বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

 

 

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: মুহতারাম, আমার আব্বা আমার জন্য শরীয়ত মোতাবেক বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আমার আব্বা আমাকে না জানিয়ে মেয়ের বাবার সঙ্গে বিয়েসংক্রান্ত কিছু টাকা (যৌতুক) নেওয়ার চুক্তি করেন। পরে যখন আমার স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুকের কথা শুনি, সঙ্গে সঙ্গে তার মাধ্যমে তার বাবাকে ওই টাকাগুলো না দেওয়ার জন্য বলি। একথা আমার আব্বা জানার পর আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে বাধ্য করেন। আমি তাতে অসম্মতি প্রকাশ করলে আমার আব্বা আমাার সার্টিফিকেট থেকে আমার দস্তখত জালিয়াতি করে ‘মাননীয় সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নোটারি পাবলিকের কার্যালয় চট্টগ্রাম’ হতে আমার স্ত্রীর শারীরিক দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে তালাকনামা কার্যকর করেন এবং তাতে আমার সম্মতি প্রকাশের জন্য আমাকে বাধ্য করেন। আমি তাতে সম্মতি প্রকাশ করিনি। পরে মাননীয় সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নোটারি পাবলিকের কার্যালয় চট্টগ্রামের মাধ্যমে উক্ত তালাকনামা প্রত্যাহার করি। উক্ত জালিয়াতিমূলক তালাকনামা প্রত্যাহার করতে গিয়ে সরকারের নিয়মের কারণে উক্ত তালাক আমি দিয়েছি এমনটা আমাকে সাজাতে হয়েছে। অথচ আমি তাতে কোনোভাবেই সম্মত ছিলাম না। তালাকের যে অভিনয়টা করতে হয়েছে এটা ছিলো শুধু সরকারি নিয়ম থেকে বাঁচার জন্য। বর্তমানে আমরা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ে সুন্দরভাবে পূর্বের ন্যায় ঘর-সংসার ও মেলামেশা করছি।

এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে তালাকের অভিনয়ের কারণে আমার স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হয়েছে কি-না এবং আমাদের ঘর-সংসার ও মেলামেশায় শরয়ী কোনো ধরণের সমস্যা আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আলমগীর

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় আপনার পিতার পক্ষ থেকে আপনার স্ত্রীকে লিখিতভাবে যে তালাক দেওয়া হয়েছে তাতে আপনার সম্মতি ছিল না। তারপরও সরকারি আইনুনযায়ী উক্ত তালাক প্রত্যাহার করার সময় প্রত্যাহারনামা সাজাতে গিয়ে আপনি অভিনয় করে হলেও আপনার পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা স্বীকার করছেন। এটা মিথ্যা তালাক দেওয়ার স্বীকারোক্তির মতো হয়েছে। যার দ্বারা আমাদের ফতওয়ার কিতাবাদিতে স্ত্রীর ওপর ‘কাযাআন’ (দুনিয়াবি হিসেবে) তালাক পতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দিয়ানতান (আল্লাহ তাআলার নিকট) তালাক পতিত না হওয়ার কথা লেখা হয়েছে। তাই আপনি যখন সরকারি আইনের প্যাঁচে পড়ে মিথ্যা তালাক দেওয়ার স্বীকারোক্তি করেছেন। অথচ আপনি মৌখিক বা লিখিত কোনোভাবেই তালাক দেননি। সেই হিসেবে দিয়ানত (আল্লাহ তাআলার নিকট তালাক পতিত হয়নি)-এর ওপর আমল করে আপনারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করতে পারবেন। (সুনানে তিরমিযী: ২২৫, রদ্দুল মুহতার: ৪/৪৪০)

সমস্যা: আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়, অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে ২০১৩ সালে কোর্টের মাধ্যমে তিন তালাক দিই, কিন্তু আমার স্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই জানেনি। পরে আমরা এক হুযুরের কাছে তাওবা করে পুনরায় সংসার শুরু করি। পরবর্তীতে আমি তাকে আমার মায়ের সামনে দ্বিতীয়বার মৌখিকভাবে তিন তালাক দিই, এরপর আমি আপনাদের ফতওয়া বিভাগ থেকে ফতওয়া নেই, সে ফতওয়াতে আমাদের বিচ্ছেদের ফতওয়া দেওয়া হয়। এরপরও আমরা একসাথে সংসার করি। ইত্যবসরে আমাদের মাঝখানে বরাবরই ঝগড়া লেগে থাকত। সে বলত, আমার মোহর আদায় করে দাও, আমি চলে যাব। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে, এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী?

মাসরুর

চাঁদপুর

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা যদি সঠিক হয়, স্বামী কোর্টের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে সেচ্ছায় লিখিতভাবে যে তিন তালাক দিয়েছিল তা দ্বারা তার স্ত্রীর ওপর উক্ত তিন তালাক পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তারপর তারা যে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছে তা অবৈধ ও নাজায়েয হয়েছে। পরে যে তিন তালাক দিয়েছে তা বৃথা হয়েছে। কেননা উক্ত স্ত্রী তার জন্য প্রথমবার তিন তালাক দেওয়ার পর বেগানা (পর) মহিলার মতো হয়ে গেছে। এখন সে তার বকেয়া মোহরানার হকদার। স্বামীর ওপর তার বকেয়া মোহরানা আদায় করা একান্ত কর্তব্য। কেননা স্বামীর ওপর স্ত্রীর বকেয়া মোহরানা তার প্রাপ্য কর্জ হিসেবে গণ্য হয়। (সূরা আল-বাকারা: ২৩, সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৯১ ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৪৫২)

ব্যবসা-বাণিজ্য

সমস্যা: আমাদের এলাকার কিছু আলেমের mgš^‡q, শরয়ী বিনিয়োগের মাধ্যমে হালাল উপার্জন ও দারিদ্র বিমোচন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে উত্তর-পূর্ব সরল উলামা কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা গঠন করি। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, আমরা সংস্থার জমাকৃত টাকায় জিনিসপত্র ক্রয় করে গ্রাহককে লভ্যাংশসহ বিক্রি করতে পারবো কি না? যেমন- আমরা ফাউন্ডেশনের নামে ১ লক্ষ টাকার গাড়ি ক্রয় করে গ্রাহককে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো কি-না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

ওলামা কল্যাণ ফাউন্ডেশন

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: উল্লিখিত সংস্থার পক্ষ থেকে একটি জিনিস ক্রয় করে নির্দিষ্ট মুনাফার সঙ্গে নগদ কিংবা বাকি বিক্রিতে শরীয়তে কোনো বাধা নেই। (সহীহ আল-বুখারী: ১/৫৪০, বাদায়িউস সানায়ি: ৪/৪৬১, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ৩/১৬০)

সমাস্যা: মুহতারাম, ১. النكاح نصف الإيمان এটি কি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইরশাদকৃত হাদীস? ২. বিয়ে না করলে ঈমান কি পরিপূর্ণ হবে না। বিয়ে করার জন্য ছেলে এবং মেয়ের কী কী শর্ত থাকা প্রয়োজন?

শফিকুল ইসলাম

মৌলভীবাজার

সমাধান: النكاح نصف الإيمان সরাসরি এ হাদীস না থাকলেও নিকাহ ও বিয়ে এটি নিসফুল ঈমান (ঈমানের অর্ধেক) হওয়ার কথা বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। এটি কোনো মনগড়া বা প্রবাদ বাক্য নয়। কেননা বিয়ে না করে ব্যক্তিগত জীবন যাপন করলে আমাদের পবিত্র ইসলামের অনেক আহকাম পালন করা সম্ভব হয় না বরং অসম্পূর্ণ থেকেই যায়, যা বৈবাহিক সম্পর্ক করার পর শরীয়তসম্মতভাবে পারিবারিক ও সাংসারিক কর্মময় জীবন পালনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়। তাই এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা.) বিয়ে-শাদিকে নিসফে ঈমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা আমাদের পবিত্র ইসলাম মানবজাতির জন্য সার্বিক দিক দিয়ে জীবন বিধান, যা ব্যক্তিগত জীবন যাপনের মাধ্যমে সম্ভব হরে না। বিয়ের জন্য পুরুষের মধ্যে যৌনশক্তি বিদ্যমান থাকা ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ এবং মোহর আদায় করার আর্থিক সচ্ছলতার প্রয়োজন এবং মহিলার মধ্যে সৎ চরিত্রবান হওয়া এবং ধার্মিক কি না দেখা প্রয়োজন। (মিশকাত: ২/২৬৮)

ওয়াকফ-মসজিদ

সমস্যা: আস-সালামু আলাইকুম! বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের ‘সানমার মাহফুজ মেনর’ নামক ভবনে ৯১টি এপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৭২টিতে মুসলিম পরিবার ও অন্যগুলোতে অন্যান্য ধর্মের লোকেরা বসবাস করে। [ভূমির মালিক ডেভলাপারের সঙ্গে (ভবন নির্মাণের) চুক্তি করার সময় ইবাদতখানার জন্য একটি ফ্ল্যাট রাখার শর্ত দিয়েছিলেন।] উক্ত ভবনে একটি মসজিদ (ইবাদতখানা) রয়েছে; যেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হয়। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সেখানে জুমার নামাযও আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে উক্ত ভবনে বসবাসরত মুসলিম পরিবারগুলো ওই মসজিদটিকে জামে মসজিদে রূপান্তর করার ইচ্ছে পোষণ করেছে। অতএব এই বিষয়ে (জামে মসজিদে রূপান্তর করণে) শরীয়তের বিধিনিষেধ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে বাধিত করবেন।

আবু ইউসুফ

মেহেদিবাগ, চট্টগ্রাম

সমাধান: উক্ত ভবনের মসজিদকে জামে মসজিদে রূপান্তর করতে শরীয়তে কোনো বাধা নেই। তাতে সবধরনের নামায, যিকির ও তাসবিহ-তাহলিল আদায় করা সহীহ হবে এবং নামাজের সওয়াবও পাওয়া যাবে। তবে জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত না-হওয়ার কারণে তা শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা শরয়ী মসজিদের জন্য মসজিদের ওপর-নিচে সব মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত হতে হয়। মসজিদের ওপর-নিচে কারো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকতে পারে না। তাই তাতে শরয়ী মসজিদের সওয়াব পাওয়া যাবে না। (বাদায়িউস সানায়ি: ৮/৪০৬, রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৪৭, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ২/৪৪২)

সমস্যা: মুহতারাম, নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি মসজিদের জন্য মৌখিকভাবে কিছু জায়গা ওয়াকফ করে ইন্তেকাল করেন। রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার সুযোগ হয়নি তার। মসজিদ সংলগ্ন একটি বালক-বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য উক্ত ওয়াকফকৃত জায়গা বিক্রি বা দান করা যাবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

বশির উল্লাহ

মোজাফরাবাদ, চন্দনাইশ

সমাধান: মৌখিকভাবে মসজিদের জন্য কোনো জমি ওয়াকফ করা হলে, তা সহীহ ও শুদ্ধ হয়ে যায়। লিখিতভাবে বা রেজিস্ট্রি করে দেওয়া ওয়াকফ সহীহ হওয়ার জন্য জরুরি নয়। আর যে জিনিস যে কাজের জন্য ওয়াকফ করা হয়, সে জিনিস সে কাজেই ব্যবহার করতে হয়, অন্য কাজে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। সুতরাং মসজিদের জন্য মৌখিকভাবে ওয়াকফকৃত জায়গায় মসজিদ সংলগ্ন বালক-বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবণ নির্মাণ করা কিংবা তার জন্য উক্ত জমি বিক্রি করা জায়েয হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৩৩, শরহুল বিকায়া: ২/৩৫২, রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৩৩ ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২১/১২৮)

সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, বিষ খেয়ে আত্মহত্যকারীর কাফন-দাফন, জানাযা ও মিরাসের হুকুম কী? বিশেষ করে তাকে যদি মহল্লার কবরস্থানে দাফন করা হয় তখন উক্ত কবরস্থানের দাফনকৃত অন্য মাইয়িতের কোনো অসুবিধা হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

সৈয়দ আলম

চকরিয়া, কক্সবাজার

সমাধান: বিষ খেয়ে আত্মহত্যাকারী সে যদিও শরীয়তে শক্ত কবীরা গোনাহগার হিসাবে গণ্য হয়, কিন্তু তাকে ঈমানহারা ও অমুসলিম হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তাই তার কাফন-দাফন, মিরাস ইত্যাদি সব সাধারণ মুসলমান মাইয়িতের মতো করতে হবে। অবশ্যই তার জানাযার নামাযে তার বেশি আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেওয়া ভালো নয়, বরং মহল্লার কিছু মানুষ মিলে তার জানাযার নামায পড়ে নিতে হবে। তার জানাযার নামায না পড়লে মহল্লার সবাই গোনাগার হবে। তাকে মহল্লার কবরস্থানে দাফন করার দ্বারা কবরস্থানের দাফনকৃত অন্য মায়্যিতের কোনো ক্ষতি হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১/১০৯, মিশকাত: ১/১০০, ফতওয়ায়ে শামী: ৩/১০৮, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৫৬ ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/২১৩)

সমস্যা: মুহতারাম অপনার সমীপে আমার বিনীত প্রশ্ন এই যে, কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন দখলীয় জায়গায় তার অনুমতি ও সন্তুষ্টি ছাড়া মসজিদ নির্মাণ করা ও তাতে নামায আদায় করার হুকুম কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

মাওলানা নুহ

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো ব্যক্তির মালিকানা জায়গায় তার অনুমতি ছাড়া মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ হবে না। জোরপূর্বক যদি মসজিদ নির্মাণ করা হয় সেটা গসবি (জোরপূর্বক) মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে। সেখানে নামায পড়লে মসজিদের সাওয়াব পাওয়া যাবে না এবং নামায মাকরুহে তাহরীমি হবে। কোনো কোনো ইমামের মতে নামাযই সহীহ হবে না। (মিশকাত: ২৫৬, দুররুল মুখতার: ৬১৮, ফতওয়ায়ে শামী: ২/৪৫ ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/৩৩২)

 

মাদরাসা

সমস্যা: মুহতারম, নিম্নোক্ত দুটি মাসআলার শরয়ী সমাধান জানানোর বিনীত নিবেদন রইল।

১ম মাসআলা: লকডাউনের পূর্বে আমাদের মাদরাসার একজন শিক্ষক চাঁদা সংগ্রহ করার জন্য ওমানে গিয়েছিলেন। প্রায় নয় মাস পনের দিন পর মাদরাসায় এসেছেন। ইতঃপূর্বে বিদেশ সফরকারীদের জন্য বেতন ছাড়া দ্বিগুণ পরিমাণ হাদিয়া দেওয়া হতো। দ্বিগুণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে মাদরাসার আসাতিযাসহ অনেকে মুহতামিম সাহেবের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। অতঃপর মুহতামিম সাহেব শিক্ষকদের বৈঠকে বলেন, এই বছর দ্বিগুণ হাদিয়া দিয়ে দিন। ভবিষ্যতের জন্য আমরা এই বিষয়ে শরয়ী সমাধান নিয়ে ফায়সালা করব। সফরকারী শিক্ষকের বক্তব্য হলো আমাকে আগের মতো নয় মাস পনের দিনের দ্বিগুণ হাদিয়া দিতে হবে। অন্যথায় আমি একটাকাও নিবো না। এখন প্রশ্ন হলো তাকে হাদিয়া কী পরিমাণ হাদিয়া দেওয়া যাবে। এই মর্মে শরয়ী সমাধান কী?

২য় মাসআলা: মাদরাসার কোনো শিক্ষক বিদেশে চাঁদা সংগ্রহ করার জন্য গেলে, বেতন ছাড়া তাকে প্রতি মাসে হাদিয়া দিতে হবে কি? না শুধু প্রথম মাসে হাদিয়া দিলেই হবে? এবং হাদিয়ার পরিমাণ কতটুকু?

আবদুল্লাহ

আনোয়ারা, চট্টগ্রাম

১ম সমাধান: উল্লিখিত মাদরাসায় বিদেশী মুহাস্‌সিললীন (চাঁদা সংগ্রহকারীগণ)-এর জন্য লকডাউনের আগে বেতন-ভাতার যে নিয়ম চলে আসছে, লকডাউনের সময় যে মুহাস্‌সিল অনেক কষ্ট করে চাঁদা সংগ্রহ করেছে, তার বেতন-ভাতাও আগের নিয়মে দিতে হবে। কেননা সে বিদেশে যাওয়ার সময় নতুন কোনো নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

২য় সমাধান: সে বিষয়ে মাদরাসা-কর্তৃপক্ষ বা মজলিসে শুরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং চাঁদাসংগ্রহকারী শিক্ষকের সঙ্গে যেভাবে চুক্তি সম্পাদিত হবে, সেই মতে বেতন-ভাতা দিতে হবে। (সূরা আশ-শুরা: ৩৭, সহীহ আল-বুখারী: ২১১৪, দুররুল মুখতার: ৯/৯৪, কাওয়ায়িদুল ফিকাহ: ৪২, ৫১)

সমস্যা: মুহাতারাম, বিনীত নিবেদন এই যে, আমি একটি প্রাইভেট মাদরাসায় চাকুরি করি, করোনাকালীন আমরা শিক্ষকরা বাড়িতে বেকার ছিলাম। জ্ঞাতব্য যে, প্রাইভেট মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ছাত্রদের মাসিক ফি থেকে দেওয়া হয়। আমাদের মুহতামিম সাহেব করোনায় মাদরাসা বন্ধ থাকাকালীন মাসগুলোর ফি ছাত্রদের থেকে উসূল করে নেওয়ার পরও শিক্ষকদেরকে লকডাউনের বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না। এখন আমার জানার বিষয় হলো:

  1. শিক্ষকরা লকডাউনের বেতন পাওয়ার অধিকার রাখেন কি না?
  2. ছাত্রদের থেকে ফি নেওয়ার পরও শিক্ষকদেরকে বেতন না দেওয়া শরীয়তসম্মত কি না?

আহসান হাবিব

সাতকানিয়া

সমাধান: যে সমস্ত প্রাইভেট মাদরাসায় ছাত্রদের থেকে মাসিক ফি নেওয়া হয়, সে সমস্ত মাদরাসার শিক্ষকগণ যদি মাদরাসা বন্ধ থাকাকালীন অন্য কোনো জায়গায় চাকুরির জন্য চলে না যায় বরং উক্ত মাদরাসার জন্য অপেক্ষায় থেকে যায় এবং মুহতামিম সাহেবও তাদেরকে জবাব না দিয়ে দেন, তখন লকডাউনের সময় অপেক্ষাকৃত মাসগুলোর বেতন তাদের প্রাপ্য হক হিসেবে গণ্য হবে। কেননা তারা আজিরে খাস (বিশেষ কর্মচারী) হিসেবে গণ্য হবে, আর আজিরে খাস তার অর্পিত কাজ না করলেও তার বেতন-ভাতার অধিকারী হয়ে যায়। বিশেষ করে মুহতামিম সাহেব যখন ছাত্রদের থেকে বেতন উসূল করে নিয়েছেন, তখন উক্ত শিক্ষকদেরকে বেতন না দেওয়াটা তাঁর পক্ষ থেকে চরম অন্যায় ও জুলুম হিসেবে গণ্য হবে। (হিদায়া: ৩/৩০৮, রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৬৮)

সমস্যা: মুহতারাম, ১. মসজিদের মাইকে আজান, জুমার এবং ঈদের বয়ান ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কোনো কাজে (যেমন: মৃত ব্যক্তির নাম বা কোনো কিছু হারানো বা পাওয়া ইত্যাদির ঘোষণা করা) ব্যবহার করা বৈধ হবে কি-না? ২. যদি জায়েয না হয়, তাহলে জরুরি মুহুর্তে (যেমন: কারো বাড়িতে আগুন লাগলে বা ডাকাতি হলে) মসজিদের মাইক ব্যবহার করা জায়েয হবে কি-না? ৩. যদি জরুরি মুহুর্তেও জায়েয না হয়, তাহলে তখন করণীয় কী? ৪. কোনো সময় অপারগ হয়ে যদি কেউ মাইক ব্যবহার করে ফেলে তখন তার বিধান কী? ৫. যদি কোনো ধরনের সদকা করতে হয় তাহলে কী পরিমাণ সদকা করতে হবে? বিস্তারিত বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুর রহমান

কুতুবদিয়া, কক্সবাজার

সমাধান: শরীয়তে যে জিনিস, যে কাজের জন্য ওয়াকফ করা হয়; সে জিনিস সে কাজেই ব্যবহার করতে হয়। অন্য কাজে ব্যবহার করা জায়েয নেই। সুতরাং মসজিদের মাইক আযান, নামায ও ওয়াজ-নসীহত ইত্যাদি দীনী কাজেই ব্যবহার করতে হবে। দুনিয়াবি কোনো কাজে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। অবশ্য কখনো দুনিয়াবি কোনো কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হলে যেমন- প্রশ্নে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে কোনো কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হলে তখন মসজিদের ফান্ডে তার ন্যায়সঙ্গত কিছু ভাড়া দিতে হবে। অন্যথায় তা জায়েয হবে না। তারপরও মসজিদের মধ্যে ওই সমস্ত কথা বলা উচিত নয়। (সুনানুত তিরমিযী: ১/২৪৭, মাআরিফুস সুনান: ৩/৩১৩, ফতওয়ায়ে শামী: ৬/৫৬৬, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ২/৩৫৯)

 

ফরায়েয

সমস্যা: মুহতারাম, আমাদের বৈমাত্রেয় বড় ভাইসহ আমরা মোট সাত ভাই ও এক বোন, বৈমাত্রেয় বড় ভাই ইন্তেকালের পরে আব্বা-আম্মা মারা যান। জানার বিষয় হল, আমাদের বৈমাত্রেয় বড় ভাইয়ের সন্তানেরা আমাদের মতো আব্বা-আম্মার রেখে যাওয়া সম্পদের মালিক হবে কি না? কুরআন সুন্নাহের আলোকে বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

আবদুর রাজ্জাক

চরফ্যশন, ভোলা

সমাধান: শরীয়তে পিতা মৃত্যুর পূর্বে তার কোনো সন্তান যদি মারা যায়, তখন পিতার তরকা-সম্পদ থেকে ওই পুত্রের সন্তান-সন্ততিরা দাদার তরকা-সম্পদ থেকে মিরাছ পায় না যদি তার অন্য পুত্র সন্তান থাকে। কেননা ইসলামী শরীয়তের নীতিমালা হলো, নিকটবর্তী ওয়ারিশ থাকতে দূরবর্তি ওয়ারিশ তরকা পায় না। যদিও বর্তমান সরকারি পারিবারিক আইনে বাপের আগে মারা যাওয়া পুত্রের সন্তানদেরকে জীবিত পুত্রগণের মতো অংশ দেওয়ার বিধান করা হয়েছে, কিন্তু এটা পরিষ্কার শরীয়ত-পরিপন্থি আইন, যা ইসলামী শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য শরীয়তে মৃত পুত্রের সন্তানদের জন্য দাদার উক্ত পুত্রের সন্তানদেরকে কিছু সম্পদ দান করা বা ওসিয়ত করার বিধান রাখা হয়েছে। (সূরা আন-নিসা: ১১, আহকামুল কুরআন: ২/১০১, বাহরুর রায়িক: ৮/৪৯৪ ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৯/৩৮১)

হিবা-দান

সমস্যা: মুহতারাম, আমাদের গ্রামের কতিপয় অসহায় পরিবার একটি জনকল্যাণ সংস্থা থেকে ঘর নির্মাণের সহযোগিতার আবেদন করলে সংস্থাপরিচালক তাদেরকে ঘর নির্মাণের যাবতীয় খরচ দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে একথাও স্পষ্টভাবে বলে দেন যে, উক্ত ঘরের নির্মাণ বাবদ খরচ নিতে হলে সংস্থা বরাবর আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫০-৬০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। অতএব মহোদয়ের কাছে জানতে চাই যে, সংস্থা বরাবর ৫০-৬০ হাজার টাকা জমা দেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে কি-না? আর আমরা জানি যে, ব্যক্তি নিজের প্রাপ্য অধিকার নিতে গিয়ে যদি দাতা ঘুষের চাহিদা প্রকাশ করে তখন ঘুষ প্রদান করে নিজ প্রাপ্য নেওয়ার অনুমতি শরীয়ত দিয়েছে। গ্রামের এই অসহায় পরিবারের জন্য এই অনুদান তাদের প্রাপ্য হিসেবে গণ্য হবে কি? হলে তখন তারা ঘুষ দিয়ে হলেও তা নিয়ে নিতে পারবে কি?

মাওলানা জুনাইদ

মহেশখালী, কক্সবাজার

সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনা মতে যে সংস্থাটি অসহায় পরিবারের কাছ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যের যে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে, তাهبه بالعوض (কোনো কিছুর বিনিময়ে দান করা) হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং এটা জায়েয। অসহায় পরিবারগুলোর ৫০-৬০ হাজার করে দেওয়া টাকা ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে না। (আল-মুহীতুল বুরহানী: ৬/২৫৩ ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ৪/৪২০)

বিবিধ

সমস্যা: ঘড়ি, বিভিন্ন পাত্র ও পত্র-পত্রিকায় কুরআন-হাদীস লেখা জায়েয কি না? কারণ লোকজন কোনো বাছ-বিচার ও সম্মান-মর্যাদা ছাড়াই সেগুলো ব্যবহার করে থাকে।

মুহাম্মদ

কুমিল্লা

সমাধান: দীনের নিদর্শনাবলি ও সম্মানযোগ্য বিষয়াবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও মর্যাদা দান করা আবশ্যক। কারণ এটা তাকওয়া বা খোদাভীতির পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন ‘যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তার অন্তরে তাকওয়া থাকার পরিচায়ক’ আর ওলামায়ে কেরাম পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ধর্মীয় কিতাবাদিকে আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদি কুরআন ও হাদীস বা অন্যান্য কিতাবের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়, তা হলে ঘড়ি, বিভিন্ন পাত্র ও পত্র-পত্রিকায় লেখা জায়েয হবে। আর যদি অসম্মান ও অমর্যাদা হয়, তাহলে জায়েয হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/৩২৩, রদ্দুল মুহতার: ১/১২০)

সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকার নুরানী মাদরাসার কুরআন মজিদের কিছু কপি বেশি পুরাতন হয়ে যায়, যার ফলে এই কপিগুলো এমনভাবে ছিড়ে যায় যে, কপিগুলো থেকে তিলাওয়াত করা অসম্ভব। তাই আমরা কুরআন মজীদের ওই কপিগুলোকে পুড়িয়ে কবরস্থানে দাফন করে ফেলি। এ ঘটনার কিছুদিন পর আমাদের এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন যে, কুরআন মজিদ পুড়িয়ে কুরআনের অবমাননা করা হয়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে, কুরআন মজিদের কপি পোড়ানোর কারণে কুরআনের অবমাননা করা হয়েছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করিবেন।

ইউসুফ

চকরিয়া, কক্সবাজার

সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন মজিদের কপি যদি বেশি পুরাতন হয়ে ছিড়ে যায় এবং পড়ার উপযুক্ত না থাকে, তখন ওই সমস্ত ছেড়া কপিগুলো পুড়িয়ে তার ছাইগুলো মাটিতে দাফন করে দেওয়া ইসলামী শরীয়তের মধ্যে অবৈধ কাজ নয় এবং এটা কুরআন অবমাননা বা কুরআনের সঙ্গে বেয়াদবি হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা সহীহ আল-বুখারী শরীফের কিতাবুত তাফসীরের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওসমান (রাযি.) কুরআন মজীদ জমা করার পর অন্যান্য সাহাবীদের নিকট কুরআন মজীদের যে কপিগুলো ছিল তা পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দিয়ে ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) তার নির্দেশ মতে আমল করেছিলেন। কোনো সাহাবী সেটাকে কুরআন অবমাননা বা কুরআনের সঙ্গে বেয়াদবি হিসেবে গণ্য করেন নি এবং এতে কেউ কোনো আপত্তিও তোলেননি। (সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৪৬, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৮/৬৯ রদ্দুল মুহতার: ১/৩২০)

সমস্যা: একজন আলেম সে সাধারণ ডাক্তার হলেও সে সরকারি কিংবা M.B.B.S. ডাক্তারও নয়, তিনি মসজিদের ইমামতি করেন। (ডাক্তারি করতে গিয়ে) সে নারী-পুরুষ উভয়কে ইনজেকশন পুশ করে থাকেন। তো আমার জানার বিষয় হল, ১. একজন বেসরকারি M.B.B.S. ডিগ্রিহীন ডাক্তারের জন্য ইনজেকশন পুষ করার মতো কাজ আঞ্জাম দেওয়া বৈধ হবে কি? ২. এমন আলেম যিনি মহিলাদেরকেও ইনজেকশন পুষ করেন তার ইমামতি শুদ্ধ হবে কি? শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

লিয়াকত আলী

উখিয়া, কক্সবাজার

সমাধান: শরীয়তে ডাক্তার হওয়ার জন্য M.B.B.S. পাস করা আবশ্যক নয়, বরং যার মধ্যে ডাক্তারির অভিজ্ঞতা আছে সে ডাক্তারি করতে পারবে। যাদেরকে পল্লীচিকিৎসক বলা হয়। তবে M.B.B.S. পাস করা উত্তম। যখন সে চিকিৎসাবিদ্যা পরিচালনা করে এবং রোগীরাও তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসে। আর চিকিৎসার ব্যাপারে নারী-পুরুষ বরাবর। তাই নারীদেরকেও চিকিৎসার জন্য ইনজেকশন পুশ করা জায়েয ও বৈধ হবে। কিন্তু নারী-পুরুষের সতরের জায়গায় রোগ হলে রোগের অতিরিক্ত স্থান দেখা জায়েয হবে না এবং প্রয়োজন-পরিমাণ সতরের স্থান দেখা জায়েয হবে; প্রয়োজনাতিরিক্ত সতর দেখা জায়েয হবে না। তাই এরূপ ডাক্তার যদি আলেমেদ্বীনও হয় এবং সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন শরীফ পড়তে পারে, তাহলে তার ইমামতি শুদ্ধ হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবু শাইবা: ৫/৬৭৪, মাজমাউল আনহুর: ৪/১৬৯, তাবয়ীনুল হাকায়িক: ৭/৪০ ফতওয়ায়ে শামী: ২/২৯৪)

সমস্যা: কোনো মুসলমানের মধ্যে বাহ্যিকভাবে মুত্তাকির নিদর্শনসমূহ পাওয়া গেলে (আমলে সালেহ ইত্যাদি) তাকে বাস্তবিকভাবে মুত্তাকি বলা যাবে কি? নাকি কেবল বাহ্যিকভাবে মুত্তাকি বলা যাবে! জানিয়ে বাধিত করবেন।

নাজমুল্লাহ

আরকানী

সমাধান: মানুষ একে অপরের অন্তরের খবর জানতে পারে না, তাই তার লেবাস, পোষাক ও আমল ইত্যাদি যদি মুত্তাকির মতো হয়, তখন তাকে মুত্তাকি বলা যাবে। অবশ্য যদি তার কোনো কাজ-কর্ম মুত্তাকির বরখেলাফ (বিপরিত) হয় তখন তাকে মুত্তাকি বলা যাবে না। (সূরা ইউনুস: ৬২, সূরা যুমার: ৩২, সহীহ আল-বুখারী: ২/৬৪৬ আল-বাহরুল মাদিদ: ৩/৭৮)

সমস্যা: সবিনয় জানাচ্ছি যে, আমাদের এলাকার এক আলেম তার নিজ পৈতৃক ১০ গণ্ডা ভূমির ওপর মসজিদ নির্মাণ করেন। বিগত ৭০ বছর ধরে তাতে পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামায জামায়াত সহকারে চলে আসছে। ওই আলেমের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে বাবার নির্মিত উক্ত মসজিদের ১০ ফুট উত্তর পার্শ্বে ৫ গণ্ডা জমির এজমালী হিসেবে ২০ জনের সঙ্গে ওয়ারিস হয়। সে ২০১৮ ইংরেজিতে বাবার ৭০ বছরের পুরাতন মসজিদ বাদ দিয়ে এই এজমালী জমির ২ জন ওয়ারিশের অনুমতিতে বাকি ১৮ জনের অনুমতি ছাড়াই তাতে নতুন মসজিদ নির্মাণ করে। পুরাতন মসজিদকে নূরানী মাদরাসা ও হেফজখানায় রূপান্তর করে। ফলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাপাক অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করে। রাতে ঘুমায়। এই ঘুমে প্রস্রাব করে দেওয়ার অধিক আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও, অনুমতি না নেওয়া ওয়ারিসগণও এই মসজিদে নামায পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।

অতঃপর উক্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকার ওলামাদের মাঝে বিভিন্ন মত সৃষ্টি হয়। একপক্ষ বলে, আল্লাহর জমি পৃথিবীতে জায়গার অনুমতি ছাড়া জুমা মসজিদ নির্মাণ করলে তাতে নামায শুদ্ধ হবে। পুরাতন মসজিদে নুরানী-হেফযখানা চালু করলে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে না। অন্যপক্ষ বলে, নতুন মসজিদে জুমার নামায আদায় করলে জুমা আদায় হবে না। নাপাক অবস্থায় মসজিদে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। নুরানীর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাপাক অবস্থায় ও সেখানে প্রবেশের অধিক আশংকা রয়েছে। ফলে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে। তাই মসজিদে নূরানী-হেফজখানা চালু করা যাবে না। মসজিদ বড় করার প্রয়েজন হলে যদি মসজিদের চর্তুপার্শ্বে জায়গা থাকে তাহলে মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে না। স্থানান্তর করলে পুরাতন মসজিদকে ঘিরে রাখতে হবে।

অতএব আমার জানার বিষয় হলো, নতুন মসজিদে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে কি? নতুন মসজিদের জন্য টাকা-পয়সা বা জায়গা দান করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে কি? পুরাতন মসজিদকে নুরানী ও হেফজখানা হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন!

নুরুল আলম

বাঁশখালী

সমাধান: পুরাতন মসজিদের জন্য উক্ত আলেমের ওয়াকফকৃত ১০ গণ্ডা জমির ওপর যে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে, সে মসজিদে জুমার নামাযসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাত সহকারে চলে আসায়, সেটাকে মসজিদ হিসাবে বহাল রাখতে হবে। সে মসজিদটি বড় করার প্রয়োজন হলে সেটাসহ তার চতর্পার্শ্বে বড় করা যেতে পারে। সে মসজিদকে বাদ দিয়ে আরেকটা মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হয়নি এবং উক্ত নতুন মসজিদটি মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা ওই জমির সব মালিক মসজিদের জন্য জায়গা ওয়াকফ করেনি। তাই উক্ত (নতুন) মসজিদটি যখন শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়নি, তখন তার জন্য টাকা দান করা বা জায়গা ওয়াকফ করা সহীহ হবে না। কেউ (জেনেশুনে) দান করলে সাওয়াবও পাবে না। অতএব পুরাতন মসজিদকে মসজিদ হিসাবেই বহাল রাখতে হবে। তাতে নূরানী ও হেফজখানা চালু করা জায়েয হবে না। কেননা তার দ্বারা মসজিদের সঙ্গে শক্ত বেয়াদবি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের পবিত্রতাও নষ্ট হবে। যার দ্বারা মহল্লাবাসী সবাই গোনাহগার হবে। আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৫৪, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৩৭, ৬/৫৭৬ বাহারুর রায়িক: ৫/২৫১, ৩১৪)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ