কিতাবপত্র ও বই-পুস্তক মানুষকে আলোকিত করে। সফলতার পথ দেখায়। অতীতের সাথে বর্তমানের সেতুবন্ধনের উত্তম ভূমিকা পালন করে কিতাব ও বই পুস্তক। প্রায় চৌদ্দশত বছর ধরে ওলামায়ে কেরাম ইলমের যে পুষ্পদ্যোন তৈরি করেছেন, তার সৌরভ গ্রহণের একমাত্র মাধ্যম হল কিতাব ও বই-পুস্তক।
কিছু কিতাব এমন আছে, যা মানুষের মনোজগতকে উজ্জীবিত করে। চেতনাকে শাণিত করে। মানবিকতা জাগিয়ে তোলে। এমনকি কখনো একটি পুস্তকই হতে পারে জীবন পরিবর্তনের কারণ। বই-পুস্তক আপনার সর্বোত্তম বন্ধু, যা আপনাকে আলোর পথ দেখাবে, জীবনের পাথেয় যোগাবে। কিতাবের ভালবাসা যখন কারো হৃদয়ে স্থান করে নেয়, তখন অন্য সব ভালবাসা ম্লান হয়ে যায়। এ জন্য আরবী সাহিত্যের প্রসিদ্ধ কবি মুতানাব্বি বলেন, خير جليس في الزمان كتاب (কিতাব ও বই-পুস্তক হলো সময়ের শ্রেষ্ঠ বন্ধু)।
নিঃসন্দেহে একটি ভালো বই পাঠকের পরম বন্ধু, যা নির্জনতা ও সঙ্গিহীনতার বিরক্তি থেকে মুক্তি দেয়। বই-পুস্তক মানুষের সফরসঙ্গী, যা দিগদিগন্তের লোকালয় ও দূরদূরান্তের দেশ-মহাদেশের চিত্র পাঠকের নিকট উপস্থিত করে। বই-পুস্তকের মাধ্যমে মানুষ এমন মনীষীর সাক্ষাৎ লাভ করে, যাঁদের সাথে সাক্ষাৎ করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি জমাতে হয়। বই দ্বারা বিভিন্ন মতাবাদ ও চিন্তা-গবেষণার জ্ঞান অর্জিত হয়। বই-পুস্তকের সাথে যদি কারো সখ্যতা গড়ে উঠে, তা হলে অধ্যয়ন বিহীন জীবন তার কাছে দূর্বিসহ মনে হয়। বই-পুস্তকের অভিরূচি যার রয়েছে, সে অধ্যয়নকে নিত্যসঙ্গী করতে বাধ্য হয়। যদি সে কখনো রোগী হয়, তা হলে অধ্যয়নের মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করে। দুঃখ ও অস্থিরতার সময় বই-পুস্তক তার সান্ত্বনার ব্যবস্থা করে। টেনশন ও বিপদে বই-পুস্তক তাকে প্রবোধ দেয়। কেননা বই-পুস্তকই একমাত্র তার রোমাঞ্চকর সঙ্গী এবং রোমান্টিক সহযাত্রী।
বই-পুস্তক সংগ্রহের অভিপ্রায়:
বই-পুস্তকের সাথে অত্যাধিক ভালবাসা, বই সংগ্রহের সীমাহীন অভিপ্রায়, লাইব্রেরি সমৃদ্ধকরণের অধিক আকাঙ্ক্ষা; যেকোনো রূচিসম্পন্ন ব্যক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বড়রা বড় কষ্ট করে বই-পুস্তক সংগ্রহ করতেন। তাঁরা বইয়ের নেশায় সব ধরণের ত্যাগ ও কুরবানি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তার কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো। ৬ষ্ট শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত আলেমেদীন ইমাম ইবনুল খশশাব (রহ.) (মৃত্যু: ৫৬৭ হিজরী) সম্পর্কে একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, তিনি একদা একটি কিতাব ৫০০ দিরহাম দিয়ে ক্রয় করেন। কিন্তু মূল্য পরিশোধ করার মত তাঁর নিকট কিছুই ছিল না। তখন তিনি কিতাব বিক্রেতার কাছ থেকে তিন দিনের সময় নিলেন। কিতাবের টাকা আদায় করার জন্য নিজ ঘরের ছাদে দাঁড়িয়ে ঘর বিক্রি করার ঘোষণা দিলেন। পরবর্তীতে ঘর বিক্রি করে কিতাবের মূল পরিশোধ করেন (টীকা, তাবাকাতুল হানাবিলা: ২/২৫১)। ইবনুন নাজ্জার বলেন, কোনো আহলে ইলম মারা গেলেই ইবনুল খাশশাব রহ. তার সকল কিতাব কিনে ফেলতেন। এভাবে মাশায়েখদের অনেক কিতাব জমা হয়েছিল তার কাছে। তার হাতে সবসময় কিতাব থাকত। আর তিনি নিবিষ্ট চিত্তে অক্লান্তভাবে সারাদিন মুতালাআয় ডুবে থাকতেন। (সাফাহাত মিন সাবরিল ওলামা, পৃ. ৩২১)
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা! মানুষের সখের অন্ত নেই। তবে একেক জনের সখ একেক রকম। কারো সখ ঘুরে বেড়ানো। আবার কারো সখ বই-পুস্তক পড়া ও সংগ্রহ করা। আমাদেরও প্রধান সখ হতে পারে কিতাব সংগ্রহ করা এবং কিতাব অধ্যয়ন করা। হয়ত কিতাব সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁদের মতো ত্যাগ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু নিজের খরচের ক্ষেত্রে একটু মিতব্যয়ী হয়ে কিছু কিছু অর্থ জমা করে প্রয়োজনীয় কিতাবগুলো কি আমরা সংগ্রহ করতে পারি না? অবশ্য পারবো। তাই আজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করেন।
মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী
(রহ.)-এর দৃষ্টান্তহীন পুস্তকপ্রীতি
নিকট অতীতেও এমন অনেক মনীষী অতিবাহিত হয়েছেন, যাঁদের সাথে কিতাবের সম্পর্ক ছিল দৃষ্টান্তহীন ও অসাধারণ। কিতাবই ছিল তাঁদের নিত্যসঙ্গী ও একাকিত্বের বন্ধু। এমন মনীষীদের অন্যতম ছিলেন মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী (রহ.) (মৃত্যু: ১৯৭৬ হিজরী)। তাঁর অধ্যয়ন প্রীতির কথা তিনি ¯^qs নিজ যাদুময় কলম দ্বারা আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি শুরু থেকেই যে কোন বই-পুস্তক আদ্যোপান্ত পড়তে অভ্যস্ত ছিলেন। আত্মজীবনীর একাধিকস্থানে বই-পুস্তকের প্রতি তাঁর আকষর্ণের কথা উল্লেখ করেছেন। এক জায়গায় লিখেন, ‘শুরু-শুরুতে তো এ সব কিতাব ধার নিয়ে পড়তাম। অতঃপর যখন পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম, বই পড়ার নেশাও তীব্র হলো, তখন ফি. আদায় করে নিয়মিত পাঠাগারের সদস্য হয়ে গেলাম। পরবর্তীতে অনেক কিতাবাদি সংগ্রহ করি….। নিজের ছোট লাইব্রেরিটি দেখে আনন্দে মেতে উঠি।’ (আত্মজীবনী: পৃ. ২৪১)
এনসাইক্লোপিডিয়া বিট্রানিকার ১১তম সংস্করণ ৩৬ খণ্ডের বিশাল পরিধি নিয়ে যখন প্রকাশিত হলো, তখন দরয়াবাদী (রহ.) জীবিত ছিলেন। কিতাবের প্রতি তাঁর অসীম আগ্রহের কারণে শেষ বয়সেই তিনি তা সংগ্রহ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। কিন্তু সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে তিনি সংবাদ পেলেন, তাঁর এক শিষ্য এনসাইক্লোপিডিয়া সংগ্রহ করেছে। তখন তিনি অস্থির হয়ে তার নিকট পৌঁছে গেলেন। তিনি তাঁর সেই অস্থিরতা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আকাঙ্ক্ষার পা দিয়ে দৌঁড়ে নয়, বরং ডানা দিয়ে উড়ে তোমার নিকট অতিথি হয়েছি।’ এক খণ্ড নিয়ে যখন ঘরে পৌঁছেন, তখন তা কীভাবে পাঠ করেন, তার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘কখনো বসে, কখনো শুয়ে, আবার কখনো মেজের ওপর কিংবা হাতের ওপর রেখে; যেভাবেই সম্ভব হলো অধ্যয়ন করা আরম্ভ করলাম। মনে হলো, এটি কেবলমাত্র কিতাবই নয়, যেন সাত মহাদেশকে হাতের নাগালে করে দিলো…’ কিতাবের সাথে গভীর সম্পর্ক হয়েছিল, তাই চলার সময় তা বুকে জড়িয়ে ধরতাম, চুমু খেতাম, আদর করতাম এবং সম্মান করতাম। (আত্মজীবনী, পৃ. ১৩৪)
আল্লামা আবদুর রশীদ নুমানী (রহ.)-এর সমৃদ্ধ লাইব্রেরি:
পাকিস্তানের বিশিষ্ট গবেষক ও দার্শনিক আল্লামা আবদুর রশীদ নুমানী (রহ.)-সম্পর্কে তাঁর যোগ্য শিষ্য মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব (হাফিযাহুল্লাহ) লিখেন, আমরা যখন হুযুরের কাছে ছিলাম, তখন তাঁর বেতন-ভাতা ছিলো পনেরশ রূপি। কিন্তু তিনি অল্প বেতন সত্ত্বেও বিশাল সমৃদ্ধ পাঠাগারের মালিক ছিলেন। এখন তা তাঁর ছেলে জনাব আবদুশ শহীদ নুমানীর সংরক্ষণে আছে। মূলত যারা রূচিশীল গবেষক আলেম, মানের দিক থেকে তাঁদের কুতুবখানার দৃষ্টান্ত পাওয়া মুশকিলই বটে, তেমনি পরিমাণের দিক থেকেও তা অনেক বড় হয়ে থাকে। মাওলানা রহ.-এর ব্যক্তিগত কুতুবখানাটি মান ও পরিমাণ উভয় দিক থেকে ছিলো উল্লেখযোগ্য। তবে তিনি এত বড় কুতুবখানার মালিক হলেন কীভাবে? অথচ তিনি ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক আলেম আল্লামা যাহিদ কাওসারী (রহ.)-এর ¯^fv‡ei ব্যক্তিত্ব। ইশারা-ইঙ্গিতেও কারো কাছে কিছু চাইতেন না। নিজেও তেমন ¯^vej¤^x ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ একজন গবেষক। তথাপি এতগুলো কিতাব সংগ্রহ করা তার পক্ষে কীভাবে সম্ভব হলো?
তার উত্তর হলো, আমরাও কিতাবকে ভালবাসি, বই-পুস্তককে আমরাও মহব্বত করি। তবে কিতাবের সিরিয়াল আসে সব শেষে। সকল জরুরত পূরণ করার পরই কিতাবের বিষয়টি সামনে আসে। আর তা খরিদ করার দায়িত্ব আরোপিত হয় অভিভাবক কিংবা AvZ¥xq-¯^R‡bi ওপর। কিন্তু আল্লামা নুমানী (রহ.)-এর ¯^fve ছিলো এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি নিজের জরুরতের প্রথম সারিতে রাখতেন কিতাবের জরুরতকে। তাই কিতাবের জরুরতের পূরণ করেই অন্য জরুরত পুরণ করতেন। মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, আমরা কখনো হুযুরের বাসায় গেলে, সর্ব প্রথম তিনি আমাকে যে প্রশ্নটি করতেন, তা হলো, হেঁটে এসেছ না বাসে চড়ে? যদি বলতাম হেঁটে এসেছি, খুশি হতেন। আর যদি বলতাম বাসে এসেছি, তখন বলতেন, বাস ভাড়া কত ছিলো? বলতাম ত্রিশ পয়সা। তিনি বলতেন, তালিবুল ইলমের জন্য ত্রিশ পয়সাও কম নয়। আমাদের কাছে চার আনা জমা হলে রেখে দিতাম। পরে কখনো আরও চার আনা জমা হলে আট আনা দিয়ে কিতাব সংগ্রহ করতাম। মাওলানা আবদুল মালেক (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, বি. বাড়িয়ার টান-বাজার মসজিদের খতীব, ফজলুল হক সাহেবের মামা, তিনি তাঁর ঘটনা শোনালেন। দারুল উলুম দেওবন্দে যখন তিনি পড়তেন, তখন তাকে দুটি রুটি দেওয়া হতো। তিনি একটা খেতেন, আরেকটা রেখে দিতেন। কিছু লোক ছিলো, তারা এগুলো নিয়ে যেত এবং কয়েক পয়সা দিত। এভাবে কিছু পয়সা জমা হলে তা দিয়ে তিনি কিতাব সংগ্রহ করতেন। এভাবেই হয়েছে; আসলে এভাবেই হয়। (মাসিক আল-কউসার, b‡f¤^i ২০১৬)
বই-পুস্তকই হোক আমাদের উৎকৃষ্ট উপহার
মুসলমানদের নিকট লাইব্রেরির গুরুত্ব এত বেশি যে, কিতাবই অনেকের শাদির কারণ হয়ে ছিলো। মানুষ নিজের কনের বিয়েতে Dcnvi¯^iƒc লাইব্রেরি গিফট করতো। এ জন্য বিয়ে-শাদি সামাজিক ও শরয়ী প্রয়োজন হওয়ার সাথে সাথে অনেকের জ্ঞান অজর্নের জন্যও একটি বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যেমন- ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রহ.) (মৃত্যু: ২৩৮ হি.) সুলাইমান ইবনে আবদুল্লাহ যগদানী (রহ.) (মৃত্যু: ২২১ হি.)-এর মেয়েকে এ জন্য বিয়ে করেছিলেন, যেন তার মাধ্যমে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) কর্তৃক রচিত সকল কিতাবসমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরির মালিক হয়ে যান। (সামআনী কর্তৃক রচিত আল-আনসাব ৬/৩০৬)
মূলত জ্ঞানীদের নিকট কিতাবের বড়ই কদর রয়েছে। তাই সচেতন মানুষ আনন্দ ও প্রীতি অনুষ্ঠানে উপঢৌকন হিসাবে কিতাবকে নির্বাচন করে থাকে। ভালো বই এমন উপহার, যা শুধুমাত্র আর্থিক উপকারে আসে না, বরং তা দ্বারা চিন্তা-চেতনার উৎকর্ষতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মুক্ততার সাথে সাথে অন্যান্য আত্মিক উপকারও অর্জিত হয়। নিঃসন্দেহে কিতাব হলো মানুষের স্থায়ী স্মৃতি, যা দ্বারা আজীবন উপকৃত হওয়া যায়। কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলেও তা থেকে অর্জিত জ্ঞান, গবেষণা ও আমলের অনুপ্রেরণা দ্বারা তো পুরো জীবন সুবিধা লাভ করা যায়। অন্যভাষায় বললে, কিতাবের উপকার দীর্ঘস্থায়ী। তাই বর্তমান সময়েও উপহার-উপঢৌকন যদি ভালো কিতাবাদি হয়ে থাকে, তা হলে সমাজে জ্ঞানের আগ্রহ উজ্জীবিত হবে এবং মানুষের জ্ঞান ও কর্মে, চিন্তা ও চেতনার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যম হবে।
বস্তুত বই-পুস্তকের অভিরুচি এবং লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করণের আকাঙ্ক্ষা কেবলমাত্র জ্ঞানী-গুণীদের বৈশিষ্ট্য ছিলো না বরং প্রত্যেকের তামান্না ছিলো, যেন তার কাছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার থাকে এবং তার বাড়ি যেন বই-পুস্তক দ্বারা সজ্জিত হয়। নিজের কাছে কিংবা নিজের পাঠাগারে বই রাখাকে গৌরবের বস্তু মনে করা হতো। ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, প্রত্যেক যুগে এমন বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বিদ্যমান ছিলেন, যারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বই-পুস্তক সংগ্রহের আগ্রহী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরীব, উম্মি-জ্ঞানী, আলেম-ননআলেমের কোন ভেদাভেদ ছিলো না। লাইব্রেরি মুসলিম সমাজের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। জ্ঞানী-গুণীদের জন্য তা যদি হয় তাদের জ্ঞানের তৃষ্ণা নিবারণের মাধ্যম, তবে অশিক্ষিত সমাজের জন্য তা ছিল ঘর-বাড়ির সৌন্দর্য।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, কিতাব ও বই-পুস্তুক সংগ্রহের পাশাপাশি সেগুলো অধ্যয়ন করার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আকাবিররা যেমনি কিতাব সংগ্রহ করতেন তার চেয়েও বেশি কিতাব অধ্যয়ন করতেন। তার কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো:
আকবিরদের অধ্যয়নপ্রীতি
আমাদের জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরতুল আল্লামা মুফতী আযীযুল হক (রহ.) (১৩১৭-১৩৮০ হি.)-এর ছাত্রজীবনের কথা। তিনি তখন জিরি মাদরাসায় অধ্যয়নরত। সবেমাত্র এ দেশের আকাশে বিমান উড়তে শুরু করেছে। একদিনের ঘটনা। বিমানের গর্জন শোনামাত্র দরসগাহের সবাই বের হয়ে গেলো বিমান দেখার জন্য। হযরত মুফতী আযীযুল হক (রহ.) একটি কিতাব মুতআলা করছিলেন। তাঁরও একবার মনে হল, জীবনে প্রথমবারের মতো এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি না হয় দেখেই আসি! কিন্তু আবার মনে হল, কী আর হবে? কত পাখিই তো আকাশে উড়ে! একথা ভেবে আবারো অধ্যয়নে ডুবে গেলেন। (তাযকিরায়ে আযীয, মাওলানা সুলতান যওক নদভী, পৃ. ৩৮)
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.)-এর অধ্যয়নপ্রীতি:
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) (১৮৭৫-১৯৩৩ খ্রি.)। তীক্ষ্ণ মেধাশক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কখনো মুতআলা ত্যাগ করেননি। তাঁর অধ্যয়ন প্রীতি সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি স্কলার আল্লামা মুফতি তকী উসমানী (হাফিযাহুল্লাহ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইনামুল বারীতে লিখেন, আমার আব্বু হযরত মুফতি শফী (রহ.) বলেন, হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ (রহ.) শেষ বয়সে অসুস্থ হয়ে ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। হঠাৎ গভীর রাতে দারুল উলূম দেওবন্দে একটি সংবাদ আসলো যে, হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ রহ. তাঁর ঘরেই ইন্তিকাল করেছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের পাশেই তাঁর ঘর ছিলো। হযরতের শিষ্যদের জন্য রাত যাপন করা দুষ্কর হয়ে যায়। তারপরেও যেহেতু শেষরাত ছিল, তাই তারা ঘরে যাননি। ফজরের নামাযের পর শাহ সাহেব (রহ.)-এর ঘরে পৌঁছেন। ঘরে গিয়ে দেখলেন, সেখানে অনেক লোক সমবেত হয়ে আছে। হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী (রহ.), হযরত মাওলানা মরতুজা হাসান (রহ.)-সহ অন্যান্য অনেক বড় বড় ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। তাঁরও মৃত্যু সংবাদ শুনে অস্থির হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। মুফতি শফী (রহ.) বলেন, আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম, তখন জানতে পারলাম আল-হামদু লিল্লাহ, হযরত শাহ সাহেব এখনো জীবিত আছেন, মৃত্যু সংবাদটি সত্য ছিলোনা। আমার চিন্তা করলাম, হযরতের সাথে সাক্ষাৎ করবো এবং হযরতকে এ ব্যাপারে অবহিত করবো। হযরতের ঘরে একটি ছোট কামরা ছিলো। হযরত ওই ছোট কামরার এক চৌকিতে বসে আছেন। ফজরের পরের সময়, একটু একটু অন্ধকারও বিদ্যমান আছে। বাইরে সামান্য ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছে। জানালা দিয়ে সে ক্ষীণ আলো ঘরেও কিছু কিছু প্রবেশ করছে। হযরত শাহ সাহেব (রহ.) একটি চৌকিতে বসে ওই ক্ষীণ আলোতে ফিকহের একটি জটিল কিতাব অধ্যয়ন করছেন। তিনি ঝুঁকে কিতাবের সাথে চেহেরা লাগিয়ে তা অধ্যয়ন করছেন। সালাম বিনিময় ও ¯^v‡¯’¨i খবরা-খবর নিয়ে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত! আপনি আমাদের অনেক ইলমী বিষয় সমাধান করেছেন। এখন আরেকটি বিষয় একটু স্পষ্ট করে দিন। হযরত বলেন, হ্যাঁ ভাই, বলুন, কি বিষয়? তখন তিনি বললেন, হযরত! বিষয়টি হলো, এখনো পর্যন্ত এমন কী বিষয় রয়ে গেছে, যা আপনার অধ্যয়নে আসেনি? অথবা এমন কী বিষয় আছে, যা অসুস্থ অবস্থায় ফজরের পর অন্ধকারে বসে এ ক্ষীণ আলোতে অধ্যয়ন করে আপনাকে খুঁজতে হচ্ছে? যদি মেনেও নিলাম যে, আপনার অধ্যয়নে আসেনি এবং এখনই তার সমাধান জানা জরুরি, তাহলে আমরা কি মরে গেলাম? আপনি আমাদের কাউকে বলে দিতেন যে, অমুক মাসআলাটি তাহকীক-গবেষণা করে বের করো, তাহলে তো হতো। তিনি যেহেতু হযরতের সরাসরি শিষ্য ছিলেন না, তাই সাহস করে বলে দিলেন, এটি আপনি নিজের ওপর জুলুম করছেন। অসুস্থতা এত বেশি যে, মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে, ভোর বেলা, ফজরের পর অন্ধকারে চৌকিতে বসে কিতাব অধ্যয়ন করছেন?! এই বিষয়টি আমাদের বুঝে আসেনা। তখন তিনি বড় লজ্জিত হয়ে মাথা উঠালেন এবং বললেন, মাওলভী শাব্বীর ভাই, সত্যি বলেছেন। কিন্তু কি করার আছে? এটি আমার একটি রোগ। কিতাব অধ্যয়নের মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করি। কিতাব মুতআলা করলেই ¯^w¯’‡eva করি! যেন এ রোগের চিকিৎসাই হলো অধ্যয়ন ও মুতালাআ, আল্লাহু আকবার!!! (ইনআমুল বারী, ১/৫৫)। হে আল্লাহ, দয়া করে আমাদেরকেও তেমন অধ্যয়নপ্রীতি দান করো, আমীন।
সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষাপরামর্শ
উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
অধ্যয়নের নিয়মাবলি
সমস্যা: কিভাবে অধ্যয়ন করলে পড়ার প্রতি উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়? এবং দ্রুত পড়া মুখস্থ করার পদ্ধতি কী? আর কীভাবে পড়া মুখস্থ করলে অধিক স্মরণ থাকে? আশা করি বিষয়গুলো জানিয়ে উপকৃত করবেন।
মুহাম্মদ নাঈমুর রহমান
শিক্ষার্থী, ২য় বর্ষ, শর্টকোর্ট বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: কিতাবপত্র ও বই-পুস্তক অধ্যয়ন করার কিছু নিয়মাবলি আছে। অধ্যয়ন আরম্ভ করার পূর্বেই সেগুলোর প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা হলে যথাযথ ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে।
- অধ্যয়নের পূর্ব শর্ত হলো, পূর্ণ মনোযোগের সাথে কিতাব পাঠ করা। একজন পাঠক যখন কোন কিতাব অধ্যয়ন করতে বসে, তখন উচিত হলো ১০০% মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করা। তবে কিছুক্ষণ অধ্যয়ন করার পর পাঠকের মনোযোগ (Attention) কমতে থাকে। শুরুতে পাঠের প্রতি যে পরিমাণ মনোযোগ ছিলো, তা ধীরে ধীরে কমে যায়। তাই মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যখন পাঠকের মনোযোগ বেশি থাকে, তখন এমন বিষয় অধ্যয়ন করা উচিৎ, যা তুলনামূলক জটিল, কিন্তু পাঠ করা জরুরি। অতঃপর পড়তে পড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে, মনোযোগ একটু কমে যাবে, তখন সেই বিষয়টি পড়া আরম্ভ করবে, যা পড়তে মন বেশি চায় এবং যার প্রতি পাঠকের রুচি ও আকর্ষণ বেশি। যেন আকর্ষণ ও মনোযোগ সমানভাবে কাজ করে। ধরুন, একজন শিক্ষার্থীকে ফিকহ, মানতিক ও নাহু; কয়েকটি বিষয়ে পাঠ প্রস্তুত করতে হয়। ওই শিক্ষার্থীর আকর্ষণ ফিকহের প্রতি প্রবল, অতঃপর নাহুর প্রতি, অতঃপর মানতিক প্রতি, তা হলে তাকে শুরুতে মানতিক পড়তে হবে, অতঃপর নাহু, তারপর ফিকহ অধ্যয়ন করতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, রুচি ও আকর্ষণের কারণেই মানুষ রাত জেগে গল্প বই পাঠ করে থাকে। তার আকর্ষণের কারণেই তন্দ্রা ও নিদ্রা মুক্ত রাত্রি যাপন করে। তাই জটিল ও জরুরী বিষয়টি মূল্যবান সময়ে, যখন সাধারণত তন্দ্রা ও নিদ্রার সম্ভাবনা কম থাকে, তখনই পাঠ করা উচিত।
- অধ্যয়নের শুরুতেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, এই মুর্হূতে এই কিতাবটি পড়াই আমার নিকট পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তা হলে আপনা-আপনি একাগ্রতা অর্জিত হয়ে যাবে।
- পড়ার জন্য একটি সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট করে নেবে। রুটিন করে পড়বে।
- সর্ব প্রথম কিতাবের সূচিপত্র দেখে নিবে। সেখানে যদি কোন ভূমিকা কিংবা কোন অভিমত থাকে তা পড়বে।
- অধ্যয়ন শুরু করার পূর্বে হাতে কলম নিবে এবং অধ্যয়ন চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করবে। এবং অধ্যয়ন সমাপ্ত হয়ে গেলে তা নিজ ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করবে, যেন বারবার খুঁজতে না হয়।
- অধ্যয়নের পর নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অর্জিত জ্ঞান দ্বারা ফলাফল বের করবে, অতঃপর অধ্যয়নের সারনির্যাস ও ফলাফল হৃদঙ্গম করবে। সম্ভব হলে তা লিখে রাখবে।
- অধ্যয়ন শেষে বইয়ের পরিচয় ও লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিজের কাছে সংরক্ষণ করবে এবং বই ও লেখক সম্পর্কে নিজের ব্যক্তিগত মন্তব্যও লিখবে।
আশা করি, উল্লেখিত পদ্ধতিতে অধ্যয়ন করলে পড়ার প্রতি আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে এবং দ্রুত মুখস্থও হবে।
আর অধিক স্মরণ রাখার জন্য পড়িত বিষয়গুলোকে বারবার পাঠ করতে হবে এবং নিজের লিখিত নোটের ওপর চোখ ঝুলাতে হবে। পড়িত বিষয়কে পুনরায় পাঠ করা স্মরণ রাখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ দেয়। বারবার পড়লে পড়া স্মরণও থাকে এবং মনেও রাখা যায়। ইমাম বুখারী (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ভুলে যাওয়ার ওষুধ কী? তখন তিনি বলেছিলেন, কিতাবের প্রতি দৃষ্টি নিবিষ্ট করে রাখা অর্থাৎ বারবার কিতাব দেখা।
سُئل البخاري: ما دواء النسيان؟ فقال مداومة النظر في الكتب. وترك المعاصي من أعظم الأسباب التي تعين على تحصيل بركة العلم. (معالم في طريق طالب العلم: 31)
আর দ্বিতীয়ত পাপ মুক্ত জীবন গড়ার চেষ্টা করা। তাতে ইলমের বরকত অর্জন করা যায়। ইমাম শাফেয়ী রহ. যখন তাঁর উস্তাদ ইমাম ওয়াকী রহ.-কে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার অভিযোগ করলেন, তখন তিনি ঐতিহাসিক দুটি কবিতা বলেছেন,
شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي
فَأَرشَدَني إِلى تَركِ الْـمَعاصي
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ
وَنورُ اللهِ لا يُهدى لِعاصي
‘আমি (আমার শায়খ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি আমাকে বলে ছিলেন, আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর ইলম হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।’
কি অধ্যয়ন করবো?
সমস্যা: একজন তালিবে ইলমের জন্য দরসী কিতাবের পাশাপাশি কোন ধরনের কিতাবাদি অধ্যয়ন করলে অধিক উপকার পাওয়া যাবে? আশা করি বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনার ইলম ও আমলে বরকত দান করেন, আমীন।
নিবেদক
মুহাম্মদ শাহেদ
শিক্ষার্থী, জামাতে ছাহারুম
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: তালিবে ইলমের জন্য দরসী কিতাব অধ্যয়ন করা জরুরী। আমাদের দরসে নেজামীতে যে সকল কিতাব অন্তর্ভুক্ত আছে তা যথাযথভাবে অধ্যয়ন ও হৃদয়ঙ্গম করার মাধ্যমেই একজন আলেমের উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জিত হয়। এ জন্য সর্বাবস্থায় একজন তালিবে ইলমকে যোগ্যতা অর্জনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবে রুচি পরিবর্তনের জন্য কিংবা মেধা বিকাশের জন্য দরসী কিতাব ব্যতীত ইলমী কিতাবাদি অধ্যয়ন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ ও ¯^xK…wZcÖvß লেখকদের লেখাই পড়তে হবে। বিতর্কিত লেখক কিংবা কাঁচা হাতের অনিরাপদ লেখা কখনো পড়া যাবে না। যতদিন পর্যন্ত ‘রুসূখ ফিল ইলম’ অর্জিত হয়নি, ততদিন ‘মুতাশাবিহাত’ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। অতএব আপনার প্রশ্নোত্তরে বলা যায়, দরসী কিতাবের বাইরে কী কী কিতাব অধ্যয়ন করা যাবে? এর সরাসরি উত্তর দেয়া কঠিন। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির রুচি ও চাহিদা ভিন্ন। একজন মানুষ একটি বিষয়কে পছন্দ করে, আবার অন্যজন ভিন্ন বিষয়কে। আর এমনটি হওয়াও ¯^vfvweK| তারপরেও নিম্নে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে, যা অধ্যয়ন করলে তালিবে ইলমের জন্য অনেক উপকার হবে:
এক. সীরাত বিষয়ক কিতাবাদি অধ্যয়ন করা। যেমন- আল্লামা শিবলী নুমানী (রহ.) ও আল্লামা সুলাইমান নদবী (রহ.) রচিত সিরাতুন্নাবী, আল্লামা ইদরীস কান্দলভী (রহ.) রচিত সিরাতুল মুস্তফা, আল্লামা মুনাজির আহসান গিলানী (রহ.) রচিত আন-ন্নাবীয়িল খাতিম, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) রচিত নবীয়ে রহমত ইত্যাদি কিতাব পড়া যেতে পারে।
দুই. সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) ও তাবেঈনদের জীবন চরিত অধ্যয়ন করা। যেমন হযরত জী মাওলানা ইউসুপ (রহ.) রচিত হায়াতুস সাহাবা, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) রচিত আল-ইসাবা ফি হায়াতিস সাহাবা পাঠ করা যায়। তেমনি সুয়ারুন মিন হায়াতিস সাহাবা এবং সুয়ারুন মিন হায়াতিত তাবেয়ীন ইত্যাদি কিতাবও উপকারী।
তিন. আলেম-ওলামা ও খোদাভীরু বুযুর্গদের জীবন চরিত অধ্যয়ন করা। বিশেষত নিকটবর্তী সময়ে চলে যাওয়া আল্লাহওয়ালাদের জিবনীগ্রন্থ অধ্যয়ন করা। যেমন- সাওয়ানেখে কাসেমী, আশরাফুস সাওয়ানেখ, আপবীতী, তাযকারায়ে আযীয ইত্যাদি পাঠ করা।
চার. যে শাস্ত্রের প্রতি আপনার রুচি রয়েছে, ওই শাস্ত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বই-পুস্তক নির্বাচন করা।
পাঁচ. শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী বিষয়ে রচিত কিতাবাদি অধ্যয়ন করা। যেমন- জীবন পথের পাথেয়’, তালিবানে ইলম পথ ও পাথেয় ইত্যাদি কিতাব পাঠ করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে কোন বই-পুস্তক পড়ার পূর্বে নিজের তা’লীমী মুরব্বির পরামর্শ গ্রহণ করা। ভালো-মন্দ উভয় প্রকার বই-পুস্তক বাজারে পাওয়া যায়। আর ভালো বই-পুস্তক অধ্যয়নের ফলে যেমনি মানুষ চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, তেমনি মন্দ বই-পুস্তক পড়েও মানুষ নৈতিকতা হারিয়ে নিকৃষ্টতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে সর্তক থাকা খুবই জরুরি। সাধারণত তালিবে ইলম পড়া-লেখা অবস্থায় অনেকটা অপরিপক্ক হয়ে থাকে। কিন্তু এ বয়সে তারা অতি জযবাতী ও আবেগী হয়ে থাকে। কিছু লোক তাদের আবেগ ও প্রেরণাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক তাদের হাতে দিয়ে থাকে। তালিবে ইলমরা তা পড়ে বিভ্রান্তির শিকার হয়। অতএব তালিবে ইলমের নিকট যে কোন কিতাব আসলেই, তা পাঠ করা উচিত নয়, বরং তা বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত উস্তাদ কিংবা তা’লীমী মুরব্বী দ্বারা যাচাই করে নেওয়া একান্ত কর্তব্য।
ঘোষণা
(সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা)
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আপনাদের সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনার লক্ষ্যে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র, ইসলামী গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা মাসিক আত-তাওহীদে নিয়মিত বিভাগ ‘শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পমার্শ’ চালু করা হয়েছে। উক্ত বিভাগে একদিকে থাকবে আপনাদের জন্য নিয়মিত দিক-নির্দেশনামূলক প্রবন্ধ। অপরদিকে থাকবে আপনাদের সমস্যা-সমধান নিয়ে শিক্ষা পরামর্শ।
অতএব এখন থেকে সমস্যা নিয়ে আর নয় অস্থিরতা, সমাধানই হোক আমাদের অগ্রযাত্রা’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাবো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে। সুতরাং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন সমস্যা আমাদের নিকট লিখুন এবং টেনশানমুক্ত জীবন গড়ুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকবো এবং অতিদ্রুত সময়ে যথার্থ সমাধান পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
যোগাযোগের ঠিকানা
বিভাগীয় সম্পাদক
শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ
মাসিক আত-তাওহীদ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
ই-মেইল: hmsalimuddin22@gamil.com
La fonte du fer est très chaude, nous ne parlons pas du noyau de congélation de la comète. Politique de visas, livres psychologiques et règles de départ en Espagne. Une atmosphère bien pire, assis dans une grande veste et sous le tissu. cialispascherfr24.com Le remède a développé le premier médicament pour le pistolet afin de vérifier cette détérioration.