বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনয়ের অলঙ্কার

মিযানুর রহমান জামীল

বিনয়, জীবনের সাথে যার মধুরমিশ্রণ। মানব সভ্যতার ভূষণই হলো বিনয় আর ভদ্রতা ও নম্রতা এর সহায়ক। বিনয় থাকলে অলঙ্কারের প্রয়োজন পড়ে না। বিনয় দ্বারা ব্যক্তিত্ব কায়েম করা সম্ভব, এমনকি বিশ্ব বিজয়ও। যার মধ্যে যত বেশি বিনয় পাওয়া যাবে সেই তত বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। কারণ বিনয় দ্বারা অন্যের চোখে মহব্বত আর ভালোবাসার সৌধচূড়া নির্মাণ করা যায়। দূরের মানুষকে কাছে টেনে আনা যায়। শত্রুকে পরিণত করা যায় বন্ধুতে। প্রতিপক্ষকে করা যায় আপন দলে অন্তর্ভুক্ত। একটা বিনয়ী মন উত্তপ্ত সমাজকেও শান্ত করে দিতে পারে। আর যারা আল্লাহর হুকুম পালন করে তারা শ্রেষ্ঠ বিনয়ী এবং তাদের বন্ধু আল্লাহ। কারণ সূরা মায়িদার ৫৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়।

বিনয় দ্বারা দুনিয়ায় যেমনি সম্মানের অধিকারী হওয়া যায় তেমনি পরকালের জন্যেও এ বিনয় জান্নাত অর্জনের কারণ হতে পারে। কেননা সূরা হূদের ২৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা মুমিন, সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত, তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

পবিত্র কুরআনে বিনীতগণের জন্য সুসংবাদ আর পরকালের অসীম নেয়ামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সূরা হজের ৩৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন, আমি প্রত্যেক সমপ্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদেরকে জীবনপকরণসরূপ যে-সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, সুতরাং তারই নিকট আত্মসমর্পন করো এবং সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে।

এক সময় এ বিনয় দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা বিশ্ব বিজয় করেছে। ফিরিয়ে এনেছে হারানো সম্পদ, নির্মাণ করেছে দীনের বাতিঘর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ আমাদের মধ্যে নেই বিনয়ের সেই দীপ্তি যার দ্বারা খলীফাগণ কালের এক একটি চূড়ান্ত অধ্যায়ে ইসলামের স্থপতি এঁকে দিয়েছেন। বিশ্বসম্রাজ্যেকে করেছেন ধর্মের ছোয়ায় শোভামণ্ডিত, নীতির আলোয় উদ্ভাসিত।

মাথাউঁচু মনোভাব বিসর্জন দিয়ে যদি সবাই সবাইকে বিনয় দেখায়, আত্মগরিমা বয়কট করে যদি সকলে সকলের প্রতি মর্যাদাবোধ অক্ষুন্ন রাখে তবে সে বিনয় দিতে পারে সফলতার গ্যারান্টি। এর জন্য সর্বপ্রথম দূর করা চাই অহংকার ও হামবড়া ভাব। সাথে সাথে অন্যকে খাটো করে দেখার মনোভাবও বাদ দিতে হবে। সর্বপরি একজন মানুষের আসল গুণ হলো তার ঈমান খাঁটি এবং শিরিকমুক্ত। আর এ নির্ভেজাল ঈমান সম্পর্কে হাদীসে এসেছে খাটি মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। এখান থেকেই নির্ণয় করা হয় আমাদের ঈমানের সবলতা ও দুর্বলতা। এগুলো জন্য প্রথমে যে দিকটা লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় তা হলো বিনয়ের গুণে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলা, আমি যে পথ দিয়ে হেটে যাই সে পথে অন্য কেউ হাটলেও যেন তার মধ্যে বিনয়ের গুণ চলে আসে।

শুধু তাই নয় বিনয় যেন আমাদের জীবনের অঙ্গে অঙ্গে বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ব্যক্তি শ্রেণি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিনয়ের শিক্ষা লেগে বিকশিত হোক মানবপ্রাণ। সরলতার নতুন ছোঁয়ায় আলোকিত হোক বিশ্বপাড়া। বিনয়ের কল্যাণে সমৃদ্ধ হোক দেশ জাতি ও সামাজিক অঙ্গন।

লেখক: অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ