আল্লামা সাঈদুল আলম আরমানী
الحمد لله وكفىٰ، والسلام علىٰ عباده الذين اصطفىٰ، والصلاة والسلام علىٰ رسوله المجتبىٰ، أما بعد! فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم: [قُلْ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اِنِّيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعَا ا۟لَّذِيْ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ١ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحْيٖ وَيُمِيْتُ١۪ فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَكَلِمٰتِهٖ وَاتَّبِعُوْهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ۰۰۱۵۸] {الأعراف: 158}
দক্ষিণ চট্টলার ঐতিহ্যবাহী দীনী বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার 83তম ইসলামী মহাসম্মেলনের এ অধিবেশনের সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত ওলামায়ে কেরাম ও শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বিগণ, সম্মানিত সুধীমণ্ডলী, প্রিয় যুবক-তরুণ ছাত্রভাইয়েরা, পর্দার আড়ালের মা ও বোনেরা! রব্বুল আলামীনের দরবারে এটি একটি বরকতময় মাহফিল। গোছালো আয়োজন।
চমৎকার এ দিনের আয়োজনে মঞ্চ থেকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ফরিয়াদ করি, আল্লাহ যেন আমার জুবান থেকে কিছু সহীহ শুদ্ধ কথা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার এবং কিছু কথার ওপর ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে সহীহ কথার ওপর আল্লাহ পাক যেন আমল করার তওফিক দান করেন, আমিন।
আমি আপনাদের সামনে কুরআনে করীম থেকে কিছু আয়াত ও রসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদীসের ভাণ্ডার থেকে অল্পকিছু হাদীস পাঠ করেছি। কুরআন ও হাদীসের ওপর নির্ভর করে এবং শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক অল্পকিছু বলার আল্লাহ যেনো তওফিক দেন বিশেষভাবে দোয়া করবেন। আপনাদের কাছ থেকে আমি অল্পকিছু বলে বিদায় নেব ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত হাজিরীন!
আপনারা গতকাল হতে কষ্ট সাধনার মাধ্যমে অনেক আল্লাহঅলা বুজুর্গও ওলামায়ে কেরামের মুখ থেকে যুগোপযোগী দীর্ঘ বক্তব্য শুনে আসছেন।
সম্মানিত সুধিমণ্ডলী!
প্রতিটি বস্তুর যেকোনো টার্গেট থাকে। আজকে আমার টার্গেট হচ্ছে, আমার মতো নালায়েকের জবান থেকে যা বের হবে আপনারা তা শুনে তার ওপর আমল করে যেন হেদায়েতের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যকেও হেদায়াতের প্রতীক বানায়।
সম্মানিত হাজিরীন!
সম্মেলনের পক্ষ হতে যেহেতু লম্বা সময় দেওয়া হয়নি, তাই উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসের আলোকে কিছু বলার চেষ্টা করব।
সম্মানিত সুধিমণ্ডলী!
ঠাণ্ডা মাথায় ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তাআলা রসুল (সা.)-কে সম্বোধন করে বলছেন যে, ‘হে আমার প্রিয় হাবীব (সা.)! আপনি মানবজাতিকে সম্বোধন করে বলে দিন, আমাকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে পৃথিবীর সমস্ত মাখলুকের জন্য রসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন। রসুল হিসেবে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ওদের সামনে আল্লাহর নাম নেবেন। কেননা আমার নাম না নেওয়া ব্যতীত মানুষ আপনাকে সম্মান করবে না। আর যখন আমার নাম নেবেন তখন মানুষ আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাবে। কারণ ঈমানদার মুত্তাকী-ফরহেজগার লোকেরা আমার প্রেমিক। মাশুক যেমন আশিকের কাছে প্রিয়। তেমনি মাশুকের পক্ষ হতে পাঠানোর দূতও আশিকের কাছে প্রিয়।’
মাশুকের প্রতিটি কাজ যেমন স্নেহ-শ্রদ্ধার সাথে মেনে নেয়। তেমনিভাবে মাশুকের পক্ষ হতে পাঠানো দূতের কাজ-কর্মও শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে আঞ্জাম দেই। এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রসুল (সা.)-কে বলেন, ‘হে আমার প্রিয় হাবিব! আপনি যখন উম্মতকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করবেন তখন আপনি উম্মতের সামনে নিজেকে রসুল হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে বলবেন যে, হে মানব সন্তান! আমাকে এমন সত্তার পক্ষ হতে রসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং সমস্ত জগতের পালনকর্তা ও মালিক। তিনি হচ্ছেন ঈমানদারের বন্ধু।’
সম্মানিত সুধিমণ্ডলী!
ব্যক্তির অনেক রকমের বন্ধু থাকে কেউ বা ধনী লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করে থাকে। বিপদের ভয়াবহ পরিস্থিতির সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিপদ থেকে আশ্রয় গ্রহণের জন্য টাকা-পয়সা জনবলের সহায়তার মাধ্যমে। আবার কেউবা এমপি-মিনিস্টারের সাথে বন্ধুত্ব করে থাকে দুশমনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
এবার কথা হলো কেবল আল্লাহ তাআলা আমাদের বন্ধু বললে হবে না। বরং আমার কিছু গুনাগুণ সম্পর্কে তাদের অবগত করে দিতে হবে। রসুল (সা.) বলেন,
الَّذِيْ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِۚ ۰۰۱۵۸
‘আমাকে রসুল হিসেবে মনোনীত করে সেই মহান সত্তা পাঠিয়েছেন যিনি হচ্ছেন আসমান-জমিনের প্রতিপালক।’
যার হুকুম ব্যথিত গাছের পাতা নড়ে-চড়ে না। তিনি যদি বলেন, আজ সূর্য উদিত হবে না তাহলে দিন রাতের কালো আঁধারে পরিণত হবে। কেননা মানুষকে যেকোনো ব্যক্তির ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত করলে মানুষ তাকে মানতে বাধ্য হয়। তদ্রূপ আপনিও যদি মানুষকে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত করবেন। তারা আমাকে এবং আমার বিধিবিধানকে মানতে বাধ্য হবে। আর আমার পঠানো রসুলকেও মানতে বাধ্য হবে। অতঃপর রসুল (সা.) বলেন,
«وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ».
‘তিনি কেবল ক্ষমতাবান বন্ধু নন! শেষ জমনায় মানুষ মানুষকে ভয় ও শ্রদ্ধা করবে।’[1]
মানুষের ওপর তার দাপট আছে বলে সমাজে তাকে সম্মান করে, তার বিরোধী আচরণ করে না। বিরোধী আচরণ করলে তার ওপর আক্রমণ হবে বলে জেল জুলুমের মাধ্যমে। মুসলমানগণ আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলে এবং তাঁর অনুগত করে কেবল ক্ষমতা আছে তার জন্য নয়। বরং তিনি সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। আসমান-জমিনের যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক হচ্ছেন তিনি। তিনি অদ্বিতীয় ও অসীম, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۪ ۰۰۱۵۸, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ঈমানদারের বন্ধু। তাই মুসলমানগণ তাঁর ওপর ঈমান আনে, তাঁর বিধান মেনে চলে এবং তাঁর অনুগত করে।
يُحْيٖ وَيُمِيْتُ۪ ۰۰۱۵۸ (তিনি হচ্ছেন জীবন ও মৃত্যুদাতা)। জীবন-মৃত্যু হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত পোকা-মাকড় গাছ-গাছালির জন্য একটি অতীব প্রয়োজন জিনিস। যে জিনিসের জীবননেই সে মৃত ব্যক্তির মতো। মৃত ব্যক্তি যেমন মানুষের কোনো কাজে আসে না। তেমনি যে জিনিসের জীবন নেই সেও মৃত ব্যক্তির মত। তা দ্বারা মানুষ কোনো উপভোগ করতে পারে না।
حيات হচ্ছে ظرف العمل আর موت হচ্ছে شرط العمل আমাল করার জন্য স্থান লাগবে। আর আমল করবে ওই ব্যক্তি যাদের মৃত্যু ও আখেরাতের বিশ্বাস আছে। যাদের মৃত্যু ও হাশর-নশরে আল্লাহর সামনে আমলনামা নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তার বিশ্বাস রাখে না তাদের আমলের প্রয়োজন নেই। আর যাদের বিশ্বাস আছে তাদের আমলের প্রয়োজন। কেননা কেয়ামতের দিন যার যত বেশি আমল অর্থাৎ সাওয়াব হবে তার হিসাব নিকাশ তত সহজ হবে। পরিশেষে চিরকালে জান্নাতের বাসিন্দ হবে।
আর যারা কেয়ামতের বিশ্বাস রাখে না তাদের ধারণা মতে দুনিয়াতে কোনো ভালো কাজের প্রয়োজন নেই, কেয়ামতের দিবসে আল্লাহর ফায়সালা মতে তারা চিরকালের জন্য জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, দুনিয়াটা আমার হাতে এমন তুচ্ছ যেমন শিশুদের কাছে খেলনা তুচ্ছ। অতঃপর মানুষ রসুল (সা.)-কে বলছেন, আচ্ছা আপনাকে যিনি পাঠিয়েছেন তিনি ক্ষমতাবান এবং হায়াত-মৃত্যুর মালিক। এখন আমাদের কি করণীয়? এর জবাবে আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলা বলেছেন,
فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ الَّذِيْ يُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَكَلِمٰتِهٖ ۰۰۱۵۸
‘তোমরা ঈমান আন সেই সত্তার ওপর যিনি আল্লাহর প্রিয় হাবীব রসুল (সা.)-কে রসুল হিসেবে মনোনীত করে পাঠিয়েছেন। মানুষের জন্য তাঁর ওপর ঈমান আনা ফরজ।’ এজন্যই সমস্ত মানুষের জন্য কর্তব্য যে নিজে অপরকে কোনো বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য প্রথমত তা নিজের মধ্যে পেতে হবে। যেমন অজু ছাড়া আযান দেওয়া মাকরুহ। আযান দেওয়ার জন্য অজু করা ফরজ। যে ব্যক্তি নিজে অজু করেনি সে এমন বস্তুর প্রতি কিভাবে আহ্বান করবে যার জন্য অজু ফরজ।
তদ্রূপ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান আনার আহ্বান করছেন প্রথমত তার ওপর কর্তব্য যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনা। রসুল (সা.) আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছেন, কিতাবুল্লাহর ঈমান রাখেন এবং আল্লাহর বিধি-বিধানকে মেনে চলেন। তাহলে প্রথমত আমাদেরও আল্লাহর ওপর ঈমান আনতে হবে। কিতাবুল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। রসুল (সা.)-এর শরীয়তের অনুসরণ করতে হবে।
রসুলে আরাবি (সা.) আল্লাহর বিধি-বিধান কিভাবে মানব তাও বলে দিয়েছেন। وَاتَّبِعُوْهُ ۰۰۱۵۸ বলে একথার দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন যে, হে মানবসন্তান! তোমরা নিজেদের সকল কাজের ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-কে অনুসরণ ও অনুকরণ করুন। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। যেভাবে রসুল (সা.) আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছেন। তোমরা নামাজ-রোজা ও হজ ইত্যাদি পালন করো যে পদ্ধতিতে রসুল (সা.) পালন করেছেন। সমস্ত কাজে তাঁর আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় নিজের সমস্ত কাজ বিফল হয়ে দাঁড়াবে।
কিতাবে এসেছে, আমলে সালেহ কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (1) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। (2) নিজের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা করা। (3) রসুল (সা.)-এর তরীকার অনুসরণ করা। উল্লেখিত শর্ত পাওয়া গেলে আমল কবুল হবে। অন্যথায় আমল কবুল হবে না।
لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ۰۰۱۵۸ অর্থাৎ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি আমার অনুসরণ করো নিশ্চয় হেদায়েত পেয়ে যাবে।’ অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর চলা অত্যান্ত সহজ হবে। হেদায়াতের অর্থ হচ্ছে إيصال إلى المطلوب অর্থাৎ নিজের আসল টার্গেট অর্জন হওয়া।
আজ আমাদের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে সমস্ত কষ্ট সাধনা ত্যাগ করে বহুদূর থেকে পটিয়ার মাহফিলে আসার মোল টার্গেট হচ্ছে, হুযুরদের ওয়াজ-নসিহত শুনে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম জেনে নেওয়া এবং পরকালে আল্লাহর দিদার অর্জন হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মানব-সন্তান! তোমরা যদি আমার প্রিয় হাবীব (সা.)-এর অনুগত্য করো তাহলে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই আমার মাহবুব হিসেবে গ্রহণ করে নেব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ۠ يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ ؕ ۰۰۳۱[2]
আর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে,
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَۙ۰۰۵[3]
অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি সীরাতে মুস্তাকিমের ওপর চলবে সে অবশ্যই আমি আল্লহকে পেয়ে যাবে। মানুষের কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। এর মধ্যে নির্ভরযোগ্য একটি হচ্ছে, আল্লাহকে ভালোবাসে নিজের সমস্ত কাজে তাঁকে সন্তুষ্টি করা। তেমনি যদি কোনো ব্যক্তির কাছে আল্লাহর ভালোবাসার সাথে সাথে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর অটল থাকাও পাওয়া যায়। সে অতীব সহজ পদ্ধতি আল্লাহ সুবহানা তাআলার প্রিয় হতে পারবে। তবে একটি কথা হচ্ছে যে, সিরাতে মুস্তাকিমের জন্য রসুল (সা.)-এর আনুগত্য লাগবে।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি নিজের নেক আমল দ্বারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না এবং জান্নাত অর্জন হবে না।’ একথা শুনে হযরত আয়েশা (রাযি.) বলে উঠলেন, وَلَا أَنْتَ ‘হে রসুল! আপনিও কি মুক্তি পাবেন না! অথচ আপনি সব সময় ভালো কাজের মধ্যে নিমজ্জিত থাকেন। নামাজ-রোজা ও হজ আদায়ের মাধ্যমে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনার আগে-পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
وَضَعَ يَدَهُ عَلَىٰ هَامَتِهِ، وَلَا أَنْتَ وَلَا أَنْتَ وَلَا أَنْتِ.
অর্থাৎ রসুল (সা.) মাথায় হাত রেখে বলছেন, আমিও না, আমিও না। আমিও আমলকে মাধ্যম করে জান্নাতে যেতে পারব না এবং জাহান্নামের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পারবো না। وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللهُ مِنْهُ بِرَحْمَةٍ কিন্তু সেদিনও যদি আমাকে আল্লাহর রহমতে ধারায় ব্যেষ্টন করা হয়-জাহান্নামের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তিপেতে পারি।[4]
আল্লাহর রহমত পাবো কিভাবে!!! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজে বলে দিচ্ছেন,
لَقَدْ تَّابَ اللّٰهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهٰجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُ فِيْ سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْۢ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيْغُ قُلُوْبُ فَرِيْقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ١ؕ اِنَّهٗ بِهِمْ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌۙ۰۰۱۱۷[5]
অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুহাজির ও আনসারদের সাথে রহমতের মামলা করেছেন। কেননা তাঁরা নিজের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধি-বিধানকে মেনে রসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করেছেন। বিশেষভাবে তবুকের যুদ্ধে যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে তুমোল যুদ্ধ চলছিলো। তখনও রসুল (সা.)-এর সুন্নতের অমান্য করেনি, বরং তখনও রসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করেছেন। আল্লাহু আকবার।
সম্মানিত সুধী!
বিশেষভাবে আর একটি কথা হচ্ছে হেদায়েত। হেদায়েত এটি একটি ব্যপক শব্দ। যার মধ্যে আল্লাহর সমস্ত বিধিবিধান রয়েছে। হেদায়েতকে চেনার মতো করে চিনেছেন, জানার মতো জেনেছেন আল্লাহর অলী-বজুর্গরা। তাঁদের মধ্যে পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা আযীযুল হক (নাওয়ারাল্লহু মারকাদাহু) একজন। মুফতি সাহেব (রহ.) বলেছেন,
بتا ہمکو تیری راہ کس طرح ہے
تری راہ پر چلا ہمکو خدایا
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার সঠিক ঠিকানা দাও এবং আমাকে আপনার সঠিক পথের ওপর চলার তওফিক দিন!’
بزرگی کی نہیں ھمکو ضرورت
غلام اپنا بنا ہمکو خدایا
‘হে আল্লাহ! আমার বুজুর্গির কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে আপনার গোলাম হিসেবে কবুল করে নিন।’
সম্মানিত সুধী!
বুজুর্গ দামি না গোলাম দামি? শ্রোতা বললো, ‘বুজুর্গ’। না না, মুসলমান! হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করুন। বুজুর্গের চেয়ে গোলাম বেশি দামি। কেননা গোলাম বলে, বুজুর্গির শেষ চূড়ান্তে পৌঁছে যাওয়াকে। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে শরীফের যেখানে যেখানে বান্দর ওপর রহম-করম ও মায়া-মমতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে নবী বলে আখ্যায়িত করেননি, বরং আবদ তথা গোলাম বলে বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتٰبَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًاؕٚ۰۰۱[6]
سُبْحٰنَ الَّذِيْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَى الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِيْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِيَهٗ مِنْ اٰيٰتِنَاؕ ۰۰۱[7]
এজন্যই মুফতি সাহেব (রহ.) বলতেন,
بزرگی نفس کی خواہش ہے اپسوس
تکبر سے بچا ہمکو خدایا
جسے چاہے تو دے دنیا کی دولت
ہمیں مست عبادت کر خدایا
আরও বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেছে,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ۰۰۵۶
‘আল্লাহ তাআলা জিন ও মানব জাতি এমনি সৃষ্টি করেননি। বরং কেবল আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার জন্য।’[8]
কিতাবের ভাষায় ইবাদত বলে,
اسم جامع لما يحبه الله ويرض من قول وفعل ظاهرة وباطنة.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে এই পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তার ওপর আমল করার তওফিক দান করুন। আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.
আলোচক: মুহাদ্দিস, মাদরাসায়ে হোসাইনিয়া রাজঘাটা, লোহাগাড়া
অনুলিখন: আতাউল্লাহ
জামায়াতে দুয়াম
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
[1] আত-তিরমিযী, আল-জামিউস সহীহ = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৩৯৫ হি. = ১৯৭৫ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৪৯৫, হাদীস: ২২১১
[2] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:৩১
[3] আল-কুরআন, সুরা আল-ফাতিহা, ১:৫
[4] আল-বায়হাকী, আদ-দা’ওয়াতুল কবীর, গিরাস লিন-নাশর ওয়াত-তাওযী’, কুয়েত (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৯ হি. = ১৯৮৯ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৪৬, হাদীস: ৫৩০
[5] আল-কুরআন, সুরা আত-তাওবা, ৯:১১৭
[6] আল-কুরআন, সুরা আল-কাহফ, ১৮:১
[7] আল-কুরআন, সুরা আল-ইসরা, ১৭:১
[8] আল-কুরআন, সুরা আয-যারিয়াত, ৫১:৫৬