বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল্লামা মুফতী শাহ আবদুল হালীম বোখারী (রহ): সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম

আল্লামা মুফতী শাহ আবদুল হালীম বোখারী (রহ): সংক্ষিপ্ত জীবন কর্ম

সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমি

 

হাকীমুল ইসলাম আল্লামা শাহ মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)। সুন্দর রুচিশীল আচরণ, বিনয় ও নম্র ব্যবহার, বড়দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও আকাবিরের অকুণ্ঠ আনুগত্য ইত্যাদি চারিত্রিক সৌন্দর্য ও উন্নত গুণাবলির অধিকারী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত, পরিস্থিতির যথার্থ অনুধাবন ও দূরদর্শিতামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণেই তিনি ছাত্রজীবন থেকে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্বের যোগ্য হয়ে উঠেন। সৃজনশীল পাঠদান পদ্ধতি, মনমুগ্ধকর উপস্থাপনা, দুর্বোধ্য বিষয়সমূহকে সহজভাবে ও সংক্ষেপে বুঝানোর বিস্ময়কর দক্ষতা, সকল শ্রেণির ছাত্রদের বোধগম্য ও উপকারী তাকরীর ইত্যাদি অনন্য বৈশিষ্ট্যাবলির কারণে ছাত্রদের হৃদয়-মনে ভালোবাসার স্থান অধিকার করে আছেন। বর্তমানে তিনি জামিয়ার শায়খুল হাদীস ও মুহতামিম। ইতিপূর্বে তিনি জামিয়ায় তিরমিযী শরীফের ঐতিহাসিক ভাষ্যকার ও জামিয়ার শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এ সময় তিনি শিক্ষা পাঠ্যক্রম উন্নয়নে বিশেষ ও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

২০০৮ ইংরেজি/১৪২৯ হিজরী থেকে অদ্যবধি তিনি জামিয়া প্রধানের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর জামিয়া পটিয়ার গৌরবোজ্জ্বল অতীত সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমানকে সমৃদ্ধ ও ভবিষ্যৎকে বর্ণিল করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিচালনায় জামিয়া পটিয়া এখনো বহুমুখী উন্নয়ন-উন্নতির ধারা অব্যাহত। তিনি আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি আরও বহু মাদরাসার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, উন্নয়নশীল ও সংস্কারধর্মী সংগঠনের পরিচালনা করে জাতির অনেক বড় খেদমত করেছেন। তাঁর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে ‘ফাতাওয়া আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া’ প্রকাশের আলো দেখছে। সেই ‘ফাতাওয়া’ গ্রন্থের দুটি খণ্ড প্রিন্টে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এর পূর্বেই তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেলন। বিগত ২০ জিলদক ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ২১ জুন ২০২২ ইংরেরি সকাল ১০ ঘটিকায় তিনি আমাদেরকে এতীম করে চলে যান, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তিনি চার ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান। এ বিরল ব্যক্তিত্বের জীবন ও কর্ম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

ইলমী জগতের এ কিংবদন্তি চট্টগ্রামের ‘লোহাগাড়া’ থানার অন্তর্গত ‘রাজঘাটা’ গ্রামে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারী মাসে একটি ঐতিহ্যবাহী ইলমী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মলাভ করেন। তাঁর পিতার নাম আল্লামা আবদুল গনী বোখারী (রহ.)। তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানের নাম রাখেন আবদুল হালীম। তার পরদাদা সাইয়েদ আহমদ বোখারী (রহ.) উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন।

মূলত বোখারা, সমরকন্দ, উজবেকিস্তান ও খোরাসানসহ বৃহত্তর রাশিয়া ছিল এক সময়ে ইসলামের উর্বর ক্ষেত্র। ইসলামের সোনালি যুগকে হারিয়ে যে এলাকাগুলো এখনো বুক থাবড়ে বিলাপ করে তার মধ্যে অন্যতম হল এসব এলাকা। ইসলামের মৌলিক খেদমত তথা হাদীস শাস্ত্রের সিংহভাগ খেদমত রচিত হয়েছে এ অঞ্চলগুলোতে। এ অঞ্চলগুলোতেই জন্ম হয়েছিল বহু বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও হাদীসবিশারদ এবং বিশ্ববিখ্যাত হাদীসগ্রন্থসমূহের প্রণেতাগণ। সে সোনালি যুগের ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে সেখানে। সে বোখারার বংশোদ্ভূত আল্লামা সাইয়েদ আহমদ আবদুল্লাহ শাহ বোখারী (রহ.) শত বছর আগে রাশিয়ার তৎকালীন ইসলাম বিদ্বেষী সরকারের রোষানলে পড়ে আপন মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে নবীজি (স.)-এর সে ঐতিহাসিক হিজরতের সুন্নত অনুসরণে বাধ্য হয়েছিলেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সীমানা এবং দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের রেঙ্গুনে, বর্তমান ইয়াঙ্গুনে এক মসজিদের ইমাম মাওলানা রাহাত আলী সাহেবের কাছে আশ্রিত হয়েছিলেন। তিনি এ মুহাজির আলেমের জ্ঞান-গুণ দেখে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ভক্ত হয়ে যান। ইমাম সাহেবের বাড়ি ছিল তখনকার ব্রিটিশের অঙ্গরাজ্য বর্তমান বাংলাদেশের লোহাগাড়া থানায়। তিনি ইয়াঙ্গুন থেকে নিজ গ্রামে ফিরে আসার সময় সে মুহাজির আলেমকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। লোহাগাড়ায় আসার পর তাঁর সাথে বিয়ে হয় ইমাম সাহেবের ঘনিষ্ঠা এক বিধবা আত্মীয়ার। সে ঘরে জন্ম হয় আল্লামা শাহ আবদুল গনী বোখারী (রহ.)। তিনি একজন বড় মাপের আলেম ছিলেন। ওয়াজ-নসীহত ও বাহাস-বিতর্কের মাধ্যমে শিরক-বিদআতের মোকাবিলায় তিনি ছিলেন অকুতোভয় ও নির্ভীক। দক্ষিণ চট্টলায় যাদের মেহনতে হক্বের প্রচার-প্রসার এবং দেওবন্দিয়তের চাষ ও সেচ হয়েছে, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি উর্দু, ফারসি এবং আরবি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর লেখায় এ তিন ভাষার মিশ্রণ থাকত। তাঁর হাতের লেখা ছিল মুক্তার মতো চমৎকার। তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একজন সুপরিচিত বক্তা এবং আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ হিসেবে সর্বশ্রেণির কাছে সমাদৃত ছিলেন। লোহাগাড়ার রাজঘাটা হোসাইনিয়া মাদরাসা এবং পদুয়া হেমায়েতুল ইসলাম মাদরাসার গোড়াপত্তনে তাঁর অবদান ও ভুমিকা ছিল অগাধ ও অপরিসীম। তিনি রাজঘাটা মাদরাসায় ২৪ বছর আওয়াল সাহেব তথা প্রধান উস্তাদ হিসেবে এবং পদুয়া মাদরাসায় ৪০ বছর মুহতামিম হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বাকপটুতায় ও দরস-তাদরীসে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি পটিয়া মাদরাসাসহ অনেক বড় বড় মাদরাসার শূরা সদস্য ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে হলেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার স্বনামধন্য প্রধান পরিচালক ও শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ মুফতী আবদুল হালীম বুখারী (রহ.)।

শিক্ষা-দীক্ষা

খ্যাতিমান এই ইসলামি চিন্তাবিদ লোহাগাড়া থানার অন্তর্গত রাজঘাটা হোসাইনিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন। অতঃপর উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দীনি বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় জামায়াতে দুয়ামে (আলিয়া দ্বিতীয় বর্ষ) ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে তিনি অত্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেন। জ্ঞানতাপস এই আদর্শ পুরুষ এতটুকুতে ক্ষান্ত হননি। জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণের স্বপ্ন নিয়ে অদম্য সাহসিকতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি আরও কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষাজীবন চালু রাখেন। এ ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৫ সালে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ‘বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে’ অধ্যয়ন করেন। অতঃপর সাতকানিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে আলেম ও ফাযিল এবং গোপালপুর মাদরাসা থেকে কামিলে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল কাগমারি এইচএসসি এবং ১৯৭৫ সালে বিএ পাশ করেন। এছাড়া তিনি লাহোর ডন হোমিও প্যাথিক কলেজে বাইও ক্যামিকের ওপর ২ বছর মেয়াদি কোর্স করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সবার সাথে সুন্দর রুচিশীল আচরণ, বিনয়, নম্র ব্যবহার, বড়দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ, আকাবিরের অকুণ্ঠ আনুগত্য ইত্যাদি চারিত্রিক সৌন্দর্য ও উন্নত গুণাবলির কারণে ছাত্রজীবন থেকেই সমাজে গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্ব লাভ করেন।

কর্মজীবন ও অধ্যাপনা

বিজ্ঞ এ হাদীসবিশারদ কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। প্রথমে তিনি ১৯৬৭-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় আরবি প্রভাষক হিসেবে খেদমত করেন। তারপর ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদরাসায়, অতঃপর ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পুনরায় টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদীস এর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে নিজ উস্তাদগণের আহবানে সাড়া দিয়ে চলে আসেন স্বীয় মাতৃকোড় উপমহাদেশের বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায়। দীর্ঘ ২০ বছর তিরমিজি শরীফের দরস প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি জামিয়ার শায়খুল হাদীস হিসেবে সহীহ বোখারী শরীফের দরস দিয়ে যাচ্ছেন। সৃজনশীল পাঠদান পদ্ধতি, মনমুগ্ধকর উপস্থাপনা, দুর্বোধ্য বিষয়সমূহকে সহজভাবে ও সংক্ষেপে বুঝানোর বিস্ময়কর দক্ষতা, সকল শ্রেণির ছাত্রদের বোধগম্য ও উপকারী তাকরীর ইত্যাদি অনন্য বৈশিষ্ট্যবলির কারণে ছাত্রদের হৃদয়-মনে ভালোবাসার স্থান অধিকার করে আছেন। তিন বছর জামিয়ার শিক্ষা সচিব ছিলেন। এ সময় তিনি শিক্ষা পাঠ্যক্রম উন্নয়নে বিশেষ ও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

মৃত্যু পূর্বে তাঁর কর্ম-ব্যস্ততা

২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ৩০ অক্টোবর ২০০৮ ইংরেজি মোতাবেক ২৯ শাওয়াল ১৪২৯ হিজরী থেকে মৃত্যু অবধি তিনি জামিয়া প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর জামিয়া পটিয়ার গৌরবোজ্জ্বল অতীত সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমানকে সমৃদ্ধ ও ভবিষ্যৎকে বর্ণিল করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ সুষ্ঠু পরিচালনায় জামিয়া পটিয়া এখনো বহুমুখী উন্নয়ন-উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। তিনি আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি আরও বহু মাদরাসার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নশীল ও সংস্কারধর্মী সংগঠনের পরিচালনা করে জাতির অনেক বড় খেদমত করে যান।

ডাকবাংলো সংলগ্ন আল-জামিয়া মার্কেট নির্মাণ

পটিয়া ডাকবাংলো সংলগ্নে আল-জামিয়ার কিছু জায়গা রয়েছে। একসময় সেখানে সবুজ-শ্যামল কলা বাগান ও মাছের প্রজেক্ট থাকলেও জামিয়া সেখান থেকে তেমন আর্থিক উপকৃত হতে পারেনি। আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) এই জায়গাকে উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন। মজলিসে এন্তেজামিয়ার পরামর্শক্রমে ২০০৯ সালে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। সেখানে প্রায় ৩৩টি দোকান রয়েছে। তেমনি জামিয়া রোডেও একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। বর্তমানে এ মার্কেটের দোকানপাট থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মতো আয় হচ্ছে। এভাবে আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) জামিয়ার আর্থিক উন্নয়নের পথগুলো সুগম করেন এবং জামিয়াকে ঋণমুক্ত করে আর্থিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।

নওমুসলিমদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ

২৬ জুলাই ১৯৯৮ ইংরেজি তারিখে ‘নও মুসলিম ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ গঠিত হয়। বিগত কয়েক বছরে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, মারমা ও চাকমা উপজাতির অনেক নারী-পুরুষ উক্ত ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পবিত্র ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত এবং তালিকাভুক্ত হন। তাদের একটি বড় অংশ জামিয়ায় অবস্থান করে শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করে থাকে। তাই নওমুসলিমদের জন্য একটি পৃথক ভবন নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসেন নও মুসলিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জামিয়া প্রধান হাকীমুল ইসলাম আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)। তিনি ২৬ মার্চ ২০১৬ ইংরেজি জামিয়ার অভ্যন্তরে নও মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটি ৬৫×৫৩=৩৪৪৫ স্কয়ার ফুট বিশিষ্ট। একতলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। তাঁর দিক নির্দেশনায় নও মুসলিমদের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে সুচিন্তিত ও একটি সুপরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রতিষ্ঠা

তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে জামিয়ার শিক্ষার্থীদেরকে কম্পিউটার ও প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লায় এটি আরম্ভ হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আল-জামিয়ার অভ্যন্তরে এটি চালু করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এটির কার্যক্রম পুরোদমে অব্যাহত থাকে। অতঃপর আল-জামিয়ার অভ্যন্তরে পোস্ট ই-সেন্টারে কম্পিউটার সেন্টার চালু হওয়ার পর এ বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সেখানেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

পাঁচতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দিত ছাত্রাবাস (জদীদ মনযিল-১) নির্মাণ

জামিয়ার মসজিদ ও লাইব্রেরি ভবন সংলগ্ন মাঠের পূর্ব পাশের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বিমান হামলার কারণে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছিল এবং জামিয়ার আবাসিক ছাত্র সংখ্যাও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ছাত্রাবাস সঙ্কট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে জামিয়া প্রধান আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) বহুতল বিশিষ্ট একটি দৃষ্টি নন্দিত ছাত্রাবাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১০ আগস্ট ২০১৪ ইংরেজি এর ভিত্তি প্রস্তর রাখা হয়। চারতলার কাজ সমাপ্ত হয় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ইংরেজি সনে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে পাঁচ তলার কাজ সমাপ্ত হয়। এটিই জামিয়ার পাঁচতলা বিশিষ্ট প্রথম ভবন। ১৬৩×২৯=৪৭২৭ ফুট স্কয়ার ফুটের এই ভবনটি নির্মাণে প্রায় এক কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ভবনটির প্রত্যেক ফ্লোরে ছাত্রদের জন্য পৃথক বাথরুম, প্রশস্ত বারান্দা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধা রয়েছে।

পাঁচতলা বিশিষ্ট সুরম্য ছাত্রাবাস (জদীদ মনঞ্জিল-২) নির্মাণ

জামিয়ার মসজিদের পূর্ব পাশের দ্বিতল ভবনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই জামিয়া প্রধান আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) মজলিসে এন্তেজামিয়ার পরামর্শক্রমে সেটি ভাঙ্গার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং তদস্থলে বহুতল বিশিষ্ট একটি সুরম্য ছাত্রাবাস নিমার্ণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এর ভিত্তি প্রস্তর রাখা হয়। ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ভবনের পূর্ণ কাজ সমাপ্ত হয়। এটিই জামিয়ার পাঁচতলা বিশিষ্ট দ্বিতীয় ভবন। ১৫০×৩০=৪৫০০ ফুট স্কোয়ার ফুটের এই ভবনটি নির্মাণে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ভবনটির প্রত্যেক ফ্লোরেও ছাত্রদের জন্য পৃথক বাথরুম, প্রশস্ত বারান্দা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে ভবনটির চতুর্থ তলায় রয়েছে জামিয়ার উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ ‘তাখাসসুস ফী উলূমিল হাদীস এবং পঞ্চম তলায় রয়েছে জামায়াতে পঞ্জুমের ছাত্রদের আবাসস্থল পঞ্জুমখানা।

আল-জামিয়া ওয়েবসাইট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দীনের প্রচার-প্রসার সমকালিন যুগের অন্যতম চাহিদা। এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে www.jamiahislamiahpatia.com নামে একটি ওয়েবসাইট খুলা হয়েছে। যা সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। মাওলানা জাফর সাদেক, মাওলানা রেজাউল করীম বোখারী এবং মাওলানা সলিমুদ্দিন মাহদি সূচনালগ্ন থেকে এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জামিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য, চিন্তা-চেতনা, পাঠ্যক্রম ও পাঠপদ্ধতি, জামিয়ার সংবাদ, জামিয়ার নোটিশ, সমকলীন জিজ্ঞাসা ও তার জবাবসহ জামিয়ার সকল প্রকার তথ্য ক্রমান্নয়ে (বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু) চার ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পাঠকগণ প্রতি মাসে জামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত-তাওহীদ, ত্রৈ-মাসিক (আরবি-ইংরেজি) ম্যাগাজিন বালাগুশ-শারক সহজে পড়ার সুযোগ লাভ করেন। তেমনি Jamiah islamiah patia “Offical” নামে একটি ফেসবুক ফেইজ খোলা হয়। যা উক্ত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ইত্তিহাদ ভবন নির্মাণ

আল-জামিয়ার সম্মেলন মাঠের উত্তর পাশে একটি পুরাতন দ্বিতল ভবন ছিল। ১৩৮৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে হিফজভবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আল্লামা শায়খ আলহাজ্ব ইউনুস সাহেব (রহ.)-এর পরিচালনাকালে তা নির্মিত হয়েছিল। জামিয়ার সুযোগ্য শিক্ষক, স্বভাবজাত কবি আল্লামা শহীদ দানেশ সাহেব (রহ.) ভবনটির প্রতিষ্ঠা সাল নির্ণয়পূর্বক ‘তারীখী নাম’ (ঐতিহাসিক নাম) বের করেন ‘মরগুবে আলম’ (জগতের কাঙ্ক্ষিত/সুদর্শন ভবন)। তিনি উক্ত ভবনকে উপলক্ষ্য করে কবিতার কটি চরণও লিখেন, যা ওই ভবনের নিচ তলায় একটি কামরার সামনে খুঁদাই করা অক্ষরে লিপিবদ্ধ ছিল।

عمارت حفظ کی ہے خوب منظر
مثال جنت الماویٰ زمیں پر
بناکا سال ہے مرغوب عالم (1389 ہجری)
خدایا اس کے بانی پر کرم کر

অর্থ: নির্মিত হলো হিফজভবন খুবই চমৎকার, পৃথিবীতে জান্নাতুল মাওয়া যেন দৃশ্যমান। নির্মাণের সাল হলো ‘মারগুবে আলম’ (জগতের কাঙ্ক্ষিত/সুদর্শন ভবন, তথা ১৩৮৯ হিজরী)। হে আল্লাহ, এর নির্মাতার ওপর দয়া করো।

ভবনটি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ২রা আগষ্ট ২০২১ ইংরেজি তারিখে ভেঙে ফেলা হয় এবং সেখানে আঞ্জুমনে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের জন্য একটি পৃথক ভবন করার পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমান জামিয়া প্রধান শায়খুল ইসলাম আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) অতিদ্রুত তা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়েছেন। একটি সুদর্শন ভবন নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়েছে।

ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ

২০২১ ইংরেজি মোতাবেক ১৪৪৩ হিজরী বাংলাদেশের দাওরায়ে হাদীস ফারেগীনের জন্য আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি ভিন্ন আঙ্গিকে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ। কাওমী মাদরাসা থেকে ফারেগ হওয়া শিক্ষার্থীদের দারুল উলুম দেওবন্দের আদলে ইংরেজি কথপোকথন ও লিখন যোগ্যতায় দক্ষ করার লক্ষ্যে ‘বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ’-এর নতুনভাবে ঢেলে সাজান বর্তমান জামিয়া প্রধান, হাকীমুল ইসলাম মুফতী আবদুল হালীম বুখারী (রহ.)। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যকে অতি সহজভাবে উপস্থাপন করে এই ভাষায় তাদেরকে দক্ষ ও পারদর্শী করার লক্ষ্যে ইংরেজি ভাষায় পাণ্ডিত্য আছে এমন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় এ বিভাগে।

তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা হযরতকে হক ও বাতিল নির্ণয় করার বিরল দক্ষতা প্রদান করেছেন। সাথে দিয়েছেন অদম্য সাহস ও অবিচলতা। সময়ের নবসৃষ্ট বাতিল ফিরকাসমূহের বিরুদ্ধে নির্ভীক চিত্তে প্রতিবাদ করে যান। তাতে বিরোধীদের সমালোচনা ও তিরস্কারের কোনো ধরনের তোয়াক্কা করেন না।

মাসিক আত-তাওহীদের প্রধান সম্পাদক

জামিয়া পটিয়ায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জামিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত-তাওহীদের প্রথমত সম্পাদক এবং পরবর্তীতে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন সেই ১৯৮২ সাথে থেকেই।

আঞ্জুমনে ইত্তেহাদুল মাদরিস বাংলাদেশের মহাসচিব

 ১৯৮৩ ইংরেজি থেকে অদ্যবধি জামিয়া পটিয়া কর্তৃক পরিচালিত আঞ্জুমনে ইত্তেহাদুল মাদরিস বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ড)-এর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৯ সনে প্রতিষ্ঠিত এ বোর্ডটি তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দক্ষ পরিচালনার কারণে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে।

বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি

‘বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থা’ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মূলক সংস্থা। সল্প সময়ে পবিত্র কুরআন হিফজ করার জন্য শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাজবীদ তথা বিশুদ্ধ পাঠভিত্তিক হিফজ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৩৯৬ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থা’ আত্মপ্রকাশ করে। মৃত্যু পূর্বে তিনি সংস্থার সভাপতি হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন।

ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশের সভাপতি

১৯৮৬ সনে দেশব্যাপী ইসলামী সম্মেলনের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ’। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারি জেনারেল। ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ ইংরেজি পর্যন্ত এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৬ হতে মৃত্যু অবধি তিনি এ সংস্থার সভাপতির মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যান।

ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর অবদান

ইসলামী অর্থব্যবস্থা বর্তমান সময়ের অন্যতম চাহিদা ও দাবি। আধুনিক অর্থব্যবস্থা যথাযথ অনুধাবন করে ইসলামী অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে তার সমাধান পেশ করা একজন বিজ্ঞ মুফতির অন্যতম দায়িত্ব। এই গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি শাহ জালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সুপারভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা

আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী (রহ.) কুতবে জমান আল্লামা মুফতী আজিজুল হক (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ হ্নীলার সাবেক শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক (ছদর সাহেব হুযুর রহ.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভে ধন্য হন। বর্তমানে তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরীদ রয়েছে। অনেকেই তাঁর আধ্যাত্মিক আলো পেয়ে তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভে ধন্য হয়েছেন।

তাঁর রচনাবলি

(১) তাসহিলুত তাহাবী (তাহাবী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ), (২) তাসহীলুত তিরমিযী (তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) ও (৩) তাসহীলুল উসূল, যা দরসের অর্ন্তভুক্ত।

মৃত্যু দাফন

বিগত ১৯ জুন ২০২২ বাদে মাগরিব এজমাজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে চট্টগ্রাম বিশেষায়িত হসপিটাল সিএসসিআর ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২০ জিলদক ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ২১ জুন ২০২২ ইংরেজি সকাল ১০ ঘটিকায় আমাদেরকে এতীম করে চলে যান, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আল্লামা বোখারী (রহ.)-এর নামাযে জানাযায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণ

টেকনাফ থেকে দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো মুসল্লিদের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয় আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আঞ্জুমনে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কাওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড)-এর মহাসচিব মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)-এর জানাযার নামায। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২১ জুন ২০২২ (মঙ্গলবার) রাত দশটায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মাদরাসার পরিচালক, শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আলেম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ তাওহীদী জনতা নামাযে জানাযায় অংশ নেন। জানাযার নামাযের ইমামতি করেন মরহুমের সাহেবজাদা মাওলানা রেজাউল করীম বোখারী-এর অনুরোধে জামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস মুফতী হাফেজ আহমদ উল্লাহ (হাফি.)।

জানাযা নামাযের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুফতী হাফেজ আহমদুল্লাহ (হাফি.) মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (রহ.)-এর বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মুফতী বোখারী জামিয়ার ১৪ বছর মুহতামিম থাকাকালীন যেমনি জামিয়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তেমনি একাডেমিকভাবেও অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রতিবছর জামিয়ার ছাত্ররা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। চলতি বছরেও (বোর্ডের সর্বোচ্চ সংখ্যা ১৪ জন ছাত্র) মেধাতালিকায় উর্ত্তীণ হয়ে জামিয়ার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে।

ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযা (হাফি.)

অতঃপর মুফতি আহমদুল্লাহ (হাফি.) বলেন, আমাদের এ কওমি মাদরাসাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে তদারকি করা হয়। আমাদের শিক্ষাবোর্ড আঞ্জুমনে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ প্রাচীনতম একটি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডের একটি লিখিত সংবিধান ও নীতিমালা রয়েছে। ইত্তেহাদের সংবিধানের ধারা নং ২০-এর (গ)-এ উল্লেখ রয়েছে, ‘মুহতামিম বা নির্বাহী মুহতামিমের দীর্ঘকাল অবর্তমানে নায়েবে মুহতামিম আর নায়েবে মুহতামিম পদ না থাকলে মুঈনে মুহতামিম মুহতামিমের বা নির্বাহী মুহতামিমের দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হবেন।’ সে হিসেবে আমাদের জামিয়ার বর্তমান নায়েবে মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা (হাফি.) পরবর্তী শুরার বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করবেন।

অতঃপর জামিয়ার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযা (হাফি.) সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের শোকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, অসংখ্য মুসল্লির এই সমাগমে অনেক মেহমানকে যথাযথ আপ্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বড় কষ্ট করে আপনারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আজকের এই উপস্থিতি জামিয়ার প্রতি আপনাদের আন্তরিকতার বর্হিপ্রকাশ। আশা করি আগামীতেও আপনাদের এ আন্তরিকতা বহাল থাকবে। আল্লাহ তাআলা আপনাদের এই কষ্টকে কবুল করুন এবং এর উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন।

অতঃপর মুফতী আবদুল হালীম বোখারীর বড় ছেলে মাওলানা রেজাউল করিম বোখারী (হাফি.) বলেন, আমার আব্বার এই দীর্ঘ কর্মজীবনে আপনাদের কারো সাথে যদি কোনো ধরনের মনমালিন্য হয়ে থাকে, বিশেষত ইত্তেহাদের বিভিন্ন শূরায় আব্বাকেই সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি কারো মনে কোনো আঘাত লেগে থাকে, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে আমার আব্বাকে আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। নামাযে জানাযা শেষে মাকবারায়ে আযীযীতে জামিয়ার সাবেক মুহতামিম আল্লামা নুরুল ইসলাম কদীম (রহ.)-এর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

ফরিয়াদ!

হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে তাঁর খেদমাত কবুল করুন। তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। তাঁর পরিবার পরিজনকে সবরে জমীল দান করুন। জামিয়ার উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা দান করুন, আমীন।

শিক্ষক: জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ