জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাবর্ষের শুরুতে: তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে তিনটি কথা

শিক্ষাবর্ষের শুরুতে: তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে তিনটি কথা

শিক্ষাবর্ষের শুরুতে: তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে তিনটি কথা

মাওলানা যাহেদ রাশেদী

[শাওয়ালের দ্বিতীয় দশকে পুরো দক্ষিণ এশিয়া অর্থাৎ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা এবং আরও কিছু দেশের লক্ষ লক্ষ দীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে তালিবে ইলমদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা পেশ করছেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আলিমে দীন পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালাস্থ নাছরাতুল উলুম মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা যাহেদ রাশেদী (দা. বা.)। লাহোর হতে প্রকাশিত রোযনামায়ে ইসলাম থেকে অনুবাদ করেছেন মাওলানা শিহাব সাকিব—সম্পাদক]

দীনী শিক্ষাকে নিজের প্রয়োজন মনে করুন

দীনী শিক্ষাটা নিজের প্রয়োজন মনে করে হাসিল করুন। যে মহান শিক্ষা আপনারা লাভ করছেন সেটাকে নিজের প্রয়োজন মনে করবেন, তাহলে পড়ালেখার মান ভালো হবে এবং আপনি তৃপ্তি পাবেন। আল্লাহ না করুন, যদি বাধ্য হয়ে দীনী শিক্ষাকেন্দ্রে এসে থাকেন তাহলে পড়ালেখার মানও তেমনি হবে। এটা শুধু বোঝার বিষয় না, এটি একটি বাস্তবতা যে, দীনী শিক্ষাটা যেমন আপনার নিজের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আপনার পরিবার ও সমাজের প্রয়োজন।

দীনী শিক্ষা ছাড়া আমাদের জীবন উদ্দেশ্যহীন ও অপূর্ণ থেকে যাবে। যেমন আমাদের কালিমা পাঠ করতে হয়। لا إله إلا الله محمد رسول الله সহীহ শুদ্ধভাবে কালিমা পাঠ করার জন্যও আমাদের দীনী শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। লা ইলাহার লার মাঝে এক আলিফ টান হবে। টান ছাড়া পড়লে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সহীহভাবে না পড়লে অনেক সময় অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। তেমনি সহীহভাবে কুরআন তিলাওয়াত করাও আমাদের ওপর ফরয। কারণ সহীহ তিলাওয়াত ছাড়া আমাদের নামায হবে না। নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য তিলাওয়াত সহীহ করতে হব এবং নামাযে পড়ার জন্য কিছু সুরা মুখস্থ করতে হবে। তাছাড়া নামাযের ভেতরে আরও দোয়া দরুদ আছে সেগুলোও সহীহভাবে পড়তে হবে।

নামাযের অন্যান্য মাসআলা মাসায়েল, নামাযে কী কী কাজ ফরয, কী কী কাজ সুন্নাত। কোন কাজের দ্বারা নামায ভেঙে যায়। আর কোন কাজের দ্বারা নামায মাকরুহ হয়। এভাবে দীনের সব মৌলিক বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। রোযার মাসায়েল, সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও যাকাতের মাসায়েল, আর মুয়ামালা, মুয়াশারা, লেনদেন, আচার ব্যবহার, আত্মার পরিশুদ্ধতার জ্ঞান তো সবার জন্যেই জরুরি।

এসব প্রথমত আমাদের নিজেদের জন্য শিখব, নিজেদের জীবনে এসব বিধানের বাস্তবায়ন ঘটাব। এরপর নিজের পরিবার, দেশ, সমাজের মানুষকে শেখাব।

আপনার মাদরাসায় আসাটা যেন উইন্ডো শপিং না হয়

আমাদের মাদরাসায় আসাটা যেন উইন্ডো শপিং না হয়। আপনারা যখন দীনী প্রতিষ্ঠানে এসেছেন, ভালোভাবে পড়ালেখা করুন। আজকাল উইন্ডো শপিং করে মানুষ। বড় বড় মার্কেটে যায়। জিনিসপত্র দেখে, চেক করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে বাড়ি ফিরে খালি হাতে। এটাকে উইন্ডো শপিং বলে।

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মাদরাসাসমূহেও এই প্রবণতা আজকাল লক্ষ করা যায় যে, কিছুদিন মাদরাসার চার দেয়ালের ভেতরে থাকে, কিছু কিতাবের পাতা ওল্টায়, উস্তাদদের সামনে বসে, আট দশ বছর ব্যয় করে অবশেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে। সে না নিজের কোন উপকার করতে পারে, আর না উম্মাহর কোন কাজে আসে। আপনার এই মাদরাসায় আসাটা যেন উইন্ডো শপিংয়ের মত না হয়। বরং কাজের হয়।

আপনার পড়ালেখাটা যেন আপনার এবং জাতির উপকারে আসে সে দিক বিবেচনা করে পড়ুন। মেহনত করুন। ইনশাল্লাহ ফল পাবেন। দীনী মাদরাসাসমূহের অবশ্য পালনীয় বিধানগুলো মেনে চলবেন, যেমন নিয়মিত উপস্থিতি, সময়মত দরসে আসা, শুধু দৈহিকভাবে নয় আত্মীকভাবেও উপস্থিত থাকবেন। প্রতিদিনের সবক দরসে বসার আগেই পড়ে আসবেন এবং দরসের পরে তাকরার করবেন। উস্তাদদের সাথে সাদাচারণ করবেন এবং সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন।

উস্তাদদের সাথে সম্পর্ক না রাখলে, তাদের থেকে সর্বোচ্চ ইস্তেফাদা করা সম্ভব হবে না। উস্তাদদের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেন শুধু দরসের ভেতর সীমিত না থাকে। কিতাব খাতা কলমের প্রতি সযত্ন দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবেন। এসবের প্রতি অসতর্কতামূলক কোন আচরণ করবেন না, অবহেলার তো প্রশ্নই আসে না। আপনার মাদরাসার নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন। নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে হলেও মাদরাসার আইন কানুন মানার চেষ্টা করবেন। আপনার দ্বারা কখনো কোন আইন লঙ্ঘন হয়ে গেলে বিনীতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চাবেন এবং নিজেকে শুধরে নেবেন।

যা পড়বেন তা  আমলী মশক করবেন

যা পড়বেন তার তামরীন ও আমলী মশক করবেন। স্কুল কলেজের ছাত্রদের বিজ্ঞানের ক্লাসে কোন থিউরি এলে লেবরটরিতে গিয়ে এর প্র্যাকটিস করানো হয়। বিপরীতে মাদরাসায় আমরা যা পড়ি বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করি না। যেমন- কুদুরী বা ফিকহের অন্য কোন কিতাবে সালাতের আদাব পড়ি কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের সালাতে এর প্রয়োগের প্রতি লক্ষ রাখি না।

হ্যাঁ, অন্যের সালাতে এগুলোর উপস্থিতির খোঁজ অনেকেই নেয়। কুরআন ও হাদীসে আখলাক, আদাব ও সুনান পড়ি, তবে বাস্তব জীবনে এগুলোর অনুশীলনের প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। এগুলোও নিজের আমলী জীবনে আছে কিনা দেখে না, দেখে অন্যদের মাঝে এগুলোর চর্চা হয় কি না। ফলে ইলম যদিও কিছু হাসিল হয়ে যায়, যে রকমেই হোক আর যে মানেরই হোক, আমলের ক্ষেত্রে কমতি থেকেই যায়। অথচ সত্যিকারের আলেম হওয়ার জন্য ইলম অনুযায়ী আমল করতে হবে। আমল ছাড়া শুধু শুধু জ্ঞানার্জন ক্ষতি বৈ আর কিছু্‌ই বয়ে আনবে না।

শেষ করার আগে আযাতিযা ও তালিবুল ইলমদের প্রতি একটি বিশেষ নিবেদন, আপনারা যা পড়বেন, পড়াবেন, তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। ইলম অনুযায়ী জীবন গঠন করা ইলমের আবশ্যকীয় অংশ। এর মাধ্যমে ইলম উদ্দেশ্যপূর্ণ ফায়দাজনক হয়।

অনুবাদ: মাওলানা শিহাব সাকিব

সূত্র: রোযনামায়ে ইসলাম, লাহোর, ৫ আগস্ট ২০১৫

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ