ডা. আবদুল্লাহ
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। তরমুজের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় সকলের কাছে প্রিয় ফল তরমুজ। তরমুজে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি রয়েছে। যা আমাদের দেহের পানির চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। তরমুজে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি২ থাকায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন আমরা এখান থেকে পেয়ে থাকি। গ্রীষ্মকালীন ফল হওয়ায় এটি সকলের পানির চাহিদা পূরন করে।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজের পুষ্টিগুণ অনেক রয়েছে। এই ফলে ভিটামিন খনিজ উপাদান সকল কিছু রয়েছে। নিচে তরমুজের পুষ্টিগুণ দেওয়া হল। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে,
পানি : ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম,
আঁশ : ০.২ গ্রাম,
আমিষ : ০.৫ গ্রাম,
চর্বি : ০.২ গ্রাম,
ক্যালোরি : ১৫ থেকে ১৬ মি. গ্রাম,
ক্যালসিয়াম : ১০ মি. গ্রাম
আয়রন : ৭.৯ মি. গ্রাম,
কার্বহাইড্রেট: ৩.৫ গ্রাম,
খনিজ পদার্থ: ০.২ গ্রাম,
ফসফরাস : ১২ মি. গ্রাম,
নিয়াসিন : ০.২ মিলিগ্রাম,
তাছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি২ রয়েছে।
তরমুজের উপকারিতা
আমাদের সকলের কাছে প্রিয় ফল তরমুজ। খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি তরমুজের উপকারিতা রয়েছে অনেক। গ্রীষ্মকালীন সময়ে নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। নিচে তরমুজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
শারীরিক শক্তি বাড়ায়
টেক্সা এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত যারা শারীরিক শক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এই ফল শারীরিক শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়লে শরীরের শক্তি হ্রাস পায় তাই তরমুজের মৌসুমে বেশি করে এই ফলটি খেলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
চোখ ভালো রাখে
তরমুজে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিনয়েড। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যে সব লোক রাত কানা রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার মূল্যবান চোখ দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
পানিশূন্যতা দূর করে
তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি আছে। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।
ত্বক সজীব রাখে
তরমুজে বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বককে সজীব রাখে। পাশাপাশি ত্বকের যেকোনো সংক্রমণে প্রতিরোধি ব্যবস্থায় সাহায্য করে। লাইকোপিনসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে বার্ধক্য দেরিতে আসে। মুখে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
তরমুজে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরন করে।
কিডনি সুস্থ্য রাখেন
তরমুজের রস আমাদের কিডনির বর্জ্য মুক্ত করে। তাই কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকগণ ডাবের পানির পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি থাকায় কিডনি সচল রাখতে তরমুজ ভালো ভূমিকা পালন করে। অনেকটা পানির চাহিদা মেটায় গরম কালে তরমুজ।
শরীরের চর্বি কমায়
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড যা শরীরের কোলেস্টরেল ও চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া তরমুজে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের জমে থাকা কোলেস্টরেল কমাতে সহায়তা করে।
ব্যথা নিরাময় ও শরীরের টিস্যু সুরক্ষায়
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনি সি যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত,ব্যথা নিরাময়ে এবং ত্বক, দাঁত এবং মাংসপেশীর সুরক্ষায় প্রতিষেধক। ভিঠামিন সি আমাদের শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন। এই ভিটামিন মানব দেহে জমা থাকেনা। তাই নিয়মিত তরমুজ খেয়ে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে পারি।
স্নায়ু ও মাংসপেশী সুরক্ষায়
তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এটি প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে ইলেকট্রো পাওয়ার তৈরি করে যা শরীরের মাংসপেশী ও স্নায়ু সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।
হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন
সঠিকভাবে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজ হৃদযন্ত্রে সঠিকভাবে রক্তপ্রবাহ হতে সহায়তা করে। এতে হৃদযন্ত্রে ব্লক হওয়ার প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পেয়ে থাকে।
হাড় মজবুত করে
তরমুজ লাইকোপিনো নামক লাল উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম। তাই তরমুজ হাড় গঠন ও মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়ক।