সামাজিক শৃঙ্খলার অধঃপতন
মাহমুদুল হক আনসারী
জাতির জন্য শৃঙ্খলা অপরিহার্য অংশ। শৃঙ্খলা ছাড়া কোন জাতি-গোষ্ঠী অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না। শৃঙ্খলা থাকতে হবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে। ব্যক্তির মধ্যে শৃঙ্খলা অনুশীলন, অনুকরণ প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে পারিবারিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হয়না। পারিবারিক শৃঙ্খলা থেকে সামাজিক শৃঙ্খলা পাওয়া যায়। সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা সম্ভব নয়। আজকের সমাজে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হলো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা। মানুষ তার কাজকর্মে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চায় না। সুশৃঙ্খল জীবন ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। মানবীয় জীবন চলার পথে যেভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বাস্তবায়ন করছি না। একজন ব্যক্তির যেভাবে চলনে বলনে উঠতে বসতে শৃঙ্খলাপূর্ণ আদর্শ দেখানোর কথা ছিলো সেটা শিক্ষিত, কম-শিক্ষিত বা অশিক্ষিত কারো মধ্যেই শৃঙ্খলার অনুশীলন সমাজ ক্রমেই ভুলতে বসছে। মানুষ প্রয়োজনের জন্য ভোগ করবে। তার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সে পরিমাণ সে ভোগ করবে, আহার করবে, ভক্ষণ করবে, উপভোগ করবে। কিন্তু দেখা যায় তার যা প্রয়োজন এর চেয়েও বেশি সে নষ্ট করছে। তার যেটুকু বসার জায়গার দরকার সে তার চেয়েও বেশি জায়গা দখল করে অন্যজনকে ভোগান্তিতে ফেলছে। চলাচল, চলাফেরায় আচার আচরণ ব্যবহারে মানুষের শৃঙ্খলা পূর্ণ ব্যবহার খুব কম সংখ্যক মানুষে রপ্ত করে থাকে। আচার ব্যবহার, খাওয়া দাওয়া আতিথেয়তা সম্ভাষণ সবকিছুতে মানবিক শৃঙ্খলা অনুপস্থিত। খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসাতে মানুষের একটা শৃঙ্খলা থাকে। মানুষ যতই উন্নতি অগ্রগতি তার জীবনে উপলব্ধি করে তার মধ্যে শৃঙ্খলা একটি বিশাল বিষয়। শিক্ষা, দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় সমস্ত কাজে অগ্রগতির জন্য অবশ্যই শৃঙ্খলা শব্দটি কর্মক্ষেত্রে থাকা চায়। সকল ধর্মের মধ্যে শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন ধরুন নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদি।
ইসলামে যারা প্রবেশ করবে তারা এসব ইবাদত নির্দিষ্ট সময়ে পালন করবে। নামায আদায় করার জন্য নিয়ম-কানুন এবং শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। নামাযের সময়ানুবার্তিতা, শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। সে শৃঙ্খলা ছাড়া নামায আদায় করলে হবে না। যেমন নামায পড়ার জন্য যে নিয়ম-কানুন ইসলামে বলা হয়েছে সেটা অনুসরণ করেই নামায আদায় করতে হয়। অনুরূপ রোযা পালনের জন্য সেখানেও একটা নিয়ম শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে রোযা পালন করলে রোযা আদায় হবে না। একইভাবে খাবার জন্য রান্না থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপরিচালনা পর্যন্ত সবক্ষেত্রে একটা শৃঙ্খলা থাকে। কিন্তু সমাজ পৃথিবী যখন যতই তথাকথিতভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, ঠিক তখনই মানবতা এবং সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলার চরম অধঃপতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষের জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেক্টরে কোথাও শৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পরিবারে পরিবারে নেই শৃঙ্খলা। সমাজে সমাজে হৃদ্যতাপূর্ণ সৌহার্দ্য শৃঙ্খলা উধাও। কেউ খেয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে। আর কেউ বুভুক্ষু থেকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। তেলের মাথায় তেল যার আছে তার কোন অভাব নেই। তার মধ্যে কোন শৃঙ্খলা খুঁজে পাওয় যায় না। সে আরও চায় সে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবহার করে সমস্ত সুযোগ সুবিধা উচ্ছিষ্ট করে নষ্ট করছে। শৃঙ্খলার অভাবে তার অর্থ বৈভবের অভাব নেই।
তার কাছে মানবতা শৃঙ্খলা সবকিছু হাস্যকর। ইচ্ছামতো সে চলছে আর ভোগ করছে ব্যবহার করছে। তার কাছে পরিবার সমাজ রাষ্ট্র তুচ্ছ বিষয়। উশৃঙ্খলতা এক মহাসাগরে সমাজ আজ হাবুডুবু খাচ্ছে। বলা যায় যার কাছে প্রচুর পরিমাণ অর্থবিত্ত রয়েছে তার জন্য গোটা পৃথিবী উন্মুক্ত। তার নিকট শৃঙ্খলার কোনো দাম নেই। সে যা চায় তাই করবে সেটাই তার জন্য শৃঙ্খলা সেটাই সে দেখাবে। একজন মহিলা চলনে বলনে তার মনে চায় যে সে পুরুষ চরিত্র ধারণ করবে। সে সেভাবেই চলবে। পক্ষান্তরে পুরুষ যদি চায় সেও মহিলার পোশাক আচার ভঙ্গিমা অনুশীলন আচরণ করে ইচ্ছেমতো চলবে। সামাজিক রীতিনীতি মোটেও এসবকে মেনে নিতে পারে না। পুরুষ মহিলা তাদের চাল চলন শৃঙ্খলায় কিছু পার্থক্য সৃষ্টিকর্তা করে দিয়েছে। সে নিয়ম মেনে পুরুষ মহিলাকে চলা দরকার। না হয় সামাজিক শৃঙ্খলা আরও ভেঙে পড়বে। দোকান-মার্কেট মসজিদ, ব্যবসা-বাণিজ্য রাষ্ট্রীয় সবগুলো সেক্টরে শৃঙ্খলার অনুশীলন থাকা চায়। কিন্তু গণপরিবহন থেকে শুরু করে ফুটপাত, রাস্তাঘাট সামাজিক সব ধরনের স্পট আয়োজনে কোথাও মানবতার মধ্যে শৃঙ্খলা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এ জাতির কী অবস্থা হবে? শৃঙ্খলা থাকা চায় বিদ্যালয় থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত। পরিবার থেকে সামাজিক সবগুলো সেক্টরে ব্যক্তি পরিবার সমাজ এবং প্রতিটি নগরালয়ে। যদি সে শৃঙ্খলা এখন থেকে জাতি রপ্ত না করে তাহলে ভবিষ্যত সমাজ শৃঙ্খলা কী সেটাও ভুলে যাবে। তাই আসুন ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হই।