জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেধাবী ছাত্র হওয়ার কৌশল

মেধাবী ছাত্র হওয়ার কৌশল

শায়খ আবদুল্লাহ

আপনারা যারা শিক্ষার্থী আছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। এই নিবন্ধ থেকে আপনি মেধাবী ছাত্র হবার জন্য ২৭টি টিপস পাবেন। যার মধ্যে পাবেন,

  1. পড়া আমরা কেন ভুলে যাই
  2. পড়া মনে রাখার উপায়
  3. কৌশল
  4. পড়ার আগ্রহ বারানোর উপায়
  5. পড়ার পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত
  6. পাঁচটি জরুরি হ্যাঁ
  7. ছয়টি জরুরি না।

পড়া কেন ভুলে যাই

আগে জেনে নিন আমরা ভুলে যাই কেন। ভুলে যাওয়ার কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আমাদের নেতিবাচক প্রোগ্রামিং। আমরা মনে করি, আমরা মনে রাখতে পারবো না।

দ্বিতীয়ত আমরা মন দিয়ে জিনিসটি শিখি না এবং বার বার ঝালাই করি না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তথ্যগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার না করলে যেকোনো পড়ার এক দিনের মাথায়ই এর ৭৫% ভুলে যায় মানুষ।

তৃতীয়ত বিক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে শিখলে এবং টেনশন ও দুশ্চিন্তায় মন আচ্ছন্ন থাকলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। আর আপনার ভুলে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে যেভাবে আপনি শিখেছেন ঠিক সেভাবে মনে করতে না পারা। পরীক্ষার সময় প্রশ্ন একটু ভিন্নভাবে এলে আমাদের মনে করতে যে অসুবিধা হয় তা এ কারণেই। অথচ আমাদের সবারই মনে রাখার ক্ষমতা সমান। পার্থক্যটা হয় স্মৃতিকে চর্চা না করার ফলে। ব্রেনের এই মেমোরি ব্যাংকের কিন্তু কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। প্রতি সেকেন্ডে হাজার খানেক নতুন তথ্য গ্রহণের ক্ষমতা আছে এবং যত নতুন তথ্যই দেই না কেন সে কিন্তু ঠিকই এর জন্যে জায়গা করে দিচ্ছে। এবার তাহলে জেনে নিন মনে রাখার ক্ষমতাকে আপনি কীভাবে বাড়াতে পারেন।

যা আপনি মনে রাখতে চান তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন বা পড়ুন। একইসময় যদি একটা বিষয়েই মনোযোগ দেন তাহলে এটা সহজ হবে। আর মনোযোগহীনতার একটা বড় কারণ হলো আগ্রহের অভাব। এজন্যে মনোযোগ দিয়ে টিপসগুলো পড়ুন। যে তথ্যগুলো মনে রাখতে চান সেগুলোকে নির্দিষ্ট করুন এবং শুধু তাতেই মনোযোগ দিন। যেমন বইয়ের যে তথ্যগুলো আপনি নতুন দেখছেন বা কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলোই হবে আপনার মনোযোগের বিষয়। একটি বিষয়কে আপনি যত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং ব্যাখ্যা থেকে বুঝবেন তত এটি আপনার মনে রাখা সহজ হবে। পুরনো জানা তথ্যের সঙ্গে মিল-অমিল চিন্তা করে ভাববেন, তত আপনার মনে থাকবে। যেমন আপনি জানলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকের নাম হিপোক্রেটিস। প্রথমেই আপনার মনে হলো হিপোক্রেট একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হলো ভণ্ড বা প্রতারক। কিন্তু আপনার নতুন শেখা এই নামের সঙ্গে এ অর্থের কোনো মিল নেই। বরং উল্টোটাই প্রযোজ্য। কারণ এখনও চিকিৎসকরা পাশ করার পর যে শপথ নেন তাকে বলা হয় ‘হিপোক্রেটিক ওথ’ যার বক্তব্য হলো একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি রোগীকে সাধ্যমতো নিরাময় করার চেষ্টা করবেন, রোগীর গোপন কথা প্রকাশ করবেন না এবং সৎভাবে জীবন যাপন করবেন।

যা মনে রাখতে চান, তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামোয় রূপান্তরিত করুন। আংশিক না করে বিষয়টি পুরোপুরি শিখতে বা বুঝতে চেষ্টা করুন। মনে রাখার জন্যে প্রথমবার পড়ার ২/১ দিনের মধ্যেই পড়াকে রিভাইজ করুন। কোয়ান্টা রিডিং পদ্ধতিতে সুযোগ পেলেই চোখ বুলিয়ে নিন। এছাড়া ক্লাস শেষে নিয়মিত ক্লাসনোটে চোখ বুলান। মনে রাখার ক্ষেত্রে ছবির ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই কোনো জটিল বা ব্যাপক বিষয়কে ছবি, চার্ট বা ডায়াগ্রামে সাজিয়ে নিন। এছাড়া তৈরি করতে পারেন নানা ধরনের মনে রাখার ছন্দ। যেমন মুঘল সাম্রাজ্যের পরম্পরা বোঝাতে ‘বাবার হইল একবার জ্বর, সারিল ওষুধে’ ছড়াটি আওড়ালেই বাবর, হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব প্রমুখ মুঘল বাদশাহদের নাম একের পর এক বলে দেয়া যায়।

পড়া মনে রাখার উপায়

মানুষের মস্তিষ্কের দুটি দিক রয়েছে। একটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, অন্যটি পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের আবার অনেক ভাগ। এর সঙ্গে রয়েছে নানা রকম কাজ। তার একটি হলো মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি। পৃথিবীতে বেশি আইকিউ নিয়ে কেউ জন্মগ্রহণ করে না। তাদের ব্যবহারিক আচরণের ওপর নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ। যত চর্চা করা যাবে, আইকিউ ততই বাড়বে। সাধারণ আইকিউ ৯০ থেকে ১১০। তবে কারো কারো আইকিউ ১১০-এর ওপরে হতে পারে।

পৃথিবীতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আইকিউ ১১০-এর ওপরে। এ আইকিউ বৃদ্ধির জন্য চর্চার বিকল্প নেই। চর্চার মাধ্যমেই একজন ছাত্র সাধারণ থেকে মেধাবী হতে পারে। মনে রাখতে না পারার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন- আত্মবিশ্বাসটাই প্রধান: যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রধান ও প্রথম শর্ত হলো আত্মবিশ্বাস। নিজের মনকে বোঝাতে হবে যে, পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয়। আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াও সহজ মনে হবে।

পড়তে হবে বুঝে-শুনে

একবার পড়েই কোনো বিষয় মনে রাখা সহজ নয়। তাই যেকোনো বিষয় মুখস্ত করার আগে বিষয়টি কয়েকবার পড়ে বুঝে নিতে হবে। তাহলে সেটা মনে রাখা অনেক সহজ হবে। যেকোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে তা মনে রাখা কঠিন। তাই ভয় না করে প্রথম থেকে বুঝে পড়ার চেষ্টা করলে মনে রাখা কঠিন হবে না। পড়ার পাশাপাশি লেখার অভ্যাস খুবই জরুরি। পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত সময় বেছে নিতে হবে।

লেখাপড়ার জন্য কোন সময়টা বেছে নিতে হবে, তা একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ রাত জেগে পড়াশোনা করে, কেউ সকালটাকেই মুখ্য সময় হিসেবে বেছে নেয়। তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘুমের পর ভোরবেলাই পড়াশোনার উপযুক্ত সময় হিসেবে মনে করা হয়।

কৌশল অবলম্বন

পড়া মনে রাখা একটি কৌশল। কোনো একটি পড়া পড়ে নেয়ার পর সাতটি ভাগে ভাগ করতে হয় এবং প্রতিটি ভাগের জন্য এক লাইন করে সারমর্ম লিখতে হয়। ফলে পড়ার বিষয়টি সাতটি লাইনে সীমাবদ্ধ থাকে। এর প্রতিটি লাইন একটি পাতায় লিখে অধ্যায় অনুযায়ী একটি গাছ তৈরি করে গাছের নিচ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাতার মতো করে সাজাতে হবে, যাতে এক দৃষ্টিতেই পড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মনে পড়ে যায়। এ পাতাগুলোয় চোখ বোলালে লেখা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

পড়তে হবে শব্দ করে

পড়া মনে রাখার এটি একটি কার্যকর পন্থা। উচ্চঃস্বরে পড়লে শব্দগুলো কানে প্রতিফলন হয়ে তা মস্তিষ্কে সহজেই ধারণ করে। শব্দহীনভাবে পড়া হলে মনের মধ্যে অন্য চিন্তা ঢুকে পড়ে, পড়ার আগ্রহটা কমে যায়। ফলে পড়া মুখস্ত হয় না।

মনে রাখা

সাধারণত মেধাবী ছাত্রদের দেখা যায়, কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে তারা বিভিন্ন বই থেকে উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতো করে একটা নোট তৈরি করে। এটা খুবই ভালো পন্থা। এতে ওই বিষয় সম্পর্কে বারবার পড়ার কারণে তাদের নোট তৈরির সময়েই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা অর্জন করা সম্ভব হয়। পরে সেই বিষয়টি মনে রাখতে কোনো কষ্টই হয় না।

আরবি বা ইংরেজির অর্থ জেনে পড়া

আরবি বা ইংরেজি পড়া মুখস্ত করার আগে শব্দের অর্থটা জেনে নিতে হবে। অর্থ না জানলে পুরো পড়াটাই বিফলে যাবে। আর সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থ জানা থাকলে অবশ্যই উত্তর দেওয়া যায়।

মেধাবী ছাত্র হওয়ার ২৫টি টিপস

আগ্রহ

  1. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন, কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
  2. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।
  3. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে এক ঘণ্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
  4. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর পাঁচ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো পাঁচ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
  5. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দুই ফুট হওয়া উচিৎ।
  6. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
  7. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
  8. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক।

পরিবেশ

  1. পড়ার টেবিলটাকে রাখুন দেয়ালমুখো। ছবি, শো-পিস ইত্যাদি সবরকম জিনিস যা মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে সেগুলোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন।
  2. চেষ্টা করুন একই জায়গায় সবসময় পড়ার জন্যে। আর পড়ার টেবিলটাকে অন্য আর কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। একইভাবে বিছানায় শুয়ে বা বসে পড়ার অভ্যাস করবেন না।
  3. মোবাইল বন্ধ করে রাখুন। সাইলেন্স বা ভাইব্রেশনে রাখলে একবারে পড়া শেষ করে মোবাইল খুলুন।
  4. পড়ার জায়গায় পর্যাপ্ত আলো যেন থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়।
  5. পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসুন। যাতে বারবার উঠতে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়।
  6. বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ আপনার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কিনা খেয়াল করুন। তাকে এড়াবার জন্যে কৌশল অবলম্বন করুন।
  7. পড়ার জন্যে লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, রিডিং হল ইত্যাদি যেখানে আরো অনেকেই পড়ছে এবং পুরো পরিবেশটাই পড়ার জন্যে অনুকূল সেগুলোকে বেছে নিতে পারেন। আপনি মনোযোগী হতে পারবেন।

পাঁচটি জরুরি ‘হ্যাঁ’

  1. রুটিন কেবল দিনের মধ্যে সীমিত না রেখে একে সাপ্তাহিক এমনকি মাসিক কর্মসূচিতে পরিণত করুন। অর্থাৎ কাজের পরিধি বড় হলে যেমন (৩৫০ শব্দের রিপোর্ট) একে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলুন। শনিবার রিপোর্টের ভূমিকা, রবিবার প্রথম অংশ এভাবে এক সপ্তাহে কাজটি শেষ করুন।
  2. সময়কে ভাগ না করে কাজকে ভাগ করুন। সবকের জন্যে রওনা হওয়ার আগে আপনাকে বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে। গোসল, নাস্তা খাওয়া, আরবি-বাংলা পেপার পড়া এবং মাদরাসার পড়া তৈরি ও সবকের জন্য তৈরি হওয়া।
  3. দিন শেষে রুটিনটি নিয়ে একবার বসুন। যেগুলো করতে পারলেন না সেগুলোর পাশে লাল ক্রসচিহ্ন দিন। সেই সাথে পরদিন ওই না হওয়া কাজগুলো করার চেষ্টা করুন।
  4. নিজের প্রতি সদয় হোন। অনেকগুলো কাজ একদিনে করার মোট কতক্ষণ ব্যয় করছেন প্রতিদিন? খেয়াল রাখুন, আপনার পড়াশোনার সময় যেন এরচেয়ে বেশি অন্তত কম না হয়।
  5. দিনে যদি দুটো মহা মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে, যা করতেই হবে, তবে এর একটি যেন হয় মোরাকাবা বা মেডিটেশন। দেখবেন বাকি দিন ঠিকমতো কাটবে।

ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ‘না’

  1. একটানা কাজের রুটিন করবেন না। যেরকম বিকেল ৫.০০ থেকে রাত ৯.০০ পর্যন্ত পড়া। এরকম না করে প্রথম এক ঘণ্টা পর চা খাওয়ার পাঁচ মিনিট বিরতি, দ্বিতীয় ঘণ্টা পর পাঁচ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটির বিরতি রাখা যেতে পারে।
  2. পড়াশুনার ফাঁকে বিরতিতে টিভি দেখা, কম্পিউটার গেমস, ফেসবুক, বন্ধুকে ফোন এগুলো রাখা যাবে না।
  3. ভারি খাওয়া-দাওয়ার ঠিক পরপরই পড়তে বসবেন না। এতে মনোযোগ সমস্যা হয়।
  4. পরপর কয়েকদিন রুটিনে লাল দাগ পড়লে হতাশ হয়ে পড়বেন না।
  5. নিজের দৈহিক ছন্দের বিরুদ্ধে রুটিন করবেন না। যদি রাতে মাথা ভালো কাজ করে তবে রাতে পড়াশুনার সময় বেশি রাখুন। অন্যান্য কাজগুলো দিনে করার চেষ্টা করুন।

দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত প্রদানের গুরুত্ব ও বাস্তবায়ন থাকা চাই

মাহমুদুল হক আনসারী

পৃ. ২৩-এর ৩য় কলামের পর……..

করলো না তার নামাজ গৃহীত হবে না।’

ইসলাম একদিকে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে অক্ষম পিছিয়ে থাকা মানুষকে আশ্রয় প্রদানের মানসিকতা সৃষ্টি করতে চায়। আবার সমাজে এমন একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী গড়ে তুলতে চায় যা নিঃস্ব, দরিদ্র, অক্ষম, অসহায়, নিপীড়িত মানবতার সাহায্যের দায়িত্ব পালন করবে। ধনী-দরিদ্রের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।

এ মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে চিরন্তন ও শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম আইনগতভাবে গোটা দেশের সঞ্চিত সম্পদ থেকে ২.৫% এবং বাণিজ্যিক মূলধন থেকে বার্ষিক ২.৫% ভাগ যাকাত গ্রহণের নির্দেশ দেয়।

এছাড়াও গৃহপালিত পশু, স্বর্ণালংকার, খনিজ পদার্থ প্রভৃতির ওপরও বার্ষিক নির্দিষ্ট হারে যাকাত ধার্য করা হয়েছে। যাকাত হিসেবে সংগৃহীত এ গোটা সম্পদ ইসলাম গরিব-দুঃখী, অক্ষম, অসহায়, বন্যার্ত, বঞ্চিত, সামাজিক কর্মকাণ্ড, আর্ত-মানবতার সেবা এবং সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করতে ফরমান জারি করেছে। এটা এমন একটা সামাজিক বীমা যার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক দিক থেকে সামাজিক ভারসাম্য ফিরে আসা অনেকাংশেই সম্ভব।

গোটা দুনিয়ার মুসলিম সমাজে ইসলামের উল্লেখিত নির্দেশ যাকাতের বিধান প্রতিষ্ঠা হলে পৃথিবীর কোনো মুসলিম, দুঃস্থ ও দরিদ্র থাকবে না। ইসলামের যাকাতের বিধান পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশের প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি। দারিদ্র্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ধনী মুসলিমদের যাকাতের অর্থ সামাজিকভাবে প্রদান করা দরকার। পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মুসলিম দেশসমূহে যাকাত ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ থাকা উচিত। আজকের পৃথিবীতে অনেক মুসলিম দেশ অর্থবিত্তে ধনী। অপরদিকে অসংখ্য মুসলিম দেশের জনগণ অসহায় অনাথ দারিদ্র্য। তাদের জন্য সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা দরকার। এর মাধ্যমে গোটা পৃথিবী হতে মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক যাকাত বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার দারিদ্র্য পীড়িত মুসলিম সমাজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব।

লেখক: সংগঠক, গবেষক, কলামিষ্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ