জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

তাহারাত-প্রবিত্রতা

সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণ সতর খোলা অবস্থায় ওযু করে, তার ওযু হবে কি না? এবং তা দ্বারা ওযুর সওয়াব হাসিল হবে কি?

ওমর ফারুক

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করার ব্যাপারে হাদীস শরীফ এবং মুতাকাদ্দিমীনের কিতাবে অনেকগুলো নুসূস পাওয়া যায়। তা দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, প্রয়োজনের সময় এমনটা করা জায়িয, অন্যথায় মাকরুহ হবে। আর উলঙ্গ অবস্থায় ওযু করার ব্যাপারে কোন স্পষ্ট মত পাওয়া যায়নি। তবে সমকালীন ফুকাহায়ে কেরামের মধ্য হতে কেউ কেউ মাসয়ালাটি উল্লেখ করে বলেছেন, ওযু শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে ফযীলতের ব্যাপারে কেউ কোন কিছু উল্লেখ করেননি। তাই ওযুতে সতর খোলা রাখার কোন প্রয়োজনীয়তা না থাকার কারণে তা অবশ্যই মাকরুহ হবে এবং সুন্নাত- মুস্তাহাবের পূর্ণ অনুসরণ করে ওযু করলে যে ফযীলত পাওয়া যেত তা থেকে কিছুটা হ্রাস পাবে। মুসান্নাফে আবদুর রায্‌যাক: ১/২৮৮, মিরকাত: ৪/৩৩

মুয়ামালাত-লেনদেন

সমস্যা: আমরা জানি, বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইজাব-কবুল শর্ত, অথচ বর্তমানে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে বেচা-কেনার বিশেষ একটি পদ্ধতি রয়েছে যে, মেশিনের ভেতর নির্দিষ্ট কিছু পণ্য রেখে দেওয়া থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা মেশিনের ভেতর দিলে পণ্য বেরিয়ে আসে। সেখানে কোন মানুষ থাকেনা। সম্পূর্ণ লেনদেনটি কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে মেশিনে হয়ে থাকে। উক্ত পদ্ধতি শরীয়তসম্মত কিনা?

শামীম রানা

ওমান

সমাধান: বেচা-কেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইজাব-কবুল’ শর্ত। তবে ইজাব-কবুল শুধুমাত্র মুখে বলতে হবে এমনটি কিন্তু নয়। বরং রাজি-রগবতের সাথে ইজাব-কবুল’ ছাড়াও যদি টাকা এবং মাল লেনদেন করা হয় তাহলেও বেচা-কেনা শুদ্ধ হয়ে যাবে। যেমন ফুকাহায়ে কেরাম بیع تعاطي (অর্থাৎ ইজাব-কবুলবিহীন লেনদেনের মাধ্যমে বেচা-কেনা)-কে জায়িয বলেছেন। সুতরাং উল্লিখিত পদ্ধতিতে যদি কোন ধরনের ধোঁকার বা প্রতারণার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা জায়িয হবে। কেননা সেখানে সরাসরি ইজাব-কবুল’ পাওয়া না গেলেও রেযামন্দির সাথে টাকা ও পণ্যের লেনদেন করা পাওয়া যাচ্ছে। তাই তা জায়িয। সূরা আন-নিসা: ২৯, ফিকহুল বুয়ু: ১/৭৬, হিদায়া: ২/১৮, আদ-দুররুল মুখতার: ৭/২৭

সমস্যা: বর্তমান অনেক ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা করার কারণে অনেক সময় পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়ে সেই পরিমাণ মালও কমিয়ে দেয় যাতে করে গ্রাহকগণও কম দাম পেয়ে কিনতে অনেক আগ্রহী হয় এবং নিজেরও মুনাফা কম পেতে না হয়। যেমন- কোন ব্যবসায়ী পয়ষট্টি টাকা দরে লোহা ক্রয় করল যা বাজারে খুচরা মূল্য প্রতিকেজি সাতষট্টি টাকা সে পণ্যটি সাতষট্টি টাকা বিক্রি না করে গ্রাহককে আকর্ষণ করার জন্য পয়ষট্টি টাকা মূল্যে বিক্রি করে। কিন্তু সে পরিমান লোহা মাপে কম দেয় অর্থাৎ সাতষট্টি টাকা মূল্যে যেই পরিমান লোহা পাবে সেই পরিমাণ লোহা থেকে কিছুটা কম দিয়ে প্রতি কেজিতে দুই টাকা তার যে লাভের অংশ ছিল তা সে মাল কম দিয়ে উসুল করে নেয়। উক্ত পদ্ধতিতে বাজার দর হিসেবে ক্রেতা কোন ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। আমার জানার বিষয় হলো, উক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত কিনা?

আলী আহমদ সাওদাগর

ইদগাহ, কক্সবাজার

সমাধান: উল্লিখিত পদ্ধতিতে যদিও ক্রেতা-বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, কিন্তু বিক্রেতা মিথ্যা ও ধোঁকার আশ্রয় নেওয়ার কারণে কঠিন গোনাহগার হবে। আর বেচা-কেনায় বিক্রেতা যদি মিথ্যা বলে উজনে কম দেয় তাহলে ক্রেতার অধিকার থাকবে যে, যদি চায় কম মালের ওপর রাজি থাকবে অথবা বেচা-কেনা ভেঙে ফেলবে। আর মিথ্যা বলে বেচা-কেনায় উজনে কম দেওয়া সম্পর্কে কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফে হারাম বলা হয়েছে এবং কঠিন আযাবের কথাও উল্লেখ আছে। আর ওজনে কম দেওয়াটা ক্রেতা যদি আগে থেকে জেনে শুনে রাজি হয়ে থাকে তখন কিন্তু আর সেই ইচ্ছাধিকার থাকবে না। তাই উল্লিখিত পদ্ধতিতে বিক্রেতা যখন মিথ্যা বলে উজনে কম দিয়েছে তাই ক্রেতার উক্ত পণ্য নেয়া- না নেয়ার ইচ্ছাধিকার থাকবে। আর বিক্রেতা মিথ্যা বলা ও উজনে কম দেওয়ায় হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে গোনাহগার হবে। সূরা আল-ইসরা: ৩৫, হিদায়া: ৩/২২, মাজমাউল আনহুর: ২/৩৫৮, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৭/৭৮

সমস্যা: বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব পণ্য বিক্রি করা হয় সে ক্ষেত্রে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। এমনকি ছবিও দেওয়া থাকে। এভাবে কোন পণ্য ক্রয় করলে ক্রেতার خیار رؤیت (দেখার অধিকার) বাকি থাকবে কি?

ইয়াছিন ফরহাদ

জালালাবাদ, কক্সবজার

সমাধান: না দেখে জিনিস ক্রয় করা জায়িয আছে, কিন্তু দেখার পর অধিকার থাকবে, যদি পছন্দ হয় নিবে না হলে ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। আকদে বাই’ করার সময় দেখার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন। উক্ত জিনিসের ব্যাপারে যেভাবে অবগত হওয়া যায় সেভাবে অবগত হওয়া। অবগত হওয়ার পর আর অধিকার থাকবে না। সে হিসেবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে সকল পণ্য বিক্রি করা হয় সে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ জেনে এবং ছবি দেখে যদি ক্রয় করা হয়। আর ক্রয়কৃত পণ্য উক্ত বিবরণ মতে হয়, তখন ক্রেতার কোন অধিকার থাকবে না। আর যদি বিবরণ মত না হয় তখন ক্রেতার অধিকার থাকবে। তাই শুধুমাত্র ছবি দেখে ক্রয় করা যাবে না। বরং পূর্ণ বিবরণ থাকতে হবে। কারণ বিবরণবিহীন ছবির মধ্যে ধোঁকার সম্ভাবনা রয়েছে। সুনানে দারাকুতুনী: ১০, ফিকহুল বুয়ু: ২/৮২৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/১৫১, ইলেক্ট্রনিক কারবার কে শরয়ী আহকাম: ১১৭

সমস্যা: বর্তমান প্রায় পন্য প্যাকেটজাত হয়ে যাওয়ার কারণে পন্য ক্রয় করার সময় খুলে দেখার সুযোগ থাকে না। এ জাতীয় পণ্যকে ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে আসার পর যদি তাতে কোন ধরণের দোষ-ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে ক্রেতার জন্য তা ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার থাকবে কিনা?

মনছুর আলম

 ইদগাহ, কক্সবাজার

সমাধান: যেসব প্যাকেট বা বাক্সযুক্ত পণ্য প্যাকেটের ওপর লিখা বা বিবরণ দেখে ক্রয় করা হয় সেগুলোর প্যাকেট খোলার পর যদি বিবরণ মত পণ্য পাওয়া না যায় তখন যদিও ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতানুসারে خیار رؤیت (দেখার অধিকার) থাকার কথা কিন্তু বর্তমানে তার অধিক প্রচলন হয়ে যাওয়ার কারণে خیار رؤیت (দেখার অধিকার) দেওয়া হলে বিক্রেতা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় (কারণ সে পণ্যটি প্যাকেট খুলে ফেলার কারণে অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারে না। دفع الضرر عن البائع (বিক্রেতার ক্ষতি প্রতিহত করা) হিসেবে বর্তমান ফুকাহায়ে কেরাম জমহুরের মতে রায় পেশ করেছেন যে, ক্রেতার ফেরত দেওয়ার অধিকার থকবে না। আর যদি বিবরণ মতো পাওয়া না যায, তখন ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে বিক্রেতা যদি ক্রয় করার সময় এরকম শর্ত দেয় দোষ থাকুক বা না থাকুক কোন ধরণের ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাহলে শর্ত ফাসেদের কারণে বেচা-কেনা ফাসেদ হবে। তাই এধরণের বেচা-কেনা নাজায়িয। ফিকহুল বুয়ু: ১/৩৭২, আল-ফিকহু আলা মাযহাবিল আরবাআ: ৩/১৫৪, বাহরুর রায়েক: ৩/৬৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৩/৯৫

সমস্যা: কোন কোন অবস্থায় করযে হাসানা (সুদবিহীন কর্জ) পাওয়া না গেলে সুদভিত্তিক লোন গ্রহণ করা যেতে পারে?

মুহিব্বুল্লাহ

কান্টেনমেন্ট, কুমিল্লা

সমাধান: সুদভিত্তিক লোন নেওয়া হারাম। কিন্তু যে অবস্থায় মানুষ এমন নিরুপায় হয়ে যায় যে সুদভিত্তিক লোন নেওয়া ছাড়া জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না যেমন- জীবন চলে যাওয়ার ভয় অথবা ইজ্জত-সম্মান নষ্ট হওয়ার আশংকা হয়, এ অবস্থায় সুদি লোন নিতে পারবে। কিন্তু শুধুমাত্র ব্যবসা-বাণিজ্য ঘর-বাড়ি ইত্যাদির উন্নতি করার লক্ষে সুদি লোন নেওয়া জায়িয হবে না। তবে সুদ গ্রহণ করা কোন অবস্থাতেই জায়িয হবে না। সূরা আল-বাকারা: ১৭২, তাফসীরে ইবনে কসীর: ১৪০, বাহরুর রায়িক: ৪/২১১, ফাতাওয়ায়ে মহমুদিয়া: ২৪/৪৩৭

সমস্যা: ঘরে বসে পণ্য ক্রয়ের অনলাইন মার্কেটিং বর্তমান বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। এখন অনলাইনে কোন পণ্য ক্রয়ের পর বিকাশের মাধ্যমে কোম্পানির ওয়ালেটে তার ক্রয় মূল্য পেমেন্ট করলে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ভোক্তাকে (২০-২৫ পার্সেন্ট) নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিসকাউন্ট প্রদান করছে। আমি জানতে চাচ্ছি, ভোক্তাদের জন্য উক্ত ডিসকাউন্ট গ্রহণ ও ব্যবহার জায়িয হবে কি?

সমাধান: ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায়, বিক্রেতার পক্ষ থেকে ক্রেতার জন্য ক্রয় মূল্যে হ্রাস করা জায়িয আছে (চাই তা ক্রয় মূল্য হস্তগত করার আগে হোক বা পরে) হ্রাসকৃত অংশ কর্তনের পর বিক্রয় মূল্যের অবশিষ্টাংশই পণ্যের ক্রয় মূল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অতএব প্রশ্ন উল্লিখিত বিকাশ ক্যাশব্যাকের মাসালায় ক্যাশব্যাক (ডিসকাউন্ট বা হাদিয়াটি) প্রদানের দুটি সুরত হতে পারে।

এক. স্বয়ং পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া হলে, তা গ্রহণ ও ব্যাবহার করা জায়িয ও বৈধ।

দুই. বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হলে, তাদের ম্যাক্সিমাম ইনকাম হিসেবে হুকুম হবে। সুতরাং তাদের অধিকাংশ ইনকাম হারাম পদ্ধতির হলে, তা গ্রহণ করা নাজায়িয ও অবৈধ। আর হালাল হলে, তা গ্রহণ করা জায়িয ও বৈধ। তবে (গ্রহণ করাটা) তা ইহতিয়াত ও তাকওয়া পরিপন্থী। উল্লেখ্য সুদী কারবারি বিকাশ

কোম্পানির লেনদেনে সহায়তার ভূমিকা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বিকাশ পেমেন্টসহ সর্বপ্রকার লেনদেনের ক্ষেত্রে পারতপক্ষে নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করা উচিত।

জ্ঞাতব্য: উক্ত ডিসকাউন্ট বিকাশ কর্তৃপক্ষ সবসময় নিজের পক্ষ থেকেই দিয়ে থাকে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়, বরং কখনো কখনো বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের সেল বৃদ্ধি ও প্রচারণার স্বার্থে নিজেদের পক্ষ থেকেও ঘোষণা করে থাকে। বুখারী শরীফ: ২৪০৪ ২৪০৬, হিদায়া: ৩/৭৬, বিনায়া: ৮/২৫৫, আল-মুহীতুল বুরহানী: ৭/৪৫৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৪৩

সমস্যা: কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ স্টকের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য যথা- পেঁয়াজ, লবন ইত্যাদির বাজার মূল্য আকাশচুম্বী আকার ধারণ করেছিল। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, শরীয়তে ইসলামিয়াতে খাদ্য-অখাদ্য, নিত্য-অনিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস স্টকের বিধান কী এবং কোন প্রকারের স্টক শরীয়তে নিষিদ্ধ (ইহতিকার)?

সমাধান: তিনপ্রকার স্টকের মধ্যে শুধুমাত্র প্রথম প্রকার স্টকই শরীয়তে নিষিদ্ধ। বাকি দুই প্রকার জায়িয। আর তিন প্রকার স্টক হলো:

এক. নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের নিষিদ্ধ স্টক বা শরীয়ত নিষিদ্ধ স্টক: মানুষ বা প্রাণীদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট (বাংলাদেশ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি এক্সপোর্ট কারী বন্ধু দেশ) এলাকা থেকে ক্রয় করে বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তে (অর্থাৎ যখন উক্ত মালের অভাবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের খুব কষ্ট হবে) চড়া দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা কামাবার আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি স্টক করে রাখাই হচ্ছে শরীয়তে নিষিদ্ধ (মাকরুহে তাহরীমী ইহতিকার) স্টক।

দুই. নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জায়িয স্টক বা শরীয়ত অনুমোদিত স্টক: নিজস্ব উৎপাদিত অথবা অত্র অঞ্চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ননএক্সপোর্টার কান্ট্রি (অরপ্তানিকারক রাষ্ট্র) থেকে ব্যবসায়ী খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে স্টক ও গোডাউনজাত করে রাখা শরীয়তে জায়িয আছে।

তিন. অনিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্টক: খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া অন্যান্য অনিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যা মৌলিক প্রয়োজনের আওতায় পড়ে না তা স্টক ও গোডাউন জাত করে রাখাও শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়িয ও বৈধ। ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ৩/২১৭-১৪, আর-বাহরুর রায়েক: ৮/২০১-২০২, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/১৯, ফাতাওয়াযে রাহমানিয়া ২/১৬৭

সমস্যা: বর্তমান মোবাইল অপারেটরগুলো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে যত টাকা গ্রহণ করা হয় রিচার্জের পর তার সাথে আরো কিছু অতিরিক্ত টাকা-পয়সা কেটে নেয়। যেমন- ১২ টাকায় ১৪ টাকা। ১৫ টাকায় ১৭ টাকা ইত্যাদি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, কোম্পানি কর্তৃক কর্তিত উক্ত অতিরিক্ত টাকা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে কি? আমার কতিপয় ফেসবুক বন্ধুর দাবি যে, তাতে নাকি সুদ হবে। শরীয়তের প্রমাণাদির আলোকে সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন!

সমাধান: মোবাইল অপারেটরগুলো ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের নামে আমাদেরকে বাস্তবে কোন টাকা-পয়সা দিচ্ছে না। বরং নির্দিষ্ট পরিমাণ টকটাইম তথা মিনিট প্যাক, এসএমএস ইত্যাদি সুবিধা ভোগের অধিকার গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে। যা স্কিনের ওপর টাকার অঙ্কে ব্যালেন্স আকারে প্রকাশ করে থাকে। সুতরাং উল্লিখিত ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে টাকার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এমনটি নয়। বরং টাকার বিনিময়ে টকটাইম বিক্রি হচ্ছে। আর শরীয়তে নগদের তুলনায় বাকি বিক্রিতে পণ্যের মূল্য (শর্তসাপেক্ষে) বেশি নির্ধারণ করে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করাকে জায়িয রাখা হয়েছে। তাই কোম্পানিগুলো যদি (শর্তসাপেক্ষে) কিছুটা বেশি কেটে নেয়, তাহলে তা সুদ বলে গণ্য হবে না। বরং তা সম্পূর্ণ হালাল ইনকাম হিসেবে বিবেচ্য হবে। তবে আমাদের জানা তথ্য মতে, তারা ইমারজেন্সি ব্যালেন্স বাবদ অতিরিক্ত কোন টাকা নেয় না। বরং বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন হারে শর্তসাপেক্ষে সার্ভিস চার্জ + ভেট ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকে। যেমন রবি কোম্পানি ১২ বা ততোধিক এর ক্ষেত্রে দুই টাকা ৫৫ পয়সা। বাংলালিংক ১৫ ও ততোধিক এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কেটে নেয় দু’টাকা। এয়ারটেল নেয় ১২ থেকে উপরে দুই টাকা ৫৫ পয়সা। টেলিটক নেয় ৩ টাকা ৬৫ পয়সা। সাথে সকল কোম্পানিই ভেট কেটে নেয়। কোম্পানিগুলো কিছু শর্তসাপেক্ষে গ্রাহকের নিজস্ব খরচে তাদেরকে বাকিতে সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকার দিচ্ছে। এটা গ্রাহকের প্রতি অনুগ্রহমূলক সেবা। যা অত্যন্ত পছন্দনীয় ও প্রশংসনীয় কাজ। তাই উক্ত বন্ধুদের দাবিটি সঠিক নয়। ’লাউস সুনান: ১৪/১০০, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/৫৩১, আহসানুল ফাতাওয়া: ৬/৫১৯, ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া: ৬/১৭১

সমস্যা: ইন্টারনেট অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়িয হবে কি?

সমাধান: যেহেতু অনলাইন মার্কেটিংএ পণ্যের নাম, ধরণ-প্রকৃতি, মূল্য, ছবি ইত্যাদিসহ বিস্তারিত সব কিছুই দেয়া ও লেখা থাকে এবং এ জাতীয় বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে ঝগড়া-ফাসাদও হয় না তাই ইন্টারনেট অনলাইন মার্কেটিংয়ে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা বাইয়ে তায়াতি হিসেবে জায়িয হবে। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৩/৯, ফাতহুল কদীর: ৫/৪৫৯, দুরারুল হুককাম: ২/১৪৩, কিতাবুন নাওয়াযিল ১১/১০৯

সমস্যা: আমাদের দেশে পুরাতন ছেঁড়াফাটা টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্যান্য পণ্যের ন্যায় কমবেশি করে মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করা হয়। আমার জানার বিষয় হলো কাগজের তৈরি নোটের ক্রয়-বিক্রয় বা’য়ুস সরফের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না? সেই হিসাবে উল্লিখিত লেনদেন জায়িয হবে কিনা? নাজায়িয হলে, ছেঁড়া-ফাটা টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা সংগ্রহে করণীয় কী?

সমাধান: যেহেতু বর্তমানে প্রচলিত কাগজের নোট দেশ প্রচলনে ছমন (পণ্যের বিনিময়) হিসেবে গণ্য হয়, তাই এ জাতীয় নোটের ক্রয়-বিক্রয় বাইয়ূস সরফের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর বাইয়ূস সরফের মধ্যে যেহেতু কমবেশি লেনদেন সুদের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমাদের দেশে প্রচলিত পুরাতন ছেঁড়াফাটা টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্যান্য পণ্যের ন্যায় কমবেশি করে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিক্রি করা সুদী লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটি নাজায়িয ও হারাম। এক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উক্ত সেবাটি প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতো বিনামূল্যেই উক্ত সেবাটি প্রদান করে। তাই এক্ষেত্রে সুদী লেনদেন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এরপরও একদম অপারগতার ক্ষেত্রে বদল কারীর পরিশ্রম ও ডাক খরচ বাবদ কিছু টাকা বেশি নেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে স্পষ্টভাবে বাবত উল্লেখ করে দিতে হবে। বুখারী শরীফ: ২/৭৫০, মুসলিম শরীফ: ৫/৪২, হিদায়া: ৩/১০৪ ৬১৮, আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/২২, ২৩ ৫৪

সমস্যা: ঈদের সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় কমবেশি করে নতুন নোটের ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। আমি জানতে চাই, এক দেশীয় নোট ও ভিন্নদেশীয় কারেন্সির ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কম-বেশি করে লেনদেন জায়িয হবে কি?

সমাধান: নোট ও কারেন্সির ক্রয়-বিক্রয় বাইয়ুস সরফের অন্তর্ভুক্ত। তাই একই দেশের নোট এক জিনিসের হওয়ায় তাতে কম-বেশি করে ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়িয ও হারাম। আর ভিন্নদেশীয় নোট ভিন্ন জিনিসের হওয়ায় তাতে কম-বেশি করে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়িয ও হালাল। জাওয়াহিরুল ফিকাহ: ৪/৩৪৭, ফাতাওয়ায়ে রহমানিয়া: ২/১৫৭

সমস্যা: কখন ঘুষ প্রদান হারাম আর কখন জায়িয?

সমাধান: সুদ-ঘুষ নেয়া সর্বাবস্থায়ই হারাম। তবে নিজের জান-মাল, ইজ্জত-আবরুর হেফাজত, জুলুম প্রতিহতকরণ ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঘুষ দানে বাধ্য হলে ঘুষ প্রদানের অবকাশ রয়েছে। অন্যথায় নয়। তিরমিযী শরীফ: ১/২৪৮, ইবনে মাজাহ: ১৬৭, ফাতাওয়ায়ে রহমানিয়া: ২/১৯৬

সমস্যা: ঘুষ দিয়ে চাকরি গ্রহণ জায়িয হবে কি? করলে তার ইনকাম হালাল হবে কিনা?

সমাধান: চাকরিপ্রার্থী সার্বিক বিবেচনায় যোগ্য প্রমাণিত হয়ে সিলেক্টেড ও মনোনীত হওয়ার পর ঘুষ না দিলে যদি চাকরি না হয় এবং পারিবারিক আর্থিক দুরাবস্থার কারণে চাকরি করাও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে তাহলে এ অবস্থায় জরুরতবশত নিজের চাকরির হক আদায় করার জন্য ঘুষ প্রদান করলে তা জায়িয হবে। ইনকামও হালাল হবে, অন্যথায় নয়। ফতওয়ায়ে রহমানিয়া: ২/১৯৬

সমস্যা: সুদী ব্যাংকে চাকরি করা জায়িয হবে কি?

সমাধান: হাদীস শরীফে নবী (সা.) সুদ দাতা-গ্রহীতা এবং সুদী কারবারের লেখক ও সাক্ষ্যদাতা সকলের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। তাই সরাসরি সুদি কারবারের সহযোগিতামূলক পোস্টে চাকরি করা সম্পূর্ণ হারাম ও না জায়িয। তবে যে সমস্ত পোষ্টের চাকরিজীবীরা সরাসরি সুদী কারবারের সাথে জড়িত নয় যেমন- ড্রাইভার, দারোয়ান, জায়িয বিষয়ের গবেষক অর্থনীতিবিদ প্রমুখ যেহেতু সরাসরি সুদী কারবারের সহযোগিতামূলক কাজে জড়িত নয় এবং সুদী ব্যাংকের এক তৃতীয়াংশ কার্যক্রম সুদী বাকি দুই অংশই জায়িয ও হালাল কার্যক্রম তাই তাদের জন্য এ সকল পোস্টে চাকরি করা তাকওয়া পরিপন্থী হলেও জায়িয হবে। ফাতাওয়ায়ে উসমানী: ৩/৩৯৪-৯৬

সমস্যা: আমি ও আমার বড় ভাই মিলে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার পরিচালানায় আছি। আমাদের এখানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি ইত্যাদি ফরম পূরণ করা হয়। আমার জানামতে, ব্যাংকে চাকরি করা জায়িয নেই। তবে আমাদের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাংকে চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করা জায়িয হবে কি?

সমাধান: প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা নাজায়িয। কেননা এ ব্যাংকগুলোর প্রধান ও মূল কাজই হল সুদের আদান-প্রদান। সুতরাং ব্যাংকের চাকরির জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে দেওয়া নাজায়িয কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা গোনাহের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘এবং নেকি ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং গোনাহের কাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।’ সূরা আল-মায়িদা: অতএব আপনাদের জন্য ব্যাংকের ফরম পূরণে সহযোগিতা করা বৈধ হবে না।

সমস্যা: সুদী ব্যাংকে কোন ধরনের একাউন্ট খোলা যাবে কি?

সমাধান: কারেন্ট একাউন্টে যেহেতু সুদ আসে না তাই প্রয়োজনবশত ব্যাংকে শুধুমাত্র কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়িয। অন্য কোন একাউন্ট খোলা জায়িয নেই। ফাতাওয়ায়ে উসমানী: ৩/২৯

সমস্যা: হুন্ডি জায়িয আছে কি?

সমাধান: ফি নফসিহি হুন্ডি জায়িয ও বৈধ অর্থাৎ শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তাতে বিশেষ কোন সমস্যা নেই। কেননা তা হচ্ছে মুদ্রা বিনিময় তথা এক দেশের মুদ্রাকে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় ক্রয়-বিক্রয়। তবে যেহেতু সরকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছে আর শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন কোনো বিষয়কে সরকার নিষেধ করলে তা নাগরিকদের মেনে চলা উচিত। তাই ইজ্জত রক্ষার্থে এ ধরণের পেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/১৩১, ফাতহুল মুলহিম: ১/৫৯০, ফাতাওয়ায়ে কাসিমিয়া ২০/২৬৬

বিবিধ

সমস্যা: সবৈদ্যুতিক ব্যাটসহ অন্যান্য আধুনিক ও ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে মশা নিধনের হুকুম সম্পর্কে শরয়ী বিধান কী?

কাউসার পাঠান এমএ

ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা

সমাধান: প্রাণিদরদি মানবতার নবী (সা.) কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকারক প্রাণীকেও আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে অতিরিক্ত কষ্ট দিয়ে মারতে নিষেধ করেছেন। তাই মসকিউটো রেকেটের সাহায্যে (যা মসকিউটো কিলার ব্যাট বা মশা নিধনকারী ইলেকট্রিক ব্যাট নামে পরিচিত।) ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে মশাকে পুড়িয়ে মারা মাকরুহে তাহরীমী। তবে নিজ হাতে পুড়িয়ে না মেরে স্প্রে, লিকুইড, বিভিন্ন ওষুধ, কয়েল, ইলেকট্রিক কয়েল, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক মসকিউটো কিলার (কিলার পেস্ট) ইত্যাদি ব্যবহার করে মশা নিধন করা যেতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে পুড়িয়ে মারা নয় বরং মরা পাওয়া যাচ্ছে। যা চেরাগ-বাতি ইত্যাদিতে মশা মাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ পড়ে মারা যাওয়ার মত। ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/৩৬৮  ৪১৭ (জাদীদ), ফাতাওয়ায়ে শামী: ১০/৪৮২, ফাতাওয়ায়ে কাসেমিয়া: ২৪/১৯৫

সমস্যা: দেশের হাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা জায়িয হবে কি?

সমাধান: প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর পর্দা ফরয। সহশিক্ষালয়ে শিক্ষকতার কারণে সে ফরজ বিধান নষ্ট হওয়ায় প্রাপ্তবয়স্ক কোন নারী পুরুষের জন্য এ জাতীয় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরি করা জায়িয হবে না। তবে সহশিক্ষা মুক্ত পুরুষ শিক্ষালয়ে পুরুষের জন্য এবং নারী শিক্ষালয়ে নারীদের জন্য শিক্ষকতা করা জায়িয ও বৈধ হবে। হিদায়া: ৪/৪৪২, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/৩৭০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১০/৪৪০

সমস্যা: গোবর বা পায়খানা হতে তৈরি গ্যাসে খাবার পাক করে খাওয়া জায়িয হবে কি?

সমাধান: গোবর শুকিয়ে তার জ্বালানি দ্বারা যেমনিভাবে খাবার পাকানো জায়িয তেমনিভাবে গোবর ও পায়খানার গ্যাস দ্বারাও খাবার পাকানো জায়িয। কেননা খাবার জায়িয হওয়ার জন্য আগুন জ্বালানোর উপকরণ পাক হওয়া শর্ত নয়। হিদায়া: ৩/৪৬২, ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৫৩০, ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া: ২/১১৬, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৩৩৬ ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া: ২/৩৬৮

সমস্যা: বিভিন্ন বাহিনী তথা আর্মি, বিজিবি, এয়ার ফোর্স ইত্যাদির আরটি পোস্টে (ধর্মীয় শিক্ষক পদে) চাকরির জন্য মেডিকেল চেকআপ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সতরও খুলতে হয়। জানার বিষয় হচ্ছে, চাকরির জন্য এভাবে সতর খোলা জায়িয হবে কি?

সমাধান: বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া সতর খোলা হারাম ও কবীরা গোনাহ। ধর্মীয় শিক্ষক পদে চাকরির জন্য ধর্মীয় আহকামকে বিসর্জন দিয়ে সতর খুলবে তাতো অবিশ্বাস্য ও খুবই আশ্চর্যজনক বিষয়। সেই পদে চাকরি করা যেহেতু জরুরতে শাদিদার অন্তর্ভুক্ত নয় তাই আরটি পদে চাকরির জন্য সতর খোলা জায়িয হবে না। জাদিদ মুয়ামালাত কে শরয়ী আহকাম: ১/২২৯

সমস্যা: কোন মুসলমানের জন্য টাই পরিধান করা জায়িয হবে কি?

সমাধান: টাই বর্তমানে বিধর্মীদের প্রতীক ও নিদর্শনে পরিণত হওয়ায় কোন মুসলমানের জন্য তা ব্যবহার করা জায়িয নেই। যদিও শুরুতে তা খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাস যিশুখ্রিস্ট খ্রিস্টানজাতির পাপমোচনের লক্ষ্যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গিয়েছেন। যার প্রতীকস্বরূপ তারা সে ক্রুস চিহ্ন গলায় ধারণপূর্বক টাইকে জাতীয় পোশাকের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। তবে পরবর্তীতে তাদের এই বিশ্বাসের কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। আবু দাউদ শরীফ: ২/৫৬০, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ২/৯৪, খাইরুল ফাতাওয়া: ১/১৫১, কিফায়াতুল মুফতী ৯/১৫৩

সমস্যা: ভাস্কর্য নির্মাণ, প্রাণীর ছবি আঁকা, ডিজিটাল ক্যামেরা ও মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলা জায়িয আছে কি?

সমাধান: বহু হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের আসার, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন ও ফুকাহায়ে কেরামের কথা দ্বারা স্পষ্টভাবে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ভাস্কর্য নির্মাণ, কোন প্রাণীর ছবি আঁকা, বিনা ঠেকায় (প্রাণীর) ছবি তোলা (চাই তা ডিজিটাল ক্যামেরায় হোক বা মোবাইল ক্যামেরায়, প্রিন্ট দেয়া হোক বা না হোক) ও সংরক্ষণ বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ হারাম।

যদিও কেউ কেউ ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইলের ছবিকে (বাহ্যিকভাবে এটি ছবি মনে না হওয়ায়) জায়িয বলতে চেয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক থেকে এটা ছবি’ই। কাজেই একে জায়িয বলার কোন অবকাশ নেই। বুখারী শরীফ: ৫৭১৭ ৫৭১৯, ইমদাদুল মুফতীন: ৮২৯, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৭/৯৮, জাদীদ ফিকহী মাসাইল: ১/৩৫০, আহাম মাসাইল জিনমে ইবতেলায়ে আম: ১/২০৩, ২০১ ২/২৬২

সমস্যা: আমাদের এলাকায় একটি বড় পুকুর আছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এক দু’বার তাতে মাছ শিকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে টিকেট ছেড়ে থাকে। টিকেট সংগ্রহকারীগণ নির্ধারিত দিনে বড়শি দিয়ে সেই পুকুর থেকে মাছ শিকার করেন। যে যা শিকার করতে পারে সেটা তার। জানার বিষয় হল, এই পদ্ধতিটি কি শরীয়তসম্মত?

সমাধান: মাছ শিকারের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে কে কতটুকু মাছ পাবে তা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। বরং একেবারে না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। যা ধোঁকা ও শরীয়ত নিষিদ্ধ আলগারারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া জুয়ার সাথেও এর সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ এতে কে কী পরিমাণ মাছ ধরতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কেউ হয়ত পাবেই না। অথচ টাকা দিয়েছে সবাই। এই টাকা হয়ত পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। আবার এমনও হতে পারে যে, কেউ অনেক বেশি মাছ পেয়ে যাবে। যেহেতু এই অনিশ্চয়তা মূল লেনদেনের সাথেই জড়িত যা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত তাই তা নাজায়িয। মুসলমানদের জন্য তা পরিহার করা কর্তব্য। সহীহ মুসলিম: ১৫১৩; রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৬

 

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ