বুধবার-২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনয়ী ও ভদ্রতা দুর্বলতা নয়

বিনয়ী ভদ্রতা দুর্বলতা নয়

মাহমুদুল হক আনসারী

বিনয়ীভাবসম্পন্ন মানুষগুলো অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আচার আচরণ বেশ-ভূষে বিনয়ী হওয়া ভালো চরিত্র। উন্নত চরিত্র আর আচার আচরণে ভদ্রভাবে ব্যাক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে যারা ভদ্র ও বিনয়ী ব্যবহার করে তারা ছোট হয়না। এ মানুষগুলো সংখ্যায় স্বল্প হলেও তারা কিন্তু সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা পদ-পদবিতে অবস্থান করছে। ছোট থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের অবস্থান। বিনয়ী হওয়া ও প্রদর্শন করা একজন ভদ্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু এসব মানুষকে কোনোভাবে একটি গোষ্ঠী দাঁড়াতে দিচ্ছে না। সমাজের দুশ্চরিত্র সম্পন্ন দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদ-পদবি ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে কলুষিত করে তুলছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে ঘাপটি মেরে থাকা এসব দুশ্চরিত্র মানুষগুলো স্বল্পসংখ্যক সদালাপি বিনয়ী ভদ্র মানুষগুলোকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। অসৎ দুশ্চরিত্র সম্পন্ন এ মানুষগুলো প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক পদ-পদবি আকড়ে রেখেছে।

তাদের হাতে চরিত্রবান আদর্শিক নেতৃত্ব একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছে। রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনিক সেক্টর এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুশ্চরিত্র সম্পন্ন মানুষগুলো দাপটের সাথে ক্ষমতা ব্যবহার করছে। সংখ্যায় তারা স্বল্পসংখ্যক হলেও তাদের প্রতিরোধে বৃহত্তর কোনো প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিরোধ প্রতিবাদ আর তাদের ব্যাপারে প্রচলিত আইনে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকাতে ক্রমেই তারা হিংস্র হয়ে ওঠছে। রাষ্ট্রের কোনো আইন তারা মান্য করছে না। শহর থেকে অজগাঁ গ্রাম পর্যন্ত এসব মানুষের দাপট আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। শানিত্মকামী সদালাপী ভদ্র বিনয়ী শিক্ষিত ও নানা পেশার মানুষ তাদের হাতে প্রতিদিন প্রতিঘণ্টায় নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কেউ অভিযোগ করে আবার কেউ নিরবে নিভৃত্বে তা সহ্য করে অসহনীয় যন্ত্রণায় জীবন কাটায়। কিন্তু এসব ধাপ্পাবাজ ও ধান্দাবাজ তদবীরবাজদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত নয়। বিশেষ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশে জমি জমার মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এক দুই যুগ পূর্বে জমি জমার মূল্য যে পরিমাণ ছিল আজকের দিনে তার মূল্য প্রায় বিশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব কারণে ভূমিদস্যু দুশ্চরিত্রসম্পন্ন গুটিকয়েক মানুষ সমাজের সদালাপী নিরীহ শানিত্মকামী মানুষগুলোর বাড়ি ভিটা জমি জমা কেড়ে নেয়ার মহাউৎসব শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নানা খবরের কাগজের মাধ্যমে দেখা যায় প্রতিদিন কোনো না কোনে অঞ্চলে অবৈধ ভূমিদস্যুদের চক্রান্ত আর জাল-জালিয়তির মাধ্যমে পেশি শক্তি ব্যবহার করে বিনয়ী শানিত্মপ্রিয় মানুষগুলোকে নানাভাবে হয়রানিতে ফেলে সমাজকে অশান্ত করছে। এসব চক্রানেত্মর জালে মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টানসহ কোনো ধর্মের লোকজন নিরাপদ নয়। ক্ষমতার শক্তি আর রাজনৈতিক পদ-পদবি ব্যবহার করে ভূমিদস্যুরা এসব অপকর্ম চালাচ্ছে। রাষ্ট্রের সবগুলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক সেক্টর এসব অবস্থা অবগত থাকলেও ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। তাদের হাত থেকে সমাজের আদর্শিক মানুষ বুদ্ধিজীবী লেখক সাংবাদিক শিক্ষক ডাক্তার কেউই রেহায় পাচ্ছে না।

ভালো মানুষ ও আদর্শিক ন্যায়নীতির সদালাপী বিনয়ী মানুষগুলো তাদের হাতে চরমভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো এভাবে যদি সমাজ জাহেলি ও মূর্খ যুগের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে আসলে এসমাজ কোন দিকে এগুচ্ছে? আমরা কী সেই দেড় হাজার পূর্বের অন্ধকার সমাজে পুনরায় প্রবেশ করছি। যখন ছিলো না কোনো ন্যায়-নীতি কোনো চরিত্র কোনো আদর্শিক আচার অনুষ্ঠান আজকের যুগেও কী আমরা সে অন্ধকার যুগে ক্রমেই ধাবিত হচ্ছি। সে প্রশ্ন বিবেকের কাছে ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে আমি বলব গোটা পৃথিবী এখন বিজ্ঞান সাইন্স অগ্রগতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে এগিয়ে যাওয়ার মিছিলে সারা পৃথিবী প্রতিযোগীতায় মক্ত।

একদিকে পৃথিবীর মানুষ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। মাটির নিচে আর আসমান সূর্য চন্দ্রে কী আছে কী হচ্ছে তা আবিস্কার করছে। সেখান থেকে মানবজাতির কল্যাণ অকল্যাণ বের করে আনছে। মানুষ চাদের দেশে মানব জীবন মানবসমাজ তৈরি করার স্বপ্ন খুঁজছে। এ প্রান্ত হতে ওই প্রান্ত পর্যন্ত মানুষ সেকেন্ডের মধ্যেই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করছে। বিজ্ঞান মানুষকে আকাশ-কুসুম পর্যন্ত পৌঁছার শক্তি দিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা সমাজকে প্রতি ঘণ্টায় সেকেন্ডে নতুন নতুন আবিস্কারের মাধ্যমে পৃথিবী তৈরি আর ধ্বংস সবকিছুর প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। মানুষ হাতের মুঠোর মধ্যেই পৃথিবীকে দেখতে পাচ্ছে। পৃথিবীর কোনে অঞ্চলে কী হচ্ছে তা ঘরে বসেই যেনে নিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য রাজনীতি অর্থনীতি সবকিছু তথ্য প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে গোটা পৃথিবীর মানুষ জেনে যাচ্ছে। কথা হলো এতো কিছু উন্নতি অগ্রগতির মধ্যেও মানব সমাজ তাদের সেই নষ্ট চরিত্র থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। সমাজকে গুটি কয়েক নষ্ট চরিত্র সম্পন্ন মানুষ কোণঠাসা করে রেখেছে। তারাই আলোকিত সমাজের বিরোধিতা করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা সমাজের অসৎ মানুষ। তাদের পরিচয় হউক মুসলিম অথবা অন্য যেকোনো ধর্মের। তারা সমাজকে দেখাবার জন্য মসজিদমুখী হয়। আবার হজ-ওমরা করে হাজী নামাযী পদ-পদবি ব্যবহার করে। আসলে এসবের পিছনে সমাজকে ধোকা দেয়া ছাড়া আর কিছু আছে বলে মনে হয়না।

একদিকে ধর্মের বাণী প্রচার, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান লালন পালনে সামনের কাতারে থাকা এসব মানুষগুলোর মধ্যে অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে, তারা রাষ্ট্রীয় ও জনগণের অসংখ্য সম্পদ ও অধিকার লুণ্ঠন করতে। তাদের ভেশ ভূষে মনে হবে তার চেয়ে ভালো মানুষ সমাজে বিরল। কিন্তু তার ভিতর প্রবেশ করলে দেখা যাবে সে, অনৈতিক দুর্নীতি, ঘোষ আর ভূমিদস্যুও মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত। তাদের কারণে সমাজের অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রতিদিন গৃহহীন বাড়িভিটা হারাচ্ছে। তাদের দাপট প্রশাসনের নানা সেক্টরে। তারা কালো টাকা পেশি শক্তি ব্যবহার করে একশ্রেণির প্রশাসনিক কর্তাদের দলিয়ে রাখে। এভাবেই কী সমাজ চলবে? সমাজ কি এসব অন্ধকার থেকে মুক্তি পাবে না? নিরীহ শানিত্মপ্রিয় মানুষগুলোর জন্য সামাজিক আদর্শিক নেতৃত্ব এগিয়ে আসবে কী? যদি না আসে তাহলে স্বল্পসংখ্যক অসৎ দুশ্চরিত্রসম্পন্ন ধান্দাবাজ মানুষগুলো কী ক্রমেই সমাজকে গিলে খাবে? না তা হতে দেয়া যায় না। সমাজকে জাগাতে হবে সংখ্যায় শানিত্মপ্রিয় মানুষের শক্তি কম নয়। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে তৈরি করতে হবে। সদালাপী ভদ্র আইন মান্যকারী মানুষগুলোকে যেকোনো মূল্যে সুসংঘটিত করে অসৎ চরিত্র সম্পন্ন শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। অন্যথায় সমাজ পুনরায় সেই জাহেলি সমাজের দিকে ধাবিত হবে। আসুন সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে অন্যায় দুর্নীতি ভূমি দস্যুদের প্রতিরোধ করে আদর্শিক ন্যায়-নীতি সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিনয়ী ও ভদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ