জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কী একেবারেই নিষেধ?

তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কী একেবারেই নিষেধ?

তেল চর্বিযুক্ত খাবার কী একেবারেই নিষেধ?

অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক

জনাব হোসেন, ৫৫ বছর বয়স, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল রোগে গত ৬-৭ বছর ধরে ভুগছেন। তিনি ৯ বছর যাবৎ ধূমপান করেন। গত ৩ মাস যাবৎ পরিশ্রম করলে বা সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় বুকে চাপ অনুভব করেন।

ইসিজি ও ইকো রিপোর্ট স্বাভাবিক, কিন্তু ইটিটি Stage-II-এ পজিটিভ, অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে ব্লক থাকার আশঙ্কা বেশি।

এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হল। এনজিওগ্রামে হৃদপিণ্ডের রক্তনালি জঈঅতে ৭৫% ব্লক। ব্লকের চিকিৎসার জন্য রিং বসাতে বলা হল। তার রিং বসানোর প্রস্তুতি নেই। ওষুধ চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসা সম্পর্কে রোগী জানতে চাইলেন।

রোগী: হৃদপিণ্ডে ব্লক দূর করার জন্য রিং চিকিৎসা কতটুকু কার্যকর?

হৃদপিণ্ডে ব্লক দূর করার জন্য রিং চিকিৎসা ১০০ ভাগ কার্যকর। হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক হলে সাধারণত প্রথমে বেলুন দিয়ে ব্লক ফুলিয়ে পরে সেখানে রিং বসিয়ে দেওয়া হয় এবং সাধারণত এ ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ ব্লক দূর হয়।

রোগী: ব্লক দূর করার জন্য আর কী কী চিকিৎসা আছে?

ব্লক দূর করার জন্য এনজিওপ্লাস্টি, লেজার চিকিৎসা, রোটারেশন এবং এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধও কার্যকরী।

রোগী: ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে কী কী চিকিৎসা আছে?

ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে আমরা রিং চিকিৎসা বা বাইপাস চিকিৎসা বা এনজিওপ্লাস্টি চিকিৎসা করি না, সাধারণত সে ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

রোগী: ওষুধ চিকিৎসার সফলতা কতখানি?

ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে এবং ওষুধ চিকিৎসা করলে, দেখা যায় আস্তে আস্তে ব্লকের পরিমাণও মাত্রা কমতে থাকে।

রোগী: ওষুধে কি ব্লক দূর হয়?

ওষুধে ব্লক ১০০ ভাগ দূর না হলেও নিয়মিত ওষুধ খেলে বুকে ব্যথা কমার পাশাপাশি ব্লকের মাত্রা ও পরিমাণ কমতে থাকে।

রোগী: ব্লক দূর করার জন্য খাবারের ভূমিকা কী?

ব্লক দূর করার জন্য খাবারের ভূমিকা তেমন নেই। রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি থাকলে যদিও ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বেশি তথাপি খাবারে চর্বির পরিমাণ রক্তের চর্বির মাত্রাকে মাত্র ১০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ৯০ ভাগ চর্বি শরীরে লিভারে ও অন্যান্য অঙ্গে বেশি পরিমাণ তৈরি হয় ফলে রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়ে। এ কারণে ব্লকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে খাবারের চর্বির মাত্রার চেয়ে ওষুধের ভূমিকা অনেক।

রোগী: চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কি একদম নিষেধ?

চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত বিশেষ করে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার যা সাধারণত প্রাণীজজাত খাবারে বেশি থাকে, তাছাড়া উদ্ভিদজাত বিশেষ করে পাম তেল ও নারকেল তেল বর্জনীয় কারণ তাতে বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। কিন্তু মাছের তেল বিশেষত সামুদ্রিক মাছের তেল ও উদ্ভিদ তেল যেমন সানফ্লাওয়ার ওয়েল, স্যাপ্লাওয়ার ওয়েল প্রচুর পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে ফলে ওমেগা-৩ ফ্যাট এসিড বেশি থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। তাই তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার একদম পুরোপুরি বাদ দেওয়া ঠিক নয়। তাছাড়া কিছু ভিটামিন যেমন- ভিটামিন এ, ডি, ই-কে যা শুধু চর্বির মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে। ফলে একদম তেল ছাড়া বা চর্বি ছাড়া খাবার খেলে শরীরে ওই সব ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা বাড়ে।

রোগী: চর্বিযুক্ত খাবার একদম বন্ধ করলে কি কোনো অসুবিধা আছে?

খাবারে চর্বি ও তেল সম্পূর্ণ বন্ধ করলে খাবারের স্বাদ কমে যায়, খাবারের পরিমাণ কম গ্রহণ করলে অপুষ্টি দেখা দেয়, তখন অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাবারের উপাদানের অভাব হতে পারে। কিছু ভিটামিন যেমন- ভিটামিন এ, ডি, ই-কে শুধু চর্বিতে দ্রবণীয় অর্থাৎ শুধু চর্বির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে এ ভিটামিনগুলোর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই দেখা যায়, রোগী রাতকানা রোগ, অস্টিওপেরোসিস ও হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে হাড় দুর্বল হওয়া ও সহজে ভেঙে পড়া, যৌন দুর্বলতাসহ চামড়ায় রক্তক্ষরণ হতে পারে।

লেখক: অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি; চেম্বার: মেডিনোভা, মালিবাগ মোড়, হোসাফ টাওয়ার

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ