মুসা আল-হাফিজ
একজন উইলিয়াম জোন্সকে আমরা দেখব কলকাতার সুপ্রিম কোর্টের গ্রান্ড জুরি কক্ষে। সময়টা ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। সমবেত ইংরেজ রাজপুরুষেরা আগ্রহভরে শুনছেন লন্ডন থেকে সদ্য আগত ইংরেজ বিচারকের সফরনামা! শাসকবর্গের প্রতি তিনি সাবধানবাণী শোনান, এ ভূখণ্ডকে দখল করা মানেই শাসন স্থায়ী হয়ে যাওয়া নয়। একে শাসন করতে হলে এর সবটুকু জানতে হবে। তিনি আবেদন করেন, ‘এই ভূখণ্ডের যেসব বিষয় এখনো পাশ্চাত্যের কাছে অজ্ঞাত, সেগুলো নিয়ে চর্চা করার জন্য একাধিক মানুষের সংগঠিত প্রয়াসের প্রয়োজন।’
সাম্রাজ্য জানত, এসব জ্ঞানকর্ম তাকে রক্ত জোগায়। এগুলোর ওপর ভর করে এগিয়ে চলে উপনিবেশের বৈধতার চাকা। ফলত গঠিত হলো, ‘দি এশিয়াটিক সোসাইটি।’ প্রাচ্য বিদ্যাচর্চার এটি এক অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। প্রধান হলেন স্যার উইলিয়াম জোন্স। লন্ডনের অভিজাত জোন্স পরিবারের সন্তান উইলিয়াম জোন্স। জন্ম হয় ১৭৪৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। বাল্যে বাবা হারানো জোন্স প্রেরণা পেয়েছিলেন মা মেরি নিক্সের কাছ থেকে। স্কুল জীবনেই নিয়মিত পাঠ্য বিষয় অধ্যয়নের পাশাপাশি গ্রিক, ল্যাটিন এবং আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৭৬৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অক্সফোর্ডে আসেন। তখনই অতিক্রম করেছেন আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষতার প্রাথমিক স্তর। ১৭৬৮ সালে অক্সফোর্ডের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলে ইউরোপের রাজশক্তি তাকে সবচেয়ে সেরা জায়গায় কাজে লাগাতে চাইল। সেটা হচ্ছে, প্রাচ্য তথা মুসলিম দুনিয়াকে জানা। ‘মাস্টার ডিগ্রি’ লাভের পর আইন অধ্যয়ন শেষে গ্রহণ করেন আইনজীবীর পেশা। ১৭৭২ সালে যখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর, তখন পণ্ডিতদের ভোটে তিনি হন লন্ডনের ‘রয়্যাল সোসাইটি’র ফেলো। জোন্সকে কোথায় প্রয়োজন, জানত ব্রিটিশ সরকার। পশ্চিমা সরকারগুলো তখন মেধাবিনিয়োগ করছে প্রাচ্যপাঠে, প্রাচ্যখননে। জোন্সকে সেজন্য প্রাচ্যে অবস্থান নিতে হবে। ১৭৮৩ সালে ফ্রিগেট ক্রোকোডাইল নামের জাহাজে সওয়ার হয়ে স্ত্রী আনা মারিয়াকে সাথে নিয়ে এলেন ভারতে।
১৭৯৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘দি এশিয়াটিক সোসাইটি’র প্রতিটি বার্ষিক সভায় স্যার উইলিয়াম জোন্স আরো যে ১০টি ভাষণ দেন, সেগুলোর মধ্য দিয়ে এশীয় জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তার প্রজ্ঞার গভীরতা স্পষ্ট। সংস্কৃত শিখেছিলেন ভারতে এসে। অনুবাদ করেন কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ কাব্য’ ও ‘হিতোপদেশ’, ‘মনুসংহিতা’ প্রভৃতি গ্রন্থ। তার সবচেয়ে প্রভাবশালী কাজ মহাকবি কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ নাটকের ইংরেজি ও ল্যাতিন অনুবাদ। ১৭৯৪ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতাতেই মৃত্যু হয়েছিল। মাত্র ১০ বছর ভারতে অবস্থান করে তিনি প্রাচ্যচর্চার এমন এক দ্বার উদ্ঘাটন করলেন, যা সংস্কৃত ভাষাকে গ্রিকের চেয়েও মহিমান্বিত বলে দাবি করে। এর সাথে সম্পৃক্ত সব কিছুতে ঐশ্বর্য আরোপ করে। কিন্তু ভারতের অপরাপর জাতি, বিশেষত মুসলমানের অস্তিত্বটাই তার চোখে পড়ে না। তাদের অস্তিত্ব ও অবদান তার জ্ঞানমার্গে নাই হয়ে যায়। এই নাই হতে থাকা স্থানীয়দের গভীর বার্তা দেয়। আসলেই মুসলিমরা তো নাই? মহিমায় যেহেতু নাই, তা হলে সংস্কৃতিতে তাদের কী থাকে? রাজনীতিতে তাদের কী থাকে? কেন থাকে?
ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে কেবলই হিন্দু সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার একটি অলিখিত, অস্পষ্ট কিন্তু প্রভাবশালী প্রচেষ্টার নমুনা হাজির হতে থাকে একে একে। হেনরি টমাস (১৭৬৫-১৮৩৬) এর প্রচেষ্টায় এ দিকটি ধরা পড়ে মোটা দাগে। তিনি ছিলেন জোন্স-পরবর্তী এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিভিলিয়ান এবং কোম্পানি প্রধান স্যার জর্জ কোলব্রুকের পুত্র হিসেবে তিনি কোম্পানির লক্ষ্য ও পলিসির যথার্থ ধারক ছিলেন বটে। তার প্রাচ্যতত্ত্ব চর্চা সেই স্বার্থের নির্দেশে হচ্ছিল পরিচালিত। এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিনি স্থায়ী জমিতে প্রতিষ্ঠা শুধু দেননি, একে দেন স্থায়ী কর্মধারা। সরকারি রিভিউ কালেক্টর থাকাবস্থায় তিনি সংস্কৃত ভাষায় আগ্রহী হন এবং ঐকান্তিকভাবে তা দ্রুত শিখে নেন। Digest of Hindu Laws সংস্কৃতে তার পাণ্ডিত্যের জানান দেয়। ১৮০১ সালে তিনি ছিলেন সদর দেওয়ানি আদালতের বিচারক, ১৮০৪ সালে হন বিচারপতি। ১৮০৭ থেকে ১৮১২ অবধি ছিলেন গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য। ১৮১৫ এর পরে তাকে আমরা দেখি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বিনাবেতনে হিন্দু আইন পড়াচ্ছেন, সংস্কৃত ভাষা শেখাচ্ছেন। অমরকোষ নামে রচনা করেন সংস্কৃত অভিধান। Algebra of the Hindus (১৮১৭) গ্রন্থে জোর দিয়ে বলেন, ভারতে যখন বিজ্ঞানের বিশেষ উন্নতি ছিল, তখন ইংল্যান্ড ছিল পাথরযুগে পতিত। অনুবাদ করেন হিন্দু উত্তরাধিকার আইনগ্রন্থ দায়ভাগ ও মিতাক্ষর। সঙ্কলন করেন, Hindu Law of Inheritance| তার ভারত ছিল হিন্দু ভারত। ভারতের বিজ্ঞান, ভারতের অতীত, ভারতের গৌরব বলতে হিন্দু বিজ্ঞান, হিন্দু অতীত ও হিন্দু গৌরবকে তিনি নীরবে ব্যক্ত করেছেন।
একই চিত্র ও চরিত্র আমরা দেখব, হোরেস হ্যামেন উইলসন (১৭৮৬-১৮৬০) এর কাজে। তিনি ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের সেক্রেটারি। ১৮১১ থেকে নিয়ে ১৮৩২ সাল অবধি অল্পবিরতিসহ তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৩৭ সাল থেকে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন মৃত্যু অবধি। ছিলেন প্রাচ্যবিদ, লেখক, মুদ্রা বিশারদ, অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এবং ইন্ডিয়া অফিসের গ্রন্থাগারিক। ১৮০৮ সালে কলকাতায় আসেন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দেন। কিন্তু অচিরেই তিনি চিকিৎসা পেশা ত্যাগ করে কলকাতা টাকশালে মুদ্রা-ধাতু পরীক্ষক (Assay Master) হিসেবে যোগ দেন। ১৮৩২ সালে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন।
হোরেস হ্যামেন উইলসন অনুবাদ করেন কালিদাসের মেঘদূত (১৮১৩)। তার শ্রেষ্ঠ রচনাকর্ম Sanskrit English Dictionary (১৮১৯) ও Theatre of the Hindus (১৮২০)। Religious Sects of the Hindus গ্রন্থে তিনি হিন্দুদের সামাজিক ক্রিয়াকর্ম, রীতিনীতি ও সামাজিক বিধিবিধান হাজির করেছেন। ১৮৩২ সালে যোগ দেয়ার পরে অক্সফোর্ডে তিনি Lectures on the eligious and Philosophical Systems of the Hindus (১৮৪০), Ariana Aqtinua Ges A Historical Account of the Burmese Warmn বেশ কিছুসংখ্যক মৌলিক রচনা প্রকাশ করেন। উইলসন কর্তৃক সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মিলের History of British India-Gi দ্বিতীয় সংস্করণ এবং ম্যাকনাটেন রচিত Hindu Law-Gi দ্বিতীয় সংস্করণ। উইলসন ভালোভাবেই শিখেছিলেন বাংলা, ফারসি, আরবি ও ভারতীয় বিভিন্ন ভাষা। ভারতের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের আইনকানুন ও প্রথা-পদ্ধতি নিয়ে লিখেন অসামান্য গ্রন্থ Glossary of Judicial and Revenue Terms যা এখনো এ বিষয়ে গবেষক, প্রশাসক ও আইনজীবীদের রেফারেন্স বুক হিসেবে বরেণ্য। তার এসব রচনায় ভারতের জীবন ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত। তিনি যে ভারতকে উপস্থাপন করেন, সেটি মূলত এক হিন্দু ভারত। যে হিন্দুদের মধ্যে প্রবল একটি শ্রেণি ব্রিটিশ শাসনকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাদের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছিল সহযোগিতার হাত।
উইলসনের ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে মুসলিমরা কেবল পার্শ্বটীকার জায়গা পায়, যে মুসলিমরা ভারতবর্ষের ওপর নিজেদের দাবি ত্যাগ করছিল না, ব্রিটিশদের শাসনে প্রতিনিয়ত বিঘ্ন তৈরি করছিল। তারা ভারতের স্বাধীনতা দাবি করছিল। তাদের কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যাচ্ছিল না। উপনিবেশের প্রয়োজন ছিল তাদেরকে ভারতের পার্শ্বটীকায় পরিণত করা। ভারতের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে তাদেরকে ক্রমাগত গৌণ করে তোলা। এবং তাদের প্রতিবেশী সম্প্রদায়কে অধিকতর মহিমান্বিত ও সুবিধামণ্ডিত করা।
এ ধারার পণ্ডিতরা পরে ভারতের জনসমাজকে আরও সরাসরি বিভক্ত করেছেন। কাউকে হারিয়ে দিয়েছেন, কারো হাতে তুলে দিয়েছেন সব কিছুর মালিকানা। ইতিহাস এমনভাবে উল্লেখ করেছেন, যা আসলে ইতিহাস নয়। বস্তুত ইতিহাসের নামে সাজানো ও পরিকল্পিত গালগল্প তারা ফেঁদেছেন। যেন মুসলিমরা হয় দাগী আসামি। যেন হিন্দু বোঝে, তার শত্রু দখলদার ব্রিটিশ নয়। তার আদি ও অকৃত্রিম শত্রু হচ্ছে, প্রতিবেশী মুসলমান।
এমন কাজের ভালো নমুনা স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম (১৮১৪-১৮৯৩)। তিনি ছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইঞ্জিনিয়ার, নগরতত্ত্ববিদ, লিপিবিশেষজ্ঞ, মুদ্রাবিশেষজ্ঞ, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং একজন অসামান্য গ্রন্থকার। ভারতে এসেছিলেন ১৮৩১ সালের ৯ জুন। সেনাবাহিনীতে দায়িত্বরত ছিলেন ১৮৬১ সালের ৩০ জুন অবধি। তার প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার হাতে নেয় ভারতে প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানের নতুন কার্যক্রম। ১৮৬১ থেকে নিয়ে ১৮৮৫ সাল অবধি তিনি অসংখ্য মুদ্রা, উৎকীর্ণ লিপি, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য নিদর্শন আবিষ্কার করেন।
এ কাজের মাধ্যমে তিনি প্রাচীন ভারতের প্রকৃত ইতিহাসের ভিত্তি এবং ভারতীয় লিপিতত্ত্ব, মুদ্রাতত্ত্ব, শিল্পকলা ও স্থাপত্যশিল্প চর্চার নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সব গবেষকের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। প্রাচীন নগর আবিষ্কার থেকে নিয়ে স্থাপত্য, লিপিকলাসহ বিচিত্র বিষয়ে তার বক্তব্য হয়ে ওঠে চূড়ান্ত দলিল। পরবর্তী প্রজন্মের যে কেউ গবেষণার জন্য প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের যে কোনো শাখাই বেছে নিক না কেন, কানিংহ্যামের কাছে তাকে যেতেই হবে। তার রচনাবলির সাহায্য ছাড়া এ কাজ এগিয়ে নেয়া প্রায় অসম্ভব। তিনি যে The Ancient Geography of India লিখেছিলেন, সেটা লিখেছিলেন গোটা ভারত ভ্রমণ করেই। শেষ অবধি তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের ভূগোল সম্পর্কে বক্তব্য রাখার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পণ্ডিত।
ভারতীয় মুসলিমরা তার মনোযোগ লাভ করেনি, তা নয়। তিনি একাধিকবার এসেছেন বাংলায়। গেছেন সোনারগাঁওয়ে, সংগ্রহ করেছেন ১২টি মুসলিমলিপি। গেছেন পরীবিবির মাজারে, বাবা আদম শহীদের মাজারে, পাণ্ডুয়ার আদিনা মসজিদে, মুসলিম বাংলার রাজধানী গৌড়ে। কিন্তু সোনারগাঁওয়ে তিনি আসেন সুবর্ণনগরের খোঁজে, গৌড়ে গিয়ে মূলত তালাশ করেন প্রাচীন পুণ্ড্রনগর।
কানিংহ্যামের ব্যাপ্তি যেখানে এত ব্যাপক, অবদান যেখানে এত বিস্তৃত, গ্রহণীয়তা যেখানে এত প্রবল, সেখানে মুসলিম ইতিহাস উপস্থাপনে তিনি ছিলেন একান্তই ভিত্তিহীন গল্পলেখক। তার ‘হিস্ট্রি অব শিকস’-এর নমুনা। মুসলিমদের বহিরাগত হিসেবে দেখানো, মুসলিম শাসকদের নিপীড়ক হিসেবে চিত্রিত করা, হিন্দু অতীতকে রঙ চড়িয়ে বীরত্বময় করা, মুসলিমবিরোধী হিন্দু প্রচেষ্টাগুলোকে জাতীয় উত্থানের মহিমা দেওয়া এবং মুসলিমবৈরিতাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের অংশ বানানোর প্রচেষ্টাকে কোলে উঠিয়ে দুগ্ধ পান করায় তার বিবিধ বই। কিন্তু কানিংহ্যাম একা ছিলেন না।
আলেকজান্ডার ডাফ (১৮০৬-১৮৭৮) এর ‘হিস্ট্রি অব মারাঠাজ’ (১৮২৬) ও জেমস টড (১৭৮২-১৮৩৫) এর ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিজ অব রাজস্থান’ (১৮২৯) এ ধারার বিশেষ উল্লেখযোগ্য বই। যাতে বারুদভর্তি কেচ্ছা-কাহিনীর এমন সঞ্চয় আছে, যা পরবর্তী ভারতকে হিংসা ও রক্তে লেলিহান করার ব্যাপারে ছিল প্রভাববিস্তারী। এগুলো ছিল এমনই কল্পনানির্ভর, যাকে ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার (১৮৭০-১৯৫৮)-এর ভাষায়, ‘আফিমখোর গালগল্প’ বলে অভিহিত করা যায়।
এসব গালগল্প উপমহাদেশের ইতিহাসে তৈরি করেছে এমন মোচড়, যার সাথে অতীতে সে পরিচিত ছিল না। যার উসকানির রাজনৈতিক রূপ দাঙ্গা ও দেশ ভাগ কিংবা মনুবাদের মুসলিমমুক্ত ভারত। কিংবা এমন এক ভারত, যেখানে মুসলিমরা বসবাস করবে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে। এসব প্রকল্প আমাদের মানসজগতে তৈরি করে এমন প্রভাব, যার ফলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) ফুটবল মাঠ দুই দলের রণাঙ্গন হয়ে ওঠে। যাদের একদল মুসলমান, আরেক দল বাঙালি!
মুসলিমরা সেখানে বাঙালির প্রতিপক্ষ। যদিও ঐতিহাসিক সত্য এই যে, ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জনগোষ্ঠী ও বাংলা নামের দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা মুসলিমরাই!
লেখক: কবি, গবেষক