জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিরাপদ প্রাইভেট মাদরাসা: যেভাবে ধর্ষকরা সুযোগ নিচ্ছে

অনিরাপদ প্রাইভেট মাদরাসা: যেভাবে ধর্ষকরা সুযোগ নিচ্ছে

মুসান্না মেহবুব

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের একটি ক্যাডেট মাদরাসার প্রধান এবং নেত্রকোণার একটি মহিলা মাদরাসার শিক্ষককে একাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দুটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদরাসা ঘরানা ও আলেম শ্রেণি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে।

মাদরাসায় ধর্ষণ কিংবা সমকামিতার এমন সংবাদ গত কিছুদিন ধরে বেশ ঘনঘনই প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং অন্যান্য শিক্ষাধারার সঙ্গে তুলনার বিচারে ঘওছঠও ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখলেও যেহেতু মাদরাসা ঘরানা ও ওলামায়ে কেরামকে আস্থার ঠিকানা বিবেচনা করা হয়, তাই এ অঙ্গন থেকে এসব ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর একদিকে যেমন ধর্মপ্রাণ মানুষ শঙ্কিত ও লজ্জিত হন, অপরদিকে মাদরাসাবিদ্বেষী মহল ঘওছঠও ছুতোয় আক্রমণাত্মক সমালোচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

গত দশকের শুরুর দিক থেকে ব্যক্তিনিয়ন্ত্রণাধীন এক ধরনের প্রাইভেট মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রচলন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। চলতি দশকে এসে এমন মাদরাসার সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে। হিফয নুরানি এবং কওমি সিলেবাসের নিচের দিকে কয়েকটি জামায়াত নিয়ে চলে এ মাদরাসাগুলো। থাকে ইফতা ও বিশেষায়িত জামায়াতও। এর বাইরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মহিলা মাদরাসাও আছে ব্যক্তিনিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে এ ধরনের মাদরাসা প্রধানত ব্যবসায়িক মন-মানসিকতা থেকে করা হয়। ফলে পুরো মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ এর প্রতিষ্ঠাতা বা পরিচালকের হাতে থাকে। অসংখ্য মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাদের দেখা গেছে, ইলমি এবং আমলি কোনো ধরনের যোগ্যতা ছাড়াই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অধিকাংশ মাদরাসা করা হয় ভাড়া বাড়িতে। বাড়ির একপাশে থাকে প্রতিষ্ঠান-প্রধানের বাসা, আর আরেক পাশে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থা এবং ক্লাসরুম। ফলে পড়াশোনার পরিবেশ যেমন বজায় থাকে না, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন-ব্যবস্থাও অনিরাপদ হয়ে পড়ে।

নামকাওয়াস্তে দাওরা পর্যন্ত পড়ে কোনো ধরনের ইলমি যোগ্যতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা না থাকার কারণে এ ধরনের কোনো কোনো মাদরাসায় স্বয়ং প্রতিষ্ঠান-প্রদানই অনিরাপদ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজের চেষ্টা করেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর এমন একটি মাদরাসার সাবেক এক শিক্ষক জানিয়েছেন, মাদরাসাটির পরিচালক ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে আদরের ছলে আপত্তিকর আচরণ করেন। ব্যাপারটা সম্পর্কে দৃষ্টিআকর্ষণ করতে গেলে পরিচালক ওই শিক্ষককেই বছরের মাঝখানে বিদায় করে দেন মাদরাসা থেকে।

ওই শিক্ষকের দাবি, রাজধানীর ব্যক্তিনিয়ন্ত্রিত এমন আরও অনেক প্রাইভেট মাদরাসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ। আর প্রাইভেট মহিলা মাদরাসাগুলোতেও শরয়ি পরিবেশ বজায় রাখা হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কোনো কোনো মাদরাসায় স্বয়ং প্রতিষ্ঠান-প্রধান সুযোগের অপব্যবহার করে শরিয়ত-বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, আবার কোনো কোনো জায়গায় সাধারণ শিক্ষকরা জড়াচ্ছেন এসবে। ব্যক্তিনিয়ন্ত্রণের ফলে প্রতিষ্ঠান-প্রধানের অনৈতিক কার্যকলাপে জবাবদিহিতার কোনো বালাই থাকে না। আর সাধারণ শিক্ষকদের বেলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর শাস্তি নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ বহিস্কার করা পর্যন্ত। এর বাইরে কোনো ধরনের সালিশ কিংবা আইনের আশ্রয় না নিয়ে প্রতিষ্ঠান বা মাদরাসার সম্মান ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আলেম শিক্ষক আরও বলেন, মাদরাসা ঘরানা থেকে ধর্ষণ এবং সমকামিতার ঘওছঠও ধারা বন্ধ করতে কওমি শিক্ষাধারার মুরব্বিদেরকে প্রথমে অনিয়ন্ত্রিত এসব প্রাইভেট মাদরাসাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এবং তা খুব দ্রুতই করতে হবে, নয়তো ঘওছঠও নোংরামি এবং অপরাধপ্রবণতা মাদরাসা শিক্ষাধারায় একসময় মহামারির আকার ধারণ করবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ