সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: 01856-618367
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com
পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
তাহারাত
সমস্যা: মুহতারাম, বিনীত নিবেদন এই যে, যদি কোনো ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল না-করে সেই অবস্থায় দীনী কোনো বিষয় ওয়ায-নসীহত করা জায়েয হবে কি? বিশেষ করে নসীহতের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীস পাঠ করতে পারবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. কামাল
কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম
সমাধান: যদি কোনো ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ হয়, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য ওই অবস্থায় ওয়ায ও নসীহত করা জায়েয হবে। তবে জমহুর ফুকহায়ে কেরামের মতে সে ব্যক্তির জন্য ওয়ায ও নসীহতের মধ্যে কুরআনের আয়াত পড়া জায়েয হবে না। চাই কম হোক কিংবা বেশি হোক। তবে কোন কোন ফকীহের মতে দোয়া ও শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য এক আয়াতের থেকে কম পড়া জায়েয হবে। সুরা আল-মায়িদা: ৬, সুনানে তিরমিযী: ১/১৩১, বাদায়িউস সানায়ি: ১/১৪৭
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, যদি কোনো ব্যক্তি কূপের পানিতে পড়ে মারা যায়। তখন সে পানির হুকুম কী হবে? এবং তা পবিত্র করার পদ্ধতি কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. নেজাম উদ্দীন
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: যদি কোন ব্যক্তি কূপের মধ্যে পড়ে মারা যায় তখন সেই কূপের পানি নাপাক হয়ে যাবে। কূপের পানি পবিত্র করার পদ্ধতি হলো, ওই কূপের সব পানি বের করে ফেলতে হবে। চাই ওই ব্যক্তি ফুলে ফেটে যাক বা না যাক। আর যদি কূপের নিচ থেকে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে সব পানি বের করা সম্ভব না হয়, তখন দুইজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মত অনুসারে ওই কূপ থেকে সে পরিমাণ পানি বের করে নেবে যে পরিমাণ পানি লোকটি কূপে পড়ার সময় বিদ্যমান ছিল। ইলাউস সুনান: ১/২৮৫, ফতওয়ায়ে কাজীখান: ১/০৭, বাহরুর রায়িক: ১/১১৯
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, ওযু করার সময় টুথপেস্ট বা ব্রাশ ব্যবহার করা হয়, তখন তা দাঁরা মিসওয়াকের সুন্নত আদায় হবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. কাছেম
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: মিসওয়াকের মধ্যে দুটি বিষয়। এক হলো, দাঁত পরিষ্কার করা। দ্বিতীয় হলো মিসওয়াক ব্যবহার করা। যদি মিসওয়াক না থাকে তাহলে ব্রাশ বা টুথপেস্ট ব্যবহার করলে তা দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করার যে সুন্নত রয়েছে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে মিসওয়াক থাকা অবস্থায় ব্রাশ ব্যবহার করলে প্রায় সকল ফকীহের মতে মিসওয়াক ব্যবহার করার সুন্নত আদায় হবে না। কেননা প্রত্যেক নামায বা ওযুর শুরুতে মিসওয়াক করা সুন্নত। অথচ সকল ডাক্তার এ ব্যপারে একমত যে, একদিনে দুইবারের অধিক ব্রাশ করলে দাঁত নষ্ট হয়ে যায়। অথচ মিসওয়াক দৈনিক যতবারই করুক না কেন দাঁতের কোন ক্ষতি হয় না। বরং দাঁত আরও মজবুত হয়। উমদাতুল কারী: ২/৬৯২, বাহরুর রায়িক: ১/২১, ফতওয়ায়ে শামী: ১/২৩৬
সমস্যা: মুহতারাম, যথাবিহীত নিবেদন এই যে, ওযু করে আদায়কৃত নামায যদি ফাসেদ প্রমাণিত হলে, তায়াম্মুম অবস্থায় তা কাযা করা যাবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাহমুদ রাগেব
পেকুয়া, কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাবমতে ওযু করে আদায়কৃত নামায ফাসেদ প্রমাণিত হলে তায়াম্মুম অবস্থায় সে নামাযকে কাযা করা জায়েয হবে। কারণ ওযু দ্বারা যেসব নামায আদায় করা যায়, তায়াম্মুম দ্বারাও সে সমস্ত নামায আদায় করা যায়। যা ফতওয়ার সকল গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা আল-মায়িদা: ৬, ইলাউস সুনান: ১/৩২৮, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৮৩
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, যদি কোনো মহিলার তিনদিন হায়েয দেখা দেওয়ার পর স্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং চারদিন পর পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে তিনদিন অব্যহত থাকে। তাহলে উক্ত মহিলার কয়দিন হায়েয আসছে বলে গণ্য হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. আবদুর রহমান
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: প্রশ্মোক্ত ব্যাপারে যদিও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে বিভিন্ন রেওয়াত পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতকে গ্রহণ করেছেন। কেননা তা সহজ। তাহলো দুই স্রাবের মাঝে যদি ১৫ দিন পবিত্রতা পাওয়া না যায়। তাহলে সেই পবিত্রতা গ্রহনযোগ্য নয় । বরং পুরোটাই স্রাব হিসাবে গণ্য হবে। তাই কোনো মহিলার যদি তিনদিন হায়েয দেখা দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় এবং চারদিন পর পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে তিনদিন পর্যন্ত অব্যহত থাকে, তাহলে উক্ত মহিলার পূর্ণ দশদিন হায়েয এসেছে বলে গণ্য হবে। যদি ওই মহিলার জীবনে প্রথমবার হায়েয এসে থাকে বা ওই মহিলার নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ না থাকে। আর যদি ওই মহিলার নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, তাহলে তারও ওই দশদিন হায়েয হিসাবে গণ্য হবে এবং তার হায়েযের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হবে। তবে উক্ত মহিলার সর্বশেষ স্রাব যদি মোট দশদিন অতিক্রম করে তাহলে তার নির্দিষ্ট দিনগুলো হায়েয হয়ে বাকিগুলো ইস্তেহাযা হিসাবে গণ্য হবে। ফতওয়ায়ে শামী: ১/৪৮৩, বাদায়িউস সানায়ি: ১/১৬৫, ফতহুল কদীর
সালাত
সমস্যা: মুহতারাম, যথাবিহীত নিবেদন এই যে, পুরুষের নাভী এবং নাভী বরাবর পিছনের অংশ সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না? সে হিসাবে কেউ যদি নাভী বরাবর খোলা অবস্থায় নামায আদায় করে, তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. কামাল
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখের নিকট পুরুষের নাভী এবং নাভী বরাবর পিছনের অংশ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এই সকল ইমামদের মতানুসারে যদি নাভী এবং নাভী বরাবর পিছনের অংশ খোলা থাকে তাহলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম যুফর (রহ.)-এর মতে নাভী এবং নাভী বরাবর পিছনের অংশ খোলা থাকলে নামায শুদ্ধ হবে না। তবে হ্যাঁ, যদি নাভীর নিচের অংশ খোলা থাকে তাহলে সকলের মতানুসারে নামায শুদ্ধ হবে না। তাই সতর্কতার দাবি হলো নাভী ও নাভী বরাবর পিছনের অংশ ঢেকে নামায আদায় করা। সুরা আল-আরাফ: ৩১, ফতওয়ায়ে শামী: ১/৭২, ফতহুল কদীর: ১/২২৪
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা জানি তিন সময় নামায পড়া হারাম। ওই তিন সময় ব্যতীত আর কোন সময় আছে কি? যে সময় নামায আদায় করা মাকরুহ। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আলাউদ্দীন
স্বন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম
সমাধান: তিন সময়ে নামায আদায় করা হারাম। ওই তিন সময় ব্যতীত নিম্নউল্লেখিত সময়গুলোতেও নামায পড়া মাকরুহ:
- সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য যেকোনো নফল নামায পড়া মাকরুহ।
- আসরের ফরজ নামায আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নফল নামায পড়া মাকরুহ।
- মাগরিবের ফরজ নামায পড়ার আগে নফল নামায পড়া মাকরুহ।
- ইমাম সাহেব যখন খুতবা দেয়, সেই সময় নামায পড়া মাকরুহ।
- ঈদের নামাযের আগে ঘরে নফল নাময পড়া এবং ঈদের নামাযের পরেও মসজিদে নফল নামায পড়া মাকরুহ।
- ইকামতের সময় সাহেবে-তারতীব ব্যক্তি ব্যতীত অন্য ব্যক্তি ভিন্ন নামযের নিয়ত বাঁধা মাকরুহ।
- ফরজ নামাযের সময় যখন সন্নিকট হয়ে যায়, তখন ফরজ নামায ব্যতীত অন্য কোনো নামায পড়া মাকরুহ।
- আরফার দিন যখন যোহর আর আসরের নামায আরফাতের ময়দানে একত্রে আদায় করা হয় এবং মুযদালাফায় মাগরিব আর এশারের নামায একত্রে আদায় করা হয়, ওই দুই নামাযের মাঝখানে কোন নামায পড়া মাকরুহ।
এ ছাড়াও ফুকহায়ে কেরাম বলেছেন যখন ওযু ভঙ্গ হওয়ার আশংকা থাকে এবং তীব্র ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে থাকলে, তখনও নামায পড়া মাকরুহ। উল্লেখিত সময়ে নামায পড়া মাকরুহ তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুরা আন-নিসা: ৩১, সহীহ আল-বুখারী: ১/৫৮৯, ফতওয়ায়ে শামী: ২/৩৬
সমস্যা: মুহতারাম, যথাবিহিত নিবেদন এই যে, বর্তমানে মাইকে আযান দেওয়ার কারণে অনেক দূরের আযান শোনা যায়। তাই একই স্থানে কয়েক জায়াগার আযান শোনা যায়। এ অবস্থায় বারবার আযান শোনা গেলে কয়বার আযানের উত্তর দিতে হবে? বিশেষ করে নিজ মহল্লার আগে অন্য মহল্লার আযান শোনা গেলে কোনটার উত্তর দিতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. হাছান চৌধুরী
চট্টগ্রাম
সমাধান: যদি একই স্থানে কয়েক জায়গার আযান শোনা যায়, তাহলে আল্লামা শামীর মতে প্রত্যেক আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। কিন্তু অধিকাংশ ফুকহায়ে কেরামের মতে শুধু একবার আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। যদি একই স্থানে একসাথে কয়েক জায়গার আযান শোনা যায়, তাহলে নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। তবে হ্যাঁ, যদি নিজ মহল্লার আযানের পূর্বে অন্য মহল্লার আযান শোনা যায়, তাহলে সেই মহল্লার আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ যে মসজিদের আযান আগে শোনা যায় ওই আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। চাই নিজ মহল্লার মসজিদ হোক বা অন্য মহল্লার। সুরা আল-জুমা: ৯, সুনানে তিরমিযী: ১/৫১, ফতওয়ায়ে শামী: ২/৬৬
সমস্যা: আরব দেশগুলোর বিভিন্ন মসজিদে বড় বড় কারী সাহেবরা ইমামতি করে থাকেন। অথচ তাদের দাড়ি নেই। আমার জানার বিষয় হলো, তাদের ইমামতি শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? বিশেষ করে তাদের পেছনে নামায পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. রফিক
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের ইসলাম ধর্মে দাড়ি রাখার প্রতি খুবই গুরত্বারোপ করা হয়েছে। প্রত্যেক পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। তাই দাড়ি মুণ্ডানো ব্যক্তির ইমামতিকে ফুকহায়ে কেরাম মাকরুহে তাহরীমি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব উপযুক্ত পরহেজগার ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাদের ইকতিদা করা মাকরুহে তাহরীমি হবে। তবে অপারগ অবস্থায় তাদের পেছনে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। মাকরুহ হবে না। ফতহুল কদীর: ১/৩০৪, ফতওয়ায়ে শামী: ২/২৯৮, বাহরুর রায়িক: ১/২৪৮
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা জানি নামাযে নিয়ত করা ফরজ। এই নিয়তকে মুখে উচ্চারণ করে বলার হুকুম কী? বিশেষ করে অনেকে বলে থাকে আরবিতে মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এই ব্যপারে তাহকীকী মত জানিয়ে বাধিত করবেন।
শরাফত আলী
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: অন্তরে নামাযের নিয়ত করা ফরজ। তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা ফরজ নয়। এ ব্যপারে রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোন আমল পাওয়া যায় না । কারণ সেই যুগে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তবে পরবর্তিতে মানুষের দুনিয়াপ্রীতি ও কর্মব্যস্ততার কারণে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার ব্যপারে পরবর্তী উলামায়ে কেরাম বিভিন্নমত পোষণ করেন। কারো মতে মুস্তাহাব আবার কারো মতে বেদআত। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ঐ ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব যে ব্যক্তি নামাযের নিয়তকে অন্তরে উপস্থিত করতে পারে না, বা যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় নিয়ত নির্ধারণ করতে ভুলে যায়। ফতহুল কদীর: ১/২৩২, বাহরুর রায়িক: ১/২৭৭, মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/৯৪
সমস্যা: সম্মানিত মুহতারাম, বিনিত নিবেদন এই যে, আমরা জানি নামাযে হাত বাঁধা প্রয়োজন, এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের হানাফী মাযহাব অনুযায়ী পুরুষদের জন্য কোন জায়গায় হাত বাঁধা প্রয়োজন? তা বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. সালমান
কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে নামাযের মধ্যে হাত বাঁধা সুন্নত। আর হানাফী মাযহাব অনুসারী পুরুষদের জন্য ডান হাতের তালুকে বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে নাভীর নিচে হাত বাঁধা সুন্নত। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি নাভীর নিচে হাত না বেঁধে নাভীর ওপর বা সিনার ওপর হাত বাঁধে তাহলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। ইলাউস সুনান: ২/১৯২, দুরুল মুখতার: ১/৭৩, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৯/৩১৭
সমস্যা: মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো, আমরা জানি কোন ওয়াজিব ভুলবশত ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে যে সকল ইমাম ওয়াজিবের প্রবক্তা নন, যেমন সাহেবাইনসহ অন্যান্য ইমাম ফরজ এবং সুন্নতের মাঝে ওয়াজিবের প্রবক্তা নন। তারা কোন ধরণের বিধান ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দেওয়ার কথা বলেন? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
শামীম
কচুয়া, চাঁদপুর
সমাধান:সিজদায়ে সাহু কী কী কারণে দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাযহাবে বিষদ বিশ্লেষণ আছে। হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী নামাযের কোন ওয়াজিব ভুলবশত ছুটে গেলে বা বিধান আগে-পরে হয়ে গেলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব।
মালেকী মাযহাব অনুযায়ী নামাযের কোন একটি সুন্নতে মুওয়াক্কাদা বা দুটি সাধারণ সুন্নত ছুটে গেলে বা নামায-বহির্ভূত কোন কাজ নামাযে করলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া সুন্নতে মুওয়াক্কাদা।
শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী নামাযে কোন সুন্নতে মুওয়াক্কাদা ছুটে গেলে বা নামাযে সন্দেহ হলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া সুন্নত।
হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী নামাযে কোন রুকুন ছুটে গেলে বা আগে-পরে হয়ে গেলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। সুনানে তিরমিযী: ১/৯০, সুনানে আবু দাউদ: ১/১৪৪, ফতহুল কদীর: ১/৪৩৫
সমস্যা: মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো, কোন ব্যক্তি উচ্চ স্বরে কিরাআতবিশিষ্ট নামাযে (মাগরিব, এশা ও ফজর) একাকী আদায় করার সময় তার পেছনে যদি অন্য কেউ ইকতিদা করে ফেলে এবং বুঝতে পারে যে তার পেছনে কিছু মুসল্লী ইকতিদা করছে, এ অবস্থায় সে কিরাআত কীভাবে পড়বে? বিশেষ করে কিছু অংশ নিম্ন স্বরে তেলাওয়াত করার পর যদি অন্য কেউ ইকতিদা করে তখন অবশিষ্ট অংশ তেলাওয়াত করার পদ্ধতি কী হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আসআদ
ডেমরা, ঢাকা
সমাধান: উপরোক্ত মাসআলার ক্ষেত্রে ফুকহায়ে কেরাম বলেন, উক্ত একাকী নামাযরত মুসল্লী যদি নামাযের শুরুলগ্নে হয় এবং সে বুঝতে পারে যে তার পেছনে কিছু মুসল্লী ইকতিদা করছে, তখন সে কিরাআত উচ্চ স্বরে পড়া শুরু করবে। আর যদি সে সুরা ফাতেহার অর্ধেক বা পুরা পড়ে নেওয়ার পর কোনো মুসল্লী ইকতিদা করে তাহলে সে সুরা ফাতিহা দ্বিতীয়বার পাঠ করবে। বাহরুর রায়িক: ১/৩৩৬, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭২, দুরুল মুখতার: ২/১৮৩
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: বিয়ের সময় বরের পক্ষ থেকে কোনো দাবি ছাড়া সামাজিক প্রথা অনুযায়ী মেয়ের পক্ষ থেকে কোনো টাকা-পয়সা ও সরাঞ্জাম বরকে দেওয়া হলে সেগুলো তার জন্য নেওয়া ও ব্যবহার করা জায়েজ হবে কি-না?
ইহসানুল হক
কক্সবাজার
সমাধান: বিয়ের সময় দেশের প্রথা অনুযায়ী বরকে যদি টাকা-পয়সা দেওয়া হয় সেই টাকা পয়সা ঘুস হিসেবে গণ্য হবে। বরের জন্য ওই টাকা নেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য কনের পক্ষ থেকে ব্যাবহারিক যে সরাঞ্জাম দেওয়া হয়, সেগুলো যেহেতু মেয়েকে দেওয়া হয় এবং সেগুলোর মালিক মেয়ে হয়ে থাকে তাই সেগুলো মেয়ের জাহিয হিসেবে গণ্য হবে। তা বরের পক্ষ থেকে শর্ত করা না হলেও সেগুলো নেওয়া জায়েয হবে। সুরা আল-বাকারা: ১৮৮, কিতাবুল ফাতাওয়া: ৪/৪২৫
সমস্যা: মুহতারাম, আমি আমার স্ত্রীকে দশ জন ব্যাক্তির উপস্থিতিতে বলেছি ‘তোরে এক তালাক দিলাম, এহন তোরে এক তালাক, তোরে আঁই এক তালাক দিলাম, এহন এক তালাক দিলাম, তোরে আই এক তালাক দিই, তোর মা-বাপেরে হ আঁই তোরে তালাক দিই’। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমার এরূপ কথার দ্বারা আমার স্ত্রীর ওপর কি এক তালাক পতিত হবে নাকি তিন তালাক?
আর যদি তিন তালাক না পড়ে এক তালাক পড়ে পুনরায় যদি সে আকদ করে নেয় তাহলে কি সে তিন তালাকের অধিকারী থাকবে? নাকি বাকি দুই তালাকের অধিকারী থাকবে?
তিন তালাক দেয়ার পর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে পুনরায় ফেরত পেতে চায় তাহলে কি তিন মাসের মধ্যে আকদ করে নিলে হবে? নাকি স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে শর্ত। স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তখন স্ত্রীর বাবা-মায়ের নাম ধরে তালাক দেয়া আবশ্যক কি-না?
মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত ঘটনায় স্বামী যখন স্ত্রীকে সম্বোধন করে ‘এক তালাক দিলাম’ শব্দটি পাচঁ বার বলেছে, তার দ্বারা স্ত্রীর ওপর ‘কাযাআন (বিচারিক ফায়সালায়) তিন তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে। আর বাকি দুই তালাক বৃথা হয়ে গিয়েছে। আর ‘দিয়ানতান (শরয়ী ফায়সালায়)’ স্বামী যদি শপথ করে বলে ‘আমি তালাকটিকে দৃঢ় করার জন্য এক তালাক শব্দকে বারবার উল্লেখ করেছি’। তখন তার স্ত্রীর ওপর এক তালাকে রজঈ পতিত হবে। এবং তালাকের সাধারণ ঈদ্দত তথা তিন হায়েয (মাসিক স্রাব)-র ভেতর যদি তারা সহবাস করে ফেলে অথবা স্বামী মুখে বলে ‘আমি আমার স্ত্রীকে আমার আকদে নেকাহে ফিরিয়ে নিলাম’ তাহলে তাদের নেকাহ বহাল হয়ে যাবে। আর যদি উক্ত ঈদ্দতের ভেতর রজআত (ফিরিয়ে নেওয়া) না করে, তখন শরয়ীভাবে আকদে নেকাহ নবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখানে তালাক দেওয়ার ভঙ্গিমার দ্বারা বুঝা যায় যে স্বামী ‘তিন তালাক’ দেওয়ার ইচ্ছা করেছে। এক তালাক পতিত হওয়ার অবস্থায় যদি পুনরায় আকদ করে ফেলে তাহলে সে পরবর্তীতে বাকি দুই তালাকের অধিকারী থাকবে। স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদানের পর স্বামী যদি পূর্বের স্ত্রীকে আবার ফিরে পেতে চায়, তাহলে সে স্ত্রীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে তথা শরীয়তে যাকে ‘হালালা’ বলে তা আবশ্যক। এছাড়া বিকল্প কোনো পদ্ধতি নেই। স্বামীকতৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের জন্য স্ত্রীর বাবা-মায়ের নাম নিয়ে তালাক দেয়া আবশ্যক নয়। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক দিলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৯২ বায়হাকী: ১১/৫২১ ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩৫৫-৩৫৬, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/২৮৯
সমস্যা: মুহতারাম, বিভিন্ন ফ্যাক্টরির কিছু কিছু মুসল্লী লা-মাযহাবী দাবি করেন নামাযে কিরাআতের জায়গায় কুরআন তেলাওয়াত না করে অনুবাদ পড়ে থাকে। জানার বিষয় হল, নামাযে কুরআন তেলওয়াতের স্থানে অনুবাদ পড়লে কিরাআতের ফরজিয়ত আদায় হবে কি? এবং নামাযের হুকুম কী হবে? বিস্তারিত জানালে চিরকৃতজ্ঞ হবো।
মাওলানা আনওয়ারুল্লাহ
কর্ণফুলী,চট্টগ্রাম
সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, নামাযের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত ও রুকু-সেজদা ইত্যাদির তাকবীর সহীহ-শুদ্ধ আরবি ভাষায় পড়তে হয়। আরবি ব্যাতীত অন্য যে কোন ভাষায় তার অনুবাদ পড়লে নামায সহীহ ও আদায় হবে না বরং অনেক গোনাহগার হবে। কেননা কুরআন ও আরবি ভাষার মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য ও ফযিলত রয়েছে তা অন্য ভাষায় নেই। সেজন্য নবী করীম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম এবং খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে অনারবি অনেক দেশ ও রাষ্ট্র বিজয় হওয়ার পরেও নামাযের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াতের স্থলে অন্য ভাষায় তার অনুবাদ পড়ার দলিল নেই। সুরা আল-মুযাম্মিল: ২০, ইলাউস সুনান: ৪/১৫৪, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৭৪, রদ্দুল মুহতার: ২/১৮৫
মসজিদ
সমস্যা: মুহতারাম, নিম্বের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
- নবনির্মিত মসজিদের মেহরাবে কুরআনের আয়াত লেখার শরয়ী বিধান কী? কোথাও وَأَنَّ الْـمَسَاجِدَ لِلهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا আবার কোথাও إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الأٌّخِرِ লিখতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কী?
- কালেমা لَا إلَهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللهِ লিখে তার উভয় পাশে اللهُ ও مُحَمَّد লেখার শরয়ী বিধান কী?
- ইদানিং প্রায় মজসিদে মুসল্লীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে যে, اللهُ এবং مُحَمَّد না লেখলে اللهُ أَكْبَرُ লেখার দরুন মুসল্লী কর্তৃক শোনা যায় ‘যে মসজিদে মহানবী (সা.)-এর প্রতি কোন ভালবাসা নেই, সেই মসজিদে নামাজ পড়বো না’ এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে শরয়ী সমাধান জানিয়ে চির বাধিত করবে।
মো. ইউছুফ
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, মসজিদের পশ্চিম দেওয়ালে যে দিকে মুসল্লীদের কেবলা হয় সে দিকের দেওয়ালে কিছু লেখা, যদিও তা কুরআন কারিমের আয়াত বা কালিমায়ে তাইয়িবা বা অন্য কোনো কিছু লেখাকে ফুকাহায়ে কেরাম মাকরুহ বলেছেন, তাই না লেখাটাই উত্তম। কেননা সে দিকে এ রকম কিছু লেখা থাকলে নামাযের সময় মুসল্লীদের নজরে পড়বে এবং নামাযে খুশু-খুজুর ব্যাঘাত ঘটবে এবং একাগ্র চিত্ত থাকবে না, যা নামাযের একটি অতি জরুরি বিষয়। তাই রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে মসজিদে কেবলার দিকের দেওয়ালে কোন কিছু লেখা থাকত না। অবশ্য যদি কেউ শুধু কালিমায়ে তাইয়িবা লেখে তা জায়েয হবে। কেননা এটা আমাদের ঈমানী কালিমা। যা সাধারণ অনেক মানুষ জানে না, তাই তা দেখলে তাদের ঈমানী কালেমা স্মরণ হবে, কিন্তু তাও না লেখাটা উত্তম। কেননা কোন সময় বিশেষ কোন প্রয়োজনে মসজিদ ভাঙ্গতে হলে তখন সেই পবিত্র কালেমার সম্মানহানি হবে। আর এটি ইসলামের সোনালি যুগে ছিল না। এটি একেবারেই শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার পরিচায়ক। কেননা এটি আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর ভালবাসা আর মহব্বতের মাপকাঠি নয়। নতুবা সাহাবায়ে কেরাম ও খুলাফায়ে রাশেদীনের শানে মারাত্মত আঘাত আসবে যে, তাদের অন্তরে আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-এর মহাব্বত ছিল না। যা তাদের সঙ্গে চরম বে-আদবির শামিল। সুরা আল-মু’মিন: ১-২, দুররুল মুখতার: ২/৪৩০, আলমগীরী: ৫/৩৬৯ ও ফাতহুল কাদীর: ১/১৫০
সমস্যা: বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় একটি ছোট মসজিদ ছিল, কিন্তু এখন এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উক্ত মসজিদটিতে সঙ্কুলান হচ্ছে না। আমরা অন্য স্থানে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হল যে, আমরা পুরাতন মসজিদের স্থানে মাদরাসা, পাঠাগার ইত্যাদি নির্মাণ করতে পারব কি-না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
পদাগঞ্জ এলাকাবাসী
মিঠাপুকুর, রংপুর
সমাধান: পুরাতন পরিত্যক্ত মসজিদের মধ্যে পাঠাগার বা মাদরাসা ইত্যাদি করা জায়েয ও বৈধ হবে না। কেননা এর দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে এবং মসজিদের শানে বে-আদবি হবে। যার শাস্তি ও গোনাহের ভাগ মুসল্লী বা মহল্লাবাসীকে নিতে হবে। বরং এটি মসজিদ হিসেবে বহাল রাখতে হবে এবং ইবাদতখানা ও পাঞ্জেগানা মসজিদ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। তার মধ্যে মসজিদ ব্যতীত অন্য কাজ জায়েয হবে না। সুরা আল-জিন: ১৮, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৫৫৪-৫৫৫ ও বাহরুর রায়িক: ৫/২৫৬
মিরাস
সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, এক ব্যক্তি মৃত্যুর সময় ওয়ারিশগণের জন্য একটি জায়গা রেখে যান। এ ব্যাপারে আমাকে দুটি বিষয় জানিয়ে বাধিত করবেন।
- বড় ভাই জমির কোন দিক থেকে অংশ পাবে?
- বড় ভাইয়ের পর কার সিরিয়াল আসবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ
বৌবাজার সরদার বাড়ি
সমাধান: তরকা সম্পত্তির মধ্যে সব জায়গায় সব ওয়ারিশগণের অংশ বিদ্যমান থাকে। তাই কোন্ ওয়ারিশ কোন্ দিক দিয়ে তার অংশ নির্ধারণ করবে সে বিষয়ে শরীয়তে কোন বিধান নেই। তাই তা ওয়ারিশগণ আপোষে সামাজিকভাবে নির্ধারণ ও বণ্টন করতে হবে। সিরাজী: ৫-৬
বিবিধ
সমস্যা: মুহতারাম, নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
- শরীয়তের দৃষ্টিতে দাড়ি রাখার হুকুম কী?
- দাড়ি কতটুকু রাখতে হবে এবং এই ব্যাপারে চার ইমামের অভিমত কী?
- দাড়ি কাটার ব্যাপারে আরবের কোন শায়খের অনুসরণ করা যাবে কি-না? যদিও তারা একমুষ্ঠির কম দাড়ি রাখে।
মোহাম্মদ রাহাত হোসেন
ছাত্র: জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া
সমাধান:
- দাড়ি রাখা ইসলামী নিদর্শন ও মুসলমানদের ধর্মীয় আলামাত হওয়ার কারণে ওয়াজিব হিসেবে গণ্য হয়েছে।
- আমাদের চারো ইমামের অভিমত হলো, একমুষ্ঠির নিচে দাড়ি কর্তন করা হারাম ও কবীরা গোনাহ। কেননা রাসুলাল্লাহ (সা.) ও কোন সাহাবী থেকে একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তন করার কোন প্রমাণ নেই।
- ইসলাম ধর্মের মধ্যে মুসলমানদেরকে সউদি আরবের কোন শায়খ বা অন্যান্য কোন শায়খদের অনুকরণ করতে বলা হয়নি। বরং আরব-অনারব সবাইকে রাসুল (সা.) ও কুরআন-হাদীসের অনুকরণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া বর্তমান আরবের শায়খরা ইহুদী-খৃস্টানদের অনুকরণ করে যাচ্ছে, অতএব ইসলাম ধর্মের কোন বিষয়ে তাদেরকে প্রমাণ বানানো যাবে না। সহীহ মুসলিম: ১/১২৯, তিরমিযী: ২৭৬২, মুআত্তা মালেক: ২৬১৮, ফতহুল বারী: ১০/৩৫১, ফতওয়ায়ে শামী: ৩/৩৯৮
সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, আমাদের চারপাশে অনেক সমাজিক ফাউন্ডেশন রয়েছে, যারা জনগণের বিপদে আপদে সাহায্য করে এবং গরিব দুঃখীদের সাহায্য করে। আমরাও একটি সংগঠন যেখানে সমস্ত জাতি-ধর্ম- বর্ণ, নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য খুলেছি। এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই আছে। কিন্তু ছেলে-মেয়ে একসাথে কাজ করে না, বরং পৃথক পৃথকভাবে কাজ করে।
প্রথমত যে মাসআলাটি আমরা জানি, কোনো জরুরতে নারীদের কাজ করার প্রয়োজন হলে ফেতনার আশঙ্কা না থাকলে তাদের নিয়ে কাজ করা জায়েজ। আমরা নিম্নোক্ত কারণসমূহকে জরুরত হিসেবে মনে করছি।
- প্রশ্ন: প্রায় সব সমাজিক সংগঠনই নারী-পুরুষ একই সাথে কাজ করে, তাই নিজেদের সমাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে পরিচয় প্রদানে অন্যতম বৈশিষ্ট হিসেবে আমরা নারীদের আলাদাভাবে কাজের ব্যবস্থা করেছি।
- প্রশ্ন: আমাদের উদ্দেশ্যর মধ্যে অন্যতম হলো বয়স্ক এবং অসহায় পুরুষদের পাশপাশি বয়স্কা নারী ও অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানো মূলত এই সেক্টরে আমরা নারীদের দিয়েই কাজ করাতে চাচ্ছি। অর্থাৎ অসহায় নারীদের সাহায্য আমাদের ফাউন্ডেশনের নারীরা করবে আর অসহায় পুরুষদের সাহায্য আমরা পুরুষরা করবো। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো। আমাদের উপরোক্ত কারণসমূহ জরুরত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে কি?
- প্রশ্ন: ফেতনা শব্দটি কতটুকু বিস্তৃত? আমরা ফাউন্ডেশনের নারী-পুরুষ পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হই, তাহলে তা-তো ফেতনার মধ্যে পড়বে। আমরা পুরুষেরা বাইরে কাজ করার সময় যদি পথেঘাটে চলন্ত কোনো নারী আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় বা আমাদের মেয়েরা বাইরে কাজ করার সময় পথেঘাটে চলন্ত কোনো পুরুষ যদি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় তাহলে সেগুলো ফেতনার মধ্যে পড়বে কিনা।
- প্রশ্ন: নারীদের কন্ট্রোল করার জন্য আমরা দুইজন পুরুষ থাকবো, তাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা আমরা মেসেজে দেবো এতে তারা আমাদের চেহারা দেখবে না আর কণ্ঠও শুনবে না। হুজুর আমাদের এই সিদ্ধান্তটা শরীয়তসম্মত কি?
- প্রশ্ন: নারীরা যদি মাঠে কাজ করে যেমন রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় নারী ও পথ শিশুদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া, এই কাজগুলো নারীরা করবে। এখন অধিকাংশ নারী স্বভাবত বেপর্দা অবস্থায় চলে, এখন তারা-তো আমাদের ফাউন্ডেশনের কাজের জন্যই ঘর থেকে বের হবে, তারা যদি বেপর্দাভাবে বের হয়ে মাঠের কাজগুলো করে তাহলে বেপর্দার গোনাহের ভার আমাদের ওপর পড়বে কি?
- প্রশ্ন: আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমরা তাদেরকে ফাউন্ডেশনের কাজ করতে বাহিরে যাওয়ার সময় পর্দা করে বের হতে বলতে পারি, এখন আমাদের আশঙ্কা হয় তাদের পর্দা করে বের হতে বলায় তারা যদি ফাউন্ডেশন ত্যাগ করে? আবার যদি তারা বাহিরে ছড়িয়ে দেয় যে এটা একটা ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের মতো এখানে পর্দা করা ছাড়া কাজ করা যায় না, তখন আমরা অনেক জায়গায় বিপদে পড়ে যেতে পারি। এ অবস্থায় আমরা তাদেরকে পর্দাকরে ফউন্ডেশনের কাজ করতে বলবো? নাকি তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেবো?
- প্রশ্ন: নারীরা বাইরে ফাউন্ডেশনের কাজের সময় বা কাজ শেষ করে যদি কোনো গোনাহে লিপ্ত হয় তাহলে সেটা আমাদের ওপর পড়বে কি? ধরুন কোনো নারী বা পুরুষ পরিবার থেকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নিলো আমাদের ফাউন্ডেশনের কাজে লিপ্ত হবে বলে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তারা ফাউন্ডেশনের কাজের নাম দিয়ে মিথ্যা বলে গোনাহে লিপ্ত হয়েছে এর দায়ভার আমাদের ওপর পড়বে কি?
- প্রশ্ন: আমাদের সংগঠনের ঘরোওয়া কাজগুলো যদি আমরা নারীদের ঘরে বসেই সম্পন্ন করাই তাহলে কি সেটা শরীয়তবিরোধী হবে? এক্ষেত্রে তারা ঘরে বসেই কাজ করবে আর আমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা মেসেজের মাধ্যমে দেবো।
হাসিমুখ ফাউন্ডেশন
দেওয়ান বাজার, ডিসি রোড , চট্টগ্রাম
সমাধান:
- উত্তর: বর্তমান যুগে ফেতনার কারণে নারী-পুরুষ একই সাথে কোনো সংগঠনের কাজ করা শরীয়ত মতে বৈধ ও জায়েজ নয়।
- উত্তর: জি হ্যাঁ, অবশ্যই পড়বে, মোট কথা মূল নীতি হলো নারী-পুরুষ পরষ্পর আকৃষ্ট হওয়া। কেননা আল্লাহ তা‘লা নারী-পুরুষের পরষ্পরের মধ্যে আকর্ষণ হওয়াকে স্বভাবগত সৃষ্টি করেছেন। তাই তার কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। সুতরাং নারীরা পর্দাহীনভাবে কাজ করলে বা চলাফেরা করলে তাদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষণ হওয়া অনিবার্য। এর থেকে বিরত থাকা শরীয়তে একান্ত জরুরি। সুতরাং নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে কোনো সংগঠনের কাজ করা শরীয়ত মতে জায়েজ ও বৈধ হবে না।
- উত্তর: এ সিদ্ধান্তের মধ্যেও (মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে) ফেতনার আশঙ্কা রয়েছে।
- উত্তর: আপনাদের সংগঠনের ওপর পড়বে। কেননা নারী-পুরুষের সমবেত সংগঠন শরীয়তের মধ্যে বৈধ নয়। কেননা অসহায় নারী বা পুরুষদের সাহায্য সহযোগিতা করা পুরুষদের জন্য অসম্ভবের কিছু নয় । সুতরাং তার মধ্যে নারীদের মিলানো ফেতনার কারণ হবে। যেমন স্কুল-কলেজের মধ্যে নারী-পুরুষদের সহ শিক্ষার কারণেও অনেক ফেতনা হয়ে থাকে।
- উত্তর: আমরাতো প্রথমেই বলে আসছি এরকম নারী পুরুষের একত্রিত হয়ে সংগঠন করা শরীয়তের মধ্যে বৈধ নয়। সুতরাং তাদেরকে তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ হবে না। আর পুরুষরা যেভাবে ভালোভাবে কাজ করবে যার দ্বারা সংগঠনের আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে, তা নারীদের মাধ্যমে হবে না। তাই বর্তমান ফেতনার যুগে পুরুষদের সাথে নারীদের একত্রিত করে অসহায় মানুষদের সাহায্য করা জায়েজ ও বৈধ হবে না।
- উত্তর: হ্যাঁ অবশ্যই। সেটার দায়ী আপনাদের সংগঠনই হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে এরকম নারী-পুরুষ একত্রিত সংগঠন বৈধ নয়।
- উত্তর: নিশ্চয় পড়বে, কেননা আপনাদের এরকম নারী-পুরুষের একত্রিত সংগঠন শরীয়তমতে অবৈধ ও নাজায়েজ।
- উত্তর: এসব কাজেও নারীদের কে ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই, বরং ঘরের অবস্থা যাচাই-বাছাই করে পুরুষরা একাই করতে পারে। সুতরাং এসব কাজে নারীদের ব্যবহার করা ফেতনাই ফেতনা। আর বর্তমানে মোবাইলের মধ্যে ফেতনার আশঙ্কা বেশি হয়ে থাকে। সুরা আল-আহযাব: ৩৩,৫৪, সুরা আন-নূর: ৩০, দুররুল মুখতার: ২/৭৪, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৮/৯৫, ফতওয়ায়ে শামী: ৯/৫৩০