জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হযরত মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নিজামী (রহ.): স্মৃতি ও স্মরণ!

হযরত মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নিজামী (রহ.): স্মৃতি ও স্মরণ!

হযরত মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নিজামী (রহ.): স্মৃতি স্মরণ!

মুহাম্মদ সলিম মাহদী কাছেমী

 

এক. ভুল সংশোধনে তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শ

আজ থেকে প্রায় পনের বছর পূর্বের কথা। তখন জামায়াতে সিউমে পড়ি। এক ছুটিতে বাড়ি যেতে কয়েক দিন দেরি হয়ে গেল। শ্রদ্ধেয় উস্তাদ মাওলানা নজিরুল ইসলাম (বর্তমান মুহাদ্দিস, জামিয়াতুল আবরার ঢাকা)-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই সর্বপ্রথম মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নেজামী (রহ.)-এর রুমে যাওয়া হয়।

মাওলানা (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত আপ্যায়নপ্রিয়। তখনও তিনি মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করানোর উদ্দেশ্যে ছাত্র তালাশ করছিলেন। জামিয়ায় ছুটি চলছে, তাই খাদেমরা কেউ উপস্থিত ছিল না। রুমে প্রবেশ করার পর মাওলানা নজিরুল ইসলাম  পরিচয় করিয়ে দেন। এই ছেলেটি এখানে জামায়াতে সিউমে পড়ে। গত বছর সাহারুমে মারকাযী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। মাওলানা (রহ.) খুশি হয়ে দুআ দিলেন।

অতঃপর তিনি বলেন, তুমি কি মেহমানদের জন্য চা বানাতে পারবে? ইন শা আল্লাহ বলে উত্তর দিলাম এবং ভেতরের রুমে প্রবেশ করলাম। কিন্তু চুলা জালাতে পারছি না! কারণ সেখানে কোন দিয়াশলাই ছিল না। হুযুর লক্ষ করলেন, আমি কি যেন তালাশ করছি। জিজ্ঞাসা করলেন, কি তালাশ করছ? বললাম, দিয়াশলাই। তিনি মুচকি হেসে বলেন, তোমাকে পিটুনি দিতে হবে! বৈদুতিক হিটার চালু করতে দিয়াশলাই লাগে? অতঃপর তিনি নিজেই বটন দাবিয়ে চালু করলেন।

লজ্জিত হলাম। সংশোধিত হলাম। আগামীর জন্য শিক্ষা লাভ করলাম। পরে যখনই তাঁর রুমে যেতাম সেই হিটারের চুলান জরে পড়ত, তখনই হৃদয়ে তাঁর সে মুহাব্বতভরা উক্তিটি ভেসে উঠত, তোমাকে পিটুনি দিতে হবে!

আহ, এখন পর্যন্ত সে ‘পিটুনি’ খাওয়া হলো না। তিনি চলে গেলেন এমন ঠিকানায় যেখানে কেউ কাউকে পিটুনি দিতে পারে না। জানি না এখন আর কেউ এমন ভালবাসার উক্তি দিয়ে সম্বোধন করবেন কিনা? তবে তাঁর সে উক্তি হৃদয়ে সদা অম্লান হয়ে থাকবে।

সেদিন থেকেই মাওলানা (রহ.)-এর সাথে পরিচয়ের সূচনা হয়। এরপর সেই বছরই বেশ কয়েকবার তাঁর রুমে যাতায়ত হয়। তাঁর কথায় বিমুগ্ধ হতাম। তাঁর কাহিনিগুলো শুনে উজ্জিবীত হতাম। তবে তাঁর কথায় কারো কোন গীবত-শেকায়ত, অভিযোগ-অনুযোগ শুনতাম না। মূলত এটিই আমাদেরকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করেছে।

বছরের শেষ দিন যখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, তখন তিনি বলেন, তুমি এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছিলে। তবে দুইবারের আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি। একবার সাক্ষাৎ করতে এসে আমাকে ঘুমে রেখে, না বলে চলে গিয়েছিলে। আরেকবার আমি ওয়াশ রুমে যাওয়ার পর তুমি না বলে চলে গিয়েছিলে। ‘না বলে চলে যাওয়া’ আমার কাছে ভালো লাগেনি। সাথে সাথে অধম তাঁর জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করে। ভবিষ্যতে না হওয়ার ওয়াদা করে। পরে তিনি বলেন, এটি তোমার সংশোধনের জন্য বলেছি। এভাবে কাউকে না বলে চলে যাওয়া ঠিক না। হযরতের এমন সংশোধনের পদ্ধতি দেখে চমকে গেলাম। আশ্চর্যান্বিত হলাম।

অধমের জীবনে মাওলানা (রহ.)-এর এমন সংশোধনীর ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। তাঁর স্মরণ ও আমাদের সংশোধনকে স্থায়ী করার লক্ষ্যে কিছু কিছু লেখার প্রয়াস পাব, ইন শা আল্লাহ।

 

তোমার খাবার যদি কেউ পানসে করে দেয় তাহলে তোমার কেমন লাগবে?

মাদরাসার পরিবেশে তিনি শাহী জীবন-যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। এক দিন তাঁর সাথে খেতে বসলাম। দস্তরখান দেখেই মন জুড়ে যেত। অনেকটা সংকোচবোধ করছিলাম। তিনি নিঃসংকোচে খেতে বললেন। নিজের হাতেই তরকারি-মাছ উঠিয়ে দিলেন।

তাঁর দস্তরখানায় একটি বড় বাটি রাখা আছে। বড় বাটিতে ব্যবহৃত পানি রাখা হয়। আর ছোট ছোট কয়েকটি বাটি দেখলাম, কিন্তু সেগুলো কেন রাখা হয়েছে বুঝতে পারছি না। আমি মাছের কাঁটা পানি ভর্তি বড় বাটিতে ফেলে দিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেন, তোমার খাবার যদি কেউ পানসে করে দেয় তাহলে তোমার কেমন লাগবে? এগুলো বিড়ালের খাবার। আর পানিতে ফেললে তা পানসে হয়ে যাবে। তখন বিড়াল তা খেয়ে স্বাদ পাবে না। তাই এ ছোট বাটিতে ফেল। বিড়াল খেয়ে স্বাদ পাবে। সুবাহানাল্লাহ!

হে আল্লাহ! যিনি আমাদেরকে এভাবে সংশোধনী দিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তাঁকে নিজ দয়ায় জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন, আমীন।

দুই. তাঁর দরসে হাসি-আনন্দ!

জামায়াতে উলার বছর মাওলানা (রহ.)-এর কাছ থেকে মিশকাত শরীফ দ্বিতীয় খণ্ড ও শরহে নুখবাতুল ফিকারের মাধ্যমে দরসী সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাঁর দরস ছিল সরল, হৃদয়গ্রাহী ও সর্বমর্মী। তিনি প্রাঞ্জল উরদু ভাষায় অনর্গল দরস প্রদান করতেন। তাঁর প্রখরমেধা, দরস প্রদানের নৈপুণ্যতা, বিষযবস্তুর চমৎকার বিন্যাস এবং সাজানো-গোছানো কথামালায় বিমোহিত হতো সকল ছাত্র এবং বিমুগ্ধ হতো সকল শিক্ষার্থী।

দরস চলাকালে তিনি খুবই গম্ভীর, নিরানন্দ থাকতেন। কোন ছাত্র তাঁর দরসে হাসাহাসি করার সাহস পেত না। তবে একবার তাঁর দরসে নিজের অজান্তেই অধমের হাসি চলে আসে। বসেছিলাম প্রথম টুলে। তিনি তা দেখে পেললেন। ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। মনে করে ছিলাম, হয়ত আজ সেই ‘পিটুনি’ খাওয়ার পালা। কিন্তু না, দেখলাম তিনি নিজেও হাসলেন। এক পর্যায়ে ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীই হেসে উঠলেন। মূলত সেদিন হযরত নিম্নের হাদীস শরিফের দরস দিচ্ছেন,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ، إِلَّا وَقَدْ وُكِّلَ بِهِ قَرِينُهُ مِنَ الْـجِنِّ» قَالُوْا: وَإِيَّاكَ؟ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ: «وَإِيَّايَ، إِلَّا أَنَّ اللهَ أَعَانَنِيْ عَلَيْهِ فَأَسْلَمَ، فَلَا يَأْمُرُنِيْ إِلَّا بِخَيْرٍ».

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি জিন (শয়তান) একটি ফেরাস্তা নিয়োজিত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার জন্যেও কি? তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার জন্যও দু’জন নিয়োজিত রয়েছেন। তবে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার সেই জিন (শয়তান) মুসলমান হয়ে গেছে। সে আমাকে কেবল ভালো কাজেরই আদেশ করে।’’[1]

তিনি যখন ‘আসলামা’-এর অনুবাদ ‘সেই শয়তান মুসলামন হয়ে গেছে’ করলেন তখন অধমের হাসি চলে আসে। কারণ শয়তান কিভাবে মুসলমান হয়? বিষয়টি অধমের কাছে আশ্চর্য মনে হয়েছে। অধমের হাসি দেখে তিনি নিজেও হাসলেন। তাঁর হাসি দেখে সকল শিক্ষার্থী হেসে উঠলেন।

আহ! কত মজার ছিল সেদিনের দরস! যখনই এ হাদীস চোখের সামনে আসে, কিংবা স্মরণ হয় তখনই হযরতের সেই হাসৌজ্জ্বল চেহরা হৃদয়ে ভেসে উঠে।

হে আল্লাহ! যিনি আমাদেরকে আনন্দ-খুশিতে দরস প্রদান করেছিলেন তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। তিনি তোমার সান্নিধ্যে চলে গেছেন। তুমি তাঁকে সেখানে আনন্দ-ফুর্তিতে রাখো। তাঁর চেহারাকে হাস্যোজ্জ্বল রাখো। তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে শান্তি-সুখে রাখো। হে মাওলা, দয়া করে দুআগুলো কবুল করো, যাঁরা আমীন বলবে তাদের জন্যও।

তিন. মিডিয়ার সংবাদ গবেষণাপত্র মূল্যায়ন: পদ্ধতি কৌশল

মাওলানা রহমাতুল্লাহ (রহ.) আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার এক কোণায় অবস্থান করলেও গোটা পৃথিবীর খবরা-খবর অবশ্যই রাখতেন। কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত চোখ রাখতেন। দেশি-বিদেশি অনেক খ্যাতনামা পত্রিকা-সাময়িকী সংগ্রহে রাখতেন। জামিয়ার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির যিম্মাদার থাকার কারণে আরববিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সাময়িকী এবং পাকিস্তান-ভারতসহ অনেক বিদেশি জার্নাল সর্বপ্রথম তাঁর নিকটই পৌঁছতো। কয়েকটি সাময়িকী বর্তমানে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি তা চালু করার জন্য সদা তৎপর ছিলেন। অধম যখন ভারতে অধ্যয়নরত ছিলো তখন তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুখপত্র মাহনামায়ে দারুল উলুম এবং দেওবন্দি চিন্তাধারার অন্যতম মুখপত্র লৌখনৌ থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় ম্যাগজিন মাসিক আল-ফুরকান পুনরায় চালু করার জন্য বেশ কয়েকবার বলেছেন। সুখের বিষয় হলো, এতদিন যাবৎ যিনি জামিয়ার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে হযরতের নায়েব হিসেবে কাজ করে আসছেন (মাওলানা ইউনুস রমজ কাসেমী) তাঁকেও এসব বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যমী মনে হয়েছে। এখন কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন জানি না। তবে দুআ করি, আল্লাহ যেন তাঁর যোগ্য ও উত্তম স্থলাভিষিক্তের ব্যবস্থা করে দেন, আমীন।

কখনো কখনো আমরা তাঁর রুমে গেলে পত্রিকার গবেষণাধর্মী আর্টিকেলগুলো আমাদের মাধ্যমে পাঠ করাতেন এবং আমাদের মন্তব্যও যাচাই করতেন। শুরু-শুরুতে ভয়ে কোন মন্তব্য না করলেও পরে মন্তব্য করতাম। তিনি সেগুলো শুনে খুশি হতেন। আবার কখনো কখনো শুধরিয়ে দিতেন। আমরা নিরেট সংবাদ কিংবা আর্টিকেলের ওপর মন্তব্য করলেও তিনি সংবাদপত্রের মালিক ও তার চিন্তাধারার আলোকে তা মূল্যায়ন করতেন।

মূলত সংবাদপত্রের সংবাদ কিংবা গবেষকের গবেষণাকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে হয়, তা সর্বপ্রথম তিনিই শিখিয়েছেন। আল-হামদু লিল্লাহ, পরবর্তীতে শ্রদ্ধেয় উস্তাদ ও মুরশিদ, মাসিক আল-ফুরকানের সম্পাদক, আল্লামা খলিলুর রহমান সাজ্জাদ নু’মানী হাফিযাহুল্লাহর বিভিন্ন লেকচার ও সুহবত-সংশ্রবের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি আমাদেরকে বলতেন, সংবাদপত্রের সংবাদ সম্পর্কে মন্তব্য করার পূর্বে সংবাদপত্রের মালিকের মতাদর্শ, সম্পাদকের ভিশন ও মিশন এবং তথ্যসংগ্রহকারী অ্যাজেন্সিগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকা জরুরি।

মনে রাখবে, সংবাদপত্র সংবাদ প্রচারের চেয়ে সংবাদ গোপনের কাজই বেশি করে। সেসব সংবাদ তাদের মিশনের বিপরীত হয়, তারা তা লুকানোর জন্য আরেকটি সংবাদকে হেডলাইন করে। অপ্রসঙ্গকে প্রসঙ্গ বানায়। তাই, এগুলো বুঝে নিতে হবে। বর্তামানে দাজ্জালী ফিতনা সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। দাজ্জালী মিডিয়া সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে মিডিয়া থেকে দূরে সরে থাকাই উত্তম। তিনি বলতেন, দাজ্জালের মূলধাতু হলো ‘দজল’। দজল অর্থ ধোঁকা। দাজ্জাল শক্তির মাধ্যমে নয়, বরং ধোঁকার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী তার ফিতনা ছড়াবে। এখন মিডিয়া এ ধোঁকার কাজটিই সর্বাদিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব বর্তমান সময়কে বুঝতে হলে এ দাজ্জালী মিডিয়া সম্পর্কে পূর্ণধারণা থাকা জরুরি। আল্লাহ, আমাদের সকলকে দাজ্জালী মিডিয়া সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করার তওফীক দান করুন, আমীন।

হে রব্বে করীম! তুমি আমাদের প্রিয় উস্তাদজিকে দাজ্জালী ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন, তেমনি আমাদেরকেও হিফাযত করো। তাঁকে তুমি জান্নাতের সু-উচ্চ মকাম দান করো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাথে সহঅবস্থান দান করো, আমীন।

চার. মাদরাসা শিক্ষকতা পরিচালনা: হালচাল পর্যালোচনা

মাওলানা রহমাতুল্লাহ (রহ.) যেমনি দেশ-বিদেশের খবরা-খবর রাখতেন তেমনি আমাদের অভ্যান্তরীণ বিষয়েও সবচেয়ে বেশি খবর রাখতেন। একদিকে তিনি ছিলেন মাদরাসা পরিচালকগণের উপদেষ্টা, অপরদিকে ছিলেন উস্তাদগণের আশ্রয়স্থল। মাদরাসার মুহতামিম ও পরিচালকগণ তাঁর কাছ থেকে সুষ্ঠুভাবে মাদরাসা পরিচালনার জন্য পরামর্শ চাইতেন। তিনি তাঁদেরকে একনিষ্ঠতার সাথে পরামর্শ দিতেন। অধমের জানামতে বর্তমানে যে কয়টি কওমী মাদরাসা, বিশেষত আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল আহলিয়া বাংলাদেশে তা’লীম-তারবিয়তে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে জামিয়া মাদানিয়া সিলোনিয়া ফেনী, জামিয়া কুরআনিয়া চন্দ্রঘোনা রাঙ্গুনিয়াসহ সকল মান-সম্পন্ন মাদরাসাগুলোর শিক্ষা-দীক্ষা, তা’লীম-তারবিয়তের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে তাঁর দিক-নিদের্শনার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তিনি মাদরাসা মুহতামিম ও পরিচালকগণ সম্পর্কে খবরা-খবর রাখতেন। কোন পরিচালকের বিশেষ কোন ক্রটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে জ্ঞাত হলে, সেগুলো সংশোধনের উদ্দেশ্যে তা উল্লেখ করা ছাড়া সংশোধনী পেশ করতেন। অনেক সময় সেই মুহতামিমের কাছে যে দোষ আছে, তা উল্লেখ না করে শুধু বলতেন এখন অনেক মুহতামিম মাদরাসা পরিচালনা করতে গিয়ে এমন এমন আচরণ করছেন। অথচ শারয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বৈধ নয় কিংবা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বর্জনীয়। সেই সম্পর্কে আকাবিরদের কোন না কোন ঘটনা উল্লেখ করতেন। আর কোন মুহতামিমের ভালো আচরণ সম্পর্কে জ্ঞাত হলে তিনি তা উল্লেখ করে তার প্রশংসা করতেন এবং এ ধরনের আচরণ স্থায়ী করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

তিনি বলতেন, মাদরাসা মূলত মুহতামিমের চিন্তাধারা বাস্তবায়নের নাম। মুহতামিম পরিকল্পনা করেন, অন্যরা তা বাস্তবায়ন করেন। অতএব মাদরাসা কেমন হবে তা মুহতামিমের পরিকল্পনা ও মন-মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। সেজন্য দেখা যায়, যদি মুহতামিমের মন-মানসিকতা হয় মাদরাসাকে যিকরের হালকা বানানো, তাহলে সেটি হয়ত ভালো একটি খানকাহ হবে, মাদরাসা নয়। সেখানে যিকিরই প্রধান্য পাবে, তা’লীম নয়। সুতরাং সেখানে পড়া-লেখার মান-উন্নয়ন নিয়ে অত বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।

আর যদি মুহতামিমের চিন্তাধারা হয়, আমাদের মাদরাসা একটি আদর্শ মাদরাসায় রূপান্তরিত হোক তা হলে সেখানে তা’লীম-তারবিয়ত তথা শিক্ষা-দীক্ষা উভয়টির মান-উন্নয়ন হবে। সেখানে উস্তাদগণ তা’লীমের প্রতি মনোনিবেশ বেশি দেন এবং যেসব উস্তাদ তা’লীম নিয়ে মেনহত করেন, তাদের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়। তাদেরকে পুরস্কৃত করে উৎসাহিত করা হয় এবং তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়। ফলে, অন্যরাও উৎসাহিত হয় এবং তা’লীমী কাজে মনোনিবেশ বাড়িয়ে দেন। সুতরাং গোটা মাদরাসায় একটি শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠে। বোর্ড পরীক্ষায় ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করে। গোটা দেশে মাদরাসার সুনাম ছাড়িয়ে পড়ে। ফলে মেধাবী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেরাও সেখানে ভর্তি হয়। এভাবে ধীরেধীরে সেই মাদরাসাটি একটি আদর্শ ও উন্নত মাদরাসায় রূপান্তরিত হয়। তিনি বলতেন, বর্তমানে এমন আদর্শ মাদরাসার সংখ্যা খুবই নগন্য। তবে মাদরাসার পরিচালকগণের ইচ্ছা থাকলে সকল মাদরাসাকেই এমন আদর্শ মাদরাসায় রূপান্তর করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। পরিতাপের বিষয়! এখন মুহতামিমগণ সে ফিকিরে নেই, বরং তাঁরা তো এখন এমন তিনটি আচরণ করে থাকেন, যা মাদরাসার ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আশ্চর্য, এ তিন আচরণে বর্তমানে প্রায় মুহতামিম পরস্পর পাল্লা দিয়ে চলছে। (ইল্লা মা শা আল্লাহ) আল্লাহ সকলকে হিফাযত করুন, আমীন।

  1. শিক্ষকদেরকে সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা প্রদান।
  2. নিম্নমানের হোস্টেল ব্যবস্থাপনা ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন।
  3. শিক্ষকমণ্ডলীর সাথে রূঢ় ব্যবহার ও মন্দ আচরণ।

ফলে, অধিকাংশ মাদরাসার ব্যবস্থাপনা এখন অত্যন্ত নাযুক। আদর্শ মাদরাসা এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। তবে তাই বলে আমরা মাদরাসা ছেড়ে চলে যেতে পারি না। কেননা মনে রাখবে, মানুষ পৃথিবীতে কোন না কোন পেশা অবলম্বন করে চলে। বর্তমানে আমাদের মাদরাসাগুলোর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। তা সত্ত্বেও মাদরাসায় শিক্ষাকতার চেয়েও উন্নত কি কোন পেশাআছে? না, কখনো না। তার চেয়ে উন্নত কোন পেশা পৃথিবীর বুকে নেই। শিক্ষকতা আল্লাহর পেশা। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নবীগণই তা গ্রহণকরেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমাকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি উত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। আমাকে আল্লাহই আদব শিখেছেন, তিনি উত্তম আদব শিক্ষা দিয়েছেন।’

মানুষ অন্য পেশা অবলম্বন করে সম্পদ অর্জন করে। গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়। আর ওলামায়ে কেরাম শিক্ষকতার পেশা অবলম্বন করে মাওলানা বানান, মুফতী বানান, মুফাসসির বানান, কারী বানান, হাফেয বানান। নিঃসন্দেহে এগুলোর মূল্য উভয় জাহানে গাড়ি-বাড়ি ও পার্থিব সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি। অতএব শিক্ষকতার পেশার চেয়ে উন্নত কোন পেশা হতে পারে না।

 

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাওলানা (রহ.)-এর স্বভাব:

মাওলানা (রহ.) সারা বাংলাদেশে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতেন। তাঁর স্বভাব ছিল, তিনি কাউকে কোন মাদরাসায় যেতে বাধ্য করতেন না। তিনি কোথায় জায়গা খালি আছে তা দেখিয়ে দিতেন। স্বেচ্ছায় কেউ সে মাদরাসায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তিনি তাকে সেখানে নিয়োগ দিতেন। তবে, সম্মতি দেওয়ার পর আবার সেখানে না যাওয়ার কথা বললে তিনি তাতে খুবই নারাজ হতেন। এমনকি অনেকের সাথে এ কারণেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে।

তেমনি তিনি কাউকে কোন মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁকে না জানিয়ে অন্যত্র চলে গেলে তিনি নারাজ হতেন। হ্যাঁ, অসুবিধার কথা জানালে তিনি অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন কিংবা নিজেই অন্য মাদরাসায় নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিতেন।

 

শিক্ষকতা জীবনের জরুরি নির্দেশনা

মাওলানা (রহ.) কাউকে শিক্ষক হিসেবে কোথাও নিয়োগ দিলে তাঁকে সেখানে পাঠানোর পূর্বে নিম্নের উপদেশগুলো দিতেন:

  • মাদরাসারপক্ষ থেকে আরোপিত দায়িত্ব পালনে সদাতৎপর ও আন্তরিক থাকবে।
  • কখনো কোন কিতাব চেয়ে নেবে না, যে কিতাবই তোমার নামে নির্ধারিত হয় তা পরিপূর্ণভাবে অধ্যয়ন করে স্পষ্টভাবে পাঠদানের চেষ্টা করবে।
  • অন্যের দায়িত্ব ও পাঠদান নিয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করবে না। কেউ তোমার পিছনে পড়লেও তাকে বহিষ্কার করার জন্য তুমি তার পিছনে পড়বে না।
  • অন্য উস্তাদগণের কামরায় গিয়ে পারতপক্ষে গল্প-গুজব করবে না। কারো অভিযোগ-অনুযোগ এবং গীবত-শেকায়ত করবে না।
  • প্রয়োজন ছাড়া মুহতামিমের দরবারে যাবে না। নিজ কাজেই মশগুল থাকবে। মুহতামিমের কথার চেয়ে কাজকেই বেশি মূল্যায়ন করবে। কথায় মানুষকে চেনা যায় না, কাজের মাধ্যমেই মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়।
  • পারতপক্ষে ছাত্রদের কাছ থেকে কোন হাদিয়া, খেদমত গ্রহণ করবে না।
  • বেতন-ভাতাসহ পুরো আয়কে তিনভাগে ভাগ করবে। একভাগ নিজের জন্য ব্যয় করবে, আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজন কিংবা গরীব-দুঃখীদেরকে দান করবে এবং আরেক ভাগ সঞ্চয় করবে।

আল্লাহ পাক হযরত (রহ.)-কে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং আমাদেরকে উপরন্তু বিষয়ে আমল করার তওফীক দান করুন, আমীন।

পাঁচ. শৃঙ্খলাবোধ নিয়মানুবর্তিতার মূর্তপ্রতীক

নিয়মানুবর্তিতা ও রীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তহীন এক ব্যক্তিত্বের নাম মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নিজামী (রহ.)। প্রথানুগত্য ও আচারনিষ্ঠতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় মহাসাধক। শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতি তিনি কখনো পছন্দ করতেন না এবং প্রশ্রয়ও দিতেন না।

সে দিন জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক, বন্ধুবর মাওলানা সাবের মাসুম রসাত্মকভাবে বললেন, মনে হয় হযরত (রহ.) অতীব নিজামপ্রিয় ও শৃঙ্খলাপ্রিয় হওয়ার কারণেই তাঁকে নিজামী (সুশৃঙ্খল) বলা হয়। অধম তার কথা শুনে হাসলো। অতপর বলল, না, বিষয়টি এমন নয়, বরং তাঁর জন্মস্থান মিরসরাইস্থ নিজামপুরে হওয়ার কারণেই তাকে নিজামী বলা হয়।

মূলত হযরতের যেসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে অন্যতম হলো তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী, রীতিসিদ্ধ, বিধি-অনুসারী ও কানুনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। তিনি বলতেন, নিয়ম-কানুন মেনে চলার মধ্যেই সফলতা ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। নিয়ম-শৃঙ্খলা থেকে সরে যাওয়া মানে অকল্যাণ অবধারিত করা। ‘রিয়াআত’ (ছাড়) বলতে কানুনে কোন জিনিস নেই। রিয়াআতের অপর নাম হল বেকানুনী বা নিয়ম অমান্য করা। তাই, তিনি নিজেও নিয়ম মেনে চলতেন এবং অপরকেও নিয়ম মানার জন্য উপদেশ দিতেন।

তিনি স্বেচ্ছায় যেমন নিয়ম বর্হিভূত কাজ করেননি, নিয়ম ভঙ্গ করেননি, তেমনি কেউ তাঁকে নিয়ম ভঙ্গ করতে বাধ্যও করতে পারেনি। তিনি কখনো কারো চাপের মুখে নিয়ম ভঙ্গ করেননি। আমাদের সমাজে ‘একটু রিয়াআত করতে হয়’ (একটু ছাড় দিতে হয়) কথার প্রচলন আছে। তিনি সেটির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বলতেন, একটু রিয়াআত মানে সরাসরি অনিয়ম করা। আর অনিয়ম করা মানেই বে-ইনসাফী করা। নিঃসন্দেহে বে-ইনসাফী বড় অন্যায়। আর অন্যায়কে আল্লাহ কখনো ভালবাসেন না।

মাওলানা (রহ.)-এর নিয়মানুবর্তিতা ও কানুনের ওপর অবিচলতার বিষয়টি সকলের কাছে সমাদৃত ছিল। তাই, বড়রা তাঁকে কানুনের ওপর চলতে দিতেন। তাঁরা কখনো তাঁকে নিয়ম ভঙ্গ করতে বাধ্য করতেন না।

 

জামিয়ার শায়খুল হাদীসের জন্য ‘মাহফুযা কিতাবদিতে অপারগতা প্রকাশ!

জামিয়া পটিয়ায় একটি আর্ন্তজাতিক মানের লাইব্রেরি গড়ে তোলার পেছনে মাওলানা (রহ.)-এর ভূমিকা অতুলনীয়। তিনি যেমনি দুষ্প্রাপ্য কিতাবাদি সংগ্রহে সচেষ্ট ছিলেন, তেমনি নিয়ম-নীতির ক্ষেত্রেও জামিয়ার কুতুবখানাকে একটি আদর্শ লাইব্রেরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। লাইব্রেরিতে যে কিতাবের কেবলমাত্র একটি কপি আছে, তা ‘মাহফুযা-সংরক্ষিত’ কপি হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন মাহফুযা কিতাবগুলো কারো জন্য লাইব্রেরি থেকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।

তৎকালীন জামিয়া পটিয়া শায়খুল হাদীস, যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দীন, খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ (রহ.) জামিয়ার লাইব্রেরি থেকেএমন একটি ‘মাহফুযা কিতাব’ নিয়ে আসার জন্য ছাত্র পাঠালেন। তখন তিনি জানিয়ে দিলেন, এটি মাহফুযা-সংরক্ষিত কিতাব। এটি কাউকে দেওয়া যাবে না। পড়তে হলে লাইব্রেরিতে এসে পড়তে হবে।

আশ্চর্য, খতীবে আযম (রহ.) ছিলেন তৎকালীন জামিয়ার মুহতামিম, শায়খুল আরব ওয়াল আজম, আল্লামা শাহ ইউনুস (রহ.)-এর উস্তাদ। সুবহানাল্লাহ, তাঁর জন্যও তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেননি।

এ সংবাদ যখন তৎকালীন নায়েবে মুহতামিম হযরত মুফতী আবদুর রহমান (রহ.) পেলেন তখন তিনি মাওলানা (রহ.)-কে বলেন, তুমি এ কি কাজ করলে? এখন যদি হাজী সাহেব হুযুর জানেন, তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে? তিনি বলেন, যা হওয়ার হবে। তবে, আমি অনিয়ম করতে পারবো না। নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই করেছিলেন। তাঁর নিষ্ঠা ও নিয়মতান্ত্রিকতার ওপর বড়রা খুশি হতেন। পরবর্তীতে হাজী সাহেব (রহ.) পর্যন্ত এ সংবাদ পৌঁছে যায়। হাজী সাহেব হুযুর (রহ.) তাঁকে কিছুই বলেন নি। বরং শিক্ষকমণ্ডলীর এক সাধারণ সভায় বলে ছিলেন, আমরা তাঁকে কুতুবখানার কিতাবগুলো হিফাজতের জন্য রেখেছি। এখন যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী কিতাব নিয়ে যায়, তাহলে কিতাবগুলো সংরক্ষণ থাকবে না। তাই, নিয়ম অনুযায়ী যে কিতাবগুলো নেওয়া যায় তা নেব, আর যা নেওয়া যায় না তা নেব না। আল্লাহু আকবার, হাজী সাহেব (রহ.) তার নিয়মানুবর্তিতাকে এভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

 

জামিয়া প্রধানের জন্য কিতাব দিতে অপারগতা প্রকাশ!

আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.) ছিলেন জামিয়া পটিয়ার তৃতীয় মহাপরিচালক। তিনিএকবার নিজ খাদেমকে জামিয়ার কুতুবখানা থেকে একটি কিতাব আনার জন্য পাঠালেন। সময়টি ছিল যোহরের পর। মাওলানা (রহ.) খাদেমকে বলেন, তুমি মুহতামিম সাহেবকে গিয়ে বলবে, এখন লাইব্রেরি খোলার সময় নয়। অসময়ে লাইব্রেরি খোলা যাবে না। আসরের পর এসে নিয়ে যাবে। খাদেম শায়খ হারুন (রহ.)-এর কাছে ফিরে গেলেন এবং বলেন, হুযুর আসরের পর আনতে বলেছেন। খাদেমের কাছ থেকে মাওলানা (রহ.)-এর জবাব শুনে শায়খ হারুন ইসলামাবাদী (রহ.) অত্যন্ত খুশি হলেন। তিনি বললেন, আল-হামদু লিল্লাহ, আমাদের জামিয়ায় এমন শৃঙ্খলাপ্রেমী শিক্ষক রয়েছেন, যিনি অনিয়ম হলে মুহতামিম সাহেবের খাদেমকেও ফিরিয়ে দিতে পারেন।

হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকেও এমন নিয়মানুবর্তী ও আচারনিষ্ঠ বানাও এবং আমাদের প্রিয় উস্তাদ মাওলানা (রহ.)-কে উত্তম বিনিময় দান করো, আমীন।

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

[1] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ৪, পৃ. ২১৬৭, হাদীস: ২৮১৪

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ