বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া
আমাতুল্লাহ তাসনীম
অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘রামলালা বিরাজমান’ বা হিন্দুদের ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের বিগ্রহকে, যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে। ভারতের শীর্ষ আদালতে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক আদালত এই রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটিই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
অযোধ্যার বিতর্কিত জমির সবটাই যে কারণে হিন্দুদের দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, রাম চবুতরায় ‘দীর্ঘ নিরবচ্ছিন্ন অব্যাহত পূজার্চনা’ এবং অন্যান্য তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ চালানোর মাধ্যমে বাইরের অংশে দখলিস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। হিন্দু সাক্ষীদের যুক্তি অনুসারে মসজিদের ভেতরে কসৌটি পাথরের স্তম্ভে হিন্দুরা পূজা করতেন বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘মুসলিম সাক্ষীরা স্বীকার করেছেন, মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে হিন্দু ধর্মের প্রতীক বর্তমান ছিল।’
তিন গম্বুজের সৌধে যে প্রবেশপথ তা নিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। ‘পূর্ব ও উত্তর দিকের দুটি দরজার সম্ভাব্য একমাত্র কারণ এই যে, বাইরের চবুতরা হিন্দু ভক্তদের দখলে ছিল।’ এর ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘সম্ভাব্যতার ভারসাম্য বিচার করলে প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে, হিন্দুরা বাইরের চবুতরায় ১৮৫৭ সালে ইট ও জাফরির দেয়াল তৈরি করা সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পূজা চালিয়ে গিয়েছেন।’
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘সব ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখলে বাইরের চবুতরায় তাদের দখল স্পষ্ট প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।’ ভেতরের অংশ নিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা অযোধ্যা দখলের আগে পর্যন্ত হিন্দুরা যে সেখানে পূজা করত এ সম্ভাবনাই ভারী।’
‘ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মাণের সময়কাল থেকে ১৮৫৭ সালের আগে পর্যন্ত একমাত্র তারাই যে ভেতরের অংশের কর্তৃত্ব ভোগ করত, সে কথা প্রমাণ করতে পারেনি মুসলিম পক্ষ।’ যদিও ভারতের ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত যে, মোগল আমলে বাবরের একজন সেনাপতি মির বাকি ১৫২৮ সাল নাগাদ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর আগে এই স্থানে অন্য কিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ হয়নি।
তা ছাড়া বাবরি মসজিদের জমির মালিকানার পক্ষে সব ধরনের প্রমাণ সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে। অযোধ্যায় ১৫২৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায়ের বিষয়টিও বিচারকরা স্বীকার করেছেন।
অন্য দিকে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের অন্য জায়গায় পাঁচ একর জমি দেয়ার পেছনেও যুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে এই বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে লড়ছে মুসলমানরা। অযোধ্যার ওই জমিতে তারা নামাজ পড়তেন এই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগের দাখিল করা তথ্যে। তাই মুসলমানদের ওই জমির অধিকার না দেয়া হলেও তাদের মসজিদ তৈরির অধিকার না দেয়া হলে সেটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানবিরোধী। তাই আইন মেনেই মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দেয়া হয়েছে।
‘ধর্ম ও বিশ্বাস নয়, আইন অনুযায়ী তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে’ রায় দেয়া হয়েছে দাবি করলেও এটিকে বিতর্কিত মনে করছেন হায়দরাবাদের নালসার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফয়জান মুস্তাফা। তিনি বলেছেন, ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিচারকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আইনের শাসনের ওপর ধর্মের খড়গ পড়েছে। কারণ বিচারকরা বলেছেন, হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস নিয়ে তাদের কিছু করার নেই এবং যদি তারা বিশ্বাস এখানে রাম জন্ম গ্রহণ করেছেন… তাহলে আমাদের তা মেনে নিতে হবে। ধর্মের ক্ষেত্রে বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় তখন তা কি ভিত্তি হতে পারে? প্রশ্ন রাখেন ভিসি ফয়জান মুস্তাফা। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
রায়ে বলা হয়েছে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হোক হিন্দুদের। মুসলিমদের মসজিদ তৈরির জন্য বিকল্প জমি দেওয়া হোক। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, ৩-৪ মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে তৈরি করতে হবে ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্ট ওই জমিতে মন্দির নির্মাণের জন্য রূপরেখা তৈরি করবে। আর অযোধ্যাতেই মসজিদের জন্য মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়া হবে ৫ একর বিকল্প জমি।
রায় দিতে গিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আরও বলেছিলেন, ৯২ সালে মসজিদ ভাঙা বেআইনি কাজ ছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙা নিয়ে মামলা চলছে লক্ষ্ণৌয়ের সিবিআই আদালতে। সুপ্রিম কোর্টের এ পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাৎপর্য বলে মনে করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন রায়ে আরও বলেছেন, জমির স্বত্ব ধর্মীয় ভাবনার ভিত্তিতে দেওয়া যেতে পারে না। হিন্দুরা ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বাস করে, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি। বিতর্কিত জমির বাইরের অংশের মালিকানা হিন্দুদের ছিল, তার প্রামাণ্য দলিল রয়েছে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে ভারত জুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বস্তির পাশাপাশি রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই অসন্তুষ্ট। দেশের সরকার প্রধান থেকে আমজনতা সবার বক্তব্য উঠে এসেছে ভারতসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
সুপ্রিম কোর্ট যখন রায় ঘোষণা করছিলেন তখন করতারপুর করিডর উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাঁক পেয়ে টুইট করলেন, ‘রায় কারও জয় বা পরাজয় নয়। রাম-ভক্তি হোক বা রহিম-ভক্তি, রাষ্ট্র ভক্তিকেই শক্ত করতে হবে।’ জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে ফের আসবেন টিভির পর্দায়। বললেন, ‘ভারতের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই দিনটি একটি স্বর্ণালি অধ্যায়’। ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তির প্রশংসা করে বললেন, কোর্টের রায়কে গোটা দেশ খোলা মনে মেনে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে যে রায় দিয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। রায় ঘোষিত হওয়ার অল্প ক্ষণের মধ্যেই টুইটারে শাসক দলের সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লিখলেন ‘মিল কা পত্থর’, অর্থাৎ মাইলফলক।
ওদিকে, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। বোর্ডের কৌঁসুলি শুধু বলেছেন, ‘রায়কে সম্মান করি’। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিজেপি এবং আরএসএস নেতৃত্ব প্রত্যাশিত ভাবেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। কংগ্রেসের মুখেও একই সুর নেই। রায় মেনে নিয়ে সবাইকে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলটি আহ্বান জানিয়েছে। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ বা বিকল্প জমিতে মসজিদ তৈরির প্রসঙ্গ নিজের টুইটে উল্লেখ করেননি রাহুল। শুধু আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে কংগ্রেস বলেছে, ‘অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করি। আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা মেনে চলতে সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।’ দলটির মুখপাত্র রণদীপ সূর্যঅলাকে বলেছেন, ‘যুগে যুগে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ঐক্য আমাদের সমাজকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, তা পুনরায় নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের।’
‘খয়রাতির পাঁচ একর জমি চাই না’, বাবরি মসজিদ রায় প্রত্যাখ্যান করেন ওয়াইসি
ভারতে আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে মুখ খুলেই বিস্ফোরণ ঘটালেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন (এআইএমআইএম) প্রেসিডেন্ট আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তার দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাস্তব সত্যির জয় হয়নি। ‘রায়ে তথ্য-প্রমাণকে হারিয়ে আস্থা-বিশ্বাসের জয় হয়েছে।’
ওয়াইসি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদের যে খয়রাতির পাঁচ একর জমি দিতে চেয়েছেন, তা চাই না। ওয়াইসির দাবি, এমনি মানুষের কাছে চাইলেই মুসলিমরা পাঁচ একর পেয়ে যাবে। সরকারের খয়রাতির প্রয়োজন নেই। হায়দরাবাদের এই সাংসদের বক্তব্য, আমরা আমাদের আইনি অধিকারের জন্য লড়ছি। ভারতের মুসলমানদের এতটা খারাপ দিনও আসেনি যে খয়রাতির জমি নিতে হবে। মুসলিম বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আমাদের এই পাঁচ একরের প্রস্তাব খারিজ করা উচিত।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রশাসনিক বিভাগের জনসংযোগ আধিকারিক শাফে কিদোয়াই বলছেন, ‘আগে অপছন্দ হলে মুখের ওপরে কথা বলা যেত। তা তিনি যে সম্প্রদায়েরই হোন না কেন। কিন্তু এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সাধারণ তর্ক করতেও ভয় পাচ্ছে। এই ভয় থেকেই মুসলিম সমাজও নিজেদের বাঁচাতে পরিচয় সত্তার রাজনীতি (আইডেনটিটি পলিটিকস) করতে শুরু করেছে বলেই মনে করেন তিনি।’
উত্তর প্রদেশের অন্য দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বামেরা সব দিক বাঁচিয়ে বয়ান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
প্রত্যাশিতভাবেই উচ্ছ্বসিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। এ দিনদুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানান আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। এই রায়কে কারও হার বা কারও জয় হিসেবে দেখা উচিত নয়্তবলেন তিনি। সরকার কোথায় এবং কীভাবে ৫ একর জমি সুন্নি বোর্ডকে দেবে, তা নিয়ে যে তিনি মাথা ঘামাতে রাজি নন, সে বার্তা নিজের সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ স্পষ্ট ভাবেই দেন তিনি। শুধুমাত্র রাম মন্দির তৈরি নিয়েই যে সংঘ ভাবছে, অন্য কিছু নিয়ে নয়, সে কথাও কোনো রাখঢাক না করেই বলেন।
রায়ে খুশি নই
উত্তর প্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায়ে খুশি নয়। ওয়াকফ বোর্ডের কৌঁসুলি জাফরিয়াব জিলানি এ দিন বলেন, ‘রায়কে আমরা সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু এই রায়ে খুশি নই।’ পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে কি না, তা আলোচনা করে স্থির করা হবে বলে তিনি জানান। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে বলা হয়, এ ভাবে মসজিদ কাউকে হস্তান্তর করা যায় না।
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অযোধ্যা জমি মামলার রায়। এক শতাব্দীর পুরোনো মামলা অযোধ্যা। চূড়ান্ত পর্বে টানা ৪০ দিন ধরে চলেছে শুনানি। অযোধ্যা জমি মামলার চূড়ান্ত শুনানির জন্য, জানুয়ারি মাসে ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এসএ বোবদে এবং এস আবদুল নাজির। গত ১৬ অক্টোবর রায়দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত। শুনানির শেষ দিনে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জমির দাবি ছেড়ে দিতে রাজি বলে খবর ছড়ায়। যদিও আদালতের নির্দেশে শুনানির পর তারা নির্দিষ্টভাবে বিতর্কিত জমিতে মসজিদ তৈরির দাবি জানায়। হিন্দু মহাসভা রাম মন্দির নির্মাণ-সহ পুরো জমিটিই দাবি করে। আর নির্মোহী আখাড়া আরজি জানায় হিন্দুদের অন্য পক্ষের হাতে জমির অধিকার গেলেও পুজো করার অধিকার তাদেরই দিতে হবে।
রাম মন্দির দাবির জন্য প্রচার চালানো বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি রায়ের পর বলেছেন, সার্থক হয়েছে তাঁর রাম জন্মভূমি আন্দোলন। নব্বইয়ের দশকে সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেছিলেন বর্ষীয়ান নেতা। সেই রথযাত্রায় তাঁর সারথী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই রথযাত্রাই উসকে দিয়েছিল হিন্দুত্বের আবেগ। লালকৃষ্ণ আদভানি বলেন, ‘আজ স্বপ্নপূরণ হয়েছে। রাম মন্দির নির্মাণের গণ-আন্দোলনে আমাকেও অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন ঈশ্বর। স্বাধীনতার পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে তা সার্থক হলো।’
রায় ঘোষণার সময়ে আদালত চত্বর ঘেরা ছিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সাধু সন্ত মহন্তে। স্বামী চক্রবাণী মহারাজ বাজিয়েছেন শাঁখ। রায় আসার পর সন্তেরা আদালত চত্বরেই জয়ধ্বনিতে ফেটে পড়েছেন।
রায়পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, ‘এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে যা ক্ষমতা তার ধারে কাছে কেউ নেই। সেটা আরএসএস-ও জানে। এটাও ঘটনা যে দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ই মোদীর শক্তির উৎস অর্থাৎ তাঁর ভোট ব্যাংক। ফলে সমাজের এই অংশের মন জয় করে চলাটাই বিধেয় মোদীর কাছে। এই কার্যকারণ থেকেই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রের অভিমুখে চালনা করার প্রশ্নটা উঠে আসছে।’
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অশোক মজুমদার অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘বিশ্বাস করি না যে গোটা দেশ হিন্দু রাষ্ট্রের পথে হাঁটছে। নিচের তলায় হিন্দুত্বের আস্ফালন থাকলেও তা সমাজের সর্ব স্তরে পৌঁছায়নি।’
ভারতের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, হিন্দু দেবতাদের ‘জুরিস্টিক পারসন’ বা আইনের চোখে ব্যক্তি হয়ে ওঠার সূত্রপাত ব্রিটিশ জমানায়, ‘ইংলিশ কমন ল’ থেকে। প্রবীণ আইনজীবী আদীশ চন্দ্র আগরওয়াল বলেন, ‘আইনের চোখে ব্যক্তি হিসেবে দেবতার সব রকম আইনি অধিকার রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তিনিও মামলা করতে পারেন। তবে তাঁর সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নেই। তা শুধু দেশের নাগরিকদের জন্য।’
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পার্থ দত্তের বক্তব্য, ‘ব্রিটিশ রাজের সময় থেকে সরকার মন্দির-মসজিদের মতো স্থাবর সম্পত্তির ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আনতে কর আদায় ব্যবস্থা চালু করে। এই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকেই দেবস্থানের অছি পরিষদে সরকারি প্রতিনিধি রাখা শুরু হয়। সেই সংক্রান্ত কোনো মামলা মোকদ্দমা তৈরি হওয়ায় দেবতাকে আইনি দরবারে টানা শুরু হয়। ঔপনিবেশিক এই প্রথা হিন্দু আইনেও বলবৎ আছে এবং কালক্রমে তা পুষ্ট হয়েছে।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন, ‘রায়টা কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হলো, সবটা ঠিক বুঝতে পারছি না। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই আদালত একটা রায় দিলে তাকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না। চার শ-পাঁচ শ বছর ধরে একটা মসজিদ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই মসজিদকে আজ থেকে ২৭ বছর আগে ভেঙে দেওয়া হলো বর্বরদের মতো আক্রমণ চালিয়ে। আর আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলল, ওখানে এ বার মন্দির হবে। সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে তো একটা বিষয় রয়েছে! এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে দেশের সংবিধানের ওপর থেকে কারও ভরসা উঠে যায়। আজ অযোধ্যার ক্ষেত্রে যে রায় হলো, সেই রায়কে হাতিয়ার করে ভবিষ্যতে এই রকম কাণ্ড আরও ঘটানো হবে না, সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন?’
‘১০৪৫ পাতার রায়ে বিচারপতিদের যে সব পর্যবেক্ষণ সামনে এসেছে, তা থেকে কিন্তু মনে হচ্ছে না যে, সব যুক্তি ঝুঁকে রয়েছে কোনো একটি পক্ষের দিকে। সর্বোচ্চ আদালত কোথাও বলেছে, বাবরি মসজিদ কোনো ফাঁকা জমিতে তৈরি হয়নি, তার নিচে আরও প্রাচীন অমুসলিম স্থাপত্যের সন্ধান পেয়েছে পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ। আবার তার পরেই বলেছে, মসজিদের নিচে যে স্থাপত্য মিলেছে, তা হিন্দু স্থাপত্যও যদি হতো, তা হলেও ওই জমি হিন্দুদের হয়ে যায় না। তা হলে বিতর্কিত জমি কার? বিচারপতিরা রায়ে লিখেছেন, ১৮৫৭ সালের আগেও যে রামজন্মভূমিতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের যাতায়াত ছিল। বিতর্কিত অংশের বাইরের চত্বরেও যে হিন্দুরাই পূজার্চনা করতেন, তা-ও স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত বলে আদালত মনে করেছে। কিন্তু ১৮৫৭ আগে ওই অংশ সম্পূর্ণ ভাবে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এমন কোনো প্রমাণ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড দাখিল করতে পারেনি বলে আদালত মনে করছে।’
বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ওয়াকফ বোর্ড শুধুমাত্র ওই প্রমাণটা দাখিল করতে পারল না বলেই কি জমির দখল রামলালা পেলেন? না, তেমন কোনো কথাও রায়ে লেখা নেই। বিতর্কিত জমির ওপরে রামলালা বিরাজমানের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নেপথ্যে বরং অন্য দুটি কারণ সামনে আসছে। প্রথমত, বিতর্কিত জমিকে যে হিন্দুরা রামের জন্মস্থান হিসেবে বিশ্বাস করেন, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক বা বিরোধ নেই বলে আদালত মনে করেছে। আর দ্বিতীয়ত, বিতর্কিত জমিতে রামলালার অধিকার স্বীকার করে নেওয়াটা আইন-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বহাল রাখার প্রশ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে বিচারপতিরা মনে করেছেন।’
তবে আমজনতা অযোধ্যার সৈয়দ বাদা এলাকার মোহাম্মদ শিবু খান মনে করেন, মসজিদের জন্য স্থানটি আদালত সুনির্দিষ্ট করে দিলে মুসলিমরা খুশি হতেন। তিনি কাতারুভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারপরেও আমি খুশি যে এটার একটা শেষ হলো। বছর জুড়ে এভাবে বন্ধ থাকতে থাকতে অযোধ্যার মানুষ ক্লান্ত।’
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রায় ঘোষণার পর তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে ভারতের তিনটি প্রধান শহরে তিনজন বিশিষ্ট মুসলিম নারীর সঙ্গে।
এরা হলেন মুম্বাইতে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের কর্ণধার ও সমাজকর্মি নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ, দিল্লিতে রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও অধ্যাপক নাজমা রেহমানি এবং কলকাতায় শিক্ষাবিদ ড. মীরাতুন নাহার।
তারা কেউ কেউ সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন, ‘১৯৯২-এর ৬ ডিস্মেবর যদি বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার তীব্র দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি না-ঘটত, তাহলেও কি আজ সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিতে পারত?’
কেউ আবার মনে করছেন, ওই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে পেছনে ফেলে ভারতের এখন এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে আর সেখানে এই রায় অযোধ্যা বিতর্কে একটা ক্লোজার এনে দিতে পারে।
মন্দির তৈরির পক্ষেই রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
কেউ আবার আজকের দিনটিকে ‘ভারতীয় সংবিধানের জন্য একটি চরম অমর্যাদার মুহূর্ত’ হিসেবেই দেখছেন। তাদের সঙ্গে বিবিসি বাংলার কথোপকথনের সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হল।
অধ্যাপক নাজমা রেহমানি
‘আমার প্রশ্ন হল, বাবরি মসজিদই বলুন বা বিতর্কিত কাঠামো আজও যদি সেটা অক্ষত অবস্থায় ওখানে দাঁড়িয়ে থাকত, তাহলেও কি সুপ্রিম কোর্ট আজকের এই রায় শোনাতে পারত?’
তা ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) একটি রিপোর্টকে আদালত সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেই রিপোর্টের কি ঠিকমতো বিশ্লেষণ করা হয়েছিল?
আমি বলতে চাইছি, ওই রিপোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী কোর্ট মেনে নিয়েছে মসজিদের নিচে কিছু একটা স্থাপনা ছিল। কিন্তু সেটা কি কোনও মন্দির, বা মন্দির হলেও রামের মন্দির না কি অন্য কোনও দেবতার সেটাই বা কে বলল?
আসলে প্রশ্নটা তো শুধু এক টুকরো জমির নয়, এখানে ভারতের সামাজিক সম্প্রীতির চেহারা কিংবা এ দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থানের চিত্রটাও কিন্তু এই মামলার সঙ্গে জড়িত।
আমার ধারণা যতটা না সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে, তার চেয়েও বেশি দেশের সামাজিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই কোর্ট এই রায় দিয়েছে। রায়টা দেখে অন্তত সে রকমই মনে হচ্ছে।
দেশের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় এই রায়কে এখন কীভাবে নেবে, সেটা ভেবে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন।
এখন পরিবেশটা খুব সংবেদনশীল, কড়া নিরাপত্তায় সব মুড়ে রাখা আছে বলে পরিস্থিতি হয়তো শান্ত আছে। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকবে?
নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ
আরও অনেকের মতো আমরাও এই রায়কে স্বাগত জানাই। আর এটাই হয়তো প্রত্যাশিত ছিল।
বছরের পর বছর ধরে এই ইস্যুটাকে কাজে লাগিয়ে যে সংঘাত আর রক্তপাত হয়েছে, আশা করি এবারে তার অবসান হবে।
বাবরি-রামমন্দির পেছনে ফেলে আমাদের এখন আরও কত কিছু নিয়ে ভাবার আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে মনোযোগ দেওয়া দরকার, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর কথা ভাবা দরকার।
আমাদের অস্তিত্ত্ব যখন সঙ্কটে, তখন কতদিন আর ওসব নিয়ে পড়ে থাকব? কাজেই আমি খুশি, ইট’স ফাইনালি ওভার।
৬ ডিসেম্বরের কথা যদি বলেন, সেদিন ভারতের মুসলিম সমাজ ও এদেশের সামাজিক বন্ধনের সঙ্গে যা হয়েছিল তার মতো দুর্ভাগ্যজনক বোধহয় কিছুই আর হতে পারে না। কিন্তু সেটা নিয়ে আর কতদিন পড়ে থাকব?
একটা কোনও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তো একদিন এই বিতর্কের সমাধান করতেই হত, তাই না? এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান এনে দিতে পেরেছে বলেই আমরা মনে করি।
এই রায়ে হয়তো অনেকেই শেষ পর্যন্ত খুশি হবেন না।
কিন্তু কে খুশি আর কে অখুশি হল, তাতে কী এসে যায়? বিষয়টার একটা যে নিষ্পত্তি হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
হো গয়া আভি ইট’স ওভার!
ড. মীরাতুন নাহার
একটা সম্পূর্ণ ‘তৈরি করা বিবাদ’ যে এভাবে দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত গড়াতে দেওয়া হল, আমি তাতে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। দেশপ্রেমী একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি ভাবতেই পারি না, যাদেরকে আমরা দেশের ক্ষমতায় বসিয়েছি তারা কীভাবে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিকে এভাবে উসকানি দিতে পারেন! শুধুমাত্র নিজেদের সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে তারা ভারতের মহান সংবিধানকেও অপমান করলেন। জমির দখল নিয়ে বিবাদ, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ দুটো পরিবারের মধ্যে হয়, কখনও বা কোর্টেও গড়ায় এটাই চিরকাল জেনে এসেছি। কিন্তু সেই জমির বিবাদকে ঘিরে দেশের দুটো ধর্মীয় সম্প্রদায়কেও যে লড়িয়ে দেওয়া যায় তা কখনও ভাবতেও পারিনি আর সে কারণেই পুরো বিষয়টা আমার কাছে এতটা কষ্টদায়ক! আজকের রায় নিয়ে আর কী বলব? কোর্টে গেলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, তাই সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার মানে হয় না। আমার প্রশ্ন তাই একটাই, এই যে বিবাদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয়েছিল সেটা কি আপনা থেকেই তৈরি হয়েছিল না কি সচেতনভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল?
বাবরি মসজিদ নিয়ে জিলানির লড়াই
শুরু করেছিলেন ফৈজাবাদ আদালতে। প্রায় চার দশক পর শেষ করলেন ভারতের শীর্ষ আদালতে। তবে ‘দুঃখী নায়ক’ হিসেবেই ইনিংস শেষ করলেন বাবরি মসজিদ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মি, পেশায় আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানি। ৬৯ বছরের জিলানি বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-আহ্বায়ক। রামমন্দির-বাবরি মসজিদ মামলায় ৭০-এর দশক থেকেই তিনি যুক্ত। মামলার কাজে নিম্ন আদালত থেকে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ সার্কিট বেঞ্চ, দৌড়ে বেরিয়েছেন অক্লান্ত জিলানি। শনিবার তার সেই দৌড় শেষ হলো নয়াদিল্লির তিলক মার্গে, সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বর আদালত কক্ষে।
১৯৮৯ সালে দলের পালামপুর বৈঠকে অটলবিহারী বাজপেয়ির বিজেপি ‘জন্মস্থানে রামমন্দির তৈরিতে’ সামিল হলো। তবে তা গতি পেল লালকৃষ্ণ আদভানির প্রথম রথযাত্রায়। কার্যত সেই থেকে সংবাদপত্রের শিরোনামে অযোধ্যা বিতর্কের মাথাচাড়া দেয়া। আর সেই থেকেই খবরে জিলানি। সাংবাদিকদের ভরসা ছিলেন তিনি। কোনো তথ্য প্রয়োজন, লখনউয়ে তার ঘরের দরজা খোলা বা ফোনের অন্য প্রান্তে হাজির জিলানি।
অযোধ্যা-ফৈজাবাদে সাংবাদিকরা গেলেই লখনউ কিংবা মালিহাবাদের বাড়ি থেকে হাজির হয়ে যেতেন জিলানি। কোট-প্যান্ট পরা আইনজীবী নন, সাদা বুশ শার্ট-আর ট্রাউজার্স পরিহিত জিলানি রিকশা থেকে ফৈজাবাদের হোটেলের সামনে নামতেন। মুখে হাসি। হাতে পেট মোটা ফোলিও ব্যাগ। খবর দিতেন। দিতেন নথির কপি। কেউ নিত, কেউ নিত না। কিন্তু তাতে ক্ষুন্ন হতেন না। বোঝাতেন, বিতর্কিত জমির অধিকার সংক্রান্ত মামলায় জিত তাদের হবেই। তখনো বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়নি।
জিলানি বলতেন, বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি সুপ্রিম কোর্টেও যাবে। পাল্টা প্রশ্ন করতেন, আইনে বিশ্বাসের স্থান কোথায়? পরে তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাঁকে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলও করেন। তবে তার ধ্যানজ্ঞান ছিল বাবরি মসজিদ। এখন কী করবেন জাফরিয়াব জিলানি?
কয়েক দিন আগে একটি চ্যানেলে বলেছিলেন, ‘জীবনটা পাল্টে যাবেই। অনেক মামলা হাতে জমে আছে। তাতেই মন দেব।’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জিনিউজ