জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রক্তাক্ত নিউজিল্যান্ড নিয়ে বহু প্রশ্ন!

রক্তাক্ত নিউজিল্যান্ড নিয়ে বহু প্রশ্ন!

রক্তাক্ত নিউজিল্যান্ড নিয়ে বহু প্রশ্ন!

ড. মাহফুজ পারভেজ

 

পৃথিবীর সবার চোখ এখন নিউজিল্যান্ডের দিকে। দুটি মসজিদে সক্রিয় বন্ধুক হামলায় ধর্মীয় সমাবেশরত শান্তিপূর্ণ মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডে বিমূঢ় বিশ্বমানবতা। দেশটির নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি নিয়েও তৈরি হয়েছে বহু প্রশ্ন।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড বিশ্বের নিরাপদ ও পরিবেশগত ভারসাম্যপূর্ণ দেশের তালিকার উপরের দিকে অবস্থান করে। পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকার কানাডা, ইউরোপের সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্কের সঙ্গে মানব উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সূচকে শীর্ষের দিকে থাকে দেশটি। এমন একটি দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সামনে গণহত্যার আদলে পাখির মতো মানুষ খুন করা কীভাবে সম্ভব হলো? আইনের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি এতোই শিথিল সেখানে? অস্ত্র বহন, হত্যাকাণ্ড সংগঠন ইত্যাদি চরম অপরাধমূলক কাজ থামানোর আগাম ব্যবস্থা বলতে সেখানে কি কিছুই নেই?

শুধু নিরীহ প্রার্থনারত মুসলিম হত্যাকাণ্ডই নয়, অন্য ধর্ম ও বিশ্বাসের নাগরিকরা সেখানে কতটুকু নিরাপদ? মসজিদে গণহত্যা করা সম্ভব হলে কারো বাড়িতে, স্কুলে, গির্জায় সেটা যে সম্ভব হবে না, সে গ্যারান্টি কি সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে পারে?

আন্তর্জাতিক স্তরের একটি বিদেশি ক্রিকেট দল দেশটিতে অবস্থানকালে তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোও দেখা হয় নি। এসব কি উদাসীনতা, নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি? উদাসীনতা হলে সেটা সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম দুর্বলতা। আর যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো, এমন সীমাবদ্ধতা নিয়ে একটি দেশ কীভাবে মানব উন্নয়ন ও নিরাপত্তার দিক থেকে সামনের কাতারে থাকার দাবি করতে পারে?

এইসব হত্যাকাণ্ড ও সশস্ত্র হামলার পেছনে পশ্চিমা উগ্র জাতীয়তাবাদী, খ্রিস্ট মৌলবাদীদের পাশাপাশি পশ্চিমা সরকারগুলো সমভাবে দায়ী। কারণ সরকারগুলো ওয়ার অ্যাগেইনেস্ট টেররের নামে সামান্য সংখ্যক মুসলিম নামধারী জঙ্গিকে ধরতে গিয়ে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি করছে। ফলে নাগরিকরা ইসলাম ও জঙ্গিবাদকে এক করে দেখছে, যা শুধু ভুলই নয়, অন্যায়ও বটে। পশ্চিমা সরকারগুলোর নীতি ও কাজের ভুল পদক্ষেপের জন্যই শান্তির ধর্ম ইসলামকে ভুলভাবে দেখছে পশ্চিমা নাগরিকরা এবং প্রায়শই নিরীহ মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে।

নিউজিল্যান্ডে সংগঠিত নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ ঘটনাটির আগেও ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, আমেরিকাসহ অনেক পশ্চিমা দেশে মুসলিমরা আক্রান্ত হয়ে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আরো স্পষ্ট করে বললে, ২০০১ সালের ৯/১১ ঘটনার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষের যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ঘটনা তারই ধারাবাহিক কুফল। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে মুসলিমদের মতো একটি বড় ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে সন্দেহ ও আক্রান্ত করার পশ্চিমা নীতির ভয়াবহ প্রকাশ ঘটছে এসব আক্রমণ ও গণহত্যার মাধ্যমে।

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে মুসলিম গণহত্যার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বেই পড়বে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিক ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও নাজুক আকার ধারন করবে। বিশেষত, নিরাপত্তার বাগাড়ম্বর করা দেশগুলোতে যখন অবাধে প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে গণহত্যা করা যায়, তখন মানুষের জানমাল প্রচণ্ড বিপদের মধ্যে নিপতিত হবেই।

পশ্চিমা সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী নীতি এবং ত্রুটিপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো না হলে সেসব দেশে মুসলিম গণহত্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবং মুসলিম হত্যা ও বিদ্বেষের হাত ধরে হানাহানি বাড়ার বিপদও সেসব দেশে বাড়বে। সামাজিক ও নাগরিক নিরাপত্তার বড়াই করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। সংঘাতের আগুন কাউকেই তখন ছাড়বে না।

ঘটনার পর পরই নিউজিল্যান্ডের মসজিদে মুসলিম গণহত্যা নিয়ে আমি সেদেশে অধ্যাপনারত আমার বন্ধু ড. কেভিন ক্লিম্যানের মন্তব্য জানতে চেয়ে মেইল করেছিলাম। কেভিন একজন সিনিয়র প্রফেসর এবং পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট বিষয়ে পণ্ডিত। কিছুক্ষণ আগে তিনি উত্তর দিয়ে মেইল পাঠিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন,

‘I’m currently shocked and appalled at the reports of a white supremacist and extremist moving into the Christchurch Mosque at Friday Prayers and opening fire on the worshippers. My heart goes out to the families of the 49 who have lost their lives and the 48 injured . NZ is religiously tolerant and no Muslims should be subject to violence in what should be their sanctuary. At this moments all New Zealanders are Muslims as we stand in solidarity with our Moslem compatriots. I hope that our leaders will respond to this tragedy with wisdom, compassion and solidarity. The perpetrator has been arrested and will be charged with murder in court tomorrow . This behaviour has no place in New Zealand or any other society. I also hope that all my many appeals for control of military style semi automatic weapons will now be listened to and acted upon. In profound sadness at this loss of innocents and innocence in Aotearoa-New Zealand.’

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পশ্চিমা জগতের সবাই অন্ধ ও বধির হয়ে যায়নি এবং অন্যায়ভাবে মুসলিম বিদ্বেষ মেনে নেবে না। সেখানেও মানবতা ও যুক্তির আলো আছে, যা তাদেরকে এবং সমগ্র বিশ্বকে নিরীহ মানুষকে গণহারে হত্যার কলঙ্কিত পঙ্ক থেকে মুক্তি দেবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ