জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব

কামরুল হাসান

মহাবিশ্বের (Universe) কোন এক গ্যালাক্সির কোন এক সৌরজগতের পৃথিবী নামক এক গ্রহে মনুষ্য জাতির বসবাস। পুরো মহাবিশ্ব কত বড় তা আমাদের কল্পনার অতীত। বর্তমানে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ২৮ বিলিয়ন পারসেক অর্থাৎ তা ৯১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের সমপরিমান। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস বিশাল এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বৎসর পূর্বে সংঘটিত এক মহাবিস্ফোরণের (Big Bang) ফলে। তারকা ও ছায়াপথগুলো আকার ধারণ করতে শুরু করে ৩০০ মিলিয়ন বৎসর পরে। সূর্য় জন্ম নেয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন বৎসর পূর্বে, অন্যদিকে পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাব প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন বৎসর পূর্বে।

কিন্তু মহাবিস্ফোরণ ঘটল কিভাবে? সুচারূ নিয়ম-নীতির গণ্ডিতে তা আবদ্ধ করল কে? বসবাস উপযোগী পৃথিবী ও সেখানে জীবনের সৃষ্টি সে তো অসম্ভাব্যতার সমুদ্রে সম্ভাবণার একটা কণা। তাহলে কে এসব সূক্ষ্ম জটিল হিসেবের মধ্য থেকে এসব বের করে নিয়ে এসেছে? নাকি এমনি এমনি সব হয়েছে? কিন্তু, কারণ ছাড়া কি কার্য় হয়? যদি না হয়, তবে কেন এবং কিভাবে এটি সৃষ্টি হল, আর কে বা কারা্‌ এসব সৃষ্টি করল? এসব শুধু আমাদের নয়, আদিকাল থেকেই মানুষের জিজ্ঞাস্য। আর তাই সংগত কারণেই এ আর্টিকেলে আমার আলোচ্য বিষয় মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে।

বেদের আলোকে

ঋগবেদ ১০/১২৯/১

নাসাদাসিস নঃ সদাসিত্‌ তদানীম নাসিদ রজ ন ব্যামাপ্রো যৎ…।

‘শুরুতে কোন অসিত্মত্ব (সৎ) বা অনসিত্মত্ব (অসৎ) ছিল না। সেখানে ছিল না কোন বায়ুম-ল।’

ঋগবেদ ১০/১২৯/৩

তম অসিৎ তমস… তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম।

‘চারদিক ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। সমস্ত জিনিস একত্রে পুঞ্জিভূত ছিল। সেখান থেকে প্রচ- তাপের সৃষ্টি হল।’

একইভাবে

ঋগবেদ ১০/১২১/১

হিরন্যগর্ভ সামাভরতাগ্রে..

‘প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টি হল।’

ঋগবেদ ১০/১২১/৭

আপ হ য়দ বৃহাতিরিবিশ্বমা য়ান গর্ভম…।

‘সেই হিরন্যগের্ভ ছিল উত্তপ্ত তরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ।

একই ধরনের কথা বলছে,

শতপথ ব্রাক্ষ্মণ ১১.১.৬.১

হিরন্যগর্ভানি অপঃ তে সলিলা…।

‘প্রথমে হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল। সেখানে ছিল উত্তপ্ত গলিত তরল। এটি ছিল মহাশুন্যে ভাসমান। বছরের পরবছর এই অবস্থায় অতিক্রান্ত হয়।’

ঋগবেদ ১০.৭২.২

‘তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে, বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল।’

ঋগবেদ ১০.৭২.৩

‘সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র তৈরি হল।’

ঋগবেদ ১০.৭২.৪

‘তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল।’

ঋগবেদ ১০.৭২.৮-৯

‘তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারন সম্পন্ন হল। তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।’

এ অংশটুকু পরলেই স্পষ্ট বোঝা যায় বেদের সৃষ্টিতত্ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ। সৃষ্টিতত্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল Lambda-CDM Concordance Model অনুযায়ী the evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উত্থান।’ এছাড়া বেদে উল্লেখিত বিস্ফোরণ বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত বিগ ব্যাংগ তত্তের সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।

আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। বেদের মতে সৃষ্টির শুরুতেই ওঁম উচ্চারিত হয় আর এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরন।

বেদান্ত সূত্র (৪/২২)

অনাবৃতিঃ শব্দহম।

অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু যা মাত্র দু’বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন।

বিজ্ঞানীদের দেয়া নতুন STRING THEORY অনুযায়ী প্রথমেই একটা অতিনিম্ন তড়ঙ্গ দৈর্ঘ্যের শব্দ তড়ঙ্গ তৈরি হয় যার ধাক্কায় বিস্ফোরণ শুরু হয়!

বাইবেলের আলোকে

  1. শুরুতে ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল, পৃথিবীতে কিছুই ছিল না।
  2. অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির ওপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
  3. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘আলো ফুটুক!’ তখনই আলো ফুটতে শুরু করল।
  4. আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভালো। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন।
  5. ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, ‘দিন’ এবং অন্ধকারের নাম দিলেন ‘রাত্রি।’ সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
  6. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশম-লের ব্যবস্থা হোক।’
  7. তাই ঈশ্বর আকাশম-লের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশম-লের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশম-লের নীচে থাকল।
  8. ঈশ্বর আকাশম-লের নাম দিলেন ‘আকাশ।’ সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
  9. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।’ আর তা-ই হল।
  10. ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, ‘পৃথিবী’ এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, ‘মহাসাগর।’ ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভালো হয়েছে।
  11. তখন ঈশ্বর বললেন, ‘পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।’ আর তাই-ই হল।
  12. পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উৎপন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভালো হয়েছে।
  13. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
  14. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
  15. পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।’ এবং তা-ই হল।
  16. তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
  17. পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
  18. দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্‌ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভালো হয়েছে।
  19. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
  20. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক।’
  21. সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এএসব প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভালো হয়েছে।
  22. ঈশ্বর এসব প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন।
  23. সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
  24. তারপর ঈশ্বর বললেন, ‘নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্‌পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।’ তখন যেমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
  25. সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরি করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
  26. তখন ঈশ্বর বললেন, ‘এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্‌ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ব করবে।’
  27. তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন।
  28. ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, ‘তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।’
  29. ঈশ্বর বললেন, ‘আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদাযী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উত্‌পাদন করে। এসব শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য।
  30. এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে যেসব কীট সবাই সেই খাদ্য খাবে।’ এবং এসব কিছুই সম্পন্ন হল।
  31. ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভালো হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।

পবিত্র কুরআনের আলোকে

هُوَ اللّٰهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ١ؕ سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ۰۰۲۳ هُوَ اللّٰهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى ١ؕ يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ۚ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُؒ۰۰۲۴

‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই, যিনি বাদশাহ, পবিত্র, নির্দোষ, ক্ষমাকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী. সংশোধক, মহান; অবিশ্বাসীগণ কর্তৃক বর্ণিত অংশীদারদের থেকে আল্লাহ পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, এর বাস্তবায়নকারী -সেই অনুযায়ী রূপদানকারী, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’[1]

وَقَالُوا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا١ۙ سُبْحٰنَهٗ١ؕ بَلْ لَّهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ كُلٌّ لَّهٗ قٰنِتُوْنَ۰۰۱۱۶ بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ١ؕ وَاِذَا قَضٰۤى اَمْرًا فَاِنَّمَا يَقُوْلُ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ۰۰۱۱۷

‘এবং তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি অতি পবিত্র, বরং আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই, সব কিছু তাঁরই একান্ত অনুগত। যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীকে অনসিত্মত্ব হতে অসিত্মত্বে আনায়ন করেন এবং যখন তিনি কিছু করবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শুধু বলেন হও, আর তা হয়ে যায়।’[2]

اِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْاَمْرَؕ ۰۰۳

‘তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন।’[3]

اَوَ لَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا١ؕ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ١ؕ اَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ۰۰۳۰

‘যারা কুফরি করে তারা কি ভেবে দেখে না যে আকাশম-লী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’[4]

اَللّٰهُ نُوْرُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِؕ ۰۰۳۵

‘আল্লাহ আকাশম-লী ও পৃথিবীর জ্যোতির ওপর জ্যোতি।’[5]

اَوَ لَمْ يَرَوْا كَيْفَ يُبْدِئُ اللّٰهُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُهٗ١ؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللّٰهِ يَسِيْرٌ۰۰۱۹ قُلْ سِيْرُوْا فِي الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللّٰهُ يُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌۚ۰۰۲۰

‘ওরা কি লক্ষ করে না, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অসিত্মত্ব দান করেন, অতঃপর তা পূনরায় সৃষ্টি করেন? নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ। বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর কিভাবে তিনি সৃষ্টিকে আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’[6]

وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ١ۖۗ وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ۰۰۳۸

‘আমরা আকাশম-লী ও পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্র্বতী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে, আমাদেরকে ‘কোন ক্লানিত্ম স্পর্শ করেনি।’[7]

আলোচনা

এ আয়াতগুলো থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় (২৯:২০), সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এক আল্লাহতাআলা তাঁর ইচ্ছায় এক মহাশক্তির (২৪:৩৫), (জ্যোতির ওপর জ্যোতি শক্তির) প্রভাবে কোন এক অজ্ঞাত সময়ে আকাশম-লী ও পৃথিবীকে (২:১১৭) অনসিত্মত্ব থেকে অসিত্মত্বে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, সৃষ্টিকে অসিত্মত্ব দানের পূর্বে (২:১১৬) আকাশম-লী ও পৃথিবী আল্লাহর অসীম শক্তির মাঝে বিলীন ছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় (১০:৩) নিয়ন্ত্রিতভাবে এই শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সৃষ্টির শুরুতে আকাশম-লী ও পৃথিবী (২১:৩০) ওতপ্রোতভাবে একত্রিত অবস্থায় ও একই রূপে বিরাজ করছিল। একদিন মহান স্রষ্টা যখন সৃষ্টিকে প্রকাশের ইচ্ছা করেন তথন থেকেই সৃষ্টিকালীন-দিনের সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে (৫০:৩৮) পর্যায়ক্রমে ছয়দিনে (এখানে ছয়দিন বলতে সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত অতিড়্গুদ্র অথবা অতি বৃহৎ অথবা অতি ড়্গুদ্র ও অতি বৃহৎ ছয়টি পর্যায়ক্রমিক সৃষ্টিকালীন সময়কালের সমাহার বুঝতে হবে।) বিভিন্ন পরিবর্তন ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আকাশম-লী, পৃথিবী এবং এদের মধ্যে অবস্থিত দৃশ্য ও অদৃশ্য সমস্ত কিছু সৃষ্টির বিষয়ে পূর্ণতা দান করেন। এরপর থেকে (২৯:১৯) আল্লাহতাআলার ইচ্ছায় ও নিয়ন্ত্রণে সৃষ্টিকালীন ছয়দিনে সৃষ্ট অদৃশ্য বিষয়সমূহ দৃশ্য অবস্থায় এবং দৃশ্য বিষয়সমূহ অদৃশ্য অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে অথবা নব নব অবস্থায় পরিগঠিত হচ্ছে মাত্র।


[1] আল-কুরআন, সুরা আল-হাশর, ৫৯:২৩Ñ২৪

[2] আল-কুরআন, সুরা আল-বাকারা, ২:১১৬Ñ১১৭

[3] আল-কুরআন, সুরা ইউনুস, ১০:৩

[4] আল-কুরআন, সুরা আল-আম্বিয়া, ২১:৩০

[5] আল-কুরআন, সুরা আন-নুর, ৩৫:১৩

[6] আল-কুরআন, সুরা আল-আনকাবুত, ২৯:১৯Ñ২০

[7] আল-কুরআন, সুরা কফ, ৫০:৩৮

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ