জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:) নিভে গেল ইলমি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল প্রদীপ

আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:) নিভে গেল ইলমি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল প্রদীপ

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী আইন গবেষক, মুহাদ্দিস, লেখক ও এদেশের প্রাচীনতম মাদরাসা চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের সদ্য নিযুক্ত মহাপরিচালক ও প্রধান মুফতি আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ:)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাটহাজারী মাদরাসার তিন সদস্যবিশিষ্ট সর্বোচ্চ পরিচালনা পরিষদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইলমি অঙ্গনে একটি উজ্জ্বল প্রদীপ নিভে গেল।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শুরার গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন বসে। বৈঠকে তাকে মহাপরিচালক নির্বাচিত করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টা দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একটু পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। সারা জীবন তিনি পঠন-পাঠন, ফতোয়া লিখন, আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসায় সৃষ্ট নানা মাসায়িলের শরিয়াসম্মত জবাব দিয়ে গেছেন। সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনের দৈনন্দিন নানা প্রশ্ন, সঙ্কট, দাম্পত্য সমস্যা, দেন মোহর, নারী অধিকার, সুদনির্ভর ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা, ইসলামী অর্থনীতি, হুন্ডি, এমএলএম ও শেয়ার ব্যবসার স্বরূপ এবং মানবদেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতিস্থাপন প্রভৃতি আধুনিক বিষয়াবলি নিয়ে তিনি কলম ধরেছেন। কুরআন, হাদীস ও ফিকহে ইসলামীর আলোকে গবেষণা করে সমাধান দিতে প্রয়াসী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানির সাথে কিছু বিষয়ে বিশেষত ইনস্যুরেন্স ও প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে তার ফিকহি ইখতিলাফ ছিল। এই মতদ্বৈধতা ছিল মূলত একাডেমিক ও গবেষণানির্ভর। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল বরাবরের মত মধুর ও উষ্ণ।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মনীষী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানাধীন নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে তিনি ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তিহন এবং ১৯৫৮-১৯৬১ পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। অতঃপর চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন দীনী শিক্ষা নিকেতন জিরি আল-জামিয়া আল-আরাবিয়া আল-ইসলামিয়ায় ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। জীবনের সব পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। তখন জিরি মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি (রহ:)-এর শীষ্য ও দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতিছাত্র আল্লামা আবদুল ওয়াদুদ সন্দ্বীপী (রহ:)। জিরি মাদরাসা অনেক বড় ও উঁচুমাপের আলিম, মুহাদ্দিস ও বুজুর্গ তৈরি করে আসছে। পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি আজিজুল হক (রহ:), পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়ার সহকারী মহাপরিচালকমাওলানা শাহ আলী আহমদ বোয়ালভী (রহ:), জিরি মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি নুরুল হক (রহ:), জিরি মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা শাহ তৈয়ব (রহ:), চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের শায়খুল হাদীস মাওলানা এহসানুল হক সন্দ্বীপী (রহ:) ও হালিশহর বায়তুল করীম মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা ফরিদ আহমদ আনসারী জিরি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। হাটহাজারী দারুল উলুমের সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফি (রহ:) কিছুদিন জিরি মাদরাসায় পড়ালেখা করেন।

আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:)। অতঃপর হাদীস ও ফিকহশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য করাচীর আল্লামা বিননুরি টাউনস্থ জামিয়াতুল উলম আল ইসলামিয়ায় পুনরায় দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বেফাক বোর্ড পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। অতঃপর আল্লামা ইউসুফ বিননুরির তত্ত্বাবধানে উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগে দু’বছর গবেষণা করে তাখাস সুসনদ অর্জন করেন। ইফতা বিভাগে গবেষণাকালীন দু’বছরে ইসলামী আইন বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থের প্রায় চল্লিশ হাজার পৃষ্ঠার অধিক অধ্যয়ন করেন। তার ভাষাদক্ষতা, ইলমি গভীরতা ও সৃজনশীল প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের বিশেষত মুফতিয়ে আজম আল্লামা ওলি হাসান টুংকি (রহ:)-এর পরামর্শে আল্লামা ইউসুফ বিননুরি (রহ:) তাকে বিননুরি টাউন মাদরাসায় সহকারি মুফতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। পাশাপাশি তিনি সহিহ মুসলিম ও জামে তিরমিযির দরস দিতেন। ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগের (দারুল ইফতা) প্রধান নির্বাচিত হন। ২৮ বছর তিনি এই বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রদত্ত ফতোয়া উপমহাদেশের ওলামা মাশায়েখরা সম্মানের সাথে গ্রহণ করতেন। এ ছাড়া করাচীর বিখ্যাত শাব্বির আহমদ উসমানী (রহ:) জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী প্রদত্ত বিপুল ফতোয়া বিননুরি টাউন মাদরাসার ইফতা বিভাগের রেজিষ্ট্রি লেজারে সংরক্ষিত আছে। কারণ তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ইফতা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ইফতা বিভাগে প্রতি বছর ৮/৯ হাজারেরও অধিক ফতোয়া জমা হত। সে হিসেবে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক ফতোয়া তার তত্ত্বাবধানে লেখা হয়েছে।

২০০১ সালে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং আল্লামা আহমদ শফি (রহ:)-এর আহ্বানে দারুল উলুম হাটহাজারীর মুফতি হিসেবে যোগদান করেন। ইফতা বিভাগ ছাড়াও সুনানু আবি দাউদ, মাআনিল আসার লিত তাহাভী, সুনানু ইবনি মাজাহ প্রভৃতি হাদীসের কিতাবের পাঠদান করতেন। ছোট বড় বিষয়ভিত্তিক তিনি ৩০টিরও অধিকমূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে আহকামে তাওহীদ ও রিসালত, জাওয়াহিরুল ফতোয়া (১-৫ খণ্ড), হাদীসের আলোকে যুগজিজ্ঞাসা-শরয়ীসমাধান (১-২ খণ্ড), ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলনীতি, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা, ইসলামের দৃষ্টিতে মানব অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতিস্থাপন, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার তাত্ত্বিক আলোচনা, করোনাকালীন সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান,  সন্তানের অধিকার ও প্রতিপালন, তাযকিরায়ে মুখলিস, আহকামে রামাযান, কুরবানির আহকাম ও মাসায়েল, রহমতে দু’আলমের মাকবুল দুআ, ইসলামী সাক্ষ্য আইন ও মুসলিম নারী, মালফুযাতে বোয়ালভী, বিতর নামায ও রাকাআত সংখ্যা, ফিকহের আলোকে নামাযে নারী-পুরুষের ব্যবধান, বাংলাদেশে জিহাদের শরয়ী বিধান অন্যতম। তার লিখিত গবেষণাগ্রন্থসমূহ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।

‘বিশ্বনন্দিত হাদীস বিশারদ সিরিয়ার শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ:) পাকিস্তান সফরে এলে মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী সাহেব তার থেকে হাদীসের ইজাযত গ্রহণ করেন আর অপরদিকে শায়খ আবু গুদ্দাহও চাটগামী সাহেব থেকে ইজাযত গ্রহণ করেন! সুবহানাল্লাহ! এথেকে যেমন শায়খ আবু গুদ্দাহ (রহ:)-এর বিনয় ও মহানুভবতার পরিচয় মেলে, তেমনি মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:)-এর একাডেমিক উৎকর্ষ ও উচ্চাবস্থানের আভাস পাওয়া যায়’ (মাহফুয আহমদ, গবেষক ও ভাষ্যকার, ইকরা টিভি, লন্ডন)

আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামীকরোনাকালীন মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি নির্বিঘ্ন রাখতে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতির ওপর বিধিনিষেধ বাতিল এবং দেশের সকল নাজেরা ও হেফজখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাজেরা ও হেফজখানা বন্ধ ও মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্ধারণ করে সরকারি বিধি জারি কোনভাবেই যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত নয়। তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতেও শহর এবং গ্রাম এলাকার প্রত্যেকটি বাজার, নিত্যপণ্যের দোকান ও ব্যাংকসমূহে দীর্ঘ সময় মানুষের জনসমাগম ও উপচেপড়া ভিড় চলছে। গার্মেন্টসসহ কলকারখানা চালু রয়েছে। অথচ ইবাদত বন্দেগির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ ও সংখ্যা নির্ধারণ করার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।’

আধুনিক যুগে হরতাল ও ধর্মঘট  প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। এর যৌক্তিকতা ও বাড়াবাড়ি নিয়ে আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:)-এর একটি ফতোয়া ব্যাপক সাড়া জাগায়। জনৈক ব্যক্তি লিখিতভাবে তার কাছে জানতে চান ইসলামে হরতালের ডাক দেয়া এবং হরতালে অংশ নেয়া জায়েজ আছে কি না? এতে ফ্যাসাদের আশংকা থাকে। এটা কী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয় ? কোন দল বা গ্রুপ যদি যদি হরতালের ডাক দেয় তাতে কোন দীনী অথবা রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মিরা সহযোগিতা করতে পারবেন কি না?  জবাবে তিনি বলেন, ‘হরতালের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের সাথে অসহযোগিতা। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং জুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে নিষ্কৃতি লাভ। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কখনো হরতাল জায়েজ এবং সওয়াবের কাজ। আবার কিছু পরিস্থিতিতে হরতাল নাজায়েজ। সরকার যদি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল ও দীনী মেজাজের হয়। ইসলামী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠায় যত্নবান থাকে। ইসলামী আইন কানুন চালু রাখতে অপারগ না হয়। সরকার তার জনগণের সাথে কোন ধরনের জুলুম ও বাড়াবাড়ি করে না। এমন সরকারকে সহযোগিতা করা ও নির্দেশ মেনে চলা ওয়াজিব। এমন সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা, চাপ প্রয়োগ করা বা অসহযোগিতা প্রদর্শন পাপ ও অপরাধ। অপর দিকে যে সরকার ইসলামী নয়। ইসলামের বিধি বিধান প্রয়োগে যত্নবান নয় এবং এর সক্ষমতাও নেই। উপরন্তু জাতি ও জনগণের প্রতি জুলুম করে। এমন সরকারকে সহযোগিতা করা ঠিক নয় বরং নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এই ধরনের সরকারকে সহযোগিতা করা মানে জুলুম ও পাপকে সহযোগিতা করা। এ জাতীয় সরকারকে অসহযোগিতা করা কেবল জায়েজ নয়, জরুরিও বটে। হরতালের মাধ্যমে যেহেতু অসহযোগিতা প্রকাশ পায় এবং জুলুমের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা যায় তাই হরতাল অনেক সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জালিম সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল করা বিদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে না। ইসলামী রাষ্ট্র বা ন্যায়পরায়ণ সরকারের বিরুদ্ধে অন্যায্যপন্থায় সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালালে তা সন্দেহাতীতভাবে বিদ্রোহ। ন্যায্য দাবি নিয়ে হরতাল করলে বিদ্রোহ হবে না। স্মর্তব্য যে, কোন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার যদি ইসলামী না হয় এবং জনগণের ওপর নিবর্তন চালায় তো এমন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ যেমন জায়েজ নেই, তেমনি সহযোগিতাও বৈধ নয়। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, হরতালের সময় দুষ্কৃতিকারীরা সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সরকারি-বেসরকারি সম্পদ বিনষ্ট করে ফেলে। এগুলো গর্হিত কাজ ও নাজায়েজ। শরীয়তে এই জাতীয় কর্মকাণ্ড অনুমোদিত নয়। এরা সন্ত্রাসী এবং সাজা পাওয়ার উপযুক্ত (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৯-৫৭৫)

আল্লামা বিননুরি টাউন মাদরাসায় ইফতা বিভাগের প্রধান থাকাকালীন তার সাথে করাচীতে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাবৃত্তি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিভিন্ন গ্রন্থাগার, ইলমি কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরে ছিলাম পিএইচডি অভিসন্দর্ভের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে হাটহাজারী মাদরাসায় আসার পর বেশ ক’বার দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ ও পছন্দ করতেন। ২০১০ সালে ইসলামী কুতুবখানা, বিননুরি টাউন, করাচী থেকে মুদ্রিত এবং পরবর্তীতে ঢাকার বাংলাবাজারস্থ মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ থেকে পুনর্মুদ্রিত তার লিখিত ২য় খণ্ডের গ্রন্থ ‘আপকে সওয়ালাত আওর উন কা হল’ এক ছাত্রের মাধ্যমে তিনি আমার বাসায় হাদিয়া পাঠান। উর্দু ভাষায় লিখিত এবং বাংলায় অনুদিত তার একটি গ্রন্থের আমি সম্পাদনাও করেছি। এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী। তিনি এমন এক অনন্যবৈশিষ্ট্যের অধিকারী যে, নিজের অর্থেদীনী বই ছাপিয়ে প্রিয়জনদের হাদিয়া দেয়ার নজির স্থাপন করেন। বিনয়, সৌজন্যতাবোধ ও আতিথেয়তা তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধ্যয়ন, পাঠদান ও গবেষণায় সর্বদা মগ্ন থাকতেন। একবারে অনাড়ম্বর ও সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই মনীষী ছিলেন সম্পূর্ণ প্রচারবিমূখ ও সুন্নাতের পাবন্দ। তিনি ছিলেন ইসলামী আইনের মৌলিক গবেষক ও অনুসন্ধিৎসু ফকিহ। তার শুন্য আসন পূরণ হতে বহুদিন সময় লাগবে। আল্লাহ তার বহুমুখী খিদমত কবুল করুন এবং জান্নাতে দারাজাত বুলন্দ করে দিন, আমিন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ