জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব (রহ.): কিছু উপদেশ ও কিছু নসিহত

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব (রহ.): কিছু উপদেশ ও কিছু নসিহত

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা!

আজ আপনাদের সামনে আমাদের একজন আদর্শ শিক্ষকের কিছু উপদেশ পেশ করা হচ্ছে। তিনি হলেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সফল শিক্ষাপরিচালক ও শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব সাহেব (রহ.)। সুদীর্ঘ আট দশকের ইতিহাসে জামিয়া পটিয়া যেসব সৃজনশীল মনীষী, তীক্ষ্ণ মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান আলিম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হলেন শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহাম্মদ আইয়ুব সাহেব (রহ.)। প্রতিভার বহুমাত্রিকতা ও জ্ঞান গভীরতা তাঁর জীবনকে বিশিষ্টতা দান করে। তাঁর পুরো জীবনটাই ইলমে দীন আহরণ ও বিতরণে ব্যয়িত হয়। শিক্ষাপরিচালক হিসেবে তিনি রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। হৃদয়গ্রাহী পাঠদান পদ্ধতির ফলে অতি মেধাবী ও কম মেধাবী সব ছাত্রই তাঁর অভিভাষণ থেকে উপকৃত হতো। একজন খ্যাতনামা ওয়ায়েজ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। যুক্তি ও উপমা প্রয়োগে কঠিন কথাকে সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন করার দক্ষতা ছিল সহজাত। সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনে আল্লামা মুহাম্মদ আইয়ুব (রহ.) বিপুল ছাত্র তৈরি করেন, যারা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে দীনের কোনো-না-কোনো খিদমতে নিয়োজিত রয়েছেন—এটা তাঁর জীবনসাধনার বিশাল সফলতা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি কবিতা চর্চায় পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। তাঁর কোমল ব্যবহার, মার্জিত আচরণ, অগাধ বাৎসল্য ও নিরহংকার জীবনধারার ছোঁয়ায় আমরা প্রভাবিত হয়েছি। তাঁর কথা ও নসিহত, ধমক ও ভৎর্সনার মধ্যেও ছিলো বহু শিক্ষা ও আদর্শ। তাঁর কাছ থেকে আমরা সুল্লামুল উলূম, শরহে আকায়িদ এবং বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ডের দরস লাভে ধন্য হয়েছিলাম। বিগত ২২ জুমাদাস সানী ১৪৩৩ হিজরি মোতাবেক ১৫ মে ২০১২ ইংরেজি (মঙ্গলবার), বিকাল ৫ ঘটিকায় তিনি ইন্তিকাল করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন, আমীন। বিভিন্ন সময় তাঁর স্মৃতিকথা স্মরণ হয়ে যায়। তাঁর ধমক ও নসিহতগুলো মনে পড়ে যায়। প্রিয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তাঁর কিছু উপদেশ ও নসিহত পেশ করা হলো—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমি

ইলমে দীন আলোক-বিচ্ছরণকারী আল্লাহর নূর

আমাদের প্রিয় উস্তাদ শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব সাহেব (রহ.) ইলমে দীনের গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তাআলার সিফাতি নাম বা গুণগত নাম হলো ‘আলিম’ অর্থাৎ আল্লাহ মহা ইলমের অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক হচ্ছেন নূরে মুতলাক অর্থাৎ এক সত্তা যা সম্পূর্ণই নূর। তাই তাঁর সব সিফাত বা গুণাবলিও নূর। ইলম বা জ্ঞানও আল্লাহপাকের একটি নূর। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَقَدْ جِئْنٰهُمْ بِكِتٰبٍ فَصَّلْنٰهُ عَلٰى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ۰۰۵۲

‘আর আমি তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জেনেশুনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে।’[1]

আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির মুহাম্মদ আমীন আশ-শানকীতী (রহ.) বলেন,

وَلَا شَكَّ أَنَّ هَذَا الْقُرْآنَ الْعَظِيمَ هُوَ النُّورُ الَّذِيْ أَنْزَلَهُ اللهُ إِلَىٰ أَرْضِهِ، لِيُسْتَضَاءَ بِهِ، فَيُعْلَمَ فِيْ ضَوْئِهِ الْـحَقُّ مِنَ الْبَاطِلِ، وَالْـحَسَنُ مِنَ الْقَبِيحِ، وَالنَّافِعُ مِنَ الضَّارِّ، وَالرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ.

‘সন্দেহ নেই যে, এই কুরআনই হচ্ছে সেই নূর, যা আল্লাহ তাআলা ভূপৃষ্ঠকে আলোকময় করতে অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সেই আলোর সাহায্যে হক ও বাতিল এবং ভালো ও মন্দ পার্থক্য করা যায়। ক্ষতি ও উপকারী বস্তু চেনা যায়। ভ্রান্তি থেকে সঠিক পথের দিশা পাওয়া যায়।’[2]

‘পৃথিবীতে অমুসলিমদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে কুরআন-হাদীস গবেষণা করা হচ্ছে। বড় বড় ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। তারা কুরআনের তাফসির ও হাদীস বিষয়ে অনেক জ্ঞান রাখে। কিন্তু ঈমানি দৌলত তাদের নেই।’ তাদের এ জ্ঞান হলো মালুমাত বা জানা কিন্তু মানা নয়। অর্থাৎ কুফর ও গুনাহর অন্ধকার প্রকৃত ইলম বা জ্ঞান নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগ যতই আধুনিক হোক, চিন্তা ও গবেষণা যতই ধারালো হোক, যুক্তি জ্ঞান ও গোঁড়ামি দিয়ে পরকালের মুক্তির জ্ঞানার্জন সম্ভব নয় এবং মুক্তিও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মহাজ্ঞান আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকনিদের্শনা, আল-কুরআন মেনে, রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে চলা। জ্ঞান তখন প্রত্যক্ষ অনুভূতির মধ্যে এসে পূর্ণ হবে। অন্তরে তখন চির আধুনিক ইসলামের জ্ঞানের আলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠবে। ঈমান ও একিনের মূল কথা এটিই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে সিরাতুল মুসতাকীম বা জ্ঞানের সরল-সোজা পথ, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নয়। তাই শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব সাহেব (রহ.) বলতেন,

‘প্রিয় ছাত্ররা তোমরা আলেমানা নূর পয়দা করো। মনে রাখবে, কুরআনের জ্ঞানে আল্লাহর নূর আছে। হাদীসের জ্ঞানেও নূর আছে। আর এ নূর গুনাহগারদের অন্তরে পয়দা হয় না। মানুষ হিসেবে কারো কোনো গুনাহ হয়ে থাকলে তা থেকে তাওবা করবে। দু-চার রাকাত তাওবার নামাজ পড়ে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করবে, যেন এমন গুনাহে আর কখনো লিপ্ত না হও। অতঃপর তোমরা যখন কুরআন-হাদীসের জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করবে, তখন তোমাদের চেহারায় সেই আলেমানা নূর উদ্ভাসিত হবে। আলেমানা নূর পয়দা হবে। সাধারণ মানুষ সৎ ও দীনদার হতে পারে। কিন্তু তাদের চেহারায় আলেমানা সেই নূর দেখা যায়। তিনি হাস্যচ্ছলে বলতেন যে, সৌদি প্রবাসী অনেক লোক জুব্বা পরিধান করে। তারা সেখানে এয়ারপোর্ট ঝাড়ু দেওয়া ইত্যাদির কাজ করে। পায়ের তালু পর্যন্ত তার গায়ে লম্বা জুব্বা থাকে, কিন্তু তাদের চেহারায় সেই আলেমানা নূর পরিলক্ষিত হয় না। প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তাই তোমরাদেরকে বলছি, তোমরা কোর্তা মৌলভী হয়ো না। জুব্বায় মৌলভী হয়ো না। বরং আলেমানা নূর পয়দা হয় এমন মৌলভী হও।’

শায়খ আবদুল আযীয দাব্বাগ (রহ.)-এর ইলমের নূর অবলোকনের বিস্ময়কর ঘটনা

শায়খ আবদুল আযীয দাব্বাগ (রহ.) একজন দীনদ্বার ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি নিরক্ষর ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলিয়ান ছিলেন। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি এত মজবুত ছিলো যে, একবার তার সামনে কুরআনের আয়াত, হাদীসের টুকরো এবং আরবি ইবারত সংমিশ্রিত করে পাঠ করা হল। তখন তিনি বলেন, এটি কুরআনের আয়াত, এটি রসুলের হাদীস এবং এটি আরবি ইবারত। তিনি ছিলেন একজন উম্মি বুজুর্গ। তাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি কীভাবে এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারলেন? তখন তিনি বললেন, যখন কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা হলো, তখন তিলাওয়াতকারীর মুখ হতে নূরে কদীম (সত্তাগত নূর) বের হয়েছে। সুতরাং তা দেখে বুঝলাম, এটা কুরআনের আয়াত। যখন হাদীস পড়া হলো, তখনও তাঁর মুখ থেকে নূর বের হয়েছে। তবে সেটা নূরে কদীমের মতো নূর ছিলো না। তাই বুঝলাম সেটা হাদীস। আর যখন আরবি ইবারত পড়া হলো, তখন তার মুখ হতে কোনো নূরেই বের হয়নি। তাই ধরে নিলাম সেটা আরবি ইবারত। শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব সাহেব (রহ.) এই ঘটনা উল্লেখ করে বলতেন,

‘একজন উম্মি লোকের নূর অবলোকন করার অবস্থা এমন হলে, তোমাদের-আমাদের কী অবস্থা হওয়া দরকার! প্রিয় ছাত্ররা! কুরআন-হাদীসের নূর হাসিল করার জন্যই তো তোমরা মাদরাসায় এসেছো। এই উদ্দেশ্যই তো এখানে ভর্তি হয়েছো। তাই তোমরা সেই নূর অর্জন করার চেষ্টা করবে। তবে তোমাদের মধ্যে ‘আলেমানা নূর’ আসার জন্য তিনটি শর্ত পালন করতে হবে। ১. গুনাহ ছেড়ে পাপমুক্ত জীবন গড়া। ২. নিয়মিত দরসে উপস্থিত থাকা। ৩. সকল ব্যস্ততা ছেড়ে ইলমি নিমগ্নতার প্রতি মনোনিবেশ করা।’

(১) গুনাহ ছেড়ে পাপমুক্ত জীবন গড়া

শায়খুল হাদীস (রহ.) বলেন, তালেবে ইলমকে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন এমন সকল পাপাচার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তাতে মেধাশক্তি লোপ পায় এবং আল্লাহর নূর অর্জিত হয় না। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) তাঁর উস্তাদ ওয়াকী (রহ.)-এর কাছে মুখস্তশক্তি লোপ পাওয়ার অভিযোগ করলেন, তিনি যা উত্তর দিলেন তা এভাবে বর্ণনা করেছেন,

شَكَوْتُ إِلَىٰ وَكِيْعٍ سُوْءَ حِفْظِيْ
فَأَوْصَانِيْ إِلَىٰ تَرْكِ الْـمَعَاصِيْ
وَقَالَ
الْعِلْمُ نُوْرٌ مِنْ إِلٰـهِيْ
وَنُوْرُ اللهِ لَا يُعْطَىٰ لِعَاصِيْ

অর্থাৎ ‘আমি আমার উস্তাদ ওয়াকী (রহ.)-এর নিকট ইলম ভুলে যাওয়ার অভিযোগ করলাম, তিনি আমাকে গুনাহ বর্জন করার জন্য উপদেশ দিলেন, কারণ ইলম হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নূর, আর আল্লাহ তাআলার নূর জনহুগারের ভাগ্যে জোটে না।’[3]

তাই আমিও তোমাদেরকে গুনাহ বর্জনের নসিহত করছি। তোমরা গুনাহ ছেড়ে দাও। ইলমের নূর গুনাহগারকে দান করা হয় না।

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপায়

যখন মানুষ কোনো গুনাহর কাজের দিকে ধাবিত হবে। তখন ৩টি কথার স্মরণই মানুষকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আর তা হলো:

(ক) আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখেন: কুরআনুল করীমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি সবকিছু দেখেন এবং শুনেন। কোনো মানুষের মাঝে যখন এ মানসিকতার তৈরি হবে যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার সব কৃতকর্ম দেখতে পান; তবে ওই বান্দার দ্বারা কখনো গুনাহর কাজ করা সম্ভব নয়।

() ফেরেশতারা সবকিছু লেখেন: মানুষ দুনিয়াতে যে কাজই করে, তা লিখে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা তত্ত্ববধায়ক নিযুক্ত করে রেখেছেন। কর্ম অনুযায়ী মানুষকে প্রতিদান দেওয়া হবে। আর দুনিয়ার সব কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। গুনাহমুক্ত জীবন-যাপনে মানুষকে তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

كِرَامًا كَاتِبِيْنَۙ۰۰۱۱ يَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ۰۰۱۲

‘অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।’[4]

() হাশরের ময়দানে দুনিয়ার সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে: দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রত্যেক মানুষকেই হাশরের ময়দানে হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার সব কাজের হিসাব গ্রহণ করবেন। হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,

وَكُلَّ اِنْسَانٍ اَلْزَمْنٰهُ طٰٓىِٕرَهٗ فِيْ عُنُقِهٖ١ؕ وَنُخْرِجُ لَهٗ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ كِتٰبًا يَّلْقٰىهُ مَنْشُوْرًا۰۰۱۳ اِقْرَاْ كِتٰبَكَ١ؕ كَفٰى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيْبًاؕ۰۰۱۴

‘আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কিয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সে দিন বলা হবে) তুমি পাঠ কর, তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।’[5]

বস্তুত আল্লাহ তাআলা বান্দার কর্ম সম্পাদন দেখেন, ফেরেশতারা তা কিতাব আকারে লিখে রাখেন এবং পরকালে ফেরেশতাদের লিখিত বিষয়াবলি ওই ব্যক্তিকেই পাঠ করতে হবে। সে দিন যারা তাদের কর্মকাণ্ডকে অস্বীকার করবে, তাদের মুখ সিলগালা করে দেওয়া হবে। সে দিন যে অঙ্গ দিয়ে যে সব কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে। সে সব অঙ্গ তার সাক্ষী দেবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টিও মানুষকে জানিয়ে দিয়ে বলেন,

اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ۰۰۶۵

‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব; তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’[6]

একথাগুলো স্মরণ রেখে জীবন-যাপন করলে গুনাহ মুক্ত জীবন গড় সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গুনাহ মুক্ত জীবন যাপনে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ পালন করার তওফিক দান করুন, আমিন।

(২) নিয়মিত দরসে উপস্থিত থাকা

শায়খুল হাদীস আল্লামা আইয়ুব (রহ.) নিয়মিত দরসে উপস্থিত থাকার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছাত্রদের অনুপস্থিতিকে একবারেই সহ্য করতেন না। তিনি বলতেন, ছাত্ররা যেন ছুটির সময় ছাড়া অন্য কোনো সময় মাদরাসায় অনুপস্থিত না থাকে। বিশেষত দরসে উপস্থিতির বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগী থাকার তাগিদ দিতেন। বছরের শুরু থেকেই ছাত্ররা যেন এমন প্রতিজ্ঞা করে যে, কোনো অবস্থাতেই একটি দরসও যেন ছুটে না যায়। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়াকরতে থাকবে, ইয়া আল্লাহ! সব ধরনের আকস্মিক দুর্ঘটনা ও রোগ-ব্যাধি থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হযরতের সুল্লামুল উলূমের দরসে এই গুরুত্বপূর্ণ নসিহত শুনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, কখনো কোনো দরসে অনুপস্থিত থাকবো না। আল-হামদু লিল্লাহ, আল্লাহ সেই তওফিক দান করেছেন। তখন থেকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত কখনো কোনো দরসে অনুপস্থিত থাকাতে হয়নি, আল্লাহর জন্যই সকল প্রসংসা ও শুকরিয়া।

শিক্ষার্থীদের অধিক জ্ঞাতার্থে তালিবানে ইলম: পথ ও পাথেয় গ্রন্থ থেকে কিছু শিক্ষণীয় ঘটনা উল্লেখ করা হলো। বস্তুত যে যুগে বর্তমান সময়ের মতো দীনি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থা ছিল না এবং শিক্ষার্থীদের স্থায়ী আবাসনেরও সুবিধা ছিল না সে সময়েও আকাবির ও আসলাফ নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, বর্তমান সময়ের তালিবে ইলমরা তাকে বাড়াবাড়ি নামেও আখ্যায়িত করতে পারে। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) সম্পর্কে তালহা (রাযি.)-এর এ কথা হয়ত সবাই জানেন,

وَكَانَ أَبَا هُرَيْرَةَ h مِسْكِيْنًا لَا مَالَ لَهُ وَلَا أَهْلَ وَلَا وَلَدَ، إِنَّمَا كَانَتْ يَدُهُ مَعَ يَدِ النَّبِيِّ ﷺ، وَكَانَ يَدُوْرُ مَعَهُ حَيْثُمَا دَارَ، وَلَا يَشُكُّ أَنَّهُ قَدْ عَلِمَ مَا لَـمْ نَعْلَمْ وَسَمِعَ مَا لَـمْ نَسْمَعْ.

‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) ছিলেন সহায় সম্বলহীন। সম্পদ ও সন্তান কিংবা পরিজন বলতে তার কিছু ছিলো না; তার হাত ছিলো নবীজি (সা.)-এর হাতের সঙ্গে যেখানে যেতেন তিনিও তাঁর সঙ্গে যেতেন। আর সন্দেহ নেই, তিনি যে ইলম হাছিল করেছেন আমরা তা পরিনি এবং তিনি যা হাদীস শুনেছেন আমরা তা শুনিনি।’[7]

ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি ১৭ বছর ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, কোনোদিন তাঁর সঙ্গে ফজরের নামাজ ছুটেনি। কোনোদিন এর ব্যতিক্রম হয়নি, এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনও নয়। তিনি তার নিজের একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমার এক সন্তানের মৃত্যু হল। আমি তার দাফন-কাফনের দায়িত্ব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শিদের ওপর ন্যস্ত করি। কেন? তিনি নিজেই বলেন,

مخافة ‌أن ‌يفوتني ‌من ‌أبي ‌حنيفة شيء لا تذهب حسرته عني.

‘শুধু এ আশঙ্কায় যে, আবু হানিফা (রহ.)-এর নিকট থেকে এমন কোনো বিষয় আমার ছুটে যাবে যার আফসোস আর কখনো শেষ হবে না।’[8]

সেই সময়ের একজন মুদাররিস আবদুল আযীম মুনযিরী (৫৮১-৬৫৬ হিজরী) যিনি আত-তারগীব ওয়াত তারহীব গ্রন্থের সংকলক, তার সম্পর্কে ইতিহাসের সাক্ষ্য হল:

وكان لا يخرج من المدرسة لا لعزاء، ولا لهناء ولا لفرجه، ولا لغير ذلك، إلا لصلاة الجمعة، بل يستغرق ‌الأوقات ‌في ‌العلم رضي الله تعالىٰ عنه وعن والدينا والمسلمين.

‘তিনি মাদরাসা থেকে কখনোই বের হতেন না; না শোকে, না সুখে, না সুসংবাদ না দুঃসংবাদ; শুধু জুমার নামাজ ছাড়া। বরং সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন ইলমের মাঝে।’[9]

তাফসীরে রূহুল মাআনীর গ্রন্থকার মাহমুদ আল-আলূসীর দৌহিত্র মাহমুদ শাকরী আল-আলুসী সম্পর্কে তার শাগরিদ বাহজাত আল-আসারীর বক্তব্য হচ্ছে,

أذكر أنني انقطعت عن حضور درسه في يوم مزعج، شديد الريح، غزير المطر، كثير الوحل، ظنا مني أنه لا يحضر إلى المدرسة، فلما شخصت في اليوم الثاني إلى الدرس، صار ينشد بلهجة غضبان:

ولا خير فيمن عاقه الحر ‌والبرد.

‘একদিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল, রাস্তা-ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিল, আমি ভাবলাম, উস্তাদজি হয়তো আজ আসতে পারবেন না, তাই আমিও সবকে হাজির হলাম না। পর দিন যখন সবকে হাজির হলাম তখন উত্তাদজি অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং এ পঙক্তির মাধ্যমে আমাকে ভর্ৎসনা করলেন, ولا خير فيمن عاقه الحر ‌والبرد।[10]

শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)-এর আপবীতী পড়ে দেখুন। তার এ ঘটনা সর্বজনবিদিত যে, তিনি ও তাঁর এক সহপাঠী সংকল্প করেছিলেন, কোনো হাদীস যেন উস্তাদের নিকট থেকে শোনা ছাড়া না থাকে। আর কোনো হাদীস বিনাঅজুতে শোনা না হয়। আল্লাহ তাকে এই সংকল্প পুরা করারও তওফিক দান করেছিলেন। এর অর্থ এই যে, তিনি নিয়মিত দরসে উপস্থিত থেকেছেন এবং দেহ ও মন দুটো নিয়েই উপস্থিত থেকেছেন। যেন لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيْدٌ۰۰۳۷[11]-এর বাস্তব নমুনা, বলাবাহুল্য, অমনোযোগিতার সঙ্গে শুধু শারীরিক উপস্থিতি কখনো উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

ছুটি নেওয়া অনুপস্থিত থাকা

হযরত আইয়ুব সাহেব (রহ.) বলতেন, অনেকেই অনুপস্থিতি বলতে ছুটি নেওয়া ছাড়া এবং কোনোরূপ ওজর ছাড়া অনুপস্থিত থাকাই উদ্দেশ্য মনে করে থাকে। তাই কেউ যদি ছুটি নিয়ে কিংবা কোনো ওজর বা অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকে তবে তা আর অনুপস্থিত গণ্য করে না। এই ধারণা ভুল। ছুটি নিয়ে হোক কিংবা বিনা ছুটিতে, ওজরের কারণে কি বিনা ওজরে অনুপস্থিতি সব সময়ই অনুপস্থিতি। দরসে উপস্থিত থাকার সুফল উভয় ক্ষেত্রেই হাতছাড়া হবে। কোনো রোযাদারের গলায় যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি চলে যায় তাহলে যেমন তার রোযা বিনষ্ট হয় এখানেও তেমনি। হাঁ, কেউ যদি বাস্তবিকই কোনো সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে ছুটি নেয় আর এজন্য তার মনস্তাপ হতে থাকে তবে হয়তো আল্লাহ তাআলা তার অনুপস্থিতির ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন, কিন্তু সেটা তো ভিন্ন প্রসঙ্গ। তাই যথাসাধ্য ছুটি নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সামান্য অসুস্থতার কারণে সবকে গরহাজির থাকা তালিবানে ইলমের জন্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়। অনেক তালিবে ইলম খালাতো, মামাতো, চাচাতো ভাই-বোনদের বিয়ের জন্যও ছুটি নিতে যেত। তখন তিনি খুবই রাগান্বিত হতেন। তিনি বলতেন, এ সবকিছুর আয়োজন তো ছুটির দিনেও করা যায়, তাহলে এর জন্য ছুটি নিতে হবে কেন?

(৩) সকল ব্যস্ততা ছেড়ে ইলমি নিমগ্নতার প্রতি মনোনিবেশ করা

শায়খুল হাদসী আল্লামা আইয়ুব (রহ.) বলতেন, প্রিয় ছাত্ররা, তোমরা হলে তালিবে ইলম। এটিই তোমাদের প্রধান পরিচয়। মনে রাখবে, পৃথিবীর কোনো ভূখণ্ড কখনো তালেবে ইলমের উপস্থিতি থেকে শূন্য হয়নি। তালেবে ইলমের কাজ কী? কী তাদের দিবা-রাত্রির ব্যস্ততা? তার উত্তর একটিই, যা নিহিত আছে ওই পরিচয়মূলক শব্দটির ভেতরে। তালিবে ইলমের একমাত্র কাজ ‘তলবে ইলম’। অর্থাৎ ইলম-অন্বেষণ। এছাড়া তালিবে ইলমের আর কোনো কাজ নেই। আমাদের দিন ইলম অর্জনের, আমাদের রাত ইলম অর্জনের। আমাদের শয়ন-জাগরণের কাজও ইলম অর্জন। আমাদের সব আয়োজন এবং আমাদের সব প্রয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু ‘ইলম অর্জন।’ ইলম অর্জনের নিমগ্নতায় কেটে যাবে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত। চোখে ইলমের নূর। হৃদয় ও আত্মায় থাকবে তলবের জযবা ও ইলম অন্বেষণের প্রেরণা।

কিন্তু আফসোস হয়, আমাদের বর্তমান অবস্থা এমন নয়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, আমরা যারা তালিবে ইলম, তাদের অবস্থা এখন বড়ই করুণ। বড়ই বেদনাদায়ক। নিমগ্নতা ও নিবিষ্টতার মহান সম্পদ আমরা হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে। আমাদের তলবের জযবায় ঘুণ ধরেছে আর আমরা বিস্মৃত হতে চলেছি আমাদের আত্মপরিচয়। দোকানে-বাজারে যেকোনো মেলা ও মাহফিলে আমরা আছি। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই অনেকটা দর্শক হিসেবে আমরা মাহফিলে মাহফিলে ঘুরে বেড়াই। সুযোগ পেলেই মাদরাসা থেকে বের হয়ে যাই। যেন এসব আয়োজনে আমাদের উপস্থিতি একান্ত জরুরি। অথচ ভালো কোনো মজমাতেও তো শুধু যাওয়ার জন্য যাওয়া এবং শুধু দেখার জন্য দেখা কোনো তালিবে ইলমের শান হতে পারে না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যার সাধনার লগ্ন, তার আবার তামাশা দেখার সময় কোথায়?

তালিবানে ইলম তো মুয়াত্তা মালিকের ‘রাবী’ হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া মাসমুদী (রহ.)-এর কাফেলা। যিনি সুদূর আন্দালুস থেকে মদীনায় ইমাম মালেক (রহ.)-এর দরসে এসেছিলেন। সে যুগে আরব দেশে হাতি ছিল না। একদিনের ঘটনা। ইমাম মালেক (রহ.)-এর দরসগাহে কে যেন বলল ‘হাতি এসেছে’। শোনামাত্র সবাই বাইরে ছুটে গেল। ইতিমধ্যে ইমাম মালেক (রহ.) দরসে এলেন এবং শুধু ইয়াহইয়া মাসমুদীকে দেখতে পেলেন। ইমাম মালেক (রহ.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াহইয়া! তুমি গেলে না যে! তোমাদের আন্দালুসে তো হাতি নেই। তখন তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি তো সুদূর আন্দালুস থেকে এসেছি আপনাকে দেখার জন্য।’ এই উত্তর শুনে ইমাম মালেক (রহ.) বললেন, ‌هذا ‌عاقل الأندلس (এতো আন্দালুসের বুদ্ধিমান)![12] ফল এই হয়েছিল, মুয়াত্তার দরসে হয়তো অনেকেই শরীক হয়েছিল, কিন্তু ইয়াহইয়া মাসমুদীর বর্ণিত মুয়াত্তার রেওয়ায়াতটিই মাশরিক ও মাগরিবে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

তেমনি আমাদের জামেয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর ছাত্রজীবনের কথা। তখন তিনি জিরি মাদরাসায় অধ্যয়নরত। তখন সবেমাত্র এ দেশের আকাশে বিমান উড়তে শুরু করেছে। একদিনের ঘটনা। বিমানের গর্জন শোনামাত্র দরসগাহের সবাই বের হয়ে গেল বিমান দেখতে। হযরত মুফতী আজীজুল হক (রহ.) একটি কিতাব মুতালাআ করছিলেন। তাঁরও একবার মনে হল, জীবনে প্রথমবারের মতো এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি না হয় দেখেই আসি! কিন্তু আবার মনে হল, আহামরি আর কী হবে, কত পাখিই তো আকাশে উড়ে! একথা ভেবে আবারো মুতালাআয় ডুবে গেলেন।[13]

প্রিয় শিক্ষার্থীরা!

তামাশার পেছনে পড়েননি বলে আজও তারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। যুগ যুগ ধরে তাঁরাই স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকবেন। তাই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রয়োজনের কথা ভেবে একজন তালিবে ইলম জীবনের মূল্যবান সময় বিসর্জন দিতে পারে না। জীবনের কোনো প্রয়োজন এমন আছে কি, যা ইলম অর্জনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?

অতএব অমুকের বিয়ে, অমুকের মৃত্যুসহ নানা প্রসঙ্গে আমরা যেভাবে অস্থির হয়ে ছুটে যাই তাতে এই প্রশ্ন অবশ্যই দাঁড়ায় যে, আমার উপস্থিতি সেখানে কতটা অনিবার্য ছিল? আমার অনুপস্থিতিতে কোনো কাজটি অসম্পূর্ণ থাকত? মনে রাখতে হবে, সকল ডাকে সাড়া দিলে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হব। আমার দিন-রাতের একমাত্র কাজ তো ইলম-অন্বেষণ। অতএব সাড়া দেওয়ার সময় কোথায়?

প্রিয় তালেবে ইলম!

বর্তমানে যদি যোগ্য আলেম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে আরো বেশি মেহনত, আরো বেশি মুজাহাদা করতে হবে। অতএব আজ একবার আমাদেরকে ফিরে তাকাতে হবে নিজেদের দিকে, চিনতে হবে নিজেদেরকে, জানতে হবে নিজেদের আত্মপরিচয়। অনুধাবন করতে হবে যে, জীবনের সব প্রয়োজন আমার নয়, সমাজের সব আয়োজনও আমার জন্য নয়। তাই জীবনের সব আহ্বানে আমার সাড়া দেওয়ার নয়, সমাজ ও সংসারের সব প্রয়োজনে ছুটে চলাও আমার দায়িত্ব বহির্ভূত। কারণ আমার লক্ষ্য তো মাত্র একটি। আর তা হল ‘তলবে ইলম’ বা জ্ঞান অন্বেষণ। কারণ আমি ‘তালিবে ইলম।’

ঘোষণা

(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)

শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।

অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

যোগাযোগের ঠিকানা

বিভাগীয় সম্পাদক

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ, মাসিক আত-তাওহীদ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com

 

[1] আল-কুরআন, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৫২

[2] আমীন আশ-শানকীতী, আযওয়াউল কুরআন ফী ঈযাহিল কুরআন বিল কুরআন, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৫ খ্রি.), খ. ৭, পৃ. ২৬৩

[3] থানভী, দাওয়াতে আবদিয়ত, খ. ৩, পৃ. ৬২

[4] আল-কুরআন, সূরা আল-ইনফিতার, ৮২:১১-১২

[5] আল-কুরআন, সূরা আল-ইসরা, ১৭:১৩-১৪

[6] আল-কুরআন, সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৬৫

[7] আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ীন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. 3, পৃ. 585, হাদীস: 6172

[8] আল-মুওয়াফ্ফিক আল-মাক্কী, মানাকিবুল ইমাম আল-আ’যম আবী হানীফা, খ. ২, পৃ. ২১৫

[9] আন-নাওয়াওয়ী, বুস্তানুল আরিফীন, দারুর রাইয়ান লিত-তুরাস, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৭ হি. = ১৯৮৭ খ্রি.), পৃ. ৭৯-80

[10] আবদুল ফাতাহ আবু গুদ্দা, কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, মাকতাবুল মাতবুআত আল-ইসলামিযা, হলব, সিরিয়া ও দারুল বাশায়ির আল-ইসলামিয়া লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (দশম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০২ খ্রি.), পৃ. 116

[11] আল-কুরআন, সূরা কফ, ৫০:৩৭

[12] আল-মুকরী, নাফহুত তীব আন গুসনিল আনদালুস আর-রাতীব, দারু সাদির, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৭ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৯

[13] সুলতান যওক নদভী, তাযকিরায়ে আযীয, পৃ. ৩৮

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ