কাশ্মীরী জনগণের ভবিষৎ
মাহমুদুল হক আনসারী
সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কাশ্মীরবাসীর মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষোভ সুষ্টি হয়েছে। এতোদিন এ অঞ্চলের মানুষ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করলেও ৩৭০ ধারা ভারত সরকার বিলুপ্ত করার ফলে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন উঠিয়ে নিল। স্বায়ত্তশাসন তুলে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আসলে কি করতে যাচ্ছে সেটা বিশ্বের সচেতন মানুষ বুঝে নিতে কষ্ট হবে না।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট কাশ্মীরকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আয়ত্তে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ অঞ্চলের জনগণের বাক স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর হচ্ছে বলে মনে হয়। হাজার হাজার সেনা সদস্য সেখানে মোতায়েন করেছে মোদী সরকার। কোনো হাঙ্গামা ছাড়া পবিত্র ঈদুল আযহার পূর্বে সৈন্য মোতায়েন করে সেখানকার নাগরিক পরিবেশকে অগ্নিকুণ্ডের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিবিসির ভাষ্যমতে, ১৪৪ ধারা জারি করে সেখানে কোনো মানুষকে রাস্তা ঘাটে বের হতে দেয় নি। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ বন্ধ করে রেখেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। ছাত্র যুবক দেখলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। নারীদের প্রতি অশোভনীয় আচরণ করা হচ্ছে। বয়ষ্ক পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা চিকিৎসা পর্যন্ত গ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। লাখ লাখ মুসলমান ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদুল আযহার পশু কুরবানি দিতে পারেনি। অনাহারে অর্ধাহারে এ পর্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষ দিন কাটাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছায় কাশ্মীরিদের আগামী দিনের কি ভবিষৎ দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।
এ অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দীর্ঘদিন থেকে হুমকির মধ্যে চলে আসছে। এ হুমকি এবং আশঙ্কা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার আরো বৃদ্ধি করেছে। রাজনৈতিক বিজ্ঞ মহল মনে করছে মোদী সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরের ভবিষৎ রাজনীতি নিঃসন্দেহে উগ্র ও উত্তপ্ত হবে। কারণ এ অঞ্চলের মানুষ এতোদিন তাদের নিজেদের মতো করে চলে আসছিল। ধর্মীয়ভাবে নিজস্ব স্বাধীন সংস্কৃতি পালন করেছিল। এখন নানাভাবে এ মানুষগুলো কেন্দ্রীয় শাসনের মাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা হারাতে হবে। এ বিষয়টি সহজভাবে কাশ্মীরের জনগণ মানতে পারছে না। কাশ্মীরের জনগণকে না বলে না বুঝিয়ে তড়িগড়ি করে রাতারাতি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেল মোদি সরকার সেখানে অনেক রহস্যের জট রয়েছে। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের মুসলিম ধর্মীয় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন কাশ্মীরি জনগণের পক্ষে সমর্থন জানাতে দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন কাশ্মীরি জনগণের ওপর নিপীড়ন, হয়রানি, ভোগান্তির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা মানবাধিকার রক্ষায় তাদের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। চির শত্রু ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ বাধার হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে উভয় দেশের বেশ কিছু সৈন্য নিহত হয়েছে। এসব কারণে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তথা এ অঞ্চলের স্থিতিশীল পরিবেশ এখন অনেকটা উত্তপ্ত।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন কাশ্মীরি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। কাশ্মীরকে ওই অঞ্চলের মানুষের চিন্তা চেতনায় পরিচালনা করার দাবি জানিয়েছে। সব ধরনের দমন নিপীড়ন, হামলা মামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কড়া সমালোচনা করে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের স্থিতিশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবেশ রাখতে হলে ভারত কাশ্মীর পাকিস্তানের ধর্মীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সার্কভুক্ত দেশসমূহের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা চায়। কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ধর্মীয় পরিবেশ অবশ্যই যে উত্তপ্ত হবে সেটা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। কাশ্মীরকে নিয়ে মোদি সরকার কেনই বা নতুন করে খেলতে গেলেন সেটাই এখন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে ভাবছ। তাহলে মোদি সরকার এ অঞ্চলের বাস্তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ কতটুকু চায় সেখানে অনেক প্রশ্ন থাকে। বাস্তবে বলতে গেলে এ অঞ্চলের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য ভারত সরকারের গঠনমূলক কর্মসূচি থাকা দরকার। যেহেতু ভারত শাসিত কাশ্মীর ভারতের নিয়ন্ত্রণে। সেখানকার শান্তি শৃঙ্খলা আর অশান্তি সবকিছু ভারতের নাগালের মধ্যে আছে। কাশ্মীরকে উত্তপ্ত আর অস্থিতিশীল করার মধ্য দিয়ে ভারত সরকারের কি সুফল পাওয়ার আছে সেটাও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ছাড়া কারো বলার নেই। আমাদের বক্তব্য কাশ্মীরকে সে অঞ্চলের জনগণের সুখ শান্তির ওপর ছেড়ে দেওয়া সমুচিত হবে। তাদের মতের বিরোদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া এ অঞ্চলের শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা করার তা কাশ্মীরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে করা চায়। সেখানকার নাগরিক ও মানবাধিকার যেনো কোনো অবস্থায় হুমকির মধ্যে না পড়ে সেটাই প্রত্যাশা।