বিয়ের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে যে ৮টি বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি
আয়েশা তাবাসসুম
‘বিয়ে’ শব্দটি পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর জীবনে বহু আকাক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকলের জীবনেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন সে একজন জীবনসঙ্গীর সাথে নতুন জীবনের পথে পা বাড়ায়।
তবে বিয়ের পূর্বে রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর তা হচ্ছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ও কনে দেখার পর্ব। ইসলাম একটি পূর্ণ জীবনবিধান, তাই বিয়ের পূর্বে বিয়ের প্রস্তাবনা ও কনে দেওয়ার বিষয়েও রয়েছে ইসলামের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা। তাই সালাত-সিয়ামসহ জীবনের অন্যান্য ব্যাপারের মত বিয়ের প্রস্তাব ও কনে দেখার ক্ষেত্রেও শরীয়তের নির্দেশনা মেনে চলা এক ধরনের আমল ও ইবাদত। কিন্তু ইসলামের সঠিক দিক-নির্দেশনা না জানায় আমরা প্রায়ই বিয়ের প্রস্তাব ও কনে দেখার ক্ষেত্রে ইসলাম পরিপন্থী কাজ করে ফেলি।
বিয়ের আগে যেহেতু আসে বিয়ের প্রস্তাব ও কনে দেখার মত ব্যাপার, তাই বিয়ের আগেই জেনে নেওয়া দরকার ইসলাম আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ও কনে দেখার ক্ষেত্রে কী নির্দেশনা দিচ্ছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে বলতে কী বোঝায়?
বিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ে ওঠে। বিয়ে শুধু নারী-পুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক নয়, সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ গঠনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে বিয়ে।
মহানবী (সা.) বলেন,
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ».
‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চোখকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’[1]
এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিয়ে করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।
বিয়ের প্রস্তাব ও তার নিয়ম
বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া ও পাত্র-পাত্রীর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজ রয়েছে যা উভয় পক্ষেরই বিবেচনায় নিতে হবে। যখন কেউ কোন নারীকে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, তখন তার উচিৎ ওই মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পাওয়ার চেষ্টা করা।
১. বিয়ের প্রস্তাব বলতে কী বোঝায়
বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা হচ্ছে, এমন ব্যাক্তির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া, যার প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে। এটি বিয়ের পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি বিয়ের ওয়াদা এবং বিয়ের প্রথম পদক্ষেপ।
২. ইস্তিখারা করা
সকল নর-নারীর জীবনে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাই যখন তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন, তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা।
হযরত জাবির ইবনে (রাযি.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন,
«اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوْبِ، اللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ – أَوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِيْ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ – أَوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الْـخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِيْ بِهِ، وَيُسَمِّيْ حَاجَتَهُ».
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি। কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ! এ কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এ কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অতঃপর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।’[2]
৩. নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করা
বিয়েতে সম্মতি দেওয়ার পূর্বে বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে অভিজ্ঞ কারও সাথে যোগাযোগ ও পরামর্শ করা উচিৎ, যিনি পাত্র বা পাত্রীর পরিবার সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُوْرَةً لِأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ.
‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখিনি।’[3]
হযরত হাসান আল-বাসারী (রহ.) বলেন,
الناس ثلاثة، فرجل رجل، ورجل نصف رجل، ورجل لا رجل. فأما الرجل الرجل فذو الرأي والمشورة، وأما الرجل الذي هو نصف رجل، فالذي له رأي ولا يشاور، وأما الرجل الذي ليس برجل، فالذي ليس له رأي ولا يشاور.
‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে। কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন। অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন না।’[4]
তবে যার সাথে পরামর্শ করবেন, এ ক্ষেত্রে তার কর্তব্য হচ্ছে বিশ্বস্ততা রক্ষা করা। তিনি যেমন কারও কোন দোষ লুকাবেন না, তেমনি আসলে নেই, এমন কোনো দোষের কথাও বানিয়ে বলবেন না। আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।
৪. পাত্রী দেখা
কেউ যখন কোন একজন নারীকে বিয়ে করতে চায়, তখন তার ওই নারীর সাথে দেখা করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশনা থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণ পাওয়া যায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিয়ে করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।’ (বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা: ১৩৮৬৯)
অপর এক হাদীসে রয়েছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الْأَنْصَارِ، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا؟»، قَالَ: لَا، قَالَ: «فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَإِنَّ فِيْ أَعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا».
‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.) এর কাছে ছিলাম। এ অবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল যে, সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছে। তখন রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে।’’[5]
৫. বিয়েতে পাত্রীর অনুমতি নেওয়া
বিয়েতে একজন নারীর অনুমতী নেওয়া খুবই জরুরি। বিয়ের সিদ্ধান্তে তার মতামত নেওয়া একজন নারীর অধিকার এবং তার পিতা বা অভিভাকদের তার ইচ্ছার বাইরে যাওয়া অনুচিত।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন,
«الثَّيِّبُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا، وَالْبِكْرُ تُسْتَأْمَرُ، وَإِذْنُهَا سُكُوتُهَا».
‘একজন নারী যার পূর্বে বিয়ে হয়েছিল, বিয়ের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার পিতা বা অভিভাবকের তুলনায় বেশি এবং একজন কুমারী মেয়ের বিয়েতে অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক, (তবে) নীরবতাই তার সম্মতি।’[6]
৬. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ বা বাইরে ঘুরতে যাওয়া
বিয়ের আগে একজন নারী বিয়ের প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সাথে মোবাইল, চিঠি বা ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন, তবে তা শুধুমাত্র বিয়ের চুক্তি বা শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য এবং সে যোগাযোগ হতে হবে অবশ্যই ভাব ও আবেগবর্জিত পন্থায়।
উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের পিতা বা অভিভাবকের সম্মতিতেই হওয়া উচিৎ। তাছাড়া বিয়ের পূর্বে প্রস্তাবদানকারীর সাথে ঘুরতে বের হওয়া, সফরে যাওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। কেননা বিয়ে না হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই পুরুষ তার কেউ নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হচ্ছে।
৭. একজনের সাথে বিয়ের কথা-বার্তা চলতে থাকাবস্থায় অন্য কারও প্রস্তাব না দেওয়া
কোন নারীর যখন অন্য কোথাও বিয়ের জন্য কথা-বার্তা চলছে বা যখন কোন নারীর অন্য কারও সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তখন সেই নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া শরীয়তে নিষিদ্ধ। তবে প্রথম প্রস্তাবদানকারী যদি অনুমতি দেয় বা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়, তবে দ্বিতীয় কেউ সেই নারীকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিতে পারবে।
সহীহ মুসলিম অনুসারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
«الْـمُؤْمِنُ أَخُو الْـمُؤْمِنِ، فَلَا يَحِلُّ لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يَبْتَاعَ عَلَىٰ بَيْعِ أَخِيْهِ، وَلَا يَخْطُبَ عَلَىٰ خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّىٰ يَذَرَ».
‘একজন বিশ্বাসী অপর বিশ্বাসীর ভাই। তাই কোন কিছু কেনার সময় এক ভাইয়ের ওপর আরেক ভাইয়ের অধিক দাম হাকানো বা এক ভাই যখন কোন নারীকে প্রস্তাব দেয় (বিয়ের) তখন অন্য ভাইয়ের তাকে প্রস্তাব দেওয়া (বিয়ের) নিষেধ, যদি না সে তাকে অনুমতি দেয়।’[7]
সহীহ আল-বুখারী শরীফ অনুসারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন,
«لَا يَخْطُبَ الرَّجُلُ عَلَىٰ خِطْبَةِ أَخِيْهِ، حَتَّى يَتْرُكَ الْـخَاطِبُ قَبْلَهُ أَوْ يَأْذَنَ لَهُ الْـخَاطِبُ».
‘একজন আরেকজনের বাগদত্তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না সে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে অথবা তাকে অনুমতি দেয় (বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার)।’[8]
৮. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করা
উপযুক্ত পাত্রের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেলে তা নাকচ করা উচিৎ নয়। এ ব্যাপারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাগিদ দিয়েছেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِيْنَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوْهُ، إِلَّا تَفْعَلُوْا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ، وَفَسَادٌ عَرِيْضٌ».
‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হবে।’’[9]
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেন,
«ثَلَاثٌ لَا تُؤَخِّرْهَا: الصَّلَاةُ إِذَا آنَتْ، وَالْـجَنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ، وَالْأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَـهَا كُفْئًا».
‘তিনটি বিষয়ে দেরি করা উচিৎ নয়, সালাত আদায়: যখন সালাতের সময় হয়ে যায়, কবর দেওয়া যখন জানাযা হয়ে যায় এবং একজন নারীর বিয়ে: যখন সমমর্যাদা সম্পন্ন কোন পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব দেয়।’[10]
[1] (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৭, পৃ. ৩, হাদীস: ৫০৬৬; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ১০১৮-১০১৯, হাদীস: ১৪০০, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[2] (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৮, পৃ. ৮১, হাদীস: ৬৩৮২; (খ) আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৮৯-৯০, হাদীস: ১৫৩৮
[3] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৪, পৃ. ২১৪, হাদীস: ১৭১৪
[4] শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাতরিফ ফী কুল্লি মুসতাযরিফ, আলামুল কিতাব, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯৮ খ্রি.), পৃ. ৮৪
[5] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১০৪০, হাদীস: ১৪২৪
[6] (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১০৩৭, হাদীস: ১৪২১; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ১০৩৭, হাদীস: ১৪২১, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[7] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১০৩৪, হাদীস: ১৪১৪, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[8] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৭, পৃ. ১৯, হাদীস: ৫১৪২, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত
[9] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৩, পৃ. ৩৮৬, হাদীস: ১০৮৪
[10] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৩২০, হাদীস: ১৭১, হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাযি.) থেকে বর্ণিত