স্বামীর ভালবাসা অর্জন করতে পারা স্ত্রীর সফলতা
আয়েশা আমাতুল্লাহ মুক্তা
- নারীসুলভ আচরণ করুন (যেমন- কোমল হওয়া), স্বামীরা তাদের স্ত্রীর জায়গায় কোন পুরুষ চায় না!
- সুন্দর/আকর্ষণীও পোশাক পরুন। আপনি যদি গৃহিণী হন, সারাদিন ধরে রাতের পোশাক (ঢিলে-ঢালা আরামদায়ক পোশাক) পরে থাকবেন না।
- ঘাম/মশলা জাতীয় গন্ধ থেকে পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত থাকুন।
- আপানর স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আপানার যাবতীয় সমস্যার কথা বলা শুরু করবেন না। তাকে কিছুটা মানসিক বিরতি দিন।
- বারবার জিজ্ঞেস করবে না, ‘কি ভাবছ?’
- অনবরত দোষারোপ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ আপনাকে আসলেই সত্যিকার অর্থে অভিযোগ করার মতো কিছু দেন।
- অন্যের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার কথা বর্ণনা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন, এমনকি সাহায্য বা পরামর্শ চাওয়ার অজুহাতেও না! আপনি যদি মনে করেন আপনার বৈবাহিক সমস্যার আইনানুগ সমাধান প্রয়োজন, তাহলে এমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যান যে,
- কোন অন্যায়ের ব্যপারে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে দিতে পারে, যাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আবার সুন্দর সমন্বয়ে মিল হয়ে যায় অথবা
- উভয়পক্ষের সম্মতিতে সৌহার্দপূর্ণভাবে বিচ্ছেদ করাতে পারেন।
- আপানর শাশুড়ির সাথে ভালো আচরণ করুন, যেমনটি আপনি চান আপানার স্বামী আপানার মায়ের সাথে করুক।
- ইসলামে স্বামী স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন। অধিকার আদায়ের চেয়ে আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদনের ব্যপারে আগে সজাগ হন।
- যখন সে ঘরে আসে, দরজায় এমনভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। হাসিমুখে তাকে সালাম দিন।
- আপনার বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন, অন্তত আপনার স্বামী যতটুকু পরিচ্ছন্ন দেখতে পছন্দ করে।
- তাকে এমন বিষয়ে প্রশংসা করুন যে বিষয়ে তিনি নিজে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নন (যেমন- চেহারা, বা বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি)। এটা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
- তাকে বলুন, স্বামী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ।
- তার পরিবার পরিজনের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করুন।
- তাকে সহজ কোন গৃহস্থালি কাজ দিন, কাজটি করে ফেললে তাকে ধন্যবাদ জানান। এতে সে আরও উৎসাহিত হবে।
- সে যখন কোন একঘেয়ে কথা বলে, তার কথা ধৈর্য ধরে শুনুন। মাঝে মাঝে তাকে প্রশ্নও করুন যাতে সে বুঝতে পারে আপনি তার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনছেন।
- তাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন।
- তার মেজাজ খারাপ থাকে, তাকে কিছুটা সময় একা থাকতে দিন। ইনশাআল্লাহ, একসময় তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে।
- আপানাকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। এটি অনেক বড় ব্যপার।
- সে যদি আপানার সাথে রেগে গিয়ে চেঁচাতে থাকে, আপনি চুপ থেকে তাকে চেঁচাতে দিন। দেখবেন আপনাদের বিবাদ অনেক দ্রুত থেমে গেছে। পরে যখন সে শান্ত হবে, তখন আপনি আপনার কথা বোঝাবেন।
- যখন আপনি তার ওপর রেগে যান, তখন বলবেন না যে তিনি আপনাকে রাগিয়েছেন, বরং বলুন তার কাজে আপনি আপসেট হয়েছেন। আপনার রাগকে তার দিকে নির্দেশ না করে তার কাজ বা উদ্ভুত পরিস্থিতির দিকে নির্দেশ করুন।
- মনে রাখবেন, আপনার স্বামীরও আবেগ অনুভুতি আছে, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
- তাকে তার বন্ধুদের সাথে কোন রকম অপরাধবোধ ছাড়া কিছু সময় কাটাতে দিন, বিশেষতঃ যদি তারা ভালো মানুষ হয়। তাকে বাইরে যেতে উৎসাহ দিন যাতে সে নিজেকে ঘরের ভেতর ‘আবদ্ধ’ বোধ না করে।
- স্বামী যদি আপনার কোন সামান্য কাজে বা অভ্যাসে বিরক্ত হয় (যেটি আপনি সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন), সেটি করা বন্ধ করে দিন।
- আপনার মনের কথা তাকে খোলাখুলি বলতে শিখুন, সে সবসময় বুঝে নেবে বা অনুমান করতে পারবে এমন চিন্তা করবেন না। আপনার অনুভূতি প্রকাশ করা শিখুন।
- ছোট-ছোট বিষয়ে রেগে যাবেন না।
- তার সাথে হাসি মশকরা করুন, যাতে আপনাদের দুই জনের মনই প্রফুল্ল হয়।
- তাকে বলুন, আপনি স্ত্রী হিসেবে সেরা, এবং এমন বিষয়ে নিজের উল্লেখ করুন যেটা আপনি জানেন আসলেই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু অহংকার করে নয়, বিনয় এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে।
- ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, The way to a mans heart is through his stomach| তাই তার পছন্দের খাবার তৈরি করা শিখুন।
- আপনার পরিচিত বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে কখনও তার বদনাম করবেন না। তারা যদি একথা মেনে নেয় ও বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে তা আপানকেই পাল্টা আহত করবে। আপনি নিজেই তখন হীনমন্যতায় ভুগবেন এই ভেবে যে আপনার স্বামী খারাপ, আবার অন্যরাও ভাববে যে আপনার স্বামী খারাপ। আল্লাহ বলেছেন, ধ্বংস ওই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে পেছনে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।’ (সূরা আল-হুমাজা: ১)
- বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনার সময়টাকে কাজে লাগান, এবং আপনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পাদন করুন। এতে আপনিও খুশি হবেন, আপনার স্বামীরও ভালো লাগবে।
- উপরের সবগুলো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করুন, দেখবেন আপনি যা করছেন আল্লাহ তায়ালা তাতে বরকত দেবেন।
- স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ, করণীও-বর্জনীয় বিষয়গুলো বিজ্ঞতার সাথে আলোচনা করবেন। স্বামীকে এমনভাবে আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না যেন মনে হয় সে আপনার ‘অধীনস্ত।’ বরং কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ।’ (সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)
- আপনার স্বামীকে বারবার বলুন আপনি তাকে কত ভালবাসেন।
- আপনার স্বামীর সাথে খেলাধুলায় প্রতিযোগিতা করুন এবং তাকে জিততে দিন।
- সুস্থ থাকুন, এবং নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, যাতে বলিষ্ঠভাবে একজন মা, স্ত্রী ও গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ এতে আপনি মোটা হবেন না।
- আচার-আচরণে মার্জিত থাকুন (যেমন- ঘ্যানঘ্যান করা, অতি উচ্চৈঃস্বরে হাসা বা কথা বলা, থপথপ করে সশব্দে হাঁটাচলা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।)
- স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না, আর তাকে না জানিয়ে তো অবশ্যই বের হবেন না।
- খেয়াল রাখুন তার পরিধেয় কাপড়গুলো যেন নিয়মিত পরিষ্কার থাকে।
- জরুরি অথবা বিতর্কিত বিষয়ে তার সাথে এমন সময় আলোচনা করবেন না যখন সে ক্লান্ত অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক আলোচনা করুন।
- আপনার স্বামী আপনার জন্য কষ্ট করে কাজ করে উপার্জন করছেন এবং আপনার খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করছেন এই ব্যপারটির সবসময় প্রশংসা করুন। এতে তার কাজের স্পৃহা বাড়বে।
- আপনার চুল সবসময় আঁচড়ানো রাখুন।
- মাঝে মাঝে উপহার দিন। উপহার-স্বরূপ তাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও দিতে পারেন।
- তার আগ্রহ ও শখের ব্যপারে আপনিও আগ্রহী হওয়ার চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত কেনাকাটা করবেন না, তার সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলবেন না।
- তার জন্য নিজেকে আকর্ষণীয় করে সাজান, তার সাথে খুনসুটি করুন।
- আপনার ত্বকের যত্ন নিন, বিশেষত চেহারার। চেহারাই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
- অন্তরঙ্গ ব্যপারে যদি আপনার কোন অসন্তুষ্টি থাকে, তাকে জানান, তার সাথে কথা বলুন। তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। নীরব থেকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
- প্রতিদিন, প্রতি ওয়াক্তের নামাযে আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আপনাদের মধ্যকার ভালবাসার ও সহমর্মিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। দুআর মত কার্যকরী কিছুই নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা তখনই থাকে যখন আল্লাহ তাদের মাঝে এটা দেন।
- কখনও নিজের স্বামীর সাথে অন্যদের স্বামীর তুলনা করবেন না। যেমন- কখনও বলবেন না, ‘অমুকেরস্বামী তো এমন করে না, তুমি কেন এমন কর।’
- আপনার স্বামী যেমন তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। কারণ কেউ নিখুঁত নয়, আপনিও নন। আর যদি, ত্রুটিহীন, নিখুঁত সঙ্গী চান তাহলে জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সেখানে আপনি এবং আপনার স্বামী দু’জনেই হবেন নিখুঁত ও ত্রুটিহীন।
- তাহাজ্জুদ নামাযের সময় তাকে ডাকুন এবং আপনার সাথে তাকেও নামায পড়তে বলুন।
- আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আপনাদের দুজনকেই মুত্তাকী হতে সাহায্য করেন।
- সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করুন। যদি সমস্ত স্ত্রীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে, নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের স্বামীদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। আর মনে রাখবেন, আল্লাহ যদি আপনার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ফেরেশতারা আপানাকে ভালবাসবে, সমস্ত সৃষ্টি আপনাকে ভালবাসবে।
আল্লাহ যেন সকল স্বামী স্ত্রীর বন্ধনকে হেফাজত করেন এবং দীনের শ্রেষ্ঠ আদবসমূহ বোঝার এবং তা কাজে লাগিয়ে সংসার জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার তাওফীক দেন।