শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা (হাফি.)
[বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) (মৃ. ১৪১৭হি.)-এর সুযোগ্য শিষ্য শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা (হাফি.)। বর্তমান সময়ের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস, হানাফী মাযহাবের অনেক বড় আলেম ও বহু গ্রন্থের রচয়িতা, ভাষ্যকার ও মুহাক্কিক এবং সম্পাদক। সিরিয়ার আলেপ্পো হল তাঁর মাতৃভূমি। তিনি বর্তমানে মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করছেন। আকাবিরে দেওবন্দ ওলামায়ে কেরামের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, যা তাঁর কথা ও লিখনী থেকে অনুমান করা যায়। সে হিসেবে অনেক আগ থেকেই দারুল উলুম দেওবন্দে আগমনের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল তীব্র। আজ থেকে প্রায় এক দশক পূর্বে (৯ রবিউল আওয়াল ১৪৩২ হি.) তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে আগমন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের ঐতিহাসিক মসজিদে রশীদে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে শায়খ আওয়ামা (হাফি.) গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। এটি অনুবাদ করেছেন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাকীম, আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। মাসিক আত–তাওহদীদের সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভাষায় তা পেশ করা হলো—সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী]
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسَّلام علىٰ سيّد الأنبياء والمــرسلين، وعلىٰ آلـه وصحبه أجمعين، أما بعد!
উপস্থিত মুহতারম বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও আমার প্রিয় তালিবুল ইলম ভাইয়েরা!
আমার প্রতি আপনারা যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন, এতে আমি সত্যিই সংকোচবোধ করছি এবং তা আমার মর্যাদা ও যোগ্যতার অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। এ শুধু আপনাদের মহানুভবতা এবং আমার ব্যাপারে আপনাদের সুধারণার বহিঃপ্রকাশ।
প্রিয় রসুল (সা.) ইঙ্গিতে আমাদেরকে একটি উন্নত চরিত্র শিক্ষা দেয়েছেন, তিনি বলেন,
«سَيِّدُ الْقَوْمِ خَادِمُهُمْ».
‘জাতির নেতা তাদের সেবক।’[1]
এ হাদীস শরীফে ইঙ্গিত আছে, ব্যক্তির মহত্ব ও মর্যাদা যত বাড়ে তার বিনয় ও বিনয় তত বাড়ে। তো আমাদের সরদার ও আলেম-ওলামার উত্তরসূরি শায়খ সাইয়েদ আরশাদ মাদানী (হাফি.) যখন মর্যাদা ও মহত্বে বড় হয়েছেন, তাঁর বিনয়ও সমুচ্চ হয়েছে। তাই তিনি তার কোনো শাগরিদ বা জামিয়ার কোনো উস্তাদের মাধ্যমে নয়, নিজে আমাকে আপনাদের সামনে এগিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং আমাকে তাঁর সুধারণার স্তরে পৌঁছে দিন।
পবিত্র কুরআনে খিজির (আ.)-এর সঙ্গে হযরত মুসা (আ.)-এর সাক্ষাতের যে ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, তাতেও এ বিষয়টি রয়েছে। দেখুন, হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর নবী; বরং কুরআনের ভাষায় ‘উলুল আযম’ রসুলগণের একজন। কিন্তু যখন খিজির (আ.)-এর কাছে ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে গমন করেন, তখন তাকে বলা হয়েছে, ‘আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে প্রজ্ঞা ও হেদায়েত লাভ করেছেন, তা অর্জনের জন্য আমি কি আপনার অনুগমন করতে পারি?’ হযরত মুসা (আ.) খিজির (আ.)-কে এ কথা বলেননি, আমি আপনার সঙ্গে থাকব। তিনি অনুমতি প্রার্থনা করেছেন! আর অনুমতি প্রার্থনা করেছেন অনুগামী হওয়ার জন্য। তিনি অনুসরণকারী আর খিজির (আ.) অনুসরণীয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তাআলা যখন মুসা (আ.)-কে উঁচু মর্যাদা দান করেছেন তখন তাঁর বিনয় ও নম্রতা উঁচু হয়েছে।
ইমাম রাযী (রহ.) তাঁর তাফসীরে ইলম অন্বেষণের এ জাতীয় বারটি আদব এখান থেকে আহরণ করেছেন। অথচ বাক্যটির শব্দসংখ্যা দশেরও কম!
বন্ধুগণ! আমি এক ক্ষুদ্র তালিবুল ইলম, তবে মুসাফির হওয়ায় আমাকে এ স্থানে বসানো হয়েছে, নতুবা আমাদেরও আপনাদের শাইখগণই এ স্থানে বসার অধিক উপযুক্ত। আল্লাহ জানেন, পঞ্চাশ বছর যাবৎ আমি এই ‘ঘর’খানি দেখার, তাতে প্রবেশ করার এবং এর মুক্ত বায়ুতে অবগাহন করার ইচ্ছা লালন করে আসছি। কারণ এই ঘরের প্রতি, এর আগের ও পরের মাশায়িখের প্রতি আমার অন্তরে রয়েছে আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা। আল্লাহ যেন এই ঘর ও এর দায়িত্বশীলগণকে এবং এর মতো আরো যত সহীহ ইলমের ঘর রয়েছে সবগুলোকে স্থিতি, স্থায়িত্ব দান করেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত প্রভুত দানে ভূষিত করেন।
হে প্রিয় তরুণ দল, (যারা অদূর ভবিষ্যতে ইলমের পুরুষ হবেন)! আমার প্রত্যাশা আমার নিজের কাছে, তোমাদের কাছে এবং অন্য সকল তালিবুল ইলমের কাছে এই যে, আমরা যেন আমাদের প্রতি আল্লাহর হক ও ইলমের হক উপলব্ধি করি। আমাদের যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ইলমের মর্যাদার সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেছেন আমরা যেন এই সম্বন্ধের মর্যাদা উপলব্ধি করি। আমরা যখন এ ইলমের মর্যাদা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারব তখন এর যথাযথ কদর করতে পারব এবং এ ইলমের বিষয়ে অন্তরে কোনো হীনমন্যতা কাজ করবে না।
হে তরুণ বন্ধুরা! মনে করো না, তুমি এক ‘তালিবে ইলম’। আর তোমার এলাকার প্রাইমারির সহপাঠীরা কেউ ডাক্তার হয়েছে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আমলা আর তুমি এক ‘দরবেশ’! নাউযু বিল্লাহ! না, কখনো নয়, নিজেকে চিনুন, হে তালিবুল ইলম। তুমি তো এই ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাশালী। আপন সত্তায় এই মহামর্যাদা অবলোকন কর।
এই ভারতে পথে পথে তোমার সমবয়সী কত যুবক অবক্ষয়ের শিকার! আর তোমরা? তোমাদের আল্লাহ নির্বাচন করেছেন এই আমানত ‘কলাল্লাহ’ ও ‘কলার রসুল’-এর মর্যাদার জন্য। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উত্তরাধিকার আভিজাত্যের জন্য। সুতরাং কখনো ভেবো না, তুমি এক হীন অবস্থানে!
হে তালিবানে ইলম! তালিবুল ইলমের মর্যাদা অন্য সকলের উপরে সুতরাং ইলমের মর্যাদা উপলব্ধি কর। এরপর এর মর্যাদা রক্ষা কর। এই আমানত বিনষ্ট করো না। ভুলে যেও না, ‘আলেমের পদস্খলন মানে জগতের পদস্খলন।’
আমি আমার নিজের কাছে, তোমাদের কাছে এবং আমাদের মতো আরও যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ইলম অন্বেষণের মর্যাদা দিয়েছেন, তাদের সকলের কাছে প্রত্যাশা করি, এই চেতনা যেন সদা জাগরুক থাকে আমাদের হৃদয়ে, আমাদের চাল-চলনে, আমাদের ঘরে-বাইরে, মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর এভাবে আমরা যেন হই ‘তালিবুল ইলমে’র যথার্থ, জীবন্ত ও মহান ছবি।
আমি কিছু মৌলিক বিষয় আলোচনা করতে চাই, যা তালিবে ইলমকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে কথা তো দীর্ঘ, আমি এখানে শুধু একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।
এক. ইলম অর্জনের পর্যায়ক্রম রক্ষা করা। সব দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে তা রক্ষা করা হয়। তবে আমি এই পর্যায়ক্রমিক প্রয়াসের একটি পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা উস্তাদগণ এটি লক্ষ করতে পারি। আমরা স্থির করতে পারি যে, আমাদের তালিবুল ইলমদের উম্মতের প্রয়োজন সামনে রেখে তিন স্তরে গড়ে তুলব।
প্রথম স্তর: এ স্তরে আমরা এমন কিছু তালিবুল ইলম তৈরি করব যারা সাধারণ পড়াশোনায় ‘পাক্কা ইসতিদাদ’ তথা পূর্ণ যোগ্যতার অধিকারী হবে। এদেরকে মিম্বার ও মিহরাবের উপযুক্ত করে প্রস্তুত করা হবে। কারণ, এটি ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ দিকটিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কেননা মুসলমানদের যোগ্য ইমামের প্রয়োজন রয়েছে, যোগ্য খতীবের প্রয়োজন রয়েছে।
দ্বিতীয় স্তর: এ স্তর প্রথম স্তরের চেয়ে আরেকটু উপরের। উল্লিখিত স্তরের তালিবুল ইলমদের থেকে কিছু তালিবুল ইলমকে নির্বাচন করা হবে, যাদেরকে যথাযথ নেগরানি ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে এমন যোগ্য করে গড়ে তোলা হবে, যেন তারা নিজ নিজ এলাকায় জনসাধারণের আশ্রয়স্থল হতে পারে। জনগণ তাদের কাছ থেকে ফিকহ-ফতওয়া ও পরামর্শ গ্রহণ করবে।
তৃতীয় স্তর: আর কিছু ছাত্রকে আমরা বিশ্বমানের আলেমরূপে গড়ে তুলতে হবে। আমার উদ্দেশ্য হলো, প্রথম স্তরের আলেম নিজ নিজ মহল্লার আলেম। তারা নিজ নিজ ঘরে ও মহল্লায় মানুষকে দীনী শিক্ষা দেবেন এবং ইসলামের হেফাজত করবেন। দ্বিতীয় স্তরের আলেম শহর ও দেশের আলেম। তারা নিজ নিজ শহর ও দেশে ইসলামের হেফাজতের জন্য কাজ করবেন। আর তৃতীয় স্তরের আলেমগণ বিশ্বব্যাপী ইসলামকে হেফাজতের জন্য কাজ করবেন। মনে করুন, আপনি ভারতে আছেন। কিন্ত পূর্বে বা পশ্চিমের দূরবর্তী যে কোনো দেশে ইসলাম সম্পর্কে কোনো বিকৃতি বা অপব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারলেন, তো এখানে থেকেই সেই বিভ্রান্তি খণ্ডনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।
বন্ধুগণ! ইসলাম সম্পর্কে অপব্যাখ্যা, ইসলামের জ্ঞান ও শাস্ত্রসমূহের বিষয়ে বিষোদগারের তো শেষ নেই। এ বিষয়ে আলোচনা সামনে অগ্রসর করার পূর্বে আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি। একজন মানুষ, ধরুন তার নাম ‘হাইয়ান ইবনে বাইয়ান’, হে তরুণ-দল! এরা তো ‘হাইয়ান ইবনে বাইয়ান’ই হয়ে থাকে । নাম পরিচয়হীন অখ্যাত ব্যক্তি। সে তিনটি ‘বই’ লিখেছে। ‘জিনায়াতুল বুখারী আলাল হাদীস’, (হাদীসের প্রতি বুখারীর জুলুম) ‘জিনায়াতুশ শাফিয়ী আলাল ফিকহ’ (ফিকহের প্রতি শাফিয়ীর জুলুম) আর ‘জিনায়াতু সীবাওয়াইহি আলান নাহভ’ (নাহভ শাস্ত্রের প্রতি সীবাওয়াইহের জুলুম)। চিন্তা করুন, ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে কোনটি তাহলে বাকি থাকল? হাদীস-ফিকহ দুটোই যখন অনির্ভরযোগ্য তাহলে ইসলামের আর কী অবশিষ্ট থাকে? আমি আমার আগের কথায় ফিরে আসছি। আমাদের কর্তব্য বৈশ্বিক পর্যায়ের যোগ্য আলেম গড়ে তোলা। এ কাজ সহজ নয়। আর প্রয়োজনের পরিধিও এত কম নয় যে, অল্প কয়জন ব্যক্তির মাধ্যমে এ প্রয়োজন পূরণ হবে। যেমন বিশাল হিন্দুস্তানের জন্য দুজন, মিসরের জন্য একজন, আর সিরিয়ার জন্য একজন। এটা যথেষ্ট নয়। বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখন এই পর্যায়ের শতশত আলিমের প্রয়োজন। যাতে পরিস্থিতির হক আদায় হতে পারে।
হে প্রিয় যুবক বন্ধুরা! আমাদের শত্রুরা বিক্ষিপ্তভাবে নয়, দলবদ্ধভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছে। আমরা যদি শুধু সুন্নাহর ওপর আসা আক্রমণই প্রতিহত করতে চাই, তাহলেও বছরের পর বছর কাজ করে যেতে হবে। আমরা দীর্ঘ সময় মেহনত করে একজন বা দুজন আলেম গড়ে তুলি, যারা এই সয়লাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। আর ইসলামের শত্রুরা, এরই মধ্যে দলে দলে লোক তৈরি করে ফেলে। আমরা পথের সূচনাতে আছি আর আমাদের শত্রুরা আমাদেরকে পিছনে রেখে বহুদূর চলে গেছে। তাই আমাদের কাজ হল, এই তিন স্তরে লোক তৈরি করা। মসজিদগুলোর জন্য ইমাম ও খতীব প্রস্তুত করা, শহরগুলোর জন্য আলিম ও মুফতী প্রস্তুত করা। আর ইসলামের উপর আসা হামলা প্রতিহত করার জন্য পর্বতসম অটল আলেম তৈরি করা।
রসুলে করীম (সা.) এই উম্মতের প্রত্যেক সদস্যের উপর এক গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি ইসলামের এক এক পথের প্রহরী। সাবধান! তোমার দিক থেকে যেন ইসলাম আক্রান্ত না হয়।’ (আস-সুন্নাহ লিল মারওয়াযী, হাদীস: ২৮) [অর্থাৎ যার দ্বারা দীনের কোনো ক্ষতি হল তার দিক থেকেই ইসলাম আক্রান্ত হল।]
প্রিয় রসুল (সা.) ইসলামকে তুলনা করেছেন এক মহাদূর্গের সাথে, যার রয়েছে অনেক জানালা। বিষয়টি সহজে বুঝার জন্য একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি। ধরুন, এই মসজিদটি একটি মুবারক স্থান। এর অনেক খোলা দিক ও অনেক জানালা আছে। এর প্রধান দায়িত্বশীল প্রত্যেক প্রবেশ পথে একজন করে তালিবুল ইলম নিযুক্ত করলেন এবং বলে দিলেন, তুমি এই জানালায় পাহারায় থাকবে। এরপর সকলকে শপথ দিয়ে বললেন, সাবধান! তোমার জানালাপথে যেন কোনো শত্রু প্রবেশ করতে না পারে। কেননা কোনো এক পথ দিয়ে যদি শত্রু প্রবেশ করে সে যতই ছোট হোক না কেন তাহলে পুরো দূর্গটিকেই ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং এই দায়িত্বভার আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং আমানতদারির সাথে বহন করতে হবে। কখনো একথা বলা উচিত হবে না যে, এতে আমার কী? আমি যদি বলি, সর্বপ্রথম যে কুঠারটি ইসলামের গোড়ায় আঘাত করে তা হল, ‘আমার কী’ কথাটি’ তাহলে অত্যুক্তি হবে না। এ বিষয়ে আমি আপনাদের একটি ঘটনা শোনাই।
ওসমানী খেলাফতের এক খলিফা তার কোনো এক সভাসদের সঙ্গে তার দেশে ইসলামের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং এ জন্য চিন্তিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমি সবার আগে ‘শায়খুল ইসলাম’-এর সঙ্গে আলোচনা করব। অতঃপর তিনি তাঁকে একটি চিঠি লিখেন। সেখানে তিনি তাঁকে সম্বোধন করে বললেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দীনী বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি’। এ চিঠি শায়খুল ইসলমের কাছে পৌঁছলে, তিনি তার ওপরে লিখলেন ‘এর সাথে আমার কী সম্পর্ক?’, নিচে স্বাক্ষর করে তা ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।
খলিফার কাছে চিঠি পৌঁছলে, খলিফা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে তাঁকে তৎক্ষণাত দরবারে হাজির করার আদেশ করেন। শায়খুল ইসলাম হাজির হলে তিনি বললেন, ‘আপনিই তো প্রথম দায়িত্বশীল, আপনি শায়খুল ইসলাম, কী করে আপনি লিখলেন ‘এর সাথে আমার কী সম্পর্ক’?’
উত্তরে শায়খুল ইসলাম বললেন, জনাব! আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তবে আমি বিপর্যয়ের মূল ব্যাধির প্রতি ঈঙ্গিত করার জন্য তা লিখেছি। আপনি তো আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে, এর সমাধান কী? আর আমি লিখলাম, এর মূল সমস্যা হলো, বর্তমানে রাজ্যের প্রত্যেকেই যেকোনো ব্যাপারে বলে থাকে, এ বিষয়ের সাথে আমার কী সম্পর্ক? প্রত্যেকেই যদি তার করণীয় সম্পর্কে সচেতন হত এবং তা পালন করত, তাহলে আজ আমাদের এ পরিণতি হত না।
নওজোয়ান বন্ধুরা! এই গুরুদায়িত্ব ও মহান আমানতকে উপলব্ধি করুন, যা রসুলে করীম (সা.) আমাদের প্রত্যেকের উপর অর্পণ করেছেন।
আমি আমার আলোচ্য বিষয়ে ফিরছি, তালিবুল ইলমকে মজবুতরূপে গড়ে উঠতে যে বিষয়গুলো সাহায্য করবে, তা হল: এক. অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবিরাম নিমগ্নতা। তালিবুল ইলমের কর্তব্য, যখন সে দরসের বিরতি পাবে, তখন বিরতির আগেই কোনো একটি কিতাব বা কোনো একটি আলোচনা ঠিক করে রাখবে, যা সে ছুটির সময়টাতে পড়বে। অথবা এ বিষয়ে কোনো এক উস্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সাক্ষাত করবে। আমি আমার শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.)-এর শায়খ রাগেব তব্বাখ (রহ.)-এর একটি ঘটনা বলছি। শায়খ রাগেব তব্বাখের এক পুত্র যিনি বয়সেও ছিলেন সবার বড় এবং পিতার বিভিন্ন কাজও আঞ্জাম দিতেন। কিতাব ইত্যাদি ছাপানোর কাজও তার দায়িত্বে ন্যস্ত ছিল। হঠাৎ একদিন ছেলেটি ইন্তেকাল করল। ছাত্ররা ভাবল, আগামীকাল শায়খ হয়ত দরসে আসবেন না। কেননা তিনি পুত্রকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু পরদিন দেখা গেল, শায়খ দরসে এলেন এমনকি ছাত্রদেরও অনেকের আগে এলেন। ছাত্ররা পরস্পরে ফিসফিস করে বলতে লাগল, শায়খ এসেছেন, শায়খ এসেছেন!
শায়খ বললেন, কী হয়েছে? ছাত্ররা বলল, কিছু না। শায়খ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার সন্তানেরা! কী হয়েছে বল। এক ছাত্র বলল, সাইয়েদী! আমরা ধারণা করেছিলাম, আপনি আজ দরসে আসবেন না। আর আমরা আপনার দরস না করে বিশ্রাম করব। শায়খ তখন পূর্ণ আফসোস ও ইলমের প্রতি পূর্ণ গায়রত নিয়ে বললেন, হায়! ছেলে হারিয়েছি ইলমের বরকতও কি হারাব! তবে তো ক্ষতির উপর ক্ষতি। উপকারী বিষয় অর্জনের প্রতি এমনই ছিল আমাদের আকাবির মাশায়িখের আগ্রহ ও লোভ।
মালেকী মাযহাবের একজন বড় আলেম শায়খ শরীফ তিলমিসানী। তাঁর শায়খ আবু যায়দের দরসে উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল তাঁর ইলম তলবের শুরুর দিক। শায়খের দরসের বিষয়বস্তু ছিল জান্নাতের নিআমত। শায়খ জান্নাতের বিবরণ দিতে গিয়ে বললেন, জান্নাতে এই এই নিআমত থাকবে। জান্নাতের নিআমত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তখন এই অল্প বয়সের তরুণ তালিবুল ইলম দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, হে আমার শায়খ, জান্নাতে কি ইলম থাকবে। শায়খ সাধারণ জবাব দিয়ে বললেন, তাতে মানুষের চাহিদা পূরণের সবই থাকবে, যা দেখে তার চোখ জুড়াবে। তালিবুল ইলম তখন শায়খকে বলল, যদি আপনি বলতেন, তাতে ইলম নেই তবে আমি বলতাম, তবে তো তাতে আনন্দের কিছু নেই!
তো এই তালিবুল ইলম যখন সেই জযবা ও নিমগ্নতা নিয়ে ইলম তলব করতে এসেছে, তো আল্লাহ তাআলাও তার জন্য ইলমের দরজা খুলতে থাকলেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই তার অবস্থা এই দাঁড়াল যে, শায়খ আবু যায়েদ একদিন একটি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আলোচনাটি সঠিক ছিল না। তো সেই তালিবুল ইলম দাঁড়িয়ে বলল, প্রিয় শিক্ষক মহোদয়, বিষয়টি বোধহয় এ রকম। শায়খ তা বুঝতে পারলেন এবং সঠিক মতের দিকে ফিরে এলেন। এরপর রসিকতা করে তাকে (কবি সালেহ আবদুল কুদ্দুসের কবিতার) দুটি পঙক্তি শুনালেন, ‘দিনের পর দিন তাকে শিখিয়েছি তীর চালনা/এরপর বাযু পাকা হলে সে আমাকেই বিদ্ধ করল।/অল্পে অল্পে তাকে শেখালাম ছন্দ রচনা/শেখা হলে পর সে আমারই ‘হিজু’ (নিন্দা) করল।’
বন্ধুরা এ আলেমের জীবনী যদি দেখেন মালেকী মাযহাবের ইমামগণের জীবনী গ্রন্থে তাহলে দেখতে পাবেন এক উঁচু মর্যাদাপূর্ণ জীবনী। যেমনটা বলেছেন ইমাম ইবনে আতাউল্লাহ আল-ইস্কান্দারী (রহ.), ‘যার নেই দগ্ধকারী সূচনা তার নেই উজ্জ্বল সমাপ্তি।’
সূচনা হচ্ছে সমাপ্তির ঝলক
হে প্রিয় তরুণ-দল, তৃতীয় কথা, লেখালেখি ও রচনা বিষয়ে, আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি উপযুক্ত রচনা ও গবেষণার দ্বারা এই ইলমের খেদমত করার তাওফীক দান করবেন। ইনশাআল্লাহ, অদূর ভবিষ্যতে আপনারা এমনই হবেন। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব তা হল, নির্ভরযোগ্য, সঠিক ও শক্তিশালী ইলমী ফায়েদা অনায়াসে অর্জিত হয় না; বরং এর জন্য যে জিনিসের কোনো বিকল্প নেই তা হচ্ছে অনুসন্ধান, অনুসন্ধান এবং অনুসন্ধান। আমি নেতিবাচক ধারণা থেকে নয়, বাস্তবতার বর্ণনা হিসেবে বলছি, কখনো এমনও হবে, একটি বিষয় দশ কিতাবে অনুসন্ধান করা হল, কিন্তু পথ বন্ধ। এর অর্থ, আরো অনুসন্ধান প্রয়োজন। নিরাশ হওয়া নয়। তো বলতে চাচ্ছি যে, ইলম অনায়াসে আসে না। আপনাদের একটি গল্প শোনাই। কিছুটা দীর্ঘ তবুও শোনাই।
নাহুবিদ আবু নাসর মুসা ইবনে হারুনের ঘটনা, তার শায়খ ছিলেন আবু আলী আল-কালী, তিনি ভাষার অনেক বড় ইমাম ছিলেন। তিনি তাঁর দরসে হাজির হতেন এবং শায়খও তার দ্রুত হাজির হওয়া পছন্দ করতেন। একদিন দ্রুত রওয়ানা হলেন, কিন্তু কোনো কারণে বিলম্ব হয়ে গেল এবং বৃষ্টিতে ভিজে গেলেন। আপাদমস্তক জামা কাপড় ভিজা অবস্থায় কর্ডোভা জামে মসজিদে শায়খ আবু আলী কালীর মজলিসে উপস্থিত হলেন। লজ্জিত ও সংকুচিত অবস্থা। শায়খ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, চিন্তার কিছু নেই, চিন্তার কিছু নেই। তোমার কাপড় বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে তো কাপড় পরিবর্তন করে নিলেই হল। এ তো সহজ বিষয়। আমারও একদিন তোমার মত ঘটনা ঘটেছিল। তুমি যেমন চেয়েছিলে বিলম্ব না করতে আমিও তা চেয়েছিলাম। আমি শায়খ কারী আবু বকর ইবনে মুজাহিদ (রহ.)-এর দরসে হাজির হতাম। একদিন চেয়েছিলাম দ্রুত দরসে হাজির হব এবং দীর্ঘ পথ ছেড়ে সংক্ষিপ্ত কোনো পথে যাব। সে অনুযায়ী খুবই সংকীর্ণ একটি সুড়ঙ্গ পেয়ে গেলাম। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পুরো দেহ সেই সংকীর্ণ সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। ফলে গায়ের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। বরং দেহের কোনো কোনো হাড় থেকে মাংশ আলাদা হয়ে গেল। শরীরে এমন জখম হয়ে গেছে, যা আমার সাথে কবর পর্যন্ত যাবে। সে হিসেবে তোমার তো কিছুই হয়নি, পানি এসে শুধু তোমার কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন,
‘মর্যাদা’র খোঁজে পথ চলছ অথচ অন্বেষীরা চলে গেছে বহুদূর/এর জন্য তারা কাপড়চোপর ফেলে গিয়েছে/মর্যাদার প্রতিযোগিতায় অনেকেই লিপ্ত হয়েছে অবশেষে অধিকাংশই ঝিমিয়ে পড়েছে/মর্যাদার দেখা তো সেই পেয়েছে যে পূর্ণ চেষ্টা করেছে এবং ধৈর্যের সাথে করেছে/তুমি মর্যাদাকে ভেবো না একটি খেজুর, যা তুমি আনন্দে খেয়ে ফেলবে!/তুমি তো মর্যাদার দেখা পাবে না যে পর্যন্ত সমবুরের তিক্ততা আস্বাদন না করবে।
ভেবো না যে, সঠিক ও শক্তিশালী ইলম খেজুরের মতো সহজেই তুমি খেয়ে ফেলবে ও তার স্বাদ আস্বাদন করবে। হে তরুণ! হে যুবক! সবুর হেকিমদের কাছে এক প্রসিদ্ধ ফল। কিন্তু আমি এখানে সবুর শব্দটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। ‘সবির’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় মধুর ক্ষেত্রে আর তা অল্প একটু চেখে দেখা নয় যেমন তুমি আঙুলের এক পার্শ্ব দিয়ে একটুখানি চাটলে। না, না, এই যে এভাবে বড় করে চাটলে তা হল ‘লাক’ তো তুমি তো মর্যাদার চূড়ায় তখনই পৌঁছবে যখন সবুরে তিক্ততা ভোগ করবে এবং এরই মাঝে দীর্ঘ সময় পার করবে।
নওজোয়ান বন্ধুগণ! আমি একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। যদি আমরা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশ লতিকার কথা ধরি,
هو سيدنا محمّد بن عبد الله بن عبد المطلب.
তিনি হলেন, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব। তাঁর দাদা হলেন আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ, হাশেম তাঁর পরদাদা, আবদে মানাফ তাঁর তৃতীয় পুরুষ, কুসাই তাঁর চতুর্থ পুরুষ। যদি আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, বংশপরম্পরায় কে সেই পুরুষ যার উপাধি কুরাইশ? আপনারা উত্তরে বলবেন, ‘ফিহরের উপাধি। আমাদের রসুল (সা.) হলেন কুরাইশ বংশের। কাজেই যার বংশ রসুল (সা.) এর বংশের সাথে ‘ফিহর’ পর্যন্ত কোথাও মিলবে তিনিই কুরাইশ বংশের। এখন আমরা যদি ধরে নেই ‘ফিহর’ দশম পুরুষ। তাই কারো বংশ যদি রসুল (সা.)-এর সাথে সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম পুরুষে গিয়ে মিলিত হয় তাহলে সে কুরাইশ বংশের। কেউ যদি বলে, ‘কুরাইশ’ হচ্ছে চতুর্থ পুরুষ ‘কুসাই’ এর উপাধী তাহলে এর অর্থ হবে যে ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর সাথে পঞ্চম পুরুষে গিয়ে মিলিত হবে সে কুরাইশ বংশের নয়। কেননা তাঁর তো কুসাই এর (কুরাইশ) সাথে সম্পর্ক নেই, তার সম্পর্ক কুসাই-এর উপরের কোনো পুরুষের সাথে যে কুরাইশ নয়।
কেউ বলতে পারে, ভাই, কুরাইশ ফিহরের উপাধী হোক বা কুসাইর, এতে এমন কী আসে যায়। এটা তো অতীত বিষয় যা গত হয়েছে। এ বিষয়ে এই দীর্ঘ আলোচনার কী প্রয়োজন। আমি বলব, এটা খুবই নাযুক বিষয়! কিন্তু আমরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি। আমরা যদি ইলমী কিতাবাদি ঘেটে দেখতাম, তবে এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারতাম।
যে বলে চতুর্থ পুরুষ ‘কুসাই’ হল কুরাইশ, এর পিছনে তার এক দুরভিসন্ধি কাজ করছে, তা হল, আবু বকর ও ওমর রা.-এর বংশ তালিকা রসুল (সা.)-এর সাথে গিয়ে মিলিত হয় সপ্তম পুরুষে, চতুর্থ পুরুষে নয়। তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, আবু বকর ও ওমর (রাযি.) কুরাইশ বংশের নন। অথচ রসুল (সা.) বলে গেছেন,
«الْأَئِمَّةُ مِنْ قُرَيْشٍ».
‘খলীফা হবে কুরাইশ বংশ থেকে।’[2]
এ দিকে লক্ষ করলে আবু বকর ও ওমর (রাযি.)-এর খেলাফত সঠিক খেলাফত ছিল না।
লক্ষ করুন, আমার যুবক ভাইয়েরা! বিষয়টি কোথায় গিয়ে পৌঁছল? ভুল কোথায় আর কুফল কোথায়? সুতরাং একথা বলা আমাদের জন্য জায়েয নয় যে, ইলমের বহু বিষয় খুবই সহজ ও গুরুত্বহীন। না, আমাদের কর্তব্য হল, প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় যত্নের সাথে অর্জন করা। সময় থাকলে আরো কিছু উদাহরণ তুলে ধরতাম।
তো তালিবুল ইলমের ইলমী জীবন গঠনের মৌলিক আরেকটি দিক হল, ইলমের প্রতিটি বিষয় যত্নের সাথে গ্রহণ করা। আর অনুসন্ধান ও গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং দীন, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এর প্রভাব ও প্রয়োজন উপলব্ধি করে অবিরাম অনুসন্ধান ও অক্লান্ত গবেষণায় অবতীর্ণ হওয়া।
وأسأل الله العظيم من فضله العظيم أن يمنّ عليّ وعليكم، وعلىٰ مشايخنا وسادتنا وأهل الحقوق علينا، وعلىٰ أهل العلم عامّةً، والطلاب وعلى المسلمين أن يمنّ علينا وعليهم بكل خير وتوفيق لما يحبّه ويرضاه، وأسأل الله العظيم. أكرّر دعائي لكم ولهذه الديار دائما وأبدًا، ما أدعو أنا الآن أمامكم، لا، أنا أدعو بهذا الدعاء صبيحة كل يوم، والحمد لله رب العالمين، وأسأل الله العظيم من فضله العظيم، أن يحفظ العلم وأهله في بيوته من العلماء العاملين، لا من كل من انتسب إلىٰ هذا العلم، فالدخيل أصبح كثيرًا في زماننا يا شباب! أسأل الله العظيم أن يمنّ علينا بالعلم الصحيح الصافي السليم النافع لنا وللمسلمين متصلا بكابر عن كابر من علمائنا j وصلى الله وسلم وبارك علىٰ سيد الأولين والآخرين وحبيب رب العالمين، وعلىٰ آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.
ঘোষণা
(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।
অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
যোগাযোগের ঠিকানা
বিভাগীয় সম্পাদক
শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ, মাসিক আত-তাওহীদ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com
[1] আস-সুলামী, আদাবুস সুহবাহ, দারুস সাহাবা লিত-তুরাস, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১০ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), পৃ. ৯০, হাদীস: ১১৭
[2] আবু দাউদ আত-তায়ালিসী, আল-মুসনাদ, দারু হিজরা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’ ওয়াল ই’লান, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২০ হি. = ১৯৯৯ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. 595, হাদীস: 2247