ঋতু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য সচেতনতা
ডা. আয়েশা নার্গিস
আবহওয়া এখন না শীত না উষ্ণ। দিনে রোদে তাপের ঝলক। রাতে হাওয়ায় এখনও হাল্কা শিরশিরানি। বেশিক্ষণ পাখার নিচে থাকলে ঠান্ডা লেগে খুসখুসে কাশি-সর্দি-জ্বর। না থাকলে বাচ্চা-বুড়ো ঘেমে স্নান। তাছাড়া, গা-হাত-পা মাথার ব্যথা, হজমের গোলমাল, পক্স, হাম, নানা আলার্জি তো বসন্তের দূত। এদের সামলে দখিনা বাতাস উপভোগ করবেন কীভাবে? জেনে নিন কী কী আধি-ব্যাধি হতে পারে এই সময়। সামলাবেনই বা কী করে:
বসন্ত যখন রোগের দূত: প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঋতু আসবে ঋতু যাবে। কিন্তু শরীর খারাপ হবে কেন? ডাক্তাররা বলছেন, এক আবহাওয়া থেকে অন্য আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হতে আমাদের সামান্য সময় লাগে। যতক্ষণ না আমাদের শরীর সেই পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে না ততক্ষণ শরীরে তার নানা প্রভাব পড়ে। একবার ধাতস্থ হয়ে গেলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না। যেমন- বসন্ত ঋতুর কথাই ধরুন। শীতে মানুষ এক ধরনের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে যায়। শীতের শেষে যখন তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে তখন অনেক সময়ে আমাদের শরীর তাপমাত্রার এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। এবং শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তাদের শরীরে পরিবর্তন বিশেষ ছাপ ফেলে। এছাড়া ঋতু বদলের সময় বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন অসুখ বাড়ে।
আধি-ব্যাধির লিস্টি:
- শুরু করা যাক ছোটদের দিয়ে। দুবছর বয়স পর্যন্ত শিশু স্তন্যপান না করতে চাইলে প্রাথমিকভাবে ডাক্তারবাবুরা অনুমান করেন, এর কারণ শ্বাসকষ্টও হতে পারে।এছাড়া, রোটাভাইরাস থেকে ডায়ারিয়া হতে পারে। বাচ্চাদের হামেশাই হামে ভুগতে দেখা যায়। দশ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে এ সময়ে কমন কোল্ড কাফের সমস্যা মারাত্মকভাবে দেখা যায়। চোখ-নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি, ঝিমুনি ভাব এর লক্ষণ।
- এবার জানুন বয়স্করা কী কী সমস্যায় ভুগতে পারেন। আচমকা ঋতু পরিবর্তনে সবাই অল্পবিস্তর ‘সর্দি-কাশি-জ্বর’এ সমস্যায় ভোগেন। বড় বয়সেও চিকেন পক্স হতে দেখা যায় অনেকের। বেশি বয়সের উপসর্গ, আচমকা ঠান্ডা লেগে কাশি, বুকে ব্যথা। বেশি ঠান্ডা লাগলে ফুসফুসে সর্দি জমে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্ক-কার্ডিয়াক আটাক হতে পারে।
এছাড়া, ঠান্ডা লেগে বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা বাতাস ছাড়াও ধুলো, ধোঁয়া থেকে হাঁপানি হতে পারে। এ ছাড়াও নিয়মিত ধূমপান যাঁরা করেন, তাঁদেরও হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁদের বাত বা আর্থ্রারাইটিস আছে তাঁদের শীতের শুরু থেকেই ব্যথা বাড়তে শুরু করে। স্পন্ডিলাইটিস থেকে বাড়তে পারে ঘাড়ের যন্ত্রণাও।
ঠান্ডা আটকাতে লেপের তলাতেও অনেক বয়স্ক মানুষ সোয়েটার, টুপি, মোজা পরে শুয়ে পরেন। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা করলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
এ সময় বাচ্চাদের পায়খানার সঙ্গে সমান তালে বমি হলে দেরী না করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাড়িতে নুন ও চিনি মেশানো জল বা ওআরএস বার বার খাওয়াতে পারেন। যেসব বাচ্চা অ্যাজমায় ভোগে তাদের আগে থেকে সাবধান হতে হবে। হাঁচি, কাশি, জ্বর হলে অ্যান্টবায়োটিক দিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
বাচ্চা থেকে বুড়ো, সবাই পলিউশন মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোলে নাকে ধুলো কম ঢুকবে। বয়স্করা ইনহেলার দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ চালাতে পারেন। বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতাল ছাড়া গতি নেই। কষ্ট কমাতে হাঁপানি রোগীদের ধুলো, ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়াও গরম পোশাক পরা, ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করার মতো বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে। রাতে বা ভোরের দিকে বাইরে না বেরনোই ভাল। বেশি রাত জাগার অভ্যাসও বদলাতে হবে।
হাঁটুর ব্যথার হাত থেকে রেহাই পেতে সারা বছর দু’বার করে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করুন। অনেকক্ষণ বসে থাকলে মাঝে মাঝেই বসা অবস্থায় এক পা সোজা করে ১০ সেকেন্ড রাখার পরে ধীরে ধীরে তা নামিয়ে আরেক পা একই ভাবে ১০ সেকেন্ড সামনের দিকে সোজা করুন। এই হালকা, ঘরোয়া ব্যায়ামে হাঁটুর ব্যথা কমবে। এছাড়াও, নিক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।। সঙ্গে গরম সেঁক। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা গরম জলে স্নান করুন।
হজমের সমস্যা এড়াতে রাস্তার খাবার এ সময়ে এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। পারলে জল ফুটিয়ে খান। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে কমপক্ষে চার লিটার জল খাওয়া উচিত।
সর্দি ঠেকাতে ঘরোয়া টোটাকা: একবাটি গরম জলে ভিক্স ফেলে মাথায় তোয়ালে চাপা দিয়ে দু-তিন মিনিট গরম ভাপ নিন। তিনবার এভাবে ভাপ নিলে বুকে জমা সর্দি উঠে আসবে। মাথা ব্যথাও কমবে।
কাশিতে লবঙ্গ বা আদাকুচি মুখে দিয়ে রাখলে কাশি কমবে। আপনিও আরাম পাবেন। এছাড়া, আদা, তুলসি পাতা, মিছরি ও গোলমরিচ গরম জলে ফুটিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। যতই গরম লাগুক, আরাম পেতে দয়া করে ফুল স্পিডে পাখা বা এসি চালিয়ে দেবেন না।