শুক্রবার-১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত

সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত

মুফতী মুহাম্মদ মনসুরুল হক

 

পবিত্র কুরআনে করীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَالَتْ اَوْدِيَةٌۢ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا١ؕ وَمِمَّا يُوْقِدُوْنَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَآءَ حِلْيَةٍ اَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهٗ١ؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللّٰهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ١ؕ۬ فَاَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَآءً١ۚ وَاَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْاَرْضِ١ؕ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللّٰهُ الْاَمْثَالَؕ۰۰۱۷

‘তিনি (আল্লাহ) আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, ফলে নদীনালা আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্লাবিত হয়েছে, তারপর পানির ধারা স্ফীত ফেনাসমূহ উপরিভাগে তুলে এনেছে। রকমের ফেনা সেই সময়ও ওঠে, যখন লোকে অলংকার বা পাত্র তৈরির উদ্দেশ্যে আগুনে ধাতু উত্তপ্ত করে। আল্লাহ এভাবেই সত্য মিথ্যার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছে যে, (উভয় প্রকারে) যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। রকমেরই দৃষ্টান্ত আল্লাহ বর্ণনা করে থাকেন।[1]

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুটি দৃষ্টান্ত বা উপমা পেশ করেছেন। উল্লেখিত দৃষ্টান্তদ্বয়ের দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে বাহ্যিক দিক, আর অপরটি হচ্ছে অভ্যন্তরীন দিক। অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরাম উল্লেখিত উপমাদ্বয়ের তত্ত্ব, রহস্য ও এর অভ্যন্তরীন দিকটিকে গ্রহণ করেছেন। মুফতী আযম মুফতী শফী সাহেব (রহ.) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাআরিফুল কুরআনে সুরা আর-রা’দের ১৭ আয়াত সম্পর্কে বলেন,

اصل دونوں مثالوں کا یہ ہے کہ جیسا کہ ان مثالوں میں میل کچیل برائے چندے اصلی چیز کے اوپر نظر آتا ہے لیکن انجام کار وہ پھینک دیا جاتا ہے اور اصلی چیز رہ جاتی ہے،اسی طرح گو چند روز حق کے اوپر غالب نظر آئے لیکن آخر کار باطل محو اور مغلوب ہو جاتا ہے اور حق باقی اور ثابت رہتا ہے۔

এ বক্তব্যের সারমর্ম হলো, আলোচ্য দু’আয়াতে আল্লাহ তাআলা হক ও বাতিলের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনা ও ফেনা সাময়িক সময়ের জন্য মূল জিনিসের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে, কিন্তু পরিণামে সেগুলো সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং প্রকৃত উপকারী বস্তুটিই অবশিষ্ট থাকে, অনুরূপভাবে মিথ্যা ও বাতিলকে যদিও কখনো সত্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা যায়, কিন্তু হকপন্থিগণ হকের মেহনত ও দাওয়াত নিয়ে অগ্রসর হলেই আল্লাহর কুদরতী শক্তির ধাক্কায় মিথ্যা ও বাতিল অল্প সময় পরই পরাস্ত ও বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং হক ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। [বিস্তারিত; তাফসীরে ইবনে কসীর; সুরা আর-রা’দ: ১৭, তাফসীরে রুহুল মাআনী, সুরা আর-রা’দ: ১৭]

আলোচ্য আয়াতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত মুসলমানদের জন্য রয়েছে খুশির সংবাদ। বর্তমানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও মুসলিম শাসক কর্তৃক তারা হচ্ছে নির্যাতিত। তাদের জান-মাল, ইযযত-আব্রু এমনকি জীবনের অমূল্য সম্পদ ঈমান-আকীদার হেফাযতের নিরাপত্তাটুকুও তারা পাচ্ছে না। তাদের মুসলিম শাসকরা ক্ষমতার মোহে নিজেদের গৌরবময় অতীত ও সোনালি ইতিহাসকে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে সম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। তারা ইহুদি-খ্রিস্ট যৌথ চক্রের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য ভাবধারণায় কুফরি মতবাদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করছে। অথচ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এ মর্মে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,

وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ۰۰۴۵

‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালিম।[2]

অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْكٰفِرُوْنَ۰۰۴۴

‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা কাফির।[3]

কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলার এ সতর্কবাণী দ্বারা মুসলিম শাসকবৃন্দ নিজেদের মাঝে কোন প্রকার পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। তারা পূর্ববর্তী মানব রচিত আইন দ্বারা দেশ পরিচালনা করে চলেছে। ফলে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা, হানাহানি-মারামারি আরও কত কী! এরূপ অশান্ত পরিবেশ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ফলে মুসলমানরা ক্রমশ নিরাশ হয়ে পড়ছে। নৈরাশ্যের কালোছায়া তাদেরকে আবদ্ধ করে ফেলছে। অনেকে তো একেবারে হাল ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে পড়েছে। এমনি মুহূর্তে নিম্নোক্ত এ আয়াত আশার সঞ্চার করেছে। ইরশাদ হচ্ছে,

فَاَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَآءً١ۚ وَاَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْاَرْضِؕ ۰۰۱۷

‘(উভয় প্রকারে) যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়।[4]

উপর্যুক্ত আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের নৈরাশ্য বিদূরীত করে আত্মবলে বলীয়ান হয়ে তাদের হৃত গৌরব ও হারানো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারের জন্য ইসলামের মশাল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তারা যদি অগ্রসর হয়, তাহলে সকল কুফরি শক্তি বিতাড়িত হতে বাধ্য। কেননা কুফরি ও বাতিল শক্তি হচ্ছে রঙিন চাকচিক্যময় ফানুসের মতো, যা অচিরেই ছিদ্রকৃত বেলুনের ন্যায় চুপসে যেতে বাধ্য। আলোর অবর্তমানে অন্ধকারের প্রাধান্য থাকে বটে, কিন্তু রঙিন আভা বিস্তার করে পূর্বাকাশে যখন সূর্য উঁকি দেয়, তখন অন্ধকার বিলুপ্ত হতে বাধ্য হয়।

হক বাতিলের লড়াই যুগে যুগে

হকের আগমনে বাতিলের লজ্জাষ্কর বিতাড়ন সংক্রান্ত অসংখ্য ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ভরপুর রয়েছে। আমরা দেখতে পাই যে, নমরূদ যখন বাতিলের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছিল সমগ্র বিশ্বে, ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর হকের আওয়াজে তার সেই বাতিল শক্তি নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। তেমনিভাবে ফেরআউনের বাতিল শক্তি নিঃশেষিত হয়েছিল হযরত মুসা (আ.) হক নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে। তারপর বাতিল যখন বনী ইসরাইলের রক্তপিপাসু রূপ নিয়ে এসেছিল, তখন হযরত ঈসা (আ.)-এর হকের দাওয়াতে তা বিলুপ্ত হয়েছে। বাতিল যখন দুর্দণ্ড প্রতাপে সীমা ছাড়িয়ে চলছিল রোম সম্রাট ও পারস্য সম্রাটের রূপে, ঠিক তখনই আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হকের আওয়াজে তা নিঃশেষিত হয়েছে।

নিকট অতীতের প্রতি লক্ষ্য করলেও আমরা হক ও বাতিলের এ ধারাবাহিকতা বিদ্যমান দেখতে পাই। বাতিল যখন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের রূপে প্রকাশ পেয়েছে তখন হক প্রকাশ পেয়েছে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. এর রূপ নিয়ে। বাতিল যখন খলীফা মনসূরের রূপে প্রকাশ পেয়েছে, তখন হক এসেছে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর পোষাক পরিধান করে। যখন বাতিল এসেছে মু’তাসিম বিল্লাহর রূপ ধারণ করে তখন হক এসেছে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের রূপে। বাতিল জালালুদ্দীন আকবরের রূপ ধারণ করে আসলে হক এসেছিল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানীর রূপ নিয়ে। বাতিল যখন ইসনা আশারিয়্যার রূপ নিয়ে এল তখন হক আসল হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.)-এর রূপ ধারণ করে। বাতিল যখন রাজা রনজিৎ সিংয়ের আকার নিয়ে এল, তখন হক এল শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহ.)-এর রূপ ধারণ করে। এভাবে বাতিল যখনই তার অস্তিত্ব কায়েম করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে, তখনই আল্লাহর কুদরতে হকের আবির্ভাব ঘটেছে এবং বাতিলের বিনাশ সাধন করেছে। আর এভাবে বাতিলের সাময়িক বিজয় ঘটলেও পরিণতিতে তা বিলুপ্তই হবে, নিক্ষিপ্ত হবে আস্তাকুড়ে।

মুসলামনের হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার উপায়

হকের বিজয়ী হওয়া এবং বাতিলের নিমূল হওয়ার জন্য শর্ত হল, হকপন্থি মুমিনদের কামিল মুমিন হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বাতিলের ওপর বিজয়ী হওয়ার জন্য যে শর্তসমূহ আরোপ করেছেন, সে অনুযায়ী নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন যে,

وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ۰۰۱۳۹

‘(হে মুমিনগণ!) তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। তোমরা প্রকৃত মুমিন হলে তোমরাই বিজয়ী হবে।[5]

ফিরআউনের ধ্বংসের ঘটনা

হযরত মুসা (আ.)-এর আগমনের পূর্বে বনী ইসরাইল সমপ্রদায়ের প্রতি ফিরআউনের অত্যাচার সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। সমগ্র বনী ইসরাইল ক্রিতদাসে পরিণত হয়েছিল। তাদের হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের আহাজারী ও আর্তনাদের কারণে আল্লাহ পাক হযরত মুসা (আ.)-কে পৃথিবীর বুকে সাহায্যকারী হিসেবে পাঠালেন। যে ফিরআউন হযরত মুসা (আ.)-কে ধ্বংস করার সকল ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছিল সেই ফিরআউনের ঘরেই হযরত মুসা (আ.)-এর লালন-পালনের ব্যবস্থা করা হল। অবশেষে হযরত মুসা (আ.)-এর নুবুওয়াতপ্রাপ্তির পর ফিরআউনের সেই দাপট চিরতরে খর্ব হল। বনী ইসরাইল মুক্তি পেল ফিরআউনের নির্যাতন থেকে। শুধু তাই নয়, বরং ফিরআউনের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটল। অত্যন্ত লজ্জাষ্কর পরিণতি শিকার হয়ে সকল সঙ্গী-সাথীসহ লোহিত সাগরের অথৈ পানিতে তার সলিল সমাধি ঘটল।

সাহাবাদের কুরবানি বদরযুদ্ধ জয়

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরামের ওপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে, যে অগ্নিমূল্যে তাদেরকে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার হাজার ভাগের এক ভাগও আমাদের ওপর আসেনি। কিন্তু আল্লাহ পাকের ঘোষণা অনুযায়ী তারা যখন ঈমান-আমল ঠিক করে নিয়েছেন, তখন তাদের বিজয়ধারা অব্যাহতভাবে শুরু হয়েছে। আবু জাহল ও আবু লাহাবের মতো ইসলামের শত্রুরা পর্যন্ত পালাবার পথ পায়নি। বদরের যুদ্ধের কথা আজো ইতিহাসের পাতায় স্বার্ণাক্ষরে লিখিত আছে। কেবলমাত্র তিনশত তেরজন অস্ত্রহীন, বর্মহীন, ক্ষুৎপিপাসা কাতর সাহাবায়ে কেরাম এক হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত কাফেরের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে ঐতিহাসিক অর্জন করেছিলেন, তা আজো ইতিহাসের এক মহাবিস্ময়।

ইমাম আবু হানিফা, মালেক আহমদ (রহ.)-এর কুরবানি

ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা এ উম্মতের মাঝে আরও দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। উসমানিয়া ও আব্বাসিয়া খেলাফত যুগেও মুসলমানদের ওপর কম অত্যাচার চালানো হয়নি। তৎকালীণ ওলামা সমাজ ও মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে তারা হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতো মহামনীষীরা পর্যন্ত তাদের সেসব নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা হককেই বিজয়ী করেছেন। বাতিল সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজও ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও আহমদ (রহ.) তাঁদের দীনী কীর্তির কারণে অমর হয়ে আছেন!

সত্যের বিজয় নিশ্চিত

ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে মুসলমানদের ওপর কম নির্যাতন করেনি। হাজার হাজার আলেমকে ফাসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে। কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও আল্লাহ হককে ঠিকই বাকি রেখেছেন। আর বাতিলকে সমূলে উৎপাটিত করেছেন। পূর্বযুগের নমরুদ, ফিরআউন, কারুন, হামানরা আজ সকলেই ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। নিকট অতীতের মীর জাফর, রায়দুর্লভ আর ঘসেটি বেগমরাও ধিকৃত হয়েছে একইভাবে। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তারা ধ্বংস করতে পারেনি। ইসলামের ধারা নিজস্ব গতিতে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছে।

সমগ্র বিশ্বের মুসলমান বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ যে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তা বর্ণনাতীত। আজ এ দেশের মুসলমান ঈমান-আমলের ইসলাহ করে পাকা ঈমানদার ও আমলদার হলেই মহান আল্লাহর নুসরত ও মদদ নেমে আসবে এদেশে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখের প্রাচুর্য নিয়ে কালাতিপাত করবে। ইসলাম হবে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত।

সারকথা

এ পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত আমাদের সামনে আশার দিগন্ত উম্মোচন করে দিয়েছে। অভয় দিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছে ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না।’ কারণ বাতিলের এ উত্থান সাময়িক, পানির ওপর ভাসমান খড়কুটার মতো হকের প্রবল স্রোত যখন প্রবাহিত হবে, তখন সকল বাতিলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাতিলের কোন অস্তিত্ব তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে নিজেদের ঈমান-আমলের দুর্বলতার কারণে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম পালনে শিথিলতা প্রদর্শনের দরুণ সাময়িক পরীক্ষার সম্মুখীন অবশ্যই হতে হবে। এই পরীক্ষা পূর্বের উম্মতদের ওপরও এসেছিল। তাই নিরাশ না হয়ে নিজেদের ঈমান-আমল মজবুতির কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের পরিচিত সমগ্র বিশ্বের দরবারে পেশ করার জন্য সময় বের করে ময়দানে নামতে হবে। এছাড়া দীনী শিক্ষার ব্যপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় আদর্শ নুরানি মক্তব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এটাই হবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বোত্ত প্রস্তুতি মূলত পদক্ষেপ। এছাড়াও দীন বুলন্দির সময়োচিত জিহাদী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। এভাবে দীন কায়েমের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইন শা আল্লাহ হকের পক্ষে এ সামান্য মেহনতের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বাতিলকে নিস্তনাবুদ করে দেবেন, হককে করবেন চিরউন্নত।

[1] আল-কুরআন, সুরা আর-রা’দ, ১৩:১৭

[2] আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:৪৫

[3] আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:৪৪

[4] আল-কুরআন, সুরা আর-রা’দ, ১৩:১৭

[5] আল-কুরআন, সুরা আলে ইমরান, ৩:১৩৯

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ