জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা-সমাধান-ফতোয়া বিভাগ- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

دَارُ الافتاء جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail.com

পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

যাকাত-সদকা

সমস্যা: ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট থেকে যেকোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারে না। যদি কারো টাকা ব্যাংকে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করা থাকে তাহলে তার যাকাতের হুকুম কী? বর্তমানেই তাকে যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি টাকা উত্তোলন করার পর? দলিলসহ বিস্তারিত জানতে চাই।

ফাহাদ

নড়াইল।

সমাধান: ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা জমা থাকলেও তার যাকাত দিতে হবে। এটি হাতে থাকা নগদ অর্থের মতোই। আর ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা জমাকারী চাইলেই উত্তোলন করতে পারে। অবশ্য নির্ধারিত মেয়াদের আগে উঠালে আশানুরূপ সুদ পায় না। [আল-বাহরুর রায়েক: ২/২০২, ফতওয়ায়ে খানিয়া: ১/১৫২, তাবয়ীনুল হাকায়েক: ২/২৫৬]

সমস্যা: আমার একটি ডেইরি ফার্ম আছে। তাতে ৮০-৯০টি গরু আছে। আমি এগুলোর দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। এ গরুগুলোর সকল খরচ আমাকেই বহন করতে হয়। আমাকে কি উক্ত গরুগুলোর যাকাত দিতে হবে।

আলী হামযা

কুষ্টিয়া।

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত ডেইরি ফার্মের গরুর যাকাত দিতে হবে না। অবশ্য দুধ বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তার ওপর সাধারণ নিয়মে যাকাত ওয়াজিব হবে। [খুলাসাতুল ফতওয়া: ১/২৩৫, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২১২, ২০২, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৭২, ১৭৬, আদ-দুররুল মুখতার: ২/২৭৫-২৬৫]

সওম-ইতিকাফ

সমস্যা: জনৈক ব্যক্তি রমজান মাসে দিনের বেলায় রোজা অবস্থায় সফরে বের হয়। সফরের একপর্যায়ে এই ভেবে সে রোজা ভেঙে ফেলে যে, সফরে তো রোজা না রাখার সুযোগ আছে। এখন আমার জানার বিষয় হল, এই ব্যক্তির রোজা ভেঙে ফেলা কি ঠিক হয়েছে? আর পরবর্তীতে তাকে কি শুধু উক্ত রোজাটি কাযা করতে হবে? নাকি কাযা কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে?

শামছুল হক

গোপালগঞ্জ।

সমাধান: ওই ব্যক্তির রোজা ভেঙে ফেলা নাজায়েজ হয়েছে। এ রোজা পূর্ণ করা জরুরি ছিল। সফরের কারণে রোজা ভাঙ্গা যায় না। সুবহে সাদিকের আগে মুসাফির হয়ে গেলে রোজা না রাখার সুযোগ আছে। রোজা রেখে বিনা ওযরে ভেঙে ফেলার সুযোগ নেই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে ফেলার দরুন তার ওপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। [মাবসূতে সারাখসী: ৩/৬৮, আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৫৮, আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৯০, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ৩৭৪, আদ-দুররুল মুখতার: ২/৪৩১]

সমস্যা: আমার ছোট ভাই ২৭ রমজানে মোটর সাইকেল অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমরা মনে করেছি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পূর্বেই সে মারা গেছে। তাই শেষের তিনটি রোজা রাখতে পারেনি এবং রোজা রাখার মতো সামর্থ্য ফিরে আসার আগেই ইন্তেকাল করে। জানার বিষয় হল, অসুস্থাতার কারণে রমজানের শেষের যে তিন দিনের রোজা সে রাখতে পারেনি সেগুলোর ফিদয়া আদায় করা কি তার ওপর ওয়াজিব ছিল? ওয়াজিব হলে আমরা তার পক্ষ থেকে ফিদয়া আদায় করলে কি তা আদায় হয়ে যাবে?

শহীদুল্লাহ

রামু, কক্সবাজার।

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু ছুটে যাওয়া রোজাগুলো কাযা করার মতো সময় পায়নি তাই তার পক্ষ থেকে কোন ফিদয়া বা কাফফারা আদায় করতে হবে না। [মাবসূতে সারাখসী: ৩/৮৯, ফতওয়ায়ে খানিয়া: ১/২০৩, বাদায়িউস সানায়ি: ২/২৬৩, আল-মুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৬০]

হজ-ওমরা

সমস্যা: কোন ব্যক্তির ওপর হজ ফরয হলে সে যদি ফরয হজ আদায় না করে অন্য কোন ব্যক্তির বদলি হজ করে, তাহলে কি তার বদলি হজ আদায় হবে? যদি আদায় না হয় তাহলে কি আবার বদলি হজ করাতে হবে?

আশরাফুজ্জমান

বান্দরবান।

সমাধান: হজ ফরয হওয়ার পরও যে ব্যক্তি হজ আদায় করেনি তার জন্য বদলি হজ করা নাজায়েজ। তবে কেউ যদি এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলি হজ করায় তাহলে যার পক্ষ থেকে করানো হচ্ছে তার হজ আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় হজ করাতে হবে না।

উল্লেখ্য, বদলি হজ এমন ব্যক্তি দ্বারা করানো উচিত যিনি নিজের ফরয হজ আদায় করেছেন এবং হজের মাসায়েল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন। [রদ্দুল মুখতার: ২/৬০৩, বাদায়িউস সানায়ি: ২/৪৫৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৫৭, মাজমাউল আনহুর: ১/৩৯৫]

সমস্যা: এক ব্যক্তির ওপর হজ ফরয ছিল। কিন্তু তিনি হজ করতে পারেননি। হজ না করে ইন্তিকাল করেছেন। মৃত্যুর সময় তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলি হজ করার জন্য অসিয়ত করে যান। এখন তার ছেলেরা আমাকে তার পক্ষ থেকে হজ করার জন্য বলছে। তারা জানিয়েছে যে, ওমরা সম্পন্ন হলে আমাকে খরচের অতিরিক্ত ৩০/৪০ হাজার টাকা হাদিয়া হিসেবে দেবে। এ টাকা গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না?

ফায়জুল্লাহ

লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

সমাধান: হজ ও ওমরা হল ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় নেওয়া নাজায়েজ। সুতরাং আপনি শুধু ওমরার সকল খরচ নিতে পারবেন। অতিরিক্ত হাদিয়া যা মূলত বিনিময় তা নিতে পারবেন না। [রদ্দুল মুখতার২/৬০১, রাসায়েলে ইবনে আবেদীন: ২/১৬৬, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৫/৪৭৮]

মান্নত-কসম

সমস্যা: গায়রুল্লাহর নামে মান্নত করা কী? কোনো ধরনের মান্নত করলে তা গায়রুল্লাহর নামে মান্নত করা হবে? কুরআন-হাদীসের আলোকে দলিলসহ জানাবেন।

আবদুল্লাহ শাহরিয়ার

টাঙ্গাইল।

সমাধান: মান্নত একটি ইবাদত। মান্নত একমাত্র আল্লাহর নামেই হয়। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও শিরক। গায়রুল্লাহর নামে মান্নতের দৃষ্টান্ত। যেমন কেউ বলল, আমি সুস্থ হলে অমুক বুজুর্গের নামে একটা গরু বা এই পরিমাণ টাকা ইত্যাদি দিব বা অমুক মাযারে ছাগল টাকা ইত্যাদি দেবো। [ফতওয়ায়ে শামী: ২/৪৩৯]

সমস্যা: এক ব্যক্তি বিপদে পড়ে একটি বকরি সদকা করার মান্নত করে। এখন আল্লাহর রাস্তায় বকরি না দিয়ে সমপরিমাণ টাকা গরিব-মিসকিনকে দিয়ে দিলে মান্নত আদায় হবে কি না?

ছফিউল্লাহ

ফটিকছড়ি।

সমাধান: এ অবস্থায় বকরি না দিয়ে সমপরিমাণ টাকা গরিবদেরকে সদকা করে দিলেও তার মান্নত আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য যেহেতু বকরি দেওয়ার মান্নত করেছে তাই বকরি দেওয়াই ভালো। [আদ-দুররুল মুখতার: ৩/৪১, ইমদাদুল ফতওয়া: ২/৫৫৬, ইমদাদুল আহকাম: ৩/৩৫-৩৭, ৪২]

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: বিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন মহর কত? আর মহরে ফাতেমি কত? এক দিরহামের পরিমাণসহ জানালে উপকৃত হব।

আবির

ময়মনসিংহ।

সমাধান: বিয়ের সর্বনিম্ন মহর ১০ দিরহাম। অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা বা ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা। আর মহরে ফাতেমি হল ৫০০ দিরহাম। অর্থাৎ ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রুপা। এক দিরহামের ওজন হল ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমানে প্রতি তোলা রুপার মূল্য এক হাজার ৫০০ টাকা হলে ১০ দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় তিন হাজার নয়শত ৩৭ টাকা। আর মহরে ফাতেমির মূল্য হয় এক লক্ষ ৯৬ হাজার ৮৫০ টাকা। [শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৪/৩৯৮]

সমস্যা: আমার ছোট বোনের স্বামী বিদেশে থাকতেন। গত ছয় মাস আগে মারা যান। তা আমরা জানতে পারিনি। প্রায় ছয় মাস পরেই জানতে পারি। এখন আমার বোনের নতুন করে ইদ্দত পালন করতে হবে কি? নাকি স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত তার ইদ্দত শেষ হয়ে গেছে?

নাজীব আবদুল্লাহ

রাঙ্গুনিয়া।

সমাধান: আপনার ছোট বোনের স্বামী ইন্তেকালের সময় যদি আপনার বোনের গর্ভে কোন সন্তান থেকে থাকে তাহলে সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, অন্যথায় আপনার বোনের স্বামীর ইন্তেকালের চার মাস ১০ দিন পর আপনার বোনের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং আপনার বোনকে এখন নতুন করে ইদ্দত পালন করতে হবে না। [মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ৪/১৩৮, মাবসূতে সারাখসী: ৬/৩৬, বাদায়িউস সানায়ি: ৩/৩০১]

ওয়াকফ

সমস্যা: সদরঘাট ট্রাফিক জামে মসজিদ পরিচিত একটি জামে মসজিদ। আনুমানিক ৫০-৬০ বছর যাবৎ পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় করা হচ্ছে। প্রতি জুমায় ৫০০-৬০০ মানুষ নামাজ আদায় করে থাকে। বর্তমানে মসজিদটি যে জায়গায় অবস্থিত তা সরকারি জায়গা। মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছে এমন কোন কাগজ পত্র লিখিত নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উক্ত মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা যাবে কি না? জুমার নামাজ আদায় করলে জুমা সহীহ হবে কি না? এবং জুমা আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যাবে কি না? এটিকে শরীয়া মোতাবেক জুমা মসজিদ বলা যাবে কি না?

হাফেজ শাহ আলম

আনোয়ারা।

সমাধান: জুমা সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদ হওয়া শর্ত নয়। যেকোনো জায়গায় কমপক্ষে তিন জন মুসল্লি নিয়ে খুতবা ও জামায়াত সহকারে নামাজ আদায় করলে জুমা সহীহ হয়ে যায়।

উল্লিখিত সদরঘাট ট্রাফিক জামে মসজিদে জুমা ও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

সরকারি খাস জায়গায় শরয়ী মসজিদ হওয়ার জন্য সরকারের অনুমতি জরুরি। তবে যেহেতু দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর যাবৎ সেই মসজিদে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হচ্ছে, সরকার কোনো ধরনের বাধা প্রদান করেননি এবং তাতে সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন অফিসারও নামাজ আদায় করে আসছেন; এর দ্বারাই তা শরয়ী মসজিদ হয়ে গেছে। কাগজপত্রে লিখিত দলিলের দরকার নেই। মৌখিক অনুমতি বা মৌনসম্মতির মাধ্যমে স্থায়িভাবে জামায়াত সহকারে নামাজ চালু হয়ে যাওয়াই শরয়ী মসজিদ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

উল্লেখ্য যে, মসজিদ দীনের অন্যতম একটি নিদর্শন। তা সংরক্ষণ ও হেফাজতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া সরকার ও জনগণ সকলের কর্তব্য। [রদ্দুল মুখতার: ৪/৩৫৫-৩৫৬, ২/১৩৭, আল-বাহরুর রায়েক: ৫/২৬৮-২৬৯, আল-মুগনী: ৮/৪২৫]

সমস্যা: আমাদের একটি সামাজিক কবরস্থান আছে। সেই কবরস্থানে যে ঘাস ও গাছ উঠে তা আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি কেটে নিয়ে যায়। জানার বিষয় হল, তার জন্য সেই ঘাস ও গাছ কাটা কি জায়েজ? কবরস্থানের গাছ ও ঘাস এবং ফলের কী হুকুম?

আমীনুল হক

চট্টগ্রাম।

সমাধান: ওয়াকফিয়া কবরস্থানে যে ঘাস ও গাছ ইত্যাদি উঠে তা কারো জন্য ভোগ করা জায়েজ নয়। বরং তা কবরস্থানের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করতে হবে। আর যদি কবরস্থান কারো ব্যক্তিমালিকানা হয় তাহলে সেই সেই ঘাস ইত্যাদির মালিক হবে। যদি সরকারি খাস জায়গা হয় তাহলে তা কবরস্থানের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে।

অতএব প্রশ্নোক্ত সামাজিক কবরস্থান যদি ওয়াকফকৃত হয় বা সরকারি খাস জায়গা হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য সেই কবরস্থানের ঘাস, গাছ ইত্যাদি কাটা জায়েজ হবে না। উল্লেখ্য, সরকারি কবরস্থানের উপরের বা কবরের সাথে লাগানো জায়গার উপরের তাজা ঘাস ও গাছ না কাটাই উত্তম। বিনা প্রয়োজনে কবরস্থানের ও আশেপাশের তাজা ঘাস ও গাছ কাটা মকরুহে তানযীহী। [রদ্দুল মুখতার: ৬/৫৬২, ৩/১৮৩, ফতওয়ায়ে সামারকান্দিয়া: ২/৫৩৯, আল-মুহীতুল বুরহানী: ৭/১৪৭, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৭৬]

ক্রয়-বিক্রয়

সমস্যা: আমি একটি লাইব্রেরির মালিক। বিভিন্ন কিতাব-বই ছাপিয়ে বিক্রি করি। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম বই কিতাব বিক্রি করি। এভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়, যারা অমুক তারিখের আগে কিতাবের জন্য টাকা দেবে তাদেরকে ৭০% ডিস্কাউন্ট দেওয়া হবে। আর যারা এর পর কিনবে তাদেরকে ৫০% ডিস্কাউন্ট দেওয়া হবে। এভাবে ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হবে কি না?

মুহাম্মদ তাওফীক

শিবচর, মাদারীপুর।

সমাধান: হ্যাঁ, জায়েজ হবে। তবে ওই মানের কিতাবই ছাপাতে হবে যে মানের কিতাবের ওপর অগ্রিম টাকা নেওয়া হবে। আর কত তারিখে কিতাব দেবেন তাও নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। [আল-মুগনী: ৫/৬৬২, ৬৭৪]

সমস্যা: আমি একটি পাঞ্জাবির দোকানের মালিক। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাঞ্জাবি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য মাল এনে বিক্রি করি। একটি কোম্পানির সাথে এভাবে চুক্তি করতে চচ্ছি, যে পাঞ্জাবির মূল্য তারাই নির্ধারণ করে দেবে এবং সে অনুযায়ীই আমি বিক্রি করবো। প্রতি পাঞ্জাবির বিক্রীত মূল্যের ৫% আমাকে দেওয়া হবে। এভাবে চুক্তি করা বৈধ হবে কি না?

নাদীম

রাজশাহী।

সমাধান: হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ। তাদের পাঞ্জাবি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে দিলে বিক্রীত মূল্য হতে ওই হারে কমিশন নেওয়া জায়েজ হবে। [বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়া মুআসারা: ১/২০৮, আল-মুগনী লি-ইবনি কুদামা: ৮/৪২, শরহুল মুহাযযাব: ১৫/৩৪২]

ইজারা-ভাড়া চুক্তি

সমস্যা: আমি একজন কৃষক। আমি চাষাবাদ করার জন্য চার বিঘা জমি এ বৎসরের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কারণে এ বছর আমার পক্ষে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি উক্ত ভাড়াকৃত জমি তৃতীয় ব্যক্তির কাছে ৫০০ টাকায় ভাড়া দিতে চাচ্ছি এবং এতে মালিকের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এখন আমার জন্য এভাবে ভাড়া দেওয়া জায়েজ হবে কি না?

সমাধান: জায়গাজমি ভাড়া নিয়ে অন্যত্র বেশি মূল্যে ভাড়া দেওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াকে তাতে সংস্কারমূলক কাজ করা শর্ত। সুতরাং আপনি যদি উক্ত জমিতে কোন সংস্কারমূলক কাজ করেন তাহলে আপনার জন্য তা বেশি মূল্যে ভাড়া দেওয়া জায়েজ হবে। অন্যথায় জায়েজ হবে না। [শরহুল মাজাল্লা: ২/৬৮৬, মাজমাউল আনহুর: ৩/৫৬৩, আল-মুগনী লি-ইবনি কুদামা: ৮/৫৬, আদ-দুররুল মুহতার: ৬/৯১]

বর্গা ও বন্ধক

সমস্যা: আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা নিয়ে তার কাছে একটি জমি বন্ধক রাখে। শর্ত থাকে যে, জমির মালিক যতদিন এই টাকা ফেরত দিতে পারবে না ততদিন ঋণদাতা ওই জমি ভোগ করবে। এর বিনিময়ে কোন টাকা কর্তন হবে না। উক্ত প্রচলনটি শরীয়তে বৈধ কি না এবং এটি শরীয়ত অনুযায়ী হওয়ার জন্য কোন শর্ত আছে কি না? জানালে উপকৃত হবো।

ইবরাহীম খলীল

ঢাকা।

সমাধান: আপনার এলাকার প্রচলিত জমি বন্ধকের কারবারটি শরীয়তে নাজায়েজ। এটি মূলত সুদভিত্তিক ঋণ প্রদানেরই একটি প্রকার। অবশ্য জায়েজ পন্থায় এ ধরনের কারবার করতে চাইলে বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লিজ চুক্তি করতে হবে। যেন কারো যদি ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় আর এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া চার হাজার টাকা তবে সে পাঁচ বছরের জন্য জমিটি ভাড়া দিয়ে অগ্রিম 20 হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে নিয়ে নেবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় মূল্য থেকে কিছু কম হলেও অসুবিধা নেই। তারপর যত বছর অর্থদাতা ওই জমি ভোগ করবে তত বছরের ভাড়া ওই ২০ হাজার টাকা থেকে কর্তিত হবে। ৫ বছরের আগে জমি ফেরত দিলে আনুপাতিক হারে অবশিষ্ট টাকা ফেরত পাবে। আর যদি কেউ আগে থেকে নাজায়েজ পন্থায় বন্ধকি চুক্তি করে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে জমি থেকে উপকৃত হতে চাইলে প্রথমে চুক্তি বাতিল করে নতুনভাবে ভাড়া চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শর্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে:

  1. পূর্বের বন্ধকি চুক্তির ভিত্তিতে জমির মালিককে দেওয়া টাকা বা ঋণের সাথে নতুন ভাড়া বা লীজ চুক্তি কোনোভাবেই শর্তযুক্ত করা যাবে না।
  2. জমির ভাড়া যুক্তিযুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ এলাকায় এই মানের জমির ভাড়া সাধারণত যে পরিমাণ তার সমান বা কাছাকাছি হতে হবে। এ চুক্তি নামমাত্র মূল্যে হলে চলবে না। [কিতাবুল অসার ৩৪৮, মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ৫/৫৮, ফতওয়ায়ে শামী: ৬/৪৮২, মাজমাউল আনহু-৪/২৭৪]

বিবিধ মাসায়েল

সমস্যা: রাস্তায় চলার পথে অনেককে দেয়াল ছুঁয়ে কিংবা কবরকে ইশারা করে সালাম দিতে দেখা যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

মাহবুবুর রহমান

ঠাকুরগাঁও।

সমাধান: কবরবাসীকে সালাম দেওয়া এবং যিয়ারত করার পদ্ধতি হাদীসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সে পদ্ধতি ছাড়া কবরবাসীর সাথে অন্য কোন আচরণ বৈধ নয়। হাতের ইশারায় কিংবা কবরের দেয়াল ছুঁয়ে সালাম দেওয়া এবং কবরকে চুমু দেওয়া বিদ্আত ও নাজায়েজ। কবরবাসীকে সালাম দেওয়ার সহীহ পদ্ধতি বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রসুলে করীম (সা.) শেষ রাতে ‘বাকী’ কবরস্থানে যেতেন এবং বলতেন,

«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ».

‘হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো।’ (সহীহ মুসলিম: ৯৭৪)

অন্য হাদীসে এসেছে হযরত সোলায়মান (রহ.) তার তার পিতা বুরায়দা (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসুলে করীম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন। তারা যখন কবরস্থানে যাবে কবরবাসীকে যেন এভাবে সালাম দেয়,

«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُسْلِمِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُوْنَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».

অতএব হাদীসে বর্ণিত নিয়মেই কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। হাতের ইশারায় বা কবর ছুঁয়ে সালাম দেওয়া যাবে না। [হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ: ৬২১, আল-মাদখাল লিইবনিল হাজ: ১/২৫৫]

সমস্যা: মাহফিলের অধিবেশনের প্রারম্ভে বাদে আসর, বাদে মাগরিব ও বাদে ইশা ধাপে ধাপে কুরআন তিলাওয়াত করা হয় অথচ লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে যার যার কাজে ব্যস্ত থাকে। কেউ তিলাওয়াত শুনতে মনোযোগ দেয় না। এ বিষয়টা কুরআনে করীমের আয়াতের আদেশের সাথে কোন সংঘর্ষ হয় কিনা? এ রকম মাহফিলের শুরুতে তিলাওয়াত করা শরীয়তসম্মত কি না? একটু জানাবেন।

সমাধান: বৈধ কোন অনুষ্ঠান ও দীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েয এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। এক হাদীসে আছে, হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) বলেন,

«أَصْحَابُ النَّبِيِّ ﷺ إِذَا جَلَسُوْا كَانَ حَدِيْثُهُمْ – يَعْنِي الْفِقْهَ – إِلَّا أَنْ يَقْرَأَ رَجُلٌ سُوْرَةً أَوْ يَأْمُرَ رَجُلًا بِقِرَاءَةِ سُوْرَةٍ».

‘রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোন সূরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোন সূরা পাঠ করার জন্য।’ [মুসতাদরাকে :৩২২, আত-তাবাকাতুল কুবরা লি-ইবনি সাদ: ২/৩৭৪, আল-মাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা: ৪১]

খতীব বাগদাদী (রহ.) আল-জামে লি-আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামি কিতাবে হাদীস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদীস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হল, মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননা মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, হযরত আবু নাযরা (রাযি.) বলেন,

«كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ إِذَا اجْتَمَعُوْا تَذَاكَرُوا الْعِلْمَ وَقَرَءُوا سُوْرَةً».

‘রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তাঁরা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোন সূরা তিলাওয়াত করতেন। [আল-জামি’ লি-আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামি’: ২/৬৪]

হাফিয সামআনী (রহ.), ইবনে কাসীর (রহ.), ইমাম নববী (রহ.) ও হাফিয সাখাবী (রহ.) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তাঁরা এর সপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। [আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতিমলা: ১/৪৮, আল-বায়িসুল হাসীস: ১/১৫৩; ফতহুল মুগীস: ৩/২৫৪, তাদরীবুর রাবী: ২/৫৭৩]

আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলিল। সুতরাং অনুষ্ঠান ও দীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত।

প্রকাশ থাকে যে, কোন বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে এবং নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

(ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।

(খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কিরাআত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।

(গ) যদিও কোথাও কুরআনের তিলাওয়াত হলে তা শ্রবণ করা সকলের ওপর জরুরি নয়। কিছু লোক শুনলেও যথেষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু শ্রোতাগণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত না থাকলে তখন তিলাওয়াত না করাই উচিত।

(ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।

(ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকাণ্ড বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন করীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

সমস্যা:

  1. দেশের প্রচলিত রেওয়াজ মোতাবেক পানের সাথে সাদা পাতা এবং জর্দা ইত্যাদি খাওয়া শরীয়ত মোতাবেক জায়েজ হবে কি না?
  2. কিছু ওলামায়ে কেরামের মন্তব্য, পানের সাথে সাদা পাতা এবং জর্দা ইত্যাদি খাওয়া মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। মন্তব্যটি শরীয়ত মোতাবেক সঠিক কি না?
  3. সাদা পাতা জর্দা এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য আমদানি ও রপ্তানি করা এবং উক্ত ব্যবসার লভ্যাংশ শরীয়ত মোতাবেক হালাল হবে কি না?

অতএব আশা রাখি যে, উপর্যুক্ত প্রশ্নাবলি কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত ফায়সালা প্রদান করলে মহোদয়ের নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

সমাধান:

  1. পানের সাথে জর্দা বা তামাক খাওয়া ডাক্তারি মতে শারীরিক ক্ষতির কারণ। তাই যথা সম্ভব এ থেকে বিরত থাকা উচিত। আর কারো ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে তার জন্য তা খাওয়া নাজায়েজ হবে।

উল্লেখ্য যে, যারা পান-জর্দা খায় তাদের জন্য নামাজ আদায়ের পূর্বে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া কর্তব্য। যেন পানের কণাগুলো বের হয়ে যায় এবং গন্ধও না থাকে।

আরও উল্লেখ্য যে, মিসওয়াক ইসলামের দায়েমি একটি সুন্নত। এ সুন্নতটির প্রতি যত্নবান হয়ে দাঁত এবং মুখ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।

  1. পান বা জর্দা কোনটাই মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। যারা এগুলোকে মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত বলেছে, তাদের কথা ঠিক নয়।
  2. সাদা পাতা, জর্দা ও তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি যেহেতু মূলত হালাল তাই সেসব জিনিস আমদানি ও রপ্তানি করা এবং বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত লভ্যাংশ হারাম নয়। [রদ্দুল মুহতার: ৬/৪৫৯ আহসানুল ফতওয়া: ৮/১১০, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৬/১৪]

পবিত্রতা-তাহারাত

সমস্যা: মুফতি সাহেবের নিকট একটি মাসআলা জানতে চাই, আমরা অনেক সময় অযু করে সফরের উদ্দেশ্যে গাড়িতে আরোহন করি। যেন নামাজের সময় হলে সাথে সাথে দেরি না করে গাড়ি থেকে নেমে নামাজ আদায় করতে পারি। অনেক সময় গাড়িতে ঘুম চলে আসে। এ ক্ষেত্রে জানার বিষয় হলো, গাড়ির সিটে বসে ঘুমালে অযু ভেঙে যায় কি না? এবং জানতে চাই, হেলান দিয়ে ঘুমালেই কি অযু ভেঙে যায়?

আবদুল মুবিন

ফতুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ

সমাধান: প্রকাশ থাকে যে, চেয়ার কোচের স্লিপিং জাতীয় সিট একেবারে ফেলে দিয়ে ঘুমালে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা এক্ষেত্রে নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে না। হেলান দিয়ে ঘুমালে সর্বাবস্থায় অযু ভেঙে যায় বিষয়টি এমন নয়। কেউ যদি এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তার কোমরের নিম্নাংশ জমিন থেকে পৃথক হয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে অযু ভেঙে যাবে। আর যদি আসন গেড়ে বা জমিনের সাথে ভালোভাবে লেগে বসে ঘুমায়, তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও অযু নষ্ট হবে না। সুতরাং বাসের সিটে যদি মোটামুটি সোজা হয়ে বসা হয় এবং নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে, তাহলে এ অবস্থায় ঘুমালে অযু নষ্ট হবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ১/১৫৬, আল-আসল: ১/৪৪, রদ্দুল মুহতার: ১/ ২৯৬, বাহরুর রায়েক: ১/৭২-৭৩, বাদায়েউস সানায়ে: ১/১২৬

সালাত-নামাজ

সমস্যা: অনেক ব্যক্তি টিশার্ট প্যান্ট পরে মসজিদে আসে। এক্ষেত্রে অনেকের পেছনের সতরের অংশ খুলে যায়। বিশেষ করে রুকুতে খুলে যায়। প্রশ্ন হল উক্ত ব্যক্তির নামাজের কী হুকুম?

মুহাম্মদ শোয়াইব

ফেনী

সমাধান: পুরুষের জন্য নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটুকু সতর। যা ঢেকে রাখা ফরজ। নামাজ অবস্থায় সতরের কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই নাভি বরাবর পেছন দিক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত জায়গার এক চতুর্থাংশ এ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। আর এমন পোশাকে নামাজ পড়লে পেছনের মুসল্লিদের খুশু-খুযুও নষ্ট হয়। এ ছাড়া প্রশ্নোক্ত পোশাক মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব পোশাক নয়। তাই এ ধরনের পোশাক-পরিধান থেকে বিরত থাকাই উচিত।

উল্লেখ্য যে, সকল মুসলমানের জন্য শরীয়ত সম্মত পোশাক-পরিধান করা আবশ্যক এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের যে নীতিমালা আছে তা মেনে চলা জরুরি। পোশাক-পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও বিজাতীঅনুকরণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে হাদীস শরীফে তাগিদ এসেছে। সূরা আরাফ: ৩১, সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১, আদ-দুররুল মুখতার: ২/৪৬৭, কিতাবুল আসল: ১/১৭৩, ফাতহুল কদীর: ১/২৬৭

সমস্যা: জনাব মুফতি সাহেব, আমি গত কয়েক দিন আগে মাগরিবের এক রাকাআত জামায়াতের সাথে আদায় করতে পেরেছি। ইমাম সালাম ফেরানের পর এক রাকাআত আদায় করে বৈঠক করিনি। বরং দুই রাকাআত আদায় করেই বৈঠক করি এবং সাহু সিজদা করি। এখন জানার বিষয় হলো, এ অবস্থায় আমার সালাত আদায় হয়ে গেছে কিনা? অনুগ্রহপূর্বক সঠিক সমাধান প্রদান করে বাধিত করবেন।

জামিল আহমদ

বরকল, অনোয়ারা

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদিও ইমামের সালাম ফেরানোর পর এক রাকাআত পড়ে বসা এবং তাশাহহুদ পড়াই নিয়ম ছিল। কিন্তু এক রাকাআত পড়ে না বসার কারণে আপনার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি এবং সালাত আদায় হয়ে গেছে। মাবসূতে সারাখসী: ১/ ৩৪৬, হালবী কাবীর: ২/ ২৯৯, আদ-দুররুল মুখতার: ১/৫৯৭, আল-বাহরুর রায়েক: ১/৬৬৪

যাকাত

সমস্যা: আমার কাছে এ পরিমাণ টাকা আছে, যার ওপর যাকাত ফরজ হয়। অপর দিকে যাকাত গ্রহণের যোগ্য এক ব্যক্তির কাছে অনেক টাকা ঋণ পাই। আমার জানার বিষয় হল, আমার কাছে বিদ্যমান টাকার ওপর যে পরিমাণ যাকাত ফরজ হয়েছে তা যদি আমি যাকাত আদায়ের নিয়তে ওই ঋণের টাকা হতে মাফ করে দেই তবে আমার যাকাত আদায় হবে কি? অথবা ওই ঋণের টাকার ওপর যে পরিমাণ যাকাত ফরজ হয়েছে তা যদি আমি ওই ঋণের টাকা হতে যাকাতের নিয়তে মাফ করে দেই তবে আমার যাকাত আদায় হবে কি?

আবদুল্লাহ নাসীফ

সাতকানিয়া

সমাধান: ঋণ মাফ করে দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হয় না। তাই ঋণের পুরোটা বা আংশিক যাকাতের নিয়তে ছেড়ে দিলে যাকাত আদায় হবে না। তবে ঋণ গ্রহীতাকে যাকাতের টাকা নগদ দান করার পর তার থেকে আপনার পাওনা উসূল করে নিতে পারেন। এতে আপনার যাকাতও আদায় হবে এবং তার ঋণমুক্তির ব্যাপারে সহযোগিতাও হবে। বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৮৬; আলবাহরুর রায়েক: ২/২১১; ফতওয়ায়ে খানিয়া: ১/২৬৩; হাশিয়া শালবী: ১/২৫৮; খুলাসাতুল ফতওয়া: ১/২৪৪; রদ্দুল মুহতার: ৩/১৯০

সওম-ইতিকাফ

সমস্যা: আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। শীত-গ্রীষ্ম সারা বছর আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। রাতে এবং দিনে মোট চার-পাঁচবার ইনহেলার নিতে হয়। তাই জানতে চাই, ইনহেলার নেওয়ার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় কি না? যদি রোজা ভেঙে যায় তাহলে আমার কী করণীয়? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

আহমাদুল্লাহ

কোম্পানীগঞ্জ

সমাধান: রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই সাহরীর শেষ সময় এবং ইফতারের প্রথম সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয় তবে রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হয় তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে করণীয় হল:

  1. উক্ত ওজরে দিনের বেলা ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবে।
  2. পরবর্তীতে রোগ ভালো হলে এর কাযা করে নেবে।
  3. আর ওজর যদি আজীবন থাকে তাহলে ফিদয়া আদায় করবে। সূরা বাকারা: ১৮৪; মাজমাউল আনহুর: ১/৩৬৬; রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৫; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী: ১০, ২/৩১-৬৫

বিজ্ঞপ্তি

এত দ্বারা মাসিক আত-তাওহীদের সম্মানিত গ্রাহক, অ্যাজেন্ট ও শুভানুধ্যায়ীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,

  1. মাসিক আত-তাওহীদের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি’২৩ সংখ্যা থেকে ম্যাগাজিনের সাইজ ও কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে।
  2. অন্যদিকে দুঃখজনকভাবে কাগজ-কালি, প্রিন্টিংসহ প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট সকল খাতে অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

অতএব উপর্যুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে মাসিক আত-তাওহীদের মূল্য নিম্নোক্তভাবে নির্ধারিত হল:

  • নির্ধারিত মূল্য: ২০ টাকা
  • বার্ষিক গ্রাহক (রেজি. ডাক) চাঁদা: ৩০০ টাকা
  • অ্যাজেন্ট (নূন্যতম ১০টি সংখ্যা): ১৫০ টাকা

নতুন মূল্য আগামী এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যা থেকে কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে যারা এক বছরের জন্য টাকা পরিশোধ করে গ্রাহক হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রজোয্য হবে না। তবে নবায়ন ও নতুন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ