তিনি শুয়ে যাননি। কেননা সেই রাতগুলোও শেষদশের অন্তর্ভূত ছিল। অতএব এটিই প্রবল সম্ভব যে, অর্ধরাতের পর তিনি নফল পড়তেন, আর তা তাহাজ্জুদই ছিল। কেননা রাতে নামাজই পড়া তাঁর অভ্যাস ছিল, তিনি বসে বসে যিকর করা বা কুরআন পড়ায় অভ্যস্ত ছিলেন না। এখান থেকেও দুই নামাজের বিভিন্নতার ধারণা পাওয়া যায়।
- তৃতীয়ত তারবীহ তিনি সর্বদা রাতের প্রথম প্রহরে পড়েছেন, এ-সময় যা কিছু পড়তেন তা তারাবীহই ছিল আর শেষরাতে তাহাজ্জুদ। অতএব তারাবীহ কার্যত সুন্নতে মুওয়াক্কাদা হয়। আর বাধ্যতামূলক হবে আশঙ্কায় তিনি যা পরিবর্জন করেছেন তা ছিল ডেকে জামায়াতের আয়োজন, ঠিক তারাবীহ নয়।
মোটকথা এসব কারণে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের বিভিন্নতা স্পষ্ট। কিন্তু হ্যাঁ এক নামাজ অপরটির স্থলাভিষিক্ত হতে পারে যে, যদি তাহাজ্জুদের সময় তারাবীহ পড়া হয় তবে তাহাজ্জুদও আদায় হয়ে যাবে আর এ বিষয়টি সম্পূর্ণই নফলের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণত যদি যুহার সময় সালাতে কুসুফ (সূর্যগ্রহণ) পড়া হয় তা সালাতে যুহার স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায় আর যদি খুসুফে কমর (চন্দ্রগ্রহণ)-এর নামাজ তাহাজ্জুদের সময় পড়া হয় তবে তাহাজ্জুদও আদায় হয়ে যায়। যদিও তারাবীহ তারাবীহ হিসেবে তাহাজ্জুদ থেকে স্বতন্ত্র সালাত এবং সালাতে কুসুফ সালাতে যুহা থেকে এবং সালাতে খুসুফ সালাতে তাহাজ্জুদ থেকে (স্বতন্ত্র)। কিন্তু সওয়াব উভয়ের প্রত্যেকটির অর্জিত হবে। এভাবে যুহার সময় একটি এবং এর মর্যাদায় হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর প্রথমসময় ও শেষসময় উভয় সময়ে রসুলুল্লাহ সা. থেকে আদায় সাব্যস্ত আছে। উভয়য়ের প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র নামাজ, তবে একটি পড়া দ্বারাও হাদীসে বর্ণিত সওয়াব অর্জিত হয়। অতএব যদি রসুলুল্লাহ সা. পুরো রাত তারাবীহর নামাজ পড়েন তাহলে তাহাজ্জুদও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর যদি রাতের একতৃতীয়াংশ অথবা জামায়াতসহকারে অর্ধরাত পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তা হলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী রাতের অবশিষ্ট সময় একাকী নামাজ আদায় করেছেন বলেই অনুমিত হয়। যদিও কোনো বর্ণনাকারী তা উল্লেখ করেননি, আল্লাহই সর্বজ্ঞাত।
[1] আল-কুরআন, সুরা আল-মুয্যাম্মিল, ৭৩:১-২
[2] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৪০-৪১, হাদীস: ১৩৪২
[3] (ক) আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, খ. ১, পৃ. ৬১৩, হাদীস: ১৯৬৫; (খ) আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, খ. ৫, পৃ. ২২৪, হাদীস: ৩৩৩৬, হাদীসটি হযরত সালমান আল-ফারসী রাদি. থেকে বর্ণিত। তথ্যসূত্রে উল্লিখিত গ্রন্থদুটোর উপস্থাপিত সংস্করণে «وَقِيَامَهُ تَطَوُّعًا»-এর স্থলে «وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا» এসেছে এবং মিশকাতুল মাসাবীহে «جَعَلَ اللهُ»-এরপর «تَعَالَىٰ» শব্দটি অতিরিক্ত বিবৃত হয়েছে।
[4] ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৪২১, হাদীস: ১৩২৮, হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রাদি. থেকে বর্ণিত
[5] (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ৫০, হাদীস: ১১৩২; (ক) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫১১, হাদীস: ৭৪১, হযরত আয়িশা রদি. হযরত মাসরুক ইবনুল আজদা’ রদি. সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত।
তথ্যসূত্রে উল্লিখিত গ্রন্থদুটোর উপস্থাপিত সংস্করণে হাদীসের ভাষ্যে শব্দগত কিছু তারতম্য পরিলক্ষিত হয়, সহীহ আল-বুখারীর ভাষ্য হচ্ছে,
قُلْتُ: مَتَىٰ كَانَ يَقُوْمُ؟ قَالَتْ: «كَانَ يَقُوْمُ إِذَا سَمِعَ الصَّارِخَ».
‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (তাহাজ্জুদের জন্য) কখন উঠতেন? তিনি বললেন, ‘তিনি (তাহাজ্জুদের জন্য) উঠতেন যখন মোরগের ডাক শুনতেন।”
অন্যদিকে সহীহ মুসলিমের ভাষ্য হচ্ছে,
قُلْتُ: أَيَّ حِيْنٍ كَانَ يُصَلِّيْ؟ فَقَالَتْ: «كَانَ إِذَا سَمِعَ الصَّارِخَ، قَامَ فَصَلَّىٰ».
‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কোন সময় (তাহাজ্জুদের) সালাত পড়তেন? তিনি বললেন, ‘যখন মোরগের ডাক শুনতেন তখন ওঠে (তাহাজ্জুদের) সালাত পড়তেন।”
[6] (ক) আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, খ. ১, পৃ. ৪০৬, হাদীস: ১২৯৮; (খ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৪২০, হাদীস: ১৩২৭; (গ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৫০, হাদীস: ১৩৭৫; (ঘ) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ৩, পৃ. ১৬০, হাদীস: ৮০৬; (ঙ) আন-নাসায়ী, আস-সুনানুস সুগরা, খ. ৩, পৃ. ২০২, হাদীস: ১৬০৫
[7] (ক) আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, খ. ১, পৃ. ৩৯৫, হাদীস: ১২৫৭; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫১৩, হাদীস: ৭৪৬, হযরত আয়িশা রাদি. হযরত সা’দ ইবনে হিশাম ইবনে আমির রাদি. সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত। অবশ্য উল্লিখিত গ্রন্থদুটোর উপস্থাপিত সংস্করণে হাদীসটির ভাষ্য হচ্ছে,
«وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللهِ ﷺ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ، وَلَا صَلَّىٰ لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ».
‘আমি আল্লাহর নবী সা. একই রাতে পুরো কুরআন পড়েছেন বলে আমার জানা নেই আর তিনি ভোর পর্যন্ত পুরো রত সালাতও পড়তেন না।’
[8] আবু সালামা হবে, তিনি হযরত আবু সালামা আবদুল্লাহ / ইসমায়ীল ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ আয-যুহরী রহ., বিশিষ্ট তাবিয়ী। নামটি গ্রন্থকার r-এর নিকট উপেক্ষিত হয়েছে।
[9] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ৫৩, হাদীস: ১১৪৭
[10] মালিক ইবনে আনাস, আল-মুয়াত্তা, খ. ১, পৃ. ১১৫, হাদীস: ২৯৪
[11] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫২৬, হাদীস: ৭৬৩
[12] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫২৫, হাদীস: ৭৬৩
[13] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৩১, হাদীস: ৭৬৫
[14] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৩, পৃ. ৪৭, হাদীস: ২০২৪, হযরত আয়িশা রাদি. থেকে বর্ণিত
[15] আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, খ. ৫, পৃ. ২৩৪, হাদীস: ৩৩৫২, হযরত আয়িশা i থেকে বর্ণিত, তথ্যসূত্রে উল্লিখিত গ্রন্থটির উপস্থাপিত সংস্করণে হাদীসটির ভাষ্য এসেছে এভাবে:
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ شَدَّ مِئْزَرَهُ، ثُمَّ لَـمْ يَأْتِ فِرَاشَهُ حَتَّىٰ يَنْسَلِخَ».
‘যখন রমজান মাস আগমন করতো রসুলুল্লাহ সা. তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন, এরপর রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর বিছানায় আর আসতেন না।’
[16] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫১৩, হাদীস: ৭৪৬
[17] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৩, পৃ. ৪৫, হাদীস: ২০১০
[18] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৭৬, হাদীস: ১৪৩৯
[19] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৩, পৃ. ৪৭, হাদীস: ২০২৪, হযরত আয়িশা রাদি. থেকে বর্ণিত