শুক্রবার-১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি-১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল-ফিকহ বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল ফিকহ বিভাগ        আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

কুরবানীর ফাযায়েল মাসায়েল

ফিকহ বিভাগ       

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

 

কুরআন মজীদের বাণী

اِنَّاۤ اَعْطَيْنٰكَ الْكَوْثَرَؕ۰۰۱ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْؕ۰۰۲ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُؒ۰۰۳

‘হে নবী! আমরা তোমাকে ইহ-পরকালের প্রভূত মঙ্গল দান করেছি। সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কুরবানীর জন্তু যবেহ কর। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে-ই মঙ্গলহীন ও বংশধরহীন।’[1]

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র বাণী

  • হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,

«مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِّنْ عَمَلٍ يَّوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ، إِنَّهُ لَيَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلَافِهَا، وَأَنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَّقَعَ مِنَ الْأَرْضِ، فَطِيْبُوا بِهَا نَفْسًا».

‘কুরবানীর দিনে আল্লাহ তাআলার নিকট কুরবানীর চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন আমল নেই। কিয়ামতের দিন কুরবানীকৃত পশুর লোম, খুর ও শিংসহ উপস্থিত হবে। কুরবানীর জন্তু যবেহ করার সময় প্রথম রক্তবিন্দু ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হওয়ার আগেই কুরবানী আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে যায়।’[2]

  • আল্লাহর রাসুল (সা.) হযরত ফাতিমা (রাযি.)-কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন,

«قَوْمِيْ إِلَىٰ أُضْحِيَّتِكَ فَاشْهَدِيْهَا، فَإِنَّ لَكِ بِأَوَّلِ قَطْرَةٍ تَقْطُرُ مِنْ دَمِهَا يُغْفَرُ لَكِ مَا سَلَفَ مِنْ ذُنُوْبُكَ». قَالَتْ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! هَذَا لَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ خَاصَّةً أَوْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِيْنَ عَامَّةً؟ قَالَ: «بَلْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِيْنَ عَامَّةً».

‘তুমি তোমার কুরবানীর দিকে যাও এবং সেখানে উপস্থিত থেক। কেননা তোমার বিগত সকল গুনাহ তার প্রথম রক্ত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটি কি আমাদের জন্য বিশেষভাবে? তিনি বলেন, ‘না, বরং তা আমাদের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য।’’[3]

  • হযরত যাইদ ইবনে আরকম (রাযি.) থেকে বর্ণিত,

قَالَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ؟ قَالَ: «سُنَّةُ أَبِيْكُمْ إِبْرَاهِيْمَ» قَالُوا: فَمَا لَنَا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: «بِكُلِّ شَعَرَةٍ، حَسَنَةٌ» قَالُوْا: فَالصُّوفُ؟ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: «بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ».

‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কুরবানীর জন্তুগুলো (যবেহ) কী? অর্থাৎ এই জন্তুগুলো আমরা কেন যবেহ করি? উত্তরে হুযূর (সা.) ইরশাদ করলেন, এটি তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর তরীকা। তিনি আল্লাহর মুহাব্বতের প্রমাণস্বরূপ তাঁর প্রিয়পুত্রকে কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়ে এ কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর পুত্রের পরিবর্তে জন্তু করবানীর আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা তাঁরই অনুসরণে আদিষ্ট হয়ে কুরবানীর জন্তুগুলো যবেহ করি।’ তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য প্রাপ্য (সওয়াব) কী? তিনি উত্তরে ইরশাদ করলেন, ‘জন্তুর (গরু, ছাগল ইত্যাদি) প্রতিটি পশমের পরিবর্তে এক একটি করে সওয়াব দেওয়া হবে।’ সাহাবীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, (ভেড়া, দুম্বা যবেহ করলে এগুলোর) পশমের পরিবর্তে কী সওয়াব হবে ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! উত্তরে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক একটি সওয়াব দেওয়া হবে।’’[4]

এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, কুরবানী নিছক গোশত খাওয়া বা দরিদ্রকে দাওয়াত খাওয়ানো নয়, যেমন ধর্মদ্রোহীরা বলে থাকে, বরং আল্লাহ পাকের মুহব্বতে তাঁরই নামে নিজ প্রিয়তম জিনিসকে উৎসর্গ করাই এ কুরবানীর মুখ্য উদ্দেশ্য।

  • হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,

«مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَّلَـمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا».

‘কুরবানী করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’[5]

উপরিউক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সক্ষম ব্যক্তিকে যে কোন অবস্থায় কুরবানী করতেই হবে। কারণ এ হাদীস দ্বারা তাঁদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব প্রমাণিত হচ্ছে।

কুরবানী কার ওপর ওয়াজিব?

  • যার কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকার কিংবা ৫২ তোলা রূপা অথবা সমমূল্যের টাকা, রৌপ্য নির্মিত অলংকার, বাণিজ্যিক সামগ্রী, মালিকানাধীন অব্যবহৃত অনাবাদী জমি, পারিবারিক আসবাবপত্র প্রভৃতি যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত রয়েছে, তার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। কারো মতে, ৪২ তোলা রৌপ্য মূল্যের স্বর্ণ থাকলেও কুরবানী ওয়াজিব, যদিও সাড়ে সাত তোলা থেকে কম হয়। এটার ওপর আমল করাই ইহতিয়াত বা সাবধানতা।
  • কুরবানীর ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদ এক বছর পর্যন্ত জমা থাকা শর্ত নয়; কিন্তু যাকাতের জন্য শর্ত।
  • কোন গরীব লোক যার কাছে উক্ত পরিমাণ সম্পদ নেই, কিন্তু কুরবানীর তিনদিন সময়ের মধ্যে ওয়াজিব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব।
  • এর বিপরীত যদি কোন সম্পদশালী ব্যক্তি এ দিনগুলো শেষ হওয়ার আগেই গরীব হয়ে যায়, অথচ সে কুরবানী করেনি, তবে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না।
  • নাবালেগ ও পাগলের ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। সুতরাং তাদের সম্পদ থেকে কুরবানী করা জায়েয হবে না। হ্যাঁ অভিভাবক নিজ মাল থেকে তাদের জন্য কুরবানী করতে পারে।
  • শরীয়ত মতে যে ব্যক্তি মুসাফির তার জন্য কুরবানী বাধ্যতামূলক নয়।
  • যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, সে যদি কুরবানীর দিনসমূহ অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানীর উদ্দেশ্যে কোন জন্তু ক্রয় করে, উক্ত জন্তুর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়।[6] কিন্তু নিজ গৃহপালিত জন্তু কুরবানী করার নিয়ত করলে তা ওয়াজিব হয় না।
  • কুরবানী করা ওয়াজিব। যদি কেউ উচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব কুরবানী আদায় না করে তবে সে বড় গোনাহগার হবে।

কুরবানীর সময়

  • ১০ জিলহজ ঈদুল আযহার নামাযের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে কুরবানী করা চলে। তবে প্রথম দিন উত্তম এবং রাতে মাকরূহ।
  • নামাযের পর কুরবানীর জন্তু জবেহ করার পর যদি প্রকাশ পায় যে, ঈদের নামায শুদ্ধ হয়নি, তবে কুরবানী পুনরায় আদায় করতে হবে না। হ্যাঁ মুসল্লীগণ ইমামের নিকট থেকে চলে যাওয়ার আগে তাদেরকে নিয়ে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। যদি মুসল্লীগণ ইমামের নিকট থেকে চলে যায়, তা হলে ইমাম সাহেব একাই নামায আদায় করবেন। তবে যারা চলে গেছেন তাদের নামাযও আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি ঈদের নামাযের আগে কুরবানীর জন্তু যবেহ করে, তার কুরবানী হবে না, পুনরায় অন্য জন্তু যবেহ করতে হবে।
  • কোন ধনী ব্যক্তি কুরবানীর জন্তু ক্রয় করার পর কুরবানীর দিনগুলোতে যদি যবেহ না করে, তাহলে সেই জন্তুকে জীবিতাবস্থায় কোন গরীব লোককে দান করে দিতে হবে। আর যদি যবেহ করে দেয়, তা হলে গোশতগুলো কোন গরীবকে দান করবে; নিজে খেতে পারবে না। যবেহ দ্বারা যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেয়েছে, সে পরিমাণ মূল্য গরীবকে দান করে দিতে হবে। যদি নিজ উক্ত জন্তুর গোশত খায়, তবে সমপরিমাণ গোশতের মূল্য গরীবকে দান করবে।

কুরবানীর জন্তু

  • বকরী, দুম্বা বা ভেড়া এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে এবং গরু, মহিষ ও উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে শরীকী কুরবানীতে অংশীদারগণের নিয়ত কুরবানী বা আকীকা হতে হবে। যদি কোন অংশীদারের নিয়ত গোশত খাওয়া হয়, তবে কারো কুরবানী আদায় হবে না।
  • ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা পূর্ণ এক বছর বয়স্ক হওয়া জরুরি। কিন্তু কম বয়স্ক মোটা তাজা ভেড়া বা দুম্বা যদি এক বছরের মতো দেখায়, তবে উক্ত জন্তু দ্বারাও কুরবানী জায়েয হবে। গরু, মহিষ দু’বছর এবং উট পাঁচ বছর বয়স্ক হওয়া জরুরি।
  • যে জন্তুর জন্মগতভাবেই শিঙ নেই অথবা শিঙ মাঝখানে ভেঙে গেছে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয, কিন্তু শিঙ মূল্যেৎপাটিত হলে কুরবানী জায়েয নয়।
  • অন্ধ, কানা বা কোন জন্তুর কোন চোখের এক তৃতীয়াংশ জ্যোতি কমে গেলে, পঙ্গু, রোগ ও দুর্বলতাবশত মজ্জা শুকিয়ে গেলে বা খোঁড়া হওয়ার কারণে যে জন্তু কুরবানীর জায়গায় হেঁটে যেতে পারে না, যে জন্তুর কর্ণ বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কেটে গেছে, যে জন্তুর সম্পূর্ণ দাঁত অথবা ঘাস খাওয়ার উপযোগী দাঁত নেই এবং যে জন্তু জন্ম থেকে কর্ণহীন, তা দ্বারা কুরবানী না-জায়েয।
  • নিখুঁত জন্তু ক্রয়ের পর যদি কুরবানীর প্রতিবন্ধক কোন দোষ সৃষ্টি হয়, তাহলে ধনী লোককে নির্দোষ অন্য জন্তু কুরবানী দিতে হবে; গরীবের জন্য উক্ত জন্তুই জায়েয। কুরবানী করার জন্য জন্তু শায়িত করার সময় যদি এরূপ কোন দোষ দৃষ্ট হয়, তা হলেও কুরবানী জায়েয হবে।
  • কুরবানীর জন্তুর দুধ দোহন অথবা পশম কর্তন করা নাজায়েয। দুধ দোহন করলে তা সদকা করে দিতে হবে। পান করলেও তৎমূল্য সদকা করবে। দুধওয়ালা জন্তু হলে দুধ দোহন না করে স্তনে পানির ছিটা দেওয়া ভালো।

কুরবানীর গোশত চামড়া

  • শরীকি জন্তুর গোশত ওজন করে বণ্টন করতে হবে। আনুমানিক বণ্টন না-জায়েয। শরীকদারগণ বণ্টন না করে এক সাথে রান্না করে খাওয়া জায়েয।
  • কুরবানীর জন্তু খরিদ করার পর হারিয়ে গেলে পুনরায় অন্য জন্তু খরিদ করার পর হারানো জন্তুটি পাওয়া গেলে, ধনী ব্যক্তিকে যে কোন একটি দিলেই চলবে। তবে উত্তমটি দেওয়াই ভালো। কিন্তু গরীব ব্যক্তিকে উভয়টি কুরবানী করতে হবে। কেননা ধনীদের ওপর শরীয়তের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্ট একটি কুরবানী ওয়াজিব, তাই যে কোন একটি যবেহ করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে গরীবের ওপর শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন কুরবানী ওয়াজিব নয়। কুরবানীর নিয়তে জন্তু খরিদ করার কারণে খরিদকৃত জন্তু কুরবানী করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। তাই উভয় জন্তু তাকে কুরবানী করতে হবে।
  • কুরবানী গোশত তিন ভাগের এক ভাগ দান করা মুস্তাহাব। কিন্তু কুরবানীদাতা যদি গরীব হয়, তাহলে নিজ পরিবারের জন্য সবগুলো রেখে দেওয়া ভালো।
  • কুরবানী গোশত বিক্রয় করা হারাম। যবেহকারীকে বা ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিক্ষককে মজুরী অর্থাৎ বেতন হিসেবে গোশত বা চামড়া বা চামড়ার মুল্য দেওয়া না-জায়েয। জন্তুর রশিও দান করে দিতে হবে। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা নিজ পক্ষ থেকে প্রদান করবে।
  • কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করা অনুচিত। তবে বিক্রি করলে তার মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। এর দ্বারা মসজিদ, মক্তব বা মাদরাসার ঘর নির্মাণ বা রাস্তা-ঘাট তৈরি করা না-জায়েয।
  • ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের দরিদ্র ছাত্রদেরকে কুরবানীর চামড়া দান করা উত্তম। কারণ এতে সদকার সওয়াবের সাথে সাথে দীনি শিক্ষার খিদমতের সাওয়াব হয়ে থাকে। কিন্তু শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া না-জায়েয।

যবেহ করার নিয়ম তার মাসায়েল

  • পশু যবেহ করার সময় যবেহকারী ও পশুর চেহারা কিবলামুখী হওয়া মুস্তাহাব।
  • কুরবানীর পশু নিজে যবেহ করা উত্তম। কেননা তা একটি ইবাদত। অবশ্য যদি নিজে যবেহ করতে না জানে বা না পারে তখন পরের দ্বারা যবেহ করাতে পারে।
  • যবেহ করার সময় কুরবানীদাতা বা অংশীদারগণ সকলে উপস্থিত থাকা জরুরি নয়। তবে উপস্থিত থাকা ভালো।
  • যবেহ করার স্থান হল পশুর গলার মধ্যভাগ এবং চার রগ কেটে দিতে হয়, অর্থাৎ পানাহারের নালি, শ্বাসপ্রশ্বাসের নালি এবং গলার দুই পার্শ্বে দুইটি রক্ত চলাচলের বড় রগ; এর মধ্য হতে তিন রগ কেটে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি নতুবা যবেহ শুদ্ধ ও সহীহ হবে না।
  • যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলতে হবে অথবা শুধু ‘বিসমিল্লাহি’ বললেও চলবে, আর যদি যবেহকারী একা ছুরি চালাতে না পারে তখন যারা ছুরি ধরতে সহযোগিতা করবে তাদেরকেও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হবে।
  • যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়ে তখন পশু হালাল হবে না, অবশ্য ভুল করে না পড়লে হালাল হবে।
  • যবেহ করার সময় পুরা গলা কেটে ফেলা মকরূহ কিন্তু তারা দ্বারা পশু হালাল হবে।

ঈদের নামাযের নিয়ম

  • উভয় ঈদের দু’রাকাআত নামায ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে ‘সুবহানাকা’ পড়ার পর ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়ার আগে এবং দ্বিতীয় রাকাআতে কিরাতের শেষে রুকু করার আগে ওই তাকবীরগুলো বলবে। প্রত্যেক তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেবে। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীর না বলে রুকুতে চলে গেলে রুকু অবস্থায় ওই তিন তাকবীর বলতে হবে, কিন্তু তখন হাত উঠাবে না।
  • নামাযের পর দু’টি খুতবা পড়া সুন্নাত, কিন্তু যারা উপস্থিত থাকেন, তাদের পক্ষে শোনা ওয়াজিব।
  • ঈদের খুতবায় মিম্বারের ওপর উঠে প্রথমেই না বসা সুন্নাত, তবে জুমার খোতবাতে বসা সুন্নাত।
  • ঈদের ১ম খুতবা শুরুর আগে ৯ বার আর ২য় খোতবা শুরুর আগে ৭ বার তাকবীর বলা মুস্তাহাব।
  • খুতবা পড়ার সময় মুক্তাদীগণের সারিবদ্ধভাবে নামাযের কাতারে বসে থাকা মুস্তাহাব এবং খুতবা শোনা ওয়াজিব।

তাকবীরে তাশরীক

  • জিলহজ মাসে ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর পরই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। একা বা জামাআতে নামায আদায়কারী প্রত্যেকের জন্যে এক হুকুম। যদি ইমাম ভুলে যায়, তাহলে মুক্তাদীগণ পড়তে আরম্ভ করবে।
  • উভয় ঈদের নামাযে যাওয়ার সময় তাকবীরে তাশরীক বলা সুন্নাত। ঈদুল আযহায় উচ্চৈঃস্বরে এবং ঈদুল ফিতরে আস্তে আস্তে পড়বে। ঈদুল আযহার নামাযান্তে সালামের পর পরই তাকবীর পড়বে। উভয় ঈদের নামাযান্তে ফেরার পথে তাকবীর বলার প্রমাণ নেই। উল্লিখিত তারিখসমূহে কোন ওয়াক্তের নামায কাযা হলে এবং উক্ত কাযা নামায উক্ত দিনগুলোর মধ্যে আদায় করলে নামাযের পর পরই তাকবীর বলা ওয়াজিব। আর ওই দিনগুলোর কাযা যদি অন্য দিনে বা অন্য দিনের কাযা নামায উক্ত দিনগুলোর মধ্যে আদায় করা হয়, তবে উক্ত কাযা নামাযের পর তাকবীর বলতে হবে না।

জিলহজ মাসের রোযা

জিলহজ মাসের ১লা তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখা খুবই সাওয়াবের কাজ। হাদীস শরীফ মতে, প্রতিটি রোযায় এক বছরের রোযার সাওয়াব পাওয়া যায়। আর ওই দিনগুলোর প্রতিটি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমান। বিশেষত নবম তারিখের রোযা সম্পর্কে হুযূর (সা.) বলেন, তাতে আগের বছরের এবং পরের বছরের গোনাহ আল্লাহ মাফ করবেন বলে আমি আশা রাখি।

স্মরণীয়

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর কুরবানীর জন্তু যবেহ করা পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন না করা মুস্তাহাব। কিন্তু যারা কুরবানী করে না তারা ঈদের নামাযের পর কর্তন করবে যেহেতু তারা যবেহ করবে না।

[1] আল-কুরআন, সূরা আল-কওসার ১০৮:১Ñ৩

[2] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, হলব, মিসর, খ. ৪, পৃ. ৮৩, হাদীস: ১৪৯৩

[3] (ক) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহাঈন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ২৪৭, হাদীস: ৭৫২৫; (খ) আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, মাকতাবাতুল কুদসী, কায়রো, মিসর (১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ১৭, হাদীস: ৫৯৩৪; হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত

[4] ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ১০৪৫, হাদীস: ৩১২৭

[5] ইবনে মাজাহ, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১০৪৪, হাদীস: ৩১২৩

[6] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার = হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন = ফতোয়ায়ে শামী, খ. ৬, পৃ. ৩২১

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ