জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা: প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি

বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা: প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি

আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)

[অমুসলিম কাদিয়ানি সম্প্রদায় নিজেদের পরিচয় দেয় ‘আহমদিয়া মুসলিম জামায়াত’ হিসেবে। এ মুখোশের আড়ালে তারা তাদের বর্ণচোরা ও প্রতারক চরিত্রকে সক্রিয় রাখে। সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের তৎপরতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন পত্রিকার পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নিজেদের কর্মকাণ্ড ও ‘কৃতিত্বের’ বর্ণনা তুলে ধরেছে। এতে নতুন করে সরলপ্রাণ বহু মুসলিমের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই কাদিয়ানিদের ধর্মবিশ্বাস, মিথ্যাচার ও প্রতারণার প্রকৃত চিত্র সর্বসাধরণের নিকট তুলে ধরা জরুরি। এ বিষয়ে বিগত ১ মার্চ ২০২০ তারিখে সাতকানিয়া থানার অর্ন্তগত মাদার্শা বাবুনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘ইয়াসিন মক্কী আল-কাসিমিয়া ও আল্লামা নুরুল হুদা (রহ.) স্মৃতি সংসদ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামি সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)। উক্ত সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাঁরই যোগ্য শিষ্য সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সম্মানিত এমপি আল্লামা ড. আবু রেজা নদভী (হাফি.)। আল্লামা বোখারী (রহ.) কাদিয়ানি বিষয়ে মৌলিক আলোচনার পর এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত নিবেদন করেন যে, তিনি যেন অতিসত্তর কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার মাধ্যমে ইসলামের মান-মর্যাদাকে সমুন্নত রাখেন। বক্তব্যটির শ্রুতিলিপি করেন জামিয়ার শিক্ষক মাওলানা সুহাইল বিন রাশেদ কাসিমী। প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এবং পরিমার্জনসহ মাসিক আত-তাওহীদ পাঠকের সমীপে পেশ করা হলোসলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী]

 

نحمده ونصلي علىٰ رسوله الكريم، أمّا بعد! فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمٰن الرحيم: [مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَ لٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَ خَاتَمَ النَّبِيّٖنَؕ ۰۰۴۰] {الأحزاب: 40} صدق الله العظيم.

আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা

সম্মানিত সভাপতি আমার প্রিয় ছাত্র ও মাননীয় সাংসদ আল্লামা ড. আবু রেজা নদভী (হাফিযাহুল্লাহ) এবং উপস্থিত হযরত ওলামায়ে কেরাম ও সম্মানিত বেরাদারানে ইসলাম!

ইসলামি বিশ্বাসের মৌলিক তিনটি বিষয় হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। এর মধ্যে তাওহীদ হলো প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যমণ্ডিত। সব নবী-রসুলগণের কালিমা বা প্রচারের মূলমন্ত্র ছিল এই তাওহীদেরই মর্মবাণী لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ । এটি কালিমার প্রথমাংশ। এর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’। আর কালিমার দ্বিতীয় অংশ হলো, যুগের নবী-রসুলের পরিচয় ও স্বীকৃতির ঘোষণা। যেমন- ‘আদামু সফিয়ুল্লাহ’ (হযরত আদম আ. আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত), ‘নূহুন নাজিয়ুল্লাহ’ (হযরত নূহ আ. আল্লাহ কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত), ‘ইবরাহীমু খলীলুল্লাহ’ (হযরত ইবরাহীম আ. আল্লাহর খলীল বা বন্ধু), ‘দাউদু খলীফাতুল্লাহ’ (হযরত দাউদ আ. আল্লাহর খলীফা), ‘মুসা কালিমুল্লাহ’ (হযরত মুসা আ. আল্লাহর কালামপ্রাপ্ত), ঈসা রূহুল্লাহ’ (হযরত ঈসা আ. আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা রূহ), ‘মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ (হযরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রসুল)।

লক্ষণীয় কালিমার দ্বিতীয় অংশ (রিসালাতের বিবরণ) আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যুগে যুগে পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু কালিমার প্রথম অংশ তাওহীদ তথা আল্লাহর জাত ও সিফাতের (সত্তা ও গুণাবলি) বিবৃতি কোনো ধরনের পরিবর্তিত হয়নি। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে সর্বপ্রথম আমাদের আকীদা-বিশ্বাস হতে হবে যে, আমাদের একজন স্রষ্টা ও আল্লাহ আছেন। তিনি এক ও একক। তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ পাক বলেন,

وَاِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ١ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُؒ۰۰۱۶۳

অর্থাৎ ‘তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু।’[1]

আল্লাহর প্রেরিত নবী- রসুলের প্রতি ঈমান আনা

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর দ্বিতীয় নাম্বারের আকীদা-বিশ্বাস হতে হবে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রসুল এবং তিনিই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর। মূলত আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্য থেকে সবচেয়ে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণকেই নবী-রসুল করে প্রেরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মানুষের মাঝ থেকেই হযরত নুহ (আ.),হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)সহ অনেক নবী রসুলগণকে প্রেরণ করেছেন। আর নবী-রসুল প্রেরণের ধারাকে তিনি সমাপ্ত করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বারা। তাঁদের সকলকেই তিনি নিজেদের নুবুওয়াত প্রমাণে সহায়ক নিদর্শন ও প্রমাণ দান করেছেন। তাঁরা সকলেই তাঁদের ওপর অর্পিত আমানত ও রিসালাত পৌঁছে দিয়েছেন ও রক্ষা করেছেন এবং মানুষদেরকে তাদের রবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং কেউ যদি নবী-রসুলগণের প্রতি ঈমান না আনে, সে আল্লাহর প্রতিও ঈমান আনেনি। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَالْمُؤْمِنُوْنَ١ؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓىِٕكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ۫ ۰۰۲۸۵

অর্থ: ‘রসুল বিশ্বাস রাখেন সেসব বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি।’[2]

অতএব তাঁরা হলো আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত দূত এবং তাঁর পক্ষ হতে সর্বরাহকৃত নির্দেশাবলির বার্তাবাহক ও প্রচারক। আমরা তাঁদের সকলের প্রতি ঈমান রাখি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهٖ۫ ۰۰۲۸۵

অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর কোনো রসুলের মাঝে পার্থক্য করি না।’[3]

খতমে নুবুওয়াত তথা রসূলুল্লাহ (সা.) শেষ নবী হওয়াকে বিশ্বাস করা

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী এবং রসুল বিশ্বাস করার পর হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ পয়গম্বর এই বিশ্বাসও পোষণ করতে হবে। তাঁর পরে আর কোনো পয়গম্বর আসবে না। মুহাম্মদ (সা.)-কে কেবল আল্লাহর রসুল হিসেবে বিশ্বাস করলে আমার ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। তাকে সর্বশেষ পয়গম্বর হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। অর্থাৎ যেমনিভাবে একথার স্বীকারোক্তি ও সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার রসুল। ঠিক তেমনি দৃঢ়তা ও মজবুতির সাথে, সে পরিমাণ আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে একথারও সাক্ষী দেওয়া যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সর্বশেষ নবী। কারণ তিনি শেষ নবী হওয়ার বিষয়টি হাদীস শরীফে অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় বলে গেছেন, কুরআন মজীদেও দ্ব্যর্থহীনভাবে তা বলা হয়েছে। কাজেই তাঁকে নবী হিসেবে স্বীকার করার পর তার শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাঁর পর কেউ নবী হতে পারবে না; কিয়ামত পর্যন্ত আর কেউ নবী হিসেবে আগমন করবে না। হাঁ, হযরত ঈসা (আ.) কিয়ামতের পূর্বে এ পৃথিবীতে আবার আগমন করবেন, কিন্তু তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর নুবুওয়াত লাভ করেননি; তাকে তো নবী অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ জমানায় তিনি এ পৃথিবীতে পুনরায় আগমন করবেন। পৃথিবীতে আগমন করে তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের আহকাম ও বিধি-বিধান জারি করবেন।

স্মরণ রাখতে হবে যে, যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলার উলুহিয়াত এবং প্রভুত্বের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে অংশীদার মনে করা শিরক; তা যেকোনোভাবে ও যেকোনো অর্থেই হোক না কেন; যেকোনো ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েই এই শিরক করে থাকুক না কেন, এর কারণে তার তাওহীদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে মুশরিক সাব্যস্ত হবে। তেমনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর যেকোনো ধরনের ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে যিল্লী নবী বা ছায়ানবী, বুরুযি নবী বা মাজহার বলে কাউকে নবী মনে করা—এটা স্পষ্ট কুফর। যেকোনো ধরনের ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েই এমন করে থাকুক তার খতমে নুবুওয়াতের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফের সাব্যস্ত হবে।

ইসলামের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসেবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রসুলে করীম (সা.)-এর মাধ্যমে। দীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনো রকম সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রসুল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًاؕ ۰۰۳

অর্থ: ‘আজ আমি তোমাদের দীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’[4]

পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে,

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيّٖنَؕ ۰۰۴۰

অর্থ: ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী।’[5]

কাদিয়ানিরা কাফের

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রসুল হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বা অন্য কাউকে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত নবী মনে করে, চাই যে অর্থেই নবী মনে করুক না কেন, তাহলে সে মূলত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রসুল হিসেবে অস্বীকার করছে। প্রভুত্বের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক সাব্যস্ত করা সত্ত্বেও কেউ যদি মুখ দিয়ে কালিমা لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ  পড়ে তাকে যেমন কাফের বলা হবে, তেমনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য যে, তাঁকে আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী স্বীকার করার পর তাঁর পরের কোনো ব্যক্তিকে যদি কেউ নবী মেনে নেয়—তা যেকোনো ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েই হোক না কেন, সে যতই মুখে ‘মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ বলুক না কেন তাকে কাফের বলা হবে। পৃথিবীর সমস্ত ওলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, যে ব্যক্তি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী বা রসুল মনে করবে, তা সে যে অর্থেই মনে করুক, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। সে কাফের হয়ে যাবে। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানীসহ তার গোটা কাদিয়ানি সম্প্রদায় (কথিত আহমদি মুসলিম জামায়াত) কাফের হিসেবে গণ্য হবে।

কেউ মিথ্যা নবীর দাবি করলে, বিনাদলিলে তাকে প্রত্যাখান করতে হবে

কউ নুবুওয়াতের দাবি করলে তার থেকে এর দলীল-প্রমাণ জানতে চাওয়াও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নুবুওয়াতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার নামান্তর। কেউ যদি দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেয় যে, আমি প্রভু, আমি আল্লাহ; তাহলে আপনাদের কেউ কি তার দাবির পক্ষে দলীল-প্রমাণ জানতে চাইবেন যে, তুমি প্রভু হওয়ার দলীল কী? প্রমাণ দিয়ে তা সাব্যস্ত কর। কেউ জানতে চাইবে না। কেন? কারণ আপনার এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহ একজন। তিনি ব্যতীত আর কেউ প্রভু হতে পারে না, ইলাহ হতে পারে না, মাবুদ হতে পারে না। তাই এ ব্যক্তি যতই প্রলাপ বকুক না কেন, এর দ্বারা আমাদের বিশ্বাসে সামান্য চিড় ধরবে না। আমাদের ঈমানে সামান্য সন্দেহ সৃষ্টি হবে না। এমনকি আমরা তার কাছ থেকে কোনো দলীল-প্রমাণও শুনতে চাইব না। ঠিক তেমনিভাবে কেউ যদি নবীজী (সা.)-এর পর নুবুওয়াতের দাবি করে, তা যে শিরোনামেই করুক, যিল্লী শিরোনামে হোক বা বুরূজী শিরোনামে, এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের জন্য এটা জায়েয নয় যে, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, তোমার নুবুওয়াতের পক্ষে দলীল কী? কারণ তার মিথ্যাবাদী হওয়া তো এমনিতেই স্পষ্ট।

খতমে নুবুওয়াতে বিশ্বাস রাখা ফরজ

নবীজী (সা.)-এর ওপর ঈমান আনার সর্বপ্রথম দাবি হল, নবীজীকে সত্য মনে করা এবং তিনি যা কিছু বলেছেন সবকিছুর ক্ষেত্রে তাঁকে সত্যবাদী মনে করা। সুতরাং তিনি যে বলেছেন, «أَنَا ‌خَاتَمُ ‌النَّبِيِّيْنَ» (আমিই শেষনবী)[6]— একথাও সত্য মনে করে মেনে নেওয়া। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيّٖنَؕ ۰۰۴۰

অর্থ: ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী।’[7] অর্থাৎ আমার পয়গম্বর কোনো সাবালক পুরুষের বাপ নয়, সাবালক মহিলার বাপ বটে, সাবালক পুরুষের বাপ নয়। হুযুরের সন্তান যারা ছিলেন, তারা নাবালেক অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। জায়েদ ইবনে হারেসা (রাযি.) একজন সাহাবী ছিলেন। হুযুর (সা.) তাকে প্রতিপালন করেছিলেন। হুযুর (সা.)-এর পোষ্যপুত্র ছিলেন। আবার তার সাথে হুযুর (সা.)-এর ফুফাতো বোন হযরত যায়নব (রাযি.)-এর বিয়ে হয়েছিল। তাদের মধ্যে বনি-বনা না হওয়ায় তিনি তাকে তালাক দিয়ে দেন। সেই তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে হুযুর (সা.) নিজেই শাদি করেন। তখন কাফেররা বলতে লাগলো, নিজের ছেলের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এই নবী বিয়ে করলো। এটা কি রকম নবী? তাদের এই অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে আল্লাহ পাক বলেন, আমার পয়গম্বর কোনো সাবালক পুরুষের বাপ নন। যায়েদ তাঁর পোষ্যপুত্র। তিনি যায়েদের বাপ নন। সুতরাং তার স্ত্রীকে বিয়ে করলে কোনো অসুবিধা নেই। স্বয়ং আল্লাহ নিজেই তাদের মধ্যে এই বিয়ে সম্পাদন করেন।

মিথ্যা নবী সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী

কিন্তু রসুল (সা.)-এর ‘খতমে নুবুওয়াত’ তথা তাঁর সর্বশেষ নবী হওয়াকে অস্বীকারকারী কিছু মিথ্যুক কুলাঙ্গার যুগে যুগে প্রকাশিত হয়েছে। হাদীস শরীফে আছে,

«وَإِنَّهُ سَيَكُوْنُ فِيْ أُمَّتِيْ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابُوْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ».

‘আমার পরে ৩০জন ব্যক্তি নবী হিসেবে দাবি করবে, তাদের সকলেই দাজ্জাল-কাজ্জাব, মিথ্যাবাদী, আমি সর্বশেষ পয়গম্বর। আমার পরে কোনো নবী নেই। কিয়ামতের পূর্বে আর কোনো নবীর আগমণ ঘটবে না।’[8]

এটি ইসলামি আকীদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যুক মিথ্যা নুবুওয়াতের দাবি করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ সম্পর্কে নবী (সা.) তাঁর উম্মতকে যথাসময়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

«لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّىٰ يُبْعَثَ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ قَرِيْبًا مِنْ ثَلَاثِيْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُوْلُ اللهِ».

‘৩০জন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। তারা সকলেই দাবি করবে যে, সে আল্লাহর রসুল।’[9]

রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন,

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّىٰ تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْـمُشْرِكِيْنَ، وَحَتَّىٰ يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ، وَإِنَّهُ سَيَكُوْنُ فِيْ أُمَّتِيْ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابُوْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ».

‘আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নুবুওয়াতের দাবি করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোনো নবী আসবে না।’[10]

কাদিয়ানি সম্প্রদায় ইংরেজদের সৃষ্ট একটি ফিতনা

১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে যখন পুরো ভারতবর্ষ ইংরেজদের দখলে চলে গেল, তখন শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর সুযোগ্য সন্তান শাহ আবদুল আজিজ (রহ.) ফতওয়া দিয়েছিলেন যে, হিন্দুস্তান ‘দারুল হারব’ তথা ভারত উপমহাদেশ অনিসলামিক রাষ্ট্র হয়ে গেছে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জিহাদ করা ফরজ। এ ভারত উপমহাদেশকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সেই ফতওয়ার ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু হয়। সে আন্দোলনের ফলে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সাইয়েদ আহমদ বেরলভী (রহ.), শাহ ইসমাইল শহীদ (রহ.), শাহ আবদুল আজিজ (রহ.)-এর ফতওয়ার ভিত্তিতে যখন আন্দোলন শুরু করা হলো, তখন লাখো জনতা তাদের অনুসরণ করতে লাগল। তাই ইংরেজ সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। ভারতবর্ষ থেকে লন্ডনে জানানো হলো যে, ভারত উপমহাদেশে হয়ত আপনাদের ক্ষমতা আর টিকবে না। মহারানি ভিক্টোরিয়া লন্ডনে বুদ্ধিজীবীদেরকে ডেকে এক জরুরি সভা আহবান করলেন। ভারতবর্ষে কীভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যায়? তখন বুদ্ধিজীবীরা বলল, ‘ভারতবর্ষের মুসলমানরা নবীভক্ত। নবী জিহাদ করতে বলেছেন, তাই তারা জিহাদ করবেন। নবী বলেছেন,

«الْـجِهَادُ مَاضٍ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ».

‘কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে।’[11]

সুতরাং ভারতবর্ষের মুসলমানরা জিহাদ করবে। তাই এদেরকে প্রতিহত করা সহজ হবে না। তবে একটা পন্থা আছে। তা হলো, ‘আপনি যদি একটা নবী বানিয়ে দিতে পারেন, সেই নবী যদি বলেন যে, ‘এখন থেকে জিহাদ হারাম, তাহলে নবীর কথা মেনে জিহাদ বন্ধ করে দেবে। মহারানি ভিক্টোরিয়া বলেন, সেই নবী কাকে বানানো যায়? বুদ্ধিজীবীরা বলেন, ‘নবী এমন লোককে বনাতে হবে, যে ব্যক্তি ইংরেজিও জানে, আরবিও জানে। উভয় ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিকে নবী বানাতে হবে। আবার একটু পাগলও হতে হবে। পাগল না হলে নুবুওয়াতের দাবি করবে না। আবার এমন ফ্যামিলি থেকে বানাতে হবে, যে ফ্যামিলির সাথে ইংজের সরকারের সাথে অনেক দিনের ঘনিষ্ঠতা আছে। তখন তারা অনেক চিন্তা-গবেষণার পর একজন লোক আবিষ্কার করলো। সে ব্যক্তি হিসেবে মেধাবী। সে আরবিও জানে, ইংরেজিও জানে। তার ফ্যামিলির সাথে, তার বাপের সাথে, তার দাদার সাথে, ইংরেজ সরকারের সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা আছে। তাদেরকে ৫০টি ঘোড়া দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সে লোকটি হলো, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। ভারতের গুরুদাশ জেলার অন্তর্গত একটা জায়গা আছে, ‘কাদিয়ান’। সেখানে সে জন্মলাভ করেছে।

জিহাদের বিধান রহিত হওয়ার ঘোষণা

আল্লাহর কোনো নবী তার সমকালীন এমন কোনো ধর্মদ্রোহী শাসকবর্গ বা ক্ষমতাধর লোকের চাটুকারিতা, পদলেহন বা তল্পীবহন করতে পারেন না, যাদের প্রত্যক্ষ্য সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কুফর ও ধর্মহীনতা বিস্তার লাভ করে। উল্লেখ্য যে, ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী মানুষের মধ্যে ধর্মহীনতা, ধর্মদ্রোহিতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয় বিস্তারে যে ভূমিকা রেখেছে, পৃথিবীর মানবেতিহাসে তার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনি একটি দুষ্কর্মের পৃষ্ঠপোষক ইংরেজ সরকারের চাটুকারিতা করতে গিয়ে গোলাম আহমদ কোনোরূপ ত্রুটি করেনি। স্বয়ং গোলাম আহমদ তার ‘শাহাদাতুল কুরআন’ নামক বইয়ের পরিশিষ্টে ‘গভর্নমেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ’ শিরোনামের অধীনে এক জায়গায় বলেছেন, ‘এই (ইংরেজ) সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ আমার শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতন্ত্রীকে আবিষ্ট করে রেখেছে।’ তারপর সে লিখে, ‘আমি মাননীয় (ইংরেজ) সরকারকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমি এমনই আজ্ঞাবহ ও হিতাকাঙ্ক্ষী রয়েছি, যেমন আমার পূর্বসূরিরা ছিল।… আমি কামনা করি, আল্লাহ তাআলা এ সরকারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।’[12]

তেমনি সে বলে, আমি প্রতিশ্রুত ঈসা এবং আমার যুগে জিহাদের বিধান রহিত করা হয়েছে।

مسیح موعود کے وقت قطعاً جہاد کا حکم موقوف کر دیا گیا۔

‘মসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমদ)-এর আমলে জিহাদের বিধান সম্পূর্ণ মওকুফ করে দেয়ে হয়েছে।’[13]

آج سے دین کیلئے لڑنا حرام کیا گیا۔

‘আজ থেকে দীনের জন্য যুদ্ধ হারাম করা হলো।’[14]

یہ بات تو بہت اچھی ہے کہ گورنمنٹ برطانیہ کی مدد کی جائے اور جہاد کے خراب مسئلہ کے خیال کو دلوں سے مٹا دیا جائے۔

‘এ তো খুবই ভালো কথা যে, ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা করা হবে এবং জিহাদ করার মন্দ চিন্তা মানুষের মন থেকে দূর করা হবে।’[15]

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মানসিকভারসাম্যহীন ছিলো। তার ব্রেইনে সামন্য সমস্যাও ছিলো। তাই সে একটু একটু পাগলামিও করতো। কিছুদিন পর পর একেকটি অদ্ভুদ দাবি করতে লাগল। কখনো সে বলল, আমি ঈসা (আ.)। কিছুদিন পর বললো, আমি বিবি মরিয়ম (আ.)। একটা শাড়ি পরিধান করে বসে আছে। আর বলতে লাগলো, আমার হায়েয হচ্ছে!!! আমার পিরিয়ড হচ্ছে। আমি মেয়ে হয়ে গেছি। মূলত সে পাগল হয়ে গেছে। আশ্চর্য! পাগল কি নবী হতে পারে? কম্মিনকালেও নয়। কেননা আল্লাহ বলেন,

وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍۚ۰۰۲۲

‘তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সা.) কখনো পাগল নয়।’[16]

অথচ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছিলো একজন পাগল ব্যক্তি। সে নুবুওয়াতের দাবি করে, কিন্তু তার মাথা ঠিক নেই। তার ছেলের নাম বশীর আহমদ। বশীর আহমদ তার জীবনীতে লিখেন, আমার আব্বা খুব সরল ছিল, (আব্বাকে তো পাগল বলা যায় না) সেজন্য সে লিখেছে, আমার আব্বা খুব সরল। এমন সরল যে, মাঝে মাঝে আমার আব্বা সদরিয়া মনে করে আমার আম্মার ব্লাউজ গায়ে দিয়ে বাইরে বের হয়ে যেতো। মনে হয়, তার ছেলে বাপ হিসেবে তাকে পাগল বলছে না। অন্যথায় তার ওপর তাও প্রয়োগ করা যেতো। তিনি আরও লিখেন, আমার আব্বা শেরওয়ানি গায়ে দিতেন, ডায়বেটিস ছিল, শেরওয়ানির এক পকেটে গুড় (মিটা) রাখতো, অন্য এক পকেটে ডিলা রাখতো। ঘন ঘন পেশাব হতো। সুগার ডাউন হলে গুড় খেতে হয়। সেজন্য এক পকেটে গুড় আরেক পকেটে ডিলা। কিন্তু আমার আব্বা এত সরল ছিলেন যে, কোনো কোনো সময় পেশাব করে ডিলা মনে করে গুড় দিয়ে ডিলা করতেন, আবার কোনো সময় সুগার ডাউন হয়ে গেলে গুড় মনে করে ডিলা খেতেন।

سر بسر قول غلط اور سبھی کام غلط
دن غلط رات غلط صبح غلط شام غلط

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি নবী হিসেবে দাবি করে, সে তো কাফের, তাকে যদি কেউ বলে আপনি যে নবী তার প্রমাণ কী? এ রকম যদি বলে সেও কাফের। কেন তার কাছ থেকে যে প্রমাণ চাইবে? তাতে তো বুঝা গেল যে, রসুল (সা.) যে সর্বশেষ পয়গম্বর সেটি পরিপূর্ণ বিশ্বাস তার নেই। অন্যথায় তার কাছে দলীল কেন চাইবে? তাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘আপনি যে নবী তার প্রমাণ কি? এভাবে জিজ্ঞাসা করলেও সে কাফের হয়ে যাবে।

এক অদ্ভুদ অহী!

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী দাবি করলো, তার কাছে অহী নাযিল হয়। তার মুরিদান বলল, মাননীয় নবী, একটু অহী শুনান আমাদেরকে। কুরআন শরীফে আছে, وَالسَّمَآءِ ذَاتِ الْبُرُوْجِۙ۰۰۱। সে রকম অহী কি আপনার কাছে নাযিল হয়? তখন সে বলল, জী হ্যাঁ। এক্ষুণি নাযিল হবে। চোখ বন্ধ করে রাখে। কিছুক্ষণ পরে মাথা উঠিয়ে বলে, সে রকম একটা আয়াত আমার কাছে নাযিল হয়েছে। তারা জিজ্ঞাসা করলো, কী সেই আয়াত? তখন সে বলে, والنساء ذات الفروج। আমি কসম খাচ্ছি, সেসব মহিলার যাদের লজ্জাস্থান আছে। এটা হলো গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অহী!!!

মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত

মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে সংক্রান্ত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর একটি ভবিষ্যদ্বাণী আছে। এটি হলো, তার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছে। মির্জা গোলাম আহমদের এক আত্মীয় ছিল মির্জা আহমদ বেগ। ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী। অনিন্দ্য সুন্দরী মোহাম্মাদী বেগম তারই কন্যা। মির্জা গোলাম আহমদের মনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে। একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আহমদ বেগ সম্মত হননি। মির্জা গোলাম আহমদ মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা ঘোষণা করতে থাকে। একটি হল, মুহাম্মদী বেগম তার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে। দ্বিতীয়টি হল, কন্যার পরিবার যদি এতে অমত পোষণ করে তবে তারা নানা রকম বিপদ-আপদে আক্রান্ত হবে। মুহাম্মদী বেগমের ওপরও বিপদ নেমে আসবে। মির্জা গোলাম আহমদ এসব কথা তার চিঠিপত্র, বইপুস্তক ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, আহমদ বেগ যদি কোনো কাঁচা মানুষ হতেন তবে ভয়ে কন্যাদান করেই বসতেন। কিন্তু তিনি এসবে প্রভাবিত হননি; বরং তিনি নিজের অমতের ওপর অবিচল থাকলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, আর মির্জা গোলাম আহমদ মুহাম্মদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এক পর্যায়ে লাহোরের অধিবাসী সুলতান মুহাম্মদ নামক এক লোকের সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদ অনেক আশ্চর্য রকমের চেষ্টা-তদবির শুরু করে। যখন তার সকল চেষ্টা-তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে। তাতে সে বলে যে, যদি সুলতান মুহাম্মদের সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে হয়, তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবে। আর মুহাম্মদী বেগম বিধবা হয়ে তার বিয়ে বন্ধনে আসবে। আল্লাহর লীলা, সুলতান মুহাম্মদের সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ব ভবিষ্যদ্বাণী আরও জোরে চলতে থাকে। সে বলতে থাকে যে, এটা অদৃষ্টের অলঙ্ঘনীয় লেখা, কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। সুলতান মুহাম্মদ মারা যাওয়ার পর অবশ্যই মুহাম্মদী বেগম তার স্ত্রী হবে। যদি এটা না হয় তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে। (আঞ্জামে আথম ও তার যমীমা) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং তার দম্ভ, অহঙ্কার ও দাবিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৯০৮ সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ মারা যায় তখনও সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মদী বেগম জীবিত থেকে অতি সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এমনকি তার মৃত্যুর পর সুলতান মুহাম্মদ প্রায় ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। যার পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি দিন মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল। সুলতান মুহাম্মদ ১৯৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

হযরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহ.)-এর দাঁতভাঙা জবাব

আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহ.) গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি যে নবী তার কোনো প্রমাণ কুরআন শরীফে আছে? তখন সে বলে, জী, আছে। তখন তিনি বলেন, কোথায় আছে? দেখি, আয়াতটি পড়ুন তো। তখন সে বলল,

وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُوْلٍ يَّاْتِيْ مِنْۢ بَعْدِي اسْمُهٗۤ اَحْمَدُؕ ۰۰۶

ঈসা (আ.) বলেন, ‘আমি সুসংবাদ দিচ্ছি আমার পরে একটা নবী আসবে, তার নাম হবে আহমদ।’[17]

আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহ.) বললেন, ‘তুমি তো আহমদ নয়, গোলামে আহমদ (আহমদের গোলাম), ঈসা (আ.) তো বলছেন নবীর নাম হবে আহমদ। তখন সে বলে, আমার নামকে সংক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন- অনেক সময় মানুষে আবদুর রহমানকে রহমান বলে। সেরকম এখানেও গোলাম আহমদকে আহমদ বলা হয়েছে। প্রথম শব্দটা বাদ দেয়া হয়েছে। তখন আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহ.) বলেন, ‘তোমার নামের যেমন দুটি অংশ, তেমনি আমার নামেরও দুটি অংশ আছে। আমার নামের শুরু হলো আতা। আর শেষ হলো, আল্লাহ। আতা-উল্লাহ। আমিও আমার নামের প্রথম শব্দ বাদ দিয়ে আল্লাহ হয়ে গেলাম। যেমন তুমি গোলাম বাদ দিয়ে আহমদ হয়ে গেছো। আর আমি আল্লাহ বলছি, আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠাইনি।

سر بسر قول غلط اور سبھی کام غلط
دین غلط رات غلط صبح غلط شام غلط

কাদিয়ানিদের প্রতারণা

কাদিয়ানিদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা মুসলমান কি-না? তারা বলবে কেন? আমরা তো কালিমা পড়ি, لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ। তাহলে আমরা মুসলমান হবো না কেন? মনে রাখবেন এভাবে তারা মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করে থাকে। কাদিয়ানিরা খুব জোরালো কণ্ঠে কালিমা لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ পড়ে। তাদের গাড়ি-বাড়ি এবং সবকিছুর মধ্যে খুব বড় করে কালিমা লিখে রাখে, যেন সাধারণ মুসলমানরা ধোঁকা খায় যে, এরাও তো আমাদের মতোই কালিমা পড়ে এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে রসুল হিসেবে মানে। এটা সম্পূর্ণ ধোঁকা ও প্রতারণা। কারণ তারা যে مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ বলে, তার অর্থ হলো গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তারা বলে চৌদ্দশত বছর আগে যে মুহাম্মদ দুনিয়াতে এসেছিল সে পরিপূর্ণ মুহাম্মদ ছিল না, (নাঊযু বিল্লাহ)। তিনি ধর্মকে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সেজন্য আল্লাহ সে মুহাম্মদকে আবার পরিপূর্ণ মুহাম্মদ বানিয়ে গোলাম আহমদের ছবি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছে। তো ১৪ শত বছর আগের মুহাম্মদ অপরিপূর্ণ মুহাম্মদ। তাহলে তারা مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ যে বলেছে এর অর্থ হলো, গোলাম আহমদ রসুলুল্লাহ। পাকিস্তানে তাদের একটা অফিস আছে, সেখান থেকে ম্যাগাজিন বের হয় সে ম্যাগাজিনে শের লেখা হয়েছে,

محمد پھر اتر ائے ہیں ہم میں
اور آگے سے ہیں اپنی شان میں
محمد کو اگر دیکھے تو اکمل
غلام احمد کو دیکھے قادیان میں

বলা হয়েছে, পরিপূর্ণ মুহাম্মদ যদি দেখতে চাও, তাহলে কাদিয়ানে গিয়া গোলাম আহমদকে দেখ। সুতরাং তাদের لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ শুনে আপনারা ধোঁকা ও প্রতারিত হবেন না।

কাদিয়ানিদের সাথে আত্মীয়তা করা যাবে না

কাদিয়ানিদের সাথে আত্মীয়তা করা যাবে না। তাদের সাথে আত্মীয়তা করা হারাম। সারা বিশ্বের আলেমদের ফতওয়া হলো কাদিয়ানি কাফের। কাফেরদের সাথে বিয়ে শাদি কখনো জায়েয হবে না। ফতওয়ায়ে আলমগীরীয় আছে,

لَا يَجُوزُ نِكَاحُ الْـمَجُوْسِيَّاتِ وَلَا الْوَثَنِيَّاتِ وَسَوَاءٌ فِيْ ذَلِكَ الْـحَرَائِرُ مِنْهُنَّ وَالْإِمَاءُ، كَذَا فِي «السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ»، وَيَدْخُلُ فِيْ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ عَبَدَةُ الشَّمْسِ وَالنُّجُوْمِ وَالصُّوَرِ الَّتِيْ اسْتَحْسَنُوهَا وَالْـمُعَطِّلَةُ وَالزَّنَادِقَةُ وَالْبَاطِنِيَّةُ وَالْإِبَاحِيَّةُ وَكُلُّ مَذْهَبٍ يُكَفَّرُ بِهِ مُعْتَقِدُهُ، كَذَا فِيْ «فَتْحِ الْقَدِيْرِ».[18]

কাদিয়ানিরা গোলাম আহমদকে কেন মৃত্যুস্থানে দাফন করলো না?

সেজন্য আমি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম, ওখানে কাদিয়ানি তৎপরতা বেশি, তো আমাকে বক্তব্য রাখার জন্য বলা হলো, আমি বললাম, ‘কাদিয়ানিরা একটা ভুল করেছে। তারা তো গোলাম আহমদকে নবী মনে করে। আর নবী যেখানে মৃত্যু বরণ করেন সেখানেই দাফন করতে হয়। যেমন আমাদের পয়গম্বর মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.) যে দিন ইন্তেকাল করেন, সেদিন হুযুর (সা.)-কে কোথায় দাফন করা হবে তা নিয়া আলোচনা চলছে। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) বলেন, এ ব্যাপারে রসুল (সা.) হাদীস শরীফে বলে গেছেন, যে নবীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাকের নিয়ম হলো, নবী যে স্থানে ইন্তেকাল করেন তাকে সেখানেই দাফন করতে হয়। যেহেতু রসুলুল্লাহ (সা.) হযরত আয়িশা (রাযি.)-এর রুমে ইন্তেকাল করেছেন, তাই তাঁকে সেখান থেকে সরানো হয়নি। গোসল ও সেখানে দেয়া হয়েছে। জানাযাও সেখানে হয়েছে। হুযুরের জানাযার জামায়াত তো হয়নি। জানাযার জন্য জামায়াত শর্ত নয়। একজন দুইজন করে একাকী জানাযার নামাজ পড়েছেন। নবীদের ক্ষেত্রে এটিই হলো নিয়ম। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও যদি নবী হয়ে থাকে, তাহলে তাকে পায়খানায় কেন দাফন করা হলো না? বস্তুত ১৯০৮ সালের ২৬ মে কঠিন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে নাক-মুখ দিয়ে পায়খানা বের হওয়া অবস্থায় এ ভণ্ডনবীর ন্যাক্কারজনকভাবে লাহোরে নিজ কক্ষের টয়লেটে মৃত্যু হয়। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, কাদিয়ানিরা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় কেন দাফন করলো? তাহলে বুঝা যায়, কাদিয়ানিরা তাকে নবী হিসেবে মানে না।

নুবুওয়াতের ঘর তো পূর্ণ হয়ে গেছে, এখন সেই ইট পায়খানায় লাগাতে হবে

খতীবে আযম হযরত মাওলানা সিদ্দিক আহমদ সাহেব (রহ.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্যবোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রাসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রসুলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’[19]

এ হাদীস বর্ণনা করে খতীবে আযম (রহ.) বলেন, একটি ইটের জায়গা ছিল। সেখানে তো আমাদের পয়গম্বরকে দেওয়া হয়েছে। এখন গোলাম আহমদ যদি নবী হয়, গোলাম আহমদের ইট কোথায় রাখবে? জায়গা তো নেই। তো খতীবে আযম (রহ.) বলেন আমাদের দেশে যখন কেউ যদি ঘর বানায়, তখন যদি ইট কিছু অতিরিক্ত হয়, সেগুলো দিয়ে পায়খানা বানানো হয়। গোলাম আহমদের ইট যেহেতু অতিরিক্ত হয়ে গেছে, তাহলে (হয়ত) সেটা দিয়ে পায়খানা বানানো হয়েছে। সেজন্য সে পায়খানায় মারা গেছে।

তাই আজকে ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে; বিশেষভাবে আমাদের সকলের মুরব্বি হযরত আল্লামা আহমদ শফী সাহেব (রহ.) আমাদের মাননীয় সরকারকে অনুরোধ করেছেন, পাকিস্তানের মতো আমাদের দেশে যেন কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা না করলে মানুষ ধোঁকা খাবে। তাদের সাথে আত্মীয়তা করবে। হারাম হবে। যেনা-ভ্যাবিচার ইত্যাদি চালু হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রি তাদেরকে ডেকে ছিলো। আল্লামা আহমদ শফি সাহেব (রহ.)-এর দাবির ভিত্তিতে। তারা বলল যে, আমরা তো কালিমা পড়ি لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ তাদের মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ আর আমাদের মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ এর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান আছে।

শব্দ এক হলেও অর্থে বড় পার্থক্য রয়েছে

হুসাইন ইবনে মনসুর আনাল হক বহু বড় বুজুর্গ ছিলেন। তিনি ‘আনাল হক’ (আমি আল্লাহ) বলছেন আর ফেরাউনও ‘আনাল হক’ (আমি আল্লাহ) বলছে। ফেরাউন ‘আনাল হক’ বলে জাহান্নামে গেছে। আর হুসাইন ইবনে মনসুর ‘আনাল হক’ বলে বেহেশতে গেছে।

گفت فرعونے انا الحق شد ہلاک
گفت منصورے انا الحق گشت باغ

হুসাইন ইবনে মনসুরের আনাল হকের অর্থ হলো আমার কোনো অস্থিত্ব নেই, আমি আল্লাহর ভেতরে, ফেরাউনের আনাল হকের অর্থ হলো আল্লাহর কোনো অস্থিত্ব নেই, আল্লাহ আমার ভেতরে, (নাঊযু বিল্লাহ)। উভয়ই আনাল হক, কিন্তু অর্থের বেশকম আছে। এক বুজুর্গ শেষরাতে উঠে لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ জিকির করছেন আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। আবার বাজারবারে রাস্তার পাশে এক ভিক্ষুক বসে বসে لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ জিকির করে আর বলে, বাবা! আমাকে কিছু দেন? তার لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ-এর উদ্দেশ্য হলো ভিক্ষা করা। আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী (রহ.) বলেন,

آگدا گوید خدا از بہر جاں
متقی گوید خدا از عین جاں

বুজুর্গরা لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ বলে আল্লাহ পাওয়ার জন্য। আর ভিক্ষুকরা لَاۤ اِلٰهَ الَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ বলে দুনিয়া পাওয়ার জন্য। সুতরাং কাদিয়ানিদের মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ আর আমাদের মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ এক নয়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিতে চাই, তারা আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে। কারণ আপনি অনুসন্ধান করে দেখুন, তারা যে মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ বলে, এর অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে রসুলুল্লাহ বলা। তারা তাদের এ কথা বিভিন্ন কবিতায় উল্লেখ করেছে। যেমন-

غلام احمد ہے عرش رب اعظم
مکاں اس کا ہے گویا لا مکاں میں

গোলাম আহমদ বলে, আল্লাহর আরশই তার বাড়ি। যেন তার কোনো বাড়িই নেই। বস্তুত কেবলমাত্র আল্লাহরই বাড়ি নেই। এখন কি সেও আল্লাহ হয়ো গেলো? নাঊযু বিল্লাহ।

محمد پھر اتر ائے ہیں ہم میں
اور آگے سے ہیں اپنی شان میں
محمد کو اگر دیکھے تو اکمل
غلام احمد کو دیکھے قادیان میں

এখনই সর্বস্তরের

মুসলমানদেরকে সতর্ক হতে হবে

বর্তমানে আমাদের দেশে কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা খুব বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম টাউনে তাদের একটি মসজিদ আছে। আহমদিয়া মসজিদ। ঢাকাতেও একটি মসজিদ আছে, আহমদিয়া মসজিদ। তারা সরলমনা সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে কাদিয়ানি বানানোর চেষ্টা করছে। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং মুসলমানদেরকে এ ব্যাপারে সজাগ করতে হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় তারা তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। যেমন- উত্তরবঙ্গে পঞ্চগড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদিতে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামেও তাদের তৎপরতা অনেক। বিশ্বের বর্তমানে ৫৫টা দেশের রেডিও থেকে তাদের মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ

আমাদের মাননিয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করছি, আল্লামা আহমদ শফী সাহেব (রহ.) যে দাবি উত্থাপন করে গেছেন এর ভিত্তিতে, ওলামায়ে কেরামের দাবির ভিত্তিতে কাদিয়ানিদেরকে যেন অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। এটা বিশ্বের সমস্ত আলেমদের ফতওয়া। এখানে কোনো মতানৈক্য নেই। ওয়াহাবী-সুন্নীর মতভিন্নতা নেই। সব ওলামাদের ঐকমত্য যে, কাদিয়ানি কাফের। আল্লাহ পাক আমাদের প্রধানমন্ত্রির মাধ্যমে কাদিয়ানিদেরকে কাফের ঘোষণা করে ইসলামের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। আমরা সেটাই আশা রাখি। আমাদের মাননীয় এমপি সাহেব বিজ্ঞ সাংসদ আমার পাশে বসা আছেন। আামি তার কাছে অনুরোধ করবো, তিনি যেন সংসদে এ বিষয়টি নিয়া আলোচনা করেন। পাকিস্তানেও এমনি এমনি তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে হয়নি। মুফতি মাহমুদ সাহেব (রহ.) সংসদে এটি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক করেছেন। শেষ পর্যন্ত ভুট্টোর আমলে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

 

শ্রুতিলিপি

মুহাম্মদ সুহাইল বিন রশীদ কাসেমী

সম্পাদনা

মুহাম্মদ সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী

[1] আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা, ২:১৬৩

[2] আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা, ২:২৮৫

[3] আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা, ২:২৮৫

[4] আল-কুরআন, সূরা আল-মায়িদা, ৫:৩

[5] আল-কুরআন, সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৪০

[6] আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. 4, পৃ. 186, হাদীস: 3535

[7] আল-কুরআন, সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৪০

[8] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৪৯৯, হাদীস: ২২১৯

[9] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. 4, পৃ. 200, হাদীস: 3609

[10] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৪৯৯, হাদীস: ২২১৯

[11] আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত, দারুল হারামইন লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৫ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ৯৬, হাদীস: ৪৭৭৫

[12] মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, শাহাদাতুল কুরআন, পৃ. ৩

[13] মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, রূহানী খাযায়েন, খ. ১৭, পৃ. ৪৪৩

[14] মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, রূহানী খাযায়েন, খ. ১৬, পৃ. ১৭

[15] মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, রূহানী খাযায়েন, খ. ১৯, পৃ. ১৪৪

[16] আল-কুরআন, সূরা আত-তাকভীর, ৮১:২২

[17] আল-কুরআন, সূরা আস-সাফ, ৬১:৬

[18] (ক) মোল্লা নিযাম উদ্দীন, আল-ফতওয়ালা আল-হিন্দিয়া = ফতওয়ায়ে আলমগীরী, দারুল ফিকর, বয়রুত, লেবনান (তৃতীয় সংস্করণ: ১৩১০ হি. = ১৮৯২ খ্রি.), খ. ১, পৃ. 28১; (খ)ইবনুল হুমাম, ফাতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৮৯ হি. = ১৯৭০ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ২৩১

[19] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. 4, পৃ. 186, হাদীস: 3535

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ