ধর্ষণ মহামারির রূপ লাভ করেছে
ডা. মো. মাহবুবুল হাসান রনি
বর্তমান সময়ে ধর্ষণ একটি মহামারির রূপ লাভ করেছে। চোখ খুললেই শুধু ধর্ষণের খবর। দুদ্ধপোষ্য শিশু থেকে অশীতিপর বৃদ্ধা মহিলা কেউই বাদ যাচ্ছেন না হায়েনাদের নৃশংস থাবা থেকে। কখনো আমার আপনার আপন মা বোন মেয়ে এই থাবার শিকার হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এর বিপরীতে ধর্ষকদের বিচারের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষক শাস্তির আওতা থেকে বেঁচে যায়। বিবিসি তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শুধুমাত্র ৬ টি জেলায় ৪৩৭২ টি মামলা করা হয়েছে ধর্ষণের কিন্তু এর বিপরীতে সাজা হয়েছে মাত্র ৫ জনের। যদি শুধু ৬টি জেলাতেই ৪৩৭২ টি মামলা হয়ে থাকে তাহলে এই সময়ে সারা দেশে কি পরিমাণ মামলা হয়েছে সেটি খুব সহজেই অনুমেয়।
কোনো জায়গায় ধর্ষণের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর প্রথম যে পদক্ষেপটি নেওয়া হয় সেটি হলো ম্যানেজ করা। স্থানীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রভাবশালী মহলের একটি ছত্রছায়ায় বিষয়টি যখন ম্যানেজের মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়, সেই সমাধানের কেবলমাত্র একটি অর্থই হয় যে, ধর্ষিতা নারী ন্যায়বিচার পায় না এবং ধর্ষক খুব সহজেই পার পেয়ে যায়। কয়েক বছর আগে কিছু খবরে পরেছিলাম যে, শুধুমাত্র ধর্ষককে কান ধরে উঠবস করিয়ে অথবা দুয়েকটি শাড়ি বা হাজার পাঁচেক টাকা ধর্ষিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ধর্ষিতার জন্য ন্যায়বিচার(!) নিশ্চিত করেছে ম্যানেজকারী মহল। কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ক্রমাগতভাবে অন্যায় অপরাধ করতে থাকাবস্থায় যদি কোনো অপরাধ ভাইরাল হয়ে পড়ে তখন শুধু বহিস্কারই করা হয়। কিন্তু এই বহিস্কার শুধু তখনই করা হয় যখন দুর্গন্ধটা খুব বেশি হয়ে যায়। অপরদিকে কোনো ক্যাম্পাসে বা কোনো এলকায় ভিন্ন মতের রাজনীতি করার কারণে ভিন্ন মতের মানুষকে প্রকাশ্যে-গোপনে শায়েস্তা করার পদ্ধতির কথা তো সবারই জানা। কেউ কি কখনো শুনেছেন যে, নিজের দলের কেউ ধর্ষণ করার কারণে ধর্ষণকারীকে একটু শায়েস্তা করা হয়েছে? আমি এমনিতেই প্রশ্নটি করলাম। আর এ ধরনের মন মানসিকতা থেকে আমার দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকই মুক্ত নয়।
একটি ধর্ষণ যখন সংগঠিত হয় সেখানে মূলত দুটি পক্ষ থাকে অর্থাৎ ধর্ষণকারী ও ধর্ষিতা। কিন্তু ঘটনাটি যদি কোনো কারণে ভাইরাল হয়ে যায় তাহলে তৃতীয় একটি পক্ষ তৈরি হয় যারা ধর্ষিতার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে প্রতিবাদ করে থাকেন। কিন্তু তাদের দৌড়ই বা কতদূর? তারা শুধু প্রতিবাদ করতে পারেন। পরিস্থিতি সামলে নিতে খুব দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হয় ধর্ষকদেরকে। তারপর তৃতীয় পক্ষটি এখান থেকেই নাই হয়ে যাবে, ইস্যুও চাপা পড়ে যাবে। আর আইনী লড়াই চলতে থাকবে ধর্ষক ও ধর্ষিতার মাঝে। তারপর ঘটনা সত্য হওয়ার পরেও সাক্ষ্য প্রমাণ দুর্বল হওয়ার কারণে অপরাধী সঠিক সাজা পাবে না এবং ধর্ষক কর্তৃক শারীরিকভাবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রতিটি ঘাটে ঘাটে ধর্ষিতা নারীকে মানসিকভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এভাবে চলে যায় বছরের পর বছর। এক পর্যায়ে হয়তোবা তিনিও হাল ছেড়ে দেন আর আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে দেন।
আমি অবশ্যই এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবশ্যই আমি ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করি। কিন্তু যখন আমি শাস্তি দাবি করব তখন আমি নিজের কাছেই নিজে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হই যে কার কাছে শাস্তি দাবি করব? আদালতের কাছে? কিন্তু আমার আপনার এই দাবির কতটুকু যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে আদালতের কাছে? উত্তর হলো কোনো গ্রহণযোগ্যতাই নেই। আমাদের দেশে ধর্ষণের শাস্তির জন্য আলাদাভাবে কোনো আইন নেই বরং নারী ও শিশু নির্যাতনের আইনের একটি ধারায় ধর্ষণ বা গণধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের ব্যবস্থা কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে একজন ধর্ষিতা কোনোভাবেই সঠিক ন্যায়বিচার পেতে পারেন না কারণ বিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেন যে, এ আইনে এত ফাঁক-ফোকর আছে যে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি ধর্ষক শক্তিশালী হলে ধর্ষিতাকে চরিত্রহীনা প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে। তাই এই আইনের মাধ্যমে ধর্ষিতা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করাটাই চরম ভুল।
ধর্ষণের প্রত্যেকটি ঘটনাই নৃশংস। কারণ কোনো নারীই ধর্ষিত হতে চায় না এবং কোনো ধর্ষকই নারীকে ছাড় দিতে চায় না। তাই ঘটে নৃশংসতা। ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিও নৃশংসতার নমুনামাত্র। তাই এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার হওয়া জরুরি চাই সেটি ভাইরাল হোক বা না হোক। এজন্য আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ ধর্ষণ আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে সর্বোচ্চ তিন মাস সময়ের মধ্যে ধর্ষককে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেখানে ধর্ষিতা নারীর নিরাপত্তার কথা এবং সেই সাথে সাক্ষ্যপ্রমাণের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার কথাও আইনে উল্লেখ থাকবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক কষ্ট ¯^xKvi করে অপরাধিকে গ্রেপ্তার করেন এটি নিসন্দেহে প্রশসংনীয়। কিন্তু মামলা চলাকালীন সময়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন এবং অন্যান্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর নির্যাতিত নারীর ন্যায় বিচার পাওয়াটা নির্ভর করে। তাই তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে যেভাবে নির্ভয়ে অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করার সময় দয়া করে কোনোভাবেই যেন প্রভাবিত না হোন কেননা আপনার একটি সঠিক ও সত্য প্রতিবেদন নির্যাতিত নিপীড়িত মা-বোনকে একটু হলেও শান্তনা দিতে সক্ষম।
অনেকেরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো যে, আমরা সহজেই অভিযোগের তীর অন্যের দিকে নিক্ষেপ করি। যেমন কেউ কেউ বলেন যে, নারীবাদীরা এখন কোথায় পালিয়েছে তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই কেন? তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই কেন সেই প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কিন্তু কার্যকরভাবে যারা ইসলামি মন মানসিকতাকে লালন করেন তারা কি নিজেদেরকে কখনো এই প্রশ্ন করেছেন নির্যাতিত নারী শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের কি কোনো সুষ্পষ্ট শাখা রয়েছে যেখানে নির্যাতিত নারীরা সহায়তা পাবে? আমরা সাধারণত তাদের পাশে থাকি, আন্দোলনে সংগ্রামে থাকি আসামী গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত নয়। অথচ ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা করা করা দরকার। এজন্য কি করা যেতে পারে সেটি ভাবনা চিন্তা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়।
যখনই কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং সেই ঘটনার সাথে সরকারদলীয় লোক জড়িত থাকে তখন বাংলাদেশেল তথাকথিত নারীবাদী ও সুশিলরা গুহাবাসী হয়ে যায়। তারা কারণ খুজতে থাকে কেন ধর্ষণ হলো? তারা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব খুঁজতে চেষ্টা করে না বরং তারা ধর্ষণের পেছনে ইসলামি মৌলবাদ খোঁজার চেষ্টা করে। এক একটি ধর্ষণের ঘটনা যেন নারীদেরকে পর্দার ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসার অস্ত্র তাদের কাছে!বোরকা পড়া নারী ধর্ষিত হয়েছে তাই বোরকা পড়ে কি লাভ? শিশু ধর্ষিত হয়েছে তাই ধর্মীয় পোশাক পড়ে কি হবে ইত্যাদি প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে চায়। বোরাখা পড়া নারী কিংবা শিশু যখন ধর্ষিত হয় তখন একটি বুকে চেপে রাখা আনন্দ কাজ করে ইসলাম বিদ্বেষী নারীবাদীদের মনে কারণ তারা এখন বোরকার বিরুদ্ধে বলতে পারবে। অথব তাদেরকে ধর্ষণের ইসলামি শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেন তখন বলবে যাহ কি অসভ্য, বর্বর।
অনেক নারীবাদীদেরকেই বলতে শুনেছি যে, ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণ করতে হলে চারজন সাক্ষী নিয়ে আসতে হবে। তাই কোনো নারী যখন ধর্ষিত হবে তখন কি সে চারজন সাক্ষী ডাক দিয়ে নিয়ে আসবে নাকি? অথচ তারা জানেই না যে, ইসলামে ব্যাভিচারের অপরাধ প্রমাণের জন্য চারজন সাক্ষী লাগে। ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণের জন্য নয়। আর বর্তমানে তো আমরা এমন এক সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছি যেখানে ব্যাভিচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মানসিকতা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে, নাম দেওয়া হচ্ছে লিভিং রিলেশনশীপ বা লিভ টুগেদার ইত্যাদি। অথচ এটি একটি অপরাধ। বর্তমান সময়ের নাটক সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, শর্ট ফিল্ম তথা ইলেকট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায় নারীদেরকে একটি ভোগ্যপণ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। নারীকে ভোগ্যপণ্য ও যৌনতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখিয়ে সেখানে তাকে ভোগের কৌশল শিখানো হয় মানুষের অবচেতন মনে। শয়নে স্বপনে মানুষকে এমন সব কিছুর দিকে মানুষকে ধাবিত করা হচ্ছে যে, নারীর প্রতি সম্মানের জায়গা ধরে রাখতে পারে না তারা। একজন গার্লফ্রেন্ড বা প্রেমিকা হিসেবে মেয়েদেরকে ট্রিট করা শেখানো হচ্ছে, যেগুলো মানুষের অবচেতন মনে এক গভীর প্রভাব ফেলছে যা অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই। অবৈধ প্রেম ও নারীভোগের মানসিকতা তৈরি করা এযেন এক নতুন ধর্ম তৈরি হয়েছে মিডিয়াতে।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। নবীজী (সা.)-এর সময়ে এক নারী সাহাবী ইবাদাত করার জন্য বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে এক লোক তাঁকে ধর্ষণ করল এবং তারপর চলে গেল। সেই মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) ধর্ষককে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর সে অপরাধ ¯^xKvi করে। নবীজি (সা.) তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৭৯)
যদি কোন পুরুষ জোর করে কোন নারীকে যিনা করে অর্থাৎ তাকে ধর্ষণ করে তাহলে এক্ষেত্রে নারীকে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করা হয় না। এটাই ইসলামের বিধান। অপরদিকে ধর্ষণকারীর শাস্তি হল ইসলামে মৃত্যুদণ্ড। মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক কিতাবে উল্লেখ আছে,
‘যদি কোন পুরুষ কোন নারীকে জবরদস্তি যিনা করে (ধর্ষণ করে) তাহলে সে নারী কুমারি হোক বা না হোক যদি সে স্বাধীনা নারী হয় তাহলে ধর্ষণকারী ধর্ষিত নারীকে মোহর প্রদান করবে। যদি নারী দাসী হয় তাহলে তাহলে ধর্ষণকারীকে যিনার দ্বারা দাসীর যে মূল্য কম হয়েছে তা আদায় করতে হবে। ব্যভিচারের শাস্তিও (হদ) ধর্ষণকারীর ওপর আরোপ হইবে এবং ধর্ষিতা স্ত্রীলোককে কোনরূপ শাস্তি প্রদান করা হবে না।’ (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক: ১৪)
আবার কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীর চরিত্রের ওপর অপবাদ আরোপ করে এবং সে তা প্রমাণিত করতে না পারে তবে আল্লাহ নারীর আত্মসম্মানের ওপর এরূপ আঘাতকারীর জন্য সুষ্পষ্ট শাস্তির বিধান আরোপ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যদি কেউ কোন সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে তাহলে তাকে ৮০ টি বেত্রাঘাত কর এবং কখনো তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। (সূরা আন-নূর: ৪)
ইসলামে নারীর ওপর যিনার অপবাদ আরোপকারীর প্রতি এই কঠোর শাস্তি বিধান ইসলামে নারীর মর্যাদারই পরিচায়ক। অপরদিকে নারীর সম্ভ্রমের ওপর অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিকে সমাজে ও দেশের কাছে এতই নগণ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে জীবনে কোনদিন তার সাক্ষ্য শরীয়তে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক ইসলামি রাষ্ট্রেই এই বিধান চালু আছে। কিন্তু ইসলামের এতসব সুষ্পষ্ট বিধান বিদ্যমান থাকার পরও কিছু লোকেরা যে শুধুমাত্র ইসলামের সমালোচনা করার জন্যই ইসলামের সমালোচনা করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের জন্যই বোধহয় আল্লাহ পবিত্র কুরআনের এই আয়াত নাজিল করেছেন, ‘তারা মুক, বধির ও অন্ধ, তারা সঠিক পথের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না।’ (সূরা আল-বাকারা: ১৮)
নারীর নিরাপত্তায় ইসলাম যে সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছে সেটিই একমাত্র পথ ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য। ইসলাম মানবিক প্রয়োজনকে অস্বীকার করে না বরং নিয়ন্ত্রণ করে। এদেশে নারী পুরুষ যদি নিজেদের দৃষ্টিকে হেফাজত করে চলে, উভয়ে যদি ধর্মীয় শালীন পোশাক পরিধান করে, যদি ধর্ষণ ও ব্যাভিচারের কঠোর শাস্তি বিধান প্রকাশ্যে বাস্তবায়ন করা হয়, যদি যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় ছেলেমেয়েদেরকে, যদি ইলেকট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায় অশ্লীলতার প্রচার বন্ধ করা হয়, যদি শাস্তি প্রদানে আদল ও ইনসাফ বজায় থাকে তাহলে হলফ করে বলা যাবে যে, এই দেশে নারীদের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত হবে।
বর্তমান সময়ে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আমরা অপরাধীকে সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল করছি, নির্যাতনের শিকারকে নয়। এটাই হওয়া উচিত কেননা নির্যাতিত হওয়া কোনোভাবেই অপরাধ নয় অপরদিকে নির্যাতনকারী হওয়াটাই অপরাধ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে যে,
- আমাদের দেশের মধ্যে বিশেষ ধর্ষণ আইন প্রণয়ন করা হবে যেখানে ৩ মাসের মধ্যেই ধর্ষণকারীর শাস্তি প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
- সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে নারী বান্ধব করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেখানে নারী মাসনিকভাবে ধর্ষিত হবে না বারবার।
- আসামী গ্রেফতারের পর যেহেতু আইনী প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করা ছাড়া আসামীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে না তাই ধর্ষিতাকে ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য আইনী সহায়তা প্রদানের এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করার ব্যাপারে ইসলামি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
- নির্যাতনের শিকার নারীকে বা তার ছবিকে যেন কোনোভাবেই সামাজিক মিডিয়ায় অসম্মানজনকভাবে হাইলাইট করা না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- হালকাভাবে ম্যানেজ করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
- আপনার মেয়ে শিক্ষক বা কোনো নিকটাত্মীয় দ্বারা কোনো হয়রানীর শিকার হচ্ছে না এ ব্যাপারে খুব সচেতন থাকতে হবে।
- সন্তানকে উপযুক্ত ইসলামি শিক্ষা প্রদান করতে হবে যেন তার মধ্যে তাকওয়া গড়ে উঠে।