জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ (ফেব্রুয়ারি ২১)

দাওরায়ে হাদীস শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রস্তুতি

সমাপনী বর্ষের শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আপনারা অবশ্য অবগত আছেন যে, আগামী ৩১ শে মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আপনাদের ফাইনাল পরীক্ষা আরম্ভ হবেঅনেকের জন্য হয়ত এটি শিক্ষা জীবনের শেষ পরীক্ষা। আবার অনেকে হয়ত উচ্চতর গবেষণা বিভাগসমূহে অধ্যয়ন করবেন। তাদের জন্য এ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা অপরিহার্য। এ পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট অর্জন করার মাধ্যমেই তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, কিরাআত, আরবি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ লাভ করতে পারবেন। তাই এ পরীক্ষার জন্য আপনাদেরকে প্রচুর সাধনা করতে হবে। মনে রাখবেন, দাওরায়ে হাদীস সমাপনী পরীক্ষা যদিও নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকেরই হয়ে থাকে, কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। অতএব দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার্থীকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট ও উত্তম ফলাফল অর্জন করার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা অতি জরুরি মাসিক আত-তাওহীদের চলতি সংখ্যার ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগে’র জন্য এ বিষয়ে একটি লেখা তৈরী করা হয় এবং তা জামিয়া পটিয়ার সহকারী শিক্ষা পরিচালক, হযরত মাওলানা মুফতী মনযূর সিদ্দিক (হাফিযাহুল্লাহ)-এর নিকট পেশ করা হয়তিনি কষ্ট করে লেখাটি আদ্যোপান্ত পড়েন এবং প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি সংশোধিত লেখাটি পরীক্ষার্থীদের উপকার্থে প্রকাশ করা হলো—সলিমুদ্দিন মাহদী কাসেমী

প্রিয় দাওরায়ে হাদীস শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আপনারা এখন কওমী শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর ‘দাওরায়ে হাদীস’ সমাপ্ত করতে যাচ্ছেন। এ বছর আপনারা ‘আল-কুতুবুস-সিত্তা’ তথা হাদীসের ছয় প্রসিদ্ধ কিতাবসহ প্রায় ১০টি কিতাবের পাঠদান গ্রহণ করেছেন। দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করার মাধ্যমে আপনারা ‘আলেম’ হবেন, ‘মাওলানা’ উপাধিতে ভূষিত হবেন। কারণ যারা দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত ভলোভাবে পড়া-শোনা করে যোগ্যতা অর্জন করেন, তারা ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে ইসলামের সার্বিক জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। তারা কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা মোতাবেক সমাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হন। তাই দেশ ও জাতী তাদেরকে ‘মাওলানা’ (আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি) হিসেবে সম্বোধন করে।

প্রিয় বন্ধুরা! পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন কিংবা জীবনকে সফল ও সার্থক করার জন্য তিনটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত Determination তথা দৃঢ় সংকল্প বা দৃঢ় প্রত্যয়। দ্বিতীয়ত Hard Work তথা কঠোর পরিশ্রম। তৃতীয়ত Proper Application of Time সময়ের যথাযথ প্রয়োগ। আশা করি আপনারা নিজের জীবনকে সফল ও সার্থক করার দৃঢ় প্রত্যয়পূর্বক কঠোর পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত আছেন। আর সময়ের যথাযথ প্রয়োগ করার জন্য নিম্নে কিছু পরামর্শ প্রদত্ত হলো।

সময়ের যথাযথ প্রয়োগ:

সময়ের অপর নাম জীবন। সফল ও স্বার্থক জীবন গঠন করার জন্য সময়ের মূল্যায়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য। সময়কে যথাযথ কাজে লাগিয়েই মানুষ কামিয়াব হতে পারে। বিশেষত একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও ভালো ফলাফল করার জন্য জীবনের প্রতিটি সময় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। অপরিকল্পিত অনেক পরিশ্রমে সফলতা অর্জিত হয় না। বিশেষভাবে পরীক্ষাপূর্ব প্রস্তুতির সময় সুচিন্তিতভাবে একটি রুটিন তৈরি করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী সময়কে কাজে লাগাতে হবে। পড়ার সময় ও পঠিতব্য বিষয়গুলোর পরিমাণের মাঝে সামঞ্জস্য বজায় রেখে রুটিন তৈরি করতে হবে। যেন কোনো একটি কিতাব বা বিষয় পড়তে পড়তেই সময় শেষ না হয়ে যায়। দরস চলাকালীন সময় ও দরসের ফাঁকে ফাঁকে বহু সময় পাওয়া যায়। সে সময়ও কোনো একটি কিতাবের প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগাতে হবে। কমপক্ষে ভালো ফলাফল প্রত্যাশী একজন সচেতন ছাত্রের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই কাম্য।

মূল কিতাব সামনে রেখে অধ্যয়ন করা:

মূল কিতাব সামনে রেখেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক ছাত্র পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতির সময় শুধু ব্যাখ্যাগ্রন্থই পড়তে থাকে। বর্তমানে আরো দুঃখজনক হলো, অনেকের হাতে কেবলমাত্র গাইড ও নোটবুকই দেখা যায়। এগুলো অধ্যয়ন করে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিলে এবং মূল কিতাব থেকে বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি না করার কারণে প্রশ্নপত্র সামান্য পরিবর্তন হলেই নোটনির্ভর ছাত্ররা উত্তর দিতে হিমশিম খেয়ে যায়। তাই অবশ্যই মূল কিতাব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাখ্যাগ্রন্থের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। তবে তা মূল কিতাব বাদ দিয়ে কখনোই নয়। প্রস্তুতির সময় গুরুত্বপূর্ণ অথচ খুঁজে বের করতে হয় এমন বিষয়সমূহের অবশ্যই নোট করতে হবে, যাতে একই বিষয় বারবার খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট না হয়।

সুহৃদ বন্ধুরা! পরীক্ষার প্রস্তুতিকালেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন ভাষায় আপনি প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখবেন। যেন সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। আল-হাইআতুল উলয়ার নিয়ম অনুযায়ী আরবি ভাষায় উত্তর লেখার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে আরবিতে প্রশ্নোত্তর লেখার জন্য চার নম্বর নির্ধারিত। তাই দশ বিষয়ে ৪০ নম্বর শুধুমাত্র আরবি ভাষায় উত্তর লেখার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এ জন্য আরবি ভাষায় উত্তর লেখার চেষ্টা করতে হবে। তবে তার জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি কেউ আরবিতে মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে সক্ষম না হয়, তা হলে ওই ভাষাটিই নির্বাচন করা উচিত, যে ভাষায় স্বাচ্ছন্দে উত্তর লিখতে পারবে। অনেকে কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ আরবিতে উত্তর দিতে গিয়ে মূল বক্তব্য লিখতে পারে না, ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। এজন্য পরীক্ষায় আরবিতে উত্তর দিতে হলে পূর্ব থেকে অভ্যাস করতে হবে। উর্দু-বাংলায় যারা উত্তর লিখবেন, তাদেরকে শুদ্ধবানান, বাক্যবিন্যাস, বাক্যসংযমতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আপনারা অবগত আছেন যে, দাওরায়ে হাদীসের পাঠ্যক্রম অনেক দীর্ঘ। আর পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পড়া-লেখার সময়-সুযোগ অনেক কম পাওয়া যায়। যার ফলে পরীক্ষার পূর্বে সবক’টি কিতাব পরিপূর্ণ শেষ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এ জন্য পরিক্ষার্থী বন্ধুদের ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য পড়া-লেখার একটি পরিকল্পিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিম্নে একটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো:

প্রিয় বন্ধুরা! পরীক্ষার প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে যখন কিতাব অধ্যয়ন করবেন, তখন প্রত্যেক কিতাবের চারটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

১. কিতাবের একতৃতীয়াংশ লাগাতার অধ্যয়ন করা

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অবশ্যই সবার্ধিক অধ্যয়ন করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক অধ্যয়নের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। বড় ধরনের সফলতার জন্য অধিকতর মেহনত ও অধ্যয়ন করা অপরিহার্য। তবে অধ্যয়নের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে অধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন, প্রত্যেক কিতাবের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ ধারাবাহিকভাবে অধ্যয়ন করা। কমপক্ষে প্রতিটি কিতাবের একতৃতীয়াংশ লাগাতার অধ্যয়ন করা। তাতে একদিকে পূর্ণ কিতাব বুঝতে সহায়ক হবে, অপরদিকে যেহেতু শুরুর একতৃতীয়াংশ থেকেই প্রায় ২/৩টি প্রশ্ন এসে যায়, সেহেতু প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতেও কোন অসুবিধা হয় না।

২. কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা

তেমনি যে কোন কিতাব অধ্যয়নের পূর্বে ওই কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে পূর্বের প্রশ্নপ্রত্রগুলো দেখা যেতে পারে, অথবা অভিজ্ঞ কারো সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে অধিক মনোযোগ দিয়ে তা অধ্যয়ন করতে হবে। বিশুদ্ধভাবে হাদীসের ইবারত পাঠ করা। অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেখা। জটিল কোন শব্দ থাকলে তার অর্থ ও বিশ্লেষণ জেনে নেওয়া। প্রস্তুতির সময় বিগত সময়ের প্রশ্নপত্র সামনে রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায় এবং পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ হয়। পূর্ববর্তী প্রশ্নসমূহের উত্তর লিখে অনুশীলন করা সম্ভব হলে তা অনেক উপকারী। সম্ভব না হলে কমপক্ষে সমস্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া আবশ্যক।

৩. বিভিন্ন কিতাবের সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করা

দাওরায়ে হাদীস সমাপনীবর্ষে কেবলমাত্র একটি শাস্ত্র (হাদীসশাস্ত্র) পড়ানো হয়। বিষয় এক হওয়ার সুবাধে প্রায় কিতাবে অনেক বিষয়ের সামঞ্জস্যতা রয়েছে। একই বিষয় একাধিক কিতাবে এসেছে। এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাকরারপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিতাবের সূচি সামনে রেখেই তালিকা করা যায়। যেমন, কিতাবুত তাহারাতের মাসআলা প্রায় সব কিতাবেই রয়েছে। কিতাবুল বুয়ুয়ের মাসআলা মুসলিম (প্রথম), বুখারী (প্রথম)-এর মাঝে উল্লেখযোগ্য বিষয়। তেমনি কিতাবুস সালাত, কিতাবুয যাকাতও একাধিক কিতাবে রয়েছে। যেসব বিষয় একাধিক কিতাবে রয়েছে তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইখতিলাফি মাসআলা। তাই ইখতিলাফি মাসআলার সমাধান জেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক পরিক্ষার্থীর করণীয় হলো, প্রতিটি মাসআলাকে পয়েন্টভিত্তিক জমা করা এবং প্রধান চার ইমামের মতামত ও প্রত্যেকের দলীল ভালোভাবে মুখস্ত করা। আর হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে অন্যান্য দলীলের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কী? তা জেনে নেওয়া এবং তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ বুঝে নেওয়া।

ইখতিলাফি মাসআলাগুলোর সমাধান জানতে প্রথমে আরবি শরহগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া। যেমন আওজাযুল মাসালিক ফি শরহি মুয়াত্ত মালেক এবং আল্লামা ইউসুফ বিননুরী (রহ.)-এর মাআরিফুস সুনান। আল্লামা শাব্বীর আহমদ ওসমানী (রহ.)-এর ফতহুল মুলহিম এবং আল্লামা তকী ওসমানী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর তাকমালাতু ফতহিল মুলহিম এবং আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.)-এর বাযলুল মাজহুদ ফী শরহি আবি দাউদ অধ্যয়ন করা। যদি আরবি শরহ দেখা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত উর্দু শরাহ দেখে হলেও সমাধান বের করতে হবে। যেমন আল্লামা তকী ওসমানী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত দরসে তিরমিযী, মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) রচিত তুহফাতুল আলমায়ীতুহফাতুল কারী, জামিয়া প্রধান আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত তাসহীলুত তিরমিযী, আল্লামা রফীক আহমদ (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ইফাদাতুল মুসলিমঈযাহুল মিশকাত, আল্লামা আবুল হুসাইন (রহ.) রচিত তানযীমুল আশতাত আল্লামা ওসমান গনী সাহেব রচিত নসরুল বারী ইত্যাদি মুতাআলা করা। কেউ বাংলায় উত্তর দিলে বাংলা শরহগুলো পড়া। উল্লিখিত অনেক ব্যাখ্যাগ্রন্থ এখন বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। সেগুলো সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করা এবং সেখান থেকে বাংলা উপস্থাপনা ও লেখার সাজানো-গুছানোর পদ্ধতি আয়ত্ব করা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, দেখে দেখে অধ্যয়ন করার পর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মনে মনে অধ্যয়ন করা। অথবা হাঁটা-চলার সময় বিশেষ বিশেষ মাসআলা ও এ সম্পর্কীয় ইখতিলাফ ও দলীল স্মরণ করা। যদি স্মরণ না হয়, তা হলে পুনরায় কিতাব দেখা। তাতে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অন্তরে বসে যাবে। আর যদি সম্ভব হয়, তা হলে আকওয়াল ও দালায়েল নোট করা। যেন পরীক্ষার দিন অতি সহজেই আরেকবার নজর দেওয়া যায়।

৪. কিতাবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা

প্রিয় বন্ধুরা! চতুর্থ যে বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা হলো হাদীসের প্রতিটি কিতাবেই কিছু স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। এগুলো পৃথকভাবে সমাধান করা। হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষার বিন্যাস অনুসারে নিম্নে প্রত্যেকটি কিতাবের স্বতন্ত্র বিষয়গুলোর আলোচনা করা হলো।

এক. বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ড

আল-হায়আতুল উলয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ডের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ কিতাবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো, কিতাবুল ওহী, কিতাবুল ঈমান, কিতাবুল ইলমের হাদীসগুলোর ই’রাব, অনুবাদ, ব্যাখ্যা, তরজমাতুল বাব ও হাদীসের সঙ্গে তার মুনাসাবাত ইত্যাদি অত্যাধিক গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করা। আর বুখারী শরীফের তরজমাতুল বাব ও হাদীসের সাথে তার মুনাসাবাত ও কিতাবুল ওহী হল করার জন্য শায়খ যাকারিয়া (রহ.)-এর আল-আবওয়াব ওয়াত তারাজিম খুবই উপকারী এবং উর্দু শরহ অধ্যয়নকারীদের জন্য মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) রচিত তুহফাতুল কারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ শরহ, এটি একটি সংক্ষিপ্ত হলেও খুবই জরুরি ব্যাখ্যাগ্রন্থ। এ ক্ষেত্রে ইনআমুল বারী, কাশফুল বারীও দেখা যেতে পারে।

দুই. বুখারী শরীফ দ্বিতীয় খণ্ড

বুখারী শরীফ দ্বিতীয় খণ্ডেরও ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। এ কিতাবে স্বতন্ত্রভাবে পড়ার বিষয়গুলো হলো কিতাবুল মাগাযী, কিতাবুত তাফসীর, কিতাবুল হিয়াল এবং কলা বায়াযু নাস। এছাড়াও হাদীসের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনা জানা থাকা আবশ্যক। এটি হল করার জন্য নসরুল বারীকাশফুল বারী ইত্যাদি শরহ দেখা যেতে পারে এবং আসহুস সিয়ারসীরাতে মুসতফা অনেক সহায়ক হবে।

তিন. মুসলিম শরীফ প্রথম খণ্ড

মুসলিম শরীফ প্রথম খণ্ডের ১০০ নম্বরের পৃথক পরীক্ষা হয়। এ কিতাবে মুকাদ্দামায়ে মুসলিম আলাদাভাবে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) লিখিত ফয়যুল মুনঈম শরহটি খুবই উপকারী। এছাড়া অন্যান্য বাব যেমন কিতাবুল ঈমান ইত্যাদি অন্য কিতাবের সাথে মিল রেখে পড়লে অনেকাংশে সহজ হবে। উর্দু শরহ অধ্যয়নকারীরা দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম হাদীস বিশারদ আল্লামা নেয়ামতুল্লাহ আজমী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত নেয়মাতুল মুনঈম ও জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা রফিক আহমদ (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ইফাদাতুল মুসলিম অধ্যয়নে রাখতে পারেন।

চার. মুসলিম শরীফ দ্বিতীয় খণ্ড

মুসলিম শরীফ দ্বিতীয় খণ্ডেরও ১০০ নম্বরের পৃথক পরীক্ষা হয়। এ কিতাবে কিতাবুল বুয়ূ, কিতাবুর রিবাসহ মুআমেলাত সম্পর্কীয় বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গুলো হল করার জন্য আল্লামা মুফতি তকী ওসমানী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত তাকমালাতু ফতহিল মুলহিমআল-মু’লিম অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

পাঁচ. তিরমিযী শরীফ প্রথম খণ্ড

তিরমিযী শরীফ প্রথম খণ্ডের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। এ কিতাবের প্রতিটি বাবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত তিরমিযী শরীফ একটি কিতাব হল করলে সুনানের প্রায় কিতাব হল হয়ে যাবে। তবে তিরমিযী শরীফেরও কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলোর প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন বেশ কিছু জায়গায় ইমাম তিরমিযী (রহ.) ‘কালা আবু ইসা’ বলে মন্তব্য করেছেন, তেমনি বিভিন্নস্থানে ইমাম তিরমিযী (রহ.)-এর বিশেষ বিশেষ ব্যাখ্যাও রয়েছে। এগুলো পৃথকভাবে সমাধান করতে হবে। তেমনি ইমাম তিরমিযী (রহ.)-এর স্বতন্ত্র পরিভাষা হাযা হাদীসুন সাহীহুন গারিবুন ইত্যাদির মতলব জানা থাকতে হবে।

ছয়. তিরমিযী শরীফ দ্বিতীয় খণ্ড ও শামায়েল

তিরমিযী শরীয় দ্বিতীয় খণ্ড ও শামায়েলে তিরমিযী উভয় কিতাব একটি বিষয় ধর্তব্য। উভয় কিতাবের পরীক্ষা ১০০ নম্বরে হয়ে থাকে। প্রথমত তিরমিযী দ্বিতীয় খণ্ডের শুরুর বাবগুলো বিশেষভাবে হল করতে হবে। কিতাবুল আতইমা, কিতাবুল আশরিবা, কিয়ামতের আলামত সংক্রান্ত হাদীসগুলো ভালোভাবে হল করতে হবে। এগুলোর শাব্দিক বিশ্লেষণ ও মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করতে হবে।

আর শামায়েলে তিরমিযীর জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রস্তুতি লাগবে। এর বিষয়বস্তু অন্য কিতাবের সঙ্গে যেহেতু মিল নেই, তাই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে কঠিন কঠিন শব্দগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ পড়তে হবে। বিশেষ করে হযরত হিন্দা ইবনে আবু হালা (রাযি.)-এর দীর্ঘ হাদিসটি শাব্দিক বিশ্লেষণসহ পড়বেন। এছাড়া সমস্ত হাদীসের তরজমা ও বিভিন্ন শব্দের মতলব তাহকীকসহ অবশ্যই পড়তে হবে। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.) রচিত যুবদাতুশ শামায়েল এবং জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা রফিক আহমদ (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত আকরাবুর রসায়িল ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো খুবই উপকারী।

সাত. আবু দাউদ শরীফ

আবু দাউদ শরীফ প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড উভয়টির পূর্ণমান হল ১০০। এ কিতাবে কলা আবু দাউদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে হযরতুল উস্তাদ আল্লামা নূরুল ইসলাম জদীদ (রহ.) রচিত কলা আবু দাউদ কিতাবটি উপকারী। আবু দাউদ দ্বিতীয় খণ্ডের কিতাবুল জিহাদ ও কিতাবুস সিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সেগুলোও অধ্যয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষত শাব্দিক বিশ্লেষণ ও মৌলিকব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে। আবু দাউদের জন্য বাযলুল মজহুদআসসামহুল মাহমুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যাখ্যাগ্রন্থ। অধ্যয়নের সময় এগুলোকে সামনে রাখলে অনেক সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

আট. নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ

নাসায়ী শরীফ ও ইবনে মাজাহ; এই দুই কিতাবের পূর্ণমান হল ১০০। কিতাবদ্বয়ের এর মুশকিল হাদীসগুলোর ই’রাব ও অনুবাদ উভয়টি হল করতে হবে। নাসায়ী শরীফের তরজুমাতুল বাব ও ইখতিলাফী মাসায়েল দলীলসহকারে পড়তে হবে।

নয়. তাহাবী শরীফ

তাহাবী শরীফের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ কিতাবটি হানাফী মাযহাবের সনামধন্য ইমাম আল্লামা তাহাবী (রহ.)-কর্তৃক রচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের কিতাব। ইমাম তাহাবী (রহ.) পাণ্ডিত্বপূর্ণ উপস্থাপনা এবং নজরে তাহাবির মাধ্যমে মাযহাবের প্রাধান্যতা প্রমাণ করেছেন। তাই ইমাম তাহাবী (রহ.)-এর বর্ণনাশৈলী এবং উপস্থাপনার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রেখে নজরে তাহাবীকে গুরুত্বের সাথে হল করতে হবে। আর ইখতিলাফি মাসআলা অন্যান্য কিতাবের সাথে মিল রেখেই পড়তে হবে। ইমাম তাহাবী (রহ.) কখনো কখনো একটি মাসআলায় কয়েকজন ইমামের মতামত উল্লেখ করে থাকেন। প্রত্যেকের পক্ষের হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, এ হাদীসের ওপর অমুক ইমাম আমল করে থাকেন। সবশেষে নিজের মত উল্লেখ করেন এবং নিজস্ব যুক্তি নজরে তাহাবী দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট করেন। অনেক ক্ষেত্রে অন্য ইমামের যুক্তি উল্লেখ করে তা খণ্ডন করেন। এগুলো ভালোভাবে উপলব্দি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জামিয়া প্রধান আল্লামা মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত তাসহীলুত তাহাবী তাহাবী শরীফ হল করার জন্য তুলনাহীন একটি সহায়কগ্রন্থ। তেমনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস, শ্রদ্ধেয় উস্তাদ মাওলানা মুজিবুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-এর তাসহীলুত তাহাবীও ছাত্রদের জন্য উপকারী।

দশ. মুয়াত্তাঈন

মুয়াত্তা মুহাম্মদমুয়াত্তা মালেক উভয় কিতাবের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ কিতাবদ্বয় থেকে বিষয়ভিত্তিক কিছু হাদীস মুখস্ত করা জরুরি। যে কোন কিতাবে মাযহাবের দালীল উল্লেখ করার ক্ষেত্রে হাদীসগুলো খুব কাজে আসবে। তেমনি ফিকহি মাসআলার ক্ষেত্রে ইমামগণের ভিন্ন ভিন্ন মতামত দলীলসহকারে মুখস্থ করার সাথে সাথে অন্যান্য ইমামের দলীলের জবাবসহ নিজের মাযহাবের প্রাধান্যতার কারণগুলো বিশেষভাবে জেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শায়খুল হাদীস যাকারিয়া (রহ.) রচিত ‘আওজাযুল মাসালিক’ অত্যন্ত উপকারী গ্রন্থ। আর উর্দু শরহ অধ্যয়নকারীদের জন্য জামিয়া পটিয়ার সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা রফীক আহমদ (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত কুররাতুল আইনাঈন একটি সাহায্যকারী গ্রন্থ। আগ্রহী ছাত্ররা অনেক উপকৃত হতে পারবেন।

বন্ধুরা! একটি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, বিশেষ বিশেষ বর্ণনাকারীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী অব্যশই জেনে নেবেন। এটা সকল কিতাবের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর মুসান্নিফগণের জীবনী, প্রত্যেক কিতাবের বৈশিষ্ট্য পূর্ব থেকে ভালোভাবে মুখস্ত করে নেবেন এবং পরীক্ষার দিন আবারও পড়ে নেবেন।

পরীক্ষার দিনগুলোতে পড়া-লেখা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! ১০ বিষয়ে আপনাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে। তাই নুন্যতম দশ দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার এই দিনগুলো যেন অবহেলায় নষ্ট না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার সময়সূচী, পরীক্ষার আসনও ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। পরীক্ষার রুটিন মাথায় রেখেই পুনঃপ্রস্তুতি নিতে হবে। রুটিন অনুযায়ী যে দিন যে কিতাবের পরীক্ষা প্রথমে ঐ কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ভালো করে কয়েক বার পড়তে হবে এবং কিতাবের স্বতন্ত্র বিষয়গুলো মনযোগসহকারে পড়তে হবে। বিশেষ করে ইখতেলাফি মাসআলা, ইমামগণের মতামত ও দালায়েল পরীক্ষার হলে যাওয়ার পূর্বে সকাল বেলা অবশ্যই দ্বিতীয়বার দেখে নিতে হবে।

বন্ধুরা! পরীক্ষার রাত বেশি সময় জাগ্রত থাকার চেয়ে পরিমিত ঘুমানো উচিৎ। যেন পরীক্ষার হলে ঘুমের ভাব না থাকে এবং মস্তিষ্ক শান্ত থাকে। পরীক্ষার আগের রাতে শরীর ও মনকে পরিমিত বিশ্রাম দেওয়া জরুরি । পড়তে পড়তে মাথা জ্যাম করে পরীক্ষার হলে যাওয়ার চেয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার হলে যাওয়া উত্তম। কারণ পরীক্ষার রাতে অধিক রাত জেগে পড়াশোনা করলে কারো কারো বমি বমি ভাবও থাকে, যার কারণে ভালোভাবে পরীক্ষার উত্তর লিখা সম্ভব হয় না। তেমনি একেবারে খালি পেটে পরীক্ষার হলে যাবেন না, বরং কিছু পানাহার করেই হলে প্রবেশ করবেন।

পরীক্ষার হলে করণীয়

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! চেষ্টা করবেন যেন পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা পূর্বে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো যায়, যেন একটু রেস্ট নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করা যায়। পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর আপনাকে যে উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ কি না, তা প্রথমে দেখে নিন। প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়বেন। আপনাকে কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তা দেখে নেবেন। প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে, না অতিরিক্ত প্রশ্ন আছে? অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকলে আপনার কাছে অধিক সহজ প্রশ্নগুলোতে টিক চিহ্ন দিন। প্রশ্ন দেখার সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন, এমন কোনো প্রশ্ন আছে কি না, যার জবাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। উত্তর লেখার পূর্বে প্রত্যেক প্রশ্নের ছোট-বড় উত্তরের জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে। যেমন প্রথম প্রশ্নের আলিফের জন্য দশ মিনিট বা-এর জন্য সাত মিনিট ইত্যাদি।

বন্ধুরা! লেখা শুরু করার পূর্বে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই কিছু দুআ-দুরূদ পাঠ করে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবেন। বিশেষত ‘রব্বী যিদনী ইলমা, রব্বীশরাহলী সদরী—এই আয়াতগুলো পড়বেন এবং তিনবার আল্লাহুম্মা আল্লীমনী মা জাহিলতু ও যাককিরনী মা নাসীতু এ দুআটি পড়ে বিসমিল্লাহ বলে লেখা আরম্ভ করবেন।

একটি তাদবীর

মুফতি তকী ওসমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, আমার পিতা মুফতি শফী (রহ.) আমাকে একটি তদবীর শিখিয়েছেন যে, পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রথমে ডান হাতের পাঁচ আঙুলে  كهيعصএভাবে পড়াবে যে, প্রথমে ছোট আঙুলের ওপর ك পড়ে সেটি বন্ধ করে ফেলবে। তারপর প্রতিটি আঙুলে এক-এক হরফ পড়ে সেটি বন্ধ করতে থাকবে। যখন ص পড়বে তখন যেন সবগুলো আঙুল বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বলবে, كفيت (কুফিইতু)। তারপর ‘হামীম’ এভাবে ‘কাফ সীন আইন’ পড়বে, ‘হা’ বলে ছোট আঙুল খুলবে। অতঃপর প্রতিটি একেকটি আঙুল খুলতে থাকবে। যখন সবগুলো আঙুল খুলে যাবে তখন বলবে حميت (হুমিইতু)। এ আমল করার পর প্রশ্নপত্র খুলবে। (আমার জীবন কথা ৭/৫৯)

পরীক্ষার খাতায় অপ্রয়োজনীয় কিছু লিখবেন না। লেখা সুপাঠ্য হওয়া দরকার। অনেক সময় ভালো ছাত্রের লেখাও পড়তে কষ্ট হয়। তাই তারা ভালো লিখেও কম নম্বর পায়। সুতরাং হাতের লেখা সুন্দর ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। ভালো ফলাফলের জন্য সুন্দর হাতের লেখা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শব্দের এবং লাইনের মাঝে প্রয়োজনীয় ফাঁক রেখে স্পষ্ট করে লিখতে হবে যাতে সহজে পড়া যায়। খুব ছোট ও হিজিবিজি করে লেখবেন না। কোন শব্দ, লাইন বা অনুচ্ছেদ কেটে দিতে হলে পরিস্কার করে কাটবেন, হিজিবিজি করে নয়। ভুল শব্দ বা বাক্যাংশের ওপর পুনরায় লিখে সংশোধন করা ঠিক নয় বরং এক্ষেত্রে উপরে বা পাশে সঠিক শব্দ বসাতে হবে। এক কথায় খাতাটি খুলতেই যেনো পরীক্ষকের মনভরে যায় । এক নিঃশ্বাসেই যেনো খাতাটি পড়ে ফেলতে পারেন। সুন্দর লেখা ও আকষর্ণীয় উপস্থাপনার জন্য বরাদ্দকৃত চার নম্বার তখনই আশা করা যায়।

কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় হঠাৎ কোনো তথ্য মনে না এলে তার জন্য চিন্তা করতে করতে সময় অপচয় করবেন না। প্রয়োজনে কিছু জায়গা খালি রেখে লেখা চালিয়ে যাবেন, পরবর্তী সময়ে স্মরণ হলে উক্ত তথ্য যোগ করে দেবেন। আপনি একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে সময় বরাদ্দ করবেন উক্ত সময়ের মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে না পারলে জায়গা খালি রেখে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার পর সময় রয়ে গেলে পূর্বের প্রশ্নে খালি থাকা উত্তর পূর্ণ করবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর না লেখে আসবে না। না পারলেও যতোটা সম্ভব চিন্তা-ভাবনা করে নিজের পক্ষ থেকে হলেও উত্তর লেখার চেষ্টা করবেন। পূর্ণ না লিখতে পারলেও যতোটা সম্ভব লিখলে, কিছু নম্বার তো পাওয়া যাবে। লক্ষ্য রাখবেন একই প্রশ্নের মধ্যে নানা অংশ থাকে। তার কোন অংশ যেনো বাদ না যায়। প্রতিটি অংশের জন্য নির্ধারিত নম্বর রয়েছে। সুতরাং এক অংশ যতোই সুন্দর করে লিখেন না কেন, তার নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে অতিরিক্ত নম্বর পাওয়া যাবে না। আর যদি সকল অংশের উত্তর দেওয়া হয়, তা হলে প্রত্যেক অংশের নম্বর অবশ্য লাভ করবে। তবে অবশ্য ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে লিখবেন ও লেখার ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা ও সজাগ দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করতে হবে।

নজরে সানী বা রিভিশন দেওয়া

সুহৃদ বন্ধুরা! প্রশ্নপত্রের সকল উত্তর লেখা শেষ করে পূর্ণ খাতা রিভিশন বা নজরে সানী করা অতি প্রয়োজন। প্রথমে খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় রোল নম্বার ইত্যাদির শূন্যস্থানগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা হয়েছে কি-না? তা চেক করবেন। এরপর ধীরস্থিরভাবে দেখবেন ‘আলিফ’, ‘বা’ এবং ‘জীম’ প্রত্যেক প্রশ্নের অংশের উত্তর লেখা হয়েছে কি-না এবং প্রশ্ন নম্বর ও ‘আলিফ’, ‘বা’, ‘জীম’ ইত্যাদি যথাযথভাবে লেখা হয়েছে কি-না। এরপর পূর্ণ খাতা ভালোভাবে দেখবেন। কোথাও ভুল দৃষ্টিগোচর হলে তা ঠিক করে নেবেন।

পরীক্ষা শেষ করে চিন্তা করা উচিৎ নয়। কারণ, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এ নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে পরবর্র্তী পরীক্ষাও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য পিছনের পরীক্ষার চিন্তা না করে সামনের পরীক্ষাটা কীভাবে ভালো করা যায়, সে চিন্তা মাথায় নিয়ে নবোদ্যমে পড়ালেখা করবেন। ঘাবড়ে যাবেন না, চিন্তামুক্ত হয়ে শান্তভাবে পরীক্ষা দেবেন। অন্যথায় প্রশ্নোত্তর জানা থাকার পরও উত্তর লিখতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, বেশী বেশী দুআ-মুনাজাতে মশগুল থাকতে হবে। অনেক সময় সবকিছু ঠিকভাবে লেখার পরও সামান্য নম্বরের জন্য তারতীবে আসে না, কিংবা নিরীক্ষণে যথাযথ নম্বর না আসার কারণে কিংবা যোগে ভুল হওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারে না। যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ছাড়া চূড়ান্ত সফলতা সম্ভব নয়। তাই তাঁর দরবারে সবসময় দুআ-মুনাজাতে লেগে থাকতে হবে। দরস চলাকালীন সময়ে মনোযোগসহ লেখাপড়া করার সাথে সাথে একজন পরীক্ষার্থী যদি উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখে, তা হলে পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্যের আশা করা যায়। আল্লাহ তাআলা সকলের সহায় হোন, আমীন।

সলিমুদ্দিন মাহদী কাসেমী

শিক্ষাপরামর্শ

উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী

অধ্যয়নের নিয়মাবলি

সমস্যা: কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পড়া-শোনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, কুরআন-হাদীস বোঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। কিন্তু আমরা অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় তরজমায়ে কুরআনে দুর্বল হয়ে থাকি। এ দুর্বলতা দূরীভূত করার লক্ষ্যে করণীয় কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত ও ধন্য হবো।

নিবেদক

মুহাম্মদ আবু শাকের বিন ইবরাহীম

শিক্ষার্থী, জামায়াতে ছাহারুম

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমাধান: কুরআন-সুন্নাহ বুঝতে আমাদেরকে প্রথমেই আরবি ভাষা শিখতে হবে। আর আরবি ভাষা বোঝার প্রাথমিক ভিত্তি হলো নাহু-সরফ বোঝার ওপর। তেমনি কুরআন-হাদীসে পাণ্ডিত্য অর্জন করার জন্য ফিকহ-বালাগাত ও মানতিকসহ অনেক বিষয় গুরুত্বসহকারে পড়তে হয়। তাই এ সকল বিষয় আমাদের আমাদের দরসে নিযামীতে খুবই গুরুত্বসহকারে পড়ানো হয়। সুতরাং কুরআন-হাদীস বোঝার জন্য সে সকল শাস্ত্র ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করার সাথে সাথে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করা হলে আশা করি এ বিষয়ে দুর্বলতা কেটে যাবে, ইনশা আল্লাহ।

কুরআন বোঝার জন্য প্রথমত بيان اللغة  শব্দ বিশ্লেষণ হল করতে হবে। এর জন্য লুগাতুল কুরআনের কিতাব দেখতে হবে। যেমন রাগেব আসফাহানীর المفردات في غريب القرآن  এবং উর্দু ভাষায় মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী (রহ.)-এর لغات القرآن ।

দ্বিতীয়ত بيان الإعراب-এর জন্য দেখতে হবে إعراب القرآن বিষয়ক কিতাবাদি অধ্যয়ন করতে হবে।

তৃতীয়ত ترجمة معاني القرآن বিষয়ক আরবি বা ভিন্ন ভাষায় যেসব কিতাব রয়েছে সেসবের কোনোটা মুতালাআ করা। যেমন আরবি কিতাবগুলোর মধ্যে صفوة التفاسير  দেখতে পারেন এবং বাংলা ভাষায় রচিত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ (দা. বা.)-এর الطريق إلى القرآن الكريم  থেকে ইস্তেফাদা করতে পারেন। চতুর্থ, আকাবির ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক রচিত কুরআনে করীমের কোনো নির্ভরযোগ্য অনুবাদ মুতালাআ করা। যেমন তরজমাতু শায়খিল হিন্দ, বয়ানুল কুরআন এবং মা‘আরেফুল কুরআন।

ঘোষণা!

(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা,সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)

শিক্ষার্থী বন্ধুরা! আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপত্র, ইসলামী গবেষণামূলক সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত- তাওহীদ এতে নিয়মিত বিভাগ শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ নামক একটি পাতা চালু করা হয়েছে।  উক্ত বিভাগে একদিকে থাকছে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ।  অপরদিকে থাকছে শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সমাধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।

অতএব,এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা,সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে।  সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের লেখুন এবং চিন্তামুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনাদের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত যথার্থ সমাধানে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো-ইনশা-আল্লাহ।  আল্লাহই তাওফীকদাতা।

যোগাযোগ:

বিভাগীয় সম্পাদক

শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ

মাসিক আত-তাওহীদ

আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম।

ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ