আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী
[বিগত ৩রা ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দে চন্দনাইশ থানার অন্তর্গত খাগরিয়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন হাকীমুল ইসলাম আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী (হাফিজাহুল্লাহ)। বক্তব্যটি অনুলিখন করেছেন জামিয়ার শিক্ষক, মাওলানা সোহাইল ইবনে রশীদ কাসেমী। প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এবং জরুরি সম্পাদনা করে মাসিক আত-তাওহীদের পাঠক সমীপে পেশ করা হলো—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী]
الحمد لله نحمده، ونستعينه، ونستغفره، ونؤمن به، ونتوكل عليه، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا، ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إلٰه إلا الله، وحده لا شريك له، وأنا أشهد أن سيدنا مولانا محمد عبده ورسوله، صلى الله تعالىٰ عليه وعلىٰ آله وأصحابه، وبارك وسلم تسليما كثيرًا كثيرًا، أما بعد! أعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمٰن الرحيم، [اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّاُولِي الْاَلْبَابِۚۙ۰۰۱۹۰ الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ١ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا١ۚ سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ۰۰۱۹۱] {آل عمران: 190 – 191} – صدق الله العظيم.
মুহতারম ওলামা কেরাম ও বেরাদারানে ইসলাম!
তিলাওয়াতকৃত আয়াতে আল্লাহ পাক বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দিয়েছেন। প্রকৃত ‘বুদ্ধিজীবী’ হলো তাঁরা, যাদের নিকট বিবেক-বুদ্ধি রয়েছে, সেই বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে জীবন যাপন করেন এবং বুদ্ধির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এমন গুণাবলি যাঁদের নিকট বিদ্যমান, মূলত তাদেরকেই বলা হয় প্রকৃত বুদ্ধিজীবী।
বর্তমান সমাজে ‘বুদ্ধিজীবী’ মনে করা হয় নাস্তিক-মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহী কিছু মানুষকে। ড. আহমদ শরীফ, তাসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, কবি শামসুর রহমান, সালমান রুশদি প্রমুখ। এদের মতো ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদেরকে বুদ্ধিজীবী মনে করা হয়। অথচ যে বুদ্ধিজীবী নিজের সৃষ্টিকর্তা-খালিক ও মালিক, রাব্বুল-আলামিনকে চিনে না, আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে; সে কীভাবে বুদ্ধিজীবী হবে?! এমন লোক কখনও বুদ্ধিজীবী হতে পারে না। মহান আল্লাহ তাআলা প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দিয়ে বলেন,
الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ ۚ ۰۰۱۹۱
অর্থাৎ যারা দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহর যিকর করেন, বসা অবস্থায়ও আল্লাহর যিকর করেন, শুয়ে শুয়েও আল্লাহর যিকর করেন এবং যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিজগত নিয়ে গবেষণা করেন, তারাই হলেন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِۚ ۰۰۱۹۱
অর্থাৎ তারা আসমান ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করেন। হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কি জান, আসমান ও জমিনের মাঝে দূরত্ব কত? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রসুলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, আসমান ও জমিনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। এভাবে এক আসমান হতে অন্য আসমানের দূরত্ব হচ্ছে ৫০০ বছরের পথ। প্রতিটি আকাশের পূরুত্ব বা ঘনত্ব (পুরু ও মোটা) ৫০০ বছরের পথ। সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার তলদেশ ও উপরিভাগের দূরত্ব হল আকাশ ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তাআলা তার ওপর সমাসীন আছেন। আদম সন্তানের কোনো কর্মকাণ্ডই তার অজানা নয়। (সুনান আবু দাউদ: ৪৮২৩ ও মুসনাদে আহমদ: ২০৬ ও ২০৭)
আল-বিদায়া ওয়ান–নিহায়া গ্রন্থে বিখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর (রহ.) উল্লেখ করেছেন (সংক্ষেপে): ইমাম আহমদ (রহ.) আব্বাস ইবনে মুত্তালিব (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, …পৃথিবী থেকে আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের দূরত্ব। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের দূরত্ব। প্রতিটি আকাশ ৫০০ বছরের দূরত্ব পরিমাণ পুরু …। (সংক্ষিপ্ত) ইমাম আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও ইমাম তিরমিযী (রহ.) হযরত সিমাক (রাযি.) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী (রহ.) হাদীসটি হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। এ দূরত্বের হিসাব দ্রুতগামী ঘোড়া না থেমে টানা ৫০০ বছর চলার কথা বিভিন্ন হাদীসসমূহে উল্লেখ হয়েছে।
আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা কে?
কবি বলেন,
مہندس بسے جوید از راز شاں
نداند کہ کردست آغاز شاں
অর্থাৎ বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকৌশলীরা অনেক গবেষণা করলো যে, আসমান কে সৃষ্টি করল, আসমানের সূচনা কোথায় থেকে হয়েছে, কোথায় গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে? কিন্তু এখনো তারা এগুলো আবিষ্কার করতে পারেন নি। এই বিরাট আসমান, এই বিশাল পৃথিবী; নিঃসন্দেহে এর একজন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন। তিনি হলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, আসমান নিয়ে গবেষণা করো, উপরের দিকে তাকালে একটি সূর্য দেখতে পাবেন, একটি চন্দ্র দেখতে পাবেন এবং দেখবেন, লক্ষ লক্ষ তারকা ও নক্ষত্র। বলুন তো, এগুলো কে সৃষ্টি করেছেন? এবং এগুলো কে পরিচালনা করেন? আল্লাহ নিজেই এর উত্তর দিয়েছেন,
وَالسَّمَآءَ بَنَيْنٰهَا بِاَيْىدٍ وَّاِنَّا لَمُوْسِعُوْنَ۰۰۴۷ وَالْاَرْضَ فَرَشْنٰهَا فَنِعْمَ الْمٰهِدُوْنَ۰۰۴۸[1]
আল্লাহ পাক বলেন, আসমান আমার হাতে বানিয়েছি। আমার কুদরতের হাতে আসমান বানিয়েছি এবং প্রশস্ত করে বানিয়েছি। জমিনকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি। এই জমিন থেকে যত জিনিস বের হয় যেমন ফল-মূল এই জমিন থেকে বের হয়। ধান-চাল এই জমিন থেকে বের হয়। গম-যব এই জমিন থেকে বের হয়। লোহা-পিতল এই জমিন থেকে বের হয়।। তেল-গ্যাস এই জমিন থেকে বের হয়। পেট্রোল-অকটেন এই জমিন থেকে বের হয়। স্বর্ণ-রূপা এই জমিন থেকে বের হয়। সেই জমিনের মালিকই হলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা আসমান-জমিন নিয়ে গবেষণা করেন এবং আল্লাহর যিকর করেন, তারাই হলেন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। لا اله الا الله محمد رسول الله।
পৃথিবীর উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূলনায়ক কে?
আমেরিকা মনে করে, আমাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। ব্রিটেন মনে করে, আমাদের দ্বারা পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। জার্মানি মনে করে, আমাদের দ্বারা জগতের সমৃদ্ধি হচ্ছে। চীন মনে করে, আমাদের দ্বারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। আর রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّىٰ لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ اللهُ».
‘যতক্ষণ পর্যন্ত ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকর থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না।’[2]
তাই বুঝা যায়, আসমানকে টিকিয়ে রাখছে আল্লাহ পাকের যিকর। এই জমিনকে টিকিয়ে রাখছে আল্লাহ পাকের যিকর এবং কেয়ামতকেও ঠেকিয়ে রাখছে আল্লাহ পাকের যিকর। যখন ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলার মতো একজন লোকও পৃথিবীতে থাকবে না, তখন আমেরিকা বলেন, ব্রিটেন বলেন, জার্মানি বলেন, চায়না বলেন, আসমান বলেন, জমিন বলেন; কিছুই থাকবে না।
বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করে আর আলেমরা ভোগ করে, এমনটি কেন?
আমাদের হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব হুজুর (রহ.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো। হুজুর-আপনারা তো কিছুই আবিস্কার করেননি। বৈজ্ঞানিকরা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন। আপনারা তো কেবল ভোগ করে যাচ্ছেন। তখন বোয়ালভী সাহেব হুজুর (রহ.) বলে ছিলেন, আরে ভাই! মুচিরা জুতা বানায়, আর চৌধুরী সাহেবরা সেই জুতা ব্যবহার করে; চৌধুরী সাহেব নিজে কিন্তু জুতা বানায় না। এই সমস্ত বৈজ্ঞানিকরা তো মুচির মতো। তাঁরা সবকিছু আবিষ্কার করবে আর আমরা হলাম চৌধুরী সাহেব। আমরা সেগুলো ব্যবহার করবো। মূলত আল্লাহঅলারা যিকর না করলে, আসমান-জমিন ঠিক থাকবে না। আর আসমান-জমিন যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আমেরিকা থাকবে না, ব্রিটেন থাকবে না, জার্মানি থাকবে না, চায়না থাকবে না; কিছুই থাকবে না। যিকরের কারণেই আল্লাহ পাক আসমান-জমিনকে টিকিয়ে রেখেছেন।
যিকর ত্যাগ করলে জীবনে অশান্তি নেমে আসে
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ اَعْمٰى ۰۰۱۲۴[3]
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার যিকর থেকে যারা বিমুখ হবে, فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا তারা সারা জীবন টেনশন ভোগ করবে। আল্লাহ পাকের যিকর যার কাছে নেই, সে আজীবন দুঃখ ভোগ করবে। পরিবার নিয়ে টেনশন, ছেলে-সন্তান নিয়ে টেনশন, ছেলের বউ নিয়ে টেনশন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে টেনশন, ব্যবসা নিয়ে টেনশন; সবকিছুর মূল হলো আল্লাহর যিকর বন্ধ করে দেয়া এবং আল্লাহকে স্মরণ করে না।
কুরআন তিলাওয়াত জীবন সমস্যার অন্যতম সমাধান
কুরআন তিলাওয়াত করবেন। কেননা কুরআনের তিলাওয়াতও এক প্রকারের যিকর। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ۰۰۹
এ যিকর তথা পবিত্র কুরআন আমি নাযিল করেছি এবং আমিই এই কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত হেফাজতে করব।[4] যিকরের একটি উত্তম পদ্ধতি হলো কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা। কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক সকল সমস্যা সমাধান করে দেন। যেমন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
«مَنْ قَرَأَ يٰسٓۚ۰۰۱ فِي صَدْرِ النَّهَارِ، قُضِيَتْ حَوَائِجُهُ».
‘সূরা ইয়াসীন দিনের শুরুতে একবার যদি কোনো ব্যক্তি পাঠ করে, তাহলে তার সারাদিনের প্রয়োজন আল্লাহ পাক পূর্ণ করে দেবেন।’[5] সুবহানাল্লাহ!
তেমনি সূরা ওয়াকিয়া যদি মাগরিবের নামাযের পর পাঠ করে, তাহলে তার জীবনে খাদ্যের অভাব হবে না। আর যদি সূরা মুলক ও আয়াতুল কুরসি এশার নামাযের পর ঘুমানোর পূর্বে তিলাওয়াত করে, আল্লাহ পাক রাতের বেলা শয়তান ও জিন থেকে হেফাজত করবেন। আজকে আমরা অশান্তিতে থাকার মূল কারণ হলো, কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই। যিকরের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই । আল্লাহকে আমরা স্মরণ করি না ।
নামায একটি উত্তম যিকর
আল্লাহ আমাদেরকে তো ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই আমাদেরকে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতে হবে। তবে বেশি ইবাদত করতে না পারলেও অন্তত পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে যথাযথভাবে আদায় করার চেষ্টা করি। নামাযও একটি উত্তম যিকর। আল্লাহ পাক বলেন,
وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِيْ۰۰۱۴
‘আমার যিকরের উদ্দেশ্যে নামায কায়েম করো।’[6]
বিশেষত শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করো।
তাহাজ্জুদের নামায পড়বেন
বুযুর্গানে দীন বলেন, শেষ রাতে উঠে আট রাকআত তাহাজ্জুদের নামায পড়ো। রসুলে করীম (সা.) অধিকাংশ সময় আট রাকআত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর সকলেই তাহাজ্জুদের নামায পড়েছেন। এমন কোনো নবীর আগমন হয়নি, যিনি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন না। তেমনি কোনো অলি-আওলিয়া ও পীর-বুজুর্গও দুনিয়াতে আসেনি, যারা তাহাজ্জুদের নামায পড়েননি। বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.), খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.), জুনায়েদ বাগদাদী (রহ.), মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)। সকলেই তাহাজ্জুদ পড়ছেন, যিকির করেছেন। তাই তাঁদেরকে আল্লাহ পাক অলিউল্লাহ বানিয়েছেন। যিকরের বদৌলতে, তাহাজ্জুদের নামাজ এর বদৌলতে। তাহাজ্জুদের নামাজের পরে ১১বার আস্তাগফিরুল্লাহ। ১১বার দরুদ শরীফ পড়বেন। অতঃপর ২০০ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ। ৪০০বার, ইল্লাল্লাহ। ৬০০ বার, আল্লাহু-আল্লাহ। ১০০ বার আল্লাহ, আল্লাহ, বলে যিকর করবেন। যিকর করলে আল্লাহর রহমতের আওতায় থাকতে পারবেন। অন্যথায় শয়তানের কবলে পড়ে যাবেন। আল্লাহ বলেন, আমার যিকর যদি না করো, তাহলে তোমাকে আমি একটা শয়তান লেলিয়ে দেব।
وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ۰۰۳۶
অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর যিকর বাদ দেবে, আমি আল্লাহ তাঁর পিছনে একটি শয়তান লেলিয়ে দেব, ওই শয়তান সব সময় তার সাথে থাকবে, শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।’[7]
যিকর সমাপ্ত করে আল্লাহ পাকের দরবারে কায়মানোবাক্যে দোয়া করবেন। আল্লাহ পাক শেষ রাতে বান্দার দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে অধিক পরিমাণে যিকর করার তওফিক দান করুন, আমিন।
বর্তমানে খুবই নাযুক সময় চলছে। এটি ফিতনার জামানা। মানুষকে বেইমান বানানোর চেষ্টা চলছে। রেডিওর মাধ্যমে, টেলিভিশনের মাধ্যমে, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে, ফেসবুক-ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এসব ফিতনা থেকে বাঁচার এক মাত্র উপায় হলো, অধিকহারে আল্লাহর যিকর করা। যিকরের মাধ্যমে আল্লাহ সমস্ত মসিবত থেকে, বেইমানির সমস্ত আপদ থেকে হেফাজত করবেন, ইনশাআল্লাহ।
যিকরের কেন্দ্র হলো মসজিদ-মাদরাসা
এই যিকরের কেন্দ্র হল মসজিদ-মাদরাসা। বিশেষত মাদরাসায় যিকর শেখানো হয়। মাদরাসায় কুরআন শেখানো হয়। মাদরাসায় নামায শেখানো হয়। সুতরাং নিজেদের সন্তানদেরকে প্রথমে মাদরাসায় পড়াবেন। আমি সকলকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত পড়ানোর জন্য বলছি না। আমার উদ্দেশ্য হলো, অন্তত নামাযটা যেন শিখে, নামাযের মাসায়েলগুলো যেন শিখে, রোযার মাসায়েলগুলো যেন শিখে, কোরবানির মাসায়েলগুলো যেন শিখে, হজ্জের মাসায়েলগুলো যেন শিখে, যাকাতের মাসায়েলগুলো যেন শিখে। এগুলোর জ্ঞান অর্জন করার পর সেই ইঞ্জিনিয়ার হোক, ডাক্তার হোক, প্রফেসর হোক, এমপি হোক; তাতে কোনো অসুবিধা নেই। মনে রাখতে হবে, আমি আগে মুসলমান, পড়ে প্রফেসর। আমি আগে মুসলমান, পরে ইঞ্জিনিয়ার। আমিন আগে মুসলমান, পরে এমপি সাহেব। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বুঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
সংকলন
মুহাম্মদ সুহাইল ইবনে রশীদ কাসেমী
সম্পাদনা: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
[1] আল-কুরআনুল করীম, আয-যারিয়াত, ৫১:৪৭-৪৮
[2] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৭৪ হি. = ১৯৫৫ খ্রি.), খ. ১, পৃ. 131, হাদীস: 148
[3] আল-কুরআনুল করীম, তহা, ২০:১২৪
[4] আল-কুরআনুল করীম, আল-হিজর, ১৫:৯
[5] আদ-দারিমী, আস-সুনান = আল-মুসনাদ, দারুল মুগনী লিন-নাশর ওয়াত তাওযী’, রিয়াদ, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০০ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ২১৫০, হাদীস: ৩৪৬১
[6] আল-কুরআনুল করীম, তহা, ২০:১৪
[7] আল-কুরআনুল করীম, আয-যুখরফ, ৪৩:৩৬