হাদীসের আলো সমাজের পাথেয়
তানভীর সিরাজ
সমবেত মজলিসে একদিন নবী (সা.) সভাসদকে সম্বোধন করে বলেন, জানো? আমার প্রিয় সাহাবীরা! আল্লাহ কর্তৃক আমার কাছে তিনটি জিনিসকে প্রিয় করা হয়েছে। এরপর তিনি এক এক করে বলতে শুরু করলেন। বললেন,
«حُبِّبَ إِلَيَّ الطِّيْبُ، وَالنِّسَاءُ، وَجُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِيْ فِي الصَّلَاةِ».
১, ‘খুশবো বা সুগন্ধি,
২, নারীসমাজ,
৩, আমার চক্ষু শীতল হয় নামাযে।’[1]
প্রসঙ্গকথা: নারীসমাজকে রাসূলের কাছে মুহব্বতের বিষয় তখন করা হয়েছে যখন নারীদের বাজারজাত পণ্যের মতো বাজারে তুলা হত আর অন্যান্য বস্তুর মতো মান দেওয়া হতো। মনে করা হতো তারা লজ্জার কারণ। আর তাই তাদের জ্যান্ত কবরকরণ করা হতো! কী মানবতা বিরোধী কাজ! মানবতার মুক্তির দূত নবী (সা.) সেই সময় নারীসমাজকে ভালোবেসে জাহেলদের অঙ্গুলি ইশারায় শিক্ষা দিয়েগেছেন যে, তারা (নারী) আমাদের মা, আমাদের মেয়ে আর স্ত্রী। তাদের সম্মান চীর উন্নত। চির অম্লান। সন্তান জান্নাত পেতে চাইলেও মায়ের জাতকে তুষ্ট করতে হয়। তিনিই তো বিধবাকে আশ্রয়দাতা আর আমাদের নজরে আসে না যে, তিনি প্রায় ১০ জন বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন এবং নিজের ঘরকে পর্যন্ত এতিমদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছিলেন।
আজ যারা সর্বস্ব অবহেলিত ও নির্যাতিত আর নিষ্পেষিত সেযুগে তাদের আশার আলো ছিলেন কেবল মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)।
তাঁর মজলিসে উপস্থিত ছিলেন গুহার সাথী, লা-তাহযানের অধিকারী হযরত আবু বকর (রাযি.)। আশেকে রাসূল আজীবনের আত্মীয়বন্ধু হযরত আয়েশা (রাযি.)-এর পিতা বলে উঠলেন,
«صَدَقْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَحُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثٌ: النَّظَرُ إِلَى وَجْهِ رَسُوْلِ اللهِ، وَإِنْفَاقُ مَالِيْ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ، وَأَنْ يَّكُوْنَ ابْنَتِيْ تَحْتَ رَسُوْلِ اللهِ».
‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সত্য বলেছেন। আমার কাছেও দুনিয়ার তিনটি বিষয় প্রিয়। তিনি বলেন,
- আল্লাহর রাসূলের দিকে তাকানোটা,
- আমার ধন-সম্পদ আল্লাহর রাসূলের জন্য খরচ করাটা,
- আমার মেয়ে আল্লাহর রাসূলের অধিনে থাকাটা।’
প্রসঙ্গকথা: আজকাল আমরাও আশেকে রাসূল, তবে নিজের জানমাল অক্ষুন্ন রেখেই আমরা আস্ত আশেকে রাসূল। সেযুগে তুলনামূলক নবীর শানে নাত বা গযল কিংবা কবিতা কম শোনা যেতো, দেখা যেতো বাস্তব নবীপ্রেম কাকে বলে। এমনকি মানসিক প্রশান্তির জন্য আপন মেয়েকে নবীর কাছে বিয়ে দিয়ে দেন যখন তিনি প্রায় বিপত্নীক।
সাহাবাগণ রাসূলের কথা মানতেন ভক্ত হয়ে, স্বার্থান্ধ হয়ে নয়। এজন্য আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি রাজি আর খুশি। বলা হয়েছে, رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُؕ ۰۰۱۱۹|[2]
সর্বপ্রথম মুক্তকণ্ঠে ইসলামের ঘোষক, উম্মতের মধ্যে দ্বিতীয় জান্নাতি হযরত ওমর (রাযি.) বলে উঠলেন,
«صَدَقْتَ يَا أَبَا بَكْرٍ! وَحُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثٌ: الْأَمْرُ بِالْـمَعْرُوْفِ، وَالنَّهْيُ عَنِ الْـمُنْكَرِ، وَالثَّوْبُ الْـخَلِقُ».
‘আবু বকর! সত্য বলেছ তুমি। আমারও দুনিয়ার তিনটি কাজ বেশ পছন্দনীয়। যথা-
- সৎ কাজের আদেশ,
- অসৎ কাজের নিষেধ,
- পুরোনো কাপড় পরিধান করা।’
প্রসঙ্গকথা: ভালো কাজের আদেশ করা আর খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করা ছিল হযরত ওমর (রাযি.)-এর স্বভাবজাত বিষয়। তবে সাদামাটা জীবনযাপনে পবিত্র পুরাতন কাপড় পরিধান করার যে গুণটি হযরত ওমর (রাযি.) তা আমাদের নাড়া দেয়, ইঙ্গিত বহন করে হযরত ওমর (রাযি.)-এর নিরহংকারের দিকটি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ ٞ ۰۰۲۹
‘তারা কাফিরদের সাথে চরম কঠোর হলেও নিজেদের বেলায় সদয়, দয়ালু।’[3]
শায়খুল হাদীস হাফিয আল্লামা যাকারিয়া রহ. এর কিতাব উম্মুল আমরাযে নিরহংকারের একটি আমল পেয়েছিলাম। নিসফে সাক বা নলার মাঝ বরাবর লুঙ্গি বা পাজামা পরা হলো নিরহংকারের আলামত। আর পুরাতন কাপড় পরিধানও এমনই আমল। যাকে দেখলে শয়তান পলায়ন করে তিনিই জীর্ণ কাপড় পরেছেন! পুরাতন কাপড় পরিধান করা হযরত ওমর (রাযি.)-এর সুন্নত।
সহজ করে বলি, এখানে পবিত্র, পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্ন পুরাতন কাপড়ই উদ্দেশ্য।
দুই নবীকন্যার স্বামী আর শ্রেষ্ঠ ধনীদের অন্যতম এবং জামিউল কুরআন, কুরআনপ্রেমিক হযরত উসমান (রাযি.) মেতে উঠলেন আর বললেন,
«صَدَقْتَ يَا عُمَرُ! وَحُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثٌ: إِشْبَاعُ الْـجِيْعَانِ، وَكِسْوَةُ الْعُرْيَانِ، وَتِلَاوَةُ الْقُرْآنِ».
‘ভাই ওমর! আপনি সত্য বলেছেন। দুনিয়ার তিনটি আমল আমার কাছেও প্রিয়। তিনি বলেন,
- অনাহারীকে পরিতৃপ্ত করা,
- বিবস্ত্রকে বস্ত্র দান করা,
- কুরআন তিলাওয়াত করা।’
প্রসঙ্গকথা: যিনি শাহাদাত বরণ করেছেন কুরআন পাঠরত অবস্থায়, তিনি হলেন দুই নূরের অধিকারী হযরত হযরত উসমান (রাযি.)। যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অনাথ, গরীব দুঃখী আর অনাহারীদের পাশে দাঁড়ানো আর তাদের সেবা-শুশ্রূষা করা। তার আরেকটি প্রসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য হল, তিনি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেই কান্নাকাটি শুরু করে দিতেন, এমনকি কাঁদতে কাঁদতে তার দাড়ি পর্যন্ত ভিজে যেতো।
এ কুরআনপ্রেমিকের কবরে কুরআন তার সঙ্গী হবে না তো কার সঙ্গী হবে! রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে।’ (সহীহ মুসলিম)
কিয়ামতের প্রথমঘাটি হল কবর। সুতরাং যার কবর জগত নিরাপদ হবে তার সব ঘাটি সহজ ও সুন্দর হবে।
হযরত আলী (রাযি.) বলেন,
«صَدَقْتَ يَا عُثْمَانُ! وَحُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا ثَلَاثٌ: الْخِدْمَةُ لِلضَّيْفِ، وَالصَّوْمُ فِي الصَّيْفِ، وَالضَّرْبُ بِالسَّيْفِ».
‘ভাই উসমান! মিথ্যে নয়, সত্যি বলেছেন। দুনিয়ার তিনটি জিনিস আমার কাছেও প্রিয় করা হয়েছে:
- মেহমানের মেহমানদারি করা,
- গরমকালে রোযা রাখা,
- তরবারি দিয়ে জিহাদ করা।’
প্রসঙ্গকথা: মেহমান নেওয়াজ, কষ্টসহিষ্ণু আর বীর সেনানী আলী মুরতাযার ঐতিহাসিক ইতিকথা মুসলমান জানবে না, আমি তা বিশ্বাস করি না। গতানুগতিক প্রগতির মনুস্বীকৃতি এই যে, জিহাদ মানে জঙ্গিবাদ। আসলে তারা দুইয়ের মাঝে শাব্দিক পার্থক্য যেমন বুঝতে অক্ষম তেমনি পারিভাষিক পার্থক্য বুঝতেও সক্ষম নয়। আর বাস্তবতার পার্থক্যে তারা নিয়মিত ভুল বুঝে আলুকে কচু আর কচুকে আলু বলে বোদ্ধাদের মুখে হাসি ফুটাই! মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ কী বলেন দেখুন তাহলে!
‘জিহাদ হলো ইসলামের প্রাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ইজ্জত ও মর্যাদার যামানত। বিশেষত অমুসলিম শক্তির পক্ষ হতে যখন ইসলামের ওপর কিংবা মুসলিম উম্মাহর কোন অংশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত আসে, আর শরীয়তসম্মত পথে জিহাদের ডাক আসে তখন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের ওপর ফরয হয়ে যায়। যারা প্রত্যক্ষ জিহাদে শরীক হতে অক্ষম তাদেরও তখন দায়িত্ব হয়ে পড়ে মুজাহিদদের পাশে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে তাদের সাহায্য করা।’
তিনি পবিত্র কুরআনের রেফারেন্স টেনে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আদেশ দিয়ে বলেছেন, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কিঞ্চিৎ তিরস্কারের ভাষায় বলেছেন, ‘হলো কী তোমাদের, কেন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করো না? অথচ অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা আর্তনাদ করে বলছে, হে আমাদের রাব্ব! এই জালিমদের জনপদ থেকে আপনি আমাদের উদ্ধার করুন।’ ইসলামের জিহাদ দেশ-কাল এবং সময় ও স্থানের বন্ধনে আবদ্ধ নয়। তাই আল্লাহর রাসূল সা. ঘোষণা করেছেন, ‘জিহাদ চলবে কিয়ামত পর্যন্ত।’ (পুষ্পসমগ্র, পৃ. ২৯৫)
আমি বলি, সময় গড়াবে তো জিহাদী অস্ত্রের ধরণও পাল্টাবে।
যারা জিহাদকে কটাক্ষ করে জঙ্গিবাদ বলতে প্রয়াস চালান, তাদের আমি তৃতীয়পক্ষ বলি আর তারাই মুনাফিক এবং কুরআন অবমাননার শামিল।
নবী (আ.) আর সাহাবাগণ টানা তেরবছর মক্কা নগরিতে কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন তা কি তাদের চোখে পড়ে না? আর রাসূল (সা.)-এর পিট যখন দেয়ালে ঠেকে গেছে আর নির্যাতিত মুসলমানদের অবস্থা করুন থেকে করুণতর হচ্ছে তখন আত্মরক্ষার নিরিখে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে সাহাবাদেরকে নিয়ে ঘোষিত জিহাদের ডাক দিলেন বদর, উহুদ, তাবুক আর খন্দক ইত্যাদির। একচোখা আচরণ বাধ দেন, ভালো হবেন, আর না হয় ত মহাপ্রলয়ে শাস্তির মুখোমুখি হবেন। নাতিদীর্ঘের নিয়তে বলছি, জিহাদ ক্ষেত্র বিশেষে একটি ফরজ ইবাদত।
হযরত আলী (রাযি.) প্রিয় কাজের বিবরণ শেষ হতে না হতে হাজির হলেন রুহুল কুদস, ঐশীবার্তাবাহক হযরত জিবরীল আমীন (আ.)। তিনি বলেন,
«أَرْسَلَنِيَ اللهُ c لَـمَّا سَمِعَ مَقَالَتَكُمْ وأَمَرَكَ تَسْأَلَنِيْ عَمَّا أُحِبُّ إِنْ كُنْتُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا»، فَقَالَ: «مَا تُحِبُّ إِنْ كُنْتَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا»؟ فَقَالَ: «إِرْشَادُ الضَّالِّيْنَ، وَمُؤَانَسَةُ الْغُرَبَاءِ الْقَانِتِيْنَ، وَمُعَاوَنَةُ أَهْلِ الْعِيَالِ الْـمُعَسِّرِيْنَ».
‘আমাকে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাদের কথোপকথন শুনেছেন। হে নবী! আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি আমার কাছে প্রশ্ন করেন আমি যদি দুনিয়াবাসী হতাম তাহলে কী পছন্দ করতাম?’ তখন রাসূল (সা.) তাকে প্রশ্নের সুরে বলেন, ‘আচ্ছা, দুনিয়াবাসী হলে আপনি কী পছন্দ করতেন?’ হযরত জিবরীল (আ.) উত্তরে বললেন, আমি তিনটি বিষয় পছন্দ করতাম।
- পথভ্রষ্টদের সুপথে আহবান করতাম,
- দীনদার গরীবদের মুহব্বত করতাম,
- অভাবী পরিবারবর্গকে সাহায্য করতাম।
প্রসঙ্গকথা: মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া সকল নবী-রাসূলের সুন্নত। কুরআনে দাওয়াতের যে দীর্ঘ পরিক্রমার কথা বলা হয়েছে, তা অনস্বীকর্য।
আল্লাহ বলেন, ‘প্রজ্ঞা আর মনোমুগ্ধকর ও মনোরঞ্জন কথা দিয়ে ডাক (মানুষকে) তোমার রবের পথে।’
প্রতিবেশির কী হক আমার ওপর আছে তা নিয়ে চিন্তা করা রাষ্ট্রিক কাজ। পাশের বাড়ির দীনদার ব্যক্তিটি দিনাতিপাত করেন, যথাসময় পাঁচবার মসজিদে যাতায়াত করেন। আমি লাখপতি আর কোটিপতি, আমি পতি কি তার খবর নিই, না কি প্রতিবছর প্রিমিও আর পালচার নবায়ন করে এবং হজ ও ওমরায় গিয়ে খামখেয়ালি হয়ে বছর পাড়ি দিচ্ছি? আল্লাহ কী বলেন, কান পেতে শুনুন! আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমারা আল্লাহকে সাহায্য কর তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন।’ আল্লাহ তো আর নিজে খান না, খাওয়াতে বলেন তার হতদরিদ্র অসহায় বান্দাদের। এটাই সাহায্য। আপনার আপদবিপদে আগে আসে গরীব প্রতিবেশি। আপনি মারা যান, বুঝবেন, দেখবেন কে কে আপনার দাফন কাফনে এগিয়ে আসে, কিন্তু আপনি মুখ খুলে বলতে পারেন না। করতে পারেন না ওসিয়ত তাকে কিছু দাও বলে ছেলেমেয়ের। অথচ আপনিই তাকে দুনিয়াতে তেমন গুরুত্ব দিতেন না, সে কিন্তু আপনার মৃত্যুর পরেও আপনাকে ভুলে নি! তাই মারা যাবার আগে প্রতিবেশির হক আদায় করেন!
কাছাকাছি বিষয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার প্রতিবেশিকে সম্মান করে।’ অন্য হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে তিরমিযী: ২৪৮৫)
হযরত জিবরীল (আ.) বলেন,
«يُحِبُّ رَبُّ الْعِزَّةِ d مِنْ عِبَادِهِ ثَلَاثُ خِصَالٍ: بَذْلُ الْاِسْتِطَاعَةِ، وَالْبَكَاءُ عِنْدَ النَّدَامَةِ، وَالصَّبْرُ عِنْدَ الْفَاقَةِ».
‘শুধু আমাদের কেন বান্দাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তালারও তিনটি অভ্যাস পছন্দ:
- শক্তি সামর্থকে ব্যয় করা,
- অনুশোচনার সময় কাঁদা,
- অভাব অনটনে ধৈর্য ধারণ করা।’
প্রসঙ্গকথা: রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
«إِنَّ أَفْضَلَ الْـجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ»
‘অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা উত্তম জিহাদ।’[4]
শক্তি যদি আপনার থাকে, ব্যবহার করুন। শক্তি সামর্থ মাশা আল্লাহ আর আপনি যদি ইনশাআল্লাহ বলে চুপ করে বসে থাকেন তা হলে ঈমানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আপনি সবচে’ দুর্বল ঈমানদার। হাদীসে এসেছে,
«مَنْ رَأَىٰ مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ».
‘অন্যায় কাজ দেখলে সাধ্য থাকলে বন্ধ করবে; সাধ্য না থাকলে মুখে প্রতিবাদ করবে; এটারও সামর্থ না থাকলে মনে মনে ঘৃণা করবে। তবে এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।’[5]
তাই আসুন, আমরা উক্ত হাদীস নিয়ে চিন্তা করে করে নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করি।
আল্লাহ আমাদের, আপনাদের আর তাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করেন। আমীন।
সূত্র: মুনাব্বাহাতু ইবনে হাজার আসকালানী, তৃতীয় পাঠ, পৃ. ২১
[1] আবদুর রায্যাক আস-সান‘আনী, আল-মুসান্নাফ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৩ হি. = ১৯৮২ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৩২১, হাদীস: ৭৯৩৯
[2] আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:১১৯
[3] আল-কুরআন, সুরা আল-ফাতাহ, ৪৮:২৯
[4] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১৭, পৃ. ২২৭, হাদীস: ১১১৪৩
[5] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৬৯, হাদীস: ৪৯