মুফতিয়ে আযম হযরত রফী উসমানী (রহ.)
মাওলানা যুবাইর হানীফ
যার হাত ধরে বর্তমান দারুল উলুম করাচি এতটুকু পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। যিনি ৪১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল দারুল উলুমকে বাস্তব মডেল জামিয়ার রূপ দিয়েছেন। সারাটা জীবন দিয়ে জামিয়া বাগানকে তিলে তিলে সাজিয়েছেন। আজ সুবিশাল এ বাগান ঠিকই আছে কিন্তু মালি নেই। পাকিস্তানের জন্ম থেকে নিয়ে শুরু করে এ পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস যার জানা ছিল। যার সামনে পাকিস্তানের উত্থান পতনের সব অবস্থা স্পষ্ট ছিল। ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ওলামায়ে কেরামের সে ভূমিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গেছেন, আল-হামদু লিল্লাহ। যা پاكستان بننے مىں علمائے كرام كا كردار নামে দুই খণ্ডে মার্কেটে পাওয়া যায়। শুধু পাকিস্তান নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বের ওলামায়ে কেরামের মুরব্বি, কর্ণধার ছিলেন যিনি, তিনিই আমাদের মুফতি আযম হযরত রফি উসমানী (রহ.)। গত ১৮ নভেম্বর ২০২২ মোতাবেক ২৩ রবিউস সানী ১৪৪৪ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান মুসলিম উম্মাহর এই অন্যতম কিংবদন্তি অভিভাবক। তাঁর ইন্তেকালে মুসলিম দুনিয়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
জন্ম ও বংশ
মুফতি আযম হযরত রফী উসমানী (রহ.) সর্ম্পূণ এক দীনদার ও ইলমী পরিবেশে ২১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ/১৩৫৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ এলাকায়। পিতা ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়া বিভাগের প্রধান মুফতি এবং পরবর্তী সময়ের হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মুফতি আযম হযরত শফী উসমানী (রহ.)। তাঁর দাদা হযরত ইয়াসিন (রহ.) ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের ফার্সির দীর্ঘ দিনের উস্তাদ। তিনি হযরত থানভী (রহ.) এর সাথী ছিলেন। দেওবন্দের বয়স আর তাঁর দাদার বয়স বরাবর ছিল। বংশ পরিচিতি সর্ম্পকে হযরত মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলনে, আমি আমার খান্দানের মুরব্বিদের কাছ থেকে বংশ পরম্পরায় শুনে এসেছি যে, আমাদের খান্দান হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাযি.)-এর আওলাদের অন্তর্ভুক্ত। (মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ., মেরে ওয়ালিদে মাজিদ) তাই হযরত উসমান (রাযি.)-এর প্রতি সম্বন্ধ করে তাঁদের নামের শেষে উসমানী শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
জন্মের পর রফী নামটি নির্বাচন করেন হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী (রহ.)। মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) পুত্রের জন্মের সুসংবাদ জানিয়ে থানভী (রহ.)-এর নিকট পত্র পাঠালে তিনি নাম রেখে দেন, ‘রফী’। ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন অষ্টম নম্বর। তিন বোন, পাঁচ ভাই। ভাইদের মধ্যে ছিলেন চার নাম্বার। মুফতিয়ে আযম হযরত মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.)-এর পাঁচ পুত্রসন্তান ছিল। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
- হযরত যকী কায়ফী (রহ.)। তিনি সবার বড় ছিলেন। যৌবনকালে ইন্তেকাল করেছেন। ‘এদারায়ে ইসলামিয়াত’ নামে লাহোর ও করাচিতে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করেন এবং তার মাধ্যমে বহু কিতাব প্রকাশ করেছেন। তিনি অনেক উচ্চাঙ্গের কবি ছিলেন। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘কাইফিয়ত’ নামে ছেপেছে। তিনি ছোট থেকেই কবিতা আবৃত্ত করতেন। দেওবন্দে থাকাকালে তিনি বড় বড় কবিদের সাথে চলতেন। ১৩৯৫ হিজরি মুহাররম মাসে লাহোরে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান। তাঁর বড় সন্তান ছিলেন দারুল উলুম করাচির সাবেক স্বনামধন্য মুফতি ও শায়খে সানী হযরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ আশরাফ উসমানী (রহ.)। তিনি গত ২৬ রজব ১৪৪৩/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ইন্তেকাল করেন।
- দ্বিতীয়জন হযরত রযী উসমানী (রহ.)। তিনিও করাচির উর্দু বাজারে ‘দারুল ইশাআত’ নামে একটি স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করে বহু কিতাব প্রকাশ করেছেন। তিনি মুহাররম ১৪১১ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
- তৃতীয়জন হযরত অলী রাযী হাফিযাহুল্লাহু। নুকতাবিহীন সিরাত গ্রন্থ হাদিয়ে আলমের সম্মানিত লেখক তিনি। নুকতাবিহীন সিরাত গ্রন্থ লিখে পুরো পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন যিনি। তিনি ইংরেজি ভাষায় খুবই পারদর্শী। মাসিক আল-বালাগের ইংরেজি পাতার সম্পাদক তিনি। তার বয়স এখন নব্বইয়ের উপরে। তিনি এখনও জীবিত আছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্থতার সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। আমীন।
- চতুর্থ আমাদের আজকের আলোচনার মধ্যমণি হযরত মুফতিয়ে আযম মুফতি রফী উসমানী (রহ.)। আমাদের আজকের আলোচনার মধ্যমণি তিনি।
- পঞ্চম হলেন শায়খুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহু। হযরত সম্পর্কে বলা ও লেখার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। তিনি সবার ছোট হলেও পরিচিতি ও প্রসিদ্ধির দিক দিয়ে সবার উপরে।
হযরত রফী উসমানী (রহ.) মুফতি তকী উসমানী (হাফি.)-এর সাত বছরের বড় ছিলেন। কিন্তু শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এমনভাবে তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন যে, শুধু ঘরে পারিবারিক পরিবেশে নয় বরং দীনী মহলে ও জাতীয় পর্যায়েও তাঁদের নাম একই সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে উচ্চারিত হয়। হযরত শায়খুল ইসলাম তকী উসমানী (হাফি.) দীর্ঘ ৭৫ বছর একত্রে একসাথে ছিলেন যার সাথে, বর্তমান বিশ্বে উপমা দেওয়ার মতো বড় ভাই ছিলেন যিনি, পিতার অনুপস্থিতিতে সুদীর্ঘ ৪৮ বছর যাবৎ বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছিলেন যিনি। একত্রে খেদমত করেছেন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন যার সাথে থেকে, জীবনে হাজারো পরামর্শ নিয়েছেন যার কাছ থেকে, সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন যার পরামর্শে আজ সে বড় ভাইকে আল্লাহর সোপর্দ করছেন। চাইলেও কখনও আর পরামর্শ নিতে পারবেন না। একটু সামান্য সময়ের জন্যও কথা বলতে চাইলে সম্ভব না। দারুল উলুম করাচির মত বিশাল ইদারার সামনের জিম্মাদারী যার ওপর ন্যস্ত করে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ভাই হিসেবে কেমন ভারাক্রান্ত হতে পারেন তিনি, তা কল্পনা করলেই শিউরে উঠি। হযরত তকী উসমানী (হাফি.)-এর ওপর এত হাজার ইহসান রয়েছে তাঁর বড় ভাই মুফতি আযম হযরত রফি উসমানী (রহ.)-এর, যা বলে শেষ করার মতো নয়!
উপমহাদেশে হযরত ইয়াসিন (রহ.) এর পরিবারের বিশেষ করে তিনজন মহামনীষী হযরত মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) ও তাঁর সর্বকনিষ্ঠ দুই গর্বিত সন্তান হযরত রফি উসমানী (রহ.) ও হযরত তকী উসমানী (হাফি.)-এর অবদান অপরিসীম। তাঁদের খেদমত ও অবদান বলে শেষ করার মত নয়। আজকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে, ওলামায়ে কেরাম এখনও ইসলামের পক্ষে দুই এক শব্দ বলতে ও লিখতে পারছেন, হযরত মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.)-এর বদৌলতে। তাঁর মেহনতের ফল আমরা এখনো ভোগ করছি। এই তিনজন মনীষী আকাবিরে দেওবন্দকে নিয়ে, তরজুমানে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত হয়ে যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। এই তিনজন মনীষীর গ্রন্থাবলি প্রায় তিনশতের কাছাকাছি। এমন কোন ফন নেই যে ফনে তাঁদের কারো না কারোর খেদমত নেই। আজ আমরা তাঁদের দুজনকে হারিয়ে ফেললাম। পিতার ইন্তেকাল ১৩৯৬ হি., চতুর্থ সন্তান মুফতি রফি উসমানী (রহ.)-এর ইন্তেকাল ১৪৪৪ হি.। পিতার ইন্তেকালের পর পুরো দারুল উলুম করাচিকে তিলে তিলে সাজিয়েছেন। দীর্ঘ ৪৮ বছর পরিচালনা করেছেন। পিতার রেখে যাওয়া ইলমি আমানতকে পুরো বিশ্বের মাদারিসে কাওমিয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভার্সিটির রূপ দিয়ে গেছেন। আজ তিনি নিজ বাগান ছেড়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেছেন। উম্মত মহান অভিভাবককে হারিয়েছে। হারিয়েছে তার যোগ্য মুরব্বিকে। হযরত শায়খুল ইসলাম তকী উসমানী (হাফি.) শায়খুল ইসলাম হওয়ার পেছনে হযরত রফি উসমানী (রহ.)-এর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি সুযোগ করে দিয়েছেন নিজের ছোট ভাইকে এ পর্যন্ত আসতে।
শিক্ষাজীবন
সুযোগ্য পতিা-মাতার কাছেই পড়ালেখার হাতেখড়ি তাঁর। তারপর দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতায় নিজ পিতার নিকট কায়দা বাগদাদী দিয়ে পড়ার সূচনা করেন। দেওবন্দেই কুরআনুল করীমের হিফয শুরু করেন। কিন্তু সেখানে সম্পন্ন করার সুযোগ হয়নি। ১৫ পারা পর্যন্ত দেওবন্দে হিফজ করেন। ১৯৪৮ খ্রি. পিতার অগ্রণী ভূমিকায় পাকিস্তান গঠিত হলে স্বপরিবারে পাকিস্তান হিজরত করেন। পাকিস্তান এসে করাচির আরামবাগ বাবুল ইসলাম মসজিদে কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। শেষ সবক গ্রহণ করেন ফিলিস্তিনের মুফতি শায়খ আমীন আল-হোসাইনী (রহ.)-এর কাছ থেকে। ১৯৫১ খ্রি. দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হন। ১৯৬০ খ্রি. দরসে নেযামির সর্বোচ্চ জামায়াত দাওরায়ে হাদীস কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। তারপর ১৯৬০ খ্রি. দারুল উলুম করাচিতেই উচ্চতর ফকীহ ও ফতওয়া বিভাগে ভর্তি হন। ১৩৭৮ হিজরিতে পাঞ্জাব ইউনির্ভাসিটি থেকে ফাযিল বা ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষকবৃন্দ
তিনি নিজ স্বকালের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের শিষ্যত্ব ও সংশ্রব লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর পিতা, মুফতি আযম মুহাম্মদ শফী (রহ.), মুফতি রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী (রহ.), আল্লামা আকবর আলী সাহারানপুরী (রহ.), আল্লামা সাহবান মাহমুদ (রহ.), মাওলানা সালীমুল্লাহ খান (রহ.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। হযরত রশীদ আহমদ লুধয়ানভী (রহ.)-এর নিকট সহীহ বুখারী, হযরত আকবর আলী সাহারানপুরী (রহ.)-এর নিকট সহীহ মুসলিম, হযরত সাহাবান মাহমুদ (রহ.)-এর নিকট মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ ও সুনানে নাসায়ী, হযরত রিয়ায়েতুল্লাহ (রহ.)-এর নিকট সুনানে আবু দাউদ এবং হযরত সালিমুল্লাহ খান (রহ.)-এর নিকট সুনানে তিরিমিযী অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও যাঁদের কাছ থেকে হাদীসের ইজাযত লাভে ধন্য হয়েছেন: শায়খ হাসান আলমাশশাত (রহ., মক্কা মুকাররামা), আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.), শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলবী (রহ.), কারী তাইয়িব (রহ.), আল্লামা যফর আহমদ উসমানী থানভী (রহ.)।
কর্মজীবন
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় দারুল উলুম করাচিতেই। ১৩৮০ থেকে ১৩৯০ হি. পর্যন্ত দারুল উলুমে দরসে নিজামীর সকল কিতাবের পাঠদান করেন। ১৩৯১ হি. থেকে হাদীস ও ফতওয়া বিভাগের বিভিন্ন কিতাবের অধ্যাপনা করেন। সহীহ মুসলিমের দরস প্রদান করেন। ১৪০৬ হি./১৯৮৬ খ্রি. সালে ডা. আবদুল হাই আরফেী (রহ.)-এর ইন্তেকাল হলে তাঁর কাঁধে দারুল উলুমের ইহতিমামের দায়িত্ব অর্পিত হয়। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ দায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দনে। তিনি নিজেই একটা বোর্ড ছিলেন, বিশাল একটা বোর্ডের কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতেন। তিনি একাধারে: পাকিস্তানের মুফতি আযম, উলামা কাউন্সিল পাকিস্তানের রুকন, ইসলামি নযরিয়াতি কাউন্সিল পাকিস্তানের রুকন, সিন্ধু প্রদেশের যাকাত পাকিস্তানের রুকন, শরীয়া আদালত ব্রাঞ্চ ও উচ্চ আদালত পাকিস্তানের উপদেষ্টা, ২০১৭ থেকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের নায়েবে সদর বা ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
চলাফেরা ও বিশেষ গুণাবলি
এত বড় ব্যক্তিত্ব হওয়ার পরও তিনি একদম সাদাসিধে চলতেন। কোন তাকাল্লুফ করতেন না চলাফেরায়। ঈমান তাজা হত যার জীবন দেখলে। তাঁর বিচক্ষণতা ও গভীরতার প্রশংসা সকলের মুখে মুখে ছিল। তার উজ্জ্বল প্রমাণ হল, দারুল উলুম করাচির বর্তমান অবস্থা।
ছাত্রদের প্রতি তাঁর মহাব্বত
ছাত্রদের প্রতি ছিলেন খুবই দরদি। মুশফিক মুরব্বির মতো ব্যবহার করতেন সবসময়। ছাত্ররা হযরতের জন্য পাগলপারা ছিল। হযরতের ইন্তেকালের পর এক ছাত্র লিখেন, আমাকে যদি হুযুরের জুতা দিয়ে পাঞ্জাবি সেলাই করে গায়ে দিতে দেওয়া হয় তবুও তাঁর ঋণ শোধ হবে না।
দরদী মালী মুফতি আযম মুফতি রফী উসমানী (রহ.)-এর এমন বিরল গুণের প্রমাণ মেলে গত কয়েক বছর পূর্বে দারুল উলুম করাচির তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বয়ানে। হযরত বলেন, ‘আমার প্রিয় তালিবুল ইলমগণ! আমার বয়স এ বছর আশি অতিক্রম করছে। আমার স্ত্রী বলেন, আমি যেন আমার বয়সের কথা কাউকে না বলি, যাতে কারো বদ নজর না লাগে। আমি আমার এই বয়সে সবচেয়ে বেশি যে দোয়া করেছি তা হল, হে আল্লাহ! তালিবুল ইলমদের প্রতি আমার ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন। তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসা রয়েছে এবং অফুরান ভালোবাসা রয়েছে। আমাদের সম্মানিত বাবা আমাদেরকে এমনটা শিখিয়েছেন। এবং আমরা তাঁকে এর ওপর আমল করতেও দেখেছি। আমার সম্মানিত বাবা সর্বদা এই দোয়া বেশি বেশি করতেন,
اللَّهُمَّ أَحْيِنِيْ مِسْكِيْنَا، وَأَمِتْنِيْ مِسْكِيْنَا، وَاحْشُرْنِيْ فِيْ زُمْرَةِ الْـمَسَاكِيْنِ.
এবং বলতেন, মিসকিন দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হল তালিবুল ইলমগণ। তলাবাদের প্রতি আমাদের সম্মানিত বাবার এতোই ভালোবাসা ছিল যে, মৃত্যুর সময়ও এই অসিয়ত করে গেছেন যে, আমাকে গোসল দিবে তলাবারা। কাফন পরাবে তলাবারা। আমার কবর প্রস্তুত করবে তলাবারা এবং আমাকে কবরেও রাখবে তলাবারা। আব্বার ইন্তেকালের পর যখন তালিবুল ইলমরা কবর প্রস্তুত করল তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলল, এরকম সুন্দর কবর আমরা কখনো দেখিনি। আমার একটিমাত্র সন্তান হল যুবাইর আশরাফ। তোমাদের কল্পনায়ও আসবে না যুবাইর আমার কত প্রিয়। একবার সে সৌদি আরবে আমার অত্যন্ত কাছের এক প্রিয় মানুষের কাছে গিয়েছিল। তো সে যাওয়ার আগে ও পরে আমি প্রতিদিন খুবই গুরুত্বের সাথে আমার সেই মহাব্বতের মানুষকে জানিয়ে দিতাম যে, দেখুন! যুবাইরের প্রতি খুব খেয়াল রাখবেন। আমার এমন তাগিদ দেখে এক পর্যায়ে ওই প্রিয় ভাই কিছুটা বিরক্তবোধ করে বলল, আপনি আমার প্রতি ‘বদগুমানি’ করছেন কেন? অথচ আমি তো বদগুমানি করতাম না, শুধু সন্তানের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করতাম। আমি আমার স্নেহ-মমতা গোপন রাখতে পারতাম না। এখন তোমরা যারা এই মাদরাসায় (দারুল উলুম করাচি) এসেছো, তাঁরা প্রত্যেকেই কারো না কারো যুবাইর। যারা তোমাদেরকে আমার হাতে সোপর্দ করেছেন। অতএব আমি তোমাদেরকে সত্য করে বলছি যে, আমি তোমাদের প্রতি তেমন খেয়াল রাখবো যেমন আমি আমার যুবাইরের প্রতি রাখি। এবং তোমাদের প্রতি তেমন ভালোবাসা রাখবো যেমনটি যুবাইরের প্রতি রাখি। আর হে আল্লাহ! তালাবাদের প্রতি আমার ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন।’ এমনি দরদী মালি যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলে একজন মেলা খুবই কঠিন।
সফল ও বিরল মুহতামিম
তিনি খুবই বিচক্ষণ যেমন তেমনি তিনি খুবই আমানদদার। সফল মুহতামিম। তাঁর মত সফল মুহতামিম বর্তমানে পাওয়া যাওয়া খুবই দুর্লভ। ছাত্র-উস্তাদ সকলের খুব খেলাল করতেন। কখন কার কী জরুরত তা প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতেন। আমানতদারিতে তাঁর মেসাল পাওয়া দুষ্কর। এ ব্যাপারে হযরতের নাতি ‘মুআয আশরাফ’ লিখেন, ‘আমার নানা মুহতারাম মুফতি আযম মুফতি মুহাম্মদ রফী উসমানী (রহ.) একবার আমার সাথে কোন একটা বিষয়ে কথা বলার বলার সময় আমাকে বলেছিলেন, ‘যখন আমি বাসা থেকে দফতরে যাই তখন কোন কোন সময় আমার পকেটে কিছু টাকা এমনও থাকতো যে টাকার সম্পর্ক দারুল উলুম করাচির সাথে। এমনিভাবে কোন কোন সময় বাসায় কিছু লোক এসে টাকা দিয়ে যেতো। এমন টাকার ওপর প্রথমে তো আমি লিখে রাখি, কোন টাকা কীসের জন্য এবং সেটা কোন খাতের। তারপরও আমি বাসা থেকে মাদরাসার দফতরে যাওয়ার সময় আমার অসিয়তনামা পকেটে রাখি। যে অসিয়তনামার মধ্যে ওইসব টাকার ব্যাপারে বিস্তারিত লেখা থাকতো। যেগুলো বাসায় আছে অথবা আমার পকেটে আছে এবং যেগুলোর সম্পর্ক দারুল উলুম করাচির সাথে সবগুলোর ব্যাপারে লেখে রাখতাম। যাতে করে যদি বাসা থেকে দফতরে যাওয়ার সময় আমার ইন্তেকাল হয়ে যায়, তাহলে কেউ যেন এগুলোকে আমার ব্যক্তিগত টাকা মনে করে আমার সম্পদের মধ্যে শামিল না করে।’ উল্লেখ্য, হযরত (রহ.) এর বাসা থেকে দফতরে পায়ে হেঁটে যাওয়ার দূরত্ব হল মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটের! এরাই হলেন আমাদের আকাবির। এই সংক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্যে আমাদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে।
হযরতের খাস ছাত্র বাংলাদেশের হযরত মাওলানা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন (হাফি.) বলেন, ‘একবার দারুল উলুম করাচিতে ১০ হাজার রুপির একটি বান্ডিল সাদাকাহ আসে। কিন্তু কোন খাতে এটি ব্যবহার হবে তার উল্লেখ ছিল না। মাদরাসার পরিচালক মুফতি রফী উসমানী (রহ.) সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলকে ডেকে বলেন, বান্ডিলটি এভাবেই রেখে দাও। যদি মালিক পাওয়া যায় তাহলে খাত জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে। আর যদি না পাওয়া যায় তাহলে যে ঠিকানা থেকে এসেছে সেখানে ফেরত পাঠাতে হবে। কিছুদিন পর সাদাকার দাতা মাদরাসায় এলেন। হুযুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ১০ হাজার রুপির একটি বান্ডিল পেয়েছিলেন কিনা? হুযুর পাওয়ার কথা স্বীকার করে দায়িত্বশীলকে ডেকে বলেন, দেখেন তো ঠিকানায় কী লেখা আছে? দেখা গেল যে ঠিকানা লেখা আছে সেটিই ওই ভদ্রলোকের ঠিকানা। লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা খরচ করেননি কেন? হুযুর জবাবে বললেন, এটা কোন খাতে খরচ হবে উল্লেখ নেই, তাই রেখে দিয়েছি। লোকটি পকেট থেকে ৯০ হাজার রুপির আরেকটি বান্ডিল বের করে বললেন, এটাও রাখুন। আপনার আব্বা (মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ.) থাকতে আমি প্রতি মাসে এক লক্ষ রুপি করে সাদাকাহ পাঠাতাম। তাঁর ইন্তেকালের পর আমি পরীক্ষা করে দেখলাম যে আপনিও আপনার আব্বার নীতির ওপর অটল আছেন কিনা? আল-হামদু লিল্লাহ, আমার পরীক্ষা করা হয়ে গেছে। আপনি আপনার আব্বার নীতি পুরোপুরি ধরে রেখেছেন। এখন থেকে প্রতি মাসে এক লক্ষ রুপি করে মাদরাসার জন্য আমি আগের মতো সাদাকাহ করব।’
হরযত মুফতি আযম (রহ.) বলেন, ‘আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, যখনই আমি দারুল উলুম করাচির উস্তদদের বেতন বৃদ্ধি করেছি কিংবা তাঁদের কোন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি, তখনই আল্লাহ তাআলা মাদরাসার জন্য এরচেয়ে ভালো কিছু দান করেছেন।’
ফিকহে গভীরতা
শায়খুল ইসলাম মুফতি তকী উসমানী (হাফি.) বর্তমানে যে পর্যায়ে এসেছেন সে পর্যায়ে আসতে হযরত মুফতি রফী উসমানীর অবদান অনস্বীকার্য। মুফতি তকী উসমানী (হাফি.) কদমে কদমে বড় ভাইয়ের পরামর্শে চলতেন, প্রিয় ভাইকে উস্তাদের মতো সম্মান করতেন। হযরত শায়খুল ইসলাম মুফতি তকী উসমানীর প্রতিভা ও যোগ্যতার আলোচনা যতোটা হয় হযরত মুফতি রফী উসমানী (রহ.)-এর অসাধারণ যোগ্যতা ও প্রতিভার আলোচনা আমরা ততোটা করিনা। এ ব্যাপারে দারুল উলুম করাচির দীর্ঘদিনের ছাত্র, শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের নায়েবে মুফতি হযরত মাওলানা মুফতি বেলাল আহমদ (হাফি.) প্রায়শই হযরত মুফতি রফী উসমানী (রহ.)-এর গুণগান বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, দারুল উলুম করাচির দারুল ইফতা থেকে যেসকল ফতওয়া বের হতো এর প্রায় সবগুলোই আপন ভাতিজা হযরত মুফতি মাহমুদ আশরাফ উসমানী (রহ.)-এর স্বাক্ষরের মাধ্যমে বের হতো। হযরত মাহমুদ আশরাফ উসমানী (রহ.)-এর কাছে কোনো মাসআলা বেশি জটিল মনে হলে সেটির সমাধানের জন্য হযরত মুফতি তকী উসমানী (হাফি.)-এর দারস্থ হতেন। আর হযরত মুফতি তকী উসমানীর কাছেও মাসআলাটি জটিল মনে হলে সমাধানের জন্য যার দারস্থ হতেন এবং যার কাছে মুরাজাআত করতেন তিনি হলেন আল্লামা মুফতি রফী উসমানী (রহ.)।’ মুফতি তকী উসমানী (হাফি.)-এর মতো ব্যক্তিত্ব যার কাছে জটিল মাসআলা সমাধানের জন্য মুরাজাআত করেন তিনি কোন পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব ও ফকীহ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। হযরত মুফতি রফী উসমানীর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংকলিত ফতওয়া সমগ্র ফতওয়ায়ে দারুল উলুম করাচি নামে ছেপেছে। এমনিভাবে আল-মাক্বালাতুল ফিকহিয়া নামে আরবি ভাষায় হযরতের একটি ফিকহী গবেষণালব্ধ গ্রন্থ রয়েছে যা ফিকহের তালিবুল ইলমদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। দারুল উলূম করাচিতে দীর্ঘ কয়েক যুগ সহীহ মুসলিমের দরস দেওয়ার ফলে সহীহ মুসলিমের সাথে তাঁর আলাদা যাওক রয়েছে। কয়েক বছর আগে তাঁর সহীহ মুসলিমের দরস সমগ্র দরসে সহীহ মুসলিম নামে দুই খণ্ডে ছেপেছে।
আধ্যাত্মিক রাহবর
তিনি হযরত থানভী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা ডা. আবদুল হাই আরিফী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা ও মুজায। হযরত মুফতি তকী উসমানী (হাফি.)ও হযরত আরিফীর বিশিষ্ট খলীফা ও মুজায (বায়আত করানোর অনুমতিপ্রাপ্ত)। হযরত থানভীর মেযাজ ও তবিয়তের সাথে হযরত মুফতি রফী উসমানীর মেজাজ ও তবিয়তের অনেকাংশে মিল রয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম তাঁর মোটেই পছন্দ ছিল না।
গ্রন্থাবলি
দারুল উলুম করাচির এক বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেদমতের পাশাপাশি রচনা ও গবেষণার জগতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি:
- فتاویٰ دارالعلوم کراچی (امداد السائلین)،
- نوادر الفقہ (فقہی رسائل اور منتخب فتاویٰ کا مجموعہ(
- درسِ مسلم (تقریر صحیح مسلم)،
- حیاتِ مفتیٔ اعظم (سوانح حضرت مفتی شفیع عثمانیؒ)،
- میرے مُرشد حضرت عارفیؒ،
- اصلاحی تقرریں،
- مفتی بننا آسان نہیں،
- فقہ میں اجماع کا مقام،
- رفیقِ حج،
- حج کے بعد زندگی کیسے گزاریں ؟
- حاجیوں کو چند نصیحتیں،
- علمِ الصیغہ (اردو(،
- علاماتِ قیامت اور نزولِ مسیح ،
- یہ تیرے پراسرار بند،
- جہادِ افغانستان کی ان کی داستان،
- انبیاء کی سرزمین میں(تین اسلامی ملکوں کا سفرنامہ(،
- کتابتِ حدیث عہدِ رسالت اور عہدِ صحابہؓ میں،
- عورت کی سربراہی کی شرعی حیثیت،
- دو قومی نظریہ: جس پر پاکستان بنا،
- یورپ کے تین معاشی نظام،
- اگیرداری ، سرمایہ داری اور اشتراکیت اور ان کا تاریخی پسِ منظر،
- اسلام میں غلامی کا تصور،
- اختلاف رحمت ہے فرقہ بندی حرام،
- مسلکِ دیوبند کسی فرقے کا نام نہیں، اتباعِ سنت کا نام ہے،
- سنت کا مقام اور فتنہ انکارِحدیث،
- سنت کا مفہوم اور اتباعِ سنت کی اہمیت،
- مستحبات: اللہ تعالیٰ کے پسندیدہ اعمال،
- کام چوری: اللہ کا ایک عذاب،
- توبہ کی حقیقت و اہمیت،
- ماہِ رمضان: بخشش کا ذریعہ،
- جنت کا آسان راستہ،
- تاریخ کے دریچوں سے،
- پاكستان بننے مىں علمائے كرام كا كردار۔
মুফতি রফী উসমানী (রহ.) বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ২৩ রবিউস সানী ১৪৪৪ মোতাবকে ১৮ নভেম্বর 2022 জুমাবার দিবাগত রাত ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৬ বছর। মৃত্যুর সময় তাঁর এক মাত্র ছেলে যুবাইর আশরাফ দেশের বাইরে থাকায় জানাযার ২০ নভেম্বর (রবিবার) সকাল নয়টায় দারুল উলুম করাচিতে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন তাঁর ছোট ভাই হযরত মুফতি তাকি উসমানী হাফি। মাতাপিতার মাঝে দারুল উলুম করাচির মাকবারাতে দাফন করা হয়। মৃত্যুর তিন মাস পূর্বে গত ১৪ আগস্ট ২০২২ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নিজ মাতাপিতার কবর যিয়ারত করতে হুইল চেয়ারে করে ছাত্ররা নিয়ে যায়। যিয়ারত করতে গিয়ে মাতাপিতা উভয়ের কবরের মধ্যখানে একটু জায়গা ফাকা ছিল, সে জায়গায় চেয়ারে বসে মাতাপিতার কবর যিয়ারত করেন। আজ তিনি হুবহু সে ফাকা জায়গায় সমাহিত। মাতাপিতার কবরের মধ্যখানে সেদিন যেখানে হুইল চেয়ার রাখার ছিল, সে জায়গাটুকু আজ তাঁর শেষ সমাধি। তখন কি সে দিনের ছাত্ররা জানত যে, তিন মাস পর হযরতকে এ স্থানে কবর দিতে আসতে হবে। সাথীরা সেদিন এসেছিল হযরতকে তাঁর মাতাপিতার কবর যিয়ারত করানোর জন্য। আজ আসতে হচ্ছে হযরতের কবর যিয়ারত করার জন্য। এটাই দুনিয়া। এভাবে সকলকে চলে যেতে হবে। কেউ কারো আপন নয়।
মৃত্যুর খবর যখন শুনি, হযরত মুফতি রফি উসমানী (রহ.) আর নেই। আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেছেন। তখন সাথে সাথে যেহেনে এসেছে, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সেক্রেটারি হযরত হানীফ জালান্ধারী (হাফি.) বুঝি জানাযা পাবেন না! তিনি মৃত্যুর দিন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ১৭-১৮ নভেম্বর ২০০২২ চট্টগ্রাম জামিয়াতুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ইসলামি মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সফর ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পাকিস্তানের কোন বিমান নেই। ডুবাই বা শ্রীলঙ্কা হয়ে ঘুরে যেতে হয়। হযরত হানীফ জালান্ধারি (হাফি.) দীর্ঘ ৪৩ বছর কাজ করেছেন যার ছায়ায় থেকে তাঁর জানাযার সময় তিনি থাকতে পারবেন না! পরে যখন জানতে পারলাম, হযরতের নামাজে জানাযা একদিন পর রোববার সকাল নয়টায় অনুষ্ঠিত হবে, তখন ধারণা করলাম যে, হযরত হানীফ জালান্ধারী (হাফি.) জানাযা পাবেন। পরে ঠিক তাই হল। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে জানাযার নামাজ পেয়েছেন। হযরত হানীফ জালান্ধারী (হাফি.)-কে ২০ বছর বয়সে তাঁর পিতা হযরত শরীফ জালান্ধারী (রহ.) ইন্তেকালের পর খাইরুল মাদারিস মুলতানের মুহতামিম বানান হযরত রফি উসমানী (রহ.) ও হযরত তাকি উসমানী (হাফি.)। উভয়জন খাইরুল মাদারিস মুলতানের মুরব্বি ছিলেন। তিনি জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হযরত রফি উসমানী সাহেব (রহ.)-এর সাথে মুযাকারা কর কাজ করতেন।
আল্লাহ হযরতের কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। আমাদের উত্তম বদলা নসিব করুন। তাঁর পরিবার পরিজন, পুরো বিশ্বকে সবরে জমিল নসিব করুন। আমীন।