জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সচ্ছল জীবনের সন্ধান: শরয়ী পথ ও পন্থা

সচ্ছল জীবনের সন্ধান: শরয়ী পথ পন্থা

জাহেদ ছফা

 

মানুষ বলতেই সকলের কাছে সম্মানজনক, সচ্ছল জীবন অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের প্রায় সব কষ্ট-ক্লেশ, ত্যাগ-বিসর্জন সচ্ছল জীবনের আশায় হয়ে থাকে। মানুষ নিজের জীবনের অভাব ঘোচানোর জন্য নানা ধরণের কাজ করে, বৈধ-অবৈধ অনেক পন্থা অবলম্বন করে। অনেক সময় সমাজ-গণ্ডির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মে জড়িত হয়, আবার কখনো ধর্মপরিপন্থী, এমনকি শিরক-বিদআতের মতো জঘন্য পাপেও লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আমরা উক্ত প্রবন্ধে অভাবমুক্ত সচ্ছল জীবন লাভের শরীয়া নির্দেশিত কিছু পথ ও পন্থা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইন শা আল্লাহ।

অভাবের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সর্বপ্রথম আমরা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এ আকীদা পোষণ করি যে, মানুষের যাবতীয় অবস্থা সুখ-দুঃখ, শান্তি-অশান্তি, বিপদ-আপদ, সুস্থতা-অসুস্থতা সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর হুকুমেই আসে। সুতরাং অভাব-অনটনও তাঁর পক্ষ থেকে আসে। যেমন- তিনি কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেন,

قَالَ فَاِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً١ۚ يَتِيْهُوْنَ فِي الْاَرْضِ١ؕ فَلَا تَاْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفٰسِقِيْنَؒ۰۰۲۶

‘তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে চান রিয্‌কে প্রশস্ততা দান করেন, যাকে চান রিয্‌ক সংকীর্ণ করে দেন।’[1]

অভাব কেন আসে

মহান আল্লাহ প্রজ্ঞাবান। তিনি নিজ প্রজ্ঞা অনুযায়ী বান্দাদেরকে বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন। কখনো অভাব-অনটনের মাধ্যমে র্ধৈয ও আনুগত্যের পরীক্ষা নেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرٰتِ١ؕ وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَۙ۰۰۱۵۵

‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, জান-মাল ও ফল-মূলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর আপনি র্ধৈযশীলদের সুসংবাদ দান করুন।’[2]

আবার কখনো বান্দার গোনাহের কারণে তাকে বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটনের সম্মুখীন করেন, যাতে বান্দা সতর্ক হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। যেমন- কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَ الْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ۰۰۴۱

‘জল-স্থলের যাবতীয় বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের কারণে সৃষ্টি হয়, যাতে এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে নিজেদের কৃতকর্মের কিছু স্বাদ আস্বাদন করান, যেন তারা ফিরে আসে।’[3]

অভাব-অনটনে ইসলামের নির্দেশনা

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, অভাব ও দারিদ্র্য আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন। তাঁর হুকুমেই আসে। তবে তার মানে এই নয় যে, এটি অপরিবর্তনীয় অনড় নিয়তি। সুতরাং তা পাল্টানোর চেষ্টাই করা যাবে না। এবং সুন্দর জীবন ও সচ্ছল জীবিকার জন্য চেষ্টা-তদবীর করাই অবাঞ্ছনীয়। বরং ইসলাম অভাবকে সমস্যা ও বিপদ হিসেবে আখ্যায়িত করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে অভাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে দুআ করেছেন এবং উম্মতকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই ইসলাম অন্যান্য সমস্যার মতো এই সমস্যা সমাধানের জন্যও পথ ও পন্থানির্দেশ করেছে।

এক. রিয্‌ক লাভের অন্যতম মাধ্যম ইস্তিগফার: ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, মুখে ক্ষমা-বাক্য পাঠ করা রিয্‌ক লাভের অন্যতম মাধ্যম। কুরআন-হাদীসের একাধিক বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পার্থিব চিন্তা-পেরেশানি, বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি ও অভাব মোচনের ক্ষেত্রে ইস্তিগফারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ١ؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًاۙ۰۰۱۰ يُّرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًاۙ۰۰۱۱ وَّيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنّٰتٍ وَّ يَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهٰرًاؕ۰۰۱۲

‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেনএবং তোমাদের জন্য নদ-নালা প্রবাহিত করবেন।’[4]

হাফিয ইবনে কসীর (রহ.) উপর্যুক্ত আয়াতের অধীনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর ঘটনা উল্লেখ করেছেন যে,

عَنْ أَمِيْرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ h أَنَّهُ صَعِدَ الْـمِنْبَرَ لِيَسْتَسْقِيَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى الْاسْتِغْفَارِ وَقِرَاءَةِ الْآيَاتِ فِي الْاسْتِغْفَارِ وَمِنْهَا هَذِهِ الْآيَةُ.

‘একবার হযরত ওমর (রাযি.)-এর শাসনামলে মদীনায় বৃষ্টি বন্ধ হয়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর কাছে আবেদন করলেন বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য। তখন তিনি মিম্বরে আরোহন করলেন। অতঃপর তিনি কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করেই নেমে গেলেন। এর মধ্যে এ আয়াতটিও ছিল।’[5]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,

«مَنْ لَزِمَ الْاسْتِغْفَارَ، جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجًا، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ».

‘যে ব্যক্তি সর্বদা ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার জন্য সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধারের পথ বের করে দেবেন, আর তাকে এমন স্থান থেকে রিয্‌ক দান করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’[6]

হযরত হাসান আল-বাসরী (রহ.)-এর চমৎকার ঘটনা: হযরত হাসান আল-বাসরী (রহ.)-এর ব্যাপারে এ সংক্রান্ত একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণিত আছে। একবার এক ভক্ত তাঁর কাছে এসে অভাবের অভিযোগ করল। তিনি তাকে বললেন, ইস্তিগফার কর, অভাব দূর হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে আরজ করল, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে না, মানুষের ক্ষেত-ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতএব আপনি আমার জন্য দুআ করুন, যেন আমার ক্ষেত-ফসল রক্ষা থাকে।’ তিনি তাকে উত্তর দিলেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। কিছুক্ষণপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, ‘হুযুর! আমি নিঃসন্তান, আমার জন্য সন্তানের দুআ করুন।’ তিনি তাকেও একই উত্তর দিয়ে বিদায় করলেন। তখন তাঁর কাছে উপস্থিত কোন শিষ্য বিস্ময়সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হযরত! তিনজনের সমস্যা তো ভিন্ন। আপনি একই সমাধান দিয়েছেন কেন?’ তখন তিনি এ আয়াতটি উল্লেখ করে সহাস্য উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজেই কুরআনে এই তিন সমস্যার একই সমাধান দিয়েছেন।

দুই. দুআ অভাব মোচনের অনন্য হাতিয়ার: দুআর শাব্দিক অর্থ চাওয়া ও প্রার্থনা করা। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদতের র্নিযাস ও মুমিনের হাতিয়ার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দুআ মুমিনের সংকট-উত্তরণ ও লক্ষপূরণের ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার। বিশেষত দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে দুআর বড় প্রভাব রয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজের জন্য রিয্‌কের একক মালিকানা ঘোষণা করেছেন। সুতরাং তাঁর কাছেই রুজির দুআ করা চায়। হাদীস শরীফে এসেছে,

«إِنَّهُ مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ».

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’[7]

পক্ষান্তরে যে আল্লার কাছে চায় তার প্রতি আল্লাহ খুশি হন। তাই তিনি কুরআনে নিজ বান্দাদেরকে দুআ কবুলের আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন,

ادْعُوْنِيْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ ۰۰۶۰

‘তোমরা আমার কাছে চাও, আমি তোমাদের দুআ কবুল করব।’[8]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «يَنْزِلُ رَبُّنَا f كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِيْنَ يَبْقَىٰ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ، فَيَقُوْلُ: مَنْ يَدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، وَمَنْ يَسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ، وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ».

‘হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিদিন রাত যখন অর্ধেকাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন মহান আল্লাহ সপ্তম আকাশে অবতরণ করেন এবং নিজ বান্দাদেরকে m‡¤^vab করে ডাকতে থাকেন, তোমাদের মধ্যে কোন প্রার্থনাকারী আছো কি? আমার কাছে চাও, আমি দান করব। কোন আহবানকারী আছো কি? আমাকে ডাকো, আমি ডাকে সাড়া দেব। কোন ক্ষমাপ্রত্যাশী আছো কি? আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করব। এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত তিনি ডাকতে থাকেন।’’[9]

হাদীসে বর্ণিত অভাব মোচনের কিছু দুআ: হাদীস শরীফে অভাব মোচনের জন্য অনেক চমৎকার দুআ বর্ণিত হয়েছে, যা তিনি নিজে করেছেন এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। নিম্নে কয়েকটি দুআ উল্লেখ করা হল:

॥এক॥

«اللّٰهُمَ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْكُفْرِ».

‘হে আল্লাহ! আমি দারিদ্র ও কুফর থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’

॥দুই॥

«اللّٰهُمَ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْقِلَّةِ وَالذِّلَّةِ وأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ».

‘হে আল্লাহ! আমি দরিদ্রতা, স্বল্পতা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি চাই। আরও মুক্তি চাই অত্যাচারী বা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।’[10]

॥তিন॥

«اللّٰهُمَ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ».

‘হে আল্লাহ! আমাকে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে হারাম থেকে বিরত রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহের মাধ্যমে অন্যদের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দিন।’[11]

উপকারিতা

عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ، قَالَ: أَتَىٰ عَلِيًّا h رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا أَمِيْرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ، إِنِّيْ عَجَزْتُ عَنْ مُكَاتَبَتِيْ فَأَعِنِّيْ، فَقَالَ عَلِيٌّ h: أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيْهِنَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ، لَوْ كَانَ عَلَيْكَ مِثْلُ جَبَلِ صِيْرٍ دَنَانِيرَ لادَّاهُ اللهُ عَنْكَ، قُلْتُ: بَلَىٰ. قَالَ: قُلْ: «اللّٰهُمَ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ».

‘হযরত আবু ওয়ায়িল (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার হযরত আলী (রাযি.)-এর কাছে একজন চুক্তিবদ্ধ দাস এসে বলল, আমি চুক্তির ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে পড়েছি, অতএব আমাকে সাহায্য করুন। তখন তিনি তাকে লক্ষ করে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দেব  না, যা আমাকে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তোমার ঘাড়ে পাহাড় পরিমাণ ঋণও থাকে আল্লাহ তাআলা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। অতঃপর তিনি উক্ত দুআটি পাঠ করলেন।’[12]

॥তিন॥

«اللّٰهُمَ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْـهَمِّ وَالْـحَزَنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْـجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ».

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে। আর আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।’[13]

উপকারিতা

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ، قَالَ: دَخَلَ رَسُولُ اللهِ ذَاتَ يَوْمٍ الْـمَسْجِدَ، فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، يُقَالُ لَهُ: أَبُوْ أُمَامَةَ، فَقَالَ: «يَا أُمَامَةَ، مَا لِيْ أَرَاكَ جَالِسًا فِي الْـمَسْجِدِ فِيْ غَيْرِ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟»، قَالَ: هُمُومٌ لَزِمَتْنِيْ، وَدُيُوْنٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ: «أَفَلَا أُعَلِّمُكَ كَلَامًا إِذَا أَنْتَ قُلْتَهُ أَذْهَبَ b هَمَّكَ، وَقَضَى عَنْكَ دَيْنَكَ؟»، قَالَ: قُلْتُ: بَلَىٰ، يَا رَسُولَ، قَالَ: «قُلْ إِذَا أَصْبَحْتَ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ: اللّٰهُمَ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْـهَمِّ وَالْـحَزَنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْـجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ» ، قَالَ: فَفَعَلْتُ ذَلِكَ، فَأَذْهَبَ اللهُ b هَمِّيْ، وَقَضَىٰ عَنِّيْ دَيْنِيْ.

‘হযরত আবু সাইদ আল-খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, একবার প্রিয় রাসূলুল্লাহ (সা.) মাসজিদে প্রবেশ করে আবু উমামা নামক এক সাহাবীকে সেখানে দেখতে পেলেন। তখন তাকে বললেন, ‘হে আবু উমামা! কী ব্যাপার, এই অসময়ে তুমি মাসজিদে কেন?’ তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সীমাহীন দুশ্চিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব  না যা তুমি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তোমাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করবেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন?’ তিনি বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তাকে উক্ত দুআটি শিখিয়ে দিলেন। হযরত আবু উমামা (রাযি.) বলেন, আমি তাই করলাম, ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দুর করে দিলেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করলেন।’[14]

[1] আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:২৬

[2] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:১৫৫

[3] আল-কুরআন, সুরা আর-রূম, ৩০:৪১

[4] আল-কুরআন, সুরা নুহ, ৭১:১০Ñ১২

[5] ইবনে কসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯৮ খ্রি.), খ. ৮, পৃ. ২৪৬

[6] আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৮৫, হাদীস: ১৫১৮

[7] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৫, পৃ. ৪৫৬, হাদীস: ৩৩৭৩, হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত

[8] আল-কুরআন, সুরা গাফির, ৪০:৬০

[9] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫২১, হাদীস: ৭৫৮

[10] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৯১, হাদীস: ১৫৪৪

[11] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৫, পৃ. ৫৬০, হাদীস: ৩৫৬৩

[12] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৪৩৮, হাদীস: ১৩১৯

[13] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৯৩, হাদীস: ১৫৫৫

[14] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৯৩, হাদীস: ১৫৫৫

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ