জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা পূর্বপরিকল্পিত: শান্তির দেশে অশান্তির আগুন

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা পূর্বপরিকল্পিত: শান্তির দেশে অশান্তির আগুন

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা পূর্বপরিকল্পিত: শান্তির দেশে অশান্তির আগুন

ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন

 

আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ মানবাতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ। কারণ মানুষ দুনিয়ার মোহ ছিন্ন করে, আল্লাহর পথে নিবেদিত প্রাণ হয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়। অধ্যাত্ম সুখের অন্বেষণে পার্থিব সকল কিছু ত্যাগ করে করে এখানে আসে। যে কোনো ঈমানদীপ্ত মুসলমান মসজিদকে মনে করে পৃথিবীর সবচে নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট ও নিরুপদ্রব স্থান। যেখানে নির্ভার হয়ে নির্ভয়ে আল্লাহকে ডাকতে পারে। এমন একটি পবিত্রতম স্থানে স্মরণকালের নৃশংসতম সন্ত্রাসী হত্যকাণ্ড ঘটল বিগত ১৫ মার্চ ২০১৯ জুমাবার। তা-ও আবার শান্তির দেশ হিসেবে খ্যাত নিউজিল্যান্ডে।

নিউজিল্যাণ্ডের ক্রাইস্টচার্চে অবস্থিত আন-নূর ও লিনঊড মসজিদদ্বয়ে ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট সন্ত্রাসী হামলার এ-ঘটনায় হতবাক গোটা পৃথিবী। শোকে মুহ্যমান মুসলিমবিশ্ব। উগ্র বর্ণবাদী জনৈক শ্বেতাঙ্গের এ-হামলায় ৩ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই বছর এবং ১৩ বছর বয়সী দুটি শিশুও রয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন পঞ্চাশ জন। অল্পের জন্য বেঁচে গেল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তারাও সে-মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন।

মসজিদে নিরীহ মুসল্লিখুনের ঘটনা বিরল হলেও নতুন নয়। মদিনার মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রা.এর ওপর আক্রমণ, পরবর্তীতে কুফার মসজিদে হযরত আলী (রাযি.)-এর ওপর হামলা থেকে শুরু করে নিউজিল্যাণ্ডের মসজিদে ৪৯ জন মুসল্লিহত্যা একই সূত্রে গাঁথা। সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত, সত্যের সামনে চিরকাহিল কাপুরুষরাই যুগে যুগে এমন নিকৃষ্ট হামলা চালিয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, হামলাকারী দুইবছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটা ন্যাক্কারজনক আক্রমণের ঘোষণা দিয়ে আসছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সামরিক পোশাক পরিহিত ওই লোক স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি ছুড়ে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর এবং মাথার ওপর সেট করা ক্যামরা দিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ড সে লাইভ ভিডিও প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে।

নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থা উগ্র চরমপন্থিদের বিষয়ে তদন্ত করছে। কিন্তু হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির চরমপন্থা গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের কিংবা পুলিশ কারও নজরেই আসেনি। ওই ব্যক্তি ২০১৭ সালে ইউরোপ ভ্রমণের পর থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করছিল এবং সেখানকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ডেইলি মেইল জানায়, ২৮ বছর বয়সী হামলাকারী টুইটারে তার পরিচয় প্রকাশ করেছে। তার নাম ব্রেনটন ট্যারান্ট বলে দাবি করা হয়েছে। সে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্র্যাফটন এলাকার বাসিন্দা। এর আগে, নিজের উদ্দেশ্য জানিয়ে হামলার একঘণ্টা আগে ৮৭ পৃষ্ঠার দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট টুয়ার্ডস নিউ সোসাইটি শিরোনামে একটি ‘ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশ করে। এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, কোথায় গেল পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান?! কী জবাব দেবেন সারাজীবন মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগকারীরা? কোথায় ছিল নিউজিল্যান্ডের ন্যায় একটি আধুনিক দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা?!

স্মর্তব্য, নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০৩ সালে পরিচালিত আদমশুমারিতে দেখা যায়, প্রায় ৪৬০০০ জন মুসলিম বসবাস করেন নিউজিল্যান্ডে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা একভাগ। জরিপে আরো দেখা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মুসলমানদের সংখ্যা ২৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে এক চতুর্থাংশের জন্ম নিউজিল্যান্ডে। সূত্র: Stats NZ

নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানরা এমন ভয়বহ ঘটনা কখনো প্রত্যক্ষ করেন নি। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা নির্বাক, শোকে বিহ্বল। টিভি চ্যানেল TVNZ-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ইসলামিক এসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ডের সভাপতি মোস্তফা ফারুক বলেন,

We feel that we are living in the safest country in the world. We never expected anything like this could happen.  Muslims have been living in New Zealand (for) over 100 years and nothing has ever happened to us like this, so this is not going to change the way we feel about New Zealand.

‘আমাদের উপলব্ধি ছিল, আমরা বিশ্বের নিরাপদতম দেশে বসবাস করছি। এমন একটি ঘটনা ঘটবে তা কখনোই প্রত্যাশা করিনি আমরা। একশ বছরের অধিক সময় ধরে এ-দেশে মুসলমানরা বসবাস করে আসছেন। এ-ধরনের ঘটনা আর কখনোই ঘটেনি। নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে আমরা যে-ধারণা পোষণ করি তাতে এ-ঘটনা কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।’

ইতিহাসে দেখা যায়, ১৮৭০ সালে নিউজিল্যান্ডে ইসলাম ধর্মের বিকাশ শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহুমানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমে। সে সময় স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলমান জীবিকার অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন। পরে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলিম পরিবার সেখানে বসতি স্থাপন করে। তারপর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলমান সেখানে বসবাস শুরু করে স্থায়ীভাবে।

নিউজিল্যান্ড সরকারের হিসাব মতে, ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ২৬০-এ। অভিবাসী মুসলমানদের বড় আকারে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করে। তাদের অনুসরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন, এমন অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন দেশটিতে। তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচার ও সেখানকার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও মুসলমানরা এগিয়ে রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে তাদের আবাসস্থল ঘেঁষে মসজিদগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। মসজিদসংলগ্ন কমপ্লেক্সে শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বেশকিছু হিফজখানাও গড়ে উঠেছে। কয়েকটি মসজিদের উদ্যোগে ‘সানডে স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছুটির দিন শিশুদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় তাতে। মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলা তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করেছে।

সন্ত্রাসী বা (Terrorist) টেরোরিস্ট শব্দের উৎপত্তি হয় আইরিশ স্কটিশ যুদ্ধের পর থেকে। আইরশরা গুপ্ত হত্যা চালাতো। তখন তাই আইরিশদের টেরোরিস্ট বলা হতো। এখন সারা বিশ্ব টেরোরিস্ট শুধু মুসলিমরা। বাকি সব ধুয়া তুলসীপাতা। কয়েক বছর আগে ফ্রান্সে যখন পত্রিকা অফিসে হামলা হয়, তখন মার্কজুকারবার্ক ফেসবুকে বাকস্বাধীনতার পক্ষে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। যে-কারণে তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গচিত্রগুলো ফেসবুক থেকে তুলে নেননি। তখন ভারসাম্য রক্ষা করে অনেকে কমেন্ট করেছিলেন, All terrorists are Muslim, but all Muslim are not terrorists| কিন্তু ফিলিস্তিন, কাশ্মির, মায়ানমারে যখন নির্বিচারে নিরীহ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় তখন তাদের চোখে সন্ত্রাসী চোখে পড়ে না। কোনো অমুসলিম যখন প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালায় তখন তাকে সন্ত্রাসী নয়; মানসিক বিকারগ্রস্ত বা উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অথচ মুসলমানদের পক্ষ থেকে কোথাও ঢিল ছোড়া হলে, তখন তার গায়ে সন্ত্রাসীর তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়। ভয়াবহ জঙ্গিবাদী, মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ সন্ত্রাসী হিসেবে ফলাও করে প্রচার করা হয় পশ্চিমা মিডিয়ায়। নিউজিল্যান্ডের এ-নৃশংস সন্ত্রাসী ঘটনার বেলায়ও হয়তো দেখা যাবে, তাকে মানসিক রোগী হিসেবে উদ্ঘাটন করা হচ্ছে। হামলার সময় স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না সে। ভাবখানা এমন যেন, সুস্থ কোনো খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি কখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় না।

অথচ নিউজিল্যান্ডের হত্যাকাণ্ডে দেখা যায়, এ-ঘটনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠাণ্ডামাথায় নিরীহ মুসল্লি হত্যার পরিকল্পনা করে খুনি ব্রেনটন ট্যারান্ট ও তার তিন সহযোগী। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার খুনিদের এ-পূর্বপকিল্পনার কথা স্বীকার করেছেন। যুগে-যুগে মুসলমানদের হাতে যেসব ইউরোপীয় নিহত হয়েছে তাদের প্রতিশোধ নিতে এবং ইউরোপে মুসলিম অভিভাসন ঠেকাতে মূলত এ জঘন্য হামলা চালায় তারা। ঘাতকের কাছ থেকে জব্দ করা বন্দুকের গায়েও যে-সব সাংকেতিক লেখা ও চিহ্ণ পাওয়া গেছে তা রীতিমত লোমহর্ষক ও চরম পর্যায়ের বর্ণবাদী। এসব লেখা থেকে সহজেই অনুমেয়, ঘাতকরা কী পরিমাণ উগ্র ও চরমপন্থী! যেমন-

এক. ১৬৮৩ সালে সংঘটিত তুরস্ক-ভিয়েনা যুদ্ধের ইঙ্গিত, যেখানে উসমানীয়রা হেরেছিল এবং যার মাধ্যমে ইউরোপে তাদের অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিল।

দুই. মুসলমানদের স্পেন বিজয় এবং ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে সেখানে আবদুর রহমান ইবনে মুয়াবিয়ার হাতে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংকেত।

তিন. ৭৩২ সালে মুসলিম শাসক আবদুর রহমান গাফিকির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ও ফরাসি বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধের সাংকেতিক চিহ্ন।

চার. ইউরোপে মুসলিম শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে লেখা কটুক্তি শরণার্থীরা.. নরকে তোমাদের স্বাগতম ইত্যাদি সাংকেতিক বর্ণবাদী লেখা দিয়ে মুসলিম বিদ্বেষকে উসকে দেয়ার পায়তারা করেছে ঘাতক। এসব লিখে মুসলিমবিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তোমরা ইতিহাস ভুলে গেলেও আমরা ভুলেনি।

আমাদের বুঝতে হবে, সমস্যা অন্যত্র। সেটা হচ্ছে ইসলামফোবিয়া বা ইসলামভীতি। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশসমূহে যে-হারে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রসার-প্রচার ঘটছে তাতে রীতিমত তারা আতঙ্কিত। সত্যের সামনে সৎসাহস হারিয়ে পিছনে কাপুরুষোচিত হামলার পথ বেঁচে নিয়েছে তারা। এমন অবস্থায় মুসলমানরা সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরো সঙ্গিন ও ভয়াবহ হবে আগামীতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক ড. আহমদ আলী বলেন, নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের এই নৃশংস ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো, ইসলাম যেভাবে দেশে দেশে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, তা দেখে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি তাদের প্রমাদ গুণছে। এ কারণে আজ পৃথিবীর অন্য সকল বড় জাতিগুলো মুসলমানদেরকে তাদের হামলার প্রধান টার্গেটে পরিণত করছে এবং তারা সুপরিকল্পিতভাবে নানা দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক বীভৎস ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো, আমরা মুসলমানরা জাতি হিসেবে কার্যত নির্বিকার, চৈতন্যশূন্য ও কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে পড়েছি। পার্থিব ক্ষমতা, মর্যাদা ও সম্পদের মোহে আমাদের মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ ক্ষমতাবানরাই মেরুদণ্ডহীন। তারা কোনো না কোনোভাবে অন্যান্য জাতির ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। রাসূল সা. অনেক আগেই উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন, “অচিরেই বিভিন্ন জাতি তোমাদের ওপর এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেভাবে ভোজনবিলাসীরা খাবারপাত্রের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি সেদিন সংখ্যায় অল্প হবো? তিনি জবাব দেন, না; বরং তোমরা সেদিন সংখ্যায় বেশি থাকবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থান হবে বন্যার খড়কুটার মতো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের শক্রদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়ভীতি ছিনিয়ে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহন’ সঞ্চার করে দেবেন। ব্যক্তিটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, ওয়াহন কি? রাসূল (সা.) উত্তর দেন, তা হলো: দুনিয়াপ্রীতি ও মৃত্যুর প্রতি অনীহা।’ (আবু দাউদ)

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে পরিচালিত এ নৃশংস হামলায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমানের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও ধিক্কার জানাচ্ছি এ-হিংস্র ঘটনার। হযরত উমরের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় এখানেও ঘাতক একজন অমুসলিম বর্ণবাদী। যার আঘাতে শাহাদাতের সুরা পান করলেন আল্লাহর ঘরে ইবাদত করতে আসা ৪৯জন মুসলমান। আমাদের বিশ্বাস, তাদের এ-রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। প্রাচ্য হতে প্রতীচ্য বিস্তীর্ণ পৃথিবী জুড়ে উম্মাহর হৃদয় আজ রক্তের দাগে লাল। বর্বর এ-ঘটনায় ঈমান নতুন শক্তিতে বলবান হবে নিশ্চয়। সত্যের সামনে ওরা যে অসহায় তা আবারও প্রমাণিত হলো। পরাজিত হলো কাপুরুষ। পৃথিবী দেখল ইসলামফোবিয়ার ভয়াবহ নগ্নরূপ। আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য ও হেকমতের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা তাওফিক দান করুন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ