জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফররুখ আহমদ: এক মর্দে মুমিনের মূর্তপ্রতীক

তিনি সুফীদের কথা বলতে খুবই ভালোবাসতেন এবং অনেক সময় তাঁদের কথা বলার সময় তার চোখ ছলছল করে উঠতো। হযরত শায়খ আহমদ সরহিন্দী, মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)-এর একজন পরম ভক্ত ছিলেন তিনি এবং তাঁর তরীকাকে সকল তরীকার তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলতেন।

ফররুখ আহমদ: এক মর্দে মুমিনের মূর্তপ্রতীক

সাঈদ হোসাইন

 

ফররুখ আহমদ। ইসলামি রেনেসাঁর কবি। মুসলিম নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার। তাঁর ইসলামি চেতনার প্রখর দীপ্তিতে আমরা নব উজ্জীবন লাভ করি। তাঁর কবিতার আলোক-দীপ্তি আমাদের চিত্তকে মোহাবিষ্ট করে, আমাদের সত্তাকে প্রবলভাবে জাগরিত ও উদ্বোধিত করে। ইসলামি পুনর্জাগরণ ও ঐতিহ্যানুসারিতার ক্ষেত্রে তাঁর কবিতার সুর-ঝংকার নানাভাবে সোচ্চারিত। চিন্তার আলো, চেতনার প্রবাহ ও আত্মার উত্তাপ দিয়েই তিনি গেঁথেছেন তাঁর কবিতা-মালা।

তাঁর কবিতা ছন্দে, আঙ্গিক ও রূপরীতিতে, শিল্প-ব্যঞ্জনায়, উপমা-উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পের সৃজনধর্মিতায় অনন্যসাধারণ, উজ্জ্বল ও উদ্দীপ্ত। তাঁর কবিতায় যেমন আছে শব্দের তরঙ্গময়তা-কল্লোলতা, তেমনি আছে বেগ-আবেগ, তেজ ও আমেজ। তাঁর কাব্যমালা পাঠকের আবেগ-অনুভূতিকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়, ঈমানী জজবা ও উদ্দীপনা অনুভূত হয় রক্তে-মাংসে। উম্মাহর চেতনালোকে আলোড়ন সৃষ্টিতে প্রভাবক শক্তিমত্তা রয়েছে তাঁর কবিতার ছন্দে ছন্দে।

ফররুখ আহমদের সম্পূর্ণ মানস ছিল ইসলামি আদর্শে উজ্জীবিত। বকধার্মিক সাজা কিংবা ধর্মানুরাগের ছদ্মবেশ ধারণ করা তাঁর নীতি ছিল না কখনও। ভণ্ডামীর আশ্রয় নেন নি জীবনে। যা সত্য ও সুন্দর বলে জেনেছেন-বুঝেছেন, তা তিনি বলেছেন অকপটে—দুঃসাহসী কণ্ঠে। ইসলামি আদর্শের পুনরুজ্জীবনই ছিল তাঁর কবিতার প্রাণনির্যাস। তাঁর কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে এ আদর্শের সুরই বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে।

ফররুখ ছিলেন সার্বজনীন মানবতাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী—যার ভিত্তি হল তাওহীদ। এদেশের বৃহত্তর তাওহীদবাদী জনতার অন্তরের অন্তঃস্থলে হৃদয়ের গভীরে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে তিনি বারবার কবিতায় ঝংকার তুলেছেন প্রতিবাদের তীর ছুঁড়ে, বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে। ফলে জায়গা করে নিয়েছেন গণমানুষের হৃদয়ে, শ্রদ্ধা-ভালোবাসার শীর্ষ আসনে।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পিত। নিখাদ ধর্মনিষ্ঠ একজন পাক্কা মুসলমান, প্রকৃত মর্দে মুমিন। নীতিভ্রষ্টতার এ যুগে তিনি ছিলেন একজন ইনসানে কামেল। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপোসহীন-দৃঢ়চেতা। কোনো লোভ-প্রলোভনে নিজ আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হন নি তিনি। বরং নিজ আদর্শে তিনি ছিলেন অটল, অবিচল।

তাঁর শেকড়ে ফেরা

যৌবনের প্রারম্ভিককালে ফররুখ আহমদ মার্কসবাদের প্রভাবে পতিত হয়েছিলেন, কিন্তু ফুরফুরার বিখ্যাত পীর আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা অধ্যাপক মাওলানা আবদুল খালেক সাহেবের সান্নিধ্য-সৌরভে এসে তাঁর চিন্তা-জগতে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়। সিরাজাম মুনীরা কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁরই নামে (কবির ভাষায়) পরম শ্রদ্ধাভাজন আলহাজ মৌলানা আবদুল খালেক সাহেবের দস্ত মুবারকে।

এ সম্পর্কে কবিকন্যা সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু লিখেছেন, প্রথম জীবনে আব্বা ছিলেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত মানবতাবাদী কমরেড এম. এন. রায়ের শিষ্য। যিনি আটটি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। আব্বার জীবনে এক অচিন্তনীয় পরিবর্তনের মূলে যে মহান আওলিয়ার দোয়া ছিল, তিনি হচ্ছেন আব্বার পীর মরহুম অধ্যাপক আবদুল খালেক তৎকালীন যুগে ইংরেজি এবং আরবিতে এম. এ. ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট (গোল্ড মেডালিস্ট)। বহু বিতর্কের মাধ্যমে আব্বাকে পরাস্ত করে সেদিন তিনি আব্বাকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যেখানে মানুষের জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় প্রকার সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান রয়েছে।

বামচিন্তা ত্যাগ করার সাথে সাথে দেখা যায় সত্যিকার ফররুখের আত্ম-উপলব্ধি এবং আত্ম-আবিষ্কার ঘটেছে। তাঁর বিশ্বাসে এসেছে দৃঢ়তা এবং বলিষ্ঠতা। আবেগে এসেছে গতি ও জ্যোতি। ইসলামের মূলীভূত দর্শনের মধ্যে তিনি অন্বেষণ করেন মানবতার মুক্তি।

তাঁর ইবাদত-বন্দেগি

কবি কতটা ধর্মপ্রাণ ও ইবাদতগুজার ছিলেন, তা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা দরকার। কবিকন্যা সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু লিখেছেন, ব্যক্তিজীবনে আব্বা ছিলেন পরহেজগার। জীবনে জ্ঞান থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছাকৃতভাবে সাধারণত নামায কাযা করেন নি তিনি। শরীর ভীষণ অসুস্থ থাকা অবস্থায় 30 রোজাই রেখেছেন।

কবিপুত্র সৈয়দ আবদুল্লাহিল মাহমুদ লিখেছেন, নামায না পড়াটাকে তীব্রভাবে ঘৃণা করতেন তিনি। কারো নামাজ না পড়ার কথা জানতে পারলে তাকে প্রচণ্ড বকা দিতেন।

লোকদেখানো কৃত্রিম ইবাদতের প্রবল স্রোতে ভেসে যায় অনেকে। কিন্তু গোপনে আল্লাহর ইবাদতের স্বাদ যে কত মধুর, সে চিন্তা ত শুধু আল্লাহপ্রেমিক বান্দার মাথায়ই খেলে যায়। ফররুখের মতো খোদার পাগল লোকচক্ষুর অন্তরালে খোদাপ্রেমের স্বচ্ছ সরোবরে অবগাহন করবে এটাই স্বাভাবিক। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল গফুর লিখেছেন, কবির আধ্যাত্মিক সাধনার এই বিষয়টা কবি সযত্নে গোপন রাখতেন, আর এটা পুশিদা রাখবার ব্যাপারও বটে। কবি তাঁর সালাতের ব্যাপারেও মানুষকে সহজে জানতে দিতেন না। মসজিদে সবার অগোচরে কোনো ফাঁকে এক কোণে তিনি ঢুকে পড়তেন এবং ফরয-সুন্নত শেষ হবার পরও বহুক্ষণ ধরে নফল আদায় করতেন।

তাঁর নবীপ্রেম

ফররুখ ছিলেন একজন খাঁটি নবীপ্রেমিক। সিরাজাম মুনীরা কবিতাটি তাঁর সেই প্রেমিক হৃদয়ের আবেগ-দীপ্ত ও ভালোবাসা-সিক্ত একগুচ্ছ পঙক্তিমালা। তাঁর কবিতার শব্দে শব্দে নবীজী (সা.)-এর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা যেন ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়েছে। প্রেম ও ভালোবাসার সুরভিত নির্যাস মিশিয়েই তিনি গেঁথেছেন ভালোবাসার এ পঙক্তিমালা।

কবি শুধু নবীপ্রেমের সবক দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, নিজের জীবনে নবীজী (সা.)-এর সুন্নত বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টায় রত ছিলেন আমৃত্য। এ সম্পর্কে মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান লিখেছেন, বাহ্যিক বেশভূষা থেকে শুরু করে আচার-আচরণ এবং জীবনযাত্রার সর্বক্ষেত্রেই সুন্নত তরিকা সাধ্যমত অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর ঈমানের অভিব্যক্তি মূর্ত হয়ে উঠত। যা তিনি বলতেন বা লিখতেন, তা নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতেন।

কবিকন্যা সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু লিখেছেন, আব্বার পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে দুটো পায়জামা, দুটো পাঞ্জাবী, একটি গেঞ্জী, একটি শেরওয়ানী, একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল, একজোড়া জুতো, শীতের সময় একটি পুলওভার এবং একটি আলোয়ানই যথেষ্ট ছিল। নবীজীর সুন্নতকে ভালোবাসতেন বলে আব্বা কাপড়ে তালি দিয়ে পরতেন।…

দরিদ্রদের আব্বা অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের একান্ত অনুসারী, তাই রাসূলেরই মত দরিদ্ররা ছিল আব্বার প্রিয়পাত্র। মহানবী (সা.) শ্রমের মর্যাদার যে শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁর জীবনে সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত করেছেন।

কবির নবীপ্রেম বড় জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতার এ পঙক্তিতে

প্রাণস্পর্শ দেব আমি

প্রাণহীন জনপদে। নবকৃষ্টি, সভ্যতা নূতন;

নূতন পৃথিবী আমি গড়ে যাব রাসূলের রাহে।

সাহাবা, সুফী ও পীর-আওলিয়া প্রীতি

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীদের প্রতি তিনি খুব ভক্তি-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পোষণ করতেন। তাই ত হযরত আবু বকর (রাযি.), হযরত উমর (রাযি.), হযরত উসমান (রাযি.) ও হযরত আলী (রাযি.) সম্পর্কে অনিন্দ্য সুন্দর কাব্য রচনা করেছেন। তিনি তাঁর বিপ্লবাত্মক ইসলামি জাগরণের চিন্তাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ফুটিয়ে তুলেছেন এ কাব্যমালায়।

সুফী ও পীর-আওলিয়ার প্রতিও তাঁর প্রবল আবেগঘন সম্মানবোধ ও পরম ভালোবাসা ছিল। এ সম্পর্কে মাওলানা মহিউদ্দীন খান লিখেছেন, অধ্যাপক খালেক, তাঁর পীর ফুরফুরার মওলানা আবু বকর সিদ্দিকী এবং সিলসিলার ঊর্ধ্বতন পুরুষ হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদের প্রসঙ্গ উঠলে কবি যেন অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়তেন। বিশেষত সমঝদার কোনো শ্রোতা পেলে তিনি কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আধ্যাত্মিকতার আবে-কাউসারে ডুবে যেতেন। কবির এ প্রসঙ্গের অনেক আবেগময় আলোচনার আমি ছিলাম একজন উৎসাহী শ্রোতা। সৈয়দ আহমদ শহীদ ও তাঁর মুজাহিদ আন্দোলনের প্রতি আমার আবেগময় শ্রদ্ধা এবং কুরআন-হাদীসের একজন ছাত্র বলেই বোধ হয়, তিনি তাঁর অন্তরের মরমী অনুভূতি উজাড় করে দিতেন আমার মতো শ্রোতার সামনে।

কবিপুত্র সৈয়দ আবদুল্লাহিল মাহমুদ লিখেছেন, তিনি সুফীদের কথা বলতে খুবই ভালোবাসতেন এবং অনেক সময় তাঁদের কথা বলার সময় তার চোখ ছলছল করে উঠতো। হযরত শায়খ আহমদ সরহিন্দী, মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)-এর একজন পরম ভক্ত ছিলেন তিনি এবং তাঁর তরীকাকে সকল তরীকার তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলতেন। তিনি আরও বলতেন যে, ইমাম মেহেদী ওই তরীকারই একজন সাধক হবেন।

হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর সাহাবাদের সম্পর্কে তাঁর অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। সাহাবাদের কারুর সম্পর্কে কোনো সমালোচনা তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন যে, সাহাবাদের চরিত্রের অনুসরণ একমাত্র সুফীরাই করতে পেরেছেন। তিনি কবি ইকবালকে খুব শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁকে তাঁর ওস্তাদ মনে করতেন।

তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও সত্যোচ্চারণ

আমাদের এ দুর্ভাগা সমাজে স্পষ্টবাদী ও সত্যোচ্চারণে নির্ভীক মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। এমন মানুষের মিত্রের সংখ্যাও অপ্রতুল। কবি ফররুখ ছিলেন সততা, সত্যোচ্চারণ ও স্পষ্টবাদিতার ক্ষেত্রে প্রবাদপ্রতিম। উচিত কথা মুখের ওপর বলার দুঃসাহস তাঁর ছিল। দ্বিধা-সংকোচ-ভীতিমুক্ত হয়ে সর্বদা সত্য এবং হক কথা বলতেন তিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কোনো মানুষের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির তোয়াক্কা করতেন না। নিজের ক্ষতি হতে পারে জেনেও বন্ধুর পথে হাঁটতেন তিনি। নিম্নে তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও সত্যোচ্চারণের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরছি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলমে।

  1. বিশিষ্ট কবি ও গবেষক আবদুস সাত্তার লিখেছেন, সাবেক পাকিস্তান আমলে রেডিও অফিসে পে-স্কেল কিংবা অনুরূপ ব্যাপারে কর্মচারীদের মধ্যে গোলযোগ চলছিল। এ খবর গেল হেড অফিস করাচি পর্যন্ত। এখান থেকে চলে এলেন ডিরেক্টর জেনারেল। তিনি এসেই ফরুখ আহমদকে ডেকে পাঠালেন এবং লম্বা গোঁফ নেড়ে নাকের পশম টানতে টানতে বললেন, শায়ের সাহাব, ম্যায় এ সোস রাহা কে আপ এ কলমবন্দ স্ট্রাইক কা লিড দেতা হ্যায়। আপ কা নোকরী টুট জায়গা।

ফররুখ ভাই সোজা আলিফের মতো খাড়া হয়ে বললেন, রিযিক কা মালেক আল্লাহ হ্যায়-আপ নেহী। বলেই ছাতাটা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরলেন। পরে সেই ডিরেকটর জেনারেল সব কিছু জেনে এবং ফররুখ ভাইয়ের ন্যায়নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে মাফ চেয়েছিলেন।

  1. বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সাহিত্যিক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ লিখেছেন, একবার আমরা কয়েকজন তাঁর সংগে দেখা করে গিয়ে একটি তরুণের প্রতি তাঁকে ক্ষুব্ধ হতে দেখি। রাজশাহীতে তরুণটি তাঁর সাত সাগরের মাঝি পড়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে এবং কাব্য সম্পর্কে তাঁর সঙ্গে কিছু অজানা বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসে। ফররুখ নিজের প্রশংসা শোনা পছন্দ করতেন না। ছেলেটির প্রশংসা শুনে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু আলোচনা করতেই অস্বীকার করলেন। হতাশ হয়ে ছেলেটি চলে যায় আমরা ফররুখের ঘরে ঢুকে দেখি তিনি রাগে ফুঁসছেন এবং বলছেন, আমি এ-সব সস্তা প্রশংসা শোনা পসন্দ করি না। আমি এ ধরনের প্রশংসার জন্যে কলম ধরি নি। আমি লিখেছি আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্যে। কোনো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পাওয়া তো আমার কাম্য নয়। আমায় কত প্রতিষ্ঠান থেকে সম্বর্ধনা দেবার জন্য প্রস্তাব করেছে, আমি তাতে সম্মত হই নি। যারা সম্বর্ধনা গ্রহণ করে তারা প্রকারান্তরে ফেরাউনের দলে মিশে যায়।….

ইসলামের রীতিনীতিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যদি কোনো কিছু করা যায় তাহলে করবো নাহলে উপোস করে মরে যেতে প্রস্তুত আছি, তবুও কোনো গায়ের-ইসলামি কাজ করবো না, এই ছিল ফররুখ আহমদের জীবন-নীতি। তাঁর জীবনের দ্বিতীয় নীতি ছিল একমাত্র আল্লাহর কাছেই হাত পাতবো, এ দুনিয়ার কোনো মানুষের কাছেই হাত পাততে পারি না, অপরের কাছে কোনো সাহায্য চাইতে পারি না। আমার মাথা একমাত্র আল্লাহর কাছে নত করতে পারি।১০

  1. বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মীর নূরুল ইসলাম লিখেছেন, একবার বুখারী সাহেব ফররুখ ভাইকে সরকারি খরচে আরব দেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেছিলেন। শুনেছি, তিনি সরাসরি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন এই বলে যে, মক্কা সফর করার তাঁর ইচ্ছা আছে। কিন্তু তা সরকারি খরচে নয়। আল্লাহ তওফীক দিলে নিজের পয়সায় যাবেন।১১
  2. বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও প্রবন্ধকার এ. জেড়. এম. শামসুল আলম লিখেছেন, একবার বিদেশে একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্যে ফররুখ আহমদকে মনোনীত করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভাবলেন, এ সুখবরটি তিনি নিজেই কবিকে দেবেন। সময়টা ছিল হজ্জের কিছু আগে। ফররুখ আহমদ ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম। সম্মেলন হতে ফেরার পথে তিনি হজ করে আসতে পারেন, এটা ভেবেই তাঁকে সাহিত্য সম্মেলনে যোগদানের জন্যে, বিশেষ করে এ সময়, মনোনয়ন দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল যে, ফররুখ আহমদ এ সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। তাঁকে কিছু না বলে মনোনয়নের চিঠিটা দিয়ে দিলে হয়ত বিদেশে সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়া হতো, আর তার হজও হয়ে যেত। কিন্তু যাতে কবি হজ করে আসতে পারেন, তাই তাঁকে এ সময় নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, একথা বলার পরই কবির মধ্যে হলো তার স্বভাবগত এবং কবিসুলভ প্রতিক্রিয়া। তিনি বলে ফেললেন, সরকারি পয়সায় হজ হয় না। আর এরূপ সরকারি ঘুষও তিনি খান না। আসলে কোনো কিছু মনে না করে, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য না রেখে, নিতান্ত নির্দোষভাবেই তাঁকে সাহিত্য সম্মেলনে যোগদানের জন্যে মনোনীত করা হয়েছে, একথা আর কে তাঁকে বোঝাবে। একবার যখন তিনি না করে বসেছেন, তাঁকে আর হাঁ করান কার সাধ্য। তিনি সাহিত্য সম্মেলনেও গেলেন না, হজও তাঁর জীবনে করা হলো না।১২
  3. বিশিষ্ট গবেষক ও প্রবন্ধকার ড. রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, তিনি আইয়ুব খানের কাছ থেকে আদমজী পুরস্কার আনতে করাচি যেতে রাজি ছিলেন না। পাকিস্তানি শাসকদের ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যকলাপে ফররুখ ভাই এতই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে, তাঁকে কখনো রাইটার্স গিল্ডের কোনো কনফারেন্সে পশ্চিম পাকিস্তানে নেওয়া যায়নি। ফররুখ ভাই রেডিওর কর্মচারী ছিলেন আর ওদিকে পাকিস্তান সরকারের তথ্য বিভাগের কর্মকর্তা কুদরতুল্লাহ শাহাব ছিলেন রাইটার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু ফররুখ ভাই কোনোদিন কোনো আমলাকে তোয়াক্কা করতেন না; বরং সেসব জাঁদরেল আমলারাই ঢাকা এলে ফররুখ ভাইয়ের ভাঙা বাড়িতে গিয়ে তাকে তোয়াজ করে আসতেন। কিন্তু সেসব মুহূর্তে ফররুখ ভাই যেমন মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে চলতেন, ঠিক তেমনি ব্যবহার ও আচরণ করতেন। বস্তুত পাকিস্তানি আমলারা ফররুখ ভাইকে রীতিমতো তোয়াজ করতেন আর ঢাকা রেডিওর কর্মকর্তারা তাঁকে দস্তুরমতো ভয় পেতেন। ফররুখ ভাইয়ের আপোসহীন স্বাধীনতা নির্লোভ আদর্শবাদী চরিত্রের সামনে সব সুবিধাবাদীই মাথা নীচু করে চলতেন। ফররুখ ভাই ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লোভের উর্ধ্বে ছিলেন।১৩
  4. বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আখতার-উল-আলম লিখেছেন, কবিকে পাকিস্তানপন্থী বলে সব সময়ই সমালোচনা করা হত। তিনি অবশ্যই পাকিস্তানপন্থী ছিলেন, কিন্তু প্রচলিত অর্থে নয়। পাকিস্তানের যতটুকু ইসলাম, ফররুখ আহমদের পাকিস্তানপ্রীতিও ঠিক ততটুকুই। পাকিস্তানি শাসকবর্গ কতবার কতভাবে কবিকে যে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, ইয়ত্তা নাই। কিন্তু ফররুখ ছিলেন আলাদা ধাতের। তিনি ভাঙবেন, তবু মচকাবেন না। শুনলে অবাক হতে হয়, বারকয়েক সরকারিভাবে অনুরোধ পাওয়া সত্ত্বেও ফররুখের মত কবি তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো দিন যান নাই। প্রতিবারই পাকিস্তানের জালেম শাসকদের দাওয়াত তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।১৪

তাঁর ইসলামি জোশ-উদ্দীপনা

ফররুখ আহমদ শুধু লেবাসি ইসলামে বিশ্বাসী ছিলেন না। নিজে যেমন মনে-প্রাণে ইসলামি জোশ-উদ্দীপনা লালন করতেন, তেমনি অন্যদেরও এই চেতনার নির্যাস দিয়ে দীপিত-উদ্দীপিত করেছেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মীর নূরুল ইসলাম লিখেছেন, উনিশ শ ঊনসত্তর সালের কথা। ঈদের আগে কারাকুলের একটি নতুন টুপি কিনেছি। নতুন স্যুট পরে সেই টুপি মাথায় দিয়ে গিয়েছি এক ইসলামি মাহফিলে—ফররুখ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। মুচকি হেসে বললেন, মাশা আল্লাহ! বেশ মানিয়েছে। কিন্তু শুধু লেবাসে মুসলমান হওয়া যায় না। মনে-প্রাণে ইসলামি জোশ থাকতে হবে।১৫

ফররুখ তাঁর এক কবিতায় বড় দুঃখভরা মন নিয়ে বলেছেন,

অথবা পঙ্গু দুর্বল আজ ঈমান তাই

পরাজিতের এ দুয়ারে জেহাদী নিশান নাই।

তাঁর মানবতাবোধ

ফররুখ ছিলেন মানবতার বলিষ্ঠ প্রবক্তা। বলাবাহুল্য তাঁর মানবতাবোধ ছিল ইসলামের জীবনিসত্যে উদ্দীপিত। তিনি ইসলামের মানবতাবাদী আদর্শের গভীর ও সুদৃঢ় বিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন। দুঃস্থ-অসহায় মানুষের প্রতি সব সময়ই তিনি সাহায্যের হাত প্রসারিত করতেন। নিজের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্য-পীড়া কাউকে বুঝতে দিতেন না তিনি। নিজের আর্থিক সংকট সত্ত্বেও অন্যের বিপদে অর্থ বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করতেন না। তিনি যেন কুরআনের এ আয়াতের প্রতিচ্ছবি:

وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ١۫ؕ وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَۚ۰۰۹

অর্থাৎ আনসারগণ নিজেদের ওপর মুহাজিরগণকে অগ্ৰাধিকার দিতেন। যদিও নিজেরা অভাবগ্ৰস্ত ও দারিদ্রপীড়িত ছিলেন। বস্তুত যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর: ৯)

এটাই মূলত: উত্তম সাদাকাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সবচেয়ে উত্তম সাদাকা হচ্ছে, কষ্টে অর্জিত অল্প সম্পদ থেকে দান করা (আবু দাউদ: ১৬৭৭)

ফররুখ আহমদের ভাগ্নে বিশিষ্ট সাংবাদিক সুলতান আহমদ লিখেছেন, একদিনের কথা। এক দুঃস্থ শিল্পী এসে কেঁদে পড়লেন। তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে রক্ত দিতে হবে। একটি টাকাও কারো কাছ থেকে পেলেন না। মেজমামা মুখ তুলে তাকালেন। সেইদিনই তিনি বেতন পেয়েছিলেন। মুঠো ভরে পকেট থেকে সব টাকা তুলে লোকটার হাতে দিয়ে বললেন, আপনার স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে গেলেন মেজমামা।১৬

আল্লামা ইকবালের এই কবিতারই প্রতিচ্ছবি যেন ভেসে উঠেছে তাঁর মাঝে-

সে রিক্ত? তবু সে জেনো আত্মার আলোকে দীপ্ত, পূর্ণ, শক্তিমান।

ক্ষয়িষ্ণু সঞ্চয় তার? তবু জেনো সবচেয়ে প্রজ্ঞাপূর্ণ তার মুক্ত প্রাণ।

(কাব্যানুবাদ: ফররুখ আহমদ)

তাঁর শিক্ষা-চিন্তা

ফররুখের আশা ছিল পাকিস্তান হবে এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে ইসলামের মহৎ মানবতাবাদী আদর্শের রূপায়ণ ঘটবে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সুদীর্ঘ চব্বিশ বছরেও ইসলামি আদর্শ ও ন্যায়-নীতির বাস্তবায়ন ঘটেনি দেখে ফররুখ আশাহত হন। পাকিস্তানি শাসকদের এই আদর্শহীনতা, মোনাফেকি, নীতিভ্রষ্টতা এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছদ্মনামে লেখনী চালিয়েছিলেন তখন। বাংলাদেশ আমলে তাঁর মনে নতুন করে আশার প্রদীপ জ্বলেছিল। তিনি ভেবেছেন এবার হয়ত সঠিক ইসলামের অভ্যুদয় ঘটবে। এই চিন্তা-প্রদীপের আলোকরেখায় তাঁর মনে ভেসে উঠেছে শিক্ষাব্যবস্থার কথা। তিনি ত ছিলেন স্বকালের একজন মহান অন্তর্জ্যোতিষ্মান যুগদ্রষ্টা। দূরদর্শী ও অন্তর্দর্শী কবি ফররুখ সমকালীন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে তখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তিনি আস্থাশীল হতে পারেন নি। কবি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ব্রিটিশপ্রণীত ধর্মহীন এ শিক্ষাব্যবস্থা নতুন প্রজন্মের ইসলামি আকীদা-বিশ্বাস নিশ্চিহ্ন করে সেক্যুলার চেতনায় মগজ ধোলাইয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে শিশুশ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার একটি ইসলামি রূপরেখা তৈরি করেন।

এ সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আখতার ফারুক তাঁর স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে লিখেছেন, জেল থেকে বেরিয়ে তাঁর সাথে আমার শেষবারের মত দেখা হল। আলাপ চলল একাধারে তিন-চার ঘণ্টা। তবু তাঁর খেয়াল নেই। ঘর থেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হল, রাত অনেক হয়েছে। সেই সুদীর্ঘ আলোচনায় দেশ, জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, সাহিত্য সব অঙ্গনের পরিক্রমা ঘটেছিল। তিনি বললেন, দেখ ফারুক, আমরা বড় অপ্রয়োজনীয় কাজে মেতে উঠেছিলাম। আল্লাহ তাই আমাদের এক থাপ্পড় দিয়ে বসিয়ে দিলেন কাজের কাজ করার জন্যে। এই দেখ আমি শিশুদের অ আ ক খ থেকে এম. এ. ক্লাস পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের পুরো পরিকল্পনা দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। শুধু ইসলাম ইসলাম স্লোগানই চলেছে এতদিন। ইসলাম বাস্তবায়নে নিখুঁত পরিকল্পনা নেয়া হয় নি। নেবে কে? নেবেই বা কেন? পঁচিশ বছর তো শুধু মোনাফেকের রাজত্ব চলেছে। আল্লাহ মোনাফেকদের বিদায় দিয়েছেন এবার সঠিক ইসলামের অভ্যুদয় ঘটবে; তারই প্রস্তুতিপর্ব আমাদের সম্পাদন করতে হবে। সময় কম, কাজ অনেক। পুরোদমে কাজ করে যাও।১৭

জীবন-সায়াহ্নে কবি

শেষের দিকে সাধারণ সাহিত্য চর্চায় তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না। কুরআন শরীফের কিছু সুরার অনুবাদ করা, হামদ, নাত ইত্যাদি রচনা করা, তফসির পড়া, তসবী পড়া ইত্যাদিতেই ব্যস্ত থাকতেন। যদিও নফল ইবাদত চুপেচাপেই করতেন।১৮

ইংরেজি থেকে আল-কুরআনের অনুবাদ করতে গিয়ে তাঁর মনে শংকা ছিল, হয়তো বা তিনি মূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তাই সে যুগে কুরআনের অনুবাদে তিনি আর অগ্রসর হননি।১৯

কবি প্রায়ই আল্লাহঅলাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করতেন। তাঁদের সান্নিধ্য-পরশে কবির জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। আল্লাহপ্রেমিকরা সব সময় নিজের জিহ্বাকে আল্লাহর জিকিরেই সিক্ত রাখেন। এতেই রয়েছে হৃদয়ের শান্তি ও প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন, জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সুরা রাদ: ২৮)

কবির মধ্যেও ছিল নির্ভেজাল ইখলাস ও নিখাদ খোদাভক্তি। আল্লাহর জিকিরেই যেন ছিল তাঁর আত্মার প্রশান্তি। কবি তাঁর এক কবিতায় বলেন,

কি হবে সে যশ দিয়ে

আত্মার প্রশান্তি নেই যাতে?

মনে হয় যেন কবি খোদাপ্রেমের শরাব পান করেছিলেন। তাই দেখা যায়, জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তাঁর জিহ্বা আল্লাহর জিকিরেই সিক্ত ছিল।

আমর ইবনুল আস (রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমি এমন একটি বাক্য জানি, যে বাক্যটি যদি কেউ তাঁর অন্তর থেকে সত্যিকারভাবে বলে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে জাহান্নাম তাঁর জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। বাক্যটি: লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ। (মুসতাদরাক হাকিম: ১/১৪৩, ৫০২)

অন্য হাদীসে মুআয ইবনু জাবাল (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার সর্বশেষ কথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসতাদরাক হাকিম: ১/৬৭৮)

কবির মৃত্যুর আগের দিনের বর্ণনা দিয়েছেন বিশিষ্ট কবি ও গবেষক আবদুস সাত্তার। তিনি লিখেছেন, আমরা তার ইস্কাটনের বাসায় গেলাম। ফররুখ ভাইয়ের ছেলে মাহমুদ এলো। তাঁর কাছে ফররুখ ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করায় সে কোনো কথা না বলে ব্যথিত চিত্তে আমাদেরকে নিয়ে গেলো সোজা শোবার কক্ষে। গিয়ে দেখি, তিনি টেবিলে ডান পা-টা তুলে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন এবং ঠোঁট দুটি আল্লাহর জেকেরে কেবল নড়ছে। আমি জোরে জোরে দুবার আসসালামু আলায়কুম, ফররুখ ভাই বলতে তিনি চোখ মেলে চাইলেন এবং বললেন, কেমন আছেন, বসেন। আপনি সম্বোধনে কথাবলায় আমরা চমকে উঠলাম এবং কানের কাছে গিয়ে বললাম, ভাই, আমি আবদুস সাত্তার। আমাকে আপনি আপনি বলছেন কেন?  তিনি প্রায় অচেতন অবস্থায় বললেন, তুই কখন এলি? কেমন আছিস?  এবার একটু আশ্বস্ত হলেও তাঁর সেই অভ্রভেদী চোখের দিকে চেয়ে কান্নায় চোখ ভরে এলো। মাহমুদকে বললাম, তোমরা ডাক্তার ডাকো। এই আমরা আসছি। টাকার দরকার পড়লে নিঃসঙ্কোচে বলো।

সাদিক সাহেব ও আমি দৌড়ে খবর দিলাম পার্শ্ববর্তী কবি তালিব হোসেনের বাসায় এবং তাকে ফররুখ ভাইয়ের ওখানে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা গেলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রী মান্নান ভাইয়ের কাছে, হাসপাতালে সিটের কথা বলতে। মান্নান ভাই আমার বাল্যবন্ধু এবং তাঁকে বলামাত্র সঙ্গে সঙ্গে তিনি পি জি-তে টেলিফোনে সিটের ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি ও সাদিক পিজি-তে চলে গেলাম। পিজি-র আর. পি. আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, কেস সার্জিক্যাল না মেডিসিনের?  আমার জানা ছিল বলে বললাম, কেস মেডিসিনের। আর. পি. সাহেব তৎক্ষণাৎ আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে সঙ্গে সঙ্গে সিটের ব্যবস্থা হলো। আমি ওখানে রয়ে গেলাম এবং সাদিকুর রহমান সাহেবকে পাঠালাম আদ্যোপান্ত খরচ দিয়ে তাড়াতাড়ি ফররুখ ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে। বিকেলের দিকে যখন আর কেউই আসলেন না, আমি ফিরে গেলাম। ইস্কাটনে গিয়ে শুনি যেই ফররুখ ভাই বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে তিনি বেঁকে বসলেন। তার মন্তব্য ছিল: আমি বাসাতেই মরবো, কিন্তু… পরের দিনই তিনি মারা গেলেন।২০

বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার আবদুল লতিফ লিখেছেন, ফররুখ ভাই যেদিন মারা গেলেন, সেদিন আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে আমার স্ত্রীর কাছে শুনলাম যে, ফররুখ ভাইয়ের লাশ ঢাকা হয়েছিলো আমারই একখানা চাদর দিয়ে অর্থাৎ লাশ ঢাকার মতো একখানা চাদরও তাঁর ঘরে ছিলো না। ফররুখ ভাইয়ের কবরের জায়গা দিয়েছিলেন এদেশের বিখ্যাত বিপ্লবী কবি বেনজীর আহমদ। অন্যথায় আমরা কোথায় কি ভাবে ফররুখ ভাইয়ের লাশ দাফন করতাম জানি না।২১

মৃত্যু-পরবর্তী ঘটনা

এদিকে কবিকে গোসল দিয়ে কাফনের আয়োজন চলছে। হঠাৎ একটা চঞ্চল উত্তেজনা সবার মধ্যে লক্ষ করা গেল। খবর নিয়ে জানা গেল, কাফনের সব কিছু আনা হয়েছে কিন্তু আতর আনার কথা কারো মনে ছিল না। আবার ব্যস্ততা, আবার অস্থিরতা। এমন সময় একজন আতরের একটি ছোট্ট শিশি এনে বললো, এই যে আতর। মক্কা থেকে কবির এক গুণগ্রাহী ভক্ত কবিকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সুদূর মক্কা থেকে কে এই আতর বয়ে নিয়ে এল? আর কেই বা তাঁর জন্যে আতর পাঠালো? খবর নিয়ে জানা গেল, একজন সফেদমণ্ডিত সাদা আলখেল্লা পরিহিত দরবেশের মত মানুষ এখানে এসে কবি ফররুখ আহমদের খোঁজ করছিলেন। তিনি যা বলেছেন তার মর্মার্থ হল, তিনি যখন মক্কায় গিয়েছিলেন তখন কবির একজন ভক্ত তাঁকে এই আতরের শিশিটি কবিকে নিজ হাতে পৌঁছে দেবার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরও কবির সঙ্গে পরিচিত হবার আগ্রহ ছিল বহুদিন থেকে। তাই এই আতরের কল্যাণে তিনিও কবির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন ভেবে আতরের শিশিটি অতি আনন্দের সঙ্গেই বহন করে এনেছেন। কিন্তু নানা রকম ব্যস্ততায় এতদিন তার পক্ষে এই আতর আর কবিকে পৌছানো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। আজ তিনি কবির কাছে সেই আতর পৌঁছাতে পেরে বড় আনন্দিত বোধ করছেন।

কিন্তু কবির জানাজার পর যখন সেই আতর বহনকারীর খোঁজ করা হল, আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না। এমন কি যিনি আতরের শিশিটি এনে বলেছিলেন এই যে আতর তাঁকেও আর সেই হাজার লোকের ভীড়ে সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। কবির কোনো এমন ভক্ত মক্কায় ছিলেন, যিনি শুধু শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ এই ছোট্ট এক শিশি আতর পাঠিয়েছিলেন। তিনি কে? আর তিনিই বা কে, যিনি ঠিক কবির কাফনের সময়েই সেই আতর নিয়ে হাজির হয়েছিলেন? কারা তাঁরা? না, সে পরিচয়ের আজ আর প্রয়োজন নেই।২২

ফররুখ আহমদ ছিলেন একজন ইনসানে কামিল। নৌফেল ও হাতেম কাব্যনাট্যের নিম্নোক্ত পঙ্ক্তিতে তাঁর জীবনের আদর্শ চমৎকারভাবে উচ্চারিত হয়েছে:

মুমিনের মৃত্যুই চেয়েছি

দীর্ঘদিন এ জীবনে আল্লাহর দরগাহে। অসত্যের

অন্যায়ের পদপ্রাস্তে চাইনা আত্মসমর্পণ পৃথিবীতে।

ফররুখ আহমদের জীবনে আত্মসমর্পণের কোনো গ্লানি নেই। মুমিনের মৃত্যু কামনার পাশাপাশি শহীদী মৃত্যু তিনি প্রত্যাশা করেছেন। ১৯৬৯ সালে ইসলামি শিক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে রমনা রেসকোর্স ময়দানে জীবন দিতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা আবদুল মালেককে। ফররুখ আহমদ এ শহীদী মৃত্যুকে সংবর্ধিত করে লিখেছেন,

জীবনের চেয়ে দীপ্ত মৃত্যু তখনি জানি

শহীদী রক্তে হেসে ওঠে যবে জিন্দেগানী।২৩

অর্ধাহারে-অনাহারে, একরকম বিনা চিকিৎসায় সমাজের উপেক্ষার-অবজ্ঞার কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে ফররুখ আহমদ চিরবিদায় নিলেন। একজন শক্তিমান কবি হওয়া সত্ত্বেও জীবিতাবস্থায় যেটুকু প্রাপ্য ছিল, তা তিনি পাননি। বরং এক নির্মম লাঞ্ছনা আর দুঃসহ বঞ্চনার জীবন বরণ করে নিতে হয়েছে তাঁকে। তবু তিনি মাথা নত করেন নি কোনো শক্তির কাছে। স্বমহিমায় স্বদর্পে মর্দে মুমিনের মতোই মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন,

মর্দে মোমেন-ঈমানদারের নিশানি জানাই, শোন;

মরণ লগ্নে হাসি ছাড়া মুখে চিহ্ন রবে না কোনো। (কাব্যানুবাদ: ফররুখ আহমদ)

কবি হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। কোনো রক্তচক্ষু, কোনো প্রলোভন তাঁর বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে নি। তাঁর অবিচল আদর্শবাদিতা এবং নিরাপোস ভূমিকা উজ্জ্বলতম রশ্মিতে দীপ্তিমান থাকবে চিরকাল।

বাংলা কাব্য-ভাণ্ডারকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর জন্ম ও মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান তো দূরে থাক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোরও কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। প্রতি বছরই অনেকটা নীরবে-নিভৃতে কেটে যায় ফররুখ আহমদের মতো শক্তিমান কবির জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী। মিডিয়া কভারেজও পায় না তেমন। অধিকাংশ মিডিয়া একেবারে চেপে যায়। কারণ তিনি ওদের ভাষায় একজন সাম্প্রদায়িক কবি।

আমরা মনে করি, একবিংশ শতাব্দীর এ মহা সংকটকালে এরকম একজন মর্দে মুমিনের আলোকোজ্জ্বল জীবন ও কবিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা কেবল বাঞ্ছনীয় নয়, একান্ত অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁর ঈমানদীপ্ত বিপ্লবী দাস্তান ও কাব্যমালা নতুন প্রজন্মর চেতনা-প্রবাহে ইসলামি বিপ্লবের বাঁশি বাজাবে, তাদের সুপ্ত ঈমানী চেতনাকে তীব্রভাবে জাগিয়ে তুলবে। আল্লাহ আমাদেরকে কবির জীবন ও কবিতা থেকে আলো গ্রহণ করে আমাদের জীবনে সেই আলোক-প্রদীপ জ্বালাবার তাওফিক দান করুন। আর কবিকে নিজ অনুগ্রহে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সাউদ বিশ্বদ্যিালয়, রিয়াদ

তথ্যপঞ্জি

  1. ঢাকা ডাইজেস্ট, নভেম্বর ১৯৭৪ সংখ্যা
  2. প্রাগুক্ত
  3. ফররুখ আহমদের স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য, অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.; প্রকাশকাল: ১ জুন ২০১৫, পৃ. ৪৯১
  4. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ৩৪২
  5. প্রাগুক্ত, ১৬৭-১৬৮
  6. ঢাকা ডাইজেস্ট, নভেম্বর ১৯৭৪ সংখ্যা
  7. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ১৬৭-১৬৮
  8. ফররুখ আহমদের স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য, অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.; প্রকাশকাল: ১ জুন ২০১৫, পৃ. ৪৯১-৪৯২
  9. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ১৩২
  10. ফররুখ আহমদের স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য, অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান সম্পাদিত, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.; প্রকাশকাল: ১ জুন ২০১৫, পৃ. ২৯
  11. ফররুখ আহমদ: তাঁকে যেমন দেখেছি নামে দৈনিক বাংলার ১৯৭৬-এর ১১ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত
  12. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ১৫৭
  13. প্রগুক্ত, ১৫১
  14. প্রগুক্ত, ২০০
  15. ফররুখ আহমদ: তাঁকে যেমন দেখেছি নামে দৈনিক বাংলার ১৯৭৬-এর ১১ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত
  16. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ২০৭
  17. প্রাগুক্ত, ৭৬
  18. ফররুখ একাডেমী পত্রিকা, ঊনবিংশ সংকলন, জুন ২০১০
  19. ফররুক আহমদ: ব্যক্তি ও কবি, শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা, তৃতীয় সংস্করণ: চৈত্র ১৪১০ বাংলা, এপ্রিল ২০০৪ ইংরেজি, সফর ১৪২৫ হিজরী; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ. ১৪৫
  20. প্রাগুক্ত, ১৩৩-১৩৪
  21. প্রাগুক্ত, ৮১
  22. প্রাগুক্ত, ২২০
  23. ফররুখ একাডেমী পত্রিকা, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, অক্টোবর ২০০২
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ