জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

সালাত-নামায

সমস্যা: তাশাহহুদ পড়ার সময় আঙুল দিয়ে ইশারা করার সঠিক পদ্ধতি কী? বিশেষ করে জানতে চাই আঙুল দ্বারা ইশারার হুকুম কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মোশাররফ করীম

উত্তরা, ঢাকা

সমাধান: হানাফী মাযহাব মতে তাশাহহুদ পড়ার সময় আঙুল দিয়ে ইশারা করা সুন্নাত। ইশারা করার সময় এবং পদ্ধতি হল, ‘যখন মুসল্লী তাশাহহুদ পাঠ করে أشهد أن لا إله পর্যন্ত পৌঁছে, তখন ডান হাতের আঙুলকে গোলাকার বৃত্ত বানাতে হবে। গোলাকারের নিয়ম হলো, ‘বৃদ্ধাঙ্গুল এবং মাধ্যমা দ্বারা গোলাকার করবে আর অনামিকা ও কনিষ্ঠাকে মিলিয়ে রাখবে। যখন لا إله বলবে তখন তর্জনী অর্থাৎ শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। যখন إلا الله বলবে, তখন তাকে নিচে নামাবে। কোন কোন ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন গোলাকার অবস্থা শেষ পর্যন্ত বজায় রাখবে। মিরকাত: ২/৫৭৫, বাযলুল মাজহূদ: ২/১২৮, ফাতাওয়ায়ে আলগীরী: ১/৭৪, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/২১৮

সমাস্যা: শেষ বৈঠক না করে যদি কেউ দাঁড়াতে শুরু করা অবস্থায় (শেষ বৈঠকের কথা) স্মরণ হওয়ায় পুনরায় বৈঠকে ফিরে আসলে তার নামাযটি শুদ্ধ হবে কি? এক্ষেত্রে ‘বসার নিকটবর্তী’ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? অর্থাৎ কী পরিমাণ দাঁড়ালে বসার নিকটবর্তী বলে গণ্য করা হবে?

ইসমাঈল

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সমাধান: শেষ বৈঠক না করে কেউ দাঁড়াতে শুরু করাবস্থায় শেষ বৈঠকের কথা মনে হয়ে গেলে যদি বৈঠকে ফিরে আসে, তাহলে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে তার অবস্থা যদি দাঁড়ানোর নিকটবর্তী হয়, তাহলে তার ওপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। আর যদি বসার নিকটবর্তী হয়, তাহলে তার ওপর সিজদয়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। দাঁড়ানো বা বসার নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। যেমন- ১. শরীরের উপরের অংশ ঝুকে থাকা অবস্থায় যদি নিচের অংশ পরিপূর্ণ সোজা হয়ে যায়, তাহলে দাঁড়ানোর নিকটবর্তী, অন্যথায় বসার নিকটবর্তী। আল্লামা ইবনে হুমাম (রহ.) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন। ২. দুই হাটুর ওপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে দাঁড়ানোর নিকটবর্তী, অন্যথায় বসার নিকটবর্তী। কাযীখাঁনসহ বিভিন্ন ফতওয়ার কিতাবে وعليه الاعتماد (নির্ভরযোগ্য) বলা হয়েছে। ৩. কোন কোন বর্ণনায় উভয় নিতম্ব জমিন থেকে উঠার সাথে সাথে যদি উভয় হাটুও উঠে যায়, তাহলে দাঁড়ানোর নিকটবর্তী অন্যথায় বসার নিকটবর্তী বলা হয়েছে। মাবসুতে সারখসী: ১/৩৪৯, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৪০২, বিনায়া: ২/৬১৭, কাযীখাঁন:১/৯, ফতহুল কাদীর: ১/৪৪

সমস্যা: কোন মসজিদে প্রথম জামায়াত হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের সমাজে মতানৈক্য দেখা যায়। অর্থাৎ কেউ কেউ দ্বিতীয় জামায়াত করাকে উত্তম বলেন। আবার অনেকে দ্বিতীয় জামায়াত না করে একাকী পড়াকে উত্তম বলেন। এই ব্যপারে সঠিক সিদ্ধান্ত কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

নিজামুদ্দীন

পোকখালী, কক্সবাজার

সমাধান: মহল্লার মসজিদে মহল্লাবাসী আযানের সহিত জামায়াতে নামায আদায়ের পর দ্বিতীয় জামায়াত করা সকলের মতেই মাকরুহ। অন্যথায় ১. মসজিদ যদি রাস্তার পাশে হয়ে মুসলীস্ন নির্দিষ্ট না থাকে, ২. ইমাম মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট না থাকে, ৩. নিজের মহল্লা ব্যতিত অন্য মহল্লার মুসল্লিরা নামায আদায় করে ফেল্লে, ৪. নিজ মহল্লার মুসল্লীরা আযান ব্যতিত নামায আদায় করে ফেল্লে। উল্লিখিত চার অবস্থায় দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরুহ নয়। ’লাউস সুনান: ৪/২৪৮, বাযলুল মাজহূদ: ৪/১২১, তাতারখানিয়া: ২/১৫৫, ইমদাদুল ফাতওয়া: ১/৩৬৪

 

মুআমালাত বা লেনদেন

সমস্যা: কক্সবাজার আলির জাহালে আমরা তিন ভাই মিলে যৌথভাবে জমি ক্রয় করে ছোট ভাইকে রেজিস্ট্রির দায়িত্ব দিয়ে আমি বিদেশে চলে যাই। দুখঃজনক ব্যাপার হলো, সে সম্পূর্ণ জমিটি তার নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, উক্ত জমিতে আমরা আমাদের ক্রয়কৃত অংশের অংশিদার হবো কি? নাকি এককভাবে তার নিজের নামে রেজিস্ট্রির কারণে সে একাই তার মালিক হবে?

মুহাম্মদ রমযান আলী

পোকখালী

সামাধান: শরীয়তে ক্রয়সূত্রে মালিকানা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সন্তুষ্টিতে শুদ্ধভাবে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হওয়াই যথেষ্ট। (রেজিস্ট্রিতে নাম থাকার কোনোই প্রয়োজন নেই। কেননা রেজিস্ট্রি হলো মালিকানার প্রমাণপত্রমাত্র। শরীয়তে মালিকানা লাভের ক্ষেত্রে প্রচলিত রেজিস্ট্রির কোনই গ্রহণযোগ্যতা নেই।) সুতরাং যেহেতু আপনারা তিন ভাই যৌথভাবে উক্ত জমিটি ক্রয় করেছেন, তাই আপনাদের তিনজনের প্রত্যেকেই আপন আপন টাকার অংশহারে তাতে অংশিদার হবেন। হিদায়া: ৩/১২, দুররুল মুখতার আলাশ শামী: ৭/১৬, ফতওয়ায়ে হককানিয়া: ৬/৩২

সমস্যা: মুহতারাম, বিগত ১৯৭৭-১৯৭৮ ইংরেজি সনে সরকারি খাস জমি বন্দবস্ততে এলাকার মাতাব্বর টাইপের কিছু লোক ভূমিহীন মানুষের নাম দিয়ে সরকারি জমি বন্দবস্ত করিয়ে নেয়। এরা তখন হতে আজপর্যন্ত উক্ত জমি ভোগ-দখল করে খাচ্ছে। এখন এলাকার সেসব ভূমিহীন মানুষ তাদের নামে দেয়া সরকারি বন্দবসেত্মর জমি ফেরত পেতে চায়। এ অবস্থায় শরীয়ত মতে তা তাদের জন্য হালাল হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করুন।

সমাধান: সরকারি খাস জমির মালিক হলো সরকার। তাই সরকার কর্তৃক যাদের নামে যে জায়গা বন্দবস্ত নেওয়া হয়েছে; তারাই ওই জায়গার হকদার। এবং যারা তাদের বন্দবস্তকৃত জমি জবরদখল করে রেখেছে, তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে জালেম ও অপরের হক আত্মসাৎকারী। তাই যাদের নামে সরকারি খাস জমি বন্দবস্ত করা হয়েছে, তারা যদি তাদের নামে বন্দবস্তকৃত জমি যেকোনোভাবে দখল করার চেষ্টা করে, তাদের জন্য বৈধ ও জায়েয হবে। কেননা হকদারের হক উসূল করার চেষ্টা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয ও বৈধ। আল-কুরআনুল করীম, সূরা আন-নিসা: ২৯, বুখারী শরীফ: ১/৩৩, মুসলিম শরীফ: ২/৩২, শুআবুল ঈমান: ৪/৩৮৭, আদ-দুররুল মুখতার: ৯/২৯১, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ২/১৬৭

সমস্যা: একজন কাপড় ব্যবসায়ী তার দোকানে কাপড় উঠানোর জন্য আমার কাছে কিছু টাকা চায়। আমি তাকে এক লক্ষ টাকার কাপড় ক্রয় করে আনার জন্য আমার পক্ষ থেকে উকিল নিয়োগ করে খরচসহ এক লক্ষ টাকা দেই। কয়েক দিন পর সে আমাকে এক লক্ষ টাকার কাপড় বুঝিয়ে দেয়। মাল বুঝে পাওয়ার পর এক বৎসর পর মূল্য পরিশোধের শর্তে তার কাছেই কিছু ‘বেশি মূল্যে বাকিতে বিক্রি’ করে দেই।

জানার বিষয় হলো, উল্লিখিত বিনিয়োগ পদ্ধতিটি শরীয়ত সম্মত কি-না? শরয়ী প্রমানাদির আলোকে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

বি. দ্র. শরীয়তের হালালকে হারাম, হারামকে হালাল মনে করার হুকুম কী? উল্লিখিত বিনিয়োগ পদ্ধতিকেই বা হারাম মনে করার বিধান কী?

মাওলানা কাউসার আহমদ

শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া কচুয়া, চাঁদপুর

সমাধান: উল্লিখিত বিনিয়োগ পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত, জায়েজ ও বৈধ। কেননা শরীয়তে (ক্রেতা-বিক্রেতার সন্তুষ্টিতে) বাকিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে কোন বস্তুকে তার আসল (বর্তমান বাজার) মূল্য থেকে ‘বৃদ্ধি মূল্য’ নির্ধারণ করে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ ও বৈধ। আমাদের সকল ফতওয়ার কিতাবে তা স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। তবে উল্লিখিত ক্ষেত্রে মাল হস্তান্তর না করে শুধুমাত্র রশিদের মাধ্যমে লেনদেন করলে তা জায়েয হবে না।

শরীয়তে যা স্পষ্টরুপে হারাম তাকে হালাল মনে করা এবং যা স্পষ্টরুপে হালাল তাকে হারাম মনে করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ। হয়। তাই উপরোল্লিখিত বিনিয়োগ পদ্ধতিকে হারাম মনে করা শরীয়ত সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয়। তিরমিযী শরীফ: ১/২৩৩, মাবসুতে সারখসী: ১৩/৮, , ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৫৩১, তাফসীরে ইবনে কসীর ২/৪৩২

সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, একজন চাষী বললো, আমাকে ২০,০০০ টাকা দিন, আপনি এই টাকা দাদান হিসেবে হিসাব করুন। বিনিময়ে আমি আমার সুপারি বাগান হতে যা পাবো তা থেকে প্রতি পিসে এক টাকা করে দেবো। আমার বাগান হতে ২০০০/৫০০/১৫০০ যা সুপারি পাবো, তা থেকে কমিশনটা আপনাকে দিয়ে দেবো। আর বছর শেষে আমি আপনার ২০,০০০টাকা পরিশোধ করবো। এখন আমার জানার বিষয় হলো উক্ত কমিশন পদ্ধতিটি কতটুকু জায়েয?

আতাউর রহমান

ataurrahman506070@gmail.com

সমাধান : এই বিনিয়োগ পদ্ধতির মধ্যে প্রথমেই যেই বিশ হাজার টাকা কর্জ নেওয়া হয়েছে, তার বিনিময়ে প্রতি পিস সুপারি থেকে এক টাকা করে মুনাফা দেওয়ার যে চুক্তি করা হয়েছে, উক্ত মুনাফাগুলো সুদ হিসেবে গণ্য হবে এবং তা নাজায়েয ও হারাম হবে। এটি শরীয়তসম্মত ও বৈধ পদ্ধতি নয়, বরং মুনাফা লাভের অবৈধ পদ্ধতি। সহীহ মুসুলিম: ২/২৭, আহকামুল কুরআন: ১/৪৬, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৪/৪০৮

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: আমার স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া-বিবাদ হওয়ার কারণে সে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করেন। এক পর্যায়ে আমাকে জেলেও যেতে হয়। কিছুদিন পূর্বে আমি জেল থেকে জামিনে এসে মোবাইলে তাকে তালাক দেই। আমি মোবাইলে তার মাতা-পিতার নাম উল্লেখ করে তাকে এক তালাক, দুই তালাক ও তিন তালাক বলি এবং তিনজন সাড়্গীও উপস্থিত ছিলো। আমার স্ত্রী বলছে যে, যখন সে প্রথম তালাক শব্দটি শুনে তখন সে মোবাইল অন্যকে দিয়ে দেয়। বর্তমানে আমার তিন সন্তান আছে। তাদের জন্য এবং অন্যান্য কারণে তাকে ঘরে রাখতে হচ্ছে। এখন জানার বিষয় হলো, শরীয়ত অনুযায়ী আমার স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হয়েছে কি? যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে পুনরায় ঘর-সংসার করার কোন ব্যবস্থা আছে কি? আর আমার স্ত্রীর ইদ্দত তালাক দেওয়ার পর থেকে গণনা হবে, নাকি তালাক পতিত হওয়ার পরেও তার সাথে সহবাস ইত্যাদির পর থেকে তালাকের ইদ্দত ধর্তব্য হবে?

কামাল উদ্দীন

চট্টগ্রাম

সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় আপনি যখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিস্কার ভাষায় আপনার স্ত্রীকে তার মা-বাবার নাম ধরে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছেন। তাই উক্ত তিন তালাক আপনার স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সমপর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক শব্দ স্ত্রী শুনুক বা না শুনুক। স্বামী স্ত্রীর উদ্দেশ্যে তালাক শব্দ উচ্চারণ করলে স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হয়ে যায়। তালাক দেওয়ার পর থেকে আপনাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করা পরিষ্কার হারাম ও যিনা হিসেবে গণ্য হয়েছে। এর জন্য আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হয়ে কান্নাকাটি করে খাঁটি তাওবা করে নিতে হবে অন্য স্বামীর সংসার করা ব্যতীত আপনারা পুনরায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর তালাকের ইদ্দত তালাক দেওয়ার পর থেকে গণনা করা হবে। আপনাদের মেলামেশার পর থেকে নয়। সূরা আল-বাকারা: ২৩০, বুখারী শরীফ: ২/৭৯১, আবু দাউদ শরীফ: ২/২৪২, ফতওয়ায়ে শামী: ৬/২০০

সমস্যা: আমি ও আমার স্ত্রী সুন্দর স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছি। বর্তমানে আমাদের দেড় বছরের এক ছেলে সন্তান আছে। বিগত ৩ মাস পূর্বে আমরা উভয়ে আমার স্ত্রীর এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। যাওয়ার পথে আমার স্ত্রীকে পর্দা রক্ষা করতে বললে সে পর্দার বিষয়ে আমার সাথে বাড়াবাড়ি করে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং রাগ্রত সুরে তালাক চেয়ে বলে উঠে ‘আমাকে তালাক দাও’। তখন প্রচণ্ড আমার রাগ এসে যায়। এক পর্যায়ে ভীষণ রাগান্বিত অবস্থায় তাকে ৩ তালাক প্রদান করি এবং তার বাপের বাড়িতে দিয়ে আসি। এ অবস্থায় শরীয়ত মতে আমাদের পুনরায় সংসার করতে করণীয় কী? সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

সাইয়েদুল আমীন

নীলফামারী

সমাধান: শরীয়তে স্বামী কর্তৃক তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর সাধারণ চরম রাগ স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হওয়ার মধ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনা। কেননা আমাদের দেশে প্রায় তালাক‘ই স্বামীর চরম রাগের সময় দেওয়া হয়ে থাকে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত ঘটনায় আপনি যখন আপনার রাগের সময় স্ত্রীকে পরিস্কার ভাষায় তিন তালাক প্রদান করেছেন, তাই উক্ত তিন তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে তদের বিয়ে বন্ধন সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক দেওয়ার পর থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করা পরিস্কার হারাম ও নাজায়েয। এখন অন্য স্বামীর সংসার করা ব্যতীত তদের পুনরায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সূরা আল-বাকারা: ২৩০, বুখারী শরীফ: ২/৭৯১, আবু দাউদ শরীফ: ২/২৪২, ফতওয়ায়ে শামী: ৬/২০০, বাদায়িউস সানায়ি ৪/১৮৭, রদ্দুল মুহতার, ৩/২৬৮

সমস্যা: এক প্রবাসী তার স্ত্রীর ওপর রাগ করে লিখিতভাবে তিন তালাক দিয়ে লেখাটা বড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সে দেশে আসার কিছুদিন পর ধীরে ধীরে স্ত্রীর সাথে কথা-বার্তা, থাকা-খাওয়া সব রীতিমতো শুরু করে দেয়। এ খবর সমাজের গণ্যমান্য লোকদের নিকট পৌঁছলে তারা জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার মুফতী সাহেবের কাছে ফতওয়া চায়। ১০,০০০ টাকা দামের ফতওয়া আসে, তিন তালাক দিলেও কেবল লেখা হওয়ার কারণে তালাক কার্যকর হবে না। সুতরাং এক সাথে থাকা-খাওয়া সব কিছু বৈধ হবে। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে (তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য) লেখা ও মুখে উচ্চারণ উভয়টা জরুরি, নাকি যেকোনো একটাই তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য যথেষ্ট? এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

ইরফান এনায়েতুল্লাহ

চট্টগ্রাম

সমাধান: শরীয়তে সী্ত্রকে মৌখিক ভাবে তালাক দিলে যেমন তালাক পতিত হয়, একইভাবে স্বেচ্ছায় স্ত্রীকে লিখিত আকারে তালাক দিলে উক্ত তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নে উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী যখন কারো বাধ্যবাধকতা ব্যতীত স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিখিতভাবে তিন তালাক দিয়েছে, তা উক্ত তিন তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। লিখিতভাবে স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘরসংসার করা পরিস্কার হারাম। অন্য স্বামীর সংসার ব্যতিত তাদের পুনরায় বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য এতে আমাদের চার ইমাম ও ইমাম বুখারী এবং অন্যান্য ফকীহগণের ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে। প্রশ্নপত্রে জামিয়া আহমদিয়া কর্র্তৃক লিখিত তালাক দিলে তালাক পতিত না হওয়ার মর্মে যে ফতওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে ফতওয়া একেবারে ভিত্তিহীন, ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ফতওয়া অনুযায়ী আমল করা পরিস্কার হারাম। আদ-দুররুল মুখতার: ৪/৪৫৬, শামী: ৪/৪৫৬, হিন্দিয়া: ১/৩৭৮, বাদায়িউস সানায়ি: ৩/১৮৭

সমস্যা: আমি একজন মুসলিম হিসেবে কোনো মহিলার সাথে খারাপ সম্পর্কে জড়িত হওয়াকে খুব বেশি ভয় করতাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, একজন মহিলার আচার-ব্যবহার খুব বেশি ভালো লাগার ফলে তার সাথে গভীর ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে আমি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসি। সে আমার প্রস্তাবে বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করলে আমরা দুজন কিছু সংখ্যক সাড়্গীর উপস্থিতিতে শরীয়া মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন করি। আমাদের বিয়ের কথা আমার মা না জানলেও আমাদের সম্পর্কের কথা তার জানা ছিলো। তাই কথার মাঝে একদিন আমার মা মহিলাটির মায়ের কয়েকটি দোষত্রুটি উল্লেখ করে বললেন, তার মেয়ে আমার ছেলের যোগ্য নয় এবং তার সাথে আমার ছেলের বিয়ে কোনো দিন হতে পারে না। এ অবস্থায় আমার মা কে সান্তনা দিতে গিয়ে বলে ফেললাম, ‘তার মাকে ৭ তালাক এবং তাকে ১৪ তালাক।’ এসময় আমি তালাক দিলাম শব্দটি উচ্চারণ করেছি কিনা আমার এখন স্মরণে আসছে না। এরপরও প্রায় ২০ দিন আমাদের শারীরিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো। কারণ তালাক হওয়া-না হওয়ার ব্যাপারে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিলো না। হঠাৎ একদিন এ ব্যাপারে একজন আলেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘সমস্যা আছে।’ এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমার সেই উক্তি দ্বারা তালাক পতিত হয়েছে কি না? যদি তালাক পতিত হয়, তাহলে পুনরায় তাকে বিয়ে করা যাবে কিনা? গেলে, তার পদ্ধতি কী?

শওকত ওসমান

মহেশখালী

সমাধান: স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক শব্দ উচ্চারণ করলে তালাক পতিত হয়ে যায়। ‘দিলাম’ শব্দ বলার প্রয়োজন হয় না। প্রকাশ্য তালাক শব্দ উচ্চারণ করলে যে নিয়ত থাকুক না কেনো, স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হয়ে যায়। সুতরাং উক্ত ঘটনায় স্বামী মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ‘১৪তালাক’ শব্দ ব্যবহার করেছে। তন্মধ্যে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক দেওয়ার পর তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা হারাম। বিশুদ্ধ শরয়ী হালালা ব্যতীত তাদের পুনরায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

শরয়ী হালালা পদ্ধতি: উক্ত তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত তথা তিন হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর কিংবা স্ত্রী গর্ভবর্তী হলে, প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অথবা স্ত্রী মাসিকবন্ধ নারী হলে, প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর। উক্ত স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে কমপক্ষে দুই সাড়্গীর উপস্থিতিতে এবং কমপক্ষে মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ তিন হাজার টাকা মহর নির্ধারণ করে শরীয়তসম্মতভাবে আকদে নিকাহ সম্পন্ন করতে হবে। অতঃপর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস ইত্যাদির পর সে যদি তাকে বায়েন তালাক দেয় এবং উপর্যুক্ত নিয়মে সেই তালাকের ইদ্দত পালন করার পর প্রথম স্বামীর সাথে যদি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাহলে পুনরায় শরয়ী পদ্ধতিতে বিয়ে করতে পারবে। অন্যথায় কোনো সুযোগ নেই। সূরা আল-বাকারা: ২৩০, আবু দাউদ: ২/৭৯১, বাদায়িউস সানায়ি : ৩/২৫০, হিদায়া: ২/৩৭৯

বিবিধ প্রসঙ্গ

সমাস্যা: আমি রোগীদের সেবার লক্ষে স্বেচ্ছায় একটি সেবামূলক সংস্থায় (সিটিজি ব্যাংকে) কাজ করি। এখানে যে সকল রোগীদের রক্তের অতীব প্রয়োজন হয় তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। এখন আমাদের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেন মরণোত্তর (মৃত্যুকালে) চড়্গু দান করতে পারবে। এ বিষয়ে আমাদের মেম্বারদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কেউ বলেন জায়েয, কেউ বলে নাজায়েয। যারা জায়েয বলেন, তারা তিনটি শর্তে জায়েয বলেন। শর্তগুলো হলো: ১. যাকে দান করবে তার অতীব প্রয়োজন হতে হবে। ২. টাকার বিনিময়ে না হতে হবে। ৩. ডাক্তারের পরামর্শক্রমে হতে হবে। তারা এ ব্যাপারে কিছু স্কলারদের উক্তিও পেশ করে থাকেন। যেমন- ড. যাকির নায়েক, মুফতী মিযানুর রহমান আযহারী, সালেহ আল-মুনাজ্জিদ। এখন মুফতিয়ানে কেরামের নিকট প্রশ্ন হলো, জীবিত ও মৃত অবস্থায় শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা জায়েয আছে কি না?

ইমাম হোসাইন

রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম

সমাধান: শরীয়তে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিশেষ করে মুসলিম জাতিকে অন্যসব জাতির ওপর বিশেষ সম্মান দান করেছেন এবং মানুষকে ভালো মন্দ পার্থক্যের যে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন তা অন্য কোন সৃষ্টি জাতিকে দেননি এবং অন্য সৃষ্টি জাতির ওপর মানুষের কর্তৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু মানুষকে যে আত্মা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন তা মানুষের মালিকানায় নয়, বরং তা মানুষের কাছে আমানতস্বরূপ| সেসবকে আল্লাহ তাআলার হুকুম মতো ব্যবহার করলে মানুষ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হয় এবং সাওয়াব ও প্রতিদান পায়। আর অপব্যবহার করলে শাসিত্ম ভোগ করতে হয়। তাই একজন মানুষের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার জীবিত থাকা অবস্থায় বা মৃত্যুকালীন সময় হেবা, দান ও বেচা-বিক্রি করা জায়েয ও বৈধ নয়। বরং হারাম ও নাজায়েয। এমনকি কিডনি, চড়্গু ইত্যাদিও অপরকে দান করা বা বেচা-বিক্রি করা নাজায়েয ও হারাম। কেননা মানুষ সেসবের মালিক নয়। শুধুমাত্র মানুষকে সেগুলো ব্যবহার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে মাত্র। দেশিয় প্রবাদ-প্রবচনের ভাষায় যাকে বলে, ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা করা।’ যা শরীয়তের বিধান নয়। তাই শুধুমাত্র বিশেষ ঠেকাবশত একজনের রক্ত অন্যজনের জন্য (যদি তার উপকার হয়) হেবা বা দান করাকে দুধ পানকারী শিশু মাতার দুধপান করার সাথে তুলনা করে মুফতিয়ানে কেরাম তাকে জায়েয বলেছেন। কেননা অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের গবেষণা মতে, রক্ত দান করার সময় মানবদেহে অপমানজনক কোন আঘাতের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তাও বেচা- বিক্রি করা হারাম ও নাজায়েয। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.) সহীহ হাদীস শরীফে মহিলাদের একজনের চুল লম্বা থাকলে অপর মহিলার চুল না থাকলে বা কোন রোগের কারণে চুল কমে গেলে একে অপরকে কিছু চুল কেঁটে দান করা থেকে নিষেধ করেছেন। তাই প্রশ্নপত্রে যারা মরণোত্তর চড়্গু দানকে নাজায়েয বলেছেন, তাদের কথাই সঠিক ও শরীয়তসম্মত। প্রশ্ন পত্রে ডা. জাকির নায়েকদের যে ফাতওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা তারা অন্য বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও ফিকহী মাসায়েল সম্পর্কে তারা অভিজ্ঞ নয়। তাই এ ব্যাপারে তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তাদের কথা কিছুতেই দলীল হতে পারে না। সুরা আল-আসরা: ৭০, শরহুন নববী: ২/২০৪, কাযীখান: ৩/৪০৪, বাহরুর রায়িক: ৬/৮১, জাওহারুল ফিকাহ: ৭/৪৬

সমাস্যা: এক ব্যাক্তি মান্নত করেছে, ‘আমার অমুক কাজটা হয়ে গেলে আমি একটি কুরআন শরীফ দান করব।’ এখন আমার জানার বিষয় হলো, যদি উক্ত কাজ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কুরআন শরীফ দান করা ওয়াজিব হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

শিক্ষক

চাম্বল মাদরাসা, বাঁশখালী

সমাধান: শরীয়তে মান্নত করা জায়েয। কিন্তু মান্নতের সহীহ হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। যথা- ১. মান্নত আল্লাহর নামে হতে হবে। ২. মান্নত ইবাদতে মাকসুদার ওপর (করলে গ্রহণযোগ্য হবে, না হয় মান্নত গ্রহণযোগ্য) হবে না। ৩. ফরয এবং ওয়াজিবের মত ইবাদত হতে হবে। যেমন- নামায, রোযা, হজ, কুরবানী ইত্যাদি। আর যদি ফরয, ওয়াজিবের মত না হয়, তাহলে মান্নত শুদ্ধ হবে না। যেমন- খতমে কুরআন, ওযু, ওয়ায মাহফিল করার মান্নত ইত্যাদি। সুতরাং ওই ব্যক্তির মান্নত শুদ্ধ হয় নাই তাই তার ওপর কোন কিছু করা জরুরি না। কেননা ‘আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে একটি কুরআন শরীফ দান করব।’ বাক্যটি দ্বারা মান্নতই হয় না। তাই তা পূর্ণ করা ওয়াজিব নয়। তবে তিনি যদি চান, তাহলে শুকরিয়া স্বরূপ গরীব-দুঃখী কাউকে একটি কুরআন শরীফ দান করতে পারবেন। বুখারী শরীফ: ৬৬৯৬, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/৩৮, ফাতাওযায়ে আলমগীরী: ২/১৬, বাহরুর রায়েক: ৪/২৯৬, মিনহাতুল খালেক: ৪/২৯৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ