সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com
পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
আকিদা-বিশ্বাস
সমস্যা: একজন লোক কথাবার্তার মাধ্যমে হযরত মুআবিয়া (রাযি.)-কে মুনাফিক বলে ফেলে। সত্যি সত্যি মুআবিয়া (রাযি.) কি মুনাফিক? এবং সেই লোকের সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবুল হাসনাত
ব্রিজ ঘাঠ রোড, চট্টগ্রাম
সমধান: প্রকাশ থাকে যে নবী করীম (সা.)-এর কোন সাধারণ সাহাবী সম্পর্কে ও দুর্ব্যবহার এবং মুনাফিক ইত্যাদি বলা বড় গুনাহ এবং আল্লাহর অভিশাপের কাজ। নবী করীম (সা.) হাদীস শরীফ এর মধ্যে তার কোন সাহাবীকে কটূক্তিকারী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার লা’নত ও অভিশাপের কথা ব্যক্ত করেছেন। এরকম আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফের মধ্যে সব সাহাবা সম্পর্কে তার সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন এবং তারা আল্লাহ তাআলার নিকট সফলকাম হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া (রা.)-কে মুনাফিক বলেছে সে যদিও কাফির হবে না, কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে সে বড় গুনাহগার ও ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে এবং আল্লাহ তাআলার লা’নতের উপযোগী হবে। তাই তাকে তওবা করতে হবে। শরহুল আকায়িদ: ১৪৫, মিসকাত শরীফ: ৫৫৪, তিরমিযী শরীফ
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: অযু করা অবস্থায় কোন দীনী আলোচনা করা উচিত হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মো. আরফাত
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: অযু একটি ইবাদত তাই ফুকাহায়ে কেরাম একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাতে দুনিয়াবী কথা বলাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে অযু করা অবস্থায় দীনী আলোচনা করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি তাই বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাও না করা উচিত, যাতে আলোচনায় মনোযোগ দেওয়ার কারণে অযুর অঙ্গগুলোর কোন অংশ শুকনো থেকে না যায়। ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/২৫০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৮, বাহরুর রায়েক: ১/২৯, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১/২২৭
সমস্যা: কোন কাঠের ওপর ছোট বাচ্চা পেশাব করার পর শুকিয়ে গেলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি কী?
আবু তাহের
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: তা পবিত্র করার পদ্ধতি হল, অন্যান্য নাপাকীর মত তাকে তিনবার ধুইয়ে নিতে হবে এবং প্রত্যক বার পানি ঢেলে পানি পড়া বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে তিনবার ধুইয়ে নিলে সেই কাঠ পবিত্র হয়ে যাবে। মুসলিম শরীফ: ১/১৩৯, বাদায়িউস সনায়ি’: ১/২৯৪, আদ-দুররুল মুখতার: ১/৫৩, হাশিয়াতুত তাহতাভী: ১৬২
সালাত-নামায
সমস্যা: কারো সর্দি হলে নামাযের ভেতর বারবার পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে নাক পরিষ্কার করলে নামায মাকরুহ হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ শহীদ
কলকাতা, ভারত
সমাধান: কারো সর্দি হলে নামাযের ভেতর বারবার পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে নাক পরিষ্কার করলে নামায মাকরুহ হবে না বরং নাক পরিষ্কার না করার ফলে নাকের ময়লা দ্বারা মসজিদ অপরিষ্কার হলে তা মাকরুহ হবে। তবে একান্ত প্রয়োজন না হলে বারবার মোছার দ্বারা নামায মাকরুহ হবে। বুখারী শরীফ: ১/৭৪, বাহরুর রায়িক: ২/১১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০৫
সমস্যা: কোনো ব্যক্তি যদি আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করে সাথে সাথে সিজদা না করে যেদিন পুরা কুরআন শরীফ খতম হয় সেদিন সমস্ত সিজদাগুলো একসাথে আদায় করে তা যথেষ্ট হবে কি?
ওসমান আলী
ফেনী
সমাধান: হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মতানুসারে সিজদায়ে তিলাওয়াত জীবনের যে কোনো মুহূর্র্তে আদায় করলে যথেষ্ট হবে। অতএব কোনো ব্যক্তি আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করে, যেদিন পুরা কুরআন শরীফ খতম হয় সেদিন যদি সমস্ত সিজদা একসাথে আদায় করে, তবে তা যথেষ্ট হবে। কোনো গুনাহ হবে না। হ্যাঁ, যদি তিলাওয়াতটা মাকরুহ সময় না হয় তখন পরে সিজদা আদায়ের কথা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বিলম্ব করা মাকরুহে তানযীহী। ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৪৫৭, বাহরুর রায়িক: ২/১১৯, মিনহাতুল খালিক: ২/১১৯
সমস্যা: বিতিরের নামাযে নির্দিষ্টভাবে কোনো সূরা তিলাওয়াত করার বিশেষ কোনো ফযিলত আছে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
নহিদা সুলতানা
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: বিতিরের নামাযে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মতানুসারে প্রথম রাকআতে সূরা আল-আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আল-কাফিরূন ও তৃতীয় রাকআতে সূরা আল-ইখলাস পড়া মুস্তাহাব। আবু দাউদ শরীফ: ১/২০১, নাসায়ী শরীফ: ১/৮২, ফাতহুল কদীর: ১/৩৭৮, বিনায়া শরহুল হিদায়া: ১/৪৯২
সমস্যা: বর্তমান প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সূচি নির্ধারিত থাকে। এক্ষত্রে কোন কোন সমজিদে দেখা যায় যে, ইমামকে নিজ এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য জামায়াতের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এভাবে অপেক্ষা করা ইমামের জন্য আবশ্যক কিনা? উল্লেখ্য যে এর দ্বারা অন্য মুসল্লিদের কষ্ট হয়। দলীল সহকারে এর সমাধান দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইল।
আবদুল্লাহ
মতিঝিল, ঢাকা
সমাধান: যেকোন প্রতিষ্ঠানের বা কোন এলাকার ধর্মীয় ব্যক্তি কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সেই এলাকার বা প্রতিষ্ঠানের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াতের নির্ধারিত সময় সূচি মোতাবেক নামাযের জামাত আরম্ভ করতে যদি সামান্য বিলম্ব ও অপেক্ষা করা হয়। তাতে কোন অসুবিধা নেই। অবশ্য বেশি বিলম্ব করা যার দ্বারা অন্যান্য মুসল্লিদের কষ্ট হয় মাকরুহ ও নাজায়েয। বাকি কোন দুনিয়াদার প্রভাবশালী লোকের জন্য নামাযের জামায়াতের মধ্যে এরকম বিলম্ব করা জায়েয নয়। সূরা আল-মায়িদা: ২, আদ-দুর্রুল মুখতার: ১/৪৯৪
সমস্যা: কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তার পার্শ্বে থাকা মানুষের করণীয় কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ রহমত
কক্সবাজার
সমাধান: কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্র্তে তার পার্শ্বে থাকা মানুষের করণীয় হল: ১. মৃত্যুমুখী লোকটির কষ্ট না হলে তাকে কিবলার দিকে মুখ করে ডান কাত করে শোয়ানো। ২. সূরা ইয়াসিন পড়া। ৩. রোগীকে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ পড়তে থাকা, তাকে পড়তে বলবে না, যদি একবার স্বেচ্ছায় সে পড়ে নেয় তখন চুপ হয়ে যাবে যদি পড়ার পর দুনিয়াবী কোনো কথা বলে তখন পুনরায় তারা জোরে জোরে কালিমা পড়তে থাকবে যেন দুনিয়ার মধ্যে তার সর্বশেষ কথা কালিমা হয়। ৪. এমন কোনো কথা বা কাজ না করা যার কারণে তার দিল দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ৫. প্রাণ বের হওয়ার সময় যদি তার মুখ থেকে কুফরী বা খারাপ কথা বের হয় তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা এবং পরবর্তীতেও তা আলোচনা না করা বরং আল্লাহর দরবারে তার মাগফিরাতের দুআ করতে থাকবে। ৬. প্রাণ বের হয়ে গেলে তার হাত পা সোজা করে দেওয়া।
بِسْمِ اللهِ، وَعَلَىٰ مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ.
পড়ে চোখ বন্ধ করে দেবে এবং মুখ যেন হা করে না থাকে তার জন্য চিবুক ও মাথার সঙ্গে একখানা কাপড় বেঁধে দেবে। ৭. অনুরূপভাবে দুই পা সোজাভাবে একত্র করে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীকে বেঁধে দেবে। ৮. সর্ব শরীর একটা চাদর দ্বারা ঢেকে দেবে। ৯. তার নিকট আগর বাতি জ্বালিয়ে দেবে এবং হায়েয নেফাস গ্রস্থ ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তিকে তার নিকট থাকতে না দেওয়া। ১০. যথাসম্ভব দ্রুত গোসল এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। আল-মুস্তাদরাক: ১/৫০৫, আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়া: ২/৭৮, বেহেশতী যেওর: ২/১০০
যাকাত
সমস্যা: যাকাত থেকে বিরত থাকার জন্য কোনো ধরণের কৌশল জায়েয আছে কি? যেমন কোনো ব্যাক্তি যাকাত আদায়ের ভয়ে বছর শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্র্তে তার ছেলেদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করে দেয় যার ফলে কারো ওপর যাকাত ওয়াজিব হয় না, বছর শেষ হওয়ার কিছুদিন পর আবার সবার কাছ থেকে মাল ফেরত নেয়, এটা জায়েয আছে কি?
আবদুল জলীল
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: যাকাত থেকে বিরত থাকার জন্য কোনে ধরণের কৌশল গ্রহণ করা নির্ভরযোগ্য মতানুসারে মাকরুহে তাহরীমী। অতঃএব প্রশ্নে উল্লেখিত কৌশল গ্রহণ করে যাকাত থেকে বিরত থাকা জায়েয হবে না। কেউ বিনা প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করলে কবিরা গুনাহ হবে, তবে এভাবে হিলা করার দ্বারা যাকাত ওয়াজিব হবে না। ই’লাউস সুনান: ৯/৫, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৬/৩৯১, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৩/২০৮
সমস্যা: এক ব্যক্তি আমার কাছে কিছু যাকাতের টাকা দিয়েছে কোনো একটি মাদরাসায় দেওয়ার জন্য কিন্তু আমি ওই টাকা মাদরাসার ছাত্র একাউন্টে জমা না করে একজন দরিদ্র আলেম তার অপারেশনের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন তাই তাকে দিয়ে দিয়েছি। এ অবস্থায় যাকাত আদায়কারীর যাকাত আদায় হবে কি? এবং আমি কি গুনাহগার হবো? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আহমদ গনী
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমধান: অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরমের মতানুসারে উকিল তথা যাকাত আদায়ের দ্বায়িত্ব গ্রহণকারী মুয়াক্কিল তথা দায়িত্বদানকারীর পক্ষ থেকে একজন আমানতদারস্বরূপ| অতএব উকিল যদি মুয়াক্কিলের যাকাতের টাকাটা তার নির্ধারিত স্থানে আদায় না করে অন্যস্থানে দিয়ে দেয় তখন মুয়াক্কিলের যাকাত আদায় হবে না এবং উকিল তার দায়ী হবে। সুতরাং প্রশ্নে উল্লিখিত মাসআলায় যাকাত আদায়কারী যাকাত আদায় হবে না বিধায় আপনি তার জন্য গোনাহগার হবেন এবন আপনাকে তার জরিমানা দিতে হবে। বাহরুর রায়িক: ২/২১২, মিনহাতুল খালিক: ২/২১২, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/২৯২
মুআমালাত-হেবা
সমস্যা: মৃত ব্যক্তির কাফনের কাপড় নিজের সন্তানদের সামর্থ্য থাকা অবস্থায় যে কোন ব্যক্তি (আত্মীয়) দিতে পারবে কি না? অনুরূপ ইহরামের কাপড় দিতে পারবে কিনা?
মওলানা ইউসুফ
দোহাজারী, চট্টগ্রাম
সমাধান: উল্লিখিত বিষয়ে মৃত ব্যক্তির সন্তানদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার কোন আত্মীয় যদি মৃত ব্যক্তির কাফন বা কোন হাজির ইহরামের কাপড় দিতে চায় এবং সন্তানেরা তাতে সম্মত হয় তখন কোন অসুবিধা নেই। বরং এটা জায়েয হবে। ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/১৬২, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৩২, হিদায়া: ৩/৬৯০, আল-মুহীতুল বুরহানী; ২/৩০২
সমস্যা: আমাদের এলাকায় নতুন এক প্রকারের ব্যবসা চালু হয়েছে। যেখানে ৩০০ টাকা মূল্যে শর্তসংবলিত ফরম বিক্রি করা হচ্ছে এবং উক্ত ফরম ক্রেতাদেরকে ব্যবসায়ীরা ঋণবাবদ ১০০০ (এক হাজার) বা ২০০০ (দুই হাজার) টাকা এক মাসের জন্য এই শর্তে দিচ্ছে যে, মাস শেষে উক্ত টাকা পরিশোধ করে দেবে। এখন আমার জানার বিষয় হলো যে, ফরমের মূল্য বাবদ যে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছে তা সুদ হবে কি না? কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
শহিদুল ইসলাম
চকরিয়া, কক্সবাজার
সমাধান: উল্লিখিত ঋণ দেওয়ার যে পদ্ধতি লিখা হয়েছে সে পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহণের সময় ফরম বিক্রি বাবদ যে ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ওই টাকা আসল ঋণের অতিরিক্ত মুনাফা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং তা পরিষ্কার সুদ। তা সুদ হওয়ার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা শরীয়তের মধ্যে ঋণ দিয়ে যা মুনাফা ভোগ করা হয় তা পরিষ্কার সুদ হিসেবে গণ্য হয়। তাই ফরম বিক্রীর মাধ্যমে যে ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে তা পরিষ্কার হারাম ও নাজায়েয। সূরা আল-বাকারা; ২৭৫, আর-বাহরুর রায়িক: ৬/১২৪, সহীহ মুসলিম: ২/২৭, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/২৯১
সমস্যা: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরিরত ব্যক্তিদের বেতন হালাল না হারাম? শরীয়াভিত্তিক সমাধান ব্যাখ্যা করে বলার অনুরোধ রইল।
মাহফুজুল ইসলাম
কর্নেল হাট, চট্টগ্রাম
সমাধান: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কর্মপদ্ধতি ও তাদের ফর্মুলা যেহেতু পরিষ্কারভাবে শরীয়া মোতাবেক হয় না, তাই সেটাকে আমরা সাধারণ প্রচলিত ইন্স্যুরেন্স ও বীমার মতো মনে করি। আমাদের তাহকীক মতে তার মধ্যে সুদ ও জুয়া উভয়ের mgš^q থাকার কারণে আমরা সেটাকে হারাম ও নাজায়েয মনে করি। সুতরাং সেখানে চাকরী করা ও তার বেতন-ভাতা ভোগ করা নাজায়েয ও অবৈধ। সূরা আল-বাকারা: ২৭৫, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/৩৪৩, ফাতাওয়ায়ে ওসমানী: ৩/৩৯৬
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমার এক ছোট বোন সরকারি মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার্থী। তার সাথে প্রতিবেশী একজন ছেলের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন আমার বোন মাদরাসা থেকে আসার পথে তার সাথে সম্পর্ক থাকা ছেলে এবং তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে সেই ছেলের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। সেখানে বিয়ের কোন ধরণের কাবিননামা হয়নি। এখন আমার মা এবং পরিবারের সকল সদস্য তার বিয়ে বন্ধন বিচ্ছেদ করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই ছেলে আমার বোনকে তালাক দিতে বললে সে তালাক দেয় না এবং উভয় পক্ষের লোকজন একত্রে মিলে তাকে তালাক দিতে বললেও সে তাকে তালাক দেয় না। তাই এ অবস্থায় আমার বোনকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে পারছি না। এখন জানার বিষয় হলো, আমার বোনকে কীভবে অন্যত্র বিয়ে দিতে পারি? এ সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাহফুজুল করীম
উত্তর ধুরুং, কুতুবদিয়া
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় ছেলের সাথে যে উক্ত মেয়ের মৌখিকভাবে বিয়ে হয়েছে এবং সরকারিভাবে কোন কাবিননামা হয়নি, তাই যেকোন প্রকারে বাধ্য করে হলেও উক্ত ছেলের নিকট হতে তালাক নিতে হবে এবং তালাকের ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র বিয়ে দিতে পারবে। উক্ত ছেলের নিকট হতে তালাকের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছিন্ন করা ব্যতীত অন্য কোন ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া শরীয়ত মতে জায়েয ও বৈধ হবে না। তবে সেই ছেলের সাথে ঘর-সংসার না হয়ে থাকলে বিয়ে বিচ্ছেদের পর তাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে কোন ধরণের ইদ্দত অতিবাহিত করতে হবে না। ই’লাউস সুনান: ১১/১৭৭, আদ-দুররুল মুখতার: ৩/২৫৯, বাহরুর রায়িক: ৩/২৪৫
সমস্যা: আমার স্ত্রী নিজ বড় খালার কাছ থেকে ছোট বেলায় দুধ পান করে। তখন তার বড় খালার একটি মেয়ে দুধ পানরত ছিল এবং তার তিন বছর বড় একটি বড় ভাই ছিল। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমার স্ত্রী তার বড় খালার বড় ছেলের সাথে কথা বলা কিংবা দেখা দেওয়া জায়েয হবে কিনা? একজন আলেম বলেছেন যে হুরমতে রেযাআত প্রমাণিত হওয়ার জন্য উভয়জন মুদ্দতে রেযাআতের মধ্যে দুধ পান করা আবশ্যক। আর বড় ছেলে যেহেতু তিন বছর বড় ছিল তিনি মুদ্দতে রেযাআতে না থাকার কারণে তাদের মাঝে হুরমতে রিযাআত প্রমাণিত হবে না। সুতরাং তারা পরষ্পরের সাথে দেখা দেওয়া কিংবা কথা বলা জায়েয হবে না। তাই মুফতিয়ানে কেরামের সমীপে সঠিক শরয়ী সমাধান কামনা করছি।
মুহাম্মদ জালালুদ্দীন
চকরিয়া, কক্সবাজার
সমাধান: আপনার স্ত্রী যখন তার খালা থেকে মুদ্দতে রেযাআতের ভেতরে দুধ পান করেছে, তখন তার খালা তার জন্য দুধমা হিসেবে গণ্য হয়েছে এবং তার উক্ত খালার সব ছেলে মেয়ে তার জন্য দুধ ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হয়েছে। সুতরাং আপনার স্ত্রী তার উক্ত খালার সব ছেলেকে দেখা দিতে পারবে। কেননা ওরা তার আপন দুধভাই হিসেবে গণ্য হয়েছে। তার সাথে দুধ পান করুক বা না করুক। তাই যে মৌলভী সাহেব এরকম কথা বলেছে, তার কথা একেবাবে ভিত্তিহীন ও ভুল। ফেকাহ ফতওয়ার কিতাবাদীতে তার কোন দলিল নেই। সূরা আন-নিসা: ২৩, সহীহ আল-বুখারী: ৩/২২২, উমদাতুল কারী: ২০/২৪৫, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৩/৩১
সমস্যা: আমি একজন সৌদি প্রবাসী। রমযানের পরে বাড়িতে আসি। গত কিছুদিন পূর্বে আমার স্ত্রীর সাথে আমার ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সে আমার আম্মার সামনে আমাকে তুই তোকারি করে কথা বলে এবং আমার আম্মাকে বলে আপনার ছেলে কত খারাপ আপনি তা জানেন না। আর সে আমাকে বলে তুমি বিভিন্ন মেয়ের সাথে কথা বল। তখন আমি বললাম তুমিও বিভিন্ন ছেলের সাথে বলো। এ নিয়ে উভয়ের মাঝে ঝগড়া লেগে থাকে। এক পর্যায়ে সে বলে তোর ঘরে থাকবোনা, তোর ভাত খাবো না। আমি এখনি চলে যাবো। তখন আমার অধিক রাগ ওঠে যায়। তাই বলি, ঠিক আছে আমিও আর কারো সাথে কথা বলব না, তুমিও কারো সাথে কথা বলবেনা। তুমি যদি কোন পুরুষের সাথে কথা বলো তাহলে তুমি তিন তালাক। এর পর থেকে সে তার চার বছরের ছোট ছেলে ব্যতীত কারো সাথে কথা বলে নি। এখন আমার জানার বিষয় হলো:
- ভবিষ্যতে সে কার কার সাথে কথা বলতে পারবে এবং কার সাথে কথা বললে তালাক পতিত হবে?
- আমার উক্ত কথা থেকে রুজু করতে চাইলে রুজু করতে পারব কিনা? বিশেষ করে এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আমার এখন করণীয় কী?
- এক্ষেত্রে যদি কাউকে সালাম দেয় বা সালামের জবাব দেয় তখন তালাক পতিত হবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
বেলাল হোসেন
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত ঘটনায় স্বামী স্ত্রীকে যে শর্ত সাপেক্ষভাবে তিন তালাক দিয়েছে সে শর্ত লঙ্ঘন হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে। আর পুরুষ শব্দটি ব্যাপক; মাহরাম ও গায়রে মাহরাম উভয় প্রকার তার আওতাভূক্ত। যদিও এক্ষেত্রে দেশীয় প্রচলন হিসেবে পুরুষ বলতে গায়রে মাহরাম পুরুষ উদ্দেশ্য নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্ত্রী যদি রোগাক্রান্ত হয় এবং ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য হয় এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বাধ্য হয়, তখন ডাক্তারের সাথে কথা বলার সাথে সাথে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে। এরকম আরও অনেক সময় আসতে পারে যখন স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে কথা বলতে বাধ্য হবে। তখন শর্ত লঙ্ঘন হওয়ার কারণে স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে। তা স্ত্রী জানতেও পারবে না এবং স্ত্রী স্বামীর ওপর পরিষ্কার হারাম হয়ে যাবে। তাই আমাদের তাহকীক মতে উক্ত ঘটনায় ভেজালমুক্ত পদ্ধতি হবে। তিন তালাকের অভিশাপ থেকে মুক্তি পওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী উক্ত শর্ত লঙ্ঘন করার পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে শর্ত বিহীন এক বায়িন তালাক দিয়ে দেবে। তালাক দেওয়ার পর থেকে স্বামী থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকবে। অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে কোন ধরণের আলাপ সংলাপ করতে পারবে না। তালাকের ইদ্দত তিন হায়েজ তথা মাসিকস্রাব অতিবাহিত হওয়ার পর আর তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভপ্রসব করার পর স্ত্রী শর্ত লঙ্ঘন করবে। অর্থাৎ কোন বেগানা পুরুয়ের সাথে কথা বলে ফেলবে। তখন শর্তের সাথে সমপৃক্ত তিন তালাক পতিত হয়ে বৃথা হয়ে যাবে। কেননা সে সময় স্ত্রী বেগানা মহিলার মত হয়ে যাবে এবং তালাকের মহল থাকবে না। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী সম্মতিক্রমে নতুনভাবে কমপক্ষে সর্বনিম্ন মহর ২৫০০ টাকা নির্ধারণ করে আকদ নিকাহ করে নেবে। এরপর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর সংসার করতে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু স্বামী আর মাত্র দুই তালাকের মালিক থাকবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পর আপনার প্রশ্নের ক্রমিক নাম্বার হিসেবে উত্তর নিম্নে দেওয়া গেলো:
- উরূফ মতে সে স্ত্রী মাহরমের সাথে কথা বলতে পারবে।
- পারা যাবে না। কেননা যে কোন তালাক দেওয়ার পর তা ফেরত নেওয়া যায় না।
- সালামও কথার অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তালাক পতিত হয়ে যাবে। ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/৬০৫, হিদায়া: ৩/২৮, রদ্দুল মুহতার: ৪/৬০৯, মাজমাউল আনহুর: ৫/৪৮৪
সমস্যা: এক মহিলা দাবি করছে যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়েছে এবং মহিলা নিজ কানে তা শুনেছে। আর মহিলার স্বামী দাবি করছে যে, আমি এমন রাগ অবস্থায় তালাক দিয়েছি যে, আমার হুঁশ-জ্ঞান ঠিক ছিলোনা। আমি কী বলেছি তা আমি জানি না। আমার স্ত্রী বলছে আমি তাকে তিন তালাক দিয়েছি। এখন মহিলা জানতে চায় যে, তার স্বামীর সাথে ঘর সংসার করতে পারবে কিনা?
শামছুল ইসলাম
কাজিরহাট মাদরাসা
সমাধান: স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর সাধারণ চরম রাগ স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হওয়ার মধ্যে বাধা হয় না। কেননা আমাদের দেশে প্রায় তালাক স্বামীর সাধারণ চরম রাগের সময় দেওয়া হয়। সুতরাং উল্লিখিত ঘটনায় স্ত্রী যখন নিশ্চিতভাবে একথা দাবি করছে যে, স্বামী সেই রাগের সময় স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে এবং স্ত্রী তিন তালাক দেওয়ার কথা নিজ কানে শুনেছে। সুতরাং স্বামী যদিও স্বীকার না করে এবং অজ্ঞতা প্রকাশ করে কিন্তু স্ত্রী নিশ্চিতভাবে স্বামী কর্তৃক তিন তালাক দেওয়ার কথা দাবি করায় উক্ত স্ত্রী সে স্বামীর জন্য পরিষ্কারভাবে হারাম হয়ে গেছে। তার জন্য উক্ত স্বামীর সাথে মেলামেশা ও ঘর সংসার করা কোন অবস্থাতেই জায়েয ও বৈধ হবে না। বরং যে কোন প্রকারে উক্ত স্বামী হতে পৃথক হয়ে যেতে হবে। আর বিশুদ্ধভাবে শরয়ী হালালা ব্যতিত উক্ত স্ত্রী ওই স্বামীর জন্য হালাল হবে না। সূরা আল-বাকারা: ২৩০, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/৪৬৩, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৩৫৪, বাদায়িউস সানায়ি’: ৩/১৮৭
সমস্যা: আমি সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্থ ও মাতাল অবস্থায় আমার স্ত্রীর সামনে এবং আড়ালে আমার মা শুনার মত আমার স্ত্রীকে একথা বলেছি যে, তুমি আমার কাছে আসলে আমার মায়ের সাথে যেনা করার মত এবং আমি তোমার কাছে গেলে তুমি তিন তালাক। তখন থেকে এই পর্যন্ত কোন প্রকার মেলা-মেশা কাছাকাছি এবং কথাবার্তা হয়নি। এখন আমাদের পূর্বের সংসার বহাল রাখার শরয়ী বিধান জানিয়ে বাধিত করলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
মুহাম্মদ হারুন
রামু, কক্সবাজার
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী নেশাগ্রস্থ ও মাতাল অবস্থায় স্ত্রীকে যে শর্ত সাপেক্ষে তিন তালাক দিয়েছে, উক্ত তিন তালাক শর্ত লঙ্ঘন হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রীর ওপর পতিত হবে। অতএব স্ত্রীর সাথে সংসার এবং মেলা-মেশা করার সাথে সাথে স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হবে। কেননা শরীয়তের মধ্যে স্বামী নেশাগ্রস্থ ও মাতাল অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে শাস্তস্বরূপ উক্ত তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে যায়। তাই উক্ত ঘটনায় সহবাসের দ্বারা তিন তালাক পতিত হবে। সূরা আল-বাকারা: ২৩২ ও ২২, আদ-দুররুল মুখতার: ২২৭, রাদ্দুল মুহতার: ৪/৬০৯, হিদায়া: ২/৩৮৫
বিবিধ
সমস্যা: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমান এবং হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হোস্টেলে খাবারের দাম বেশি। তাই কিছু মুসলমান ছাত্র-ছাত্রী হিন্দু হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে। এখন আমার প্রশ্ন হলো, মুসলাম ছাত্র ছাত্রীদের জন্য হিন্দুদের হোটেলে খাবার খাওয়া জায়েয হবে কি না? কারণ হিন্দুরা তাদের ধর্ম অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে গোবর ছিটিয়ে গরুর মল তাদের থালা-বাটি ইত্যাদি পবিত্র করে থাকে। দলিল সহকারে জানালে আমরা উপকৃত হব।
শোয়াইব আহমদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য হিন্দুদের পাককৃত খানা খায়। তাদের স্মরণ রাখা উচিৎ, বরং একান্ত কর্তব্য যে, হিন্দুদের মধ্যে আমাদের মুসলমান এবং ইসলামের প্রতি যে বিদ্বেষ রয়েছে তার কারণে তারা মুসলমানদের খানাপিনার পবিত্রতার দিকে আদৌ লক্ষ করে না যদিও বাহ্যিক আচার আচরনে পরিষ্কার পরিছন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং তাদের পাককৃত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব। আর যদি তাদের হোটেলের মধ্যে তাদের জবাইকৃত কোন পশু পাখির গোস্ত খাওয়ানো হয়, বা মুসলমানদের জন্য হারাম পশু পাখির গোস্ত দেওয়া হয়, তাহলে সেসব আহার করা হারাম। বাকি গোস্ত ব্যতিত যদি তাদের জন্য অন্য দ্রব্য মাছ-শাক সবজি ইত্যাদি দেওয়া হয় তা যদিও জায়েয হবে, কিন্তু উল্লিখিত কারণে তা থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ মহান আল্লাহ পাক বিজাতিদের সাথে বন্ধুত্ব এবং ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেছেন। সূরা আত-তাওবা: ১৫৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৩৪৭, ফাতাওয়ায়ে মহমুদিয়া: ৮/২৬২
সমস্যা: কোন মুসল্লি যদি গায়ের জোরে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়ে হয়ে পবিত্র কবরস্থানে গরু ছাগল চরায়, কেউ মানা করলে ক্ষমতার দাপট দিয়ে স্থানীয় লোকদের অপমানিত করে। তার ব্যাপারে শরীয়ত কি বলে?
মো. ইছামুদ্দীন
ফাঁসিয়খালী, চকরিয়া
সমাধান: কবরস্থানের যেখানে কবর আছে সেখানে বিনা প্রয়োজনে চলা ফেরা করা এবং পেশাব পায়খানা করা ও গরু ছাগল চরানো ইত্যাদির দ্বারা অপমানিত ও অপবিত্র করা শরীয়তের দৃষ্টিতে মাকরুহ ও না জায়েয। তিরমিযী শরীফ: ১/২০৩, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/২৪৫, মারাকিউল ফালাহ: ৩৭৭
সমস্যা: কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক এরকম আইন প্রনয়ন করা হয়েছে যে, যদি কোন ছাত্র মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকে তাহলে দিন প্রতি দশ টাকা বা নির্ধারিত হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে এবং উক্ত জরীমানার টাকা গুলো শিক্ষা বিভাগীয় বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হবে এটা শরীয়তে দৃষ্টিতে বৈধ কিনা?
মুহাম্মদ আনোয়ার
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: আমাদের ইমাম আবু হানিফা ও আরও অনেক ইমামদের মতে কোন অপরাধের ওপর আর্থিক দণ্ড বা জরিমানা করা জায়েয ও বৈধ নয়। অবশ্য যেহেতু আমাদের কওমী মাদরাসাসমূহে ছাত্রদেরকে প্রায় সবকিছু ফ্রি দেওয়া হয় বিধায় ছাত্রদেরকে কোন অপরাধের জন্য তাদের ইসলাহ ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে জরিমানাস্বরূপ আংশিক কিছু খোরাকি বা শিক্ষকের বেতন বা হোস্টেল ভাড়া ইত্যাদি বাবৎ কিছু টাকা-পয়সা নেওয়া হয় তার কিছু সুযোগ ও অবকাশ রয়েছে। এতে বিশেষ কোন অসুবিধা নেই। উমদাতুল কারী: ৫/১৫৯, শরহুন নকায়া: ২/৩৯৭
PDF ফাইল…
[button link=”http://at.jamiahislamiahpatiya.com/wp-content/uploads/2019/11/November19.pdf”]ডাউনলোড করতে এখানে টাচ বা ক্লিক করুন[/button]
বিভাগীয় নোটিশ
দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।