নতুন মুসলিম দেশ বাংসামোরো: ম্যানিলার দর্পণে দিল্লির কুৎসিত চেহারা
ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন
বাংসামোরো। ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত নতুন মুসলিম দেশ। স্বায়ত্তশাসন লাভের পর মুক্ত বাতাসে এবারই প্রথম হাজার হাজার স্থানীয় মুসলমান একসঙ্গে পবিত্র ঈদুল আযহার নামায আদায় করল। সম্প্রতি আরো একধাপ এগিয়ে গেল কেন্দ্রীয় ম্যানিলা সরকার কর্তৃক দেশটির স্বতন্ত্র পতাকা ঘোষণার মাধ্যমে। মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী| ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতার্তে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংসামোরো’কে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ এ নতুন মুসলিম জনপদের প্রধান ড. মুরাদ ইবরাহীম।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্ব মানচিত্রে স্বায়িত্তশাসিত নতুন মুসলিম দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংসামোরো। স্বাধীকার লাভের পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না তাদের। রয়েছে সংগ্রাম ও লড়াইয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস। দীর্ঘ খুনরাঙা পথ পাড়ি দিয়েই স্বাধীনতার সুফল লাভ করেছে এ অঞ্চলের মুসলিম জনগণ। সংক্ষেপে তারা ‘মোরো’ হিসেবে প্রসিদ্ধ। শতবছর ধরে মোরোরা নির্যাতিত ও নিপীড়িত। স্প্যানিশ ও ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের মাধ্যমে মোরো মুসলিমরা নির্যাতিত হওয়ার পর গত ৫০ বছর ধরে ফিলিপাইন সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রাম-লড়াই করেছে। অবশেষে স্বাধীনতার স্বাদ পেল। এ-জন্য তাদেরকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য, অশেষ কুরবানি। স্বীকার করতে হয়েছে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা। এক পরিসংখ্যান মতে, লক্ষাধিক মানুষ শহিদ হয়েছে মুসলিম বাংসামোরোর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে।
এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘বাংসামোরো’র দায়িত্ব নেন মুসলিম নেতারা। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের (Moro Islamic Liberation Front, সংক্ষেপে MILF) চেয়ারম্যান মুরাদ ইবরাহীমের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন। এর আগে বাংসামোরো অঞ্চলের নেতারা প্রশাসক হিসেবে শপথ নেন। নতুন শপথ নেওয়া এই ৮০ জন প্রশাসক ও সরকারের ৪০ প্রতিনিধি ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংসামারোর সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। তরুণদের নিয়ে গঠিত
হবে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ। বহুবিধ স্বপ্ন নিয়ে ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ের এই মুসলিম অঞ্চলের নতুন শান্তি-যাত্রা শুরু হলো।
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় বাংসামোরো’র দিকে নজর দেয়নি ফিলিপাইন সরকার। বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার এ অঞ্চলের মানুষ। ফিলিপাইন সরকারের মতো মুসলিমবিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও মুসলিম অধ্যুষিত জনপদটির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। যে কারণে বাংসামোরো একেবারেই অনুন্নত। তবে সুখের খবর হচ্ছে, এ অঞ্চল এখন ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মক্ষেত্রে নতুনভাবে জেগে উঠেছে। সংগ্রাম-সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরাও আসা শুরু করেছে। তারা বাংসামোরোতে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হ্রদে ছোট্ট নৌযানে করে ঘোরাফেরা করছেন। আবার কেউ কেউ অরণ্যের গহীনে প্রকৃতির সৌন্দর্য খুঁজছেন। অনেকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক জায়গুলোতে ভিড় করছেন। বাংসামোরোর নতুন সরকার কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আইনগত ও অর্থনৈতিক লাভের লক্ষ্যে সমান্তরালে এই অঞ্চলের সম্ভাবনাগুলো সর্বাধিক কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বাংসামোরোর কৃষিউন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তুরস্ক সরকার। তাদের আশা, অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রও এগিয়ে আসবে তাদের সাহায্য-সহযোগিতায়।
ইতিহাসের আলোকে জানা যায়, ড. হাজী মুরাদ ইবরাহীমের অব্যাহত সংগ্রাম ও দৃঢ় মনমানসিকতার দরুন বাংসামোরোর জনগণ স্বায়ত্তশাসিত সরকার পেয়েছে। এক প্রসঙ্গে মুরাদ বলেন, ‘আমরা সংগ্রাম করেছি। কুরবানি দিয়েছি। এবার বাংসামোরোতে একটি আদর্শ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এমন সরকার যা এ-অঞ্চলের মানুষের নিকট গৃহীত হবে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে, জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন ঘটাবে।’ (সূত্র: কুয়েতভিত্তিক পত্রিকা মাসিক আল-মুজতামা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সংখ্যা)
স্বায়ত্তশাসিত বাংসামোরোকে পার্শ্ববর্তী দেশ ব্রুনাই দারুস সালাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়ার কথা। পাশাপাশি এসব দেশ বাংসামোরের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস মরো নেতাদের।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের এ অঞ্চলে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলাফলের ভিত্তিতেই মূলত মুসলিম বাংসামোরো অঞ্চল আইনি ভিত্তি ও মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণের সাংবিধানিক অধিকার লাভ করে। গণভোটে এক মিলিয়ন সাত লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে এক মিলিয়ন পাঁচলাখ ৪০ হাজার ১৭ জনই হ্যাঁ-ভোট প্রদান করে। ফিলিপাইনের নির্বাচন কমিশন গণভোটের ফলাফল ঘোষণা করে। ঘোষণায় জানানো হয়, কোতাবাতোর ৬৩টি গ্রাম ও ১টি শহর নতুন করে মুসলিম বাংসামোরোর অংশ হতে যাচ্ছে। পরে ফিলিপাইন সরকার ও জনগণ গণভোটের রায়কে স্বাগত জানায়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে সরকার ও মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ঐতিহাসিক এই গণভোটের আয়োজন করা হয়। এই চুক্তি ‘বাংসামোরো অরগানিক ল’ (Bansamoro Organic Law) নামে পরিচিত। মুসলিম মিন্দানাওয়ের সীমানা বৃদ্ধি এবং স্বায়ত্তশাসনের পরিধি বিস্তারের প্রশ্নেই ছিল এই গণভোট। গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে ফিলিপাইনের ৫টি প্রদেশ, ৩টি মহানগর, ১১৬টি পৌরসভা ও ২৫৯০টি গ্রাম বাংসামোরোর অংশে পরিণত হয়। প্রদেশগুলো হচ্ছে: মাগোইন্দানাও, দক্ষিণ লানো, বাসিলান, সুলু ও তাউই তাউই। মহানগরত্রয় হচ্ছে: কেন্দ্রীয় শহর কোতাবাতো, মারাউই ও লামেটান। আয়তনের হিসাবে এখন ফিলিপাইন কংগ্রেসে ৮জন মুসলিম প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবেন।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালে ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক তৃতীয় বেনিনো আকিনোর সময় ফিলিপাইন সরকার এবং মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির আওতায় বাংসামোরোর ‘মৌলিক আইন’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূলত এটির প্রেক্ষাপটে মিন্দানাওতে বাংসামোরো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মাগোইন্দানাও, লানো দেল সুর এবং সুলু অঞ্চল বাংসামোরোর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ।
মিন্দানাওয়ে নতুন আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মুসলমানদের আইনি ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জে বিদ্যমান স্বশাসিত অন্যান্য অঞ্চলগুলোর চেয়েও উন্নত সুবিধা দিয়ে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নতুন আইন অনুযায়ী বাংসামোরোর স্বায়ত্তশাসিত সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে শরীয়াসম্মত আদালতও গঠন করবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার মিন্দানাওতে বাংসামোরোর সরকারের কাছে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তবে বাংসামোরোর পানিসম্পদ এবং জ্বালানি উৎস ব্যবস্থা যৌথ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে বাংসামোরোর মুসলিম সরকার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। তবে পররাষ্ট্র, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয় ম্যানিলা সরকারের অনুসরণ করবে। অঞ্চলের ৭৫% ভাগ রাজস্ব বাংসামোরোর মুসলিম সরকার পাবে। বাকি ২৫% ভাগ পাবে কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের ৫% ভাগ রাজস্ব বাংসামোরোর নতুন সরকারকে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী দশবছর পর্যন্ত বছরে পাঁচ বিলিয়ন ফিলিপিনো মুদ্রা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ থাকবে বাংসামোরোর উন্নয়নে।
আইন অনুসারে মরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাবেক যোদ্ধারা এবং মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (MILF)-এর সৈন্যরা সরকারি বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিজেদের অস্ত্র সমর্পন করে স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনে ফিরে আসবে। এ-জন্য গঠিত হয়েছে একটি স্বাধীন কমিটি। এ কমিটিতে রয়েছে তুরস্ক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানি। সম্প্রতি দ্বিতীয় পর্যায়ে অস্ত্র সমর্পন করেছেন বাংসামোরো যোদ্ধারা। এ উপলক্ষে বাংসামোরোর রাজধানী কোতাবাতোয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি তার্কিশ রাষ্ট্রদূত ফাতেহ উলুচভি ফিলিপাইন সরকার ও মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (MILF)-কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অস্ত্র সমর্পনের মাধ্যমে এসব যোদ্ধাদের প্রত্যেকে স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরে নতুন এ দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসঙ্গে গত ৬ সেপ্টেম্বর আঙ্কারা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদুলু অ্যাজেন্সি (Anadolu Agency) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রদূত ফাতেহ আরও বলেন, এ শান্তিপ্রক্রিয়ার দৃশ্যমান সফলতা সবপক্ষের সততা ও আন্তরিকতার প্রমাণ বহন করে। এক্ষেত্রে মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (MILF) যেমন ফিলিপাইন সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা দেখিয়েছে, কেন্দ্রীয় ফিলিপাইন সরকারও তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করেছে। কমিটির সভাপতি রাষ্ট্রদূত ফাতেহ বলেন, উভয়পক্ষের পারস্পরিক এই সমঝোতা ও সহযোগিতা বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। (সূত্র: www.aa.com.tr/ar/1574829)
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শতকরা ৯০% খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর দেশ ফিলিপাইন যখন মুসলিম জনপদ বাংসামোরোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে এসেছে, বত্রিশ কোটি দেবতার দেশ ভারত তার একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাজ্য কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ছিনিয়ে নিল। ১৯৭০ সাল থেকে সংগ্রামরত মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (MILF)-এর দাবি মেনে নিয়ে ম্যানিলা সরকার যে উদারতা দেখিয়েছে, তার চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে অর্থাৎ ১৯৪৮ সাল থেকে স্বাধীকারের জন্য লড়াইরত কাশ্মীরিদের প্রতি সেই সম্মান ও ঔদার্য দেখাতে পারেনি দিল্লির বর্তমান সরকার। উপরন্তু দেশবিভাগের সময় প্রদত্ত কাশ্মীরিদের যে বিশেষ মর্যাদা অব্যাহত ছিল, ৭০ বছর পর বিগত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ (ক) ধারা বিলুপ্তির মাধ্যমে তাও কেড়ে নিল কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।
রক্ত তো উভয় ক্ষেত্রে ঝরেছে। শত শত নয়; লক্ষপ্রাণ ঝরেছে ভারতের কাশ্মীরে এবং ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ে। তবে সেই রক্তের প্রতি যতটুকু সম্মান খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতার্তে দেখাতে পেরেছেন, তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী রামভক্ত মুশরিক নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বময় চলমান আদর্শিক যুদ্ধে এ যেন ফিলিপাইনের কাছে ভারতের শোচনীয় পরাজয়। ম্যানিলার সোনালি দর্পণে দিল্লির কুৎসিত চেহারা।
বাংসামোরো পূর্ব এশিয়ার ফিলিস্তিন নামে সমধিক পরিচিত। তবে মুসলিম মোরো জাতির সৌভাগ্য, অভিশপ্ত ইহুদি সরকার তাদের ভাগ্যে জোটেনি। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইল যে-পথ ও পদ্ধতিতে ফিলিস্তিন-দখলে অগ্রসর হচ্ছে, একই পথ ও পন্থা ভারত কাশ্মীরে গ্রহণ করেছে। ইহুদি-মুশরিক এ মৈত্রীর সবচে বড় শত্রু মুসলিম উম্মাহ। নির্বাচনে জয়ী হলে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব আরো বাড়ানো হবে- মর্মে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক উক্তি দারুণ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে মুসলিম নেতাদের। এ-জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর ওআইসির জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সিএফএম (Council of Foreign Ministers) তথা মুসলিম দেশসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীবিষয়ক ওই বৈঠকে কি সিন্ধান্ত হবে আমরা জানি না। তবে এ-কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অতীতে মুসলমানদের বন্ধু নির্বাচনের ন্যায় শত্রু নির্বাচনেও যদি ভুল করা হয়, তা হলে উম্মাহর পরাজয় অনিবার্য। এ-জাতির দুর্গতি আরো প্রলম্বিত হবে। যে যা-ই বলুক, আল্লাহর কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। ঈমানদার হিসেবে এটা আমাদের ঐকান্তিক বিশ্বাস। কাশ্মীর-বাংসামোরো-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে আরো একবার সত্যপ্রমাণিত হলো পবিত্র কুরআনের অমিয় বাণী। প্রিয়নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا١ۚ وَلَتَجِدَنَّ اَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ قَالُوْۤا اِنَّا نَصٰرٰى١ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا وَّاَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ۠۰۰۸۲
‘আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদি ও মুশরিকদেরকে পাবেন এবং আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন যারা নিজেদেরকে খ্রিস্টান বলে। এর কারণ খ্রিস্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না।’ (সূরা আল-মায়িদা: ৮২)